নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ইসতিয়াক অয়নের ব্লগ

হাসন রাজায় কয়, আমি কিছু নয় রে আমি কিছু নয় !

ইসতিয়াক অয়ন

আমি কে ? কেউ না ...

ইসতিয়াক অয়ন › বিস্তারিত পোস্টঃ

মগধ সাম্রাজ্যঃ পুরাণে বর্ণিত রহস্যাবৃত যুগ (২)

১২ ই অক্টোবর, ২০১৩ রাত ১১:২১

১ম পর্বের লিংক



পর্ব ২ ।। বিম্বিসার



---------------------------------------------------------------



‘মগধ সাম্রাজ্যঃ পুরাণে বর্ণিত রহস্যাবৃত যুগ’ সিরিজের প্রথম পর্বে মগধের প্রতিষ্ঠাতা বৃহদ্রথ ও তাঁর পুত্র জরাসন্ধকে নিয়ে লিখেছিলাম । জরাসন্ধের মৃত্যুর পর বহু বৎসর কেটে গেল । তাঁর পুত্র কন্যারা না পারলো পিতার সাম্রাজ্যকে বাঁচিয়ে রাখতে, না পারলো পিতৃহত্যার প্রতিশোধ নিতে । বরং ধূর্ত পিতৃহন্তার সাম্রাজ্যকে মান্য করে সেই সাম্রাজ্যের নগন্য ‘রাজা’ তকমা নিয়ে প্রাসাদে মুখ লুকালো । কিছুই করার ছিল না । তাদের পিতৃহন্তারা যে ভগবানের ভাই ! স্বয়ং ভগবান কৃষ্ণের প্ররোচনায় তাঁদের পিতার মৃত্যু !



ধীরে ধীরে সময় বদলাতে লাগলো । মানুষ বদলাতে লাগলো । মগধে বাইশবারের মত রাজত্বের পালাবদল হলো, কিন্তু সাম্রাজ্য এলো না । পুরাণ অনুযায়ী, মগধের রাজবংশপরিক্রমা নিম্নরূপঃ







তবে আধুনিক ঐতিহাসিকরা পুরানের কিছু তথ্যকে বানোয়াট চিণ্হিত করেছেন । তারা প্রমান করেছেন, প্রদ্যোৎ আসলে মগধের কোন রাজবংশ নয় । এই বংশ অবন্তীরাজ্যে রাজত্ব করতো ।



বৃহদ্রথের বংশের শেষ রাজা ছিলেন রিপুঞ্জয় । তাহলে এই বৃহদ্রথ সাম্রাজ্যের শেষ থেকে শৈশুনাগ সাম্রাজ্য স্থাপনের মধ্যবর্তী সময়ের এই পাঁচজন রাজা কারা ছিলেন ? সত্যিই কী এসময়ে কোন সাম্রাজ্য স্থাপিত হয়েছিল ? কীভাবে হয়েছিল ? জরাসন্ধের মৃত্যুর এতো বৎসর বাদে কোন শক্তিধর রাজা আবার সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠায় সমর্থ হলো ? কি তার পরিচয় ?



-----------------------------------------------------------------



... বিম্বিসার অশোকের ধূসর জগতে

সেখানে ছিলাম আমি; আরো দূর অন্ধকার বিদর্ভ নগরে;

আমি ক্লান্ত প্রান এক,...



বিখ্যাত বাংলা কবিতা ‘বনলতা সেন’-এ ব্যবহৃত ‘বিম্বিসার’ শব্দটি বিশেষণ তো নিশ্চয়ই ! সম্রাট অশোকের নামের আগে বসেছে যেহেতু । কিন্তু এর অর্থ কি ? শব্দটির অর্থ প্রতিফলিত মর্মার্থ । যদিও বাংলা অভিধানে শব্দটি নেই ! আরও মজার বিষয় হচ্ছে, কবিতায় ‘বিম্বিসার’ বিশেষণ নয়, বরং বিশেষ্য । এটি মগধ সাম্রাজ্যের একজন বিখ্যাত সম্রাটের নাম যে হয়তো ইতিহাস বইয়ে ‘অশোক’-এর মতো এতো জনপ্রিয়তা পায় নি । তবে, তার জীবনকাল একটি পরাবাস্তব আখ্যান বলেই মনে হয় । যার ‘প্রতিফলিত মর্মার্থ’ বোঝা ঐতিহাসিকের পক্ষে সত্যিই সম্ভব নয় । কবির পক্ষে সম্ভব । কবি জীবনানন্দ যেমন বুঝেছিলেন বিম্বিসারের ‘ধূসর জগৎ’ কে !



যাই হোক, সাহিত্যের আলোচনা বাদ দিয়ে বরং বিম্বিসারের গল্প শুরু করি ।



খ্রীষ্টের জন্মের ৫৪৪ বৎসর আগেকার কথা । ১২-১৩ বছর বয়েসী ‘শ্রেনিক’ নামের একটি বালক মগধে পালিয়ে বেড়াচ্ছে । বিভিন্ন জঙ্গলে-গুহায় ভীতসন্ত্রস্ত মুখে দিন কাটাচ্ছে । জানে না তার বাবা কোথায়- পরিবার কোথায় ! শুধু জানে তাকে প্রতিশোধ নিতে হবে । তার বাবাকে যারা পরাজিত ও লাঞ্ছিত করেছে, তাদেরকে শিক্ষা দিতে হবে । অঙ্গ ! অঙ্গরাজ্য দখল করাই তার জীবনে প্রধান লক্ষ্য ।



অঙ্গরাজ্য । গঙ্গা থেকে বঙ্গোপসাগর পর্যন্ত বিস্তৃত জনপদ । অঙ্গের রাজা ব্রহ্মদত্তের সাথে যুদ্ধে পরাজিত হয়েছে তার পিতা মগধের একটি অঞ্চলের নৃপতি মহাপদ্ম । তার মা বিম্বি কোথায় আছে তাও সে জানে না ।



শ্রেনিক ভেঙে পরে না । অনেক সময় নিয়ে তার পিতার নিকটজনদের সহায়তায় মগধের সেনাবাহিনীর একটি অংশকে সঙ্গে নিয়ে ভয়াবহ এক সৈন্যদল গড়ে তোলে । যে দলের মূলনীতি ছিল, রাজার প্রতি অখন্ড আনুগত্য । কিশোরটি তার প্রথম লক্ষ্য নির্ধারণ করলো । অঙ্গের রাজধানী চম্পানগরী বা চম্পকনগরীতে আচমকা আক্রমন করবে সে । অঙ্গরাজ্যের রাজধানী চম্পানগরী তখন ভারতবর্ষের শ্রেষ্ঠ ছয়টি নগরীর অন্যতম ছিল । মাত্র পনেরো বছর বয়সে এই নগরীটি আক্রমন করে অচেনা অজানা এক কিশোর শ্রেনিক, যার অন্য নাম বিম্বিসার !





(প্রাচীন ভারতের ষোড়শ জনপদ বর্তমান ভারতের মানচিত্রে চিণ্হিত)



অঙ্গরাজ্যের রাজা তখন উদয়ন । অঙ্গ ছিল মগধের পূর্বে । চম্পা নদী ছিল অঙ্গ ও মগধরাজ্যের সীমানা । বিম্বিসার তার অপূর্ব যুদ্ধকৌশলে উদয়নকে পরাজিত ও বন্দী করেন । পিতৃশত্রু ব্রহ্মদত্তকে তিনি হত্যা করেন । যদিও অঙ্গের রাজপুত্র বিজয়গিরিকে কোন কারনে হত্যা না করে পালিয়ে যাওয়ার সুযোগ দেন । কি কারনে বিম্বিসার এমনটা করেছিলেন তা অজ্ঞাত । বিজয়গিরি তার সৈন্যদল নিয়ে আরাকানে (বর্তমান চট্টগ্রামে) পালিয়ে যান । ১২ বৎসর পর তিনি তার সেনাপতি রাধামোহনকে অঙ্গে পাঠিয়ে খবর পান, অঙ্গে তার সহোদর রাজত্ব করছে ।





(সম্রাট বিম্বিসার)



এ থেকে বোঝা যায় বিম্বিসার অঙ্গ দখল না করে বরং অঙ্গের রাজার আনুগত্য অর্জন করেছিল । পনেরো বছর বয়সে মগধের সিংহাসনে বসেন সম্রাট বিম্বিসার । অনেকের মতে, তিনি হর্ষঙ্ক বংশের সন্তান । বিম্বিসারের অসাধারন রাজনৈতিক নিপুনতাই প্রথম মগধকে আবার সাম্রাজ্যের পথে এগিয়ে নিয়ে যায় । যুদ্ধ নয়, বরং শান্তির মাধ্যমেই তিনি নিজের রাজ্যবিস্তার শুরু করেন । তিনিই প্রথম ষোড়শ জনপদগুলোর মধ্যে আন্তঃসম্পর্ক স্থাপন করেন । অঙ্গের আনুগত্য তিনি সিংহাসনে বসার আগেই অর্জন করেন । প্রভাবশালী মদ্রদেশের সাথে তিনি সুসম্পর্ক বজায় রাখেন । সূদুর গান্ধার রাজ্যের রাজা পুক্কুসাতি বা পুষ্করসারিনের কাছে মৈত্রীর জন্য দূত পাঠান । পুষ্করসারিনের সাথে তার ভাল সম্পর্ক গড়ে ওঠে । মগধের জন্য তিনি নিজ রাজ্যে দূতাবাস তৈরী করেন । এর মাধ্যমেই ষোড়শ জনপদগুলির মধ্যে প্রথম দূতাবাস পদ্ধতি চালু হয় । বিম্বিসার একবার হলদি পালং রোগে আক্রান্ত হলে অবন্তীরাজ প্রদ্যোৎ তাঁর নিজের চিকিৎসক জীবককে মগধে পাঠিয়ে দেন ।



মগধ সাম্রাজ্যের সীমানা পূর্বে চম্পা নদী, পশ্চিমে সোন নদী, উত্তরে গঙ্গা নদীর অপর পার এবং দক্ষিণে বিন্ধ্য পর্বত পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল । সেসময় মগধের অধীনে প্রায় আশিটি সমৃদ্ধশালী গ্রাম ছিল । এর মধ্যে সেনানীগ্রাম, একনালা, খানুমাতা, নালকগ্রাম উল্লেখযোগ্য । গ্রামগুলি স্বায়ত্বশাসন ভোগ করতো । গ্রামের প্রধানকে বলা হতো, গ্রামক । গ্রামকরা গ্রামের সভায় সবাইকে সমাবেত করে স্থানীয় শাসনকাজ পরিচালনা করতেন । শাসনকাজের অন্তর্গত ছিল মোট তিনটি বিভাগঃ

১। সর্বার্থক

২। ভোহারিক

৩। সামরিক



সর্বার্থক, ভোহারিক ও সেনানায়ক মূলতঃ যথাক্রমে কার্যনির্বাহী, বিচার ও সামরিক বিভাগ । তৎকালীন সময়ে শাস্তি হিসেবে মৃত্যুদন্ড, হাত-পা কেটে দেয়া হতো ।



বিম্বিসার রাজধানী ‘রাজগৃহ’ নগর নির্মাণ করেন । মগধের আগের রাজধানী রাজগীর পাহাড়ে ঘেরা এবং সুরক্ষিত ছিল । কিন্তু সময়ের প্রয়োজনে জনসংখ্যা বৃদ্ধি ও আরো বহুবিধ কারনে পাহাড়ের বাইরেও রাজধানীর একটি অংশ নির্মাণ জরুরী হয়ে পড়ে । এটিকে তখন ‘বিম্বিসারপুরী’ আখ্যায়িত করা হয় । রাজগৃহের বর্ণনা দিতে গিয়ে কানিংহাম মত দেনঃ



“রাজগৃহের গরম পানির ঝর্ণার পাশের এলাকা যেখান থেকে দুই পর্বতশ্রেনীর পাদদেশ আরম্ভ হয়েছে ঐখানেই পুরাতন নগরীর সীমানা অবস্থিত । এটা মোটামুটি তিন পাহাড়ে ঘেরা নীচু সমতলভূমি ছিল । নগরীর প্রবেশদ্বার ছিল ঝর্ণার পাশেই ।”



রাজগৃহ তখনকার প্রসিদ্ধ বানিজ্যিক নগরীর প্রধান প্রধান সড়কগুলোর সাথে সংযুক্ত ছিল । এ সড়ক দিয়ে চম্পা, সাতেক, কৌশাম্বী, শ্রাবস্তী এবং কাশী ইত্যাদী বানিজ্যিক নগরী থেকে পন্য লেনদেন হতো ।



বিম্বিসার তাঁর রাজ্য বিস্তার ও সাম্রাজ্য গঠনের উদ্দেশ্যে বহু বিবাহ করেছিলেন । স্ত্রীর সংখ্যাটা আঁৎকে ওঠার মত । ১০০ নয়, ২০০ নয়- ৫০০ ! হ্যাঁ, পাঁচশ । কোশলের রাজা মহাকোশলের মেয়ে, রাজা প্রসেনজিৎ এর বোন কোশলাদেবীকে তিনি প্রথম বিয়ে করেন । যৌতুক হিসেবে কাশী রাজ্যের বিরাট একটি গ্রাম তার দখলে চলে আসে । গ্রামটির বাৎসরিক মোট রাজস্ব ছিল এক লক্ষ মুদ্রা !



উপরের অংশটি পড়লে স্বভাবতই বিম্বিসারের চরিত্র সম্পর্কে একটা ধারনা সৃষ্টি হবে । মনে হবে, লোকটি নিজের কামনা-বাসনাকে চরিতার্থ করে গেছেন । এর পক্ষে ভালবাসা প্রেম কি- এসব বোঝা সম্ভব নয় । অথচ বিম্বিসারের জীবনে প্রেম এসেছিল । তিনি এক ‘রূপোপজীবিনী’র প্রেমে পড়েছিলেন । কাহিনীটি ‘গল্প’ আকারে বলা জরুরী ।



**** **** ****



সম্রাট বিম্বিসার কোন এক যুদ্ধজয়ের শেষে প্রাসাদে ফিরে এসেছেন । প্রাসাদে জলসা শুরু হয়েছে । আনন্দ-উল্লাস-গান-কোলাহল । নানা প্রান্ত থেকে নিয়ে আসা হয়েছে রাজনর্তকীদের । বিম্বিসার তার সভাসদদের নিয়ে তাদের নৃত্যগীত উপভোগ করছেন । একসময় এক নর্তকীর নাচে বিমুগ্ধ হয়ে তিনি হাততালি উচ্ছ্বাস প্রকাশ করলেন । বললেন, ‘পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ঠ নাচ ছিল এটি !’



হঠাৎ মন্ত্রী গোপাল মৃদুস্বরে বলে উঠলো, ‘মহারাজ ! এইমাত্র যে নাচ আপনি দেখলেন তা বৈশালীর রাজনর্তকীর নখেরও যোগ্য না !’

গোপাল ছিলেন বৈশালীর এক রাজার পুত্র । পরবর্তীতে তিনি নিজ রাজ্য ত্যাগ করে বিম্বিসারের রাজ্যে চলে আসলে রাজা বিম্বিসার তাঁকে মন্ত্রীত্ব প্রদান করেন । তাঁর ধীশক্তি ও সততায় রাজা বিম্বিসার বরাবরই মুগ্ধ ছিলেন । গোপালকে অবিশ্বাস করার শক্তি তাঁর ছিল না । আবার পুরোপুরি বিশ্বাসও তিনি করতে পারলেন না । ঐ মুহূর্তে যদিও তিনি গোপালকে কিছুই জিজ্ঞেস করলেন না ।



কিছুদিন পরে একান্তে একদিন মহারাজ বিম্বিসার কথাটা তুলেই বসলেন, ‘গোপাল ! আমি ভাবছি সামনের রাজোৎসবে তোমাদের বৈশালীর রাজনর্তকীকে নিয়ে আসবো ।’

‘তাতো সম্ভব নয় মহারাজ ।’

‘কেন সম্ভব নয় ?’

‘বৈশালী ছেড়ে অন্য কোথাও যাওয়া তার জন্য অপরাধ ।’

‘সম্রাট বিম্বিসার বৈশালীরাজকে বললেও অসম্ভব ?’

‘বৈকী মহারাজ ! এই নারীর জন্য বহু রক্তপাত হয়েছে । বহু রাজা, রাজপুত্ররা কেবল এক নজর চোখের দেখার জন্য তার বাড়ির সামনে তাঁবু খাটিয়ে অপেক্ষা করে । যতক্ষণ পর্যন্ত তার আগ্রহ না জন্মে, কেউ তার বাড়িতে ঢুকবার অনুমতি পায় না ...’



রাজা চিন্তিত মুখ করে বললেন, ‘কি নাম এই নারীর ?’

‘আম্রপালী ।’

‘এমন অদ্ভুত নাম তো আগে কখনও শুনিনি । আমি আম্রপালীর সম্পর্কে সবকিছু শুনতে আগ্রহী । গোপাল তুমি এর বৃত্তান্ত আমাকে শোনাও !’



গোপাল কিছুক্ষণ ভেবে তার গল্প শুরু করলো ।



**** **** ****



বৈশালীর প্রজাতন্ত্র পৃথিবীতে জন্ম নেয়া প্রথম প্রজাতন্ত্রগুলির একটি । মহারাজ যেমনটা জানেন, আমাদের বৈশালী প্রজাতন্ত্র বৃজি রাষ্ট্রসংঘের একটি অংশ । বৃজি রাষ্ট্রসংঘের ৭৭০৭ জন ক্ষত্রিয়ের ভোটে রাজ্যের সমস্ত সিদ্ধান্ত নেয়া হয় । বৈশালীর শ্রাবস্তী নামক স্থানে (বর্তমানে গঙ্গার নিকটবর্তী একটি জেলা) মহানমা নামে সামন্ততান্ত্রিক সমাজের একজন জায়গীরদার বসবাস করতেন । একদিন তিনি নিজ উদ্যানে ভ্রমনরত অবস্থায় একটি আমগাছের নীচে এক কন্যা শিশুসন্তানকে ক্রন্দনরত অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখেন । মহানমা তাকে কুড়িয়ে পেয়ে নিজের স্ত্রীর কাছে নিয়ে যান এবং নিজের সন্তান হিসেবে লালন-পালন করবার সিদ্ধান্ত নেন । মহানমা তার নাম রাখেন ‘আম্রপালী’ । আম্রকাননে কুড়িয়ে পাওয়াতেই এই নাম । আম্বপালিকা বা অম্বা নামেও সে সুপরিচিত ।





(প্রাচীন পুঁথির চিত্রকর্মে মহানমার কোলে আম্রপালী)



আম্রপালীর বয়েস যত বাড়তে লাগলো সে তত বেশী রূপবতী হয়ে উঠতে লাগলো । আম্রপালীর বয়েস যখন এগারো বছর, মহানমা তখন আম্রপালীর বিয়ের জন্য পাত্রের সন্ধান করতে গেলেন তখন জনপদের ধন্যাঢ্য ব্যক্তিদের মধ্যে কোন্দল বেঁধে গেল । ক্রৌঞ্চ, শক্যসহ আরও বহু দেশের রাজপুত্র, মন্ত্রীপুত্র, ধনাঢ্য ব্যবসায়ীগণ, কাফেলা দলপতিরা আম্রপালির পাণিপ্রার্থী হতে লাগলেন । আম্রপালীর রূপে তারা এতোটাই মুগ্ধ যে একে অন্যের বিরূদ্ধে যুদ্ধ করে হলেও প্রত্যেকেই আম্রপালীকে নিজের করে নিতে চায় । নিজেদের রাজনৈতিক ক্ষমতার আস্ফালন বিষয়টিকে আমাদের বিধানসভা পর্যন্ত নিয়ে যায় ।



আম্রপালীকে নিয়ে এই বিতর্ক বৈশালী প্রজাতন্ত্রের হর্তাকর্তা লিচ্ছবি-গণের কানে গিয়ে পৌঁছুলে তারা তাদের এ বিষয়টিকে নিয়ে বিধানসভাতেই আলোচনা শুরু করে । আম্রপালীকে সভায় ডাকা হয় । এতোদিন তারা যে ঐশ্বরিক রূপের কথা কেবল লোকমুখে শুনে এসেছেন তা এই প্রথম তারা সামনাসামনি প্রত্যক্ষ করলেন । কেউই নিজের মুগ্ধতা ধরে রাখতে পারলেন না । সত্যিই স্বর্গের অপ্সরা আম্রপালীর পদনখকণা । তারা উত্তেজিত হয়ে সমস্বরে বলে উঠলো, ‘এতো স্ত্রীরত্ন ! একে কিছুতেই অন্য রাজ্যে যেতে দেয়া হবে না । ঈশ্বরের সৃষ্ট জগতে ঐশ্বরিক সৌন্দর্য উপভোগের অধিকার সবার । চাঁদ কারও একার হতে পারে না । তাই আম্রপালীকে একজন পুরুষের সঙ্গে বিবাহের অধিকার দেয়া ধর্মসম্মত নয় (?) । একে প্রজাতন্ত্রের প্রত্যেক পুরুষের স্ত্রী হিসেবে মনোনীত করে ‘নগরবধূ’ করে রাখা হোক ।’

রূপবতীর সতীত্বের মূল্য নগরপিতাদের কাছে ছিল না । আম্রপালী তাই আত্মহত্যার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন । মহানমা আম্রপালীর মনের কথা বুঝলেন । তিনি আম্রপালীর মাথায় হাত রেখে বললেন, ‘মাগো ! তুমি হয়তো আজ আত্মহনন করে মুক্তি পেয়ে যাবে । কিন্তু আমি আর তোমার মা রাজদন্ড মতে শূলবিদ্ধ হবো । এমন শাস্তি আমাদের দিও না ।’ আম্রপালী তখন কি ভেবেছিলেন আমি জানি না । একজন পুরুষের পক্ষে জানাও হয়তো সম্ভব নয় !



আম্রপালী তার পালক পিতা-মাতার মুখের দিকে চেয়ে আত্মহননের চেষ্টায় ব্যর্থ হলেন । তাকে ‘নগরবধূ’ ঘোষনা করে নগরের সবচে মনোহর স্থানে একটি প্রাসাদ নির্মাণ দেয়া হলো । প্রাসাদের নাম দেয়া হলো ‘আম্রকুঞ্জ’ । মহানমা প্রজাতন্ত্রের কর্তাব্যক্তিদের কাছে কিছু শর্ত রেখে বললেন, শর্ত না মানা হলে আম্রপালী আত্মহনন করার কথা সাফ জানিয়ে দিয়েছে । শর্তানুযায়ী নিয়ম করে দেয়া হলো, এক দিনে কেবল একজন পুরুষই আম্রকুঞ্জে প্রবেশাধিকার পাবে । একদিন সেখানে থাকার জন্য তাকে পাঁচশ কার্শপণ (তৎকালীন মুদ্রা) প্রদান করতে হবে । বিধানসভার তদারকীকাজে যদি কেউ প্রাসাদে প্রাসাদে প্রবেশ করতে চায় তাহলে ৭ দিন পূর্বেই তাকে আম্রপালীর কাছ থেকে অনুমতি নিতে হবে ।



‘পতিতা’ হিসেবে আম্রপালীর নতুন জীবন শুরু হয় । আম্রপালী এতোটাই সুপ্রসিদ্ধ হয়ে পড়ে যে পরবর্তীতে তাকে বৈশালী জনপদ-কল্যানী আখ্যা দেয়া হয় । সে বৈশালীর রাজনর্তকী পদ প্রাপ্ত হন ।



**** **** ****



পুরো বৃত্তান্ত শুনবার পরে মহারাজ বিম্বিসার অস্থিরকন্ঠে বললেন, ‘এই নারীকে না দেখতে পেলে তো আমার জীবন ব্যর্থ ! গোপাল ! আমার সৈন্যবাহিনীকে প্রস্তুত হতে বলো । আমি আজই বৈশালী আক্রমন করতে চাই । বৈশালী জয় করেই আমি আম্রপালীকে আমার রাজ্যে নিয়ে আসতে চাই !’



গোপাল বলল, ‘মহারাজ অস্থির হবেন না । একজন পতিতা নারীর জন্য অন্য রাজ্য আক্রমন করা আপনাকে শোভা দেয় না ।’

‘কিন্তু গোপাল আম্রপালী তো পতিতা না । তাকে জোড় করে বেশ্যাবৃত্তিতে জড়ানো হয়েছে ।’

‘তবু মহারাজ । ভাগ্যের নির্মমতায় হোক বা রাজাদের দুষ্কর্মে, আম্রপালী এখন পতিতাই বটে । আপনি যদি চান তো আপনার সাথে তার দেখা করানো যেতে পারে । তবে, বৈশালী আক্রমনকে আমি সমর্থন করতে পারি না ।’

‘কিভাবে দেখা করা সম্ভব ??’



গোপাল উত্তর দিলো না । তবে তার কৌশলী হাসি অনেককিছু বলে দিয়ে গেল ।



**** **** ****



দুজন মুসাফির ঘোড়ার পিঠে চড়ে বণিকের ছদ্মবেশে রাতের অন্ধকারে বৈশালীতে প্রবেশ করলো । কেউ চিন্তাতেও আনতে পারলো না ঘোড়ার সওয়ারী একজন সম্রাট বিম্বিসার । আর অপরজন স্বয়ং বৈশালীরই রাজপুত্র গোপাল । সারা রাতের যাত্রা শেষ করে খুব সকাল সকাল তারা আম্রপালীর প্রাসাদের সামনে এসে পৌঁছায় ।



এই ভোরেও আম্রকুঞ্জের সামনে বিশাল তাঁবুর বহর । আম্রপালীকে এক ঝলক দেখার জন্য বিভিন্ন দেশের রাজারা আম্রকুঞ্জের সামনে তাবু টাঙিয়ে বসে আছেন ! নিজের চোখে না দেখলে বিম্বিসার একথা বিশ্বাসই করতেন না । সারাদিন গোপাল অনেকে সাথে আলোচনা ও টাকা-পয়সার লেনদেন শেষ করে দুদিন পর বিম্বিসারকে আম্রপালীর দেখা মিলবার নিশ্চয়তা দিল ।



দুদিন কেটে গেল অপেক্ষায় অপেক্ষায় । প্রতীক্ষার পালা শেষ হলো । মহারাজ আম্রপালীর প্রাসাদে প্রবেশ করলেন । আম্রকুঞ্জ সম্পর্কে যা শুনেছেন তা বুঝি কম-ই ! মনে হচ্ছে তার সম্রাজ্ঞীর মহলও বুঝি এরচে’ ক্ষুদ্র ! প্রবেশদ্বার পেরোতেই অপূর্ব সব পোর্ট্রেট । এদের বেশিরভাগকেই বিম্বিসার চেনেন । এদের সবাই হয় সম্রাট, নয়তো প্রসিদ্ধ কবি অথবা শিল্পী । বোঝাই যাচ্ছে আম্রপালী চিত্রকলার ভক্ত । বিভিন্ন দেশের খ্যাতিমান চিত্রকরদের অর্থের বিনিময়ে এসব নিঁখুত ছবি তৈরী করবার কাজে নিযুক্ত করা হয়েছে । হয়তো এই পোর্ট্রেট এর সবাই আম্রকুঞ্জে কোন না কোন সময় প্রবেশ করেছে । সামনে বসে না থাকলে এমন নিঁখুত ছবি তৈরী করা কোন চিত্রকরের পক্ষেই সম্ভব নয় ।



বিম্বিসার অন্দরমহলে প্রবেশ করতেই তার চোখ ঝলসে গেল । যে মেয়েটি তাঁকে অভিবাদন জানাচ্ছে সে পৃথিবীর কোন নারী হতে পারে না । এ নিশ্চয়ই কোন অপ্সরী ! সম্রাট চোখ ফেরাতে পারলেন না । তাঁর বুকের ভেতর অদ্ভুত ধরনের ব্যথার সৃষ্টি হলো । বড় সুখের ব্যথা !

সমস্ত বিকেল জুড়ে ক্লাসিকাল সঙ্গীত ও নিজের অপূর্ব নৃত্যধারায় আম্রপালী সম্রাটকে মুখর করে রাখলেন । তার অসাধারন দক্ষতায় মুগ্ধ মহারাজ আম্রপালীর ব্যাপারে গোপালের প্রশংসার কথা মনে করে দীর্ঘশ্বাস ফেললেন । গোপাল আসলে কম-ই বলেছে । শুধুমাত্র মুখের কয়েকটি শব্দ দিয়ে এর পুঙ্খানুপুঙ্খ বর্ণনা দেয়া অসম্ভব ।



বিম্বিসার উঠে দাঁড়ালেন । আম্রপালীর হাত থেকে সেতার টেনে নিয়ে নিজের আঙুল তারের ওপর রাখলেন । সেতারের তারে যেন ঝড় বইতে লাগলো । সেই ঝড়ের সঙ্গে সম্রাটের কন্ঠ আম্রপালীকে মোহাচ্ছন্ন করে ফেলল । আম্রকুঞ্জে সবাই অবাক হতেই আসে, অবাক করতে নয় । আজ এই মুসাফির তাকে অবাক করে দিয়েছে । আম্রপালী সম্রাটের কাছে এসে বলল, ‘মুসাফির ! সত্য বলুন । কে আপনি ?’

‘আমি সম্রাট বিম্বিসার । আমার মন্ত্রীর মুখে তোমার সৌন্দর্যের প্রশংসা শুনে আমার এখানে আসা । তোমার ওপর যে অবিচার হয়েছে তা আমি শুনেছি ।’



আম্রপালী সম্রাটের হাত ধরে টেনে তাকে একটি কক্ষে নিয়ে যায় । সম্রাট অবাক হয়ে দেখেন তাঁর বিশ বছর বয়সের একটি বিশাল ছবি প্রাসাদের দেয়ালে টানানো । আম্রপালী ব্যাকুল কন্ঠে বলল, ‘এই রাজপুত্রই কি আপনি ?’



সম্রাট সম্মতি জানালে আম্রপালী আকুল হয়ে বললো, ‘মহারাজ আমি ধন্য । আপনার শৌর্য-বীর্যের কথা এতো শুনেছি । আপনার যুদ্ধের প্রায় সমস্ত কাহিনী আমার মুখস্ত । আপনার সঙ্গীত-সুরেও আজ আমায় অবাক করলেন । কোন সম্রাট এতো মধুর করে গাইতে জানে এ আমার ধারনাতেই ছিল না । যার হাতে সেতার মানায় তার হাতে তরবারী মানানোর কথা নয় । পাওনি কি করে মানিয়ে নিলেন ? বিশ্বাস হচ্ছে না, সম্রাট বিম্বিসার আমার সামনে দাঁড়িয়ে আছে !’



মহারাজ হাসলেন । হঠাৎ করেই তিনি অনুভব করলেন, এই অপ্সরীটিকে ছাড়া পৃথিবী নিরর্থক । তিনি আম্রপালীকে নিজ বাহুবন্ধনে জড়িয়ে নিলেন । তারপর প্রেমের ঘোরবন্দী অবস্থায় হারিয়ে গেলেন এই চিরচেনা ভুবনের কলরব থেকে । দূরে । বহুদূরে ।



মহারাজ বিম্বিসার তিনদিন যাবত আম্রকুঞ্জে আছেন – বিষয়টি চাপা থাকে না । গুপ্তচররা লিচ্ছবিগণের কাছে খবর পৌঁছে দেয় । তাঁরা বিম্বিসারকে গ্রেফতারের সিদ্ধান্ত নেয় । কিন্তু, নিজেদের শর্তে নিজেরাই আটকা পরে তারা আম্রকুঞ্জে ঢুকতে ব্যর্থ হয় । ৭ দিন আগে তারা আম্রকুঞ্জে প্রবেশের ব্যাপারে কোনই অনুমতি নেয় নি । লিচ্ছবীগণ আম্রকুঞ্জের বাইরে সিপাহী মজুদের নির্দেশ দেন ।



বিম্বিসার একথা জানতে পেরে গোপালকে ডেকে দ্রুত মগধে যাওয়ার নির্দেশ দেয় । মগধ থেকে সেনা নিয়ে এসে বৈশালী আক্রমণ করাই তার মূল উদ্দেশ্য । আম্রপালীর প্রেমে তিনি জ্ঞানশূন্য হয়ে পড়েছিলেন । কিন্তু, শত হলেও বৈশালী গোপালের নিজ মাতৃভূমি । গোপাল অনেক কষ্টে অনেক যুক্তিতর্কের পর সম্রাটকে শান্ত করে । সে সম্রাটকে বোঝাতে সক্ষম হয় । এমনকি আম্রপালি পর্যন্ত সম্রাটকে অনুরোধ করে বৈশালী থেকে পালিয়ে চলে যাওয়ার জন্য । বৈশালী আক্রমন মানেই সাধারন মানুষের প্রানক্ষয় । আম্রপালী তা চায় না । শেষ পর্যন্ত রাজা গোপাল ও আম্রপালীর কথা মেনে নেয় ।



রাত্রি দ্বিপ্রহর । বিদায়লগ্ন । আম্রকুঞ্জ ত্যাগের আগমুহূর্তে বিম্বিসার আম্রপালীর হাতে একটি রোব আর একটি আংটি তুলে দিল । সম্রাট বেদনাভরা কন্ঠে বললেন, ‘আমি জানি আম্রপালী তুমি আমায় ভালবাসো । খুব শীঘ্রই আমি তোমায় মগধে নিয়ে যেতে আসবো । সেই দিনটি যদি খুব শীঘ্র আসে তো ভালো । আর যদি আমার দেরী হয় তাহলে আমার এই আংটিটি তোমার কাছে রাখো । আমাদের প্রনয়ের ফল যদি মেয়ে হয় তাহলে তাকে তোমার কাছে রেখো আর ছেলে হলে আংটিটি আমার সন্তানকে পড়িয়ে আমার কাছে তৎক্ষনাৎ পাঠিয়ে দিও, যাতে তাকে দেখামাত্র আমি চিনতে পারি । তোমার পুত্র রাজপুত্র হিসেবে সাম্রাজ্যের উত্তরাধিকারী হবে !’



বিম্বিসার আম্রপালীর জন্যে বৈশালী অভিমুখে কোন যুদ্ধযাত্রা করেছিলেন কিনা একথা জানা যায় না । তবে আম্রপালীর গর্ভে বিম্বিসারের ঔরসজাত একটি পুত্রসন্তান জন্মলাভ করে । এই পুত্রকে পরবর্তীতে অত্যন্ত গোপনে বণিকদের কাফেলায় করে বিম্বিসারের কাছে পৌঁছে দেয়া হয় । শিভারাবস্তুর বর্ণনা অনুযায়ী, তিনি তাঁর এই পুত্রের নাম রাখেন ‘অভয়’ । অনেকের মতে, আম্রপালীর পুত্রের নাম অভয় নয়, বিমল কোনদান্না । বিম্বিসারের অভয় নামের পুত্র তাঁর উজ্জয়িনীর স্ত্রী নন্দা বা পদ্মাবতীর গর্ভজাত । বিম্বিসারের মৃত্যুর পরে বিমল বৌদ্ধধর্মের সাধু হয়ে যান । জৈন ধর্মগ্রন্থগুলোও অভয়কে আম্রপালীর সন্তান হিসেবে স্বীকার করে না । তীব্বতীয়ান কথন অনুযায়ী, বিম্বিসারের অভয় নাম্নী পুত্র আম্রপালীর পুত্র বিমলকে দত্তক নেয় । তিনি তার নাম রাখেন কিজু (জীবক) । জীবক চিকিৎসক হিসেবে জনপ্রিয়তা লাভ করে এবং নির্দিষ্ট সময়ে বৌদ্ধধর্ম গ্রহন করে ।



আম্রপালীকে নিয়ে ভারতীয় সিনেমা ও সাহিত্যে অনেক রকম চর্চা হয়েছে । ১৯৬৬ সালে হিন্দী ভাষায় মুক্তিপ্রাপ্ত লেখ ট্যান্ডন পরিচালিত ‘আম্রপালী’ নামক চলচ্চিত্রে বৈজয়ন্তীমালা নাম ভূমিকায় অভিনয় করেছিলেন । আচার্য চতুর্সেনের ‘বৈশালী কি নগরবধূ’ ও অনুরাগ আনন্দের ‘The legend of Amrapali’ তাঁকে নিয়ে রচিত দুটি বিখ্যাত উপন্যাস ।







(আম্রপালী চরিত্রে বৈজয়ন্তীমালা)



আম্রপালীর দেহাবশেষ বর্তমানে বিহারের আম্বারা গ্রামে রক্ষিত আছে । ভারত সরকার আম্রপালীর জন্মস্থানকে ট্যুরিস্টদের ভ্রমনে সহায়তার জন্য একে ‘আম্রকানন’ নামের চিত্তাকর্ষক গ্রাম তৈরীর ঘোষনা দিয়েছিল । আম্রকাননে আম্রপালীর একটি মূর্তি তৈরীরও কথা ছিল । যদিও তা এখনও বাস্তবে রূপান্তরিত হয় নি ।



তথ্যসূত্রঃ



১। জৈন ধর্মগ্রন্থ

২। তিব্বতীয়ান গ্রন্থাদি

৩। চাকমামানস

৪। মভাভস্ম

৫। অশ্বঘোষের ‘বুদ্ধচরিত’

৬। বৌদ্ধ ধর্মগ্রন্থ

৭। হিউইয়েন সাং এর বর্ণনামতে

৮। The age of imperial unity, পৃঃ ১৯

৯। পালি ভাষায় লেখা আম্বপালিকাসূত্র

১০। ইন্টারনেট



// দায়মুক্তিঃ



খ্রীষ্টের জন্মেরও প্রায় ছয়শ বছর আগের ভারতবর্ষ কেমন ছিল ? কেমন ছিল আমাদের এই বাংলাদেশটি ? কেমন ছিল সেখানকার অধিবাসীরা ? তাদের চিন্তাধারা-জীবনযাপন পদ্ধতি কেমন ছিল ? রাজারা কেমন ছিলেন ?

এসব প্রশ্নে মনে জাগাটা অস্বাভাবিক নয় । তবে উত্তর খুঁজে পাওয়াটা কঠিন ব্যাপার । ইতিহাস ছলনা করতে পছন্দ করে । ঐতিহাসিকগণ একে অপরের যুক্তি মানতে চান না, কষ্ট হয় আমাদের – সাধারন কৌতুহলী পাঠকদের । আমি এক্ষেত্রে কল্পনা করে নিতে পছন্দ করে । ‘ইমপারফেক্ট’ মানেই যে ‘খারাপ’ তা-তো না । ‘মগধ সাম্রাজ্যঃ পুরাণে বর্ণিত রহস্যাবৃত যুগ’ লেখায় আমি উত্তরগুলো খুঁজে বেড়িয়েছি ।



বিদেহরাজ্যের পতনকাল থেকে মগধ সাম্রাজ্যের উত্থানের সময়টুকুকে ঐতিহাসিকরা ‘ষোড়শ মহাজনপদের যুগ’ বলে ডাকেন । ১৬টি মহাজনপদে বিভক্ত ছিল তখন এখনকার এই ভারতবর্ষঃ



১। কাশী

২। কোশল

৩। অঙ্গ

৪। মগধ

৫। বজ্জি / বৃজিসংঘ (বৈশালী গণরাজ্য)

৬। মল্ল / মালব

৭। চেদী

৮। বংশ বা বৎস

৯। কুরু


১০। পাঞ্চাল

১১। মৎস্য

১২। শুরসেন

১৩। অস্মক

১৪। অবন্তী

১৫। গান্ধার

১৬। কম্বোজ



প্রশ্ন উঠতেই পারে বাকী ১৫টি মহাজনপদকে পেছনে রেখে প্রথমেই মগধ’কে নিয়ে লেখার কারন কি ? কারন একটাই । খ্রীষ্টপূর্ব ছয় শতকে বাংলা-বিহার (বর্তমান পাটনা ও গয়া জেলা) নিয়ে গড়ে ওঠা জনপদটির নামই মগধ । আরাকান (বর্তমানে চট্টগ্রামের কিছু অংশ) ছিল মগধের রাজ্য । প্রাচীনকাল থেকেই আরাকানীরা ‘মগ’ নামে পরিচিত । বাংলাদেশে আজও মগ উপজাতীদের পৈত্রিক ভিটে রয়ে গেছে । তাই বলা চলে, বর্তমান বাংলাদেশের বেশ খানিকটা জুড়েই মগধ সাম্রাজ্যের প্রভাব ছিল বিস্তৃত পরিসরে ।



তাছাড়া মগধ সাম্রাজ্যের রাজাদের ইতিহাসও বড় অদ্ভুত । ব্যক্তিগতভাবে আমি মগধরাজদের কাহিনী ও মিথ গোগ্রাসে গিলেছি । আমার কাছে ইতিহাসের চেয়ে অতিকথনগুলোকেই বেশী দামী বলে মনে হয়েছে । মজার গল্পগুলো একা পড়া যায় না । সবাইকে নিয়ে পড়তে হয় । এই সিরিজ লেখবার মূল উদ্দেশ্যও এটাই ।
//

মন্তব্য ০ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.