নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

জুবায়ের সুহান

সুহান সুহান

দ্বিধান্বিত

সুহান সুহান › বিস্তারিত পোস্টঃ

সময় এবং দুঃখ

১৮ ই জুলাই, ২০১৩ সন্ধ্যা ৬:০১

ঠিক দশ বছরের সম্পর্ক হঠাৎ এমনভাবে শেষ হয়ে গেল যে নিশাত কিছু ভাবতে পারছে না। কিছু অনুভবও করছে না। কেমন জানি ফাঁকা লাগছে। আর কিছু না। হ্যাঁ, নেহার সাথে নিশাতের দশ বছরের সম্পর্ক। সেই ইউনিভার্সিটি থেকে। সবই ঠিক ছিল। শেষ দিকে এসে নেহা কেমন যেন নার্ভাস হয়ে গেল। অর হঠাৎ করে মনে হল এই সম্পর্ক সামনে গেলে টিকবে না। ও নিশাতের সাথে সুখী হবে না। দশ বছর পর এসব কথা শুনে নিশাতের কেন জানি কিছুই মনে হয় নাই। অপমানজনক লাগতে পারত। খুব কষ্ট লাগতে পারত। কোনটাই হয়নি। এর একটা কারণ হতে পারে যে শেষদিকে নেহা মুক্তি পাওয়ার জন্য খুব আকুল হয়ে ছিল। নিশাত শেষে এসে বুঝতে পেরেছে যে ও আসলে মুক্তি চাচ্ছে। পছন্দের মানুষকে জোর করে আটকে রাখার মত মানুষ নিশাত নয়। কিছু আত্মসম্মানবোধ এখনো রয়ে গেছে।



কিন্তু সমস্যা হলো এই যে বিশাল একাকীত্ব এটা পাড় করা যায় কিভাবে। নেহা যখন ছিল তখন ওর আর কিছু লাগত না। সারা দুনিয়াই হাতের মুঠোয় মনে হত। নিজেকে সুখী মনে হত। হ্যাঁ, শেষ দিকে শুধু ঝগড়া হত। কিন্তু তাতেও তো অভিমানের একটা জায়গা ছিল। এখন তো অভিমান করারও জায়গা নেই।



না, নেহার উপর তার সেরকম রাগ অভিমান কিছু নেই। সে হঠাৎ বদলে গেছে। কেউ তো আর জোর করে বদলায় না। সময়ের সাথে সাথে মানুষ বদলায়। এটাই জগতের নিয়ম।



নিশাত মোবাইল এর কন্টাক্ট লিস্ট দেখছে। কাকে কল করা যায়!! হাস্যকরভাবে নিশাত খেয়াল করলো যে তার এই মোবাইল ভর্তি কন্টাক্ট লিস্ট থেকে একটা সিঙ্গেল নাম্বার নেই যেখান থেকে সে কাউকে কল দিতে পারে।



বাসা থেকে বের হয়ে রাস্তায় হাঁটতে থাকল। চারপাশে সবাই ব্যস্ত। সবার কত কিছু করার আছে। একমাত্র মনে হয় সেই জানে না সে কি করবে। কোথাও ঘুরে আসবে? লাভ কি? সেই তো একাই!!! এর হাত থেকে তো মুক্তি নেই। এরকম পরিস্থিতিতে মানুষ আত্মহত্যার কথা ভাবে। ঠিক এরকম না। এই একাকীত্বের বোঝা যখন খুব বেশি ভারী হয়ে যায় তখন। আর এমনিতে ‘মৃত্যুবিলাস’ তো সব মানুষই কম বেশি করে। সে মরলে কে কাঁদবে, কে দেখতে আসবে এইসব হাবিজাবি চিন্তা ছোটবেলায় মা বকা বা মাইর দিলেই করত নিশাত। নিজের মনেই হাসল সে।



একজন মানুষ আত্মহত্যা করার পর আশেপাশের মানুষেরা কত বিজ্ঞ মতামত দেয়। আত্মহত্যা কোন সমাধান নয়। জীবনের সাথে যুদ্ধ করাটাই আসল পরীক্ষা। এরকম আরো অনেক নীতিবাক্য। অথচ আত্মহত্যা করা মানুষটা যখন বেঁচে ছিল। তখন তার দুঃখ বুঝার, তাকে নিয়ে ভাবার কেউ ছিল না। অথচ মরার সাথে সাথে সব দৌড় মেরে হাজির কিছু বড় বড় কথা বলার জন্য।



বাসায় চলে আসল নিশাত। আবার সেই কম্পিউটার। আবার সেই ফেসবুক। একটা বাচ্চা মেয়ে কয়েকদিন ধরে তাকে নক করছে। এর সাথে কি কথা বলা যায়!!! নাহ!! এই বয়সের মেয়েদের দুনিয়া খুব রঙ্গিন। এত রঙ থেকে হয়তো তার কিছুটা দূরে থাকা উচিৎ। হয়তো সাময়িক সময়টা ভালই যাবে। কিন্তু এর ভবিষ্যৎ কখনো ভাল হবে না। হয় না। সম্প্রতি সম্পর্ক থেকে বের হওয়া মানুষ কাঁদার জন্য কাঁধ চায়। কান্না শেষ হয়ে গেলে সেই কাঁধ সে দূরে ঠেলে সরিয়ে দেয়। জেনে শুনে একটা বাচ্চা মেয়েকে ব্যবহারের কোন মানে হয় না।



-ভাইয়া আছ?

-হম। আছি।

-তোমার কি মন খারাপ?

মেয়েটা কাঁধ বাড়িয়ে দিতে চাইছে। নিশাত লগ আউট হয়ে গেল।

--------------------------------------------------------------------------





গভীর রাত মানুষের সবচেয়ে কষ্টের সময়। ছোট কষ্ট বড় কষ্ট সব যেন বিকট আকৃতি ধারণ করে। মানুষ কাঁদে। সবাইকে লুকিয়ে কাঁদে। পৃথিবীর সব দুঃখী মানুষ বোধহয় অসহায় হয়ে যায় এই রাতের কাছে। অফিস এর খিল খিল করে হাসা মেয়েটা কাঁদে। রাগী বস কাঁদে না। তার কান্না আসে না। সে ওয়াইন এর বোতল নিয়ে বসে। বাসার ছোট্ট ছেলেটা কাঁদে বুক ভর্তি অভিমান নিয়ে। মা তাকে সব সময় মারে। কখনো আদর করে না। নাফিসা কাঁদে স্বামীর অত্যাচারে। তার মদ্যপ স্বামী তাকে মেরে ক্লান্ত হয়ে ঘুমাচ্ছে। মার খেয়ে সে তার ঘুমন্ত ছোট ছেলেটাকে জড়িয়ে ধরে কাঁদে। ছেলে ঘুম থেকে উঠে মাকে কাঁদতে দেখে হাউমাউ করে কেঁদে উঠে। এসবই রাতে ঘটে।



কিছু মানুষ কাঁদতে পারে না। তাদের কান্না আসে না। তারা চেষ্টা করে কাঁদতে। হয় না। নিশাতও সেই দলে। তার ঘুম হয় না রাতে। ভোর রাতের দিকে হাল্কা তন্দ্রা হয়। ঘণ্টা দু-এক পরে ঘুম ভেঙ্গে যায়। মাঝে মাঝে বুকে খুব চাপ ব্যথা। এটা খুব অদ্ভুত ব্যথা। বুকের ভিতরে এমন একটা জায়গায় ব্যথা যে জায়গার অস্তিত্ব সম্পর্কেই আগে জানতো না নিশান।



মানুষ কষ্টসহিষ্ণু। এমন কোন কষ্ট নেই যা মানুষ সইতে পারে না। কষ্টের সাথে বসবাস করতে শিখে যায়। আশ্তে আস্তে অভ্যস্ত হয়ে যায়। তারপর এটাকেই স্বাভাবিক মনে হয়।



এরপর বহু বছর কেটে যায়। নিশাত মায়ের পছন্দে বিয়ে করে। সুখীও হয়। একদিন স্ত্রীকে নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় ঘুরতে যায়। ঘুরতে ঘুরতে একটা জায়গায় এসে থমকে দাঁড়ায় নিশাত। এই জায়গায় সে অনেক বছর আগে নেহা নামের একটা মেয়ের সাথে এসে দেখা করতো। অনেক সময় কেটেছে এই জায়গায়। যেন কতকাল আগের কথা। মনে হয় সেটা ছিল অন্য কোন নিশাত। আর মেয়েটাও ছিল অন্য কোন নেহা। তারা হয়তো সেই সময়টাতেই আটকে আছে। এখনের এই সময়ের সাথে সেই সময়ের, এই মানুষের সাথে সেই মানুষের কোন মিল নেই।



নিশাত একটু পিছিয়ে পড়েছে। সামনে থেকে তার স্ত্রী ডাকে। ‘কই? চল!!!’

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.