নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

জুবায়ের সুহান

সুহান সুহান

দ্বিধান্বিত

সুহান সুহান › বিস্তারিত পোস্টঃ

অদ্ভুত প্রেমের গল্প- (পর্ব ১৫)

২০ শে আগস্ট, ২০১৩ রাত ১০:৫২

পুলকের মনটা বেশ খারাপ। অফিসে তাঁর বসের বস তাঁর কাজে খুশি নয়। না, সরাসরি এরা দোষারোপ করে না। অন্যভাবে কথার মারপ্যাঁচে বুঝিয়ে দেয়। পুলকের ডাইরেক্ট বসের সাথে পুলকের খুবই ভালো সম্পর্ক। অন্যান্য ডিপার্টমেন্টের কলিগরা তাঁর বসভাগ্য নিয়ে বেশ ঈর্ষা করে। পুলকের বস রায়হানুল ইসলাম মাটির মানুষ। তিনি পুলককে অনেক পছন্দ করেন। ছোট ভাইয়ের মত স্নেহ করেন। যুগে যুগে আমরা যত সামনে আগাচ্ছি আমাদের মধ্যে দ্বৈত সত্তার আবির্ভাব প্রকটভাবে দেখা দিচ্ছে। আমাদের মুখে এক, অন্তরে আরেক। রায়হান সাহেব কখনো এই জিনিসের সাথে মানিয়ে নিতে পারেননি। তারপরো যতটুকু মানিয়ে নিতে হয় সেটা জোর করে। খুশি মনে নয়। পুলককেও তাঁর সেইরকম মনে হয়। এই জন্য যে কোন কিছুর অনেস্ট অপিনিওন এর বেলায় তিনি পুলককে ডাকেন।



রায়হান সাহেবের বস ভারতীয়। নাম বিবেক রয়। উনি কাজ যতটুকু করায় তাঁর চেয়ে যন্ত্রণা বেশি দেয়। এই সকল যন্ত্রণা মানসিকভাবেও হয়। রায়হান সাহেব তাঁর নিচে কাজ করা সবাইকে আগলিয়ে রাখতে চান। এইসব মাল্টি-ন্যাশনাল কোম্পানি এর মালিক পক্ষ কখনো চায় না কর্মচারীদের মধ্যে সুসম্পর্ক থাকুক। তাঁরা চায় এদের মধ্যে একটা দ্বন্দ্ব কাজ করুক সব সময় এতে তাঁরা কখনো একতাবদ্ধ হতে পারবে না। বিবেক কোনভাবে বুঝতে পেরেছে যে রায়হান সাহেব পুলককে আর দশ জনের চেয়ে একটু বেশি পছন্দ করেন। তাই তিনি রায়হান সাহেবকে বলেছেন, “ Mr. Ahmed seems to be very relaxed. Make him work harder. “ রায়হান সাহেব কিছু বললেন না।



একটু পরেই বিবেক পুলককে ডেকে পাঠালেন এবং তাঁর কাজের উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করলেন। পুলক গিয়ে রায়হান সাহেবকে সব বললেন। রায়হান সাহেব একটু সময় নিলেন। পরে পুরো ঘটনা পুলককে বুঝালেন যে এটা একটা কর্পোরেট স্ট্রেটেজি। রায়হান সাহেবের জায়গায় অন্য যে কেউ হলে পুলক বিশ্বাসই করতো না। কিন্তু পুলকের মনটা খুবই খারাপ হয়ে গেল। কাজে ফাঁকি সে একদমই দেয় না। আসলে ফাঁকি সে দিতে পারে না। দিলে তাঁর খুব অস্বস্তি লাগে। নিজের কাজ খুব অবহেলায় করলেও অন্যের কাজ সে খুব দায়িত্বের সাথে করে। তারপরেও কর্মক্ষেত্রে এসব হলে মন খারাপই হওয়ার কথা। তাঁর খুবই মন খারাপ হল। সে ওয়াশরুমে কিছুক্ষণ একা বসে রইল। বের হয়ে রীতাকে ফোন দিল। সব বলল ওঁকে। পুলক খেয়াল করে দেখেছে যে যতই সে নিজের পুরোটা দিয়ে কাজ করে, তারপরো কোথাও যেন ঘাটতি থেকে যায়। এর চেয়ে কাজ না করাই ভালো। মনের সব অভিমানের কথা সে রীতাকে ফোন করে বলতে লাগল। রীতা সব শুনল। বাচ্চাদের যেভাবে বুঝায় ঠিক সেভাবে পুলককে বুঝাল যে চারপাশে পুলকের মত ভালো একজনও নেই। তাই সবাই পুলককে ঈর্ষা করে। রীতা তো জানে পুলক সবচেয়ে ভালো। সবার চেয়ে আলাদা। পুলকের মন তরল হল। তারপর তাঁরা আরো কিছুক্ষণ এমনি অনেক টক ঝাল মিষ্টি আলাপ করল। পুলকের মন একদম ভালো হয়ে গেল। ৫ মিনিটেই।



.......................................................................................................



নাজমা হককে হুজুর সময় দিয়েছেন এক সপ্তাহ। তিনি অবশ্য এরই মধ্যে মেয়ের চুল যোগাড় করে ফেলেছেন। কিন্তু এই এক সপ্তাহের মাঝেই অনেক কিছুই ঘটল।



রীতা অনেক চিন্তা করে সাহস করে ঠিক করেছে যে সে আজকে মাকে পুলকের কথা বলবে। কিভাবে বলবে আর কী বলবে এটা নিয়ে এখনো একটু রিহারসেল দিতে হবে নিজে নিজে। মাকে সে ছোটবেলা থেকেই ভয় পায়। সেই ভয় এখনো কাটেনি। মা যদি না করে দেয়। তাহলে কী হবে? কী করবে সে? ভাবতেই মাথা গুলিয়ে ওঠে তাঁর।



অনেক জল্পনা কল্পনার অবসান ঘটিয়ে মা-কে পুলকের কথা বলে রীতা। নাজমা হক চুপচাপ শোনেন। কিছু বলেন না। রীতার বলা হয়ে গেলে রীতা মায়ের দিকে আড় চোখে তাকায়। তাঁর মা ভাবলেশহীন মুখে বসে আছে। কিছু বলছে না। রীতা তাঁর নজর সরিয়ে আবার মাটির দিকে আনে। তাঁর বুকটা হাল্কা লাগছে। যাক!! মাকে বলা হয়ে গেছে। নাজমা হক কিছুই না বলে উঠে চলে যান।



বাসার ভেতরটা আবার থমথমে। রাতের খাওয়া দাওয়া হচ্ছে টেবিলে। সবাই চুপচাপ খাচ্ছে। খাওয়া শেষ করে যে যার মত চলে গেল। রীতা টেবিল গোছালো। মায়ের সাথে রান্না ঘরে সাহায্য করলো। কিন্তু নাজমা হক একদম চুপ। মেয়ে যে তাঁর কাছে কিছু শুনতে চাচ্ছে, তা তিনি একদমই পাত্তা দিচ্ছেন না। রীতা যতক্ষণ পারে মায়ের কাছে কাছে থাকল। আস্তে আস্তে সে নিজের রুমে চলে গেল।



রাত ১২টা। রীতা শুয়ে পড়েছে। কিন্তু তাঁর খুব অস্থির লাগছে। মা কিছুই বলল না!! হ্যাঁ না কিছু তো বলবে! পাশে মিতা ঘুমাচ্ছে। আর যাই হোক! মিতা রাত জাগতে পারে না। ১২টা বাজতে না বাজতেই ঘুম। এ বাড়িতে রাত জাগার চল নেই। পুলক বেশ রাত জাগতে পারে। যদিও অফিস থাকে বলে ইচ্ছা থাকলেও সে এখন রাত জাগে না। আগে নাকি ভোরের দিকে ঘুমাত ছাত্র থাকা অবস্থায়। ওঁকে এখনো জানানো হয়নি যে মাকে সে ওর কথা বলে দিয়েছে। নিজের অস্থিরতাটা পুলকের মধ্যে দিতে চাচ্ছে না। বেচারা ঘুমাক রাতটুকু ঠিকমত।



রীতা মিতার একটাই রুম। দরজা বন্ধ থাকে না রাতে। হাল্কা ভেজানো থাকে। রুমের বাইরে করিডোর। করিডোরে একটা বাতি জ্বলে রাতে। সেখানে কারো ছায়া দেখা গেল। নাজমা হক আস্তে করে রুমে ঢুকলেন। রীতা উঠে বসল। নাজমা হক বিছানার পাশে বসলেন। অনেকক্ষণ চুপ করে রইলেন।



হঠাৎ বললেন, “ তোমার এ পছন্দ আমি কখনো মেনে নেব না। আমি জানি আমার এ কথা তোমার ভালো লাগবে না। কিন্তু তুমি কখনো এই ছেলের সাথে সুখী হবে না। আমি জেনে শুনে নিজের মেয়েকে এরকম ভুল করতে দিব না। এই ছেলের বংশ ভালো না। রক্ত ভালো না। খুব টাকা পয়সা আছে যে তাও না। তোমার চেয়ে খুব যে বয়সে বড় তাও না। আমারই ভুল ছিল যে আমি কোনরকম খোঁজখবর না করেই এরকম একটা ছেলের সাথে তোমার বিয়ে দেওয়ার কথা চিন্তা করেছিলাম।“



রীতার চোখে পানি চলে আসছে। সে পুলকের সম্পর্কে কোন খারাপ কথা সহ্য করতে পারে না। সে কান্না আটকাতে পারছে না। নাজমা হক একবার মেয়ের দিকে তাকিয়ে দেখেছেন কিন্তু এতে তিনি বিন্দুমাত্র বিচলিত হলেন না।

তিনি বলতে থাকলেন,

“আবেগের বশে অনেক কিছুই করা যায়। কিন্তু জীবন আবেগে চলে না। আমি জানি তোমরা আজকালকার মেয়েরা এসবকে মুল্য দাও না। কিন্তু আমি জানি আমি যা বলছি ঠিক বলছি। তাই আমি চাই তুমি এই ছেলের সাথে যোগাযোগ বন্ধ করে দাও। যোগাযোগ বন্ধ না করলে তুমি নিজের সাথে সাথে এই ছেলেটির সাথেও প্রতারণা করবে। আমার কথাগুলো ভাল করে ভেবে দেখ।“



তিনি উঠে পড়লেন। দরজা আবার ভেজিয়ে দিয়ে চলে গেলেন। রীতার মধ্যে দিয়ে যেন একটা ঝড় বয়ে যাচ্ছে। সে মিতার দিকে তাকিয়ে দেখল যে সে বেঘোরে ঘুমাচ্ছে। রীতার জোর একটা কান্নার দমক আসল। সে দৌড়ে ওয়াশ রুমে গিয়ে কল ছেড়ে যত আস্তে কাঁদা যায় কাঁদতে লাগলো।



পর্ব-১

Click This Link



পর্ব-২

Click This Link



পর্ব-৩

Click This Link



পর্ব-৪

Click This Link



পর্ব-৫

Click This Link



পর্ব-৬

Click This Link



পর্ব-৭

Click This Link



পর্ব-৮

Click This Link



পর্ব-৯

Click This Link



পর্ব-১০

Click This Link



পর্ব-১১

Click This Link



পর্ব-১২

Click This Link



পর্ব-১৩

Click This Link



পর্ব-১৪

Click This Link

মন্তব্য ৩ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৩) মন্তব্য লিখুন

১| ৩১ শে আগস্ট, ২০১৩ বিকাল ৫:৪৫

ইকরাম বাপ্পী বলেছেন: পরীক্ষা চলছে তার মাঝেও একটু আধটু এসে যে সময় করতে পারি তা পড়ার চেষ্টা করি, এই পর্বটা ভাল লেগেছে, কিন্তু অবাক লাগছে ১০৭বার পড়ার পরেও কেউ কি মন্তব্য করার সময় করতে পারলেন না? তবে অনুরোধ থাকলো চালিয়ে যান... থেমে না থেকে...... আমি লিখতে পারি না তবে লেখা পড়তে খুব ভালো লাগে... এদের জন্য অন্তত লেখা চালিয়ে যাবেন।

৩১ শে আগস্ট, ২০১৩ রাত ১১:২২

সুহান সুহান বলেছেন: ধন্যবাদ। :)

২| ০১ লা সেপ্টেম্বর, ২০১৩ দুপুর ১:৩২

স্বপনচারিণী বলেছেন: মনটা খুব খারাপ হয়ে গেল। সত্যিই...... একজনের পছন্দ, যুক্তি, অন্যজনের সাথে মেলেনা।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.