নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

জুবায়ের সুহান

সুহান সুহান

দ্বিধান্বিত

সুহান সুহান › বিস্তারিত পোস্টঃ

অদ্ভুত প্রেমের গল্প- (পর্ব ৩২)

০৪ ঠা নভেম্বর, ২০১৩ দুপুর ২:২৮

ভোর ৪টা। আকাশে আজকে চাঁদ নেই। চারপাশ অন্ধকার। ছাদের চারপাশে রেলিঙ দেয়া। অনেকক্ষন তাকিয়ে থাকলে অন্ধকার চোখ সয়ে আসে। একটু একটু করে ছাদের মধ্যে গাছ-পালা, পানির ট্যাঙ্কি আর এখানে ওখানে সাপের মত ছড়িয়ে থাকা পানির পাইপের লাইন দেখা যায়।



রেলিঙের উপর একটা মনুষ্য মূর্তি দেখা যাচ্ছে। তার গাল ভর্তি দাড়ি। খালি গা। পরনে ট্রাউজার। সে স্থিরভাবে দাঁড়িয়ে আছে। হঠাৎ করে কেউ দেখলে কারো মনে হতে পারে যে মানুষটা বুঝি আত্মহত্যা করতে যাচ্ছে। আসলে পুলকের সেরকম কোন ইচ্ছা নেই। আত্মহত্যা করার মত সাহস তার নেই। সে এমনিতেই দাঁড়ায় এখানে। মাঝে মাঝে মনে মনে ভাবে যে কোন বাতাস যদি এসে তাঁকে ফেলে দিত। তাহলে ভালো হত। সেরকম কোন বাতাস আসে না।



পুলক বরাবরই কিছুটা সুখী স্বাস্থ্যের অধিকারী ছিল। সব সময়ই কিছুটা মেদ শরীরে থাকতই। কিন্তু এখন তার শরীরে মেদের ছিটে ফোঁটাও নেই। চেহারাও কিছুটা ফ্যাকাশে। মুখ ভর্তি দাড়ি হয়েছে তার। তিন মাসের ছুটি নিয়েছে সে অফিস থেকে। আসলে চাকরীটা ছেড়ে দিতে চেয়েছিল সে। পুলকের বস রায়হান সাহেবই তাঁকে সময় নিতে বলেছে। উনি নিয়মিত ফোন করেন তাঁকে। অনাত্মীয় এই ছেলেটাকে তার খুব আপন লাগে। কেন লাগে!! তা জানেন না তিনি। সব কেনর মনে হয় উত্তর হয় না।



অনেকক্ষণ রেলিঙের উপর দাঁড়িয়ে থেকে পুলক গভীর মনোযোগ দিয়ে নিচের দিকে তাকিয়ে থাকল। কি ভাবনা চলছে মাথায় তার ঠিক বোঝা যায় না। মাঝে মাঝে মানুষের মাথা পুরোপুরি ফাঁকা হয়ে যায় । যখন আমরা কিচ্ছু ভাবি না। শুধু তকিয়ে থাকি। পুলকও সম্ভবত শুধু তাকিয়ে আছে। কিছু ভাবছে না। এভাবে ঠিক আধা ঘণ্টা ঠায় দাঁড়িয়ে থাকল পুলক। তারপর নেমে আসল। এখন রেলিঙের উপর পা ঝুলিয়ে বসল। ভোরের আলো না ফোটা পর্যন্ত এভাবেই বসে রইল। চেহারাটার মধ্যে ভাবলেশহীনতা প্রবল। ১ মাস হয়ে গেল মা চলে গেছে। জীবনটা ওলট পালট হয়ে গেছে। বাসায় ফিরতে ইচ্ছা হয় না। বাইরে বাইরে ঘুরে বেড়ায় সে। খাওয়ার জন্য মামার বাসায় যায়। ওখানেই খায় সে। থাকে না। রাতে এই একা বাড়িতেই থাকে সে। এমনিতে একাকীত্ব তার খারাপ লাগে না। শুধু মায়ের ঘরটাতে গেলেই কেমন জানি লাগে। ঘরটা বন্ধ করে রাখে সে।



আশিক মাঝে মাঝে এসে দেখা করে যায়। ওকে নিয়ে বের হতে চায়। পুলক ওঁর সাথে বের হয় না। নিজে নিজে একা একা ঘোরে সে। মানুষের সঙ্গ তার ভালো লাগে না। তার কথা বলতেও ভালো লাগে না। একভাবে টানা বসে থাকে সে কোন রেস্টুরেন্টে গিয়ে এক মগ কফি নিয়ে। আশেপাশের মানুষদের দেখে সে। কি সুখী সবাই!! সবার জীবনে কত মানুষ। কত প্রিয়জন। জীবন কত অর্থবহ এদের কাছে। কিন্তু এই জীবনের অর্থ আর পুলক খুঁজে পায় না। আশেপাশে হাতড়িয়েও কাউকে পায় না সে। সমস্যা পুলকেরও আছে। সবাইকে যে তার ভালো লাগে না।



পাশের টেবিলেই একটা গ্রুপ বসে খুব আড্ডা দিচ্ছে। পুলকের বয়সীই হবে ওরা। কোন একটা অফিস এর কলিগরা একসাথে খেতে এসেছে। হাসাহাসি আর ছবি তোলা চলছে। সংখ্যায় ভালোই এরা। অনেকগুলা টেবিল একসাথে জড় করে এক জায়গায় করা হয়েছে। কেউ বসে নেই টানা। উঠছে। গল্প করছে। ছবি তুলছে। বসছে। একটা মেয়ের দিকে পুলকের দৃষ্টি আটকে গেল। মেয়েটার চুল খোলা। কপালে বড় করে একটা লাল টিপ। চোখে ঘন করে কাজল দেয়া। আর কোন সাজ নেই তার। তার এই সাজ না থাকাটাই যেন বিশাল এক সাজ। মেয়েটাকে চেনে পুলক। মেয়েটারও তাঁকে চেনার কথা। তবে বর্তমান অবস্থার পুলককে আগের দিনের পরিচিত কারো চিনতে পারার কথা না। এক মাথা চুল। আর মুখ ভর্তি দাড়ি। তার চেহারাটা এত কিছুর ভিতরে আড়াল হয়ে গেছে। মেয়েটার নাম রিমকি। পুলকদের ডিপার্টমেন্টের না ও। অন্য ডিপার্টমেন্টের ছিল ও। রিমকির কোন বেস্ট ফ্রেন্ড পুলকদের সাথে পড়ত। ছন্দা। ওঁর সাথেই দেখা করতে আসত মেয়েটা। এই মেয়েটাকে পুলক দুই চোখে দেখতে পারত না। তবে এটাও চিন্তার বিষয় যে ঠিক কাকে যে পুলক পছন্দ করত এটাও বোঝা যেত না। বলা যায় যে ঠিক কোন কারণ ছাড়াই ১০০ জনের মধ্যে ৯৯ জনকেই পুলকের পছন্দ হত না সেই সময়। ছাত্র জীবনে। তবে রিমকিকে অপছন্দ করার যথেষ্ট কারণ ছিল। এক তো এটা এই মেয়ের ডিপার্টমেন্ট ছিল না। অথচ মনে হত পুলকই অন্য ডিপার্টমেন্টের আর রিমকি এই ডিপার্টমেন্টের। লাফালাফি। ন্যাকামী। ঢং করে কথা বলা। মানুষ অল্প পরিচয়ে কিভাবে এত ন্যাকা হয়ে যেতে পারে!! শুধু রিমকি না। এরকম বহু মানুষ দেখেছে সে। তার হতবাক লাগত। এরা এসে লাফালাফি জাপটা জাপটি করে। নারী পুরুষ ভেদাভেদ নেই। পুলক এসব পছন্দ করত না। পুলকের পছন্দ অপছন্দ সূক্ষ্ম মাপকাঠিতে রাখা। তার মতে মানুষের ভালো লাগা খুবই বিশেষ কিছু। এটা জোর করে চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে বোঝানোর কিছু নাই। যে জিনিস যত জোর করে বুঝানো লাগে তার ভিত্তি তত দুর্বল। তাই কেউ যখন খেলাচ্ছলে কাউকে জড়ায়ে ধরে ভালো লাগা বুঝায় পুলক খুব বিরক্ত হয়। তার চরিত্রে সব কিছুকে মোটা দাগে বিচার করার একটা বিশেষ দিক আছে যেটা তাঁকে আর সবার সাথে মিশতে বাঁধা সৃষ্টি করে।



কিন্তু তখনের পুলক আর এখনের পুলকে কিছুটা পার্থক্য তো আছেই। সময় মানুষকে বিচক্ষণ করে তোলে। সময়ের চেয়ে বড় শিক্ষক বোধহয় আর কেউ নেই। এখন সে জানে যে খালি চোখে যা দেখা যায় তাই দিয়েই বিচার করা যায় না। কথার পিছনে কথা থাকে। দৃশ্যের পিছনে আরো অনেক না জানা ব্যাপার থাকে। যে ব্যাপারগুলো না জেনে কাউকে ভালো মন্দ বলে নির্দেশ করা ঠিক না। পুলক বরাবরই নিঃসঙ্গ। আগে তার এটা নিয়ে হাল্কা দুঃখবিলাস ছাড়া আর কিছু ছিল না। রীতা চলে যাওয়ার পর নিঃসঙ্গতা প্রকৃত রূপে অনুধাবন করেছিল সে। কিন্তু মা মারা যাওয়ার পর সারা দুনিয়াটাই যেন নাই হয়ে গেল তার কাছে। এখনো নাই হয়েই আছে। এরকম অবস্থায় অন্যকে ভালো মন্দ বলার অবস্থা থাকে না। তবে মানুষ তো প্রকৃতিগতভাবে সামাজিক প্রাণী। পুলকের মত কিছু মানুষ যতই অসামাজিক হোক। তারাও ভিতরে ভিতরে তৃষিত থাকে দুই দণ্ড ভালো সময় কাটানোর জন্য। তাঁদের দুর্বলতাকে তারা আত্মঅহমিকার আড়ালে নিয়ে যায়। এতে সবাই শুধু আত্মঅহমিকাই দেখে। অসহায়ত্বটা দেখে না। দুর্বলতাটা দেখে না।



পুলক কফি শেষ করে বিল দিয়ে উঠে যাচ্ছিল। সেই সময় পিছন থেকে কে যেন কাউন্টারে ঝড়ের বেগে আসল। পুলক দেখল। রিমকি। এসেই সে বলল কাউন্টারে যে তাঁদের আরেকটা টেবিল লাগবে। আরো লোক আসছে। পুলক তার স্বভাববিরুদ্ধ কাজ করে বসল। সে রিমকির দিকে তাকিয়ে বলল-

- তুমি রিমকি না?

রিমকি ভুরু কুঁচকে পুলকের দিকে তাকিয়ে রইল। এটাই তার তাকানোর ভঙ্গি। আরো বেশ কিছুক্ষণ দেখল সে পুলককে। পুলকের কিন্তু বেশ মজা লাগছে। তার এই চেহারা মাঝে মাঝে তাকে পরিচিতদের সাথে কথা বলা থেকে বাঁচিয়ে দেয়। সে মিটিমিটি হাসছে। কিন্তু পুলককে অবাক করে দিয়ে রিমকি চিৎকার করে বলল-

- তুমি পুলওওওওওওক!!!!!! হাহাহাহাহাহাহা

বলে সে বিকট জোরে হাসা শুরু করল। পুলক একটু ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে অপ্রস্তুত হয়ে গেল। রিমকি যে এই রকম এটা সে জানত। কিন্তু এত বছর পরেও যে মানুষ এরকমই থেকে যায় তা কে জানত। তবে তার সাথে কখনোই ওই রকম খাতির ছিল না রিমকির। পুলক গায়ে পড়া ভাব সাব একদমই সহ্য করতে পারে না। যাইহোক!! এদিকে রিমকির হাসি তো থামে না। সে হাসতে হাসতেই বলছে-

- তোমার একি অবস্থা!! হি হি হি। আমি ভাবলাম যে আমি পাগল হলেও যোগাযোগ সুস্থদের সাথেই ছিল। এখন দেখি পাগলরাও আমাকে চিনে ফেলতেসে।

পুলক কিছু বলছে না। চুপ করে আছে। রিমকি এবার একটু সামলে নিল।

- সরি সরি!! আসলে অনেকদিক পর। তাও হঠাৎ করে। তাও আবার এই অবস্থায়।

- ইটস ওকে। আমি অনেক আগেই তোমাকে দেখসিলাম। সামনেই যখন চলে আসলা তাই ডেকে ফেললাম।

- তুমি ডাকস দেখে আমি আরো অবাক হইসি। তোমার মত ভোঁতা মুখের মানুষ আমি সারা জীবন খুব কম দেখসি। তোমাকে দেখলেই আমার ধাক্কা মেরে ফেলে দিতে মন চাইত।

- কী?

পুলকের গলায় বিস্ময়। একই সাথে তার মধ্যে থাকা গাম্ভীর্য যেন অনেকটা তরল হয়ে গলে পড়ছে। অনেকদিন পর কেউ তার সাথে এত স্বাচ্ছন্দ্যে কথা বলছে। সে আবার বলল

- ধাক্কা দিতে মন চাইত মানে কী?

- মানে আমার যাকে পছন্দ হইত না তাকেই আমার ধাক্কা দিতে মন চায়।

পুলক হাসতে লাগল। বলল-

- তা অবশ্য ঠিক। কিছুটা ধাক্কা খাওয়ার যোগ্যতা আমার ছিল।

- এখন নাই? আমার তো মনে হয় এখনো আছে।

পুলক বলল-

- আচ্ছা!! তাহলে তুমি যাও এখন। তোমার জন্য ওয়েট করছে।

পুলক রিমকির কোম্পানীদের দিকে ইশারা করল।

রিমকি বলল-

- তোমার সেল নাম্বার দেও। এখানে প্রায়ই আসো নাকি। আমি মাঝে মাঝেই এসে কফি খেয়ে যাই।

- আমার ঠিক নাই। একেক দিন একেক জায়গায়।

ওরা একজন আরেকজনের নাম্বার নিল। বিদায় নেওয়ার আগে রিমকি বলল,

- তোমার কোন একটা কাহিনী হইসে। আমি একদিন এসে কল দিব। সুন্দর এসে বলে যাবা। ওকে?

পুলক হেসে মাথা নেড়ে সায় দিল। দুজন দুজনকে বাই বলে চলে যাচ্ছে। হঠাৎ পুলক ঘুরে রিমকিকে বলল,

- এই তোমার বয়ফ্রেন্ডের কী খবর?

রিমকিও চটজলদি উত্তর দিল।

- আছে। আগের মতই।

যে যার পথে চলে গেল।



পর্ব-১ Click This Link পর্ব-২ Click This Link পর্ব-৩ Click This Link পর্ব-৪ Click This Link পর্ব-৫ Click This Link পর্ব-৬ Click This Link পর্ব-৭ Click This Link পর্ব-৮ Click This Link পর্ব-৯ Click This Link পর্ব-১০ Click This Link পর্ব-১১ Click This Link পর্ব-১২ Click This Link পর্ব-১৩ Click This Link পর্ব-১৪ Click This Link পর্ব-১৫ Click This Link পর্ব-১৬ Click This Link পর্ব-১৭ Click This Link পর্ব-১৮ Click This Link পর্ব-১৯ Click This Link পর্ব-২০ Click This Link পর্ব-২১ Click This Link পর্ব-২২ Click This Link পর্ব-২৩ Click This Link পর্ব-২৪ Click This Link পর্ব-২৫ Click This Link পর্ব-২৬ Click This Link পর্ব-২৭ Click This Link পর্ব-২৮ Click This Link পর্ব-২৯ Click This Link পর্ব-৩০ Click This Link পর্ব-৩১ Click This Link

মন্তব্য ৫ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৫) মন্তব্য লিখুন

১| ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০১৩ বিকাল ৩:৩০

স্বপনচারিণী বলেছেন: কত রঙের দুনিয়া! এই ভাল তো আরেক বেলা পাগল। মা বিহীন পুলকের দুনিয়া নিশ্চয় অসহায়। পর্ব ভাল লেগেছে।

০৪ ঠা নভেম্বর, ২০১৩ বিকাল ৪:২৫

সুহান সুহান বলেছেন: বেশী রঙ্গিন হয়ে যাচ্ছে নাকি? :(

২| ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০১৩ বিকাল ৪:২৩

অর্ধমানব ও অর্ধযন্র বলেছেন: ভাই এতো বড় গ্যাপ দিলেন যে? পরের গুলা একটু তাড়াতাড়ি দিয়েন। হরতালের সিজন চলতাসে কাজ কাম কম বুঝতেই পারতেসেন।

০৪ ঠা নভেম্বর, ২০১৩ বিকাল ৪:২৫

সুহান সুহান বলেছেন: :)

৩| ০৫ ই নভেম্বর, ২০১৩ রাত ৮:৩৮

ইকরাম বাপ্পী বলেছেন: Valo

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.