নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

জুবায়ের সুহান

সুহান সুহান

দ্বিধান্বিত

সুহান সুহান › বিস্তারিত পোস্টঃ

অদ্ভুত প্রেমের গল্প- (পর্ব ৩৩)

০৫ ই নভেম্বর, ২০১৩ সকাল ১১:৫৬

পুলক!!!! পুলক!!!! পুলক!!!! পুলক!!!!

ধড়ফড় করে ঘুম থেকে উঠল পুলক। মা ডাকছে। হঠাৎ হঠাৎ রাতে দরকার হলে মা ডাকে। মা ডাকছে। জলদি তড়িঘড়ি করে উঠে মায়ের রুমের দিকে গেল পুলক। একি!! দরজা বন্ধ কেন!! তাড়াতাড়ি দরজা খুলল পুলক। লাইট জ্বালাল। মা কই? মা!! মা!! মা!! সারা ঘর খুঁজেও মাকে কোথাও খুঁজে পেল না পুলক। সে তখনো ঘুমের ঘোর থেকে বের হয়নি। সে যে স্পষ্ট শুনল মা তাকে ডাকছে। ফাঁকা ঘরে আবারো পুলক ডাকল,



- মা!! মা!! ও মা!!



আরেকবার ডাকতে গিয়ে পুলকের যেন সম্বিৎ ফিরল। সে স্বপ্ন দেখছিল। স্বপ্নের মধ্যেই মায়ের ডাক শুনতে পেয়েছে। কিছুক্ষণ জম্বির মত দাঁড়িয়ে রইল সে। রাত ৩টা। ঘরের সবকিছুতে ধুলা জমে আছে। এক মাসেই ধুলা জমে যায়!!



মায়ের বিছানায় বসল। বালিশ আর কোলবালিশ এক সাইড করে রাখা। বালিশটার উপর পরম মমতায় হাত বুলাচ্ছে পুলক যেন বালিশটাই আফরোজা। একটু একটু করে হাত বুলাচ্ছে আর একটু একটু করে চোখ ভরে যাচ্ছে মোটা ধারার অশ্রুতে। আস্তে আস্তে কান্নার দমক বাড়তে লাগল। ভেউ ভেউ করে কাঁদছে পুলক।



- আম্মা!! আম্মা!! আম্মা!! ও আম্মা!! আমার কত কষ্ট হচ্ছে আম্মা। বুকটার ভেতরটা দুমড়ে মুচড়ে যাচ্ছে আম্মা। আম্মা!! আম্মা!! আমার কী কষ্ট হচ্ছে আম্মা!! আমার তো কেউ নাই আম্মা। তুমি তো সব জানো আম্মা।



শক্তপোক্ত একজন প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষ ভোরের আলো ফোটার আগে আগে অসহায়ের মত বিলাপ করে কাঁদছে। কাঁদতে কাঁদতে তার হেঁচকি উঠছে। তাও পুলকের কান্না থামছে না। এখন তার বিলাপে কোন কথা বুঝা যাচ্ছে না। মনের সব দুঃখ কষ্ট কোন এক অজানা ভাষায় নিজের মৃতা মাকে বলে যাচ্ছে পুলক। বুক চাপড়াচ্ছে। যেখানে প্রচণ্ড কষ্ট জমা হয় সেখানে। আস্তে আস্তে সব কিছুই শান্ত হয়ে যায়। মায়ের বিছানাতেই পুলক গুটিসুটি মেরে কাঁপতে কাঁপতে শুয়ে পড়ে।



সময় সবকিছু ঠিক করে দেয়। আসলে কী কিছু ঠিক হয়!! হয় না। সময় মানুষকে কষ্ট সহ্য করার উপযোগী করে তোলে। সময়ের সাথে সাথে মানুষ কষ্ট সহ্য করতে শিখে নেয়। তা যে কষ্টই হোক না কেন! পৃথিবীতে এমন কোন কষ্ট নেই যা সহ্য করার ক্ষমতা মানুষকে সৃষ্টিকর্তা দেয়নি।



সকালে ঘুম ভাঙলেও পুলক বিছানা থেকে ওঠে না। কী হবে উঠে!! তার তো কোথাও যাওয়ার নেই। কিচ্ছু করার নেই। কারো তাকে দরকার নেই। সে উঠে কার কাছে যাবে!! মৃত্যু কি শুধু আফরোজারই ঘটেছে? পুলকও এক অর্থে মৃত। দুপুর পর্যন্ত সে শুয়ে থাকে। শুয়ে শুয়ে শরীর ব্যাথা হয়ে গেলে সে না পারতে ওঠে। ল্যান্ড ফোনটা বেজে যাচ্ছে। মামার বাসা থেকে হবে। খেতে ডাকছে। সে ফোন ধরে না। পাশের গলিতে মামার বাসায় যাওয়ার জন্য তৈরি হয় সে।



খেয়ে দেয়ে ভবঘুরের মত ঘুরে বেড়ায় সে। যখন যে বাস পায় উঠে পড়ে। কত দূর দূর চলে যায় সে। জানালার পাশে বসে সে বাইরের দৃশ্য দেখতে থাকে। হঠাৎ কোন একটা জায়গায় নেমে যায় সে। সেখানে অনেকক্ষণ ছন্ন ছাড়ার মত ঘুরে বেড়ায় সে। আবার ফিরতি একটা বাসে উঠে পড়ে।



একদিন বাসে একটা ছোট বাচ্চা তার মাকে খুঁজে না পেয়ে সে কী কান্না শুরু করল। মা সামনের দিকে মহিলা সিটে বসা। যতই বাচ্চাকে বুঝানো হয় সামনের সিটেই মা আছে। সে কিছুতেই বুঝবে না। সে ভ্যা করে কাঁদছে আর বলছে তার মা হারিয়ে গেছে। পুলক কী মায়া নিয়ে ছোট ওই বাচ্চাটার দিকে তাকিয়ে রইল। সারা দুনিয়াতে এই ছোট বাচ্চাটাই যেন তার একমাত্র সমব্যাথী। খালি পার্থক্য এই যে বাচ্চাটা একটু পরেই তাঁর মাকে খুঁজে পাবে। পুলক কখনো পাবে না।



এভাবেই এক মাস চলে গেছে পুলকের। এখানে ওখানে ঘুরে বেড়িয়ে সে কাটিয়ে দিচ্ছে। দূরে কোথাও যায় না সে। কাছাকাছির মধ্যেই থাকে। সন্ধ্যা হলে কোন একটা কফি শপে ঢুকে এক মগ কফি খায়।



এরকমই একটা কফি শপে ঢুকতে না ঢুকতেই রিমকিকে দেখতে পেল। সে একা একটা টেবিলে কফি খাচ্ছে আর কী একটা বই যেন পড়ছে। একটু পড়ছে আর একটু উদাস নয়নে দূরে কোথাও তাকিয়ে কী যেন ভাবছে। আজও তার কপালে লাল টিপ। চোখে ঘন করে কাজল দেয়া। এটাই বোধহয় তার সাজ। আগে খেয়াল করেনি পুলক ওকে। খেয়াল করার মত মনেও হয়নি তাকে। এখনো যে খুব মনে হচ্ছে তাও না। সে ওঁর টেবিলের কাছে গিয়ে দাঁড়িয়ে রিমকির দৃষ্টি আকর্ষণ করল। রিমকি দূরে কোথাও তাকিয়ে ছিল। অনেকক্ষণ সে খেয়ালই করল না যে কেউ এসে দাঁড়িয়েছে। যখন খেয়াল করল তখনও তার বাস্তব জগতে ফিরতে একটু সময় লাগল। অনেকক্ষণ তাকিয়ে থাকার পর ওঁর চেহারা পরিবর্তন হল। উদাসীন থেকে মুখটা হাসিতে উদ্ভাসিত হল।

- আরে তুমি?? বস বস।

পুলক হাসিমুখে বসল। বলল,

- আমি দূর থেকে দেখলাম তুমি উদাস নয়নে বসে আছ।

রিমকি বলল,

- উদাস তো আমরা সবাই-ই। কারোটা দেখা যায়। কারোটা দেখা যায় না। বাদ দাও। তোমার কী খবর বল!! তোমার সাথে আবার দেখা হয়ে গেল। বিশ্বাস কর আমি তোমাকে ফোন দিব দিব ভাবছিলাম দেয়া হয় নাই। কিন্তু মন থেকে যে ডাকছিলাম এই জন্যই হয়তো দেখা হয়ে গেছে।



পুলক মনে মনে ভাবছে যে মেয়েটা ভালোই নাটুকে সংলাপ জানে!! মনে মনে ডাকছিল!! হাহ!!

সে বলল,

- তা কী বই পড়ছিলে?



- আমি?? আমি সুনীল এর ‘একা এবং কয়েকজন’ পড়ছিলাম। তুমি পড়স এটা?



এক সময় পুলক ভালোই বই পড়ত। এই বইটা তার পড়া আছে। তার অনেক প্রিয় একটা বই ছিল। যদিও বইটা সে প্রথম পড়েছিল ক্লাস ফাইভে থাকতে। পরে আবার বড় হয়েও পড়েছিল। সুনীলের লিখা তার প্রিয়। একটা বয়সে তার অনেক বই-ই সে পড়েছে।



- হুম!! পড়সি।



- পড়স????????



খুব খুশি হয়ে গেল রিমকি। সে অনেক বই পড়ে। বলতে গেলে সে বই পাগল, বই পোকা। বই নিয়ে যা যা বলা যায় তা সবই সে। কিন্তু আশেপাশে বই নিয়ে কথা বলার মত মানুষ সে খুঁজে পায় না। অনিক, রিমকির প্রেমিক, সে তেমন বই পড়ে না। মুভি দেখতেই বেশি পছন্দ করে সে।



- হুম!! পড়সি তো!! আমার অনেক প্রিয় একটা বই। তাছাড়া সুনীল এর মোটা উপন্যাস আমার খুবই প্রিয়। ‘সেই সময়’, ‘প্রথম আলো’, ‘পূর্ব-পশ্চিম’। এসবই আমার অনেক প্রিয়।



- ওয়াও!! তুমি বই পড়? আমিও না অনেক বই পড়ি। বলতে পারো বই ফ্রিক।



- আমি এখন আর পড়ি না। একটা সময়ে বেশ পড়তাম।



- তুমি ‘তিতাস একটা নদীর নাম’ পড়স?



- না।



- তুমি ‘সারেং বৌ’ পড়স?



- না



- তুমি মানিক এর ‘পুতুল নাচের ইতিকথা’ পড়স?



পুলক মাথা নাড়াল। তার আর মুখ দিয়ে এত ‘না’ বলতে ভালো লাগছে না। এই মেয়ে দেখি অনেক বই পড়ে। বই পড়া মানুষজন পুলকের খুব পছন্দ।



- আমি যদি তোমাকে বই গিফট করি তুমি নিবা?



- হুম! নিব।



- জানো? তোমাকে না আমার ‘সূর্য’ ডাকতে ইচ্ছা করছে। ‘সূর্য’ ডাকলে কী তুমি রাগ করবে?



পুলক মনে মনে হাসল মেয়ের ন্যাকামী দেখে। ‘সূর্য’ হল ‘সূর্যকুমার ভাদুড়ী’। ‘একা এবং কয়েকজন’-এর একটা পাগলাটে চরিত্র যে কিনা একাধারে বিপ্লবী, একরোখা গোঁয়ার প্রেমিক। খুবই আকর্ষণীয় চরিত্র। সে বলল,



- আমাকে ‘সূর্য’ মনে হওয়ার কোনই কারণ নেই। আমি অত নায়কোচিত নই।

- আমার ডাকতে ইচ্ছা হচ্ছে। তুমি রাগ করলে ডাকব না।



রিমকি এত সুন্দর করে বলাতে পুলক বলল-

- না!! এতে রাগের তো কিছু নাই।



সেই থেকে পুলকের আরেকটা নাম হল ‘সূর্য’।



পর্ব-১ Click This Link পর্ব-২ Click This Link পর্ব-৩ Click This Link পর্ব-৪ Click This Link পর্ব-৫ Click This Link পর্ব-৬ Click This Link পর্ব-৭ Click This Link পর্ব-৮ Click This Link পর্ব-৯ Click This Link পর্ব-১০ Click This Link পর্ব-১১ Click This Link পর্ব-১২ Click This Link পর্ব-১৩ Click This Link পর্ব-১৪ Click This Link পর্ব-১৫ Click This Link পর্ব-১৬ Click This Link পর্ব-১৭ Click This Link পর্ব-১৮ Click This Link পর্ব-১৯ Click This Link পর্ব-২০ Click This Link পর্ব-২১ Click This Link পর্ব-২২ Click This Link পর্ব-২৩ Click This Link পর্ব-২৪ Click This Link পর্ব-২৫ Click This Link পর্ব-২৬ Click This Link পর্ব-২৭ Click This Link পর্ব-২৮ Click This Link পর্ব-২৯ Click This Link পর্ব-৩০ Click This Link পর্ব-৩১ Click This Link পর্ব-৩২ Click This Link

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ০৫ ই নভেম্বর, ২০১৩ দুপুর ১২:০৮

মাহতাব সমুদ্র বলেছেন: ভালো লাগলো। সময় নিয়ে পড়বো সব পর্ব।

২| ০৫ ই নভেম্বর, ২০১৩ দুপুর ১২:২৪

সেলিম আনোয়ার বলেছেন: মা এর কথা আর কি বলবো হরতালে অফিসে এসেই ফোন পেলাম।আম্মু ফোন করেছে অফিসে ঠিকমত পৌছেছি কিনা। এই হলেন মা।রুমকীর ন্যাকামী ভালই লেগেছে। পুলককে সূর্য বলে ডাকলেই ভাল করবে। B-)

৩| ০৫ ই নভেম্বর, ২০১৩ দুপুর ১:০৬

স্বপনচারিণী বলেছেন: প্রথমেই ধাক্কা খেলাম! অসহ্য লাগছিলো পুলকের অসহায়ত্তে। পিতা-মাতা ছাড়া আসলেই সবাই একা। রুমকির ন্যাকামি...........................আচ্ছা ঠিক আছে ।পুলকের এখন মন ভাল হওয়া দরকার। তাই একটু পাগলামি সহ্য করা যেতে পারে।

৪| ০৫ ই নভেম্বর, ২০১৩ রাত ৮:৪৪

ইকরাম বাপ্পী বলেছেন: Valo.....

Valo thakben.....

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.