নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

জুবায়ের সুহান

সুহান সুহান

দ্বিধান্বিত

সুহান সুহান › বিস্তারিত পোস্টঃ

অদ্ভুত প্রেমের গল্প- (পর্ব ৩৯)

২৮ শে নভেম্বর, ২০১৩ রাত ৯:৪৫

ঘুম থেকে উঠে রিমকিকে অফিসে দিয়ে এসে বাসায় এসে পড়ল পুলক। একটু ঘুমিয়ে নেবে। রিমকির অফিস শেষ হবে সন্ধ্যায়। এতক্ষণ আর রাস্তায় ঘুরতে ভালো লাগছিল না। যদিও এই কয়দিন সে রাস্তায়ই ঘুরেছে। অপেক্ষা করেছে রিমকির জন্যে। আজকে কেন জানি ভালো লাগছে না। তাই বাসায় চলে এল পুলক। বিছানায় শোয়া মাত্রই ফোন আসল রিমকির।

- কই তুমি?

- বাসায় চলে আসছি।

- শরীর খারাপ লাগতেসে?

- না না!!! এমনেই। তুমি কী কর? বস কই তোমার?

- আসে নাই এখনো।

- হুম!! আজকে ফেরার পথে চল হাতির ঝিল যাবো নে!!

- আচ্ছা!!!

- কী!! মন খারাপ নাকি?

- না!! অনিক ফোন দিসিল।

- কী বলল?

- নরমাল কথাবার্তা। নাস্তা খাইসি কিনা!!! বাসায় কখন যাব!! এইসব।

- হুম!!

পুলক একটু চুপ হয়ে রইল। অনিকের নামটা আসলেই সে চুপ হয়ে যায়।

রিমকি বলল-

- কী? মেজাজ খারাপ হইল?

- না!! মেজাজ কেন খারাপ হবে!!

- আমি জানি মেজাজ খারাপ হইসে।

- বেশি জানা ভালো না।

- ছুঁয়ে বল মেজাজ খারাপ হয় নাই?

- আমার কিন্তু এসব ন্যাকামী একদম ভালো লাগে না।

- তুমি বললে ন্যাকামী হয় না,আমি বললেই ন্যাকামী!!

পুলক চুপ করে আছে। তাঁর আসলে খুবই মেজাজ খারাপ। এটা স্বীকার সে করবে না। রিমকি এখন নরম সুরে ডাকল-

- বেইবী!!! আমার বেবী!!!

পুলক কিছুটা বিপর্যস্ত বোধ করছে। এই ডাক সে অগ্রাহ্য করতে পারে না। এই ডাক শুনলে তাঁর ইচ্ছা করে সারা দুনিয়ার সবকিছু ফেলে সে রিমকির কাছে চলে যায়। সে তাও চুপ করে রইল।

রিমকি বলল-

- আমার কিন্তু প্রচণ্ড মেজাজ খারাপ হচ্ছে। আমি এখন রাখব। আমার শরীর ভালো লাগতেসে না।

পুলক ফোনের মধ্যেই রিমকির শ্বাসকষ্টের শব্দ পেতে থাকল। উফ!! এই মেয়ে এত জ্বালান জ্বালাইতে পারে!! এর সাথে ছোটখাটো ঝগড়া হলেও এর শরীর খারাপ হয়। শ্বাসকষ্ট হয়। পুলকের নিজেরো শ্বাসকষ্ট আছে। তাই এই কষ্টের যন্ত্রণা সে ভালো করেই জানে।

পুলক বলল-

- এসব আমার একদম ভালো লাগে না। যাও! ছুঁয়ে বললাম, রাগ করি নাই। মেজাজও খারাপ হয় নাই। এখন ঠিক হউ।

রিমকি তাও ঠিক হয় না। বলে-

- নিজে নিজেই ঠিক হয়ে যাবে।

বলতে বলতে হাঁপায় সে। পুলকের খুব ইচ্ছা করে মেয়েটার পাশে গিয়ে ওঁর মাথায় হাত বুলিয়ে দেয়। এই মেয়েটাকে সে ভালোবাসে। একই সাথে এর প্রতি প্রচণ্ড দায়িত্ব অনুভব করে সে। রিমকি বলে যে পুলকের মত এত আগলায়ে তাঁকে কেউ কখনো রাখে নাই। পুলক নিজের সর্বস্ব দিয়ে দিতে পারে এই মেয়েটার জন্যে।



ফোন রেখে দেয়। দিনের মাঝে আরো বহুবারই ফোন করবে তাঁকে রিমকি। পুলক নিজে কাজের সময়ে ফোন করা একদম পছন্দ করে না। কিন্তু রিমকি শুনবে না। সে করবেই সুযোগ পেলে। পুলক বাসে উঠে ফোনে খেজুরে গল্প করাও একদম পছন্দ করে না। রিমকির পাল্লায় পড়ে তাঁকে তাও করতে হয়। মজার কথা হল। রিমকির সাথে যোগাযোগের সময় বা ওঁর কাছাকাছি থাকার সময় পুলক চারপাশে কাউকে দেখতে পায় না। তাঁর শুধু মনে হয় তাঁর পাশে থাকা এই রক্ত মাংসের মানবী ঠিক কোন মানবী নয়। যেন কোন দেবী। ঘোর লাগা চোখে সে তাকিয়ে থাকে রিমকির দিকে।

রিমকি বলে-

- কী দেখো?

পুলক কোন উত্তর দেয় না। চোখও সরায়ে নেয় না।



আবার ফোন। রিমকিই হবে। পুলক দেখে অপরিচিত নাম্বার। ধরল সে।

-হ্যালো

-হ্যালো পুলক!!

-হ্যাঁ, কে বলছেন?

- আরে দোস্ত!! আমি ছন্দা।

পুলকের মুখ শক্ত হয়ে গেল।

-হ্যাঁ, কী ব্যাপার?

- তোর সাথে একটু দেখা করতাম। সময় হবে?

পুলকদের ক্লাসে ছন্দা ছিল সবচেয়ে প্র্যাকটিকাল মেয়ে। সেই ফার্স্ট ইয়ার থেকে দেখে আসছে পুলক। এই মেয়ে যে রিমকিকে নিয়েই কিছু বলবে মোটামুটি নিশ্চিত পুলক। দেখা যাক কী বলে!!

-ঠিক আছে। কোথায়?

ওরা সময় আর স্থান ঠিক করে নিল।



পুলক আর ছন্দা বসে আছে মুখোমুখি। ছন্দা চালাক মেয়ে। প্রথম ১৫-২০ মিনিট সে কুশল জিজ্ঞেস করতেই কাটিয়ে দিল। কে কোথায় আছে!! কী করছে!! বেশীরভাগেরাই ব্যাঙ্কে ঢুকে গেছে। এইসব হাবি জাবি। পুলক ধৈর্য ধরে ওঁর এইসব কথা শুনতে লাগল। অপেক্ষা করতে লাগল যে ঠিক কখন ও আসল কথায় আসে। অবশেষে ছন্দা আসল কথায় আসল।

- পুলক!! আমি জানি তুই আমাকে পছন্দ করিস না।

কথাটা সত্যি। কিন্তু পুলক বলল,

- এরকম কিছু না।

- যাই হোক!! আমি কিন্তু তোকে পছন্দ করি এবং তোর ভালো চাই।

- হুম

এরপর সরাসরি পুলককে প্রশ্ন করল,

- রিমকির সাথে তোর মেলামেশা কয়দিনের?

- কেন?

ছন্দার মুখে আগের মত হাসি নেই। পুলক একটু থমকাল।

- রিমকিকে আমি বহুদিন চিনি। চিনি বলেই তোর কাছে জানতে চাইছি।

- দেড় মাস হবে।

- Are you involved with her?

পুলক উত্তর দিল না। ছন্দা আবার বলল-

- Do you know that she has a boyfriend?

- Yes

- আচ্ছা!! রিমকির বাবা মা যে ডিভোর্সড তা জানিস?

- হুম! জানি।

- ওঁর ছোটবেলাটা ভালো যায় নাই। ও কিন্তু মানসিকভাবে স্থিতিশীল না।

- মানে?

- ও নিজে একটা ঘোরের মধ্যে থাকে। চারপাশেও একটা ঘোর তৈরি করতে পারে ও। এটা ও জেনে শুনে যে করে তা কিন্তু না। অবচেতনভাবে করে। অনিকের সাথে ওঁর সম্পর্ক ৭ বছরের। অনিক ওকে ঠিকভাবেই সামলাতে পারে।

- তাই নাকি?

টিটকারির সুরে বলল পুলক।

ছন্দা হাসল ওঁর দিকে তাকিয়ে।

- কেন!! রিমকি কী বলেছে অনিককে নিয়ে?

পুলক কিছু বলল না। এটা ওঁর আর রিমকির কথা। সে এটা তৃতীয় কাউকে বলতে আগ্রহী নয়।

- আচ্ছা!! একটা কথা বল তো!! তোর সাথে ঝগড়া হলে ওঁর কি শ্বাসকষ্ট হয়?



পুলক চমকে গেল। এটা তো ওঁর জানার কথা না। সে চুপ করে রইল। ওঁর চুপ করে থাকা দেখেই ছন্দা উত্তর পেয়ে গেল।



- অনিকের সাথেও ওঁর এরকম হত প্রথম দিকে। অনিক অতটা পাত্তা না দেওয়াতে ওঁর সাথে ঝগড়ায় আর ওঁর শ্বাসকষ্ট হয় না। এটা অনেকটা মানসিক। দোস্ত!! আমি বলতেসি না ও কোন খারাপ মেয়ে। কিন্তু ও stable না। ও কখনো অনিক কে ছাড়বে না। ও তোকেও ছাড়বে না। আমি তোর ভালো চাই। তুই আমাকে পছন্দ না করলেও আমি তোকে পছন্দ করি। তুই ভালো ছেলে। Atleast!! I felt that you should be informed. By the way!! Do you know that they are physically involved?



পুলকের মেজাজটা খারাপের দিকে। সে জানে। রিমকিই প্রথম দিকে তাঁকে বলেছিল। এটা তাঁকে খুব অশান্তি করে। মাঝে মাঝে সে কল্পনায় ওঁদের ঐ অবস্থায় দেখতে পায়। তখন নিজের মাথাটা দেয়ালে ঠুকে ঠুকে ফাটায়ে দিতে ইচ্ছা হয়। কেন অনিকের আগে পুলক রিমকির জীবনে আসল না, এই নিয়ে তীব্র অভিমান হয়। যদিও পুলক বিয়ের আগে শারীরিক সম্পর্কের ঘোরতর বিরোধী। কিন্তু সে যে মানুষকে ভালোবাসে তাঁকে কেউ আগে ছুঁয়েছে এটা তাঁর মানতে বাঁধে। যেখানে সে কোন পুরুষের নাম রিমকির মুখে সহ্য করতে পারে না, সেখানে এত বড় ব্যাপারটা মানতে যে তাঁর কত কষ্ট হয় তা আর কেউ জানবে না। পুলকের মাথাটা বিগড়ে যাচ্ছিল। সে নিজেকে ঠাণ্ডা করে ছন্দাকে বলল-



- দেখ ছন্দা!! তুই যা যা বললি তাঁর সবই আমি আগে থেকেই জানি। ও যে সিগারেট খায়, মদও খায়। তাও জানি। সো!! I appreciate your concern. আর কিছু বলবি? নাকি নিজের বান্ধবীর আরো সুনাম করবি?



ছন্দা ঘাবড়াল না। পুলককে সে একটু হলেও চেনে। ভয়ানক রাগী। এইটুকুই। আর কিছু ভয়ানক সে দেখেনি কখনো। মায়ের একমাত্র ছেলে। তাই কিছুটা অন্যরকম।



- জেনে শুনে নিজের লাইফটা নিয়ে খেলিস না পুলক। ও কখনো অনিককে ছেড়ে আসবে না তোর কাছে। অনিক-ই ওঁর জন্যে ঠিকআছে। এতদিন ওকে সামলেছে। মাঝখান দিয়ে তুই অনেক কষ্ট পাবি। তুই কষ্ট পাস আমি কখনোই চাই না। রিমকি মানসিকভাবে খুব অস্থির। ও নিজে কী চায়। তা ও নিজে কখনো জানে না। তোকে বলবে অনেক কিছুই। কিন্তু তা মানতে পারবে না। তোর শুনতে খারাপ লাগতে পারে, কিন্তু তুই যদি আবেগ দিয়ে চিন্তা না করে যুক্তি দিয়ে চিন্তা করিস। তাহলে দেখবি যে ৭ বছরের সম্পর্কের কাছে ২ মাসের সম্পর্ক গোনার মধ্যে আসবে না। তোর সাথে ওইভাবে ক্লোজ আমি কখনোই ছিলাম না। কিন্তু আমার মনে হল যে তোকে এটা জানানো উচিৎ। বাকি তোর ইচ্ছা।



পুলক ‘Thanks’ বলে টেবিল থেকে উঠে গেল।



সেইদিন বিকালে অফিস থেকে ফেরার পথে রিমকি পুলককে বলল-

- আমি মোটামুটি 95% সিউর যে আমি অনিককে বিয়ে করব না। তোমার সাথে আমার কপালে বিয়ে আসে কিনা জানি না। কিন্তু অনিক কে বিয়ে করা সম্ভব না।



পুলক যেন অন্ধকারে আশার আলো দেখল। সে মুখে কিছু বলল না। ছন্দার কথায় সে মোটেই চিন্তিত না। পুলক কখনো পছন্দের মানুষকে অবিশ্বাস করতে পারে না। তাই রিমকিকেও সে অবিশ্বাস করে না। সে মনে মনে রিমকির সাথে তাঁর সুন্দর সংসারের স্বপ্ন দেখে। রিমকির হাতটা ধরে নিজের দিকে টেনে নেয় ওকে। রিমকিও সরে আসে পুলকের দিকে।



পর্ব-১ Click This Link পর্ব-২ Click This Link পর্ব-৩ Click This Link পর্ব-৪ Click This Link পর্ব-৫ Click This Link পর্ব-৬ Click This Link পর্ব-৭ Click This Link পর্ব-৮ Click This Link পর্ব-৯ Click This Link পর্ব-১০ Click This Link পর্ব-১১ Click This Link পর্ব-১২ Click This Link পর্ব-১৩ Click This Link পর্ব-১৪ Click This Link পর্ব-১৫ Click This Link পর্ব-১৬ Click This Link পর্ব-১৭ Click This Link পর্ব-১৮ Click This Link পর্ব-১৯ Click This Link পর্ব-২০ Click This Link পর্ব-২১ Click This Link পর্ব-২২ Click This Link পর্ব-২৩ Click This Link পর্ব-২৪ Click This Link পর্ব-২৫ Click This Link পর্ব-২৬ Click This Link পর্ব-২৭ Click This Link পর্ব-২৮ Click This Link পর্ব-২৯ Click This Link পর্ব-৩০ Click This Link পর্ব-৩১ Click This Link পর্ব-৩২ Click This Link পর্ব-৩৩ Click This Link পর্ব-৩৪ Click This Link পর্ব-৩৫ Click This Link পর্ব-৩৬ Click This Link পর্ব-৩৭ Click This Link পর্ব-৩৮ Click This Link

মন্তব্য ৩ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৩) মন্তব্য লিখুন

১| ২৮ শে নভেম্বর, ২০১৩ রাত ৯:৫৫

খান মেহেদী ইমাম বলেছেন: vai joto boro hocche to to valo lagse. amar kase golpo ta valo lagar karon golpota 100% bastob mukhi. hoyto ami nijeo pulok er kacha kachi basto botar shikar.

২৮ শে নভেম্বর, ২০১৩ রাত ৯:৫৯

সুহান সুহান বলেছেন: ভাই সাথে থাকবেন। আপনাদের সঙ্গ খুব দরকার।

২| ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০১৩ দুপুর ১২:৫৭

স্বপনচারিণী বলেছেন: মনে হচ্ছে আরেকটা কষ্ট এগিয়ে আসছে পুলকের দিকে। পর্ব ভাল লেগেছে।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.