নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

জুবায়ের সুহান

সুহান সুহান

দ্বিধান্বিত

সুহান সুহান › বিস্তারিত পোস্টঃ

অদ্ভুত প্রেমের গল্প- (পর্ব ৪১)

১৫ ই ডিসেম্বর, ২০১৩ রাত ১২:০১

সম্পর্কের বেলায় বেশীরভাগ সময়ই মানুষ বুঝতে পারে না যে সে আসলে কী চায়!! ‘ভালোবাসা’ আর কাউকে ‘জয় করা’ যে দুইটা দুই বস্তু তা বেশীরভাগ মানুষই বুঝে না। ‘ভালোবাসা’-কে আমরা বলতে পারি হৃদয়ে ধারণ করা। ‘জয় করা’ বলতে বোঝায় কাউকে একবার নিজের করে ফেলতে পারলেই হল। তারপর সব আকর্ষণ, ভালো লাগা শেষ। এই দুইয়ের মাঝে পার্থক্য বেশীরভাগ মানুষই ধরতে পারে না। আবার কিছু কিছু সম্পর্কের বেলায় একজন আরেকজনকে পেয়ে বসে। ইংরেজিতে যাকে বলে ‘Granted’ নিয়ে নেয়া। ও তো আছেই। যাবে আর কই। সাধারণত অনেকদিনের সম্পর্কের বেলায় এই জিনিশটা ঘটে। যা ঘটেছে অনিক আর রিমকির বেলায়। অনিক কখনো কল্পনাও করতে পারে নাই যে তাঁর রিমকি তাঁকে ছেড়ে অন্য কারো কাছে যেতে পারে তা সে যতই তাঁকে অবহেলা করুক আর উদাসীনতা দেখাক। পুরো ব্যাপারটা হজম করতে তাঁর কষ্ট হল। সে মানতে পারল না। পুরোপুরিই এলোমেলো হয়ে গেল সে।



এক রাতে সে এসে রিমকিকে ঠাণ্ডা গলায় বলল যে রিমকি ঠিকই করেছে। পুলক তাঁর চেয়ে সুদর্শন। ও রিমকির ঠিকমত খেয়াল রাখে যা অনিক কখনো রাখে নাই। পুলকই রিমকির জন্য ঠিক আছে।



মানুষের অবচেতন মন একটা দারুণ জায়গা। অবচেতন মনের মত চালাক, রহস্যময় হয়তো মনের কোন অংশ না। অবচেতন মন মানুষকে অনেক কিছু ভুল ভাল বোঝায়। যেমন এখন অনিককে বোঝাচ্ছে যে সে রিমকিকে পুলকের হাতে ছেড়ে দিচ্ছে। আসলে রিমকি আর পুলকের জন্য পথটা কঠিন করে দেয়াই তাঁর অবচেতন মনের উদ্দেশ্য।



বেশীক্ষণ নিজস্ব মতবাদে স্থির থাকতে পারল না অনিক। তাঁর মনজগতে এক বিশাল তোলপাড় শুরু হল। পুরুষ স্বেচ্ছায় নিজের নারীকে অবহেলা করতে পারে, এমনকি ছেড়েও দিতে পারে। কিন্তু অন্য পুরুষের কাছে হেরে যাওয়া বরদাস্ত করতে পারে না। অনিক কিছুতেই পুলকের কাছে হেরে যাওয়া মানতে পারছে না।সে বহুরকম আবোল তাবোল কথা বলছে রিমকিকে। একই কথা বার বার বলছে। কোনবার অপমান করছে, আবার পরক্ষনেই স্বাভাবিক হওয়ার চেষ্টা করছে।



পুলক আর রিমকি অনিকের এই হঠাৎ করে আসা আবেগের জন্য বিন্দুমাত্র প্রস্তুত ছিল না। পুলক কখনো কোন সম্পর্কের মধ্যে তৃতীয় ব্যাক্তি হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হতে চায়নি। নিয়তির কী খেলা!! এখন সে তাই!! একজন তৃতীয় মানুষ। রিমকিও কি কখনো এরকম চেয়েছিল। চায়নি। অথচ তাঁকে এখন নিজেকে ‘খারাপ মেয়ে’ হিসেবে দেখতে হচ্ছে। জীবনের বিভিন্ন পরিস্থিতিতে যখন নিজের আদর্শের কাছে নিজেরই ছোট হওয়া লাগে, তখনই মানুষ বুঝতে পারে অসহায়তা কাকে বলে।

কোন এক দুপুরে অনিক রিমকিকে ডেকে পাঠায় ওঁর সাথে দেখা করার জন্যে। অনিকের পক্ষে স্বাভাবিক হওয়া সম্ভব হচ্ছিল না। পুলককে ফোনে জানিয়ে রিমকি অনিকের সাথে দেখা করতে বের হল।



পুলক কখনোই অনিকের নামটা সহ্য করতে পারে না। কিন্তু এখানে তাঁর কিছু বলার নেই। সে একজন তৃতীয় মানুষ। আনুষ্ঠানিকভাবে রিমকি এখনো অনিকের। সে কখনোই পুলকের না। আর এখন ঝামেলা যখন সামনে চলেই আসছে। এটার অবশ্যই ফয়সালা হওয়া উচিৎ। কিন্তু নিজের ভালোবাসার মানুষ অন্য কারো সাথে দেখা করতে গেছে এটা মেনে নেয়া সব পুরুষের বেলায়ই মানসিক অস্বস্তি ও অস্থিরতা প্রদায়ক। পুলকও খুব অস্থির বোধ করল। বিকাল হতে না হতেই সে রিমকির বাসার সামনে এসে বসে রইল। সে রিমকিকে ফোন দিচ্ছে না। কিন্তু তাঁর ভিতরে ঝড় হচ্ছে। সেই দুপুরে গেল রিমকি। এখনো ওঁদের কথা শেষ হচ্ছে না। তাহলে কি রিমকি ফেরত চলে গেল অনিকের কাছে? তাহলে পুলকের কী হবে!! পুলক দিশেহারা হয়ে যেতে থাকল। বিকাল থেকে সন্ধ্যা হল। পুলক কোথাও এক জায়গায় বসতে পারছে না। সে হাঁটছে। থামছে। আবার হাঁটছে। তাঁর চোখ জ্বল জ্বল করছে। চারপাশে তাকিয়ে তাঁর মনে হচ্ছিল আশেপাশের সবাই যেন তাঁর দিকে তাকিয়ে হাসতেসে। সে যেন সবার হাসির পাত্র। সে আর না পেরে রিমকিকে ফোন দিল। ফোন বন্ধ। অস্থিরতা আরো কয়েক গুণ বাড়ল। হঠাৎ পুলকের মনে পড়ল যে রিমকি বলেছিল যে ওঁর ফোনে চার্জ নেই। কিছুটা যেন শান্ত হল সে। কিন্তু সময় যত বাড়তে লাগল অস্থিরতাও পাল্লা দিয়ে বাড়তে লাগল। পুলক আর পারল না। আশিককে ফোন দিল। বন্ধুর গলার আওয়াজ শুনেই আশিক কিছু একটা আঁচ করল। সে পুলককে আশ্বস্ত করল যে সে আসছে। রাত ৯টা। পুলকের মাথা পুরোপুরি খারাপের দিকে। সে বুঝতে পারছে না কী করবে। সে রিমকিকে এসএমএস করে রেখেছে।

“আমি তোমার বাসার সামনে। যত দেরী-ই হোক দেখা করে যাব।“

এর মাঝে আশিক চলে আসল। শুনল সবকিছু। কিছু বলল না। পুলকের সাথে বসল।

রাত সাড়ে ৯টা। রিমকির এসএমএস আসল।

“তুমি চলে যাও। রাতে নাও ফিরতে পারি। পরে কথা হবে।“

‘রাতে নাও ফিরতে পারি’- এর মানে কী? কই থাকবে রিমকি? কার কাছে থাকবে? অনিকের সাথে রাতে থাকবে?



হায়রে পুলক!! হায়রে পুরুষ!! শরীরটাই তাঁর কাছে সব। সবার আগে ঐ জায়গাতেই আঘাত লাগে তাঁর। মাথা যদি কেউ দেয়ালে ঠুকে দিত তাহলেই বোধহয় শান্তি হত পুলকের। কিন্তু পুলক চুপ করে বসে রইল কিছুক্ষণ। আশিককে বলল চলে যেতে। আশিক অনেকক্ষণ জিজ্ঞেস করল কি হয়েছে। পুলক কিছু বলল না। ওরা একসাথে কিছুক্ষণ হাঁটল। আশিক অসহায় চেহারা নিয়ে অনেকক্ষণ পুলকের সাথে থাকল। ঐ রাতে সে পুলকের সাথে থাকতে চাইল। কিন্তু পুলক রাজি হল না। আশিক চলে গেল।



রাত ১১টায় রিমকির ফোন আসল। পুলক ফোন ধরল।

রিমকি-

- তুমি কি কালকে আমার সাথে শেষবার দেখা করবা?

রিমকির গলা আদ্র। কিন্তু পুলক তীক্ষ্ণ কণ্ঠে জিজ্ঞেস করল

- মানে কি? তুমি কি অনিকের কাছে ব্যাক করস?

- হুম!!!

ঐ একটা ‘হুম’ শুনে পুলকের দুনিয়া যেন চুরমার হয়ে গেল। বলা হয় যে পশু পাখি আগত প্রাকৃতিক দুর্যোগ সম্পর্কে আগেই ওয়াকিবহাল থাকে। মানুষও কি কিছুটা থাকে না জীবনের ঘটনার বেলায়? থাকে। কিন্তু তারপরও মানুষ মেনে নিতে পারে না।

পুলকের বুকটা চিন চিন করে উঠল। ব্যাথায়, বিশ্বাসভঙ্গের বেদনায় সে বাকহীন হয়ে গেল। সে ধরে রইল ফোন। ছন্দার কণ্ঠস্বর ভেসে আসল। ‘রিমকি কখনো অনিক কে ছাড়বে না’। ‘রিমকি কখনো অনিক কে ছাড়বে না’।



রিমকি বলল-

- তোমাকে একটা অনুরোধ করি। অনিক যদি তোমাকে ফোন করে উলটাপালটা কিছু বলে। তুমি কিছু মনে করো না।

খোলা বাজারে কেউ যদি পুলককে উলঙ্গ করে দিয়ে গায়ে আগুন লাগিয়ে দিত। তাহলেও হয়তো এত লজ্জা আর ধিক্কার লাগত না পুলকের। এতটা তুচ্ছ আর ঠুনকো মনে হত না নিজেকে। এতটা অকিঞ্চিৎকর লাগত না।



ফোন রেখে দেওয়ার পর পুলক জম্বির মত বসে রইল সারারাত। এই অনুভূতির কী নাম দেবে সে!! তাঁর কি এখন কাঁদা উচিৎ। এরকম অনুভুতিতে কি কাঁদতে হয়!! ঠিক কী করতে হয় এরকম সময়ে? কেউ যদি বলে দিত পুলককে তাহলে হয়তো সুবিধা হত ওঁর জন্যে। সে ঠিক বুঝতে পারছে না।



পর্ব-১ Click This Link পর্ব-২ Click This Link পর্ব-৩ Click This Link পর্ব-৪ Click This Link পর্ব-৫ Click This Link পর্ব-৬ Click This Link পর্ব-৭ Click This Link পর্ব-৮ Click This Link পর্ব-৯ Click This Link পর্ব-১০ Click This Link পর্ব-১১ Click This Link পর্ব-১২ Click This Link পর্ব-১৩ Click This Link পর্ব-১৪ Click This Link পর্ব-১৫ Click This Link পর্ব-১৬ Click This Link পর্ব-১৭ Click This Link পর্ব-১৮ Click This Link পর্ব-১৯ Click This Link পর্ব-২০ Click This Link পর্ব-২১ Click This Link পর্ব-২২ Click This Link পর্ব-২৩ Click This Link পর্ব-২৪ Click This Link পর্ব-২৫ Click This Link পর্ব-২৬ Click This Link পর্ব-২৭ Click This Link পর্ব-২৮ Click This Link পর্ব-২৯ Click This Link পর্ব-৩০ Click This Link পর্ব-৩১ Click This Link পর্ব-৩২ Click This Link পর্ব-৩৩ Click This Link পর্ব-৩৪ Click This Link পর্ব-৩৫ Click This Link পর্ব-৩৬ Click This Link পর্ব-৩৭ Click This Link পর্ব-৩৮ Click This Link পর্ব-৩৯ Click This Link পর্ব-৪০ Click This Link

মন্তব্য ২ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০১৩ দুপুর ২:২৪

স্বপনচারিণী বলেছেন: পুলকের জন্য সত্যি ভীষণ কষ্ট হয়, হোক না সে কাল্পনিক চরিত্র। শুভ কামনা।

২| ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০১৩ রাত ২:০১

খান মেহেদী ইমাম বলেছেন: পুলক কোন কল্পনা না। পুলক বাস্তবতার কাছাকাছি একটা চরিত্র। আমি আমন পুলক অনেক দেখেছি, নিসঙ্গ মানুস গুলো প্রায়ই পুলক এর মত। কেই তাদের প্রয়োজন এ পুলকদের ব্যবহার করে। যখন কোন মানুস অবহেলিত হয় তখন তাদের পুলকদের ভালবাসার দরকার হয়। আর যখন আবার তার গুরত ফিরে পায় তখন সবার আগে লাথি পুলুকদের কেই মারে। এক রিতা পুলকে ছারল পরিবার এর জন্য এখন রিমকি ছারছে অনেক এর জন্য। ভাই অসাধারন লিখছেন। ভাই অসাধারন লিখছেন।

ভাই আরও চাই

ভাই আরও চাই

ভাই আরও চাই

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.