নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

জুবায়ের সুহান

সুহান সুহান

দ্বিধান্বিত

সুহান সুহান › বিস্তারিত পোস্টঃ

দ্বৈততা

২৭ শে জুলাই, ২০১৪ সকাল ৭:৩৯

সকাল থেকে রান্না বান্নার কাজ নিয়ে ব্যস্ত নাদিয়া। আজকে বিয়ের পর তাঁর প্রথম রান্না। এমনিতে সে রাঁধে ভাল। কিন্তু আজকে খুব নার্ভাস লাগছে। বাসার সবাই খেতে পারবে তো!! কিছু ভুল করে ফেলবে না তো!! দুরু দুরু বুকে সে সব কাজ করছে। রায়হান একবার এসে ঘুরে গেল।

- কি হে!! ভয়ে দেখি মুখটা এতটুকু হয়ে গেছে। এত ভয়ের কি আছে!!

এই সময় রায়হানের এই উপস্থিতি একদমই ভালো লাগছিল না নাদিয়ার। এমনিতেই রান্নার সহজ কাজগুলো করতেই তাঁর ভয়ে আধমরা অবস্থা। আর এরকম সময়ে রায়হানের যত ঢঙ!!

- তুমি যাও তো এখান থেকে।

- আরে আরে!! রাগ কর কেন!!! তুমি দেখি আমারে আর দেখতেই পারো না!!

- হ্যাঁ!! পারি না। যাও এখান থেকে।

দুখী দুখী ঢঙ্গি ভাব করে রায়হান চলে গেল। নাদিয়া কিছুক্ষণ নিজে নিজে হাসল। রায়হান এত ছেলেমানুষ!! বাচ্চাদের মতন। সামনে ফেলে রাখা আধ কাটা মাছটার দিকে চোখ যেতেই আবার রান্নার কথা মনে পড়ল নাদিয়ার।



খাবার টেবিলে সবাই বসা। রায়হান। নাদিয়ার শাশুড়ি সেলিনা রহমান। শ্বশুর রহমত উল্লাহ। আর নাদিয়ার দেবর রাতুল। পরীক্ষার খাতা যখন স্যাররা ক্লাসে দেখাতে নিয়ে আসত। তখন যেরকম অনুভূতি হত। ঠিক সেরকম লাগছে নাদিয়ার।



পরীক্ষায় পাশ করে গেল নাদিয়া। রান্না ভালো হয়েছে। সবাই খুব প্রসংশা করল, একজন ছাড়া। তিনি সেলিনা রহমান। চুপচাপ খেলেন। সবার কথা শুনলেন। কিন্তু কিছু বললেন না। তিনি এমনিতেই কম কথা বলেন। ছোট ছেলে রাতুল জিজ্ঞেস করল, “কেমন লাগল মা ভাবীর রান্না?”

সেলিনার সংক্ষিপ্ত উত্তর। “ভালোই”।



নাদিয়ার মনটা একটু ছোট হয়ে রইল। তবে কি নাদিয়ার রান্না মায়ের পছন্দ হয়নি!! নাকি নাদিয়াকে উনি পছন্দ করেননি!! এরকম নানা চিন্তায় নাদিয়ার মনটা ভার হয়ে রইল।



দুপুরের খাওয়ার পর নিজেদের ঘরে নাদিয়া আর রায়হান শুয়ে বিশ্রাম নিচ্ছিল। রায়হান তখনো নাদিয়ার রান্নার প্রশংসা করছিল। নাদিয়া যেন শুনেও শুনছিল না। সে হঠাৎ বলল,

- রায়হান!!

- কি!!

- আচ্ছা!! মা কী আমাকে পছন্দ করেন না!!

প্রশ্ন শুনে রায়হান শোয়া থেকে নড়েচড়ে উঠে বসল।

- কেন!! এই প্রশ্ন কেন?? মা কি কিছু বলেছে তোমায়!!!

- আরে না!! এমনি জিজ্ঞেস করলাম।

- না না। বল। বলতে তোমাকে হবেই। বল বল। আরে জলদি বল।

- ধুর!! তোমাকে কিছু বলাই মুশকিল। কিছুই হয় নাই। সত্যি!!

- উহু!!! তাহলে তুমি এই কথা বললা কেন?

- আরে এমনি!!

- বলবা না??

রায়হানের মুখ গম্ভীর। এই চেহারা নাদিয়ার চেনা। আসল কথাটা না শুনে রায়হান ছাড়বে না।

নাদিয়া একটু আমতা আমতা করে বলল।

-মানে!! সবাই তোমরা আমার রান্নার প্রশংসা করলা। মা তো কিছুই বলল না!!

রায়হান বিশাল একটা নিশ্বাস ছেড়ে বলল,

- ওহ!! এই কথা!!! আরে ধুর!! মা একটু এরকমই। সহজে মুখ দিয়ে কারো প্রশংসা করতে পারে না। একটু সময় লাগে।

তাও নাদিয়া ঠিক মানতে পারল না। কোথায় যেন খটকা লাগে তাঁর। নাদিয়ার এই চেহারা আবার রায়হান চেনে।

- কি!! কনভিন্স করতে পারলাম না তো!!

নাদিয়ার গালে একটা চুমু দিল রায়হান। নাদিয়ার চিন্তিত মুখটা পরিবর্তন হয়ে রাঙ্গা হয়ে উঠল লজ্জায়।



রায়হান যতই বলুক। কোথাও একটা নিশ্চয়ই ঝামেলা আছে। নাদিয়া সারাদিন যা যা করা উচিৎ, সব সব করে। তাও শাশুড়ি সেলিনা একবারের জন্যেও একটা ভালো কথা বলেন না। খারাপও বলেন না। কিন্তু তাও সংসারে এই একজনের কাছে মেয়েদের মনমত হওয়াটাই আসল। নইলে আর কিছুদিন পরই সে আর বউদের মত শাশুড়ির বদনাম করা শুরু করবে পাস টাইম হিসেবে, যেটা নাদিয়া কখনো চায় না। নাদিয়াদের অফিসে সবগুলা মহিলা অফিসের লাঞ্চ ব্রেকে একনাগাড়ে শাশুড়ির বদনাম করে যায়। নাদিয়ার এত বিরক্ত লাগত। নাদিয়া কখনো এই দলে ভিড়তে চায় না।



নাদিয়া ইদানিংকার মেয়েদের মত না। এসেই স্বামীকে সংসার থেকে আলাদা করতে চাইবে। নাদিয়ার মাও নাদিয়াকে এই শিক্ষা দেয়নি। সবার সাথে মিলেমিশে থাকাটাই শিখিয়েছে। তাই নাদিয়ার সবার সাথে মিলেমিশে থাকতে কোন অসুবিধা নেই। কিন্তু কেউ তাঁকে পছন্দ না করলে এটা সে মেনে নিতে পারে না। কারণ অপছন্দ করার মত কোন কাজ সে করে না। সারাজীবন তাঁকে তাঁর আশেপাশের সব মানুষ পছন্দ করেছে।



এক মাসের ছুটি নিয়েছিল নাদিয়া বিয়ে উপলক্ষে। ছুটি প্রায় শেষ। আবার অফিস শুরু হবে কাল থেকে। নাদিয়া আজকেই কালকের জন্য সব রান্না শেষ করে রাখল। মা ছাড়া বাকি সবাই বাইরে থাকবে। রায়হান, বাবা আর নাদিয়া অফিসে। রাতুল ইউনিভার্সিটিতে। ওঁর সারাদিন ক্লাস। দুপুরে সেলিনা একাই খাবেন।



পরদিন সেলিনাকে নাদিয়া খাবার দাবার সব বুঝিয়ে অফিসে চলে গেল। ভেবেছিল এতে শাশুড়ি খুশী হবেন। কিন্তু শাশুড়ির মুখে কোন ভাবান্তর নেই। একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে নাদিয়া অফিসে চলে গেল।



সকাল থেকে সেলিনা রহমান বাসায় একা। এটা নতুন কিছু না। অবসর নিয়েছেন বছর তিনেক হল। জাদেরল সরকারী আমলা ছিলেন। এই তিন বছরের বেশীরভাগ দিন একাই কেটেছে তাঁর। বিকাল হলেই ছেলেরা, আর রাতে স্বামী বাসায় ফেরে। স্বামী রহমত উল্লাহ ডাক্তার। সরকারী একটা হাসপাতালে সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত বসেন। আর সন্ধ্যা থেকে রাত পর্যন্ত ক্লিনিকে।



বড় ছেলে রায়হানের বিয়ে দিয়েছেন মাসখানেক আগে। মেয়েটাকে নিজেই পছন্দ করেছেন রায়হানের জন্য।



কলিংবেল বাজল।

উঠে দরজা খুলে দেখলেন রায়হানের বয়সী একটা ছেলে দাঁড়িয়ে আছে। উসকো খুসকো চুল দাড়ি। এক কথায় বলা যায়, অগোছালো। তিনি জিজ্ঞেস করলেন-

- কী চাই?

- এটা কি রায়হানের বাসা?

- হ্যাঁ।

- আপনি?

- আমি ওঁর মা।

- আমি কি একটু আপনার সাথে কথা বলতে পারি?

- কী ব্যাপারে? তুমি কি রায়হানের কোন বন্ধু?

- বন্ধুই বলতে পারেন।

- কিন্তু ও তো বাসায় নেই।

- আমি জানি।

- তাহলে?

ছেলেটা চুপ করে রইল।



ব্যাপারটা ঘোলাটে মনে হল সেলিনা রহমানের। চোর ডাকাত না তো!! আজকালকার চোর ডাকাতরা অনেক রিসার্চ করে এসব কাজে নামে। রায়হানের নাম জানা এদের জন্য তেমন বড় কোন ব্যাপার না। কিন্তু কৌতূহলও খুব হচ্ছে। কি বলতে চায় ও।

- এসো।

ছেলেটা্কে বসার ঘরে বসালেন সেলিনা রহমান।

- বল।

- আমি রায়হানের কেউ না।

- তাহলে?

- আমি আপনার পুত্রবধূর প্রাক্তন প্রেমিক।

সেলিনা রহমানের চেহারায় ভাবান্তর ঘটল না। তিনি এক দৃষ্টিতে চেয়ে রইলেন ছেলেটার দিকে। এর উত্তরে তাঁর কি বলা উচিৎ!!

- প্রাক্তন কথাটার মধ্যেই তো সব সমস্যার সমাধান হয়ে গেল।

এরকম উত্তর যেন আশা করেনি ছেলেটা। তবু সে নিজেকে সামলে নিল।

- নাদিয়ার সাথে আমার পাঁচ বছরের সম্পর্ক। অনেক দিনের। ও আর আমি অনেক দূর পর্যন্ত গিয়েছি। আপনি মুরুব্বি মানুষ। সব কথা ভেঙ্গে আপনাকে বলতে চাচ্ছি না।

শেষ কথাটা বলে একটু নোংরা করে হাসল ছেলেটা। সেলিনা রহমান প্রথমে কিছুটা শিউরে উঠলেও পরক্ষনেই নিজেকে সামলে নিলেন। জীবনে অনেক ধরনের মানুষ তিনি চাকরির সুবাদে দেখেছেন। ঘুষ না খাওয়ার জন্য সহকর্মী থেকে শুরু করে বহু মানুষের হুমকি ধামকি খেয়ে সে অভ্যস্ত। এসবে তিনি ভয় পান না।

- তোমার নাম কি?

- অয়ন।

- তুমি যা বলছ তাঁর কি কোন প্রমাণ আছে?

- আছে। ভালো প্রমাণ আছে।

একটা খাম আর একটা সিডি সামনে রাখল ছেলেটি।

- আচ্ছা। এখন তুমি কি করতে চাও?

- আপনার ছেলেকে বলেন ওকে ছেড়ে দিতে। এরকম একটা মেয়েকে নিশ্চয়ই নিজের বৌ করে রাখবেন না আপনি!! তা না করলে প্রমাণ জায়গামত ছড়িয়ে দিতে আমার সময় লাগবে না।

- একটু বোস আমি আসছি।

বসার ঘরের দরজাটা বাইরে থেকে ভেজানোর ভান করে তিনি তা আটকে দিলেন। শোয়ার ঘর থেকে কাকে যেন ফোন করলেন।

- তুমি এখন আসতে পারবে?

ও প্রান্তের কথা শুনে বললেন,

- ঠিক আছে।

দশ মিনিট অপেক্ষা করার পর শুনলেন বসার ঘরের দরজা ধাক্কাচ্ছে ছেলেটি। সেলিনা রহমান বিচলিত হলেন না। আরো পাঁচ মিনিট যাওয়ার পর কলিং বেল বাজল।

দরজা খুলে যিনি ঢুকলেন তিনি সেই এলাকার থানার ওসি রকিবুল। রকিবুলের এক চাচার পেনশনের টাকা আটকে দিয়েছিল তাঁর অফিস। সেই টাকা ছুটিয়ে দিয়েছিলেন সেলিনা কোন ঘুষ খাওয়া ছাড়াই। তখন রকিবুল সদ্য পুলিশের চাকরিতে ঢোকা যুবক। এরপর থেকে সেলিনার সাথে প্রায় নিয়মিত যোগাযোগ রাখে সে। কোন সাহায্য করার সুযোগ খোঁজে সে। প্রত্যেক মানুষের মধ্যেই সৎ হওয়ার একটা ইচ্ছা থাকেই। মানুষ অনুপ্রেরনা খোঁজে। রকিবুলের জীবনের অনুপ্রেরণা এই মহিলা।



ওদিকে দরজায় খুব জোরে জোরে ধাক্কা দিচ্ছে ছেলেটা।

- আমাকে আটকে রেখেছেন কেন? দরজা খুলুন। জলদি। নইলে কিন্তু খুব খারাপ হয়ে যাবে।

রকিবুল প্রথমে সেলিনার থেকে সব শুনে নিলেন। কিছু বললেন না। বুঝলেন সেলিনা রহমান তাঁকে কতটা বিশ্বাস করেন।

সেলিনা এবং রকিবুল দরজা খুলে ঘরে ঢুকলেন। পুলিশের পোষাকে লোক দেখে ভড়কে গেল ছেলেটা। সে দৌড়ে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করল। রকিবুল তাঁকে ধরে বসালেন।

সেলিনা রহমান শিরদাঁড়া সোজা করে বসেন সব সময়। এটা তাঁর গম্ভীর মুখকে আরো তাৎপর্য এনে দেয়। তিনি ছেলেটার মুখোমুখি বসলেন।

বললেন,

- আমি জানি না তুমি কতটুকু সত্যি বলছ আর কতটুকু মিথ্যা। এর গুরুত্ব আমার কাছে একদমই নেই। কিন্তু সমাজের বাকি মানুষদের কাছে আছে। আমি জানি এটা তোমার একমাত্র কপি নয়। আরো আছে। ওসি রকিবুল তোমাকে কয়েকদিন তাঁর থানায় রেখে জেনে নেবে আর কয়টা কপি তোমার কাছে আছে। তুমি ঠিকঠাক বলে দেয়ার পর তোমাকে ছেড়ে দেয়া হবে।



ছেলেটা কোন কথা বলতে পারে না। ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে থাকে। সেলিনা আরো বলেন,

- আমি কখনোই অতীতকে খুব বেশি গুরুত্ব দেই না। তুমি ভুল মানুষের কাছে এসেছিলে। তবে তুমি যা বলেছ তা যদি সত্যি হয়ে থাকে, তাহলে আমার পুত্রবধূর প্রতি আমার ধারণা আরো উন্নত হল।

ছেলেটা বুঝতে পারে না। বলে,

- মানে??

- তুমি যে কখনোই তাঁর জন্য ঠিক ছিলে না তা অনেক আগেই বুঝতে পেরেছিল এবং ও যে ঠিক ছিল, তা আজ প্রমাণ হয়ে গেল।

কথাটা বলে খুব তৃপ্তি পেল সেলিনা রহমান। কিন্তু এই ধরনের মানুষদের যে কখনোই কথা দিয়ে তাঁদের মর্মে আঘাত করা যায় না, তা তিনি ভালো করেই জানেন। রকিবুলকে ইশারা করতেই রকিবুল ছেলেটাকে ঘাড় ধরে থানায় নিয়ে গেল।



রাতে সবাই একসাথে খেতে বসেছে। খেতে খেতে গল্প করছে সবাই। সেলিনা রহমান বরাবরের মত চুপ।



খাওয়া শেষে সবাই উঠে গেছে। সেলিনা রহমান হাত ধুয়ে টেবিলেই বসে আছেন। নাদিয়া টেবিল গুছাচ্ছে। নাদিয়াকে অবাক করে দিয়ে সেলিনা রহমান বললেন,

-রান্না খুব ভালো হয়েছে।

একটু যেন হাসিও ফুটে উঠল সেলিনা রহমানের মুখে।

মন্তব্য ২ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ২৭ শে জুলাই, ২০১৪ দুপুর ১:৫৪

ডরোথী সুমী বলেছেন: অসাধারণ লেগেছে। মন ভাল করে দেয়ার মত গল্প। শুভ কামনা রইল। ঈদ মোবারক।

২| ০৪ ঠা মে, ২০১৭ রাত ৮:৪৭

রুমি৯৯ বলেছেন: ছেলেটি ফ্রড ছিল?

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.