নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

জুবায়ের সুহান

সুহান সুহান

দ্বিধান্বিত

সুহান সুহান › বিস্তারিত পোস্টঃ

অসম-১

০৪ ঠা আগস্ট, ২০১৪ রাত ১০:৫৮

ভর দুপুর। খাওয়া দাওয়ার পরে যারা বাসায় তাঁরা সবাই একটু গড়িয়ে নিচ্ছে। দুজন মানুষ ছাড়া। একজনের বয়স ৩। আরেকজনের বয়স ২৮। ৩ বয়স যার তাঁর অবস্থান বারান্দায়। যদিও এই সময়ে তাঁর এখানে থাকার কথা না। তাঁর এখন মায়ের সাথে ঘুমিয়ে থাকার কথা। কিন্তু তাঁর এখন একটুও ঘুমুতে ইচ্ছা করছিল না। মায়ের চোখ লেগে আসতেই সে বারান্দায় চলে এসেছে। এখন সে তাঁর নতুন মিশন শুরু করবে। মিশনের নাম- ডিশের লাইনের তাঁর ধরে ঝুলা ঝুলি খেলা। বারান্দার ছাদ ঘেঁষে তারটা গেছে ঘরের ভিতরে। তাই ওখানে উঠে ঝুল খেতে গেলে তাঁকে বারান্দার গ্রিল দিয়ে বেয়ে উঠতে হবে। দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে সে এসব পরিকল্পনাই করছিল। তাঁর পিছনে এসে দাঁড়াল ২৮ বছর বয়সের মানুষটা। এই দুজনের সম্পর্ক মামা-ভাগ্নি। কিন্তু এদের পরিচয় এখনো হয়নি।



যে মামা তাঁর নাম রাকিব। সে অনেকদিন পর তাঁর এই বোনের বাসায় বেড়াতে এসেছে। অনেকদিন বলতে ৫ বছর। আসি আসি করেও এই বোনের বাসায় তাঁর আসা হয়ে ওঠেনি। সে ঢাকায় চাকরী করে। তাঁর বোন থাকে নেত্রকোনায়। আজই এসেছে সে। দুপুরে খেয়ে একটু শুয়েছিল। কী মনে করে বারান্দায় এসে দাঁড়ানোতেই ৩ বছরের মানুষটার সাথে দেখা।



৩ বছর বয়সীর নাম ইষ্টি। বড় অদ্ভুত নাম। তাঁর নানা এ নাম রেখে গেছেন। এই নামের ব্যাখ্যা তিনি দিয়ে যাওয়ার সুযোগ পাননি। যেদিন তিনি নাতনির নাম ঠিক করেন, সেই রাতেই তিনি মারা যান। বেঁচে থাকলে হয়তো এ নাম রাখা হত না। মরে যাওয়াতে তিনি বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নাম রাখার প্রতিযোগিতায় জিতে যান। যাই হোক!! ইষ্টি নামটা মিষ্টি হলেও ইষ্টির কাজকর্ম মোটেও বাড়ির বাকিদের কাছে মিষ্টি লাগত না। সে বরাবরই জেদি আর একরোখা। তাঁর যেটা ঠিক মনে হবে সেটাই করতে হবে। একবার তাঁর গ্লাস ভাঙ্গার নেশায় পেয়ে বসল। হাজারবার বকে, আদর করে বুঝিয়েও লাভ হয়নি। ইষ্টির যা মনে হবে তা সে করেই ছাড়বে। তাই তাঁকে একা ছাড়া হয় না। আজকে তাঁর মা, ভাইয়ের জন্য ভাল-মন্দ রাঁধতে গিয়ে খুব ক্লান্ত। তাই মেয়ে কখন বিছানা ছেড়ে উঠে গেছে টের পায়নি।



ইষ্টি গ্রিল বেয়ে একটু একটু করে উঠছে। রাকিব আগ্রহ নিয়ে দেখছে। কিন্তু কিছু বলছে না। সে বুঝতে চাইছে যে মেয়েটা কি করতে চায়। ইষ্টি একটা করে গ্রিল বেয়ে উঠছে আর ডিশের লাইনের তারটার দিকে তাকাচ্ছে।

রাকিব হঠাৎ বলল-

“তুমি কি ঐ তারটা ধরতে চাচ্ছ?”

ইষ্টি একবার ফিরে তাকাল। কিন্তু কিছু বলল না। সে বারান্দার গ্রিলের মাঝ পথে উঠে গেছে। রাকিব তারটাকে একটু টেনে নামিয়ে ইষ্টির আয়ত্বে এনে দিতে চাইলে ইষ্টি “এএ- এএ” করে আপত্তি জানাল। তার নামানো যাবে না। যেখানে আছে ওখানেই থাকতে হবে। অগত্যা রাকিব তারটাকে আগের জায়গায় নিয়ে গেল। মনে মনে হাসল সে। এই পৃথিবীতে সবই খেলা। কেউই সেই খেলায় দুধ ভাত হতে চায় না। দুধভাতদের সবাই করুণার চোখে দেখে। এই কঠিন সত্যি ছোট এই মানুষটা কিভাবে বুঝে ফেলল!!

রাকিব দেখল যে যদি ইষ্টি তারে ঝুলতে পারে তবে সে নির্ঘাত পড়ে যাবে এবং মারাত্মক ব্যথা পাবে। কিন্তু এখন যদি সে এটা তাঁকে বলে তাহলে ইষ্টি জীবনেও মানবে না। বাচ্চারা সারাজীবন বড়দের কাছ থেকে একটা শব্দই অনেকবার শোনে। সেই শব্দটা হল ‘না’। সবকিছুতেই ‘না’। বড়রা নিজেরাই শব্দ করে এমন খেলনা কিনে দিয়ে বিরক্ত হয়ে বলবে ‘শব্দ কোরো না।’ চকলেটের মজা পাইয়ে দিয়ে বলবে, ‘এত চকলেট খেতে হয় না’। কার্টুনের চ্যানেল চিনিয়ে বলবে, ‘ভালো বাচ্চারা এত কার্টুন দেখে না’।

রাকিব তাই ‘না’ বলার মধ্যে দিয়ে গেল না। সে কিছুক্ষণ ইষ্টির বেয়ে উঠা দেখে এমনভাবে কথা বলল যেন সে বড় কারো সাথে কথা বলছে আর ইষ্টির কাজকর্ম নিয়ে তাঁর যেন কোন মাথা ব্যথা নেই।

‘তারটায় ঝুলবে নাকি তুমি?’

ইষ্টি রাকিবের প্রশ্নের উত্তর দিল না। রাকিব বলতে থাকল,

‘হুম!! ঝুললে মজাই হবে। কিন্তু একটা ঝামেলা আছে’।

ইষ্টি উঠা বাদ দিয়ে রাকিবের দিকে ফিরে তাকাল। চোখে প্রশ্ন।

‘ঝুলতে ঝুলতে মাটিতে পড়ে যাওয়ার একটা সম্ভাবনা আছে। আর ঐখান থেকে পড়লে হাড়গোড় ভাঙতে পারে। আবার নাও পারে। একবার হাড় ভাঙলে অনেক কষ্ট হয়। আমার একবার ভেঙ্গেছিল। তাও ব্যাপার না। চেষ্টা করে দেখ’।

বলে সে বারান্দা থেকে বের হয়ে আসল। আসলে কিন্তু গেল না। ইষ্টির চোখের আড়ালে গিয়েও ওঁর দিকে নজর রাখল। পড়ে যাওয়ার সময় হলে গিয়ে ধরতে তো হবে। কিন্তু রাকিব চলে যাওয়ার পর ইষ্টি কি মনে করে থেমে গেল। ৫ মিনিট ঐ জায়গাতেই থেমে রইল। তারপর আস্তে আস্তে নেমে আসল।

রাকিব তা দেখে মৃদু হেসে তাঁর বিছানায় গিয়ে শুল।



রাকিব ঠিক তিনদিন ছিল তাঁর বোনের বাসায়। এই তিনদিনে ইষ্টির সাথে রাকিবের এক অদ্ভুত বন্ধুত্ব হল যা সাধারণত ছোটদের সাথে বড়দের হয় না। কারণ বড়রা কখনো ছোটদের দুনিয়াটা বুঝতে পারে না। এই যেমন ইষ্টির বাবা ইষ্টির জন্য পুতির মালা কিনে আনল। হরেক রঙের। এখন এই মালা গলায় দেওয়ার চেয়ে প্রত্যেকটা পুতি মালা থেকে আলাদা করে দেখতেই যে মজা এটা বড়রা কখনো বুঝবে না। বড়রা খালি পারে ‘না’ বলতে। রাকিব এসব ব্যাপারে কখনো ইষ্টিকে মানা করে না। খুব বিপদজনক কিছুতে ইষ্টি ব্যস্ত না থাকলে রাকিব কিছুই বলে না। সে তাঁর মত না দেখার ভান করে। এই যেমন এখন ইষ্টি তাঁর বাবার এনে দেয়া জুতা জোড়া নিয়ে পড়েছে। জুতাগুলো দেখতে চিরাচরিত বাচ্চাদের জুতাদের মতই। অনেক রঙিন। জুতার উপরে অনেক ফুল ফুল দেয়া। ইষ্টি চেষ্টা করছে সেই ফুলগুলা খোলার। রাকিব দেখছে যে ইষ্টি কিছুতেই সুবিধা করতে পারছে না। সে উঠে গিয়ে একটান দিয়ে একটা ফুল খুলে ইষ্টিকে দিল। ইষ্টি ৩২টা দাঁত বের করে ওঁর দিকে তাকিয়ে হাসল। রাকিবও হেসে ওঁর মাথায় হাত বুলিয়ে দিল।



এভাবেই ৩টা দিন কেটে গেল। বিদায় নেওয়ার সময় রাকিব শুধু একবার ইষ্টির খোঁজে তাকাল। তিনদিনে পিচ্চিটার উপর মায়া পড়ে গেছে। কিন্তু ইষ্টি সামনে আসছে না। দরজার আড়ালে দাঁড়িয়ে আছে। আসবে না। সবাই অনেক করে বলল। ওঁর মা বলল, ‘দেখ! দেখ! মামা চলে যাচ্ছে। একটিবার আস। মামা কিন্তু আর আসবে না’। রাকিব ইষ্টিকে চেনে। সে তাঁর বোনকে মানা করল। এভাবেই প্রথম ধাপের দেখা শেষ হল ইষ্টি আর রাকিবের।



এরপরে দেখা হল যখন ইষ্টি ক্লাস নাইনে পড়ে।

(চলবে)

মন্তব্য ৩ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৩) মন্তব্য লিখুন

১| ০৪ ঠা আগস্ট, ২০১৪ রাত ১১:০৭

আলম দীপ্র বলেছেন: চলুক ।

২| ০৪ ঠা আগস্ট, ২০১৪ রাত ১১:০৮

শায়লা িসিদ্দক বলেছেন: শেষের অপেক্ষায় থাকলাম :)

৩| ২৪ শে আগস্ট, ২০১৪ রাত ২:২৬

তানি তানিশা বলেছেন: এর পরে কি হবে জানতে ইচ্ছা হচ্ছে! অপেক্ষায় আছি

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.