নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

জুবায়ের সুহান

সুহান সুহান

দ্বিধান্বিত

সুহান সুহান › বিস্তারিত পোস্টঃ

সুর প্রাইভেট ইনভেস্টিগেটরস-২

২৪ শে আগস্ট, ২০১৪ রাত ৮:২৩

সুর প্রাইভেট ইনভেস্টিগেটরস-১

Click This Link



নামটা রত্না কাজি ছিল না। ছিল কাজি রত্না ফারুক। ফ্যামিলি নাম কাজি। আর বাবার নাম ফারুক। বাবা মায়ের এক সন্তান রত্না। তাই তার জেদ অভিমান রাগ সবই বেশী। তবে তাঁর অনুভূতি চড়া তারে বাঁধা নয়। এ অনেকটা নিচু লয়ে চলে। কিন্তু এর স্থায়ীত্ব থাকে অনেককাল। নামের বেলায়ই তার প্রয়োগ ঘটেছে। রত্নার বাবা কাজি ফারুক আর মা কাজি রুমানা ফারুক দুজনেই বিমান দুর্ঘটনায় মারা যান। তখন রত্নার বয়স ১১ মাস। ছোট বাচ্চা বলে তাঁকে ছাড়াই জরুরি কাজে ব্যাংকক যেতে হচ্ছিল দম্পতিকে। রত্না ছিল তাঁর মামা মামীর কাছে। বোধ জ্ঞান হবার পর যখন বাবা মায়ের এরকম করে চলে যাওয়ার খবর শুনল। তখন তাঁর খুব অভিমান হল। সেই অভিমানের জন্যই সে নিজের নামের থেকে ‘ফারুক’ অংশটা উঠিয়ে দিল। যে বাবা তাঁর সাথে থাকতে পারেনি তাঁর নাম কেন সে সারাজীবন বয়ে বেড়াবে!! তাঁর কী দায়!!! মাও তো একবারও তাঁর কথা ভাবল না। দুজনেই তাঁকে রেখে চলে গেল!! স্কুল কলেজে সবার বাবা মা আসত। তাঁর জন্য আসত মামা। কখনো কখনো মামী।



রত্নার মামা রজব হাওলাদার ও মামী সেতু হাওলাদার-দের একটি ছেলে ছিল। জন্মের এক বছর পর সে মারা যায়। তাঁদের মনে ছিল অপূর্ণ অভিভাবকত্বের তীব্রতা। তাঁরা রত্নাকে নিজের মেয়ের চেয়েও বোধহয় বেশি ভালোবাসতেন। ইচ্ছা করলে তাঁরা রত্নার কাছে নিজেদের রত্নার বাবা মা বলেই পরিচয় দিতে পারতেন। সেতু হাওলাদারের সেরকমই ইচ্ছা ছিল। কিন্তু রজব হাওলাদার কিছুটা নীতিবাগীশ ছিলেন। কথা বার্তা বলা এবং বোঝার বয়সেই তিনি রত্নাকে সব খুলে বলেন। রত্না ঠিক কতটুকু বুঝেছিল বলা মুশকিল। কিন্তু সে পরবর্তী জীবনে এই জন্যে নিজের মামা মামীকে ধন্যবাদ দিয়েছে। এদের কাছ থেকেই সে সততার শিক্ষা পেয়েছে। তবে একটা ক্ষতি কিন্তু ঠিকই হয়েছিল। রত্না কখনো নিজের বাবা মায়ের জায়গায় মামা মামীকে বসাতে পারেনি। কৃতজ্ঞতাবোধ বরাবরই ছিল। কিন্তু কেন যেন অধিকারবোধ আসত না ওঁদের উপর। এ নিয়ে সেতু হাওলাদারের মনে বরাবরই দুঃখ ছিল। তিনি প্রথম থেকেই রত্নাকে সত্যি বলার পক্ষে ছিলেন না। একটা বাচ্চা তাঁকে মা মা করে ডাকবে। সারা বাড়ি জুড়ে মা ডাক। বিধাতা স্বাভাবিকভাবে এ সুখ তাঁকে দেননি। ছেলেটা হয়েছিল যখন তাঁর বয়স পঁয়ত্রিশ। এরপর আর মা হতে পারেননি তিনি। ভেবেছিলেন রত্নাই হবে তাঁর মেয়ে। কিন্তু স্বামী রজবের কারণে তা হল না। রত্না তাঁর মেয়ে হলেও তিনি রত্নার মা হতে পারলেন না।



ছোটবেলা থেকেই রত্না আর দশ জনের মত ছিল না। সে ডানপিটে ছিল না। কিন্তু গতানুগতিকতা তাঁর পছন্দ ছিল না। সে চুপচাপ থাকত। কিন্তু সবকিছু বেশ নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করত। দশজন যে পথ দিয়ে যাবে রত্না সে পথে হাঁটবে না। এটা কিন্তু তাঁর অকারণ জেদ নয়। উলটো পথটাকেই তাঁর সঠিক পথ বলে মনে হত।

রত্নার মামা কখনোই রত্নাকে কোন কিছুতে বারন করেননি। খালি এটুকু খেয়াল রেখেছেন মেয়ে যেন ঠিক পথে থাকে। তাই যেদিন রত্না এসে বলল, ‘মামা!! আমি প্রাইভেট ইনভেস্টিগেটর হতে চাই’। সেদিন তিনি কিছুটা বিস্মিত হলেও নিজের বিস্ময় লুকিয়ে রেখেছিলেন। অপেক্ষা করছিলেন যে রত্না নিশ্চয়ই নিজের স্বপক্ষে আরো কিছু বলবে। কিন্তু রত্না আর কিছু বলল না। তিনি কী বলবেন রত্নাকে, তা ঠিক বুঝে উঠতে পারেননি। তারপরো জিজ্ঞেস করেছিলেন যে এরকম কিছুকে পেশা হিসেবে নেয়ার কারণ কি!! রত্না বলেছিল যে বাংলাদেশে সেরকমভাবে কোন প্রাইভেট ইনভেস্টিগেশন হয় না। ইনভেস্টিগেশনের কাজ বলতে শুধু পুলিশের কাজ বলেই ধরা হয়। কিন্তু মানুষ পুলিশকে ভয় পায়। তাই সাধারণ মানুষ সহজে পুলিশের কাছে যেতে চায় না। এই সাধারণ মানুষকে ন্যায় দেয়ার জন্যই সে কাজ করতে চায়। এ কাজে দক্ষতা অর্জনের জন্য সে কারাটে শিখছে। শুটিং প্র্যাকটিস করছে। কিছুদিনের মধ্যেই সে একটা পিস্তলের লাইসেন্সের জন্য আবেদন করবে।



এবার বেশ ভালোই অবাক হলেন রজব হাওলাদার। সেইদিনের মেয়ে। কি ভাবগম্ভীর কথা। সবকিছু গুছিয়ে রেখেছে। সামনে কী করবে। আত্মনিরাপত্তার কথাও ভেবেছে রত্না। রজব হাওলাদার বরাবরই প্রথা ভাঙ্গা লোকদের পছন্দ করেছেন। কিন্তু নিজে প্রথা ভাঙতে পারেননি। রত্নার উদ্যোগকে তিনি মেনে নিলেন। কিন্তু শর্ত একটাই। যে কোন বিপদেই সবার আগে যেন তাঁর এই মামা খবর পায়। রত্না শর্ত মেনে নিল।



কিন্তু এই পেশা এরকম কোন পেশা না যে চাইলেই কাজ পাওয়া যাবে। তার ওপরে রত্না একটি মেয়ে। আমাদের সমাজে যেখানে এখনো মেয়েদের কাজ করাকেই অনেকে সমর্থন করে না। সেখানে একটি মেয়ে সিনেমার মত গোয়েন্দাগিরি করে বেড়াবে। ঢিশুম ঢিশুম করে মারামারি করবে। পিস্তল দিয়ে গুলি করবে। তা কি মানা যায়!! যেখানে সন্ধ্যায় বাড়ির মেয়ে বের হলে বাড়ির বড় ভাইকে বিরক্তি নিয়ে সাথে যেতে হয় সেখানে রত্নার কাজ পাওয়া যথেষ্ট সন্দেহের ছিল। প্রথম প্রথম ব্যাপারটা আশেপাশের সবার জন্যে বেশ কৌতুকের ছিল।



কিন্তু সেই কৌতুকটা খুব বেশীদিন কৌতুক রইল না।



সুর প্রাইভেট ইনভেস্টিগেটরস-১

Click This Link

মন্তব্য ৩ টি রেটিং +৩/-০

মন্তব্য (৩) মন্তব্য লিখুন

১| ২৪ শে আগস্ট, ২০১৪ রাত ৮:৫৭

হানিফ রাশেদীন বলেছেন: ভালো লাগা রইলো।

২| ২৫ শে আগস্ট, ২০১৪ রাত ২:০০

আজমান আন্দালিব বলেছেন: অনুসরণে। চলুক...

৩| ১৮ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৪ রাত ১২:০৯

তানি তানিশা বলেছেন: পরের পরে্বর জনয অধীর আগ্রহে অপেক্‌ষায় রইলাম সযার ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.