নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

জুবায়ের সুহান

সুহান সুহান

দ্বিধান্বিত

সুহান সুহান › বিস্তারিত পোস্টঃ

রাগ-বিরাগ

১৮ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৪ দুপুর ২:০৪

রাগী মানুষের মনের অবস্থা সেই মানুষটা ছাড়া খুব কম মানুষই বোঝে। মাঝে মাঝে সে নিজেও বোঝে না। নিরাপত্তাহীনতা, জেদ এবং স্বেচ্ছাচারী মনোভাব এসব কিছুই রাগী মানুষের রাগের মূল কারণ। তারপর যদি সেই মানুষের মধ্যে ছটাক পরিমাণও ‘সৃষ্টিশীলতা’ বলে কিছু থেকে থাকে তাহলে আর সেই মানুষকে কে পায়!! ‘রাগ’ আর ‘সৃষ্টিশীলতা’র সম্পর্ক ভয়ঙ্কর রকমের রোমাঞ্চকর।



কতগুলো গল্প লিখবে বলে ঠিক করে রেখেছিল তপন। কিছুতেই লিখা হচ্ছে না। প্রতিদিন শুতে যাচ্ছে পরের দিন একটা গল্প ঠিক লিখে ফেলবে ভেবে। কিন্তু কিছুতেই লিখা হচ্ছে না। হচ্ছে না তো হচ্ছে নাই। তাহলে কি তার কোনদিন বড় লেখক হয়ে ওঠা হবে না!! আত্মগ্লানিতে ভরপুর হয়ে তপন বিছানায় শুয়ে আছে। আজকে শুক্রবার। ছুটির দিন। ভেবেছিল আজকে সকাল সকাল উঠে অন্তত একটা গল্প সে লিখবেই। গল্পের প্লট সাজানো নেই। বাকি লেখকদের মত তপনের গল্পের প্লট সাজানো থাকে না। লিখতে বসলে একটা কিছু বের হয়ে আসে। এখন বাজে বেলা ১২টা। নাহ!! তাঁকে দিয়ে কিচ্ছু হবে না। সে কোনদিন বড় লেখক হতে পারবে না। যদিও লেখা তার নেশা। পেশা না। পেশায় সে একজন ব্যাংকার। কিন্তু লেখালেখি করার অভ্যাসটা ছাত্রজীবন থেকেই।নিজের জন্যই লেখা।আর যদি দুই একজন বাহবা বলে দেয় তাহলে তো আর কথাই নেই।



মেজাজ খারাপ নিয়েই সে বিছানা থেকে উঠল। কম্পিউটার ওপেন করল। মাইক্রোসফট ওয়ার্ডের ব্ল্যাংক পেজ খুলে বসে রইল। ঠিক যখন সে মনে মনে স্থির করে নিল যে ঠিক কোন শব্দটা দিয়ে সে একটা বাক্যের সূচনা করবে! ঠিক তখন তপনের স্ত্রী তানিয়া ঘরে ঢুকল। সাথে সাথে তপনের মেজাজের পারদ প্রথম স্তর থেকে দ্বিতীয় স্তরে চলে গেল। মেজাজের এই যে স্তর পরিবর্তন তা এতটাই বায়বীয় যে তা তপন ছাড়া আর কেউই টের পেল না। তাঁর লেখা থেমে গেল। আর লেখা হবে না। সে বড়লোক নয়। লেখালেখির জন্য তাঁর আলাদা ঘরের বন্দোবস্ত করার সামর্থ্য নেই। কিন্তু লিখার সময়টা পুরো পৃথিবী স্তব্ধ হয়ে গেলে যেন সবচেয়ে ভালো হয়। কোন আওয়াজ হবে না। খুটখাট ঘুটঘাট ফুটফাট। কিচ্ছু না। মাঝে মাঝে সমুদ্রের গর্জন অবশ্য খারাপ লাগবে না।



তানিয়া ঘরে ঢুকেই খুব ক্লান্ত স্বরে জিজ্ঞেস করল,

- মাত্র উঠলে?

মেজাজের পারদ এমনিতেই দ্বিতীয় স্তরে। এই সময় তানিয়া আবার এই দুই শব্দের প্রশ্নের মাধ্যমে তপনকে মনে করিয়ে দিল যে সে আজকে চেয়েও সকালে উঠতে পারেনি। আবার সেই আত্মগ্লানি। সেই আত্মগ্লানি থেকে হতাশা। সেই হতাশা থেকে রাগ। ফলে তপনের কাছ থেকে বাজখাই গলায় উত্তর।

- কেন? কোন সমস্যা??

ছুটির দিনের প্রথম সংলাপেই যদি এই মাত্রার প্রতিক্রিয়া আসে। তাহলে স্ত্রীর মনের ভাব বোঝাটাও খুব একটা কঠিন নয়। তানিয়া কিছুটা অবাক হয়ে বড় বড় চোখ মেলে চেয়ে রইল। বেশী অবাক হল না কারণ ঘটনাটা নতুন নয়। কিন্তু অকারণ এরকম ব্যবহার পেয়ে সে এখনো অভ্যস্ত হতে পারেনি। যদিও বিয়ের বয়স তাঁদের কম নয়। সামনের মাসে সাত বছর হবে। এই পাঁচ বছরে এই লোকটার এরকম মেজাজের কারণ সে এখনো বুঝতে পারে না। চেষ্টা করে। তাও পারে না। আসলে প্রত্যেক মানুষ নিজেকে ভিক্টিম ভাবতেই বেশী ভালোবাসে। নিজের পাওয়া না পাওয়ার হিসাবে এত বেশী মশগুল থাকে যে অন্যের দিকটা অন্যের মত করে ভাবার সুযোগ সে পায় না। যেমন পায় না তপন। তেমনি পায় না তানিয়া।



তানিয়া কোন উত্তর দিল না। এতে তপনের রাগ আরো বাড়তে লাগল। রাগী মানুষদের রাগ একবার উঠলে তা বের হয়ে যেতে হয়। তাঁরা তখন চায় যে কোনভাবেই উত্তপ্ত বাক্য বিনিময়ে অংশ নিতে। ঠিক বিনিময়ও না। আরেক পক্ষ তাঁর উত্তপ্ত বাক্যগুলো শুনে গেলেও হয়। তাতেও লাভ বই ক্ষতি হবে না। কিন্তু তানিয়া সেরকম কোন সুযোগ দিচ্ছে না। তপনের রাগ আরেক স্তরে গমন করল। সে চেয়ার থেকে উঠে চেয়ারটাকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে ঘর থেকে বের হয়ে গেল। তানিয়া যেমন ছিল তেমনই শুয়ে রইল।



ড্রয়িং রুমে গিয়ে আরো কিছুক্ষণ ফোঁস ফোঁস করার আশায় গিয়ে দেখে তপন তানিয়ার একমাত্র মেয়ে রাত্রি সোফায় বসে কিসের যেন ছবি আঁকছে। মেয়েটাকে দেখে রাগের পারদ নিচের দিকে নামতে থাকল। মেয়েটা এক মনে কি যেন আঁকছে। চুলগুলা শিং এর মত করে বাঁধা। তপন ড্রয়িং রুমেই একটা সোফায় বসল। মেয়েটার বয়স ছয়। ক্লাস টু-তে পড়ে।



তপন সোফায় বসে কত কিছুই না ভাবছে। রাগের পারদ নিচে নেমে গেলে এক ধরনের বিষণ্ণতা এসে জড়ো হয়। সেই বিষণ্ণতার সাথেই সময় কাটাচ্ছিল সে। মানুষ জীবনে অনেকবার ভুল করে। একই ভুল বার বার করে। প্রত্যেকবার ভুল করে সে অনুশোচনায়ও ভোগে। কিন্তু সেই ভুল স্বীকার করে সে অপর পক্ষের কাছে কখনো নতি স্বীকার করে না।



রাত্রি কখন যে পাশে এসে বসেছে তপনের। তপন তা খেয়াল করেনি।

- বাবা!! তোমার কি মন খারাপ?

রিনরিনে গলায় মেয়ের মুখে এই প্রশ্ন শুনে তপন ভিতরে ভিতরে একেবারে আবেগাপ্লুত হয়ে গেল। কিন্তু বাইরে তা প্রকাশ করল না। তা কি কখনো করা যায়!! একটু নরম করে কথা বললেই তপন নামক মানুষটার রাগ পানি হয়ে যায়। তপন উত্তর দিল

- না মা!! আমার মন ভালো।

রাত্রি আরেকটু কি যেন ভাবল। তারপর বলল-

- তাহলে কি তোমার মেজাজ খারাপ বাবা? খুব রাগ হচ্ছে তোমার?

তপনের চোখটা যেন চিক চিক করে উঠল। মেয়েটাকে নিজের কাছে নিয়ে বসে রইল। রাত্রি বাবার শরীরের সাথে আদুরে ভঙ্গিতে মিশে বলে যাচ্ছে।

- বাবা!! তোমার যদি খুব রাগ হয় না!! তাহলে আমাকে বকে দিও। আমি রাগ করব না। আমি তো বুঝব তোমার মেজাজ খারাপ!! ঠিক আছে বাবা??

রাগের অস্তিত্ব কখন বিলীন হয়ে গেছে তপন জানে না। একটু একটু করে সে পুরো ঘটনা ভাবছে। সকাল থেকে তানিয়ার সাথে এভাবে খারাপ ব্যবহার করা ঠিক হয়নি। মানুষের মনের ভিতর পড়ে ফেলার ক্ষমতা তো আরেক মানুষের থাকে না। বেচারীর শরীরটাও গতকাল থেকে একটু খারাপ। তাঁর উপর মেয়ের সব দায় দায়িত্ব তো ওই দেখে। তপনের বলতে গেলে বাসায় কিছুই নেড়ে দেখা লাগে না। এতটুকু খারাপ ব্যবহারও তানিয়ার প্রাপ্য না। অনুশোচনায় ভরে উঠল তপনের মন।



তানিয়ার শরীরটা গতকাল থেকে খারাপ। শ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে। এর মধ্যে আবার তপনের মেজাজের নমুনা দেখে তাঁর মেজাজটাও খারাপ। কতক্ষন আর একটা মানুষের স্বেচ্ছাচারিতা সহ্য করা যায়। সেও তো একটা মানুষ। দিনরাত খাটাখাটনি সংসারের। তপন কি মনে করে যে বাসায় কাজ করে বলে তাঁর কোন আত্মসম্মান নেই। তাঁর নিজের বাবা মা তাঁর সাথে কখনো এমন ব্যবহার করেনি। আর এটাই তো প্রথম নয়। হ্যাঁ সে জানে, লেখা লেখি যারা করে তাঁরা একটু অন্যরকম হয়। আর দশজনের মত হয় না। সে তো কম চেষ্টা করেনি তপনকে বুঝতে। কোনটাই যেন যথেষ্ট নয় তাঁর কাছে। তপনের উপর যেন সংসারের কোন ঝামেলা না বর্তায় তাই পুরো দায় দায়িত্ব তানিয়া নিজে নিয়ে নিয়েছে। তাতেও হয় না। আসলে এই পৃথিবীতে নিজেকে পুরোটা দিয়ে নিঃশেষ করে দিলেও প্রাপ্য সম্মানটুকু পাওয়া যায় না।



হঠাৎ পিছনে কে যেন ঘাড়ে হাত রাখল। তপন।

- তোমার শরীরটা কি বেশি খারাপ?

- না আমি ঠিক আছি।

তপন কিছুক্ষণ চুপচাপ বসে রইল। আরো কিছু টুকটাক কথা জিজ্ঞেস করল কিছুক্ষণ ধরে।



রাগী মানুষের একটা অদ্ভুত অন্যায় আব্দার বা অন্যায় আশা থাকে। তাঁদের রাগ শেষ হয়ে গেলেই সবকিছু স্বাভাবিক হয়ে যেতে হবে। যেন অপরপক্ষের রাগ বলতে কিছু থাকতে পারবে না। যেন তাঁরা তাঁদের ভুল বুঝতে পেরেছে এই যথেষ্ট। তাই কিছুক্ষনের মধ্যেই তানিয়ার ভাবলেশহীন কথাবার্তা তপনের কাছে অসহ্য ঠেকল। বিলীন হয়ে যাওয়া রাগের পারদ আবার বাড়তে লাগল। সবকিছু স্বাভাবিক করার চেষ্টায় ব্যর্থ হয়ে সে গটগট করে ঘর থেকে বের হয়ে গেল।



গল্প এখানে শেষ।

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +৩/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ১৮ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৪ বিকাল ৫:২৪

মুহম্মদ ইমাম উদ্দীন বলেছেন: ভাল লিখেছেন। রাগী মানুষ সম্পর্কে গল্পের শুরুতে এবং শেষে যে কথাগুলো লিখেছেন তা খুবই সত্য কথা। খুবই ভালো লাগলো। ++++++

২| ১৮ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৪ সন্ধ্যা ৭:১৪

অপূর্ণ রায়হান বলেছেন: খুবই সচল স্বাভাবিক আমাদের দিনগুলি , এরকম । লেখনি ভালো লেগেছে ভ্রাতা :)

শুভ সন্ধ্যা :)

৩| ১৮ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৪ রাত ১১:৩৩

লাইলী আরজুমান খানম লায়লা বলেছেন: রাগ নিয়ে এই ধরণের গল্প আগে পড়ি নাই ----- অসম্ভব ভাল লেগেছে

৪| ২১ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৪ দুপুর ২:০২

ডি মুন বলেছেন: লিখার সময়টা পুরো পৃথিবী স্তব্ধ হয়ে গেলে যেন সবচেয়ে ভালো হয়। কোন আওয়াজ হবে না। খুটখাট ঘুটঘাট ফুটফাট। কিচ্ছু না। মাঝে মাঝে সমুদ্রের গর্জন অবশ্য খারাপ লাগবে না।


---- বাহ, সুন্দর বলেছেন তো :)

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.