নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

জুবায়ের সুহান

সুহান সুহান

দ্বিধান্বিত

সুহান সুহান › বিস্তারিত পোস্টঃ

আশা

১৭ ই ডিসেম্বর, ২০১৪ রাত ২:২৩

একটা কাঁচা বাজার। রহিম শেখ প্রতিদিন রাস্তার পাশের তাঁর ছোট্ট আয়োজনের দোকানটিতে বসে। খুব ভোরে ঘুম থেকে উঠে যায় সে। উঠে নামায পড়ে। সকল কিছুর জন্যে সৃষ্টিকর্তার কাছে ধন্যবাদ জানায়। এরপরেই ছোট ছেলেটিকে ডেকে ওঠায়। বড় আদরের এই ছেলেটি তাঁর। এই ছেলে একদিন বড় হবে। কত নাম করবে!!! স্বপ্নে চোখটা কেমন চিড়বিড় করে ওঠে। একটু রগড়ে নেয় চোখটা রহিম শেখ। বড় শখ ছিল রহিম শেখের যে দেশ বিদেশ ঘুরে বেড়াবে। কিন্তু জীবন যত এগোয় স্বপ্নের দরজাগুলো যেন একটা একটা করে বন্ধ হয়ে যায়। তাও সে দুঃখ করে না। এই জীবন নিয়েও সে সুখী। প্রতিদিন কত হরেক রকমের মানুষের সাথে দেখা হয়। সওদাপাতি কিনতে কত লোক আসে!!! কত রকম বায়নাক্কা তাঁদের। কেউ রেগে কটমট করে। কেউ হাসে মিটমিট করে। রহিম শেখ দেখে যায়। দেখতে দেখতে সে রসুনের বস্তাটা ঠিক করে। পচা পেঁয়াজগুলো আলাদা করে রাখে। কাঁচা সবজীগুলোতে আরেক দফা পানির ছিটা দেয়।

গলির মুখেই তাঁর ছোট ছেলের স্কুল। প্রতিদিন তাঁর সামনে দিয়েই স্কুলে যাওয়া আসা করে। স্কুল নিয়ে কত গল্প শোনে সে ছেলের কাছে। কি কি পড়ল। কি কি শিখল। এমন না যে রহিম শেখ পড়েনি। সে দশম শ্রেণী পর্যন্ত পড়েছে। পড়তে ভালোই লাগত তাঁর। কিন্তু ওই চিরাচরিত গল্প। যেখানে পড়াশোনা বিলাসিতা হয়ে যায়। তারপরেও ছেলের কাছে গল্প শুনতে তাঁর ভালো লাগে। খুব ভালো লাগে। ছোট মানুষ কি আগ্রহ নিয়ে গল্প করে। ছেলে ঠিক কী বলে তাঁর চেয়ে ছেলে কথা বলার সময়ে ওঁর চেহারাটা দেখতেই রহিম শেখের খুব ভালো লাগে। আগ্রহে চকচক করে মুখখানা। ওই মুখ দেখে রহিম শেখ কোন স্বপ্নের রাজ্যে হারিয়ে যায়। এই স্বপ্ন ছেলেকে নিয়ে। হঠাৎ করে মাথায় চিন্তা আসে। ছেলে কী কখনো বাবা তরকারিওয়ালা বলে লজ্জা পাবে!!! আজ না হোক কাল, ছেলের সহপাঠীরাও ছেলেকে খ্যাপাতে এরকম কথা বলতে পারে। জীবনে কোন অবস্থানই ছোট নয়। বরং সবার অবস্থান এক। এ সত্য রহিম শেখ জানে। জীবন থেকেই শিখেছে সে।

অনেক বছর আগে তাঁর প্রথম সন্তান কোন এক অকাল ব্যাধিতে মারা গিয়েছিল। সাত দিনের শিশু। কি বোবা কষ্ট হয়েছিল ছেলেটাকে কবর দিতে!! পুরুষ হওয়ার যে কী জ্বালা। বুকটা ফেটে দলা দলা হয়ে যায় কিন্তু কান্না আসতে চায় না। কবর হয়েছিল পাশের গ্রামে। এক সপ্তাহ পরে যখন রহিম শেখ কবর জিয়ারতে যায়। তাঁর সন্তানের পাশেই আরেকটা ছোট কবর খোঁড়া হচ্ছিল। চেয়ে দেখে ওই গ্রামের সবেচেয়ে অবস্থাপন্ন ঘরের বাচ্চা মারা গেছে। বাচ্চার বাবার মুখে কেমন সব হারানো ভাব। কি এক আত্মার মিল খুঁজে পেয়েছিল রহিম শেখ লোকটার মাঝে। সেদিন থেকে সে জানে যে সবাই এক। সবার দুঃখ কষ্ট হয়। সবার খিদা লাগে। সবাই মারা যায়। এমন না যে বড়লোকের টাকায় কেউ অমরত্ব কিনতে পারে। তাই এই জগতের মান অপমানবোধ সবই মনের বুঝ অবুঝে। যার বুঝ কম তাঁর অপমানবোধ বেশী। যার বুঝ বেশী সে সহজে অপমানিত হয় না। দশম শ্রেণী পর্যন্ত পড়া রহিম শেখ জানে। আত্মসম্মানবোধ আর মান-অপমানবোধ এক জিনিস না।

ছেলেকে তাই সে শেখায়। যদি কেউ তাঁকে তরকারিওলার ছেলে বলে ডাকে। সে যেন তাঁকে বলে যে আমার বাবা তরকারি না বিক্রি করলে তোমার বাবা তরকারি কই পেত!!! এই কথা শুনলে ছেলে হাসে। আরও অনেক কিছু বলে রহিম শেখ ছেলেকে। ছেলে বোকা বোকা চোখে সব শোনে। অনেক কিছুই হয়তো বোঝে না। তাও শোনে। রহিম শেখ ছেলেকে শুনিয়ে যায়। অনেক অনেককাল পরে হয়তো এই ছেলে অনেক বড় হবে। বড় হয়ে গেলে মানুষ অন্যের কষ্ট বুঝতে চায় না। কষ্টের উপর কষ্ট দেয়। এরকম কোন কষ্ট দেয়ার আগে যেন ছোটবেলায় তাঁর বাবার কাছ থেকে শোনা কথাগুলো যেন একবার হলেও মনে পরে। তাহলে কবরে শুয়ে হলেও রহিম শেখ অনেক সুখ পাবে।

ছেলেটা গল্প করে বাড়ি চলে গেছে। রহিম শেখের ফিরতে ফিরতে রাত হবে। সে উদাস দৃষ্টিতে পথের দিকে তাকিয়ে আছে। কত মানুষ হেঁটে যাচ্ছে পথ দিয়ে। কত রাগ দুঃখ অভিমান আর আশা নিয়ে। যে আশা রহিম শেখও লালন করে।

মন্তব্য ১ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (১) মন্তব্য লিখুন

১| ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০১৪ দুপুর ২:৪১

লাইলী আরজুমান খানম লায়লা বলেছেন: কত মানুষ হেঁটে যাচ্ছে পথ দিয়ে। কত রাগ দুঃখ অভিমান আর আশা নিয়ে। যে আশা রহিম শেখও লালন করে। ’’----------- ভীষণ ভাল লাগলো

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.