নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

জুবায়ের সুহান

সুহান সুহান

দ্বিধান্বিত

সুহান সুহান › বিস্তারিত পোস্টঃ

একজন সাধারণ মানুষের কথা

২১ শে জানুয়ারি, ২০১৫ বিকাল ৪:২৯

সবাইকে রোজ অফিস করতে হয়। শিক্ষক হওয়ার কারণে হরতাল হলে ক্লাস না নেওয়ার একটা অজুহাত পাই। নিজেকে বুঝাই যে আমার ছাত্র-ছাত্রীদের নিরাপত্তা আগে। কিন্তু অবরোধ হলে আবার ক্লাস চলে। বয়সের দিক দিয়ে পরিপক্ব হওয়া সত্ত্বেও রাজনীতির এই কূটনৈতিক শব্দগুলো বুঝতে শিখলাম না। 'হরতাল' ও 'অবরোধ' কিসের জন্য! এদের ভিতর মৌলিক পার্থক্য কি!!

বিশ্ববিদ্যালয়ের ঊর্ধ্বতনদের রোষের কারণে প্রতিদিন আমাকে ক্লাস নিতে ধানমণ্ডি থেকে বারিধারা যেতে হয়। রোষ না থাকলে হয়তো আগের মত কাকরাইল ক্যা¤পাসেই ক্লাস নিতে পারতাম। বাসা থেকে কাছে হত। মানসিক শান্তি থাকত আমার, আমার মায়ের, আমার স্ত্রীর। যে কোন পেশাতেই মানসিক শান্তি যে কি অমূল্য তা বলে বোঝানো যায় না। নিজের পেশার সমর্থনে যদি বলি, তাহলে বলতে হয় শিক্ষকদের যদি ছাত্র-ছাত্রীদের নিজের পুরোটা দেওয়ার ইচ্ছাও থাকে তাহলে মানসিক শান্তিটাও পুরোটা থাকতে হবে। নতুবা কাজে আসবে উদাসীনতা। যার প্রভাব পড়বে আমাদের ছাত্রছাত্রীদের ওপর। এখানেই হয়তো অন্য পেশার সাথে আমাদের পেশার পার্থক্য। আমাদের উদাসীনতা ভবিষ্যৎ প্রজন্মের ওপর প্রভাব ফেলে।

সে যাই হোক!!! বারিধারা যেতে হলে বাসে করেই যাই। অনেক অফিসগামী লোকের সাথে বাসে উঠি। তাঁদের উৎকণ্ঠা উদ্বেগ শুনি। মিলাই। আমার স্ত্রী, আমার মায়েরও এদের মতই উদ্বেগ। নিজের সন্তান, নিজের মানুষদের নিয়ে আমাদের কি অদ্ভুত পক্ষপাতদুষ্টতা। মাঝে মাঝে আমি ভাবি যে মানুষের এই 'স্বার্থপরতা' কি মানুষের স্বাভাবিক প্রবণতা!! নাকি আমরা এটা দিনকে দিন অর্জন করে চলেছি। এই যে আমি, ক্লাস নেই, চলে আসি। ভালোভাবে চলে আসলেই আমার পরিবার স্বস্তির নিশ্বাস ফেলে। দেশে আর কে মরল!! কে বাঁচল!!! তাঁর কোন পরোয়া আমরা করি না। আমি তো করি না। মাঝে মাঝে ভুলে যদি পত্রিকায় নজর পড়েও যায়। নজর সরিয়ে নেই। নিজেকে বুঝাই এরকম হরহামেশাই হচ্ছে। আমি চাইলেও এতে কিছু করতে পারি না। দেশে সরকার আছে। আরো অনেক মান্য গণ্য ব্যক্তি আছে। তাঁরাই যদি না পারেন তো আমি কোন ছাড়। যে ধরনের সংলাপ আমি প্রতিদিন বাসে শুনি। রাজনৈতিক তীব্র নিন্দা, দলগত অবস্থান। আর সেই একঘেয়ে স্বরে অসহায়তার ভান করে দায় এড়িয়ে যাওয়া। আমিও একই কাজ করি নিজের নিরাপত্তা নিশ্চিত হওয়ার পর। যতক্ষণ না পর্যন্ত আমাদের নিজেদের কারো গায়ে পেট্রোল বোমা পড়ছে না। ততদিন আমরা এভাবেই দায় এড়িয়ে যাব। যখন আমার গায়ে বা আমার স্ত্রীর গায়ে বা আমার মায়ের গায়ে কালো কালো পোড়া দগ্ধ ঘা ফুটে উঠবে। তখন আমাদের বুক ঠেলে বের হয়ে আসবে দুঃখের গগনবিদারি চিৎকার আর এক সমুদ্রের হাহাকার। যার মূল্য তখন কেউ দিবে না। যেমন করে আমরা এখন দিচ্ছি না। অজুহাত তো আমাদেরই তৈরি করা। 'আমাদের কীই বা করার আছে!!! '

ছাত্রজীবন থেকেই 'রাজনীতি' নামক জিনিসটার প্রতি আমার বরাবরের উদাসীনতা ছিল। হতে পারে এটা আমার নিজের 'আÍকেন্দ্রিক' বৈশিষ্ট্যের জন্য। কিন্তু আমার আশেপাশের মানুষজনরা যে খুব বেশী আগ্রহী ছিল রাজনীতি নিয়ে তা কিন্তু না। রাজনীতি তাঁদের কাছে তুমুল রকম তর্ক, আড্ডার বস্তু বা প্রবল ঝগড়াঝাঁটির বিষয় হিসেবেই ছিল। এটা থেকে ফলপ্রসূ কখনোই কিছু আমার চোখে পড়েনি যেখানে একজন সাধারণ মানুষ একাÍতা ঘোষণা করবে। মানুষ পত্রিকা পড়ে। কষে মনের সব রাগ দুঃখ মিলিয়ে রাজনীতিবিদদের গালি দেয়। কেউ হয়তো মনে মনে একটু আওয়ামী ঘেঁষা, সে বিএনপি দলের কারো নাম পত্রিকায় পেলে গালি দেয়। কেউ হয়তো আওয়ামীবিরোধী, সে ঐ দলের কাউকে পেলেই হল। গালিগালাজ। সাথে আরো লোকজনের অংশগ্রহণ। বলা যায়, এটা বাংলাদেশি মানুষের একটি ভালো টাইম পাস। কিন্তু আদতেই এদের কারো কোন দলের সাথে বা রাজনীতির সাথে সংশ্লিষ্টতা নেই। তাই স্বাভাবিকভাবেই অনুমেয় যে, যে সরকারেরই আমল আসুক না কেন এই রাজনৈতিক অস্থিরতা কখনোই সাধারণ মানুষ সমর্থন করে না। করতে পারে না। কিন্তু জাতি হিসেবে আমরা বরাবরই নিরীহ এবং ভীত। সাত চড়ে রা করে না এরকম জাতি আমরা। পাকিস্তান যদি ২৫শে মার্চের রাতের সেই ভুলটা না করত, তাহলে ঠিক কবে স্বাধীনতা আসত তা বলা কঠিন।

যা বলছিলাম!! এই 'হরতাল' ও 'অবরোধ' যে সাধারণ মানুষ চায় না এ নিয়ে কারো সন্দেহ নেই। তা যে দলই দিক না কেন। আরো যদি গুছিয়ে বলি। কেউ চায় না কোন নিরীহ মানুষ মারা যাক, কোন সন্তান মৃত্যুযন্ত্রণায় কাতরাক। কেউ না। আমরা নিরাপত্তা চাই। প্রতিদিন মৃত্যুকে সংখ্যা হিসেবে উপস্থাপিত করা হোক, তা চাই না। আমি জানি পাঠকরা কি ভাবছেন!!! ভাবছেন, এসব তো জানা কথাই। বহু লোক বলে। নতুন কি বলছেন!!!

কিচ্ছু না। আসলেই কিচ্ছু না। আমিও আপনাদের মতই সুবিধাবাদী একজন মানুষ। যে শুধু নিজেরটা বুঝি। হঠাৎ হয়তো দুঃখবিলাসের মত করে সুড়সুড়ি দেয় পত্রিকার কোন মর্মান্তিক ছবি। সেরকম কোন সুড়সুড়ি থেকেই লেখা। তবে হ্যাঁ, একবার আমি সবাইকে জেগে উঠতে দেখেছিলাম। খুব অল্প সময়ের জন্য। যখন শাহবাগে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার চেয়ে অনেক মানুষ জড়ো হল। বাড়তেই থাকল। কারণ আমাদের প্রত্যেকের মনের কথা ছিল তা। আমরা একটা সুযোগ খুঁজছিলাম নিজের মত প্রকাশের। সেই সুযোগ আমরা পেয়েছিলাম। আবারো আমাদের সবার মনের কথা এক হয়েছে। আমরা স্বাভাবিক জীবন চাই। আমার মায়ের নিরাপত্তা চাই। তাঁর যেন অন্তত স্বাভাবিক মৃত্যু হয়। এটুকু চাই। যেই বাসে আমি যাই, সেই বাসে যে কোন সময় ককটেল চলে আসবে। এই আতঙ্ক থেকে মুক্তি চাই। আমি তো দুই দলের কাউকে কোন অসুবিধা করিনি। করেনি আমার মত কোটি কোটি মানুষ। যেভাবে বাসে ঝুলে ঝুলে যেতে হয়, জ্যামে বসে থাকতে হয়, সেভাবেই মেনে নিচ্ছি। শেষে কী মৃত্যুকেও মেনে নিতে হবে!!! পুড়ে যাওয়া বাচ্চার মুখ দেখতে হবে বাবা-মাকে!!! বৃদ্ধা মায়ের পেট্রোল বোমায় পোড়া ঘা, যেখানে আদর করেও ব্যথা কমাতে পারছে না মেয়ে!!!


আমি জানি, অনেকে আমার লেখা পড়া বন্ধ করে দিয়েছেন। 'শাহবাগ' শব্দটা শুনে। তাঁদের জন্য বলছি। আমি খুবই সাধারণ একজন মানুষের দৃষ্টিকোণ থেকে ঐ সময়টাকে পর্যবেক্ষণ করেছিলাম। 'গণজাগরণ মঞ্চ' নামক ঐ প্লাটফর্ম নিয়ে অনেকে অনেক কথা বলবে। সরকারের পৃষ্ঠপোষকতা ছিল এও বলবে। আমি বলব সাধারণ মানুষের কথা। যারা দলমত নির্বিশেষে এসেছিল। যখন 'গণজাগরণ মঞ্চ' নিয়ে সন্দেহ দানা বাঁধল। মানুষ সরে গেল। এতে বোঝা যায়, মানুষ ভালো মন্দ, ঠিক বেঠিক বিবেচনা করতে পারে এবং পারবে। আমাদের আবার এরকম একটা জায়গা দরকার। যেখানে আমরা সবাই এক হয়ে বলতে পারব। সত্যিকারের জনগণের কথা। আসল কথা। সত্যি কথা। এই 'জনগণ' রাজনীতিবিদদের বক্তৃতার 'জনগণ' না।

লেখাটা শেষ করতে হবে কিছু প্রশ্ন করে। 'বেড়ালের গলায় কে ঘণ্টা বাঁধবে?' 'কে পারবে এই ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা মানুষগুলোকে এক করতে যাদের মনের কথা এক?' 'কে?'

মন্তব্য ০ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.