নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

জুবায়ের সুহান

সুহান সুহান

দ্বিধান্বিত

সুহান সুহান › বিস্তারিত পোস্টঃ

আত্মার মৃত্যু

১৫ ই মার্চ, ২০১৫ বিকাল ৫:৩৯

ঠিক তিন বছর আগের কথা। তখন সামনে বসে থাকা এই লোকটিরই হাত ধরে খুব কেঁদেছিল আবিদা। তিন বছরে কত কিছু বদলে যায়। এখন আর তাঁর চোখে মোটেও পানি নেই। বরং সে একদমই অন্য একটা বিষয় নিয়ে কথা বলতে আসছে। ফয়সাল। সামনে বসা লোকটির নাম। তিন বছরে অনেক কিছুর পরিবর্তন হলেও মানুষের নাম ঠিকই আছে। আবিদা-ফয়সাল। শুধু প্রেক্ষাপট, পরিস্থিতি বদলে যায়।

আবিদা একজন ইন্টেরিওর ডিজাইনার। ফয়সাল একজন আর্কিটেক্ট। ফয়সাল যে ফার্মে কাজ করে তাঁদের মালিকদের একজন আবিদার কাজ পছন্দ করেছে। তাঁর কাজের যেন কোন অসুবিধা না হয় সে জন্য ফয়সালকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। দুজনেই দুজনকে দেখে অবাক হয়েছে। অবাক ভাবটা হয়তো শুধু আবিদার মুখেই ফুটে ওঠেনি। কিন্তু ফয়সালকে দেখে বোঝা যাচ্ছিল যে সে অবাক হয়েছে। দুজনের কেউই আগের প্রসঙ্গ টানেনি। ঘরে আরো লোক ছিল। তাই সেরকম সুযোগ ছিল না।

ফয়সালের অবাক হওয়াটা ঠিক অস্বাভাবিক নয়। উচ্চাকাঙ্ক্ষা আবিদার কখনো ছিল না। ডিজাইনের কাজ সব সময়ই সে ভালো বুঝত। কিছু কোর্সও করা ছিল। কোর্সের প্রোজেক্ট ওয়ার্কে সে খুবই প্রশংসা পেত। ওই পর্যন্তই। এ নিয়ে স্বপ্ন দেখা যাকে বলে তা তাঁর ছিল না। আবিদার বান্ধবী রত্না ততদিনে ভালো একটা ফার্মে ঢুকে গিয়েছিল। যদিও কাজের দিক দিয়ে সে আবিদার ধারে কাছেও ছিল না। ফয়সাল হাজার বলে কয়েও আবিদাকে সামনে ঠেলতে পারেনি। আবিদা বলত- “ধুর!!! তুমিই তো আছ। আমার এত কিছু করতে ভালো লাগে না। আমি গৃহিণী হতে চাই। একদম বিশুদ্ধ একজন গৃহিণী।” বেশ সুর করে কথাগুলো বলত আবিদা। জীবন কত অদ্ভুত!! সেই দুইজন। কিন্তু সেই সুর নেই। একটানা তাঁরা কিছুক্ষণ কাজের কথা বলল। কাজ শেষের পর বাকিরা রুম থেকে বের হয়ে গেলে রয়ে গেল ফয়সাল আর আবিদা। দুজনেই চুপ। আবিদা নিস্তব্ধতা ভেঙ্গে বলল- “তাহলে আজকে এই পর্যন্তই। এরপরের ডেভেলপমেন্টগুলো হলে আমরা আরেকবার বসব। ওকে??” ফয়সাল কিছু বলতে চাচ্ছিল। কিন্তু কিছু খুঁজে না পেয়ে শুধু মাথা নেড়ে সায় দিল। আবিদা উঠে পড়ল।
ফয়সালের সাথে সম্পর্কটা যখন শেষ হয়ে গেল। তখন যেন পাগল হয়ে গেল আবিদা। ফয়সাল ওঁর ফোন ধরে না। তাঁর এক কথা। আবিদাকে সে বিয়ে করতে পারবে না। তাঁর পরিবার থেকে আবিদাকে মেনে নেয়া হবে না। ফয়সালও পরিবারের অমতে গিয়ে আবিদাকে বিয়ে করতে পারবে না। কিছুতেই না। যেখানে সামনে কোন আশা নেই। সেখানে শুধু শুধু সম্পর্ক রেখে কি লাভ!! যুক্তি তর্ক অনেক কিছুর পরেও যখন আবিদাকে আর বোঝানো যাচ্ছিল না। তখন ফয়সাল আবিদার ফোন ধরা বন্ধ করে দিল। দেখা করাও বন্ধ করে দিল। আবিদা যেন ভিতরে ভিতরে মরে যাচ্ছিল। কি কষ্ট হত তা ঠিক বুঝিয়ে বলা কঠিন। খুব অস্থির বোধ হত। বুকে চাপ চাপ ব্যথা। সারা পৃথিবী এক অর্থহীন ফাঁকা জায়গা। সারা পৃথিবীতে কত মানুষ!!! এই বাংলাদেশেই কত মানুষ!!! তবু শুধু ওই একটা মানুষকে নিয়েই এত কষ্ট হওয়াটা যুক্তির প্রেক্ষাপট থেকে খুবই হাস্যকর। তারপরো খুব কষ্ট হয়। অনেক ফোনের পর, ফয়সাল একবার ফোন ধরল। একবার দেখা করার জন্য কাকুতি মিনতি করল আবিদা। ফয়সাল রাজি হল। কিন্তু এই ফয়সাল আবিদার ফয়সাল না। এ অন্য কেউ। একে আবিদা চেনে না। দেখতে ফয়সালের মতই। কিন্তু ফয়সাল না। বুকের ব্যথাটা প্রচন্ড। সবকিছু ভুলে আবিদা ফয়সালের হাত চেপে ধরল। এটাই মোক্ষম অস্ত্র। হাজার রাগের পরেও ঠিক মুহূর্তে হাত ধরলে ফয়সালের রাগ পড়ে যায়। কিন্তু আজ যে অন্যদিন। সাত বছরের সম্পর্কের সুর যে তারে বাঁধা ছিল। এটা সেই তার নয়। এটা সাতটা সুরের কোথাও এই সুর নেই। কখনো ছিল না। তাও কাঁদল আবিদা। আবিদার চোখের পানি ফয়সালের হাতে পড়ল। হাতে কোন আলোড়ন টের পেল না আবিদা। সেই দিন আর এই দিন। কত তফাৎ।

অফিস থেকে বের হয়ে আবিদার বুকটা হঠাৎ কেঁপে উঠল। তাঁর খুব ইচ্ছা করল দৌড়ে ফয়সালের কাছে যেতে। আগের মত করে খুব গল্প করতে। ফয়সাল তো শুধু তাঁর প্রেমিক ছিল না। কত ভালো বন্ধু ছিল। তখনি মনে পড়ল এই ফয়সাল সেই ফয়সাল না। সে সেই মানুষ না। হয়তো কখনোই সেই মানুষ ছিল না, যেরকম আবিদা তাঁকে ভাবত। তাহলে আত্মার একটা অংশ যে এই মানুষটাকে সে দিয়েছিল। সে কে ছিল? একটা মরিচীকার পিছনে ঘুরে বেরিয়েছে আবিদা? সারা পৃথিবীর মানুষ জানবে আবিদা এখন সফল। আবিদার আশেপাশের মানুষেরা জানবে আবিদা আগের মত আর দুর্বল নেই। এখন সে আর রাতে কাঁদে না। অস্থির হয়ে ঘরে, বারান্দায় পায়চারি করে না। কিন্তু কেউ জানবে না আবিদার মৃত্যুর কথা। আত্মার মৃত্যু। এই মৃত অংশকেই বয়ে বেড়াতে হয় আবিদাকে। তাঁর ভার নেয়ার কষ্ট কেউ দেখতে পায় না।



মন্তব্য ২ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ২৩ শে এপ্রিল, ২০১৫ রাত ১:২১

তানি তানিশা বলেছেন: এটার কি কোন সত্যতা আছে?

১৪ ই মে, ২০১৫ বিকাল ৫:১৯

সুহান সুহান বলেছেন: এটা বলতে কি বোঝাচ্ছেন?

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.