নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

জুবায়ের সুহান

সুহান সুহান

দ্বিধান্বিত

সুহান সুহান › বিস্তারিত পোস্টঃ

গর্ব এবং লজ্জা

২২ শে অক্টোবর, ২০১৫ দুপুর ২:১২

আমরা যত ছোট থাকি আমাদের স্বপ্ন দেখার প্রবণতা বেশী থাকে। স্বপ্ন দেখার সাহসও অনেক বেশী থাকে। যে স্বপ্ন আমাদের মধ্যে অন্য কেউ বুনে দেয় না। আমরা নিজেরাই নানা রঙের সুতা, রঙ, ফিতা দিয়ে গড়ে তুলি। কিন্তু কতজন আমরা পারি সেই স্বপ্নের পিছনে চলতে!! সমাজ সংসার সবাই যেন আমাদের স্বপ্ন কবে ধূলিসাৎ হবে এই আশায় দিন গোনে। আমরাও চারপাশে ভয়ে ভয়ে তাকিয়ে স্বপ্নটার দিকে ভীত পদক্ষেপে আগাই। যেই একটা ছোট কিংবা বড় হোঁচট খেলাম, সঙ্গে সঙ্গে বাদ্য বাজনা নিয়ে সবার আগে যারা আসবে, তাঁরা আর কেউ নয় আমাদের পরিবার। আমাদের মা, বাবা, ভাই, বোন, মামা, চাচা, খালা। অতঃপর, পাড়া-পড়শি এবং আরো অনেকে।

আমাদের বয়স বাড়ে। আশেপাশের মানুষ আমাদের স্বার্থপর হতে শেখায়। আমরাও হই। কতবার রাস্তায় যেতে যেতে রাস্তায় থাকা মানুষদের দেখে আমাদের মনে হয়, আমাদের কিছু করা উচিৎ!!! শুধুমাত্র লটারীর মত অট্টালিকায় জন্মগ্রহণের পুরষ্কার জিতে এ জীবন যাপন করা কি অবমাননাকর না!!! আমার মনে হয় প্রায় প্রতিটা মানুষ একবার না একবার আমরা ভাবি যে আমাদের কিছু করা উচিৎ। কিন্তু আমরা তো সবাই হোঁচট খাওয়া মানুষ। এই চিন্তা মাথায় আসলেই আমাদের মনে হয়- কিই বা করার আছে আমাদের!!! কিই বা করতে পারি আমরা!!! কিন্তু একবারো কি আমরা ভেবে দেখি যে আসলেই কি আমরা এতটা অসহায়!! আসলেই কি!!!

পত্রিকা জিনিসটা দারুণ!!! হাজার হাজার খারাপ খবরের মধ্যে থেকে একটা দুইটা লুকিয়ে থাকা ভালো খবর খুঁজে বের করতে হয়। আবার একই সাথে অনেক বড় লজ্জা পেতে হয়। আজকে আমি একই সাথে গর্বিত এবং লজ্জিত। আমি গর্বিত কুড়িগ্রামের ছেলে কুমার বিশ্বজিত বর্মণকে নিয়ে। যে তাঁর এলাকায় ৭০০ বাল্যবিবাহ রোধ করেছে। ছেলে-মেয়েরা যেন মাদকাসক্ত না হয় সে জন্য, তাঁদের জন্য বিনামূল্যে শিক্ষা এবং খাবারের ব্যবস্থা করেছে। কিভাবে?? টিউশনি করে। সে মাত্র এইচএসসি পাস করেছে। ওঁর চেয়ে বেশী কি আমরা কেউ অর্থ উপার্জন করি না!!! করি। অনেক বেশীই করি। কিন্তু আমরা আমাদের দেশকে, সমাজকে কারণ দেখিয়ে হাত গুটিয়ে বসে থাকতেও পছন্দ করি। থাকবও। এবং বলব- বাংলাদেশের কিছু হবে না। হাজারটা ঘটনা বলে প্রমাণ করে দিব যে এ দেশ অরাজকতার দেশ।

আরেকটা ঘটনা বলি। চারজন মিলে একটি এনজিও খুলল। একজনের পড়াশোনা শেষ। বাকি তিনজন এখনো ছাত্র-ছাত্রী। তাঁরা পথশিশুদের জন্য একটা থাকার জায়গা করল। খাওয়ার ব্যবস্থা করল। ১২ জন শিশুদের নিয়ে তাঁরা কাজ শুরু করল। অনেক যত্ন নিয়ে, আদর করে, বকা দিয়ে তাঁরা বাচ্চাগুলোকে বড় করতে চাইল। সেই চারজনের বিরুদ্ধে আইনি মামলা করা হল- এরা মানব পাচারের সাথে যুক্ত। দোষ প্রমাণ ছাড়াই তাঁদেরকে পুলিশ ধরে নিয়ে গেল। ৩৮ দিন জেল খাটল। ৩৮ দিন জেল খাটার পর, ওই ১২ শিশুর জবানবন্দিতে এই ৪ জন ছাড়া পেল। কি লজ্জা!!! কি লজ্জা!!! যেখানে কোন কিছুর বিনিময় ছাড়া নিজের প্রায় সবটুকু দিচ্ছে এরা। সেখানে এতটুকু সাহায্য আমরা করতে পারলাম না। আসামী করেই ছাড়লাম!!!

পত্রিকায় এই ৪ জনের একজনের কান্না ভেজা ছবি ছাপা হল। আমি জানি বহু মানুষের আমার মত করেই বুকটা মোচড় দিয়ে উঠেছিল। সারা সমাজ যেটাকে ‘ঘরের খেয়ে বনের মোষ’ তাড়ানো বলবে। হয়তো বলেছেও। কত মানুষ হয়তো বলেছে, “কি দরকার এই রাস্তার ছেলেগুলাদের নিয়ে কাজ করার!!! এরা খুব বজ্জাত হয়। পালবা, বড় করবা। আবার ঠিকই কাজ শিখলে ড্যাং ড্যাং করে চলে যাবে। তোমার দিকে ফিরেও তাকাবে না।‘ কত রকম সমস্যার মধ্যে দিয়ে না গিয়েছে ওঁরা। বিনিময়ে আমরা ওঁদেরকে উপহার দিলাম ৩৮ দিনের জেল বাস। যেখানে আমরা কেউ জেলে গেলেই তাঁকে অপরাধী ধরে নেই। সে অপরাধী হোক বা না হোক!! আমাদের তাকানো বদলে যায়। নিশ্চয়ই কিছু না কিছু করেছে ও। নইলে অকারণ জেলে ধরে নিয়ে যাবে কেন!!! ভালো মানুষ কখনো জেলে যায়!!! এই অস্বস্তিভরা পরিবেশও আমরা তাঁদেরকে উপহার দিলাম।

শেষ করি গর্ব দিয়ে। একটু আগের যে ঘটনা আমি বললাম। এই ঘটনা আমার আপনার সাথে ঘটলে আমরা কি করতাম!!! কিছুদিন দুঃখ কষ্ট এবং হতাশায় জর্জরিত হয়ে যেতাম। এবং পরে সমাজের বাকিদের দলে গিয়ে যোগ দিতাম দেশের বদনাম করার জন্য। কারণ তখন তো আমাদের অধিকার থাকত দেশকে গালিগালাজ করার। তাই না??

একটু আগে যে ৪ জনের এনজিওর কথা বলছিলাম। তাঁর নাম অদম্য বাংলাদেশ। জেল থেকে ছাড়া পেয়ে এই ৪ জন পুরো সমাজ ব্যবস্থাকে বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়ে বলেছে- তাঁরা থেমে যাবে না। তাঁরা তাঁদের কার্যক্রম চালিয়ে যাবে। ৩৮ দিন জেলবাসের পরও যদি বাংলাদেশের মত দেশে এরা এই কথা বলতে পারে। তাহলে অনধিকার বশেও, আমি ওঁদের নিয়ে গর্ববোধ করি।এইটুকু অধিকার না হয় আমি জোর করে কেড়ে নিলাম।

ওঁদের একটা স্কুল আছে। শাখা- সদরঘাটে, কমলাপুরে, আগারগাওয়ে। স্কুলের নাম- মজার স্কুল। শিক্ষা যে জোর করে খাওয়ানোর জিনিস নয়। তা আমি বাসায় বসে বসে খুব অনুভব করতাম। কিন্তু ওঁরা এই মজার স্কুল খুলে আমাকেও বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়ে দিল। তাতে আমি লজ্জিত নই। কারণ আমার মত মানুষেরা বাসায় শুয়ে বসে কল্পনাতেই রাজা উজির মেরে ফেলবে। আসল কাজ যারা করে, তাঁদেরকে হাজার চেষ্টা করেও ঠেকানো যায় না। জেলে দিয়েও না।

মন্তব্য ১ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (১) মন্তব্য লিখুন

১| ০৫ ই মে, ২০১৭ বিকাল ৩:৫৪

রুমি৯৯ বলেছেন: ভালো লাগলো

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.