নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

জুবায়ের সুহান

সুহান সুহান

দ্বিধান্বিত

সুহান সুহান › বিস্তারিত পোস্টঃ

ভূমিকা বদল!!!!

০৮ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ সন্ধ্যা ৬:১৯

১.

রাত দুটা। কল্পনা আজকে ওঁর বাবার সাথে কথা বলবে। ওঁর বাবার আসতে আসতে দেরী হয়। উনি অফিস করে ক্লাবে যান। ক্লাব থেকে ফিরতে ফিরতে রাত দুটার মত বেজে যায়। মেয়ে তখনও বাবার জন্য জেগে থাকে। বাবা আসলে একসাথে খায়। কল্পনার মা অনেকদিন ধরে অসুস্থ। তিনি অত রাত জাগতে পারেন না। মোটামুটি গোছগাছ করে দিয়ে ঘুমুতে চলে যান। রাত জাগতে ডাক্তারের বারণ আছে। এসব কথাই রুবেলের জানা। তারপরো তাঁর খুব টেনশন হচ্ছে। আজকে কল্পনা তাঁর কথা বাবাকে বলবে। বাবা কি বলবে!!! রুবেলের খুব অস্বস্তি হচ্ছে। ছটফট লাগছে। সুস্থির হয়ে বসতে, দাঁড়াতে, শুতে- কিছুই করতে পারছে না। মোবাইল ফোনটার দিকে বারবার চোখ চলে যাচ্ছে। একবার ভাইব্রেট করে উঠল ফোনটা। লাফিয়ে উঠল রুবেল। ধুর ইকবালের ফোন!!! কেটে দিল সে। মেজাজ চরম খারাপ হচ্ছে ইকবালের উপর। ও আরো বেশ কয়েকবার ফোন করবে। একজন মানুষ ফোন কেটে দিলে যে বুঝতে হয় যে সে এখন যে কোন কারনেই ফোন ধরার মত পরিস্থিতিতে নেই এটা ইকবাল বুঝবে না। করতেই থাকবে ফোন। আবার ভাইব্রেট হল ফোন। ইকবাল। মনটা চাচ্ছে ফোনটা ছুঁড়ে ফেলে দিতে। তা করা যাবে না। কল্পনা যে কোন সময় ফোন দিতে পারে। কিন্তু কল্পনার ফোন আসল না। ভোরের দিকে রুবেল ফোন দিল। ফোন সুইচড অফ। চরম শত্রুও কি এই কাজ করে!!! এই সময়ে রুবেলের মত অসহায় হয়তো কেউ নেই। ভিতরটা যেন কুঁকড়ে মুকড়ে যাচ্ছে। কষ্ট, অশান্তি, অনিশ্চয়তা- সব একসাথে হয়ে অবর্ণনীয় এক অনুভূতি। কি করবে এখন রুবেল!!!

টকটকে লাল চোখ নিয়ে সকাল হওয়া দেখল রুবেল। ভোরের স্নিগ্ধতা তাঁকে এক ফোটা শান্তি দিতে পারল না। এভাবেই সে অফিস করল। রুবেলের নতুন চাকরি। যেতেই হবে। ফোনটার দিকে সকল ইন্দ্রিয় একীভূত। না ফোন আসে না। ফোন সুইচড অফ। কত এসএমএস। কত ফেসবুক মেসেজ। কিচ্ছুর উত্তর নেই। অফিস থেকে বের হয়ে সে কল্পনার বাসার ওদিকে চলে গেল। না!! বাসায় যাওয়ার মত সাহস রুবেলের নেই। কিন্তু মনে যেন একটু শান্তি লাগে। নতুন চাকরি পেয়েই রুবেল কল্পনা বিয়ের সিদ্ধান্ত নেয়। এতদিন অনেক সাধ্য সাধনা করে কল্পনা সবাইকে আটকে রেখেছিল। রুবেলের চাকরি পাওয়াতে যেন হাঁফ ছেড়ে বাঁচল। কিন্তু এখন কেন যোগাযোগ করছে না ও!! কি হল বাসায়!! ওঁর বাবা রাজি না!! সেটাও তো জানানো যায়!!! এভাবে শাস্তি দেয়ার মানে কি!!

দুদিন পর ঠিক রাত তিনটায় কল্পনা ফোন করল। কাঁপা কাঁপা গলায় কল্পনা বলল-
- আমি পারলাম না রুবেল।

এতদিন পর কল্পনার গলা শুনে যেন এক পরম আত্মীয়ের গলার স্বর শুনল। কিন্তু একই সাথে আর্দ্র সেই কণ্ঠ যেখানে অনেকক্ষণ কান্নাকাটির ছাপ স্পষ্ট তাও টের পেল রুবেল। কিছু একটা ছিল কল্পনার কণ্ঠে। প্রণয়ের সময় মান-অভিমান তো কম হয়নি। কান্নাকাটিও কম হয়নি। ফোনে কল্পনার আর্দ্র কণ্ঠও এই প্রথম শোনেনি সে। কিন্তু কি যেন একটা ছিল। বিদায়ের সুর!! সেই সুরে রুবেলের ভিতরটা একদম ফাঁকা হয়ে যায়। এই চব্বিশ পঁচিশ বছরের জীবনের সকল প্রাপ্তি, সুখানুভূতি, আনন্দ সব যেন কিভাবে ভিতর থেকে জাদুর মত হাপিশ হয়ে গেল। মানুষ খুব অদ্ভুত প্রাণী। অল্প সময়েই বাঁধন খুব মজবুত করে ফেলে। তা ছিঁড়তেও বেশ কষ্ট হয়। কল্পনা রুবেলকে প্রত্যাখ্যান করল।

প্রথম প্রথম অমানুষিক কষ্টে দিন গেল রুবেলের। আত্মহত্যার চিন্তা আসল। হাস্যকর অভিমানী আরো নানা চিন্তা খেলা করে গেল কষ্টের সময়ে। আস্তে আস্তে সেই কষ্টটা রূপ নিল রাগে, ঘৃণায়। সেই রাগ ঘৃণা কল্পনার প্রতি, ওঁর বাবার প্রতি, ওঁর অসুস্থ মায়ের প্রতিও। এমনকি পৃথিবীর সকল সুখে থাকা মানুষের প্রতি। যারা হয়ত সুখে আছে, নয়তো সুখে থাকার ভান করছে। কতবার যে কত অশ্রাব্য গালি আর কটু কথা সে কল্পনাকে ফোন করে দিল। তাঁর ইয়ত্তা নেই। এত অশ্রাব্য গালি রুবেল জানত বলে রুবেলেরও ধারণা ছিল না। কিন্তু কল্পনা কোন উত্তর দেয় না। শুনে রেখে দেয়। এতে যেন রাগ আরও বেড়ে যায়। শান্তি হয় না ভিতরটায়। অপমানটা ভুলতে পারে না রুবেল। ভুলে ঘুম চলে আসলেও ঘুমের মধ্যেও স্বয়ংক্রিয়ভাবে হাত মুঠ হয়ে যায়। রাগে, যন্ত্রণায়, ঘৃণায়। কল্পনার বাবা নিজেকে কি মনে করে!! একবার সে তাঁর সাথে কথাও বলল না। সেই যোগ্যও মনে করল না তাঁকে। কল্পনাও মেনে নিল!!! কিভাবে পারল!! চোখে আঙ্গুল দিয়ে ওরা সবাই রুবেলকে বুঝিয়ে দিল রুবেল কতটা ছোট। কতটা নিকৃষ্ট। কতটা তুচ্ছ। এসব ভেবে ভেবে অপমানে নীল হয়ে যায়। গা কেমন শিরশির করে ওঠে। নিজেকে কি অসহায় লাগে রুবেলের।

কিন্তু সেটা ছিল কষ্টের শুরু। আরো বাকি ছিল। কল্পনার বিয়ে। ছেলে বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত আমেরিকান ব্যবসায়ী। ছুরি বুকের ভিতর সরাসরি ঢুকিয়ে দেয়া বোধহয় একেই বলে। পিছন থেকে না। একেবারে সামনে থেকে বুকের যেখানে মারলে তাজা রক্ত বের হয়। ঠিক সেখানে। বের হতেই থাকে। বের হতেই থাকে। এতদিন যা ভেবে ভেবে কষ্টের বিলাসীতা করত রুবেল। তা পুরো পৃথিবী দেখিয়ে দিল যে সত্যি। রুবেল ছোট। নিকৃষ্ট। তুচ্ছ।

আরো কষ্টের সাগরে ডুবে না গিয়ে রুবেল তাঁর কষ্টের সাগরকে বরফে পরিণত করে দিল। বিশাল সাগর কিন্তু তা বরফের। তাঁর উপর দিয়েই হাঁটতে থাকল রুবেল। তাঁকে প্রেরণা যোগাল কল্পনা আর কল্পনার বাবা। যাকে বলে কিনা “নেগেটিভ মোটিভেশন”। যখনই ক্লান্ত লাগত। এদের কথা ভাবত। সব ক্লান্তি দূর হয়ে যেত। এক ধাক্কায় জীবনের স্বরূপ বুঝে গেল রুবেল। যে প্রেম ভালোবাসার মধ্যে সে পবিত্রতা খুঁজে পেত এক সময়। সেখানে এখন সে শুধু আবর্জনা খুঁজে পায়। অর্থ আর শরীর। এই প্রেম, এই ভালোবাসা।



২.
মানুষ চাইলে সব হয়। মানুষ ঠিকঠাক চাইতে পারে না। হয়তো একদম হুবহু মেলে না। কিন্তু কিছু না কিছু হয়ই। এই যে এখন রুবেল নামকরা মাল্টি-ন্যাশনাল কোম্পানীর ম্যানেজিং ডিরেক্টর। স্ত্রী-সন্তান নিয়ে ভালো আছে। প্রথম সন্তান ছেলে। নাম রাখল আবির। দ্বিতীয় সন্তান মেয়ে। নাম অদ্বিতীয়া। রুবেলের স্ত্রী ইয়াসমিন।
আজকের রুবেল আর সেই অনেক বছর আগের রুবেলে বহু তফাৎ। সেই অপমানের তিক্ততাটা সে খুব সযতনে লুকিয়ে রেখেছে। ক্ষত জায়গাটা আছে। কিন্তু এটাই তাঁকে আজকে এই অবস্থানে এনেছে। একটা সময় খুব কষ্ট করেছে রুবেল। বাবা মা জোর করে বিয়ে দিয়েছিল। উন্নতি করার জেদে ইয়াসমিনকে ঠিকঠাকমত মূল্যায়ন করতে পারেনি সে। কিন্তু ইয়াসমিন তাঁর সাথে তাঁর ছায়া হয়ে ছিল। তাঁর জন্য সে আজীবন ইয়াসমিনের কাছে কৃতজ্ঞ। আরো কৃতজ্ঞ ইয়াসমিনের কাছে আবির আর অদ্বিতীয়ার জন্য। এখন আর সে একা না। এখন তাঁরও বিশাল দুনিয়া। এখন সেও ক্লাবে যায়। তবে রাত করে না। আর রাত করলেও মেয়ে তাঁর জন্য অপেক্ষা করে। একসাথে খায়। খাওয়ার এই সময়টা রুবেলের খুব প্রিয়। ইয়াসমিন তো সামনে থাকেই। কিন্তু মেয়েটা এটা ওটা এগিয়ে দেয়। রুবেল খুব তৃপ্তি পায়। তাও মুখে বলে- “থাক মা!!! তুমি বস। আমি নিচ্ছি।“ ইয়াসমিন সব বুঝে মুচকি মুচকি হাসে।
মাঝে মাঝে রুবেলের খুব ইচ্ছা হয় কল্পনার বাবার সাথে দেখা করতে। খুব!!! তাঁকে সূক্ষ্ম অপমান করতে। সে কল্পনার বাবার মত না। স্থুল অপমান সে করবে না। এমন অপমান যেটা উনি জীবনে ভুলতে পারবে না। এসব ভেবেই আনন্দ হয় রুবেলের। সফল মানুষেরা আগের কথা জাবর কাটে।

সন্তানদের মধ্যে তুলনা চলে না। কোন বাবা-মাই তা করতে পারে না। কিন্তু রুবেল বুঝতে পারে মেয়ের প্রতি তাঁর বেশী দুর্বলতা। ছেলেটার পড়াশোনা প্রায় শেষ। মেয়েটা অনার্স ফার্স্ট ইয়ার। ইংরেজিতে পড়ছে। ভালো সাবজেক্ট। মেয়েটা ইয়াসমিনের গায়ের রঙ পেয়েছে। চেহারা রুবেলের। খুব মায়া লাগে দেখতে।

সেদিন অফিস থেকে একটু তাড়াতাড়ি আসল রুবেল। “মামনি কই!!!” ডাক দিয়ে বাসায় ঢোকে রুবেল। ডাক দিতে যাবে। এমন সময় দেখে ড্রইং রুমে একটা ছেলে বসে আছে। তাঁর ভ্রু কুঁচকে যায়। মেয়েটা বড় হওয়ার পর থেকে বাসায় উটকো মানুষজন আসা রুবেলের একেবারেই পছন্দ না। ছেলেগুলোয় সারাক্ষন ছোঁকছোঁক করতে থাকে। সবগুলাকে চাবকাতে পারলে মনটা শান্ত হয়। এসব ভাবলেই হাতটা মুঠ হয়ে যায় রুবেলের। মেয়ে তাঁর দুনিয়ার সবচেয়ে প্রিয়। এখানে কোন সমঝোতা নেই। সে জুতাটা খুলে ভেতরে ঢুকে যেতে থাকে। ছেলেটা তাঁকে দেখে দাঁড়ালো। সালাম দিল। তিনি মাথা হেলিয়ে উত্তর দিয়ে ভেতরে চলে গেলেন।

ইয়াসমিন কি কাজ করছিল। তিনি তাঁকে জিজ্ঞেস করলেন, “ড্রইং রুমে কে?” ইয়াসমিন বলল- “অদির বন্ধু”। ভ্রু আরো কুঁচকে গেল। মেয়ের জীবনে অন্য পুরুষ তাঁর একদমই পছন্দ না। তাও আবার এই বয়সে। সবগুলা ছেলে ছোকরা প্রেম করার জন্য অস্থির হয়ে আছে। খালি নষ্টামি করার ধান্ধা। হাত মুঠ হয়ে গেল রুবেলের।

ধাক্কাটা আসল অন্য দিক থেকে। অপ্রত্যাশিতভাবে। যেন স্রষ্টা বলে কেউ আছেন এবং তাঁর রসবোধ প্রখর তাই প্রমাণের চেষ্টা। এক সপ্তাহ পরের কথা। অফিস থেকে ফিরতে ফিরতে রাত হয়ে গেল। ইয়াসমিনের শরীরটা খারাপ। সে ঘুমিয়ে আছে। ছেলেটা অফিসে জয়েন করেছে নতুন। আগে আগে খেয়ে সেও শুয়ে পড়েছে। অফিস করে ক্লান্ত থাকে। শুধু মেয়েটা তাঁর জন্য অপেক্ষা করছে। রুবেল জলদি হাত মুখ ধুয়ে খেতে বসল। সারাদিন অফিসিয়াল লোকদের সাথে আলাপ করতে করতে ভিতরটা কেমন মরুভূমি হয়ে থাকে। একমাত্র এই খাওয়ার সময়টাই তাঁর কাছে আনন্দধারার মত। মেয়ের সামনে প্লেট নেই।
- মা!! তোমার প্লেট কই?
- খিদে নেই বাবা। তুমি খাও।
- খিদে আবার থাকে না কিভাবে!!!
- বাবা!!! জেদ কোরো না তো এখন!!
কিন্তু রুবেলের চেহারা স্বাভাবিক হয় না। অগত্যা অদ্বিতীয়া কে প্লেট নিয়ে বসতে হল। খাওয়ার পর টিভি রুমে এসে বসল রুবেল। রাতে খাওয়ার পর নিউজ চ্যানেল গুলো একবার ঘুরে দেখা তাঁর অভ্যাস।

মেয়েটা আজকে কেমন ছটফট করছে। দুই তিনবার টিভি রুমের পাশ দিয়ে অস্থির হয়ে পায়চারি করল। ঘটনা কি!! কিছুক্ষণ পরে মেয়ে টিভি রুমে ঢুকল।
-বাবা!! তোমার সাথে একটু কথা ছিল।
-কি কথা!!! বসে বল।
মেয়ে ইতস্তত করে তাঁর কথা বলে গেল। রুবেলের চেহারার জ্যোতি এক নিমিষে নিভে গেল। অন্ধকার। তিনি পাথর হয়ে বসে রইলেন। মেয়ে অসহায় কাঁদ কাঁদ কণ্ঠে বলল-
- বাবা!!! কিছু তো বল।
রুবেলের ভেতরে কোন আলোড়ন হল না। মেয়ে কাঁদছে। তাঁর মেয়ে। দুনিয়া একদিকে। এই মেয়ে একদিকে।
তিনি বললেন-
- ঘুমুতে যাও। অনেক রাত।
বলে তিনি নিজেই রুমে চলে গেলেন। টিভি রুমে টিভিটা খোলা ছিল। কারো কান্না কি টিভির আওয়াজে ঢাকা পড়ে যাচ্ছে!!! তিনি শুনতে চান না কোন কান্না।

কিছুতেই ঘুম আসছে না। ইয়াসমিনকে ডেকে বকা দিতে ইচ্ছা করছে। মেয়ের দিকে কি কোন নজর দেয় না সে!! কোথায় যায়!! কি করে!!! কাদের সাথে মেশে!!! তাঁর মেয়ে হয়ে কোথাকার কোন লাফাঙ্গার সাথে প্রেম!!! ভিতরটা চিড়বিড় করে ওঠে তাঁর। কিসের প্রেম!!! প্রেম বলে কিছু নেই। যদি থাকত তাহলে ইয়াসমিন না। অন্য কেউ তাঁর পাশে থাকত। প্রেম সবভাবে পরিত্যাজ্য। সময় হলে মেয়ের বিয়ে তিনি নিজে দেবেন। তবু এই প্রেম তিনি মেনে নেবেন না। এসব ভেবেও রাগ কমে না তাঁর। মেয়ে আরেকজনকে ভালোবাসে!! ভিতরটায় কেমন কষ্ট হয়। অব্যক্ত কষ্ট। আবার চরাৎ করে রাগটা চাগিয়ে ওঠে। সব ওই ছেলের দোষ। ওঁর এত সাহস। এত সাহস!!! দাঁত কিড়মিড় করে ওঠে রুবেলের। আবার একই সাথে দুঃখে ফিরে আসে রুবেল। মেয়েটা একবার তাঁকে আগে থেকে জানাল না!! মেয়ের জীবনে তাহলে রুবেলের জায়গা কোথায়!! সে তো ভাবত। তাঁর দুনিয়ায় যেমন শুধু মেয়ে। মেয়ের দুনিয়াতেও সে তাই। মেয়ে তাঁকে ঠকিয়েছে। হ্যাঁ, ঠকিয়েছে। লুকিয়েছে। ঠকিয়েছে। হ্যাঁ। হ্যাঁ। হ্যাঁ।

পরের দিনগুলো অন্ধকার। বাসায় কোন হাসি নেই। কোন আওয়াজ নেই। রুবেল ভাত খান না। কারো সাথে কথা বলেন না। মেয়ের সাথেও না। পুরো দুনিয়াটা তাঁর কাছে সাদা কালো লাগে। ইয়াসমিনের শরীরটা খারাপ। সে এসবকিছু জানেন না। মেয়ে রুবেলের কাছে আসল। পরাজিত হয়ে। ক্রন্দনরত অবস্থায় বলল-
- এমন কোর না বাবা। তুমি যা বলবে তাই হবে। তাও তুমি এমন কোর না। আমার সাথে একটু কথা বল। আমার ভুল হয়েছে বাবা। আমার ভুল হয়েছে। তুমি ঠিকমত খাও না বাবা। আমি কি করি!!! বল বাবা!! তুমি যা বলবে তাই হবে।

মেয়ের হেঁচকি উঠছে কাঁদতে কাঁদতে। চুল খামচে ধরছে একটু পর পর। রুবেল পাথর। ঠকিয়েছে আমাকে। এই ভাবছে। প্রবল ভালোবাসা আমাদের যেমন নম্র করে। ঠিক তেমনি কঠিনও করে।

রুবেল খেলেন। ভাত খেলেন। মেয়েকে সামনে নিয়ে। কিন্তু মুখ অন্ধকার।

এভাবে সপ্তাহ গেল। অনেক বোঝাপড়ার পর রুবেল নিজেকে কিছুটা স্বাভাবিক করলেন। তবে তা মোটেও মেয়ের মতকে মেনে নেওয়া না। মেয়েও কিছুটা স্বাভাবিক। এই বিষয় নিয়ে তাঁদের মধ্যে আর কোন আলোচনা হয় না। যেন এরকম কিছু ঘটেনি তাঁদের জীবনে।

এক রাতে ঘুম থেকে উঠে একটু পায়চারি করছিলেন। বাইরের বারান্দায় কিসের যেন শব্দ। ফিসফিস। আস্তে করে গিয়ে দেখেন ফোন হাতে মেয়ে। আর্দ্র গলা। খুব আস্তে হলেও রুবেল শুনতে পেলেন-
- আমি পারলাম না তানভীর।

‘আমি পারলাম না’ ‘আমি পারলাম না’ কোথায় শুনেছেন এই সংলাপ!! কোথায়!!! পুরো বিশ্ব যেন একটা মিডিয়া প্লেয়ার হয়ে গেল। ফ্ল্যাশ ব্যাক। ‘আমি পারলাম না’। কে বলেছিল!!! যেন অন্য কোন গ্রহের সংলাপ!!! ‘আমি পারলাম না’। কল্পনা। শত বছর আগের সংলাপ এইভাবে তাঁর জীবনে ফিরে এল!!! সাথে নিয়ে এল রাগ, ঘৃণা, কষ্ট সব অনুভূতি। সব। নিজের পা-টা যেন কেঁপে উঠল। আবার যেন যুবক বয়সে ফিরে গেলেন। তবে কি তিনিও ......। আয়নায় এভাবে নিজেকে দেখবেন তা যেন কখনো ভাবেননি রুবেল।

পরের দিনটা অফিসে কাজে মন দিতে পারলেন না। বাসায় যাওয়ার জন্য অস্থির বোধ করলেন। নিজের সাথে নিজের কি কি কথা হল। পিতা রুবেল আর প্রেমিক রুবেলের অনুভূতির দ্বন্দ্বে তিনি দিশাহারা বোধ করলেন। কি অপমান করেছিলেন কল্পনার বাবা। তিনিও কি তাই করছেন না!! ছেলে অবস্থাপন্ন না। তাঁর এত আদরের মেয়েকে কিভাবে রাখবে ওই বদমাইশ। মুহূর্তেই ভিতরের পিতা রুবেল গর্জে ওঠে। অনেক লড়াইয়ের পর তিনি শান্ত হলেন। কফি খেলেন।

মেয়েকে ফোন দিলেন-
- ছেলেকে বল আমার সাথে দেখা করতে।

মন্তব্য ৬ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৬) মন্তব্য লিখুন

১| ০৮ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ রাত ১১:৫৮

আরণ্যক রাখাল বলেছেন: হে হে।
সবাই এক।
তবে গল্পের শেষটা ভাল লাগলো। এমন যদি হতো!
গল্পের নামটা সার্থক- গল্পের সাথে খাপে খাপ মিলে যায়!

০৯ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ দুপুর ১২:১৪

সুহান সুহান বলেছেন: ধৈর্য সহকারে পড়ার জন্য ধন্যবাদ।

২| ১০ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ রাত ১১:৩১

নাসরিন সুলতানা লোপা বলেছেন: "অদ্ভুত প্রেমের গল্প"টা কি অসম্পূর্ণই থাকবে? ওটা আবার লিখা শুরু করবেন আশা করি। এই গল্পটাও সুন্দর ছিলো।

১১ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ রাত ১২:০৮

সুহান সুহান বলেছেন: প্রথম প্রশ্নটার উত্তর দিতে পারছি না। কারণ উত্তর জানা নেই। শেষের বাক্যের জন্য ধন্যবাদ। :)

৩| ১২ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ রাত ২:০০

অনিকেত পাল বলেছেন: অদ্ভুত প্রেমের গল্প পর্ব ৪২ এর অপেক্ষায় রইলাম। এটির শেষ খুব ভালো লাগলো। (কাউকে কস্ট দিতে চাইনা তবে আমার হবু শ্বশুর এর জীবনে এরকম কোন ঘটনা থাকলে আমি তো বেঁচে যাব :P :P :P B-)) B-)) )

১২ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ দুপুর ১২:০৩

সুহান সুহান বলেছেন: (সে নিশ্চয়তাও কি পুরোপুরি পাওয়া যায়!!! :P)

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.