নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

জুবায়ের সুহান

সুহান সুহান

দ্বিধান্বিত

সুহান সুহান › বিস্তারিত পোস্টঃ

জীবন অফিস বাসা-৫

১৩ ই মে, ২০১৭ রাত ১০:১৪


নতুন খবর আছে নাইমা এবং শফিকের। নতুন অতিথি আসার খবর। অবাক করা খবর নয়। তাঁদের পরিকল্পনা মোতাবেকই সব হয়েছে। কিন্তু তারপরো এর একটা রোমাঞ্চ দুজনেই টের পাচ্ছে। যেদিন সকালে নাইমা শফিককে ঘুম থেকে উঠিয়ে জানালো খবর। শফিক বোকা বোকাভাবে তাকিয়ে রইল। ঘুমের ঘোরে অনেকক্ষণ বুঝতে পারলো না। তারপর যখন বুঝতে পারল তখন ঠিক কেমন অনুভূতি হওয়া উচিৎ সেটাও বুঝতে পারল না। যদিও এমনিতে তাঁরা দুজনই আলোচনা করে ঠিক করেছে সন্তান নেয়ার। কিন্তু এই মুহূর্তে শফিক নিজের অনুভূতি ধরতে পারছে না। তাঁর কি বাবা হওয়ার মত বয়স, পরিপক্বতা হয়েছে!!! একটা বাচ্চা মানে অনেক বড় দায়িত্ব। এই দায়িত্ব কি সে ঠিকমত পালন করতে পারবে!! যে টাকা সে উপার্জন করে সেই টাকায় তাঁদের দুইজনের ভালোমতই হয়। একটা বাচ্চা আসার যে খরচ তা কি সে কুলিয়ে উঠতে পারবে!!! এরকম নানা চিন্তা তাঁর মাথায় ঘুরপাক খেতে লাগল।

সামনে দাঁড়িয়ে নাইমা। একদমই বিপরীত ধরনের অনুভূতি নিয়ে। তাঁর সন্তান হবে!!! তাঁর নিজের সন্তান। সে যে তাঁর জন্য কত বড় খবর সেটা শফিক জানে না। শফিক নাইমা বছরের শুরু থেকেই বাচ্চার জন্য চেষ্টা করছিল। নাইমা কনসিভ করল আরো দুই মাস পর। প্রথম মাসে কন্সিভ না করাতে কত রাজ্যের দুশ্চিন্তা তাঁর মাথায় এসেছিল। তাঁর যদি কখনো বাচ্চা না হয়। তাঁর কত দিনের শখ মা হওয়ার। বাচ্চা না হলে কি আর সংসার সংসারের মত মনে হবে!! শফিকের কি আর তাঁকে ভালো লাগবে!!! যদি সমস্যা শফিকের হয় তাহলে কী হবে!! একটা বাচ্চা আল্লাহ তাঁকে দিবে না!!! সে কি জীবনে অনেক পাপ করেছে যে আল্লাহ এভাবে তাঁকে শাস্তি দিবে। তাঁর সকল চিন্তা একটা মাস এসব ঘিরে ছিল। শফিককেও সে এই ব্যাপারে বহুভাবে বিরক্ত করেছে। আমাদের যদি বাচ্চা না হয়!!! তাহলে কি হবে শফিক!! শফিক মাসের প্রথম দিকে সহানুভূতির সাথে নাইমাকে বোঝাত। আস্তে আস্তে ভিতরে ভিতরে একটূ বিরক্তও হলো। কিন্তু সে বাবা হতে পারবে না এরকম চিন্তা তাঁর মাথায় আসেনি। সময় হলেই হবে। কিছু ব্যাপার তো সৃষ্টিকর্তার হাতে ছেড়ে দিতেই হবে। এই ভেবেই সে নিশ্চিন্ত ছিল। এখানেই বোধহয় নারী আর পুরুষের পার্থক্য।

পাত্র-পাত্রীর চিন্তা ভাবনার সময় শেষ করিয়ে নবজাতক জানান দিল সে আসছে। তাঁর জানান দেয়াতে ভবিষ্যৎ বাবা মায়ের চিন্তা-ভাবনার পরিসর দুরকম হল। যাইহোক!! দুজনেই সম্বিৎ ফিরে পেল। সত্যিকারের বাস্তব চিন্তা শফিকের মাথায় আসতে শুরু করল। যেহেতু সন্তান হবে। সন্তানের মায়েরও তো যত্নের দরকার। কিন্তু ঢাকার এই বাসায় শুধু সে আর নাইমা। আর আছে আসিয়া। আসিয়া বাচ্চা মেয়ে। সে এই সময়ে নাইমাকে সামলাতে পারবে না। এই সময়ে যদি মাকে এনে রাখা যেত তাহলে ভালো হত। কিন্তু মা তো বাবাকে এই সময়ে রেখে এসে থাকতে পারবে না। বাবার শরীর ভালো না। তাহলে আরেকটা উপায়ই বাকি থাকে। তা হল নাইমা-কে নাইমার বাবার বাড়িতে রেখে আসতে হবে। কিন্তু বাদ সাধল নাইমা। নাইমা কিছুতেই শফিককে রেখে যাবে না। কত ঝগড়া যে হল!! কিন্তু নাইমার এক কথা। সে কিছুতেই শফিককে একা রেখে যাবে না। শফিক অনেক রকমভাবে বোঝানোর চেষ্টা করল। কোন কিছুতেই কিছু হয় না। শেষমেশ একরকম রাগটাগ করেই শফিক অফিসের উদ্দেশ্যে রওনা দিল। কথা না বুঝলে তো রাগ লাগারই কথা!! তাও যদি সে কোন অন্যায় কথা বলত। এই যে দুদিন হল নাইমা এক নাগাড়ে বমি করে যাচ্ছে। কিছু খেতে পারছে না। কি করতে পারছে শফিক। কিচ্ছু না। অসহায়ের মত তাকিয়ে তাকিয়ে দেখছে। নিজের রান্না নিজে খেতে পারছে না নাইমা। তবুও এই শরীরে শফিকের জন্য সে রাঁধবেই। রেঁধেও শেষ না কাজ। বসে খাওয়াবেও। মুখ ঢাকা থাকবে ওড়নায়। কারণ খাবারের গন্ধ সহ্য হচ্ছে না। এরকম সময়ে ঠিক কি করা লাগে তা তো শফিক জানে না। আসিয়া যতটুকু পারে করছে। নাইমার মা-ও বারবার নাইমাকে বলছে তাঁর কাছে চলে যেতে। নাইমা যাবে না। শ্বশুরবাড়ি ঢাকায় হলে শফিক নিজেই নাইমার সাথে নাইমার বাড়িতে গিয়ে সাময়িক ঘর-জামাই হত। কিন্তু তাতো আর সম্ভব হচ্ছে না। শ্বশুরবাড়ি ঢাকায় না। এসব দুঃশ্চিন্তা করতে করতেই শফিক অফিসে রওনা দিল।

১০
প্রতিদিনকার অফিস এখন একটু থমথমে পরিবেশের। খুব অস্বাভাবিক কিছু না। বস চেঞ্জ। এডমিনিস্ট্রেশন চেঞ্জ। এনভায়রনমেন্ট চেঞ্জ। চিরাচরিত নিয়ম। এভাবেই চলে আসছে চিরকাল। কিছু সময় লাগে। কিন্তু কাদের স্যার ম্যানেজার হওয়ার পরের এই সময়টা বেশ দীর্ঘ মনে হচ্ছে। কেউই এখনো থিতু হতে পারছে না।


কামাল আশেপাশেই ছিল। সুযোগ বুঝে শফিককে একা পেয়ে বলল- ‘শফিক ভাই!! অফিসের টাকা তো সব চার নেতা নিয়ে নিল!!!’ কাদের স্যার ম্যানেজার হওয়ার পর চারজনের একটা দল হয়েছে উনাদের। কাদের স্যার, নিয়ামুল হাসান, ইয়াসির আহমেদ এবং হোসেন মুহাম্মাদ। এদেরকেই শফিক ঠাট্টা করে ‘চার নেতা’ ডাকে। এদের হম্বিতম্বিতেই অফিসে টেকা দায়।

শফিক কিছু বুঝল না। টাকা নিয়ে নিল মানে কি!! কামাল যে কি সব বলে না মাঝে মাঝে!! এমনেই মন মেজাজ ভালো নেই। সে কিছু বলল না।

এই ডিপার্টমেন্টে সবাই প্রোজেক্ট বেস কাজ করে। প্রত্যেকে কোন না কোন প্রোজেক্টের টিম মেম্বার। শফিকরা সবাই মাস শেষে বেতন পায়। তাই নিয়ে সবাই খুশি থাকে। তবে কিছু কিছু প্রোজেক্ট যেমন ‘হাই ভ্যালুড’ যেগুলো। সেগুলোর জন্য কিছু এক্স্ট্রা বেনিফিট থাকে। সেই বেনিফিটগুলো পুরো টিমের সবাইকে ডিস্ট্রিবিউট করে দেয়া হয়। ‘হাই ভ্যালুড’ প্রোজেক্টগুলো আগের ম্যানেজার স্যার লটারির মাধ্যমে ডিস্ট্রিবিউট করত। তবে ঐ লটারিতে শুধুমাত্র ‘A1’ ক্যাটেগরির টিমরাই অংশগ্রহণ করতে পারত। কারণ ‘হাই ভ্যালুড’ প্রোজেক্টে টাকা যেমন বেশী তেমনি কাজের গুরুত্বও ব্যাপক। তাই টিম পারফরমেন্সের উপর ঐ প্রোজেক্টগুলো পাওয়া ডিপেন্ড করত। শফিকরা একবার পেয়েছিল। একেকটা প্রজেক্টের টাইম ৩-৪ মাস হয়ে থাকে। এর মাঝেই কাজ শেষ করতে হয়। কাজ শেষে শফিক অতিরিক্ত পঞ্চাশ হাজার টাকা পেয়েছিল। সেই টাকা দিয়ে সেবার সে বাসার সবাইকে কিছু না কিছু কিনে দিয়েছিল। কাদের স্যার আসার পর আর পায়নি। আইরিন মাঝে এরকম কিছু প্রজেক্ট পেয়েছিল বলে শুনেছে। শুনেও অতটা পাত্তা দেয়নি। আইরিন জুনিয়র হয়ে কিভাবে টিম লিডার হয় সেটাই শফিক বুঝতে পারে না। অফিসের বাকিরাও পারে না। ভাগ্যিস!! শফিকের টিম লিডার না সে।

‘হাই ভ্যালুড’ প্রোজেক্ট আর পায়নি শফিক। কামালও না। তাতে শফিকের তেমন মাথা ব্যথা ছিল না। হয়তো ঐ ধরনের প্রোজেক্ট এখন পাচ্ছে না অফিস। কিন্তু কামাল কিভাবে যেন খবর পেয়েছে যে ‘হাই ভ্যালুড’ প্রোজেক্টের সংখ্যা অনেক। এই জন্যই এই কয়েকদিন অফিসে খুব হম্বিতম্বি যাচ্ছে। কয়েকটা শেষও হয়েছে। কই কারো কোন ফিস্ট তো আসল না। ‘হাই ভ্যালুড’ প্রোজেক্ট শেষ হলে ঐ টিমের সবাই এক্স্ট্রা ফিনান্সিয়াল বেনিফিট পায়। তখন তারা পুরো টিম মিলে অফিসে ফিস্ট দেয়। ভালো মন্দ খাওয়ায় আর কি। কই!!! এবার তো এরকম কিছু হল না। শফিক ভাবল যে তাহলে বোধহয় এরকম কিছু না। কিন্তু কামাল বলে- ‘শফিক ভাই!!! এখানেই তো চার নেতার কারসাজি।‘ শফিক এখনো ফাঁকা চোখে তাকিয়ে থাকে। বলে- ‘কারসাজির কি আছে!!! আসলে কি আমাদের বলবে না!!! ডিস্ট্রিবিউট হবে না!!!’ ‘ডিস্ট্রিবিউট হয়ে গেছে এবং হচ্ছে শফিক ভাই।’ –কামাল বলল। ‘মানে কি!!!’ খুবই অবাক হয়ে গেল শফিক। হাসতে লাগল কামাল- ‘আরে শফিক ভাই!!! একটু চোখ কান খোলা রাখলেই তো টের পাওয়া যায়। ঐদিন ভুলে আমাদের প্রিন্টারে ইয়াসির উদ্দিনের ডকুমেন্ট প্রিন্ট হয়ে গেসিল। ঐটা দেখেই আমি বুঝে গেসিলাম। আর কিছু ভিতরের খবর আমি পেয়েছি। সো আমার কথা 100% সত্যি।’

কিছুটা অবিশ্বাস আর সন্দেহ ভরা চোখে তাকিয়ে রইল কামালের দিকে শফিক। কামাল হাসতে লাগল। এই সমাজের খুব স্বাভাবিক ব্যাপারগুলোও শফিক কখনো স্বাভাবিকভাবে নিতে পারে না। এতে কামাল বরাবরই খুব মজা পায়। মানুষ মজ্জাগতভাবেই লোভী। অন্যকে ঠকিয়ে খেতে মজা পায়। কিন্তু শফিক এটা কোনভাবেই মানতে পারে না। শফিকের সাথে কথা বলে কামাল এটুকু বুঝতে পেরেছে যে শফিক দুনিয়াটাকে উচিৎ অনুচিতের মোটা দাগে দেখে। সবাই ঠিক কাজ করবে। উচিৎ কাজটা করবে। এর বাইরে কিছু হলেই সে খুব অবাক হয়। এতে একদিক দিয়ে লোকটার সরলতাই প্রকাশ পায়। তাই শফিককে পছন্দই করে কামাল।

-তাহলে কি করা যায় কামাল?
-মীটিং-এ কথা তুলতে হবে।
-মীটিং এ? (আঁতকে উঠল শফিক)
- আঁতকে উঠলেন কেন? যা বলার সরাসরি। ‘হাই ভ্যালুড’ প্রোজেক্টের দাবিদার ‘A1’ ক্যাটেগরির সব টিম। সেখানে আমাদের জানানোই হচ্ছে না। এটার প্রতিবাদ করা দরকার না!!! টাকা ভাগ করে নিচ্ছে ‘চার নেতা’র সিন্ডিকেট। এমনকি তাঁদের টিম মেম্বাররাও কোন বেনিফিট পায় না। সব ওঁরা নিয়ে নেয়। এদিকে অফিস তো জানে সব আগের মতই হচ্ছে। মীটিং- এ কথা বলে যদি কাজ না হয় তাহলে অফিসকে জানানোর ব্যবস্থা করতে হবে।

চুপ করে রইল শফিক। তাঁর মনটা খুব খারাপ হয়ে গেছে। সে একটু আবেগী মানুষ। মানুষের উদারতা এবং ক্ষুদ্রতা উভয়ই তাঁকে খুব প্রাভাবিত করে। টাকার জন্য মানুষ এরকম অন্যকে ঠকাবে!!! টাকাই কি সব!!! এদের কি মৃত্যু হবে না!!! নিয়ামুল হাসান। যিনি কাদের স্যার এর ডান হাত। মানুষের পিছনে লাগার অসাধারণ প্রতিভা নিয়ে আছেন। কিছুদিন আগে হজ্ব করে ফিরলেন। শার্ট প্যান্ট এর সাথে চাপদাড়ি। চাপদাড়ি হজ্বের পরের সংযোজন। তাহলে হজ্বের গুরুত্বই কি!!! ধর্মের গুরুত্বই বা কি!!! কোন বেলার নামাজ মিস নেই। ‘চার নেতা’ একসাথে নামাজ পড়ে। তাহলে এরা কার সাথে প্রতারণা করে? স্রস্টার সাথে? নাকি নিজের সাথে? এরকম একটা ভন্ডের মেলায় শফিক নিজের আগত সন্তানের কথা চিন্তা করে। ও কি পারবে এদের সাথে থাকতে? এই প্রথম নিজের সন্তানের প্রতি একটা অনুভূতি টের পায় শফিক। সেটা মায়ার। হয়তো ভালোবাসারও। যে ভালোবাসার খুব অল্পই বাকি সমাজে অবশিষ্ট আছে।

শফিক যতটা আবেগপ্রবণভাবে পৃথিবী দেখে। কামাল তা দেখে না। সে বিশ্বাস করে মানুষ ভঙ্গুর। এই ভঙ্গুর মানুষকে একটা নিয়মের মধ্যে দিয়ে ঠিক পথে আনতে হয়। যদি পৃথিবীতে সবাই ভালোই হত। তাহলে কি আর পৃথিবী পৃথিবী থাকত। বেহেস্ত বা স্বর্গ হয়ে যেত। এখানে অন্যায় থাকবে। পাপী থাকবে। তেমনি অন্যায়ের প্রতিবাদ হবে। পাপের প্রায়শ্চিত্তও হবে। আস্তে আস্তে অন্যায়ের সব গেরো খুলে ফেলতে হবে। সময় লাগবে। একদম পরিষ্কার হয়তো কখনো হবে না। কারণ মানুষের ভিতরের কালো দূর করা অসম্ভব।

অনেকদিন ধরেই কামাল অফিসের এইসব অনিয়ম দেখে যাছে। কাদের স্যারের এই মাস্টার প্ল্যান বহু দিনের। এই প্ল্যান বানচাল করতেই হবে।

পর্ব ১ Click This Link পর্ব ২ Click This Link পর্ব ৩ Click This Link পর্ব-৪ Click This Link

মন্তব্য ১ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (১) মন্তব্য লিখুন

১| ১৪ ই মে, ২০১৭ দুপুর ১:৫৩

অনুকথা বলেছেন: ভালো লিখেছেন।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.