নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

জুবায়ের সুহান

সুহান সুহান

দ্বিধান্বিত

সুহান সুহান › বিস্তারিত পোস্টঃ

মৃত্যু কি শুধু কান্না!!!!

১৫ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ রাত ১০:৫৪

ইদানীং খুব মৃত্যুর খবর পাই। কাছের দূরের। আমার মামাতো ভাই। এক বছরের বড়। গত বছর সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যুবরণ করল। আমার আপন ছোট মামা। নিজের মেয়ের বিয়ের ঠিক আগে আগে মারা গেল। আমার মায়ের চাচাত ভাই। আমার আরেক মামা। বয়স চল্লিশ থেকে পঁয়তাল্লিশের মধ্যে। সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যু। আমার এক ছাত্র। নাম শিবু রায়। হঠাৎ স্ট্রোক করে মৃত্যু। এরকম কাছের দূরের নানা মানুষের মৃত্যুর খবর আসে।

আমার ছোট মামা। যিনি কিনা আমাদেরই নীচ তলায় থাকত। হরদম বাসায় আসা যাওয়া। আমার মায়ের কাছে কত কিছুর জন্য শলা পরামর্শ। আমার মাত্র জন্ম নেয়া পুত্রের জন্য কত উদ্দীপনা আর উৎসাহ যে আমার মামার ছিল তা যদি কেউ না দেখে তাহলে আমার অনেক সুন্দর করে বর্ণনা দেয়ার পরেও কোন পাঠক বুঝতে পারবে না। আমার স্ত্রীর দাবি- এরকম কোন মামা শ্বশুর কোন বাড়ির বউ পেয়েছে বলে তাঁর মনে হয় না। ঠাট্টা মশকরা এরকম পর্যায়ে করত মামা যে মামী বাধ্য হয়ে মামাকে বলত- এটা কিন্তু আপনার ভাইগ্না বউ। আপনার শালী না। প্রাণবন্ত এক পুরুষ। আমার ছেলে হয়েছে শুনে তাঁর খুব মন খারাপ হয়েছিল। তাঁর খুব মেয়ের শখ। মেয়েরাই নাকি মায়া করতে পারে। ছেলেগুলা খুব ‘বেত্তমিজ’ হয়। এখনো আমার মনে হয় আমি রাস্তায় বের হলেই মামাকে হাঁটতে দেখব। বা হয়তো এখুনি আমার ঘরে এসে আমার ছেলেকে নিয়ে এমনভাবে নাড়া চাড়া করবে যে আমার স্ত্রী মনে মনে শিউড়ে উঠবে। কিন্তু মুখে কিছু বলতে পারবে না। এখনো আমি ভিতরে ভিতরে আমার মামার মৃত্যুটাকে মেনে নিতে পারি না। অবচেতন মন এখনো তাঁর জন্য অপেক্ষা করে। আমার জীবনে সবচেয়ে কাছের এবং একমাত্র পুরুষ তিনি।

আমার মামাতো ভাই আর আরেক মামা। তাঁদের সাথে দূরত্ব ছিল। কিন্তু তারপরেও হঠাৎ মৃত্যুটা যেন ঠিক সাদরে গ্রহণ করার মত ছিল না। মৃত্যু বোধহয় কখনোই সাদরে গ্রহণযোগ্য করার মত না।

আমার ছাত্র শিবু রায়। বিধবা মায়ের এক ছেলে। মা-ছেলে মিলে ক্যাটারিং এর ব্যবসা। আমার শিক্ষকতার প্রথম দিকে শিবুর মায়ের রান্না করা খাবার দুপুরে বহুবার খেয়েছি। শিবু পড়ত আর দুপুরে ইউনিভার্সিটি-তে খাবার দিত। এভাবে ওঁদের মা-ছেলের সংসার চলত। ছেলে বিবিএ পাশ করল। কিছুদিন আগেও নাকি সার্টিফিকেট নিতে বহুবার ভার্সিটিতে আসল। কোথায় জানি চাকরির কথা ঠিক হয়ে আছে। সার্টিফিকেট জমা দিলেই হবে। ছেলেটা দুম করে স্ট্রোক করে মারা গেল। শিবুর মা কেমন আছে আমি জানি না। ইচ্ছে হয় জানতে। কিন্তু সাহস হয় না।

এই যে এত এত মৃত্যু। মৃত্যুর প্রতিক্রিয়া কি? খুব কান্না!! খুব কষ্ট!!! বুক দুমড়ে মুচড়ে আসা!! ইনিয়ে বিনিয়ে কান্না!!! এরপর শেষ!!!

মৃত্যুই কি আমাদের জীবনের সবচেয়ে বড় শিক্ষক না!!! সবচেয়ে যুক্তিসঙ্গত পরিণতি। কিছুদিন আগে পড়া কোন বইয়ে লেখা ছিল- ‘মানুষ মৃত্যুদন্ড নিয়েই জন্মগ্রহণ করে’। তাহলে মৃত্যুর প্রতিক্রিয়া কি হওয়া উচিৎ? আমাদের জীবনের সকল সফলতা বিফলতার অনিশ্চয়তার পরেও এই মৃত্যুই সুনিশ্চিত। কাউকে ঠকানো, কারো সাথে অন্যায় করা, ছেলে মেয়েদের সুন্দর ভবিষ্যতের জন্য ঘুষ খাওয়া, শুধুমাত্র রাগ আর জেদের বশবর্তী হয়ে অফিসের অধস্তনদের হেনস্তা করা- সবকিছুর পরেও সুখ শান্তি, সমাজের তথাকথিত সাফল্য অর্জন অনিশ্চিত থাকলেও, একমাত্র সুনিশ্চিত ‘মৃত্যু’। আমার ছোট ছেলেটাও একদিন মারা যাবে। আমিও একদিন মারা যাব। এর কোন অন্যথা হবে না। অমোঘ পরিণতি।

মৃত্যু যেন আমাদের শুধু না কাঁদায়। একটু যেন ভাবায়। আমাদের অকারণ তৈরি করা জটিলতা থেকে আমাদের মুক্তি দেয়। আমরা যেন একে অপরকে সবকিছুর পরেও ভালবাসতে পারি। সবকিছুর পরেও আমরা যেন পাপকে ঘৃণা করে পাপীকে আপন করে নিতে পারি। সুযোগ দিতে পারি। মৃত্যুর সরল সমীকরণ যেন আমাদের এই জটিল জীবনকে সরল করে দেয়।

মন্তব্য ২ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ১৫ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ রাত ১১:০৮

সালাহ উদ্দিন শুভ বলেছেন: মৃত্যুতো আসবেই, ওটাইতো শেষ ঠিকানা। সমস্যা হল বয়স বাড়ার সাথে সাথে আশেপাশের পরিচিত মানুষগুলোর অনুপস্থিতি আগে খুব বেশী করে টান দিত, এখন যেন এটা নিত্যদিনের ব্যাপার মাত্র।

২| ১৫ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ রাত ১১:৫৮

ওমেরা বলেছেন: মৃত্যু এক নির্মম সত্যের নাম।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.