নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

জাবের তুহিন

আছি । আমি আছি ।

জাবের তুহিন › বিস্তারিত পোস্টঃ

হাওয়াই মিঠাই [ গল্প ] [ রিপোস্ট ও সংশোধিত ]

১৩ ই জুলাই, ২০১৩ ভোর ৪:৪৪

'' তোকে কতবার বলছি আমার সাথে যখন থাকবি তখন সিগারেট টানবি না । ধুর হালা , একটা শেষ হইলো কেবল এখন আবার আরেকটা ধরাইতেছিস । আমার কথা শুইনা কিরা উঠছে , না ? ''

'' আমার সিগারেট আমি টানুম যখন খুশি তখন টানুম । যার সামনে ইচ্ছা তার সামনে টানুম । কোন সমস্যা ? ''

'' তাহলে আমার ইচ্ছা অনুযায়ী আমিও তোর সামনে থেকে চলে যাচ্ছি । ''

'' নাহ । আমার সামনে থেকে আমার অনুমতি ছাড়া কেউ যাইতে পারে না । ''

'' দুই ফুট ঘর না , তার মধ্যে আবার রাজত্ব ? ''

ঘরটা দুই ফুট না আরও বড়ই । এটি একটি পুরাতন গ্যারেজ । একান্ত আপন ও জরুরি কোন কথা আমাকে বলতে হলে বাপ্পি আমাকে এই জায়ায় নিয়ে আসে । এইজন্য আমার চলে যাওয়া হয় নি ।

মাঝে মাঝে ওকে দেখি রাস্তার মোড়ে কয়েকটা ' আজব ' চিড়িয়া ধাঁচের পুলাপাইনের সাথে আড্ডা দিতেছে । তখন যদি আমি ওর কাছে যাই ও আমাকে তাড়িয়ে দেয় । যাচ্ছে তাই ব্যাবহার করে । তখন মনে হয় ও কি আসলে আমার বন্ধী না শত্রু ? কিন্তু যখন আমাকে খুঁজে বের করে এই গ্যারেজে নিয়ে আশে একান্তই আপন কিছু কথা বলতে তখন নিজেকে ওর জীবনের একটি অংশ মনে হয় ।

'' ওই , দুই দিন ধইরা কিছুই খাই না । ভাত খাওয়া তোর বাসায় । ''

আমি তো শুনে পুরোই থ । তখন আমি বললাম , '' কেন কি হইছে ? ''

উত্তর পেলাম না । জানতাম উত্তর পাবো না । ওর কাছ থেকে সকল প্রশ্নের উত্তর আশা করা বোকামি ।

বাসায় ওকে নিয়ে গেলাম । আমাদের বাসায় ওর বড়ই দুর্নাম আছে । তবুও আম্মাকে মানালাম । ভাত খাওয়ালাম । হঠাৎ একটা জিনিস মাথায় খেলে গেলো । ও তো আমার সামনে সিগারেট টানছিল প্যাকেট থেকে বের করে । তাহলে ?

'' ওই ব্যাটা বাপ্পি

ভাত পাও না চা খাও ,

সাইকেল দাবড়াইয়া পায়খানায় যাও ? ''

'' মানে কি ? ''

'' মানে বুঝো না , না ?সিগারেট টানতে পারো টাকা দিয়ে কিনে কিন্তু ভাত খাইতে পারো না ? নাক খাইয়া থাকো ? ''

'' টাকা দে । ''

'' আমার প্রশ্নের উত্তর দে , আগে । এরপর টাকার প্রসঙ্গ । ''

বাপ্পি তখন পকেট থেকে এন্তিকাটার বের করে । ভিতর থেকে ব্লেড ঠ্যালা দিয়ে বের করে আমার দিকে তাক করে । টাকা না দিলে সে আমার গায়ে পোঁছ মারবে । প্রথমে আমি ফাজলামি হিসেবে নিলেও পরে ওর চোখের দিকে তাকিয়ে শিউরে উঠলাম । আমার মানিব্যাগে অল্প কিছু টাকা ছিল । তাই ওকে দিয়ে দিলাম । এরপর বাপ্পি বিদায় হল । এই ঘটনার রেশ আমার মনে অনেক গভীর এক দাগ কেটেছে । অনেক চেষ্টা করেও ভুলতে পারছিলাম না ।

কোন এক কারণে আব্বা তাড়াহুড়ো করে বাসা পরিবর্তন করে অনেক দূরে নিয়ে যায় আমাদের । কিন্তু আমার মনে একটা সংশয় থেকে যায় সেইদিনের সেই ঘটনা কি আব্বা জেনেছে কোনভাবে ?

প্রথম দিকে বেশ খুশি খুশিই লাগছিল যাক পিছু ছুটলও । । কিন্তু দিন অতিবাহিত হওয়ার সাথে সাথে মনে হতে লাগলো আমি ছাড়া ওই পাগলার আর কে আছে মনে কিছু কথা বলার । কিছু প্রশ্ন মনে জাগতে লাগলো হ্যাঁ বোধক ও না বোধক উত্তর দিতে থাকলাম মনে মনে ব্যাখ্যাসহ ।

সেই প্রশ্নগুলো বিভিন্ন ধরনের । বিভিন্ন সময় বিভিন্ন প্রশ্ন । হয়তো একই প্রশ্নের ভিন্ন উত্তর । হয়তো ভিন্ন ব্যাখ্যা বের করতাম ।

==

এক এক করে বেশ কটি বছর চলে গেলো কলেজ জীবনের বেরি টপকিয়ে ইউনিভার্সিটিও পাড় করলাম । পা রাখলাম চাকরির জীবনে এর কিছু কাল পরেই ফুলের সন্ধানে পেয়ে তাকে নিজের করে নিলাম । শুরু হল নতুন সংসার নতুন জীবন , শুরু হল ভালোবাসার , ঝগড়ার , মধুরতার দাম্পত্য জীবন ।

কত কিছু ঘটে গেলো কিন্তু সেই পাগলটাকে ভুলি নি । আমি আমার উনাকেও বলতে ভুলিনি সেই পাগলের কথা ।

স্পষ্ট মনে আছে সেদিন শুক্রবার ছিল । একটু দেরিতে ঘুম থেকে উঠলাম আমরা দুজনে । সকাল থেকেই আকাশটা মেঘলা ছিল । বৃষ্টি হলে অনন্যার সাথে একসাথে বৃষ্টিতে ভিজবো বলে মনে মনে ঠিক করে রাখলাম । বৃষ্টির আবহাওয়ায় খিচুড়ি খেলাম তৃপ্তি করে । খাওয়া শেষে অনন্যা গেলো চা আনতে । তখন রং চা খেতে কেন যেন ইচ্ছা করছিলো ।

হঠাৎ করে কলিং বেল বেজে উঠলো । দরজা খোলার পর একটা বজ্রপাতের শব্দ পেলাম । শব্দটা বিকট ছিল । আশেপাশে কোথাও পড়েছে কিন্তু তা আমার মাথায় পড়েছে বললেও খুব ভুল বলা হবে না । কারণ দরজায় বাপ্পি দাঁড়িয়ে ছিল । এতটুকুও পরিবর্তন হয় নি চেহারার যার জন্য সহজেই চিন্তে পেরেছি ।

আমার হতভম্ব ভাব কাটতে বেশ সময় লেগে গেলো । ও দরজার বাহিরে ততক্ষণ দাঁড়িয়ে ছিল চুপচাপ । ভিতরে এনে ওকে বসালাম । ওকে খুব নিস্তেজ লাগছিল । বুঝলাম কোন সমস্যা আছে । অনন্যাকে ওর সম্পর্কে সব কথাই বলেছিলাম । ও আজ বাড়িতে এসেছে বললে হয়তো ভয় পেটে পারে তবুও ডাকলাম ।

'' অনন্যা , এদিকে আসো । আমার সেই পাগল বন্ধু বাপ্পি এসেছে । ''

অনন্যা একটু ভয়ে ভয়েই ঘরে ঢুকল । সালাম দিয়ে বাপ্পির কুশল জিজ্ঞেস করলেও বাপ্পি যেমনটি ছিল তেমনটিই রয়ে গেলো । অনন্যাকে আমাদের জন্য চা আনতে বললাম ।

'' কিছু কথা বলবো '' বাপ্পি বলে উঠলো । গলার শরেও পরিবর্তন এসেছে ,

জিজ্ঞেস করলাম , '' কিরে সিগারেট আনাবো ? ''

'' না । '' উত্তরটা ওর সাথে মানানসই নয় । আজ ওর সাথে মানানসই নয় এই রকম অনেককিছুই দেখতে পাচ্ছি । তাই বেশি চমকালাম না ।

ও - ওর একান্ত কিছু কথা গ্যারেজে বলতো কারণ ও অন্যের মুখ দেখে সে সকল কথা ও বলতে পারে না । তাই আজ বুঝলাম এখানে ওকে বসিয়ে রাখলে ও বসেই থাকবে কিছুই বলবে না । তাই বাপ্পিকে লাইব্রেরী রুমে [ আমার নিজের বাসার একটি ছোট অংশ ] নিয়ে গিয়ে সব পরদা টেনে দিলাম , দরজা বন্ধ করে দিলাম , লাইট বন্ধ করলাম ।

বললাম , '' শুরু কর । ''

'' কথাগুলো কাউকে না বলে শান্তি পাচ্ছি না । তাই তোর ঠিকানা বের করে চলে এলাম । তোর কাজ শুধু শোনা । আমি কথা শেষ করেই উঠে চলে যাবো । ''

'' শর্ত মঞ্জুর । ''

'' হাজারটা মেয়ের মধ্যেও ও ছিল আলাদা , ছিল অনন্য , ছিল মহনীয় , মাতাল করা রূপের অধিকারী । দেখেই ওকে পছন্দ করে ফেললাম । প্রেম বলবো না কারণ জিনিসটা শুধু আমার পক্ষ থেকেই ছিল । ওকে পাওয়ার জন্য আকুল হয়ে গেলাম । ওর সম্বন্ধে জানার ইচ্ছা আমাকে ঘিরে ধরল । ওর বান্ধবী আবার আমার এক বন্ধুর ছোট বোন । ওর ছোট বনে কাছ থেকে মহনীয় মেয়ের সকল তথ্য যোগাড় করলাম । তার নাম ছিল রিমি । দুই অক্ষরের ছোট নামের মানুষটি যে এতো রূপবতী তা বোঝা মুশকিল ।

আমি তখন কলেজ শেষ করে কোন ইউনিভার্সিটিতে ভর্তি হতে না পেরে ছন্নছাড়া । রিমি তখন কলেজে নতুন ভর্তি হওয়া ছাত্রী । আমার এই পরিস্থিতিতে আমি আমার সকল ধ্যান ওর দিকে নিলাম । কষ্টকে ভুলে থাকার জন্য ।

রিমির ফোন নাম্বার যোগাড় করলাম কিছুদিনের মধ্যে । এরপর ইতস্তবোধ করতে লাগলাম । ফোনে ওর সাথে কি বলে কথা শুরু করবো ? ও কি মনে করবে ? এই সকল চিন্তা মাথায় ঘুরপাক করতে লাগলো ।

কাছের বন্ধুরা সাহস যোগাতে লাগলো । কিন্তু ওদের এই সম্পর্কে ধারণা আছে বলে আমি মনে করি না । ওরা সবাই একজন মেয়ে বন্ধুর খোঁজ থেকে পেয়ে গেছে যেও কিনা একজন ছেলে বন্ধুর খোঁজে ছিল । এটাকে আমি ভালোবাসা বলতে নারাজ । একজনের অভাব আরেকজন মেটায় , একজন আরেকজনে দেখানোর এক বিশ্রী প্রতিযোগিতায় লিপ্ত ।

আমি এতে বিশ্বাসী নই । আমি বিশ্বাসী পথ চলতে থাকবো হঠাৎ একজন তার রূপ গুন দিয়ে আমাকে টেনে ধরবে আর যেতে দেবে না । বাঁধন ছুটে গেলেও আঁচড় দিয়ে যাবে আর আবার পথচলা অন্য কোন তানের অপেক্ষায় । না জোর করে মানুষ দেখানো গিট দিয়ে লাভ নেই ।

তবে ভয় হয় যদি গিট শক্তভাবে থাকি কিন্তু কোন সময় ওপাশ থেকে দড়ি চেতে দেয় তবে আমি তো অতলে হারিয়ে যাবো ।

অনেক ভেবে চিনতে ফোন করলাম । ভেবে দেখলাম ওর সাথে তো আমার বেশ কয়েকবার চোখা চখি হয়েছে । হয়তো আমায় চিনবে । ওর জন্যই তো ওই রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকি । ওর আগমন ও প্রস্থান উভয়ই দেখি ।

'' হ্যালো , রিমি আছে । ''

'' জি , বলছিলাম । আপনি কে বলছিলেন ? ''

'' আমি আমার পরিচয় দিচ্ছি । তুমি আগে বল তুমিই তো রিমি নাকি ? ''

'' হ্যাঁ , কেন ? কি চান ? ''

'' দেখো ...... ''

'' ফোনে কি দেখবো ? ''

'' একটু দাড়াও । ''

'' দাঁড়াবো কেন ? ''

'' চুপ । একেবারে চুপ । আমি কিছু কথা বলবো শুধু শুনো । কথা শেষ হলে এরপর যা কিছু জিজ্ঞাস করার করো । দুই এক মিনিটের মধ্যে কথা বলা শেষ করছি ।

তোমাদের কলেজের বাহিরে আমাকে হয়তো প্রায়ই দাঁড়িয়ে থাকতে দেখেছো ... ''

''আপনি ... ''

'' চুপ । কথা শেষ করি আগে ।

আমি তারেই খুঁজে বেড়াই যে রয় মনে আমার মনে

সে আছে ব'লে

আমার আকাশ জুড়ে ফতে তারা রাতে ;

প্রাতে ফুল ফুটে রয় বনে আমার বনে ।

এতো রূপের খেলা রঙের মেলা অসীম সাদায় কালোয় ।

এটি রবীন্দ্রনাথ লিখে গেছেন অনেক আগে । কাকে দেখে জানি না । কিন্তু তোমাকে এখন দেখে আমার এই হাল ।

আর মোবাইল হাতে রাখো একটা গান পাঠাচ্ছি । গানটা আমার মনের ভাব প্রকাশ করবে । ''

বলে আমি ফোন কেটে দিলাম । আর রবীন্দ্রনাথের লেখা

'' ভালোবাসি ভালোবাসি

এই সুরে কাছে দূরে জ্বলে স্থলে বাজায় বাঁশি । ''

গানটি পাঠিয়ে দেই ওর নাম্বারে । এরপর আমি আমার মোবাইল বন্ধ করে রেখে দিই । আর বড় বড় নিঃশ্বাস নিতে থাকি ।

জানিস , ওই রাতে কি পরিমাণ সিগারেট টানছিলাম হিসাব নাই । ওই চিন্তা থেকে শরে যেন অন্যকিছু নিয়া চিন্তা করতে পারি শুধু সেই জন্য ।

পরেরদিনের অপেক্ষায় আর কি ঘটতে যাচ্ছে সেই চিন্তায় অধীর হয়ে রইলাম । ঘড়ির কাটার সাথে পাল্লা দিয়ে সিগারেট টানতে থাকলাম । সময় কাটতে লাগলো ।

সকাল আটটায় কলেজে ক্লাস শুরু । আমি সাতটার দিকে থাকলাম কলেজের সামনে । সময় যেন থমকে গেছে । ওকে দেখলাম , কিন্তু আমায় দেখেও না দেখার ভান করে কলেজের ভিতরে ঢুকে গেলো । আমি তাকিয়ে রইলাম ।

কলেজে ছুটির পর আমি ওর মুখের খোঁজে থাকলাম । সব মেয়েই এক এক করে বের হতে লাগলো । কিন্তু ওর দেখা পেলাম না । মনে করলাম , হয়তো সবার আগে বের হয়ে আমার চোখকে ফাঁকি দিয়ে চলে চলে গেছে । আশাহত হয়ে যখন ফিরে যাবো বলে মনঃস্থির করলাম

তখন ওর দেখা পেলাম । আমার দিকেই আসছিল । ও আমার যত নিকটে আসতে লাগলো আমার হৃৎস্পন্দন তত বৃদ্ধি পেটে লাগলো । আমার থেকে এক হাত দূরে এসে দাঁড়িয়ে গেলো । কি ঘটতে পারে তা চিন্তা করার ক্ষমতাও হারিয়ে ফেললাম । স্বাভাবিক থাকার চেষ্টা করলাম জানি না কতটুকু সক্ষম হয়েছিলাম

'' আপনি কি রবীন্দ্রনাথের ভক্ত ? রিমি এর কাছ থেকে এই প্রশ্ন শুনে একটু হকচিয়ে গেলাম ।

'' হ্যাঁ , আমি তার বেশ বড় ধরেনর ভক্ত । ''

'' হুমা , বুঝলাম । তা তার কি কি বই পড়েছেন ? ''

''খুব বেশি না । ' শেষের কবিতা ' অল্প পড়েছি ।আর কিছু ছোট গল্প , পাঠ্যবইয়ের কবিতা ও গল্প আর বাসায় ' সঞ্চয়িতা ' আছে । ''



'' তাহলে খুব বেশি তো পড়েন নি । কিন্তু এতো বড় ভক্ত হলেন কিভাবে ? ''

'' হুমায়ুন আহমেদ এর বই পরে তার ভক্ত হয়েছি । ''

'' বুঝলাম না । ''

'' উনি নিজেও রবীন্দ্রনাথের ভক্ত ছিলেন । বিভিন্ন জায়গায় রবীন্দ্রনাথের কবিতা উদ্ধৃত করতেন । সেই থেকে । ''

'' বুঝলাম । তা গতকাল রাতে কি হয়েছিল ? ''

'' আজকের এই সময়ের জন্য গতকালের রাতের উদ্ভব হয়েছিল । ''

'' এখানে কি শুধু আমার জন্য দাঁড়ানো হয় নাকি সবার জন্য ? ''

'' গোলাপ যেথায় দেখেছি সেথায় রুখেছি । ''

'' বাহ । তো আজকে যাই । ''

সেইদিনটা ছিল আমার জীবনের অন্যতম সুন্দর দিনগুলোর মধ্যে একটি । এরপর বেশ কয়েকবার রিমির সাথে আমার কথা হয় ওর কলেজ ছুটির পর । টুকটাক জিনিস নিয়েই কথা হয় । একদিন ওকে বললাম রাতে ওদের বাসার ছাদে থাকতে । ও কারণ জিজ্ঞাসা করলো কিন্তু আমি ওকে কিছু বললাম না ।

যথাসময়ে ও ছাদে উপস্থিত হলও , আমিও হলাম । ঐ দিন ছিল জ্যোৎস্না রাত ।

'' জ্যোৎস্না তোমার সাথে উপভোগ করার ইচ্ছা ছিল । '' ওকে বললাম ।

ও চুপ করে থাকলো । আমার ডান হাত জড়িয়ে ধরল । কিছু সময় কাটালাম স্বপ্নের মতো ।

এরপর বেশ-কিছুদিনের মধ্যে দুজনেই প্রেমের সাগরে ডুবে গেলাম । বেশ-কিছুদিন জ্যোৎস্না আমরা একসাথে উপভোগ করেছি এক অপরের হাত ধরে । প্রতিবারই শিহরিত হয়েছি কোমল পরশে ।

আমাদের মধ্যকার সম্পর্কটা একটু আজবই ছিল । আমরা না পারকে মানুষকে নিজেদের সম্পর্ক দেখিয়ে বেড়াতাম , না কোন খাবার দোকানে খাবার অর্ডার করে না খেয়ে কথা বলে চলে আসতাম । আমরা প্রকৃতির মাঝে প্রেম খুঁজতাম , আর কোথাও পেলে তা অবলোকন করতাম ।

একদিন ওদের বাসার চাঁদের মেঝে আমি গোলাপ ফুলের পাপড়ি দিয়ে ভোরে দিলাম । গোলাপের ঘ্রাণ আর জ্যোৎস্না রাত অসাধারণ একটি পরিবেশের সৃষ্টি হলও । পরিবেশকে আরও সুন্দর করে তোলার জন্য বৃষ্টির যেন তড় সইল না । ধুম বৃষ্টিতে আমরা দুজনে ভিজলাম , গোলাপের মিষ্টি ঘ্রাণের সাথে জ্যোৎস্নার আলো । সে এক অদ্ভুত সুন্দর মুহূর্ত । ঐ মুহূর্তই ছিল ওর সাথে আমার কাটানো শেষ মুহূর্ত । ''

এইবার প্রথমবারের মতো আমি কথা বললাম , '' কেন ? পরে কি ওর সাথে অন্যজনের সাথে বিয়ে হয়ে গেছে ? ''

'' নাহ । ঐ রাতে আমি ওকে মেরে ফেলেছিলাম । ''

বিনা মেঘে বজ্রপাত বলে একটা কথা আছে । কিন্তু বাপ্পির এই কথাটা আমার কাছে বিনা আকাশে বজ্রপাতের মতো লাগলো ।

ভাঙা ভাঙা কণ্ঠে জিজ্ঞেস করলাম , '' কেন এবং কীভাবে ? ''

'' কীভাবে ? - এর উত্তর আমি দিবো না তবে কোন কষ্ট ছাড়াই মৃত্যু দিয়েছি এবং সুন্দর এক পরিবেশে । ''

ও একবার যেটা না বলেছে ঐটা আবার জিজ্ঞাস করা বোকামি ।

'' তাহলে বল কেন ? ''

'' যতদিন যাচ্ছিল রিমিই আমার কাছে সব হয়ে যাচ্ছিল । আমার অন্তরে ওর জায়গা বাড়তে থাকলো । চিন্তা করলাম ঐ তো আমার সব । ওকে পেলে তো আমি সবই পেয়ে গেলাম । আর সব পেয়ে গেলে তো জীবনের তৃপ্তি নেই । আজকে চলি রে । ''

বলেই ও উঠে বাসা থেকে বেরিয়ে গেলো । বাপ্পি বেরিয়ে যাওয়ার পরে হন্তদন্ত হয়ে অনন্যা রুমে ঢুকল ।

'' বাপ্পি কি বলে গেলো ? কিসের জন্য এসেছিল ? ''

আমি কোনটারই উত্তর দিলাম না । চুপ করে রইলাম । বারান্দায় গেলাম । বাইরে বৃষ্টি হচ্ছিল । বৃষ্টির মধ্যে বাপ্পি ভিজে হেঁটে যাচ্ছিল । বৃষ্টির মধ্যে বোঝা যায় না কেউ কাঁদছে না কি । কিন্তু আন্দাজ করতে পারলাম বাপ্পি কাঁদছে ।

তখন আমার সেই ইচ্ছার কথা মনে পড়ে গেলো । অনন্যাকে নিয়ে ছাদে চলে গেলাম বৃষ্টিতে ভিজতে । বৃষ্টি তুমি কতই সুন্দর । সব ধুয়ে ফেলতে পারো কিন্তু মানুষের অন্তরকে ধুতে পারো না ।

জীবন আগের গতিতেই চলতে লাগলো । তবে মাঝে মাঝে বাপ্পির বাপ্পির কথা মনে পড়ে । দিন কয়েক বাদে একটা চিঠি পেলাম । যেটা বাপ্পির কাছ থেকে এসেছে । চিঠিতে যা লেখাছিল -

'' আবার একটু গভীরভাবে চিন্তা করে দেখলাম রিমিও তো আমাকে চাইতো । আমিও ওর কাছে ওর সব কিছু ছিলাম । তাহলে আমি কীভাবে স্বার্থপরের মতো নিজের ইচ্ছাপূরণ করলাম ওর ইচ্ছার দাম না দিয়ে । তাইই এখন ওর কাছে গিয়ে দেখি কি বলে ? তুই যখন এই চিঠি পড়ছিস তখন আমি বহু দূর .................. ''

হৃদপিণ্ডে একটা কি যেন অনুভব করলাম । যেন কেউ জোরে আঘাত করলো হাতুড়ি দিয়ে ।

জীবনটাই হাওয়াই মিঠাইয়ের মতো । দেখতে সুন্দর , খেতে মিষ্টি কিন্তু পরক্ষনেই উধাও ।

হঠাৎ করে মনে পড়লো আজকে তো জ্যোৎস্না রাত ।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.