নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

জাবের তুহিন

আছি । আমি আছি ।

জাবের তুহিন › বিস্তারিত পোস্টঃ

রক্তিম [ গল্প । দ্বিতীয় পর্ব ]

১০ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৩ রাত ১১:০৫

প্রথম পর্ব = Click This Link

রিসাত সাহেব হতভম্ব হয়ে গেলেন । এ তিনি কি করলেন ? তবে তার তৃপ্তি এর পরিমাণও কম ছিল না । ছিল নতুন নেশার উম্মাদনা , ছিল সুখ খুঁজে পাওয়ার শান্তি ।

তিনি শিক্ষক মানুষ বলে পকেটে কাগজ কলম থাকে । তিনি ছোট একটি কাগজ বের করলেন । এরপর লিখলেন ,

'' এ যেন এক নতুন প্রাপ্তি ,

নতুন রক্তের ঘ্রাণ ,

নতুন রক্তের রং । ''

কি জন্য লিখলেন তিনি নিজেও ঠিক বুঝতে পারলেন না । তবে মনে হয় মুহূর্তের কথা একটু লিখে রাখা । তিনি কাগজটি লাশের পাশে রেখে চলে গেলেন । জামায় বেশখানিকটা রক্ত লেগে ছিল ।

রাত গভীর । মানুষ নেই বললেই চলে । তাই একটু কম চিন্তা মাথায় নিয়েই রিসাত সাহেব হেঁটে বাসায় বলে এলেন । কেউ তাকে দেখে নি । তিনি জামা ছেড়ে তখনই ধুয়ে দিলেন । পরের দিন তো আর স্কুলে যাওয়া লাগবে না তিনি ছুটি নিয়েছেন আগেই । শরীরে লেগে থাকা রক্ত পরিষ্কার করে তিনি শুয়ে পড়লেন । এই রকম ঘুম যেন আগে কখনো তিনি ঘুমান নি । শান্তির ঘুম । মাথায় কোন প্রকার চিন্তার অস্তিত্ব নেই । শুধুই তিনি আর ঘুম পরস্পরকে জড়িয়ে রয়েছেন । একজন যেন অপরজনকে বহুদিন পড়ে পেলো । কি সেই ক্ষণ । কি সেই মিলন ।

তিনি মোবাইল ফোন ব্যবহার করেন না বলে তাকে তার বাসায় এসে হেডমাস্টার সাহেবের মৃত্যুর খবর দিয়ে যায় গণিত বিভাগের আরেকজন শিক্ষক নাম রিয়াজ ।

'' লোকটার কোন দুশমন তো ছিল না । ছাত্রদের সাথে রাগারাগি বেশি করতেন মানলাম । কিন্তু কোন ছাত্রর পক্ষে এই কাজ করা সম্ভব না । আর তিনি যে রাতে বের হয়েছেন এই খবরই বা পাবে কীভাবে ? ''

'' হুম । '

'' আমি নিশ্চিত পরিবারের কেউ ই এই কাজ করেছে । বাসা থেকে যেই বের হয়েছে লোক লাগিয়ে মেরে ফেলেছে । গ্রামে নাকি বেশ জমি জমা আছে । তবে পুলিশ বলছে কাজটা কোন অদক্ষ লোকের করা । ''

'' হুম । ''

'' আপনার মনে হয় এখনও ঘুমের ঘোর কাটে নি । আর ঐ যে পুলিশ টাকা দিলেই বলবে আপনি খুন করেছেন । ''

রিসাত বেশ ভয় পেয়ে কেঁপে উঠলো । রিয়াজ সাহেবের চোখ এরালো না ।

'' আরে আমি এমনেই বললাম । ভয় পাওয়ার কি আছে ? ''

কিছুতেই যেন নিজেকে স্বাভাবিক করতে পারছিল না রিসাত সাহেব । জিনিসটা বুঝতে পেরে রিয়াজ সাহেব বেশ লজ্জিত হলেন তাকে এইরকম বিব্রত পরিস্থিতিতে ফেলে দিয়ে ।

ক্ষমা চেয়ে চলে গেলেন , জানাজার নামাজে শরিক হওয়ার জন্য বলে ।

পাঁচ -

দুই দিন কেটে গেলো । আগে ছুটির দিনগুলো যেভাবে কাটতো সেভাবেই কেটে যেতে লাগলো । কিন্তু আবার সেই পশুত্ব ফিরে আসতে কতদিন ? রিসাত সাহেব চিন্তা করলেন , ''একটু হাওয়া পরিবর্তন করে বাহিরে থেকে ঘুরে এলে কেমন হয় ? ছুটি আরেকটু না হয় বাড়িয়ে নিলাম । ''

তিনি সমুদ্র সৈকত দেখতে যাবেন বলে মনঃস্থির করলেন । টিকিটও কেটে ফেললেন । বাস রাতে ছাড়বে । ঐদিন সকালে বাড়ির মালিক রায়হান সাহেব এলেন । হাসি- খুশি , সহজ সরল মানুষ ।

রুমে ঢুকার অনুমতি চেয়ে অনুমতির জন্য দেরি না করে ঢুকে গেলেন ।

'' তা কেমন আছেন ? বারিয়ালা হয়েছি বলে তো লাট সাহেব হয়ে যাই নি । ভাড়াটিয়াদের একটু খবর টবর নিতে হয় । তাই আসলাম । কোন সমস্যা নেই তো ? ''

'' নাহ কোন সমস্যা নেই । ''

'' বললেন না তো কেমন আছেন ? ''

'' আছি কোন রকম । ''

'' কোন রকম ? ''

এর উত্তর কি দিবেন রিসাত সাহেব বুঝে উঠতে পারলেন না ।

'' আচ্ছা যাক ও কথা । তা ব্যাগ গুছাচ্ছেন যে ? কোথাও যাবেন নাকি ? ''

'' হু । একটু কক্সবাজার যাবো । ''

'' একটু কেন ? পুরা গেলে সমস্যা কি ? '' বলে তিনি হেসে উঠলেন ।

নিজের মতো করে উত্তর দেয়ার জন্য রিসাত সাহেব বলে উঠলেন

'' শরীর টা ঠিক ভালো যাচ্ছে না । তাই ঐ দিকে যাচ্ছি । হাওয়া বদল আর কি । ''

'' তা কতদিনের জন্য ? ''

'' দেখি । যতদিন ভালো লাগে আর কি ।''

'' ভালো । ভালো । তবে আপনার স্কুল ? ''

'' ছুটি নিয়েছি । ''

'' আমার ঐ মেয়েটার জন্য আচার আনবেন আর এক কেজি লইটকা শুটকি আইনেন । বেশি কিছু না । ''

'' ঠিকাছে । মনে থাকলে । ''

'' শিক্ষক মানুষ । কিছু ভুলে নাকি ? '' এর উত্তরের আশা না করেই বলতে থাকলেন ।

'' বুঝছেন , রাতে ইজিচেয়ারে করে বাইরে বসে থাকি । এই ধরেন এগারোটা থেকে বারোটা পর্যন্ত । হালকা বাতাস শরীরে লাগে । ভালোই লাগে । চিন্তা কম কম মনে হয় । এর চেয়ে বেশি থাকতে ইচ্ছা করলেও পারি না । ঘুম ধরে । ''

রিসাত সাহেবের মুখে স্পষ্ট বিরক্তির ছাপ । তাই দেখে আর কথা বাড়ানো উচিত হবে না চিন্তা করে রায়হান সাহেব বিদায় নিয়ে চলে গেলেন ।

রিসাত সাহেব চিন্তা করেন , '' লোকটার এখনও তেমন বয়স হয় নি । কিন্তু এখনই কথা বেশি বলার বাতিকে ধরেছে । ''

রাত বারোটায় বাস । এগারোটার দিকে বের হলেন । সামনে ইজিচেয়ারে রায়হান সাহেব বসে আছেন । তার সাথে আগ বাড়িয়ে কথা না বলে রিসাত সাহেব চলে গেলেন । কলা বাগান থেকে বাস ছাড়বে । একটু হেঁটে পড়ে রিক্সা নিবেন বলে ঠিক করলেন । কিছুক্ষন হাঁটার পর তার মনে পড়লো তিনি হাতের ঘড়িটা আনেন নি । দেয়াল ঘড়ি দেখে বের হয়েছেন ।

বাসার সামনে রায়হান সাহেবকে আধো শোয়া অবস্থায় দেখে সেই রাতের শারীরিক ও মানসিক পরিস্থিতে তিনি পড়ে গেলেন । তিনি নিজের উপর থেক নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলতে শুরু করলেন ।

ঘরে ঢুকলেন । হাত ঘড়ি নিলেন । এরপর চোখ গেলো ছুরির দিকে । তিনি নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করতে লাগলেন । কিন্তু মন যেন বলছে , '' সেই দিনের ঘ্রাণ মনে নেই । মনে নেই কি সেই রক্তের গন্ধের কথা । মনে না থাকলে আরেকবার নিয়ে দেখ । ''

নিজে নিতে না চাইলেও হাত ছুরি নিয়ে পকেটে ঢুকালো । দরজা তালা দিয়ে ব্যাগ নিয়ে ইজিচেয়ারের কাছে গেলেন । ঘুমিয়ে পড়েছেন রায়হান সাহেব । মনকে মানাতে ব্যর্থ হলেন রিসাত সাহেব । ইজিচেয়ারের পিছনে গিয়ে দাঁড়ালেন তিনি । বা হাত দিয়ে শক্ত করে মুখ চেপে ধরে ডান হাতের ছুরি গলার উপর চালিয়ে দিলেন ।

ফিনকি দিয়ে রক্ত বের হতে লাগলো । রক্তটা সেইদিনের তুলনায় বেশি লাল । ঘ্রাণটাও একটু ভিন্ন ।

আজ জামায় রক্ত লাগে নি । হাতে যা লেগেছিল ছিটে ফুটা বাহিরের কলে গিয়ে ধুয়ে নিলেন । স্বাভাবিক মানুষের মতো হেঁটে চলে গেলেন মহাম্মাদপুর বাস স্ট্যান্ড । একটা রিক্সা নিলেন কলাবাগানের উদ্দেশে ।

বাস ঠিক সময় ছেড়ে দিলো । চোখ বন্ধ করে ঘুমানোর চেষ্টা করলেন । সেইদিনের সেই ঘুম আবার ফিরে এলো । বাস চলতে লাগলো ..................

মন্তব্য ৬ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৬) মন্তব্য লিখুন

১| ১০ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৩ রাত ১১:১৫

মোঃ খালিদ সাইফুল্লাহ্‌ বলেছেন: ভাই ভুই লাগে তো!

১০ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৩ রাত ১১:১৬

জাবের তুহিন বলেছেন: ভুই লাগা ভালো । ভয় না লাগলেই হবে ।

২| ১২ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৩ রাত ১:২৮

নাজিম-উদ-দৌলা বলেছেন:
ডেঞ্জারাস ব্যাপার দেখি! রক্তের ঘ্রান!
ইন্টারেস্টিং লেগেছে গল্প :)

১২ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৩ রাত ৮:৪৫

জাবের তুহিন বলেছেন: আগেরটা পড়ছিলেন ? না পড়লে পড়েন । আর এরপরেরটা পড়ারও আহবান রইলো ।

৩| ১২ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৩ রাত ৯:১০

বিদ্রোহী ভৃগু বলেছেন: মোঃ খালিদ সাইফুল্লাহ্‌ বলেছেন: ভাই ভুই লাগে তো! :-B

১৫ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৩ সকাল ১০:৩৩

জাবের তুহিন বলেছেন: আপনি পান নাই ?

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.