নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

জাবের তুহিন

আছি । আমি আছি ।

জাবের তুহিন › বিস্তারিত পোস্টঃ

চুড়ি নং ২৪ [ গল্প ]

২১ শে এপ্রিল, ২০১৫ সকাল ১০:৪০

ভার্সিটিতে ক্লাস শুরু হয়েছে কয়েকদিন হলো । এখনো ক্লাসের সবার সাথে সায়মানের পরিচিতি হয় নি । বাসা থেকে ভার্সিটি আসে , ক্লাস শেষ করেই আবার বাড়ির পথ ধরে ।
এভাবে দু’এক সপ্তাহ চলার পরে ওর একটা গ্রুপ তৈরি হলো । ক্লাস শেষে একসাথে বসে আড্ডা দেয়া হয় । ভার্সিটি বন্ধ থাকলেও একসাথে বের হওয়া হয় । প্রত্যেকের সাথে প্রত্যেকের ঘনিষ্টতা বাড়ছিল প্রতিনিয়ত ।
সায়মানের সাথে আরেকজনের ঘনিষ্টতা বেড়েছিল । ওদের ঘনিষ্টতা সবার চোখে সেভাবে ধরাও পড়ে নি । সায়মানের ডিপার্টমেন্টেরই আরেকজন মেয়ে । নাম তার ঋতূ । “ঋতূ” পরিবর্তনের বৈচিত্র্যের মতোই তার চলনে , বলনে বৈচিত্র্য ।
সবাই মিলে যখন ওরা আড্ডা দেয় তখন ওদের দু’জনের মাঝে কথা হয় না বললেই চলে । কিন্তু এর বাহিরে ওদের অন্তঃরঙ্গতার শেষ নেই ।
ভার্সিটিতে বসন্ত বরণ উৎসব চলছে । পুরো গ্রুপ এক সাথে অডিটোরিয়ামে বসে অনুষ্ঠান শেষ অবধি উপভোগ করলো । এরপর সবাই যার যার মতো ভাগ হয়ে বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা হওয়া শুরু করলো । তখন ঋতূ আর সায়মান এক সাথে বাড়ির পথে হাটা ধরলো । এমন দৃশ্যের জন্য ঢাকার ফুটপাথ বড্ড বেশি বেমানান ।
সায়মান নীরবতা ভাঙতে উদ্যোগ নিলো ,
“ তোর জন্য একটা জিনিস এনেছি । বলতে পারবি কি এনেছি ?”
“হুম , খুব বলতে পারবো । তুই আমার জন্য চুড়ি এনেছিস। ”
“ না , হয় নি । আরেকবার চেষ্টা কর । ”
“ চুড়ি না হয়ে পারেই না । কারণ তুই গতকালকে ফারহানাকে জিজ্ঞেস করেছিলি , আমি সবচেয়ে বেশি কি পছন্দ করি ? আর ও উত্তর দিয়েছিল – চুড়ি । আর তুই আজকে আমার জন্য চুড়ি নিয়ে এসেছিস । ভুল বললাম ?”
“নাহ , ভুল না । ফারহানাকে শায়েস্তা করতে হবে । যাই হোক। বল তো কয়টা এনেছি ?”
“ দুই ডজনের কম আনবি না এইটা নিশ্চিত । ”
“নাহ , এইটা হলো না । ”
ব্যাগ থেকে একটা ছোট প্যাকেট বের করে ঋতূর হাতে দিয়ে সায়মান বললো ,
“ এখানে একটা হলুদ চুড়ি আছে । এর মর্মার্থ বের করা তোর পক্ষে সম্ভব হবে না । এমন অনেক প্যাকেট মানে চুড়ি সামনে পাবি । ”
“ কিছুই বুঝলাম না । একটা চুড়ি কেউ কাউকে দেয় । আর আজকে হাতে এতো হলুদ চুড়ি দেখতে পাচ্ছিস এরপরও হলুদ চুড়ি দিলি ? খাটাস ।”
“ ব্যাপার না । আমারটা আর তোর হাতেরগুলো আলাদা । মানের দিক দিয়ে নয় গুরুত্বর দিকে দিয়ে । আমি যেদিন বলবো সেদিন তুই আমার দেয়া ঐ পর্যন্ত দেয়া সব চুড়ি দুই হাতে পড়ে আসবি । ”
“পাগলামো । ”
“তাই সই । ”
এভাবে সময় হামাগুড়ি দিয়ে এগিয়ে যেতে লাগলো । আর ততোদিনে ২৩ টা চুড়ি সায়মানের হাত হয়ে ঋতূর হাতে গেলো ।
সময় এখন ২৪ নং চুড়ি ঋতূর হাতে দেয়ার ।
সায়মান ঋতূকে কল করলো সকালবেলা ভার্সিটিতে আসার পূর্বেই ,
“কিরে ভার্সিটি আসবি কখন ?”
“এইতো একটু পর রওনা দিবো ।”
“কি পড়ে আসতেছিস ? ”
“কেন?”
“আজকে পহেলা বসন্ত , শাড়ি পড়ে আসিস । ”
“কিন্তু আমার তো হলুদ শাড়ি নেই ।”
“যেভাবে পারিস যোগাড় করে পড়ে আয় । না হয় আমি কিনে নিয়ে আসতেছি ।”
“ ও মা । আচ্ছা , দেখি । আপুর মনে হয় একটা বাড়তি শাড়ি আছে । ”
“তাড়াতাড়ি আয় । আর আমার চুড়িগুলো পড়ে আসতে ভুলিস না । শাড়ির সাথে ম্যাচও করবে ।”
“ ও তাই তো । আচ্ছা এক ঘন্টার মধ্যে আসছি । ”
হলুদ শাড়িতে কখনো ওকে দেখা হয় নি আসল কথা ওকে শাড়িতেই আগে কখনো সায়মানের দেখা হয় নি । তবে সায়মান যেদিন যেদিন চুড়ি পড়ে আসতে বলতো চুড়ির সাথে মানানসই বলে হলুদ জামা পড়ে আসতো । আজকে ঋতূকে বেশ মানিয়েছে ।
ওরা ভার্সিটির অডিটোরিয়ামে বসে বসন্ত উপলক্ষে হওয়া অনুষ্ঠান উপভোগ করলো । অনুষ্ঠান শেষে সবাই যখন বের হয়ে যাওয়ায় অডিটোরিয়াম প্রায় ফাঁকা তখন ঋতূর হাত ধরে সায়মান তাকে ঠিক মাঝখানে নিয়ে এলো ।
ঋতূর সামনে হাঁটু গেড়ে বসলো সায়মান , পাঞ্জাবির পকেট থেকে ২৪ নাম্বার চুড়ি বের করলো । ঋতূর যে হাতে একটি চুড়ি কম ছিল সেই হাতটি নিজের হাতে নিলো ।
এরপর বলতে শুরু করলো ,
“এই একটি দিনের জন্য , এই একটি দিনকে বিশেষ কিছু করার জন্য পরিকল্পনা করেছি সেই আরো ২ বছর আগে । আমার হাতের চুড়িটা ২৪ নাম্বার চুড়ি । তোকে প্রথম চুড়িটা দিয়েছিলাম ২৪ মাস আগে । তখন তুই বলেছিলি ২ ডজন অর্থাৎ ২৪ টা চুড়ি অন্তত পক্ষ আমি তোকে দেবো । হ্যাঁ , তুই ঠিক ছিলি সেই দিন । আজ, এই যে ২৪ নাম্বার চুড়ি । এই ২৪ মাসে “ঋতূ” পরিবর্তন হয়েছে ১২ বার । আমি তোকে সাথে নিয়ে আরো পরিবর্তনের সাক্ষী হতে চাই । আমার সাথে থাকবি ? ”
টলমলে চোখে ঋতূ সায়মানের দিকে তাকিয়ে ছিল ।
ঋতূর যখন মুখ খুললো তখন সে জিজ্ঞেস করলো , “ আমি যদি সেদিন অন্য কোন চুড়ির সংখ্যা বলতাম । ”
“তাহলে ঝামেলায় পড়তাম । ফারহানাকে জিজ্ঞেস করেছিলাম , ও বলেছিল তুই ২ ডজন করে চুড়ি কিনিস । আর এই কথা বলার অনেক সময় পাবি । এইভাবে থাকতে কষ্ট হচ্ছে । বল সাথে থাকবি কিনা ?”
চোখে পানি বহন করা মেয়েদের মুখে হাসি ফুটে উঠলে সেই দৃশ্য পৃথিবীর অন্যান্য সকল সৌন্দর্য্যকে হার মানায় ।
সায়মানের হাতে থেকে চুড়িটি নিয়ে ঋতূ পড়ে নিলো ।

মন্তব্য ১৪ টি রেটিং +৫/-০

মন্তব্য (১৪) মন্তব্য লিখুন

১| ২১ শে এপ্রিল, ২০১৫ সকাল ১১:৩৪

দিশেহারা রাজপুত্র বলেছেন: মিষ্টি প্রেমের গল্পে ভালো লাগা।

২১ শে এপ্রিল, ২০১৫ রাত ১১:০৬

জাবের তুহিন বলেছেন: ধন্যবাদ

২| ২১ শে এপ্রিল, ২০১৫ দুপুর ২:৫৩

লাইলী আরজুমান খানম লায়লা বলেছেন: সুন্দর ও সাবলীল, পড়লো ভীষণ ভাল লাগলো

২১ শে এপ্রিল, ২০১৫ রাত ১১:০৭

জাবের তুহিন বলেছেন: ধন্যবাদ ।

৩| ২১ শে এপ্রিল, ২০১৫ বিকাল ৪:০৭

শতদ্রু একটি নদী... বলেছেন:
ঝরঝরে গল্প। ভাল্লাগছে। :)

২১ শে এপ্রিল, ২০১৫ রাত ১১:০৮

জাবের তুহিন বলেছেন: ধন্যবাদ

৪| ২১ শে এপ্রিল, ২০১৫ রাত ৯:২৮

ভাসমানঘুড়ি বলেছেন: ভাল গল্প।

২১ শে এপ্রিল, ২০১৫ রাত ১১:০৮

জাবের তুহিন বলেছেন: ধন্যবাদ

৫| ২১ শে এপ্রিল, ২০১৫ রাত ১১:১৩

শায়মা বলেছেন: উফ চুড়ি প্রেম ভালোবাসার সাথে এত ২৩ ,২৪ অংক মিলাতে মিলাতে তো মাথা গোলমাল হয়ে গেলো ভাইয়া!:(



কিন্তু ঋতূ তো মনে হচ্ছে ইপ্সিমনির ছোট বোন!!!!:)

২২ শে এপ্রিল, ২০১৫ রাত ১২:৪৯

জাবের তুহিন বলেছেন: ভালোবাসার অংক একটু জটিলই কিনা ;)

৬| ২২ শে এপ্রিল, ২০১৫ সকাল ৮:৫৭

বঙ্গভূমির রঙ্গমেলায় বলেছেন:

সাবলীল লেখা+++

ভাল লাগল। :)

২২ শে এপ্রিল, ২০১৫ সকাল ১০:৫১

জাবের তুহিন বলেছেন: ধন্যবাদ :)

৭| ২৪ শে এপ্রিল, ২০১৫ দুপুর ১২:২০

কলমের কালি শেষ বলেছেন: মিঠা মিঠা গল্প ! ;)

২৪ শে এপ্রিল, ২০১৫ দুপুর ২:২২

জাবের তুহিন বলেছেন: ডায়াবেটিকসের সমস্যা থাকলে আমার দোষ নাই ;)

ধন্যবাদ :)

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.