নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

জাবের তুহিন

আছি । আমি আছি ।

জাবের তুহিন › বিস্তারিত পোস্টঃ

ডানা [ গল্প ]

২৫ শে আগস্ট, ২০১৫ রাত ১২:০৫

১-
দরজার ওপাশ থেকে ফুঁপিয়ে কান্নার শব্দ আসছিল । চিন্তিত মুখে তন্দ্রার মা দরজায় নক করলো । সাথে সাথে কান্না বন্ধ , আর দরজা খুলতে কারো দৌড়ে আসার শব্দ পাওয়া গেলো । তন্দ্রা দরজা খুললো ।
মেয়ের চোখ লাল দেখে তৎক্ষণাৎ জিজ্ঞেস করলেন ,
“ কি হয়েছে , মা ? কাঁদছিস কেন ?”
“ আরে মা , আমি কাঁদছিলাম না তো ওভাবে । মুভি দেখছিলাম । মুভির নায়িকা নায়কের জন্য কষ্টে কাঁদছিল ।”
“তাহলে তোর চোখা লাল কেন ?”
“ নায়িকার কষ্ট দেখে আমারো চোখে পানি এসে গেছে ।”
উত্তরে মা সন্তুষ্ট হয়েছেন বোঝা গেলো । তিনি তার মেয়েকে চিনেন ছোট থাকতেও কষ্টের দৃশ্য দেখলে কেঁদে ভাসিয়ে ফেলতো । আগে একসাথেই মুভি দেখা হতো এখন আর হয়ে ওঠে না ।
মা চলে গেলে তন্দ্রা আবার নিজের ঘরের দরজা লাগিয়ে রাখে । ও কোন মুভি দেখছিল না , কান্নার শব্দটা ওরই ছিল । কষ্টগুলো যতোই চেপে রাখার চেষ্টা করে না কেন এক সময় সব বাধা ঠেলে চোখের সরুপথ খুঁজে ঠিকই বাহিরে চলে আসে । তাতে একটু হলেও কষ্ট কমে । কিছুদিনে সুখ মেলে । এই সুখটা কষ্ট কমার সুখ , আনন্দের কারণে আসা সুখ নয় । তবু সুখ তো , তাতেই দু’দন্ড শান্তি ।
২-
আগে মা-বাবার সাথেই রাতে ঘুমতো । মাকে জড়িয়ে না ধরলে তন্দ্রার ঘুম আসতো না । বাব-মা এর এক মেয়ে তন্দ্রা সুতরাং মায়ের নৈকট্যের জন্য কারো সাথে যুদ্ধে নামতে হয় নি । কিন্তু হঠাৎ করে কি যেন হলো – ওর বয়স তখন ১০ বছরের মতো হবে । নিজের জন্য আলাদা রুম দাবী করে বসলো সাথে শর্ত জুড়ে দিলো – ও রুমে কেউ ঢুকতে পারবে না । ও নিজের রুম নিজের মতো করে রাখবে , ঐ রুমে প্রবেশের অধিকার ও কাউকে দিতে রাজী নয় । ১০ বছরের মেয়ের জিদ করেছে সত্য কিন্তু সব চাওয়া তো আর পূরণ করা সম্ভব না । এজন্য নয় যে তন্দ্রার বাসা ছোট । তার বাবা বড় ব্যবসায়ী । বড় বাসায় তারা থাকে বেশিরভাগ রুমই ফাঁকা পড়ে থাকে । কিন্তু সমস্যাটা হলো মেয়েকে একা থাকতে দেয়া সাথে অদ্ভূত শর্তটি যা মেনে নেয়া বেশিরভাগ বাবা-মায়ের পক্ষেই সম্ভব না । কিন্তু তন্দ্রার জিদ আর সব মেয়ের জিদ যে এক নয় । টয়লেটের দরজা বন্ধ করে ভিতরে বসে আছে যতক্ষণ পর্যন্ত না ওকে ওর চাওয়া অনুযায়ী রুম দেয়া হবে ততক্ষণ পর্যন্ত ও বের হবে না ।
দরজা ভেঙ্গে ওকে বের করে আনা হলেও ওর মুখে কিছু দেয়া সম্ভব হয় নি , পানিটি পর্যন্ত না । পরে এক রকম বাধ্য হয়েই মেয়ের জিদের কাছে হার মানতে হয় বাব-মা’র ।
৩ –
বাস্তবতার চেয়ে বড় শিক্ষক আর কেউ নয় । বাস্তবতা শিখতে সাহায্য করে সবচেয়ে কঠিন সত্যগুলো । তন্দ্রার পরিবর্তনের পিছনেও বাস্তবতা দায়ী । একই সাথে কতগুলো চরিত্রে যে অভিনয় করে বলা মুশকিল ।
একটি প্রাইভেট ভার্সিটিতে পড়ছে এখন । ওর পড়ালেখার মূল উদ্দেশ্য – “আমাকে জানতে হবে” । যার জন্য ও অনেক জানলেও ওর গ্রেড শীটে তার প্রতিফলন পাওয়া যায় না । ওর জ্ঞান দিয়ে শিক্ষককে খুশি করে নাম্বার নেয়ার ক্ষেত্রে ও নারাজ ।
বাসায় একরকম তন্দ্রাকে দেখতে পাওয়া যায় , বন্ধুদের সাথে আরেকরকম । অনেকটাই বিপরীত । যার জন্য দু জায়গার মানুষের মধ্যেও ও দূরত্ব রেখেছে । ওর বাসার কেউ ওর কোন বন্ধু-বান্ধবকে চিনে না ওর বন্ধু-বান্ধবও ওর বাসায় কখনো আসে নি , ওর পরিবার সম্পর্কে তেমন কিছু জানেও না ।
৪-
বেশ সকালেই ঘুম থেকে ওঠার অভ্যেস তন্দ্রার । সকালে উঠে ওর প্রথম কাজ বারান্দায় মায়ের লাগানো ফুল গাছগুলো উঁকি মেরে দেখা । ফুলের সৌন্দ্যর্য্য ওকে আকর্ষণ করে না না করে ফুলের ঘ্রাণ তবুও উঁকি মারার পিছনে মূল কারণ কোন ফুল ফুটলে মাকে ঘুম থেকে জাগিইয়ে তোলে সেই ফুল দেখানো । ফুল ফোটার খবর শোনার পর মায়ের অভিব্যক্তির পরিবর্তন ওকে খুশি করে । কারো খুশির জন্য এতটুকু অভিনয়ই না হয় করলো ও ।
আজ সকালে উঠেও একই কাজ করলো । আজ ফুল ফুটেছে , অপরাজিতা ফুল । এই একটা ফুলের প্রতিই ও একটু দূর্বল । অপরাজিতার ক্ষণস্থায়ী জীবনই হয়তো এর কারণ । দৌড়ে মাকে ঘুম থেকে তুলতে যাওয়ার সময় ওর বাবার সাথে দেখা । সাধারনত মেয়েদের সাথে বাবাদের সম্পর্ক ভালো থাকে কিন্তু ওর ক্ষেত্রে ভিন্ন । ওর বাবা ওর সান্নিধ্য চাইলেও তন্দ্রার কাছ থেকে আর সাড়া পায় না পরে নিজেই সরে যায় ।
বাবাকে দেখেই চুপসে গেলো একেবারে । বাবা এতো সকালে সাধারণত ঘুম থেকে উঠে না । নিজের অফিস সুতরাং দেরি করে গেলেও তাকে কিছু জিজ্ঞেস করার লোক নেই ।
তন্দ্রার বাবা গোলাম রাব্বানী তন্রাকে জিজ্ঞেস করলেন –
“ এভাবে দৌড়ে কোথায় যাচ্ছিলে ?”
“ মা’র কাছে । ”
“ কোন সমস্যা ?”
“ নাহ ।” চোখ মাটিতে রেখেই বাবার সাথে কথা চালিয়ে যাচ্ছিল ।
গোলাম রাব্বানী সাহেবও আর বেশি ঘাটলেন না । মেয়ের সাথে এভাবে কথা চালিয়ে যাওয়ার মানে হয় না । মেয়েকে “তুই” করে না ডাকলে নৈকট্য কিভাবে আসবে ? মেয়েও সম্বোধন করে “আপনি” বলে । অর্থের কষ্ট না থাকলেও এই ব্যাপারটা খুব পীড়া দেয় তাকে । একটা মাত্র মেয়ে , এক সময় বিয়ে হয়ে দূরে সরে যাবে । যতদিন আছে ততটূকুও যদি আপন করে না পাই । এসব কথা চিন্তা করতে করতে দীর্ঘ এক নি;শ্বাস ছাড়লেন ।
মা’কে ঘুম থেকে ডেকে তুলে টেনে বারান্দায় নিয়ে এলো তন্দ্রা । ফুল দেখিয়ে মায়ের হাসি মুখ দেখে তবেই মাকে ছাড়লো ।
৯ টায় ভার্সিটিতে ক্লাস । ৮ টার দিকেই বাসা থেকে বের হয়ে গেলো । আরেক বান্ধবীর সাথে একসাথে রিক্সায় যায় । বাবার গাড়ি থাকলেও সে গাড়িতে চলাচলে সাচ্ছন্দবোধ করে না । এটাও জিদ করে আদায় করা অধিকার ওর ।
এক মেয়ে তাকে এভাবে ছাড়তে রাজী নয় কিছুতেই তার বাবা-মা । তাই ও বাহিরে গেলে ওকে চোখে চোখে রাখার জন্য একজন লোক ঠিক করা আছে । যার দায়িত্ব হলো ওর চোখে ধরা না পড়ে ওকে সবসময় খেয়াল করা । ও কি করলো সেটার দিকে খেয়াল না দিয়ে বরং ওর সাথে কে কি করলো সেই দিকে বেশি খেয়াল রাখা ।

৫ –
স্নেহা বাসার সামনে তন্দ্রার জন্য অপেক্ষা করছিল । তন্দ্রা আসতেই রিক্সায় উঠে গেলো ।
অকস্মাৎ স্নেহা ওকে জিজ্ঞেস করে বসলো -
“ কিরে আজকের কুইজের প্রিপারেশন কেমন ?”
“কিসের কুইজ ?”
“ আরে জানিস না ? ইংরেজি কোর্সের কুইজ আছে আজকে ।”
“ শৈল কালকে বলেছিল আমি মনে করেছি ফাজলামো করছে । এর আগেও দু’বার আমাকে বোকা বানিয়েছে ।”
“ তো আমাকে জিজ্ঞেস করতি । এখন কি করবি? যদিও তোর ইংলিশের অবস্থা ভালো তোর ওতো চিন্তা নেই । আমার প্রিপারেশন নিয়েও খুব লাভ হয় না।”
“ তবুও মানসিকভাবে প্রস্তুত থাকার একটা ব্যাপার আছে না ।”
“ যাক গে । নতুন কিছু এঁকেছিস ?”
“ নাহ । ফিল পাচ্ছি না রে ।”
“ তা ফিলের জন্য কি করতে হবে ?”
“ প্রেম করতে হবে বুঝলি । প্রেম না করা পর্যন্ত মনে হয় না আর কোন ছবি আঁকতে পারবো ।”
এরপর স্নেহা তার মোবাইল ফোন নিয়ে ব্যস্ত হয়ে গেলো । কাজ ছাড়া মোবাইল ফোন গুঁতোগুঁতি করা তন্দ্রার পছন্দ না । ও রাস্তার মানুষ দেখে , রিক্সাওয়ালাদের মুখের ভাব দেখে , ট্রাফিক পুলিশের ঘামে সিক্ত বিরক্তিতে ভরা মুখ দেখে ।
কিছুক্ষণ আগে যে মিথ্যে কথা বললো সেই কথা মনে আসলো । ওর শখের মধ্যে মানুষের সাথে অভিনয়ের পরপর আছে ছবি আঁকা । তুলির আঁচড়ে মনের কথা বলা , সাদা-কালো জীবনে একটু রঙের ছোঁয়া আর কি । ও প্রতিদিন ছবি আঁকে । একদিন বাদ দেয় না । ওর ছবি আঁকার সাথে প্রেমের কোন সম্পর্ক নেই । “প্রেম” হাস্যকর শব্দ । কোন ছেলের জন্যও কখনো ওর সেই অনুভূতি কাজ করে নি । প্রত্যেকজটা মেয়ের সাথে ও যেভাবে কথা বলে প্রত্যেকটা ছেলের সাথেও একইভাবে কথা বলে । আমরা প্রত্যেকেই তো মানুষ । মানুষের মতো আচরণ করাই আমাদের দায়িত্ব । বিয়ে – প্রেম কোনটা নিয়েই ওর চিন্তে নেই । ওর কল্পনার দুনিয়ায় এর দু’টোর কোন অস্তিত্ব নেই ।
এসব চিন্তে করতে করতেই ভার্সিটি পৌঁছে গেলো ওরা । রিক্সার ভাড়া চুকিয়ে ক্যাফেতে গিয়ে বসলো ওরা , হাতে আরো ২০ মিনিট আছে । স্নেহা আগের মতোই মোবাইল নিয়ে ব্যস্ত । তন্দ্রা এমন সময়গুলোতে চারপাশে খেয়াল করে – কে কি করছে , কি নিয়ে আলোচনা করছে । মানুষের কাজকর্ম খেয়াল করায় সে অন্য মাত্রার আনন্দ পায় । ভিত্তিহীন বিষয়বস্তু নিয়ে তর্ক , ছেলেদের আলোচনার মূল বিষয় সেই আদিম যুগের মানুষের মতোই । ছেলেদের চোখের চাহনি , মেয়দের চুলে হাত বুলানোর ভাব – এসবই খেয়াল করে ও । শিল্পী মানুষ –তুলির আঁচড় দিতে এগুলো বোধ হয় লাগে ।
ক্লাসের সময় হতেই ক্লাসে গেলো । দুটো ক্লাস শেষে , কুইজ দিলো । আঁধারে ঢিল মেরে আর কতদিন চলা যায় । আজ পরীক্ষাটা মন মতোন হলো না । মন খারাপ করে আবার ক্যাফেতে এসে বসে রইলো । এবার মাথা টেবিলে মাথা নামিয়ে বসে ছিল ।
তখন ওর ভার্সিটির বেশ কিছু বন্ধুর উদয় ঘটলো । কেক বেলুন নিয়ে এসে হুলুস্থূল অবস্থা । আজকে তন্দ্রার জন্মদিন ।
তন্দ্রা এইরকম কিছু আশা করেছিল তাই অবাক হয় নি । কিন্তু অবাক হওয়ার অভিনয় করে গেলো , বন্ধুদের খুশি করতে । কেক কাটা হলো , ক্রিম মাখামাখি , গান গাওয়া কিছুই বাদ যায় নি । অনেক ছবিও তোলা হলো , যদিও তন্দ্রা ছবি তোলা থেকে দূরত্ব বজায় রাখে । আজকে ওর না কেউ শুনলো না আর ও-ও বারণ করলো না ।
৬ –
বাড়ি ফিরতে ফিরতে সন্ধ্যে হয়ে গেলো । বাসা থেকে দু’বার ফোন এসেছে ধরতে পারে নি । তাই অনেকটা তাড়াহুড়ো করেই বাড়ি ফেরা হলো ।
বাড়িতেই ওর জন্য চমক অপেক্ষা করছিল সেটাও ওর জানার বাহিরে ছিল না । স্বাভাবিকভাবে বাসায় ঢুকার সময় কান খাড়া করে রেখেছিল বেলুনের শব্দ শুনলে চিৎকার করে উঠে অবাক হওয়ার অভিনয় করতে হবে আবার তবে এবার একটু ভিন্নভাবে । বেলুন ফাটার শব্দ শোনা গেলো । প্ল্যান মোতাবেক কাজ করলো , সবাই জন্মদিন শুভেচ্ছে জানাচ্ছে গানের সুরে । সকল আত্মীয়-স্বজন এসেছে , বাড়ি লোকে লোকারণ্য । আংকেল – আন্টিদের হাসির শব্দে পুরো বাড়ি সরগরম ।
তন্দ্রার বয়সী তেমন কেউ নেই সেই পরিচিত মুখগুলোর ভীড়ে । ওর আম্মু –আন্টিদের আলোচনার বিষয় শুনে ভিতরে প্রুচণ্ড হাসছিল আবার কষ্টও হচ্ছিল । ফিজিক্সের অনার্স করা একজন মহিলা কিভাবে নিজের সব স্বপ্ন , অর্জিত জ্ঞান বিসর্জন দিয়ে এই ধরনের নিম্নশ্রেণীর আলোচনা করার রুচি পান । সময় , পারিপার্শিক পরিবেশ মানুষকে কতটা পরিবর্তন করে ফেলে ।
এক আপুর সাথে দেখা হতেই হাত টেনে এক রুমে নিয়ে ঢূকলেন ।
“ তা তোর খবর কি ?”
“ ভালোই আপু । তা তোমার কি অবস্থা ? বরের সাথে দিনকাল কেমন যাচ্ছে ?”
“ আমারো ভালোই যাচ্ছে । তুই কি আমার মুরুব্বি যে আমার বরের সাথে আমার সম্পর্কে কেমন যাচ্ছে জানতে চাচ্ছিস ।“
“ তা না কিন্তু কানে তো কথা আসে , আপু ।” বলেই হাতে আলতো করে টিপ দিলো ।
চোখ পাকিয়ে তাকালো ওর দিকে
“ ঐ বেশি পেঁকে গেছিস । তা যার জন্য ডাকলাম তোর কেউ হয়েছে নাকি রে ?”
“ হবে না আবার আমি কি সেই ছোট্ট নাকি । কত বন্ধু আমার ।”
“ তা আসল বন্ধু পেয়েছিস নাকি ।” বলার সাথে সাথে চোখ টিপ দিলো ।
“ হুম পেয়েছি বটে ।”
“ তা সে কি করে?”
“ আরে তুমি আমার বন্ধু নাকি যে আমি তোমাকে সব গোপন কথা বলে দেবো ? বাহ ।”
“ তা তুই ভালো কতাহ শিখেছিস রে? আমার কথা দিয়েই আমাকে ঘায়েল করিস ।”
“ তা বড়দের কাছ থেকে কিছু শিখতে তো হবে নাকি”
সেই আপু আর কথা চালিয়ে যাওয়ার মতো অবস্থা পেলো না । কেটকেটে রঙের শাড়ির আঁচল ঠিক করতে করতে রুম থেকে বেরিয়ে গেলেন ।
আগে এই আপু অর্থাৎ তামান্ন আপুর সাথে ভালোই খাতির ছিল । প্রেম অতঃপর বিয়ে সব খেলো । ডাক্তারি পড়েও সে লাইনে না গিয়ে এখন জামাইয়ের সাথে ফোনে কথা বলতেই তার আগ্রহ বেশি । মানুষ কত সহজেই না পরিবর্তিত হয় ।
৭ –
রাতের খাবার পর্ব শেষ হতেই একে একে সবাই বিদায় নিলো ।
ভার্সিটি থেকে এসে নিজের রুমে আর ঢোকা হয় নি । সব সেরে নিজের রুমে ঢুকে হাফ ছেড়ে যেন বাঁচলো ও । আর অভিনয় করতে হবে না আজকের মতো । রুমের একপাশের দেয়ালের দিকে তাকালো । যে বছর থেকে ও এই রুম পেয়েছে সেই বছরের জন্মদিন থেকে ও দেয়ালে একটা করে ছবি আঁকে কালো মমের রঙ দিয়ে । একটা বাক্স , বাক্সে একটা মেয়ে । প্রতি জন্মদিনে বাক্সের আকার একই থাকছে কিন্তু মেয়েটা বড় হচ্ছে । যেন ওর জীবনের কথা বলে প্রত্যেকটি ছবি ।
হঠাৎ করে কানে একটা শব্দ এসে বাঁধলো । ডানা ঝাপটানোর শব্দ । পাশের বিল্ডিং এর ছাদে কবুতর পালে । কবুতর ডানা ঝাপ্টাচ্ছে খাঁচায় । কবুতরগুলোকে তো সকালে ছেড়ে দেয় তখন ওরা উড়ে যায় না কেন ? আবার কেন খাঁচায় বন্দী হবে জেনেও ফিরে আসে বিকেল বেলা ? রাতে খাঁচায় পাখা ঝাপটানো , কেন ?
পরের উপর নির্ভরশীলতাই এর মূল কারণ । খাবারের , বাসস্থানের নিশ্চয়তার টানেই ওরা বারবার ফিরে আসে ঠিক আমাদের মতোন । তন্দ্রা ভাবে , আমরা না মানুষ সৃষ্টির সেরা জীব তবে আমাদের আর কবুতরের বেঁচে থাকার ধরন একই হবে কেন ?
এসব ভাবতে ভাবতে মনটা উদাস হয়ে যায় । ছবি আঁকাটাও পিছিয়ে যায় । কিন্তু আজকে ছবিতে নতুন কিছু যোগ হবার অপেক্ষায় । আজও বাক্স আঁকলো , বাক্সের ভিতরে ওর বয়সী একটি মেয়ে গুটিসুটি হয়ে বসে আছে । কিন্তু আজকের পার্থক্যটা হলো মেয়েটার পিঠ থেকে ডানা বের হচ্ছে । ছবিতেই কি সুন্দর ফুটিয়ে তুলেছে ডানাটা বড় হচ্ছে- হবে এবং সেই বাক্সের প্রাচীর ভেদ করে বের হয়ে আসবে ।

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ২৫ শে আগস্ট, ২০১৫ সকাল ১১:৪৫

ৎৎৎঘূৎৎ বলেছেন: ভাল লাগল।

২৬ শে আগস্ট, ২০১৫ রাত ১২:৪৮

জাবের তুহিন বলেছেন: ধন্যবাদ :)

২| ১৮ ই অক্টোবর, ২০১৫ সন্ধ্যা ৭:২৮

আরণ্যক রাখাল বলেছেন: চমৎকার গল্প| একদম হিপ্নোটাইসড হয়ে ছিলাম

২০ শে অক্টোবর, ২০১৫ রাত ৮:৩৬

জাবের তুহিন বলেছেন: ধন্যবাদ :)

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.