নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

জাবের তুহিন

আছি । আমি আছি ।

জাবের তুহিন › বিস্তারিত পোস্টঃ

ফানুশ [গল্প]

২৪ শে অক্টোবর, ২০১৫ সকাল ১১:৩১

১ -
" কিরে বুবু স্কুলে যাবি না ?"
নিজের রুমের বিছানায় মরার মতো ঘুমাচ্ছিল অন্তরা । তাকে ঘুম থেকে ডেকে তুলতে মরিয়া তার ছোট ভাই আকিব । ওরা দুই জনে একই স্কুলে পড়ে । বোনের সাথে প্রতিদিন সকালে স্কুলে যায় ও । বোনই প্রতিদিন সকালে আকিবকে ঘুম থেকে উঠিয়ে তৈরি করে দিয়ে এরপর নিজে তৈরি হয়ে এক সাথে স্কুলে যায় । আজকে এর ব্যতিক্রম হলো । উলটো আকিব অন্তরাকে ডেকে তোলার জন্য এসেছে ।
আজকে ওদের মায়ের প্রথম মৃত্যুবার্ষিকী । কিভাবে যে এক বছর কেটে গেলো তা বুঝা বেশ কষ্টকর । রাতে মায়ের কথা খুব মনে পড়ছিল অন্তরার । মায়ের সাথে কাটানো সময়গুলো হঠাৎ যেন বেশ জীবন্ত হয়ে চোখের সামনে ভাসছিল । আজ নিজের চুলে নিজের তেল দিয়ে বেণী করতে হয় । আজ আর পুতুলের জামা বানিয়ে সাহায্য করার দুটি কোমল হাত , মুখে মৃদ্যু হাসি থাকা মানুষটি আর নেই । অন্তরাকে বাসায় মায়ের আসনে বসতে হলো , অল্প বয়সেই হতে হলো পরিণত । আকিবকে দেখাশোনা করা , বাসার সকল কিছু দেখে শুনে রাখা , রান্না বান্না , হিসেব নিকেষ আরও কত কি । এইসব চিন্তা রাতে ওর উপর ভর করলো । অনেক রাত জেগে ছিল , ঘুম আসে নি । যার জন্যই আজ সকালে এই ব্যতিক্রম । ওর বাবা নকিব সাহেব অফিস চলে গেছেন পাউরুটি আর কলা খেয়ে , মেয়েকে ডেকে দেয়ার সাহস হয় নি । মেয়েকে তিনি তার স্ত্রীর মতোই ভয় পান । মায়ের কার্বন কপি বলা চলে ।

ওর বাবা সহজ সরল মানুষ , নিজের মেয়ের উপর ভরসা করেই সব মেয়ের উপরে ছেড়ে দিয়েছেন । টাকা আগে স্ত্রীর হাতে তুলে দিতেন এখন মেয়ের হাতে তুলে দেন , মেয়ের কাছেই আলমারির চাবি থাকে ।
আকিব এখন ক্লাস থ্রিতে পড়ে আর অন্তরা নাইনে পড়ছে । আকিব ফোরে উঠলেই ওর আর ওর বোনের স্কুলের সময়সূচি পরিবর্তন হয়ে যাবে । ওর বোন সকালেই ক্লাস করবে আগের মতোই কিন্তু ওকে দুপুরে ক্লাস করতে হবে আর একসাথে স্কুলে যাওয়া হবে না । এই ভেবেই এখন বেশিরভাগ সময় ওর মন খারাপ থাকে । তাই যতদিন বোনের সাথে একসাথে স্কুলে যাওয়া যায় এর একটা দিনও আকিব স্কুল মিস করতে চায় না । তাই বোনকে ঘুম থেকে উঠিয়ে স্কুলে নিয়ে যেতে ও এতো মরিয়া । ওর বয়স আর তারিখ ভুলোমন বলেই হয়তো আজকের দিনের গভীরতা ওকে স্পর্শ করে নি ।
অন্তরার ঘুম ভাঙ্গতে শুরু করেছে । চোখ অল্প একটু খুলে নিজের ভাইকে দেখে আবার চোখ বুজে বললো ," আজকে আর স্কুলে যাবো না রে , শরীরটা ভালো নেই । আজকে সারাদিন বাসায় থাকবো ।"
"কেন , কি হয়েছে বুবু ?"
" তোর বুঝতে হবে না । স্কুলের জামা ছেড়ে শুয়ে থাক । নতুবা কার্টুন দেখ।"
বেচারার মনটাই খারাপ হয়ে গেলো । অন্যদিন হলে হয়তো খুশিতে লাফই দিতো হয়তো । কার্টুন দেখার সুযোগ মেলে বোনের জন্য । টিভি বেশি দেখলে চোখ নষ্ট হবে বলে বকা দেয় সবসময় । কিন্তু তার বোনের সাথে স্কুলে যেতে ও এইবার বেশি ইচ্ছুক । একসাথে যাওয়ার সময় ওর বোন ওর হাত ধরে রাখে সবসময় । স্কুলে কি কি করা যাবে না সেই সম্পর্কে লেকচার দেয় । তখন ওর বুবুর চেহারার দিকে তাকিয়ে থাকতেই ওর ভালো লাগে । আম্মু আম্মু একটা ভাব আছে । আবার স্কুল শেষে আসার সময় একই ভাবে হাত ধরে নিয়ে আসে আর কোনদিন আইস্ক্রিম কোনদিন আঁচার, ঝাল মুড়ি কিনে খাওয়ায় । এইগুলো মনে করেই পরের বছরের জন্য মনটা আবার খারাপ হয়ে যায় ওর।

২ -
ওরা যে বাসায় থাকে ঐ বাসায় আরো ১১ টা পরিবার থাকে বাড়ির মালিক সহ । তারা ছাড়া প্রত্যেকের অবস্থাই অন্তরাদের মতো । এই অবস্থা বলতে আর্থিক অবস্থার দিক থেকে তারা প্রত্যেকেই মধ্যবিত্ত পরিবারের আওতাধীন । হয়তো সেকারণেই কিংবা অন্য কারণে তাদের মধ্যে একে অপরকে সাহায্য করার প্রবণতাটা বড্ড বেশি । রক্তের সম্পর্ক নেই , তবু একের জন্য অপরের যে ভালোবাসা তা অতুলনীয় । অন্তরাদের মা নেই কিংবা আত্মীয়-স্বজনের অভাব পূরণ করতে তারা সর্বদাই চেষ্টা করে । যদিও সকল খালি আসন পূরণের নয় তা যতোই উপযুক্ত মানুষ তাতে আস্বীন হওয়ার চেষ্টা করুক । বাড়ির বিভিন্ন অনুষ্ঠানে ওদের দাওয়াত করে , মাঝেমাঝেই বিভিন্ন বাসা থেকে খাবার রান্না করে পাঠায় , গল্প করতে বাসায় ডেকে নিয়ে যায় । যদিও অন্তরা আর আকিবের বয়সী কেউই নেই পুরো বাড়িতে । হয় অন্তরার ছোট নাহলে বেশ বড় ।
নকিব সাহেবও বেশ নিশ্চিন্তেই থাকেন । বেশ ভালোভাবেই চলছে দিনকাল , ধাক্কা সামলে উঠতে পেরেছেন সহজেই । এতো সহজে পারবেন আশা করেন নি । মেয়ের কল্যাণে তা অনেকটাই সহজ হয়ে গিয়েছে । অফিস করেন , এরপর বাসায় শুয়ে বসে পড়ে সময় কেটে যায় , এরপর আবার নতুন দিন ।
৩ -
নিজের বয়সী মেয়েদের মতো অন্তরারও ইচ্ছে করে বিকেলে সেজেগুজে বান্ধবীদের সাথে বের হতে, কোন ফুচকার দোকানে দাঁড়িয়ে ঝাল বেশি দেয়া মিষ্টি টকের ফুচকা খেতে কিন্তু ওর পক্ষে এগুলো সম্ভব না । যদিও ও বের হয় মাঝেসাঝে তবে ছোট ভাইকে সাথে করে । মাঝে মাঝে নকিব সাহেবও ওদের নিয়ে বের হোন। ফেরার পথে কোন রেস্তোরায় খেয়ে ফিরে আসেন বাসায় ।
সেদিন শুক্রবার ছিল । এলাকার মাঠে মেলা হচ্ছিল । ওদের বাবা অফিসের কাজে ঢাকার বাহিরে ছিলেন । তাই মেলায় যেতে হলে আকিবকে অন্তরারই নিয়ে যেতে হবে । মেলা হলেই যাওয়ার বায়না ধরে প্রতিবার এইবারও তাও ব্যতিক্রম নয় । আকিবকে শর্ত দেয়া হলো সকাল থেকে যদি সে মন দিয়ে পড়ে তবেই বিকেলে মেলায় ঘুরতে নিয়ে যাবে ওকে । আকিব তো শুনে মহাখুশি । পুরোদমে পড়তে থাকলো । আর ঐদিকে অন্তরা বাড়ির কাজ করে নিজে পড়তে বসে গেলো ।
বিকেল হতেই অন্যদিনের মতো আজ আকিব বাহিরে খেলতে না গিয়ে জামা কাপড় পড়ে একেবারে তৈরি হয়ে অন্তরার রুমের সামনে দাঁড়িয়ে থাকলো । অন্তরাও রেডি ছিল ।
ভাই-বোন মিলে বেশ আনন্দেই মেলার উদ্দেশ্যে রওনা দিলো । মেলার ঢোকার পথেই ওরা দেখতে পেলো একজন টেবিলে বিভিন্ন ধরনের পসরা নিয়ে বসে আছে আর ম্যাজিক দেখাচ্ছে সেসব জিনিস দিয়ে । আবার টাকার বিনিময় কিছুকিছু ম্যাজিকের পণ্য বিক্রিও করছে সাথে শিখিয়েও দিচ্ছে । কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে ম্যাজিক দেখলো ওরা । একটু দূরেই ভ্যানে করে চিংড়ির মাথা ভেজে বিক্রি করছিল । আকিব খাওয়ার বায়না ধরলো । অন্তরা ওকে বললো পুরো মেলা ঘুরে যাওয়ার সময় কিনে নিবে । আকিব রাজী হলো ।
পুরো মেলা ঘুরে শেষ করতে করতে সন্ধ্যা হয়ে গেলো । তখন চিংড়ির মাথা ভাজা কিনে বাড়ী ফেরার পালা । ফিরে আসার সময় ওরা দেখলো আতশবাজি পোড়ানো হচ্ছে । আকাশকে কালো ক্যানভাস বানিয়ে নান রঙের যেন এক উদ্দাম ছোটাছোটি সেখানে । অন্তরা অবাক হয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে ছিল । এইসব রঙ্গে দেখে ওর যেন চোখে ধাঁধাঁ লেগে গেছে । অন্ধকার ঘরের কোণায় বসে থাকা মেয়ের গাঁয়ে যেন হঠাৎ করেই দরজার ফাঁক গলে সরু আলো এসে ডাক দিয়ে গেলো - " বাহিরে এসো , বাহিরে এসো , আমার হাত ধরেই এসো " । এই রঙের ঘোর কাটতে না কাটতেই । একদল আকাশে রঙিন ফানুশ উড়ালো । অন্ধকারকেও এতো রঙিন করে সাজানো যায় তা ও আগে কখনো ভাবে নি । ও মুগ্ধ , কিংবা তার থেকেও বেশি কিছু । আকিবও এইসব উপভোগ করছিল কিন্তু ওর কাছে তার থেকেও বেশি উপভোগ্য ছিল ওর বোনের অবাক হওয়া উজ্জ্বল মুখ । বুবুকে কখনো এভাবে দেখে নি এর আগে । ইশ , বুবুর মুখে যদি সবসময় এমন চাঞ্চল্য খেলা করতো ।
বাড়ি ফিরলো ওরা কিন্তু ওদের মনে সেই রঙিন ছোঁয়া কি এক ছবি যেন এঁকে দিয়ে গেছে । আকিবের খেয়াল জুড়ে বুবুর সেই মুখ যার চোখে একইসাথে বিস্ময় , মুগ্ধতা , ঠোঁটেও এক আনন্দের রহস্য । কোন শিল্পী রঙের তুলিতে তা ফুটিয়ে তুলতে পারলে ভালো হতো কিন্তু সেই ছবি সৃষ্টিকর্তা মানুষেতে নিজে এঁকে দিয়েছেন অন্য কারো আর ক্ষমতা নেই । ক্যামেরায় বন্দী হবে শুধু এক মেয়ের ছবি কিন্তু ঐ মেয়ের বিস্মিত নয়ন অধরাই রয়ে যাবে তাতে ।
আর অন্তরার ভিতরে সব যেন গুলিয়ে আসছিল । সাধারণ জীবনের প্রতি একটা টান অনুভব করতে আরম্ভ করলো। সব ভালোবেসেই , সব আগের মতো রেখেই তো সে নিজেকে নিজে মেলে ধরতে পারে , দৌড়াতে পারে তার কিছু স্বপ্নের পিছনে । ধরা দিবে নাকি দিবে না তা পরের ব্যাপার কিন্তু ধরতে যাওয়ার পেছনেও তো আনন্দ আছে । মাঠে প্রজাপতির ধরা সবসময় মিলে না কিন্তু সেই রঙিন উড়ন্ত জিনিসটির প্রতি যে আকর্ষণের বলে ছোঁটা তাই বা কম কি । তাই তো আনন্দ ।
৪ -
প্রতি বছর বুবুর জন্মদিনে আকিব নতুন কিছু করে বুবুকে চমকে দিতে চায় এবং দেয়ও। ঈদের সালামি জমিয়ে রাখে সেই চমক দেয়ার জন্য । বিভিন্ন সময় আত্মীয় স্বজনও হাতে কিছু টাকা দিয়ে যায় । ওসব ও জমিয়ে রাখে । বুবুর জন্মদিনের বেশ আগে থেকেই ও চিন্তা করতে থাকে কি করা যায় । ও বড় হলে আরেকটু ভালো হতো কারো সাহায্য নেয়া লাগতো না হাতে টাকাও একটু বেশি থাকতো । কিন্তু ও বড় হলে যে বুবুও বড় হয়ে যাবে , চমকে দেয়ার জন্য পাশের রুম থেকে বুবুকে ডেকে বলতে পারবে না " শুভ জন্মদিন " তা ও কখনো চিন্তা করে নি । হয়তো একদিন করবে কিন্তু সেই দিন হয়তো বিদায় বলার অস্ময় এসে যাবে ।
কদিন বাদেই বুবুর জন্মদিন । এবার খুব বেশি চিন্তা করতে হয় বুবুকে চমকে দেয়ার জন্য । সেই মেলার ঘটনা ও এখনো ভুলে নি । মেলা থেকে আসার পরেরদিন থেকেই আপুর মুখ থেকে আম্মু আম্মু একটা শাসনের ভাব ছিল তা চলে গেছে । আম্মুর ভালোবাসা পুরোটাই দেয় , শাসনও করে ক্ষেত্র বিশেষে । কিন্তু অল্প বয়সেই দায়িত্বের ভারে নুয়ে পড়া যেই মেয়েটি মহিলা হয়ে গিয়েছিল সে আবার দস্বী মেয়ে হয়ে উঠতে শুরু করেছে । নকিব সাহেবেরও মেয়ের প্রতি ভয় খানিকটা কমেছে । রুমে যেয়ে গল্পটল্পও করেন ।
আকিব তার পরিকল্পনা তার বাবাকে জানায় । বাবাও বেশ খুশি । ঠিক ১২:০১ মিনিটে ওকে ছাদে নিয়ে যাবে ওরা ।
আগেরদিন বাড়ির মালিকের কাছ থেকে ছাদের চাবি নিয়ে রাখলেন নকিব সাহেব । আর অফিস থেকে ফেরার পথে নিয়ে আসলেন আতশবাজি আর বেশ কয়েকোটি ফাবুশ । আকিবের দায়িত্ব ছিল অন্তরা যখন কাজে ব্যস্ত থাকবে তখন খেলার অজুহাতে বের হয়ে বাড়ির অন্য সবাইকে ওর পরিকল্পনা জানানো এবং সবাইকে উপস্থিত থাকতে বলা । সবাই দাওয়াত পেয়ে মহাখুশি । তারাও কাজ করতে ইচ্ছা প্রকাশ করলো ছোট -বড় নির্বিশেষে । সবাই যার যার মতো কাজ ভাগ করে কাজ শুরু করে দিলো । সিড়িঘর সাজালো বেলুন দিয়ে , কেকও আনা হলো । রাতে অন্তরা বাসা থেকে বের হয় না বলে কারো কাজে কোন সমস্যা হলো না ।
সব প্রস্তুত । যে যার বাসায় চলে গেলো রাতে দেখা হবে বলে ।
রাত তখন ১১:৫৯ মিনিট । আকিব অন্তরার রুমে ঢুকে দেখলো অন্তরা তখন ডায়েরি লিখছিল আর শাড়ি পড়ে বসে আছে । জন্মদিনের প্রথম প্রহরেই ও শাড়ি পড়ে থাকে । নীল পাড়ের সাদা শাড়ি , কপালে ছোট্ট একটা নীল টিপ । কাশবনে পড়ে যাওয়ার মতো একটা শাড়ি । তবে রাতে টিউব লাইটের সাদা আলোতেও খারাপ মানায় না । কিছু কিছু ক্ষেত্রে পরিবেশের চেয়ে পরিধানকারীই মুখ্য , আবার তার থেকেও মুখ্য পরিধানকারীর মনের পরিস্থিতি । শান্ত শীতলতার প্রতীক ।
আকিব হঠাৎ-ই ওর হাত ধরে টানতে শুরু করলো ছাদে যাওয়ার জন্য ।
" এইবার কি করবি শুনি ?"
" আগে আসো না ।"
" শুভ জন্মদিন না বলেই সরাসরি ' আসো না ' ?"
" ঐটা এখনো বলা সময় হয় নি আরো এক মিনিট আছে । তাড়াতাড়ি আসো নাহলে তোমার খবর আছে ।"
" আচ্ছা , বাবা যাচ্ছি ।"
ডায়েরিটা বন্ধ করে সরিয়ে রাখলো এরপর আকিবের পদাংক অনুসরণ করে এগুতে থাকলো ছাদের দিকে । সিঁড়িতে এসেই অবাক হতে শুরু করল কি বেলুন দিয়ে কি সুন্দর করে সাজানো । ওরা তিন তলায় থাকে , সেখান থেকে ছাদ অবধি বেলুন দিয়ে সাজানো । ছাদে উঠে ও আরো অবাক বাড়ির সবাই ছাদে । নকিব সাহেব এগিয়ে এসে মেয়ের কপালে চুমু খেয়ে বললেন - " শুভ জন্মদিন , মা " । আকিব অন্তরার হাত ধরেই আছে । আজ এই হাত ও ছাড়বে না । এরপরই শুরু হলো আতশবাজির খেলা । বিস্ময়ের আর শেষ রইলো না ওর । সেই আগের বিস্ময়ের মতোই ও রঙিন খেলায় মুগ্ধ । সবাই এক সাথে গেয়ে উঠলো জন্মদিনের গান । আতশবাজি শেষ হতেই প্রত্যেকে একটি করে ফানুশ উড়ানোর জন্য প্রস্তুতি নিলো অন্তরার হাতেও একটি দেয়া হলো ।
এরই মধ্যে ঘোলাটে হয়ে এসেছে চোখ । এতক্ষণ দৃষ্টি উপরের দিকে ছিল আকিবকে খেয়াল করা হয় নি । অনুভব করলো আকিব ওর হাত ছাড়ে নি । আর আকিবের দৃষ্টি আকাশে নয় ওর মুখের দিকে । হাটু গেড়ে বসে খুব শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো আকিবকে । আকিবও জড়িয়ে ধরলো যতোটুকু শক্ত করে ধরে থাকা যায় । একজনের চোখের জলে আরেকজন কাঁধ ভিজে গেলো । নকিব সাহেব দূর থেকেই দেখতে থাকলেন এগিয়ে গেলেন না । কিছু কিছু মূহুর্ত দূর থেকে উপভোগ করাই বেশি আনন্দের এটি তেমনই একটি মূহুর্ত ।
অনেকদিন পর আকিবের তার মায়ের কথা মনে পড়লো । মা এভাবে জড়িয়ে ধরতো । বুবু কোনদিন জড়িয়ে ধরে নি । ও অনেকবার চেয়েছে যদিও তা মনে মনে । বুবু ওকে কম ভালোবাসে নি কিন্তু কোনদিন জড়িয়ে ধরে নি । হয়তো এভাবে মায়ের মতো ও জড়িয়ে ধরতে পারবে নাকি সেই ভেবে এড়িয়ে গিয়েছে ।
আকাশে অনেকগুলো ফানুশ উড়ছে । অন্তরার হাতেরটাও ছুটে গেছে আকিবকে জড়িয়ে ধরার মূহুর্তে । ভাই-বোন এখনো জড়িয়ে ধরে কাঁদছে । কান্না শেষ হবে এক সময় কিন্তু এর রেশ রয়ে যাবে । বয়স বাড়বে , দূরত্ব বাড়বে - কিন্তু এই মূহুর্ত চিরকালই রয়ে যাবে রঙিন ।

[ আজকে এক আপুর জন্মদিন তারে জন্মদিনে কি দেয়া যায় চিন্তা করতে যায়া গল্প লিখার আইডিয়া আসলো । গল্পটাই তারে উপহার দিলাম । ]


মন্তব্য ৮ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৮) মন্তব্য লিখুন

১| ২৪ শে অক্টোবর, ২০১৫ সকাল ১১:৫৭

অশ্রুকারিগর বলেছেন: অনেক সুন্দর উপহার হয়েছে ! অনেক গোছানো, ছিমছাম একটি ছোটগল্প পড়লাম !ভালো লাগল !

২৪ শে অক্টোবর, ২০১৫ দুপুর ১২:৪৬

জাবের তুহিন বলেছেন: ধন্যবাদ :)

২| ২৪ শে অক্টোবর, ২০১৫ দুপুর ১২:০৬

আরণ্যক রাখাল বলেছেন: মোটামুটি

২৪ শে অক্টোবর, ২০১৫ দুপুর ১২:৪৭

জাবের তুহিন বলেছেন: পড়ে নিজের মতামত জানানোর জন্য ধন্যবাদ :)

৩| ২৪ শে অক্টোবর, ২০১৫ দুপুর ১২:২৪

রক্তিম দিগন্ত বলেছেন: জন্মদিনের চমত্কার একটি উপহার।

গল্পটা খুব ই ভাল হয়েছে.… :) :)

২৪ শে অক্টোবর, ২০১৫ দুপুর ১২:৪৮

জাবের তুহিন বলেছেন: :)
ধন্যবাদ

৪| ২৪ শে অক্টোবর, ২০১৫ দুপুর ১:৩৯

প্রামানিক বলেছেন: গল্প ভাল লাগল। ধন্যবাদ

২৫ শে অক্টোবর, ২০১৫ রাত ১২:০২

জাবের তুহিন বলেছেন: ধন্যবাদ :)

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.