নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

পাগলা গারদ

ব্যাঙাচী

ভয় লাগে নাকি ভয় করে

ব্যাঙাচী › বিস্তারিত পোস্টঃ

বন্ধু কি খবর বল?

২১ শে জুন, ২০১৩ রাত ২:৩৩

‘বন্ধুত্ব’ অতি পরিচিত একটি শব্দ। যার অর্থ কখনও অন্যের সাথে মেলে, কখনও মেলে না। মিলুক চাই নাই মিলুক যে বন্ধু সে, কোন ভয়ংকর দুস্কর্ম না করলে (কখনওবা তারপরও), আজীবনই বন্ধু। অদ্ভুত !!! আমাদের ব্যাক্তি স্বত্বার শতভাগই উন্মুক্ত থাকে এই বন্ধুর কাছে। কারো যদি এই রকম বন্ধু না থাকে, আমি বলি তার কপাল মন্দ, সে অপরিপূর্ণ অথবা নিজেই স্বয়ং সম্পূর্ণ। কবিতায় ছিল না, ‘ এ পৃথিবীর যা কিছু মহান সৃষ্টি চির কল্যাণকর, অর্ধেক তার গড়িয়াছে নারী অর্ধেক তার নর’। এই অর্ধেক নরের অবদানের পেছনে বন্ধুদের অবদান কতটুকু কে জানে। যাই হোক, ইতিহাস ঘাটার ইচ্ছা নাই বা জানাটাও তেমন জরুরী মনে হচ্ছে না কিন্তু একটা প্রশ্ন বেশ কতদিন ধরে বিরক্ত করতেছে, ‘ঘনিষ্টতম বন্ধুটি সম্পর্কে কি ভাল-মন্দ চিন্তা করে বন্ধুত্ব নাকি এটা আপন গতিতেই গড়া প্রকৃতির অবদান?’

ছোটবেলা থেকেই আমরা শুনে ও পড়ে এসেছি, ‘বিপদে প্রকৃত বন্ধুর পরিচয় পাওয়া যায়’। কিন্তু সকল প্রকৃত বন্ধু কি আমাদের ঘনিষ্টতম বন্ধু? আবার কোন বিপদ হলে ঘনিষ্টতম বন্ধুটিকেই সবার আগে স্মরণ হয় এবং যোগাযোগ করা হয়। তাই বলে সে কি সবসময় পাশে এসে কাঁধে হাত দিয়ে ভরসা দিতে পারে? কিন্তু তারপরও সে ঘনিষ্ট একজন, সামান্য কোন ঘটনায় কি তাকে ছাড়া যায়? এ এক আশ্চর্য মানসিকতা। মানুষই পারে এই ধরনের কোন কিছু সৃষ্টি করতে এবং আঁকড়ে থাকতে। পরিবর্তনে বড় নিমরাজি আমরা। যাই হোক, সে অন্য ব্যাপার। কথা হচ্ছে, প্রকৃত বন্ধু নাকি ঘনিষ্টতম বন্ধু এবং তার সৃষ্টির উৎস নিয়ে। অন্যদের ব্যাপারে জানি না তাই নিজের ক্ষেত্র থেকেই বলা বাঞ্ছনীয়।

আমরা চার বন্ধু। আসল নাম না বলি, ধরি x, y, z আর আমি। একই এলাকায় থাকি। আমরা সব মিলিয়ে ২১ জনের এক সার্কেল। সবাই একই এলাকায় থাকি, জোরে চিৎকার করলে সবার বাসায় মোটামুটি শোনা যাবে। আমাদের আবাসিক এলাকাটি পাহাড়ের উপর, তখন খুব বেশী মানুষ ছিল না। এটা বললে হয়ত ভুল বলা হবে না যে আমাদের ২১ টা ফ্যামিলি-ই তখন শুধুমাত্র ওই এলাকার বাসিন্দা। আর যারা ছিল তারা সংখ্যায় খুব বেশী হবে না। ফলে সবার ফ্যামিলির মাঝেও বেশ সৌহার্দপূর্ণ সম্পর্ক ছিল। পাহাড়ের উপর ও নীচের পোলাপাইনদের মাঝে বেশ প্রতিযোগীতা ছিল। বিশেষত খেলাধুলা নিয়া। যাই হোক, আসল কথাই আসি।

x, y খুব ছোট থেকেই একসাথে। z আমার এক বছর আগে এলাকাতে আসে। আমি তখন ক্লাস সিক্সে। যদিও আমরা বন্ধু, ওয়াই পড়ত ক্লাস সেভেন এ, আমি ও x ক্লাস সিক্সে এবং z পড়ত ক্লাস ফাইভে। অদ্ভুত কিন্তু সত্য।

X = ৫’১১” লম্বা, ওজন ৮০ – ৮৫ কেজি (বর্তমানে)। আমাদের মধ্যে সবচেয়ে লম্বা। একসময় খুবই শুকনা ছিল, আমরা বগা ডাকতাম। হঠাৎ করেই খুব মোটা তাজা হয়ে গেল, কিছুটা গরু মোটাতাজা করার মত (আমরা বলতাম ঘোড়ার ট্যাবলেট খাইছে) :D। কক্ষনই কোন ঘটনা বলতে গেলে তার শেষ পর্যন্ত যেতে পারত না। কোন গানের সুর তার ঠিক থাকত না নিজের যা ইচ্ছা গেয়ে ফেলত। কোন কিছুই ঠিক মত বুঝতে পারত না (অন্তত আমরা তাই ভাবতাম), না বুঝেই একটা কাজ করে ফেলত। কিছু হলেই মেজাজ খারাপ ও মারামারি। সহজ কথায়, লম্বা মানুষের হাটুতে বুদ্ধি ওরে দেখলে মনে হয় (আমরা তাই ভাবতাম)

Y = ৪’ ৪” লম্বা, ওজন ৫০-৫৫ কেজি। আমাদের মধ্যে সবচেয়ে খাটো বিধায় অত্যাচারও বেশী ওর উপর এবং কোনকিছু নিয়ে কারো মেজাজ খারাপ আইসা ওর উপর টর্চার শুরু। সার্কেলের এমন কারো বাসা নাই যেটার বাথরুমে সে হাগে নাই। একসময় প্রচুর খেতে পারত, এখন মাশিন আর কাজ করে না। খাওয়া নিয়ে প্রায়শই x এর সাথে ঝগড়া লেগে যেত, বিষয়ঃ বেশী খাইছে কে? কোন হাসির জোকসও ওর মুখে শুনলে আপনার হাসি নাও আসতে পারে, আমাদের অন্তত আসতো না কিন্তু আজকাল একটু পরিবর্তন হইছে।

Z = ৫’৯” উচ্চতা, ওজন ৭৫-৮০ কেজি। প্রচন্ড শক্ত হাড্ডি এবং বুদ্ধি (শয়তানী) গিজগিজ করত ওর মাথায়। শারীরিক গঠন চ্যাপ্টা, দেখলে মনে হতে পারে ওরে খোদা বানাইয়া সামনে ও পেছন থেকে একটা চাপা দিছে। খুবই একরোখা এবং শারীরিক গঠনের মতই খুবই চাপা স্বভাবের ছেলে। আমাদের মাঝে ডন নামে পরিচিত। নামেই ওর পরিচয়।

আমি = ৫’৭” উচ্চতা, ওজন ৬০-৬৫ কেজি। নিজের সম্পর্কে কিছু বলা কঠিন কাজ। অন্যদের মতে, কোন কাজ পছন্দ না হলেই মেজাজ সপ্তমীতে উঠাই। খুবই নিরপেক্ষ থাকি (ওদের ভাষায়, ‘মাঝ দরিয়া দিয়ে চলি’)। গেইমসের পোকা। সহজ কথায়, হার্মলেস প্রাণী (ব্যাঙ্গাচী)।

খেলাধুলা নিয়ে খুবি মত্ত থাকতাম আমরা। ছুটিতে দাঁত মাজতে মাজতে ৯ টায় মাঠে আসতাম, দুপুরে মায়ের বকা খেয়ে ২ টার দিকে মাঠ থেকে ঘরে যেতাম আবার ৩ টা থেকে মাঠে, সন্ধ্যা পর্যন্ত খেলা। তারপর খেলা নিয়া আলাপ আলোচনা, কার কোথায় ভুল ছিল, কি হলে কি না হইত, এইসব বেগারা বেগারা। খেলা শেষে সবাই নিচে নামতাম চা আর পুরি খেতে। ২১ টা ছেলে রাস্তায় হাটলে আর জায়গা কতটুকু থাকে। নিচের এলাকার মুরুব্বিরা বলত, ‘এইতো পাহাইড়গারা (পাহাড়ে যারা থাকে) নামছে। এখন এলাকা মাথায় উঠাইব’।

আবার শুরু আড্ডা। আড্ডা চলত রাত ১০টা/ সাড়ে ১০টা পর্যন্ত। ঘরে ফিরে রাতের খাবার খেয়ে আবার আড্ডা। সাধারণত রাত ১২টা কিন্তু পরেরদিন ছুটি থাকলে কখনও রাত ৩ টা/ ৪টা ও বেজে যেত বাসায় ফিরতে ফিরতে। সংক্ষেপে, তিন বেলা আড্ডা। আর আজাইরা ঘরের খেয়ে বনের মোষ তাড়ানো। এলাকায় বৃক্ষ রোপণ করা, রক্ত দান কর্মসূচী করা, নাটক করা, ক্লাব করা, টুর্নামেন্ট ছাড়া অথবা কোন টুর্নামেন্টে অংশগ্রহণ করা ইত্যাদি ইত্যাদি। সবই যে খুব গ্রহণযোগ্য কাজ ছিল তা না কিন্তু খুব অমার্জনীয় কোন কাজ করতাম না, আর করলেও আমাদের মধ্যেই তা সীমাবদ্ধ থাকত এখনও তাই-ই থাক। সকল কাজেই আমরা চার বন্ধুই সমান উৎসাহে ঝাপাইয়া পড়তাম। এবার ভাল লাগুক আর নাই লাগুক, করব যখন সীদ্ধান্ত হইছে তখন আবার কিসের চিন্তা।

খেলার মাঠে প্রায়সই, খেলা নিয়ে রীতিমত হাতাহাতি, ঘুষাঘুষি, এক কথায় মারামারি হত কিন্তু খেলা শেষ, ঝগড়া-বিবাদও শেষ। চায়ের দোকানে বসে এক প্যাটিস ভাগ করে খেয়েছি। প্রচুর মারামারি হত আমাদের মাঝে, শুধুই খেলা নিয়ে। একবার x আউট হইছে, যতটুকু মনে পড়ছে এল.বি হয়েছিল। তার মেজাজ খারাপ সে স্ট্যাম্প উঠায়া ফেলল, সে খেলতে দিবে না, খেলা বন্ধ। আমরা মাঠে তখন প্রায় ২০/২১ জন। কে একজন যেন বলে উঠল,

‘কি খেলা হবে না। তুই আউট হইছস, তুই নেমে যা’।

এক কথা থেকে দুই কথা আর শুরু মারামারি। মারামারি শেষে যথারীতি আমরা খেললাম, বিকালে যখন মাঠে খেলতেছি হঠাৎ এক বড় ভাই লাঠি একটা নিয়া যারে সামনে পাইতেছে তারেই পিটাইতেছে। সবাই যারপর নাই দৌড়। দৌড়ানী খেয়ে যথারীতি সব্বাই লাপাত্তা। খেলা পন্ড। উনি ব্যাট-ষ্ট্যাম্প কুক্ষিগত করলেন। পুরাই সাড়ে সর্বনাশ যাকে বলে। এখন ওনার কাছে যাইতেই হবে।

সন্ধ্যার দিকে গেলাম ওনার কাছে।

‘ভাই, আমাদের কি দোষ?’

‘কি দোষ মানে? তোরা পিচ্চী পিচ্চী পোলাপাইন দল বাইধা তোগো বন্ধুরে পিডাস, তোরা এত্ত খারাপ কাম কেমনে করলি?’

‘আমরা কই দল পাকাইছি। ওইডা-ই না ষ্ট্যাম্প ফালাইয়া দিছে, আমগোরে নাকি খেলতে দিব না’।

বড় ভাই হাত উঁচিয়ে মারতে আসেন। ‘তাই বলে তোরা মারামারি করবি। কেন আমি আছিলাম না, আমারে কইতি। আমি কি বিচার করতাম না? তোগো সাহস বেশী বাইড়া গেছে, সবটির ঠ্যাং আজকা ভাঙ্গুম’।

এই বলে আবার ষ্ট্যাম্প হাতে নিলেন। আমরাও আগেরবার যা করছিলাম এইবার ও তা করলাম। কিন্তু উনি এক কদম এগিয়ে এসেই ক্ষান্ত দিলেন।

‘এই এদিকে আয়, ব্যাট-ষ্ট্যাম্প নিয়ে যা। ভবিষ্যতে যেন আর এইরকম না হয়’।

আমরাও ব্যাট-ষ্ট্যাম্প নিয়ে ফুট। কে মনে রাখে কার কথা, এরপরও কত মারামারি খেলা নিয়ে হইছে কে মনে রাখে এতসব। সেই বড় ভাই রাজনৈতিক চক্রে ভিন্ন পথের পথিক ছিলেন কিন্তু কোনদিন আমাদেরকে প্ররোচিত করেননি অথবা জোর করেননি কোন রাজনৈতিক কর্মকান্ডে, মিটিং অথবা মিছিলে যা উনি চাইলে খুব সহজেই হয়ে যেত। আজ হয়ত তাহলে আমরা অন্য কোন জগতে থাকতাম, হয়ত ওনার মতই অপঘাতে বিদায় নিতে হত। হয়ত হতে পারত অনেক কিছুই। কিন্তু বাস্তবে উনি সর্বদাই আমাদেরকে বই পড়া, খেলাধুলা এসবে উৎসাহ দিতেন। আমাদের এক বন্ধুর লেখা পড়ার খরচ উনি চালিয়ছিলেন বেশ অনেকদিন অথচ নিজের দিকে তেমন কোন খেয়াল দিতেন না। আমরা অন্যায় কিছু করলে দেখিয়ে দিতেন।

একবার সবাই খোলা জায়গায় বসে কার্ড খেলছি। দেখলাম উনি বেশ আয়েস করে হেলেধুলে হেঁটেহেঁটে আসছেন। আমরা তখন খুব সম্ভব কলেজে অথবা SSC দিয়েছি। খুব বড় হয়ে গেছি, স্কুল শেষ। উনি কাছে এসে মাত্রই, পেছনে লুকিয়ে রাখা ঢোল কলমির ডাল দিয়ে এলোপাথাড়ী পেটানো শুরু করলেন। বরাবর যা করে এসেছি তাই করলাম আগে নিজের জান পরে কথা। কার্ড ফালাইয়া দৌড়। পরে উনি নিজের রুমের চাবি আমাদের দিয়ে বললেন, ‘খেলতে ইচ্ছা হলে রুমে গিয়ে খেলবি, বাইরে খোলা জায়গায় বসে কিসের কার্ড খেলা। তোদের কি বুদ্ধি নাই, মানুষ তোদেরকে কি বলে?’ এভাবেই সবসময় আমাদেরকে যা কিছু খারাপ তার থেকে দূরে রাখার চেষ্টা করতেন। জানি না, এখনও উনি থাকলে আমাদের সবাইকে একসাথে দেখলে কি বলতেন? হয়ত কোন ভুল নিয়ে গাল-মন্দ করতেন, হয়ত হতে পারে অনেক কিছু। যাই হোক, বাস্তব হচ্ছে উনি নেই (আল্লাহ ওনাকে ক্ষমা করুক, বেহেশত নসিব করুক।)।

সিগারেট y ছাড়া বাকি তিনজনেরই অভ্যাস ছিল। পুরো সার্কেলের মোট ৭ কি ৮ জনের এই অভ্যাস ছিল। একবার আমরা তিন বন্ধু নীচে সেলুনে বসে সিগারেট খাচ্ছি। খেয়াল করি নাই যে নিচের এক বড় ভাই আমাদেরকে লক্ষ্য করছে। উনি নালিশ দিল আমাদের বড় ভাইয়ের কাছে। নিজে উনি ধূমপান করতেন না। উনি আমাদেরকে ডেকে ঝাড়ি দিলেন। কেন সিগারেট খাইছি সেজন্য না, বরং কেন বোকার মত কাজ করছি তার জন্য। শেষে জিজ্ঞেস করলেন, ‘আচ্ছা কতো, সিগারেটে কি মজা? না মিষ্টি, না টক, না ঝাল। এটা না খাইলে কি হয়?’

যাই হোক, এখনও আমরা সেই অভ্যাস বহাল রেখেছি এবং y তার জায়গায় অটল আছে, অদূর ভবিষ্যতে কি হয় জানি না তবে লক্ষণ বলে অবস্থা অপরিবর্তিত থেকে যাবে। সকল প্রকার বদভ্যাস থেকে y মুক্ত ছিল (এমনকি পরীক্ষামূলকভাবেও না) অথচ সবসময় সাথে থাকত, এখনও সিগারেটের ধোঁয়া ওর গায়েই যাচ্ছে। বেচারাকে বউয়ের কাছে কৈফিয়ত দিতে হচ্ছে, ‘গায়ে সিগারেটের গন্ধ কেন?’ মেয়ে মানুষ, আজিব। বরাবরই আমরা নারী থেকে দূরে থাকতাম। কিন্তূ ভাল লেগে গেলে তো আর কিছু করার ছিল না। এক বন্ধু প্রেম করে আর তিন বন্ধু পাহারা দেয় আর গুষ্ঠী উদ্ধার করে। এক বন্ধুর কোন মেয়েরে ভাল লাগছে তো সবাই একযোগে ওই মেয়ের সাথে টাংকি মারছি (অভদ্র কিছু অবশ্যই না। বন্ধুর প্রেয়সী বলে কথা)। এক বন্ধুর হয়ে আরেক বন্ধু প্রক্সি দিছি (অবশ্যই ফোনে)। এক বন্ধুর ডেটিং এর জন্য ১লা বৈশাখ সকাল ৬টায়, আরামের ঘুম হারাম করে বাকিরা যাওয়ার জন্য রেডি। গালি খাইতে হইছে তাতে কি?

ঈদে সবার জন্য একই রকম পাঞ্জাবী কেনা। ২১ টা পাঞ্জাবী একই রকম পাওয়াও ছিল দূরহ। তাই অর্ডার দিয়ে বানানো। ঈদে সবাই একই সাথে ঘুরতে বের হওয়া, তাও কোথায়, শীশুপার্ক :D। কারণ শিশু মানেই ......কান টানলে মাথা আসে, অনেকটা সেই রকম :D। Just for fun, nothing serious…:D। কয় কি?!!!!

যাই হোক, ঈদে এলাকার সকল দোস্তদের বাসায় ঘুরে ঘুরে খাওয়ার রেওয়াজ, এখনও বহাল আছে। নামায শেষ করে প্রথম আক্রমণ x-এর বাসা, ওদের বাসার পায়েস awesome…তারপর সিরিয়ালী সবার বাসা। Z এর বাসায় কিছুই খাওয়া হবে না কাস্টার্ড ছাড়া, ওর আপু জোস কাস্টার্ড বানায়, বেশী জোস। কোন বন্ধুর বাসায় যাওয়া কোক খাওয়ার উদ্দেশ্যে, তাই সবার শেষে যাওয়া হইত ওর বাসায়। ঈদের দিন দুপুরে (যদি সব ঠিক থাকে) তাহলে আমার বাসা, রাতে আরেক বন্ধুর বাসা। পরের দিন দুপুর y এর বাসা, ওইদিন রাতে নীচে এক বন্ধুর বাসা। টিভির অনুষ্ঠানের মত সবই পরিকল্পিত, তফাৎ ওদেরটা পরিবর্তিত হয় আর আমাদের বছরের পর বছর ধরে একইভাবে চলছে অলিখিত অভঙ্গুর কর্মসূচী।

একবার ঈদে সবাই নামায শেষ করে কর্মসূচী অনুযায়ী খাওয়া চলছে। হঠাৎই সিদ্ধান্ত, চল এলাকায় ওনারা নতুন আসছে ওনাদের বাসা থেকে খেয়ে আসি। যেই ভাবা সেই কাজ। সবাই মিলে ঢুকে পড়লাম। খালাম্মাকে সালাম দিয়ে সবাই অস্থির। খাওয়া আসল, খাচ্ছি। দেখি x ও y যথারীতি ঝগড়া লাগছে।

X – ‘কিরে তুই না একটু আগেই একবার জর্দ্দা খাইলি আবার কেন এখান থেকে নিছস?’

Y – ‘তোর লাগলে তুইও নে। কেউ কি তোরে মানা করছে?’

‘না তুই আবার কেন নিবি? অন্যরা কি তোর চেহারা দেখবে?’

এই বলে সে জোর করে ওর প্লেট থেকে জর্দ্দা ভাত কমাইয়া দিতে গেল। এত সহজে কি আর কাজ হয়? প্রথমে হালকা লাথালাথি (একটা দেয়া ও সাথে সাথে একটা খাওয়া), সবাই বসে বসে মজা নিচ্ছে আর যার যার খাওয়া নিয়ে ব্যস্ত। তারপর প্লেট রেখে রীতিমত তারা ঠুসাঠুসি, ঘুসাঘুসি, পুরা টেবিলই উল্টায়া ফালাই দেওয়ার মত অবস্থা। কি আর করা, তাড়াতাড়ি সবাই ওদেরকে উঠে থামাইল। কিন্তু মুখ বন্ধ করার কি কোন উপায় আছে। ভাগ্যিস আন্টি একটু ভেতরে গিয়েছিলেন। ওদের এই অবস্থা দেখে বেশ দ্রুততার সহিত আমরা বের হয়ে আসলাম।

আরেকবারতো সবাই নামায শেষ করে আমার বাসায় এসে দেখে আম্মা সমানে আমাদেরকে গালি দিচ্ছে কারণ বাসার কেউই নামায ধরতে পারে নাই পুরা বাসার সবাই ঘুমাইয়া নামায পার করে দিছে। আমি ছাড়া সবাই নামাযে গেছে, এটা দেখে আম্মা আরও তেলেবেগুনে জ্বলে উঠলেন। কিন্তু দলে আমার দুলাভাইও ছিল, ফলে আম্মা খুব সুবিধা করতে পারেন নাই ;)। যদিও Z –এর বেশি দেরী হল না ঘটনা বুঝতে এবং যথারীতি তার সুর পালটে গেল, ‘হ্যাঁ খালাম্মা ঠিকই বলছেন। আমি কালকে বারবার বলছি এত রাত পর্যন্ত বাহিরে থাকিস না। কে শুনে কার কথা। আমারে বলে যা নিজের চরকায় তেল দে’। এই বলে আস্তে মুখ টিপে হাসতে হাসতে বেরিয়ে গেল, পেছন পেছন আমিও ফুট।

এভাবেই গেল স্কুল, কলেজ পার হয়ে উচ্চ মার্গীয় গরু হওয়ার জন্য গেলাম বিশ্ববিদ্যালয়। Y পড়ছে ভেটারিনারিতে। কোরবানী আসল। Y জ্ঞান দিল যে গরু ডান বা বাম (এখন ঠিক নিশ্চিতভাবে মনে পড়ছে না) পায়ে লাথি মারতে পারে না, ফলে ওই পাশ দিয়ে গেলে গরু লাথি মারতে পারবে না। আমি, Y ও Z তখন বাসার সামনের রাস্তা দিয়ে হাটছিলাম। বাসা থেকে ৪০ কদম দূরেই আরেক বন্ধুর বাসা। ওদের কোরবানীর গরু রাস্তার পাশের একটা গাছেই বাঁধা ছিল। Z বলল, ‘চল পরীক্ষা হয়ে যাক’।

Y – ‘চল’।

Z একটা লাঠি নিল। সেইফ সাইড দিয়ে গরুর কাছে গিয়ে যেই গরুর দূর্বল (guess what) স্থানে খোচা দিল অমনি গরু লাফাইয়া উইঠা দুই দিকেই সমানে লাথি মারা শুরু করল। Z কোনভাবে লাফ ঝাপ দিয়া তফাৎএ আইসা Y-এর গুষ্ঠি উদ্ধার করতেছে।

‘তুই আমার ডেস এর ডাক্তার। ডেস জানোস তুই আমার। তোর ডেসে নিয়া এইসব ডেসের জ্ঞান রাখ। হুদা তোরে বিলাইতে কে বলছে? ডেস আমার...আরো অকথ্য কথা, পুরাই ডেস ডেস ডেস......’।

এভাবে একসময় প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার সমাপ্তি, আসলো কর্মজীবন। অপূর্ব কিছু সময় খুব দ্রুত অতীত হয়ে গেল।

জেড ব্যাবসা শুরু করল। এক্স চলে গেল দেশের বাহিরে। আমি ও ওয়াই চাকরি। নতুন অধ্যায়, সবকিছু খুব দ্রুতই হয়ে গেল। একসময় এক্স আবার দেশে চলেও আসল। যদি দেশে কোন কিছু করতে পারে তো থেকে যাবে। জেড ও এক্স একসাথে কাজ করা শুরু করল। ভালভাবেই সব চলছিল। এক বছর পর হঠাৎ কি হলো জানি না, জেড আর একসাথে ব্যাবসা করবে না। ব্যবসা বন্ধ করে দিল। জেড বরাবরই খুব চাপা স্বভাবের, যতই জিজ্ঞেস করি কিছুই বলে না। শুধু একই কথা এক্স-এর সাথে ব্যবসা করবে না। বন্ধুত্ব ও ব্যবসা একইভাবে চলে না। যাই হোক অনেক খোঁচাখুঁচি করে, এদিক সেদিক ঘুরে আসল কথা শুনলাম। মাঝখানে আমিও একটু দূরেই ছিলাম তাই সহজে নিজের কানকে বিশ্বাস হচ্ছিল না। তাই নিজের চোখে না দেখা পর্যন্ত কোন সিদ্ধান্ত নেয়া যাবে না ঠিক করলাম। ধীরে ধীরে সব পরিষ্কার হল একসময়। জেড আমাকে শুধু বলল, ‘এবার বল এইসব কি কাউকে বলা যায়? কারণ কিভাবে বলতে হয় আমার তা জানা নাই। তাই বন্ধুত্ব রক্ষার্থে আমি সব ভুলে ওরে আগের জায়গায় রাখছি অথচ দেখ কি সব করতেছে’।

আমি নিজেও জানি না, কেন এক্স এসব করছে বা এখনও করতেছে। কারো পিছে কোনদিন আমরা কারো বদনাম করাকে প্রশ্রয় দেই নাই, কখনও জ্ঞানত অন্যের ক্ষতি করিও নাই অথবা কামনাও করি নাই, কখনই আত্মঅহমিকা করি নাই, কখনই মাথা নীচু করে চলার মত কোন কাজ কারো সাথে করি নাই। খুবই সহজ কিছু নিয়মে আমরা বাঁধা ছিলাম। এক্স নিজেও তখন আমাদের সাথে একই নিয়মে বাঁধা ছিল। জানিনা এমন কি হইল যার কারনে ও এতদিনের সব কিছুকে তুচ্ছ করে যা কিছু পরিতেজ্য, সবকিছু এভাবে আঁকড়ে ধরল। কিভাবে নিজের বাল্যকালের বন্ধুর সাথে অসাধু আচরণ করল, নিজেকে হুদাই অহমিকা দিয়ে মুড়ে দিল? এসব কিছুই তো একসময় এক্স নিজে নিয়ন্ত্রণ করত ও আরেকজনকে নিয়ন্ত্রণ করতে বলত।

এখন ওর থেকে আমরা দূরে দূরে। দেখা হয়, কথা হয় না। এখন আমরা তিন বন্ধু। জানি না আবার কি হয়? তাই একটা প্রশ্ন বেশ কতদিন ধরে বিরক্ত করতেছে, ‘ঘনিষ্টতম বন্ধুটি সম্পর্কে কি ভাল-মন্দ চিন্তা করে বন্ধুত্ব নাকি এটা আপন গতিতেই গড়া প্রকৃতির অবদান?’ যদি ভাল-মন্দ বিচার করে হয় তাহলে আমাদের ভুল। বয়স তখন কতইবা, ৬ষ্ঠ শ্রেণী, বয়স আমার ১২ তাই, রোজ দুটো টাকা পাই। আর যদি প্রকৃতির খেয়াল হয়, তাহলে প্রশ্ন, ‘প্রকৃতি কি এত বড় ভুল করে?’ আমরা কি প্রকৃত বন্ধু ছিলাম নাকি শুধুই ঘনিষ্ট বন্ধু? কে জানে, আযাইরা চিন্তা। ঘরের খাইয়া বনের মোষ তাড়ানো।

যাই হোক, কর্মজীবন, ফ্যামিলি সব এত দাবী করে যে ওসব মেটাতে মেটাতে আর কিছুই করার সময় হয় না। প্রতি বছর দুটা এডভ্যাঞ্চার ট্রিপ হবে না, হয়ত আর কোনদিন বন্ধুরা মিলে বগালেক-কেওকেরাডং হয়ে তাজিন্ডং যাওয়া হবে না অথবা বাড়বকুন্ড ঝর্ণায় রাস্তা ফেলে পাথুরে, পিচ্ছিল ঝর্ণা দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে পা পিছলে আলুর দম হতে হবে না কিংবা ইকো পার্ক থেকে পায়ে হেঁটে চন্দ্রনাথ মন্দিরে ওঠা হবে না, কক্সবাজার ঘুরতে গিয়ে ইচ্ছা হলো দুলহাজরা সাফারী পার্কে ঢোকা হবে না, শ্রীমংগল গিয়ে এক রাত থেকে আবার ঢাকা এসে অফিস করে রাতে আবার সিলেট গিয়ে সবার সাথে যুক্ত হওয়ার মত পাগলামি করা হবে না, রাতের বেলা ৭ কিঃমিঃ পায়ে হেঁটে হোটেল যাওয়া হবে না, ঘাটে এসে চিৎকার করে ছেড়ে চলে যাওয়া শেষ বোট দাড় করানো হবে না, শীতে আপনার কাপুনিতে পাশের ঘুমন্ত বন্ধুর ঘুম ভাঙবে না, কোন এক পাহাড়ী ঝর্ণার ধারে বসে মনে হবে না সাথে চকলেট থাকলে ভাল হত, নিচে সবাই ঝর্নার পানিতে গোসল করছে ঝর্ণার ওপরে উঠে মনে হবে না চল সবাইকে গরম ঝর্ণার পানি দিয়ে চমকে দি, কাপড় শুকনো রাখার জন্য আন্ডি পরে খাল পার হবেন না, শেষ গাড়ি মিস করছেন বলে ট্রাকের পিঠে চাউলের বস্তার উপর ঘুমিয়ে পাহাড়ী রাস্তা ধরে যাওয়া হবে না, ক্ষুধায় মাথা খারাপ হয়ে বেশী কথা বলে বন্ধুর মাথা খারাপ করে দিবেন না, সারাদিনের ক্লান্তি সারারাত আড্ডা মেরে দূর করবেন না, অযথা ফালতু আলাপ মেরে হাসতে হাসতে পেটে খিল ধরবে না, বিচে গনগনে রোদে হেঁটে কপালের চামড়া পুড়িয়ে কালো করে ফেলবেন না, সারাদিন হেঁটে পথে পাহাড়ী বন্য গরু দেখে পেছনে থাকা বন্ধুদের দিকে তাড়া করবেন না, রেললাইনের ওপর সবাই শুয়ে পড়ে ছবি তুলবেন না, হয়ত সবই হবে হয়ত কিছুই করা হবে না। কিন্তু আপনি আসতে না পারলেও বন্ধু আপনার কাছে যাবে আপনাকে দুটা ডেস ডেস শুনিয়ে দেবার জন্য। সুতরাং, নিজের বন্ধুদের নিয়ে মাস্তিতে থাকুন। জমিয়ে ছুটিতে আড্ডা দিন। সপ্তাহে একদিন অথবা ১৫ দিনে ১ দিন অথবা মাসে ১ দিন তাও না পারলে বছরে ১ দিন। সব শেষে অগতির গতি ফেইসবুক, গোগল প্লাস, স্কাইপে। বন্ধু দুর্জন হলেও অপরিত্যাজ্য ও অপরিহার্য।

ভাবলাম আমার মত বন্ধু বৎসল আরও কেউ থাকতে পারে, তাই তাদের একটু সতর্ক করা দরকার। পরিবর্তন যে কোন সময় আসতে পারে কিন্তু আমরা মানুষ পরিবর্তনে বড়ই নারায।

‘হঠাৎ রাস্তায় আপিস অঞ্চলে,

হারিয়ে যাওয়া মুখ, চমকে দিয়ে বলে,

‘বন্ধু, কি খবর বল? কতদিন দেখা হয়নি’



[Dedicated to all my friends. I know someone who may get angry or annoyed to see my foolishness. To some extent it goes against the rule. But you know me, don’t you? Seriously, do you?]

অন্যরকম বাংলাদেশ: খাগড়াছড়ি

Click This Link

Click This Link

Click This Link

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.