নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

পাগলা গারদ

ব্যাঙাচী

ভয় লাগে নাকি ভয় করে

ব্যাঙাচী › বিস্তারিত পোস্টঃ

শীতে পাগলামী বাড়ে?

০৪ ঠা মার্চ, ২০১৬ রাত ২:২৫

অনেকদিন পর আসলাম আর তাই অনেক আগে লেখাটাকে পোস্ট করলাম। তাই লেখার সাথে বর্তমান সময়ের ঠিক মিল পাওয়া যাবে না, তাই দুঃখিত।শর্টক, হাহাহাহা
এইমাত্র গোসল করলাম।এই প্রচন্ড শীতে কাঁপুনি আসতে পারে ভেবে ইতিমধ্যেই পুলোভার,জ্যাকেট,মাফলার গায়ে চড়িয়ে এক কাপ গরম চা নিয়ে বসেছি।কিছু একটা লিখতে ইচ্ছে হচ্ছে,কি লিখব বুঝতে পারছিনা,তবে মনে হচ্ছে উত্তরবংগের শীতের অনুভূতি...হাহাহাহা...শীত কিভাবে আসলেই কাঁপুনি তোলে এবার ওখানে যাওয়ার পথে টের পেয়েছি।তাহলে এভাবেই শুরু করি...হাহহাহা...
বিসমিল্লায় গলদ, ২২শে ডিসেম্বর,২০১৪:
যথারীতি আমার পেঁচীর কাছ থেকে ছুটতে দেরী হয়ে গেল,খেয়ালই করিনি দেরী হয়ে যাচ্ছে।পরে তাড়াহুড়ো করে,ব্যাগ গুছিয়ে,রেডি হয়ে বের হতে হতে এক ঘন্টা দেরী করে ফেললাম।ভোর ৫টায় রওনা দেবার কথা সেখানে বেজে গেল ৬টা।আমার দোস্ত কাউয়া ক্ষেপে তারস্বরে পিছনে বসে বসে চিৎকার করছে।“আমার কান্ডজ্ঞান নাই।আজকে কিভাবে আমি দেরী করি।তার উপর তারে এক ঘন্টা আমি ঠান্ডা দিয়া বাহিরে দাড় করাইয়া রাখছি।আমি পুরাই ****...”।আসল কথা তো আর বলতে পারি না,তাই চুপ থাকাই শ্রেয় ভেবে নিলাম।
যাই হোক,বকা খেয়ে হোটেলে ঢুকে পড়লাম নাস্তা খেতে।নাস্তা খেয়ে বের হয়ে রওনা দিতে না দিতেই পুলিশ আমাদের দাড় করাল।মামুরা পুরাই ত্যাঁদড়,কিছুতেই আমাদের ছাড়বে না।শেষ-মেষ মামুদের উপরি দিয়া রওনা যখন দিলাম আবার তখন ৮টা বেজে গেছে।হাহাহা...আমরা দুই বন্ধু কতক্ষণ হাসি,কতক্ষণ মামুদের গাইল্লাই।এই করে করেই দুপুর ১টা ৩০মিনিটের দিকে পৌছে গেলাম হরিণাঘাটা।পথে দু’বার চা খাবার বিরতি নিলাম।একবার মিররসরাইয়ের কাছে,আরেকবার ফেনির কাছে কোথাও।ছবি তুলতে দাড়িয়েছিলাম লক্ষীপুর শহীদমিনারের সামনে,নারকেলের বাজারে,রায়পুর মেইন রোডে।
ভাগ্য ফাইনালী ভালর দিকে গেল,আমরা ঠিক ফেরী ছাড়ার আগ মুহুর্তে পৌছে ছিলাম ফেরিঘাটে।আমরাও উঠলাম ফেরীও ছেড়ে দিল।ফেরিতে বাইক,ব্যাগ,আমাদের অবস্থা দেখে সাতক্ষীরার একজন ট্রাক ড্রাইভার আমাদের ডেকে ট্রাকের ভেতর বসে বিশ্রাম নিতে বললেন।কারণ ফেরী পার হতে লাগবে দেড় ঘন্টা।দেরী না করে লাফ দিয়ে উঠে পড়লাম ট্রাকে।শুরু হয়ে গেল গল্প আর বিড়ি...যদিও আমার দোস্তই দু’জনের পক্ষ হয়ে একাই কথা চালিয়ে গেল,আমি কেবলই হু,হ্যাঁ-তেই সীমাবদ্ধ।কারণ আমার ধান্দা হচ্ছে ঘুমানো।যাই হোক,হালাদের বকবকানি ঘুম কেন,ঘুমের ছায়ারও দেখা পেলাম না।হঠাৎই দেখলাম আমরা পৌছে গেছি।ফারুক ভাই ও বেশ অবাক হয়ে গেলেন,এত দ্রূত এসে পড়লাম কিভাবে।ফারুক ভাই হচ্ছেন সাতক্ষীরার সেই ট্রাক ড্রাইভার।কি আর করা,নেমে পড়লাম ট্রাক থেকে। *ক্লিকক্লিক-প্যাঁচা* শুরু করে দিলাম,সময় নাই।
ফেরী থেকে নেমে ঘাটেই লাঞ্চ করে নিলাম। পোয়া মাছ আর ভাত...এমন পোয়া মাছ চট্টগ্রামেও খাই নাই,হাহাহা...ক্ষুধা হচ্ছে বেস্ট সস,তাই না?যাই হোক,খেয়ে রওনা দিতে বাইক স্টার্ট দিব,এমন সময় দুই পিচ্চি এসে জিজ্ঞেস করল, “ভাইয়া এটা কি জাম্পিং বাইক”?হাহাহাহাহা...ভালই মজা পাইলাম,লেটস গো,জাম্পিং বাইক...হাহাহা...
যে রাস্তা ধরে আমরা জাম্পিং করছি রাস্তাটা এতই সরু যে একটা ট্রাককে পাস করার মত জায়গা নাই একটা বাইকের।একটা মোড় নেয়ার সময় ট্রাককে টু পয়েন্টার টার্ণ নিতে হয়,আজিব এক রোড।তবে বাইকের জন্য অসাম একটা রোড।বিপরীত দিক থেকে বড় কোন গাড়িই আসতে দেখিনি,মনে হয় কোন বাইপাস টাইপ রোড ছিল।যা কেবল স্পেশাল ফেরিতে করে আসা মাছের ট্রাক ব্যবহার করে বলে একদিক থেকেই বড়গাড়ি চলে কেবল।যাই হোক,একবার ট্রাক দাঁড়িয়ে সাইড দিয়ে দিলে বাকি রাস্তাটা যে কোণ বাইকারের জন্য অসাম।কুইক শার্প টার্ন,ভাল ইনার এ্যাংগেল।মোটের উপর,দ্রুতই পার করে ফেলা সম্ভব।
ফাইনালী,আমাদের জাম্পিং বাইক যেখানে ল্যান্ড করল সেটা আরেকটা ছোট ফেরিঘাট।বিশাল গাড়ির লাইন ছিল,বাট নো ওরিস,আফটার অল,জাম্পিং বাইক।চিপাচাপা দিয়া গিয়া একদম লাইনের মাথায় গিয়া দাড়ালাম।ফেরি থেকে গাড়ি নামলেই উঠে যাব।সাথে আরো স্থানীয়া দুই/তিনটা বাইক দাঁড়ানো।আমাকে একজন ডেকে বললেন যে বাইকটা একটু সরিয়ে দাড়ানোর জন্য,ফেরি থেকে না হলে গাড়ি নামতে ঝামেলা হবে।এখন সরে যেখানে দাড়ালাম,তার কারণে আর ওনাদের কারো বের হবার কোন জায়গা থাকল না।বের হতে হলে আমাকে আগে যেতেই দিতে হবে।হাহাহাহা...তবে বেশ কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকলাম গাড়ি সব নেমে গেল কিন্তু ফেরীতে আমাদের উঠতে দিচ্ছে না।এমন সময় একজন বাইক স্টার্ট দিলেন এসে,বললেন ফেরীরে ট্রলার লাগছে,ইশারাতে ওদিকে যেতে বললেন।আমি তো বেকুব হয়ে তাকিয়ে রইলাম।পাশের একজন বাইকার বুঝিয়ে বললেন,আমিও খুশি মনে ফেরীতে উঠে পড়লাম আর সোজা গিয়া ঝাপ দিয়ে নেমে পড়লাম নদীতে...তবে নদীর উপরে একটা ট্রলাম ভাসছিল।হাহাহাহা...আসল কথা হল,গিয়া তো পুরাই অবাক হয়ে গেলাম।আরে মর জ্বালা,এটাতে উঠামু কেমনে বাইক।ফেরীর সাইড গার্ডেইতো বাইক আটকে আছে,জোরে আইসা ফাল দিলে তো ট্রলার দৌড় দিব,আর আমি তখন রিয়েলি নদীতে যামু।এদিক ওদিক চাইতাছি,সবাই তামশা দেখতাছে ফ্রিতে।এমন সময় ট্রলারের মাঝি হাত তুলে দাঁড়াতে বলল।সামনে এসে দাঁড়াতে ইশারা করলেন।দাড়াবার পরে,হাত দিয়ে টেনে বাইকের সামনের চাকা গার্ড বার পার করে ট্রলারে উঠিয়ে দিলেন,বাকিটা তামশা ছাড়াই উঠে গেলাম।ব্যাস,শেষ পর্যন্ত ট্রলারে করেই পার হলাম কোন খাল বা কোন নদী।ঘড়িতে তখন ৪টা ৩০মিনিট আর আমরা মাদারীপুরের পথে।
এই রাস্তাটার খুবই খারাপ অবস্থা।কাজ চলছে, পুরাই গ্রেভেল রোড যাকে বলে আরকি।এতই লুজ সারফেস যে ৩০ এর উপরে চালাতে রিতীমত কষ্ট হচ্ছিল,বাইক প্রতিবাদ করে ওঠে জাম্প দিতে...হাহাহাহা...ওখানে এক বয়স্ক মানুষকে জিজ্ঞেস করলাম এখানে থেকে কুষ্টিয়া যেতে কিরকম সময় লাগবে।কিছুক্ষণ চিন্তা করে বললেন কাল সকাল হয়ে যাবে।আমরা কি কমু বুঝতে পারলাম না,কেবল আমি দোস্তর দিকে তাকাই,দোস্ত আমার দিকে তাকায়।যাই হোক,মুখ চাওয়া-চাওয়ি শেষ করে,প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিতে দাঁড়িয়ে পড়লাম,আর দু’জনে হিসাব নিকাশ করে সীদ্ধান্ত নিলাম,বুইড়া হালা বেকুব।উল্টা-পাল্টা কইতাছে,বয়সে সম্মানিত মুরুব্বী হালার মাথা পুরাই গেছে।হয়ত মনে করছে আমরা ইন্ডিয়ার কথা কইছি...হাহাহাহা...
যাই হোক,তবে একটা কথা ঠিক বলেছিলেন যে এই রকম রাস্তা আর বেশি দূর নাই।সামনের বাজার থেকেই রাস্তা ঠিক হয়ে গেল আর আমরাও বাতাস কেটে দ্রুত ছুটলাম গন্তব্য কুষ্টিয়া।
সন্ধ্যা ৭টা ১৫মিনিট।
প্ল্যান ছিল এই সময়ের মধ্যে কুষ্টিয়া পৌছে যাবার কিন্তু এখন পেট্রোল পাম্প এ।আগের রাতে ১১০০টাকার তেল নিয়েছিলাম,এখান থেকে নিলাম ১০০০টাকার।বের হয়ে দাড়ালাম এক চায়ের দোকানে।চা খেলাম আর পথের হদিস নিয়ে নিলাম।জেনে নিলাম পথে কোন ডাকাতি বা এই ধরনের কোন সমস্যা আছে কিনা।ওনারা জানালেন আমাদের ভয় নাই,আমরা অনেক আগেই পার হয়ে যাব অই রাস্তাটুকু।খুব রাত হলে গিয়ে যত ভয়,এখন কোন সমস্যা না।যাই হোক চা খেয়ে আর দেরী করলাম না,দিলাম দৌড়।তবে যে জায়গা দাড়িয়েছিলাম সেটার নাম মনে নেই এখন আর,আজিব।হাহাহা...
তখন বাজে রাতের ৯টা বা সাড়ে ৯টা...
ভ্রমণের আসল মজা শুরু।রাস্তা হঠাৎই প্রচন্ড কুয়াশায় ঢেকে গেল।যদিও আমি জ্যাকেট,মাফলার গ্লাভস পরে আছি আমার হাত প্রায় অবশ হবার অবস্থা।তার উপর সমানে বাইক কাপতেছে কারণ আমার দোস্ত পেছনে বসে ঠান্ডায় তার পা কাপতেছে এবং এতই কাপতেছে যে পুরা বাইক ভাইব্রেট করতেছে।আমার ভয় লাগল,হালার আবার হাইপোথারমিয়া হয়ে যায় কিনা।তার কথা মত এক বাজারে বন্ধ দোকানের সামনে দাড়ালাম,যদিও কোন দোকানপাটই খোলা ছিল না আর সেখানে।দোকানের সামনেই ব্যাগ থেকে এক্সট্রা ট্র্যাক বের করে জিন্সের প্যান্টের উপর দিয়ে পরে নিলাম।আমি পুলওভার,হুডি দেন জ্যাকেট,গ্লাভসের ভেতর একটা ইনার গ্লাভস পরে নিলাম।হুডি তুলে,নাক-মুখে মাফলার পেচালাম,তার উপর উইন্টার বাইক মাস্ক পরলাম,দেন হেলমেট পরে আবার রওনা দেবার জন্য রেডি হলাম।এমন সময় যদি এখন প্রকৃতি ডাকে তাহলে কি করব ভেবে দু’জনে খুব হাসাহাসি করে নিয়ে যাত্রা করলাম আবারো।
কুয়াশা ঠেলে এগোচ্ছি।খুবই ভাল রাস্তা।আমাদের চোখে সমগ্র বাংলাদেশের ভেতর বেস্ট রাস্টা হচ্ছে উত্তরবঙ্গে।এত কুয়াশা,দূরের গাড়ির লাইট দেখেই কেবল বোঝা যায় গাড়ি আসছে,রাস্তা দেখার সময় নাই অথচ বাইক নিশ্চিন্তে ৮০-৮৫তে চালাতে পারবেন।একটু ঝাঁকিও লাগবে না।তবে এর চেয়ে দ্রুত গতিতে যেতে পারবেন যদি বাতাসকে ভয় পেতে না হয় আপনার,ভয় পেতে না হয় শীতকে।হাহাহাহা...
ফাইনালী রাতের ১২টা বা শোয়া ১২টার দিকে আমরা পৌছে গেলাম কুষ্টিয়া।
পৌছেই হোটেল খোজা শুরু করলাম।খুব বেশি বেগ পেতে হয়নি হোটেল খুঁজে পেতে।হোটেলের নাম ছিল হলিডে ইন্টারন্যাশনাল।এত রাতে খোলা পেয়েই আমরা খুশি হলাম।ভাল হোটেলের সাথে মিলিয়ে লাভ নাই,তবে পরিচ্ছন্ন হোটেল।আমরা এটাকে পয়েন্ট জিরো ফাইভ স্টার হোটেল বলে নির্ধারণ করলাম।দেরী না করে রুম থেকে বের হয়ে খেতে নেমে গেলাম।দুটা হোটেল বিসমিল্লাহ আর ???রেস্টুরেন্ট...কিছু একটা...নাম মনে নাই...হাহাহা...মনে হয় যেটার নাম মনে নাই ওটাতেই ঢুকলাম।খেলাম নান,বিফ...দেন রসমালাই...
রসমালাই খেয়ে মনে হল,কুমিল্লারটাকে হার মানায়।
আর নান রুটি তৈরী করার অভিনব এক পদ্ধতি দেখে শিখলাম।যেখানে তন্দুর ব্যবহার করা হয় না,সাধারণ গ্যাসের চুলাতে তৈরী হচ্ছে নানরুটি...তাওয়ার মত একটা কিছুতে শেকা হচ্ছে,পরে উল্টো করে সরাসরি আগুনের ওপর ধরে নানকে পারফেক্ট সফটনেস দেয়া হচ্ছে...আসছে সেই একই রকম ফ্লেভার...তবে হয়ত তা পুরোপুরি নানরুটির কাইয়ের উপর নির্ভর করছে...হাহাহাহা...অ-সা-ম...
খাওয়া দাওয়া শেষ করে আরেক নতুন চমক দেখলাম চা খেতে গিয়া।এটা না কাল সকালেই ভাল করে দেখে বলব...এখন এতই ক্লান্ত যে শরীর কেবলই ঝিমাচ্ছে।তাই চা খেয়েই আর দেরী না করে সোজা রুমে, পয়েন্ট জিরো ফাইভ স্টার হোটেলের বিছানাতেও দু’চোখ ভেঙ্গে ঘুম চলে আসলো,রাজ্যের ঘুম...zzzZZZZ

নিদ্রা দেবীর প্রেম, ২৩শে ডিসেম্বর ২০১৪:
দেরীতে হলেও উঠলাম,ঘড়িতে তখন ১২টার মত বাজে।কোনদিক দিয়ে সময় গেছে জানি না...হাহাহাহা...ঘুমে আর মরণে সমান ভেবে নিয়ে,দুই দোস্ত তড়িঘড়ি করে ফ্রেশ হয়ে নিচে নামলাম খেতে।গিয়ে দেখি হোটেলে নাস্তা বলতে যে সকল জিনিস যেমন-রুটি বা পরটা কিছুই নাই।যা আছে তা হচ্ছে পুরি,মোগলাই,সিংগারা ইত্যাদি।
কি আর করা,ক্ষুধায় তো পেট জ্বলছে,তাই পুরি দিতে বললাম। পুরি আসলো আর অবাক হবার শুরু হলো।পুরির উপর গুড়া গুড়া যেই জিনিসটা ছড়িয়ে দেয়া আছে, তার বর্ণ লাল আর তার নাম হচ্ছে মরিচ।আমরা পুরাই থ,এটা কেমন?সাথে আবার সস টাইপ একটা জিনিস দিছে আলাদা বাটিতে।তবে যেই পুরির একটা টুকরা সসে ভিজিয়ে মুখে দেবেন আরও অবাক হবেন।এত স্বাদ কোথা থেকে আসল?হাহাহা... সসটা আসলেই পুরাই অন্যরকম,অ-সা-ম...একটু মিষ্টি তবে পুরিতে মরিচের গুড়া থাকাতে তেমন মিষ্টি লাগে না,হালকা ঝাল যুক্ত স্বাদ লাগে।মোটের উপর অসাধারণ...পুরা ৬টা পুরি (যেটাকে ৪টুকরা করে কেটে দেয়া হয়) সাবড়ে দিলাম আর পরে একটা মোগলাই দিতে বললাম...অবশ্য হাফ খেয়ে রণে ক্ষান্ত দিলাম।দোস্তও খাবে না,সে রসমালাই খাবে।হাহাহাহা...কি আর করা একবাটি রসমালাই ও খেয়ে নিলাম...খেয়ে চা খেতে বের হলাম। দুধ চা...বলবেন এটা আবার আলাদা করে বলার কি আছে?
এখানে দুধ চা বেশ অদ্ভূতভাবে তৈরী হয়।চুলায় কেবল পানি গরম হচ্ছে,কোন লীকার না...এখন একটা ছোট ছাকনি টাইপ কৌটা আছে,যেখানে কাচা পাতা দেয়া হয় প্রতিটি কাপ চা বানাবার জন্য।চায়ের পাতাগুলো মিহি করে গুড়া করা।ফলে চা কড়া পাতলা ক্রেতাদের ইচ্ছানুযায়ী করা সম্ভব হচ্ছে কোন ঝামেলা ছাড়াই আর চা-ও খেতে বেশ সুস্বাদু...দুই কাপ খেয়ে ফেললাম কোন কথা ছাড়াই...হাহাহাহা...
সব খানাদানা শেষ করে রুমে ফিরলাম তখন একটা বা দেড়টা বাজে।গোসল সেরে,রেডি হয়ে বের হলাম।উদ্দেশ্য লালনের আখড়া,কুঠিবাড়ি...
লালনের আখড়াঃ একে ওকে জিজ্ঞেস করে পৌছে গেলাম লালনের আখড়ায়।গিয়েই মনটা ভালো হয়ে গেল।অনেক দিন যাবার ইচ্ছা ছিল কিন্তু হচ্ছিল না।যাই হোক,ঘুরে ঘুরে দোকান কি আছে দেখলাম,ছবি তুললাম,মডেলিং করলাম...হাহাহাহা...হাজারটা জিনিস পরে ছবি তুললাম...হাহাহাহা...
পাগলামী শেষ করে মাজারের দিকে গেলাম।ভেতরে দেখলাম লালনের সময়কার চর্চা এখনো ধরে রাখা হয়েছে।গোল হয়ে বসে কে কিভাবে কি অনুধাবণ করছেন তার আলাপ চলছে,তবে সেখানে দাড়ালাম না।ছবি তুলতে ব্যস্ত।এদিকে দোস্ত জিজ্ঞেস করল গান শুনবো কিনা,আবার জিগস বলে রাজি হয়ে গেলাম।সো,গান শুনলাম কিছুক্ষণ লাইভ...ভিডিও করলাম,ছবি তুললাম।এরপর কিছুক্ষণ সাইজি ও তার দর্শন নিয়ে নানা কথা হলো,এপার বাংলা ওপার বাংলার লালনগীতি নিয়ে কথা হল।কথা হল ওনাদের জীবিকা নিয়ে,কিভাবে চলছে সব।লালন সংগীত একাডেমি থেকে তখন গানের সুর ভেসে আসছিল। “আপনারে আপনি চিনি নে...”...হাহাহাহাহা...
সব শেষ করে বের হলাম,যাব কুঠিবাড়ি...

কুঠিবাড়ি নিয়ে তেমন কিছু বলার নেই,কুষ্টিয়া থেকে ১৫ কিঃমিঃ দুরত্বে,মেইন রোড় থেকে বামের দিকে রাস্তা ঢুকেছে একটু গিয়েই ডান দিকে বেঁকে সোজা চলে গেছে কুঠিবাড়ির দিকে।ওখানে দিয়ে খেলাম কুষ্টিয়ার বিখ্যাত মালাইয়েইর আইসক্রীম...হাহাহাহা...যারা চট্টগ্রামে চেরাগীপাহাড়ের মোড় থেকে ঘরে তৈরী পেস্তা বাদামের পেস্ট দিয়ে তৈরী একধরনের কুলফি আইসক্রীম খেয়েছেন তাদের কাছে স্বাদটা পরিচিত লাগবে।তবে চট্টগ্রামে খেতেন বোতলে আর এখানে পরিবেশন করা হয় কলাপাতার উপর,তালপাতার চামচ দিয়ে।মাথায় শয়তানী আসল,বললাম,এত তালপাতা আর কলাপাতার জন্য কতগাছ মেরে ফেলতেছেন,তার চেয়ে গ্লাসে দেন।হাহাহাহা...খাওয়া শেষ করে আবার পাতা আর চামচ ফেরত দিলাম,ধুয়ে আবার ব্যবহার করেন।তবে এভাবে স্বাস্থ্যকর হবে কিনা জানি না,অন্তত গাছের জান বাচবে...হাহাহাহাহা...এইসব করে ঢুকে পড়লাম রবিঠাকুরের বেডরুমে...হাহাহাহা...মোটেই জানালা দিয়ে পূর্ণিমার চাঁদ দেখা যাবার কথা না,তবে দোতলার বারান্দার মত স্থানে দাড়ালে উনি কি দেখতেন জানি না,আমি দেখলাম সামনের চারটা বড় পাম্প ট্রি আর তার পরে খোলা মাঠ...কবিতা কি লেখা যায় কেবল প্রকৃতি দেখে,কি জানি...হাহাহাহা...দেখলাম বজরার ছবি,যা নিয়ে পদ্মায় ঘুরে বেড়াতেন আর লিখতেন খুব সম্ভবত...কি জানি বজরাটা পদ্মায় ভাসানো অবস্থায় দেখলে বুঝতে পারতাম...হাহাহাহা...এসব ভাবতে ভাবতে মনে হল,আমি কি রবি ঠাকুরকে বিচারের চেষ্টা করছি?নিজের সাহস দেখে ভয় পেয়ে গেলাম,তাড়াতাড়ি বের হয়ে গেলাম সেখান থেকে,তবে বের হবার আগে একটি পরিবারের ছবি তুললাম।
একদমই ধর্মভীরু পরিবার,একজন বয়স্ক ব্যাক্তি,সাথে দু’জন মহিলা যেহেতু চোখ ছাড়া কিছুই দেখা যাচ্ছে না, বুঝতে পারলাম না দু’জন কি ওনার স্ত্রী নাকি মা-মেয়ে...আর সাথের দু’জন নাতি কিনা তাও নিশ্চিত হতে পারলাম না।কারণ তারা কেবল ছোটাছুটি করছে।যাই হোক,হুজুরসাহেব দুই নারীর ছবি তুললেন...কেন তুললেন বুঝলাম না?কিছুই তো দেখা যাচ্ছে না চোখ ছাড়া...তবুও ভাল লাগল,অন্তত এখানে তো এসেছেন,ঘুরিয়ে দেখাচ্ছেন সব।হাহাহা...যাই হোক ওনাদের ছবি অনুমতি ছাড়াই নিয়েছিলাম বলে এখানে দিলাম না,থাক আমার কাছে,আমিই দেখি...হাহাহাহা...
বের হয়ে এলাম।আর বের হয়ে প্রচন্ড ঝাল দিয়ে খেলাম আমড়া ভর্তা...ঝালে পাগল হয়ে আরেকটা বিখ্যাত আইসক্রিম খেয়ে,বাইকে উঠে পড়লাম।ফিরে এলাম কুষ্টিয়া সন্ধ্যার একটু পরেই।এসেই রুমে গিয়ে শীতবস্ত্র পরে নিলাম,ব্যাকপ্যাক গুছিয়ে নিলাম রুম ছেড়ে দিলাম।বের হয়ে খেয়ে নিলাম,এবার সেই বিখ্যাত নান আর বিফ...দোস্ত খিচুড়ী খেল...তারপর আবার রসমালাই...হাহাহাহা...
চা খেয়ে শেষ করে যখন বাইক ছাড়লাম তখন কয়টা বাজে ঠিক স্মরণ নেই,তবে অন্ধকার হয়ে গেছে চারদিক।যদিও আমাদের প্ল্যান ছিল না রাতে বাইক চালানোর তবে শীতে যখন প্রথমদিনই রাতে চালাতেই হয়েছে তাই আর ভয় না পেয়েই সময় বাচালাম,ইতিমধ্যে অর্ধদিন পিছিয়ে গেছি আমরা পরিকল্পণা থেকে।হাহাহা...ঠিক মনে পড়ছে না কোথায় ভুল করেছি তবে নাটোরে যাবো ইচ্ছা ছিল কাচা গোল্লা খাবার জন্য আর ২০ কিঃমিঃ উলটা দিকে চলে গিয়েছিলাম,পরে আবার এক চায়ের দোকানে জিজ্ঞেস করে ফিরে আসলাম সঠিক পথে।তবে যখন নাটোর পৌছলাম তখন বাজে ৮টা ১৫মিনিট...হাহাহাহা...
পথের অবস্থা খুবই ভাল,তেমন কোন ভাঙ্গা চোরা নেই বললেই চলে।এবার খুজছি “জয়কালী মিষ্টান্নভান্ডার”।কোথাও ওয়াজ হচ্ছিল,ফলে মানুষ কমছিল রাস্তায়।আমরা একে ওকে এবং পুলিশকে জিজ্ঞেস করে পৌছে গেলাম জয়কালী মিষ্টান্ন ভান্ডার।আশাহত হলাম বিখ্যাত কাচাগোল্লা দেখে।অবিকল সুজির মত করে একটা বড় গামলাতে রাখা কাচাগোল্লা,কোন শেইপে না...মনে হল যেন সুজি...হাহাহাহা...খেলাম,তেমন স্বাদের মনে হল না।এর চেয়ে আমাদের কাচাগোল্লা ফার বেটার মনে হল।তবে ওটা হয়ত খাটি বলেই এমন মনে হল,কি জানি।হাজার হোক বাঙ্গালী তো,হাহাহা...সাথে গরম চমচম খেলাম।এসব খেয়ে বাইকে উঠে পড়লাম,ইচ্ছা আছে যতদূর যাওয়া যায় চলে যাব।
ঠিক কখন আমরা বগুড়া পৌছেছিলাম মনে নেই,তবে খুব সম্ভবত ১০টা বা সাড়ে ১০টার দিকে...প্রথম কথা,খেতে হবে।ক্ষুধা লাগছে...কোনকথা ছাড়াই একটা হোটেলের সামনে দাড়ালাম,আর নেমে হাতমুখ ধুয়ে খেতে বসে গেলাম।সহজ হিসাব,ভাত আর কালাভুনা...দুই বন্ধু ধুমায়ে খাইলাম,সাথে কি এক মাছের ভর্তা খাইলাম...যাই হোক,মাছের ভর্তা পয়েন্টলেস।খাওয়া শেষ করলাম,চা-বিরি খাইলাম।খেয়ে বের হয়ে মেজাজ খারাপ হয়ে গেল।বাইক বের করার জায়গা নাই।সব ট্রাক এসে ভরে গেছে।যাই হোক,এক ড্রাইভার ভাইকে ভদ্র ভাষায় দুটা কথা বলতেই উনি ইঞ্জিন স্টার্ট দিয়ে জায়গা করে দিলেন,আর আমরাও বের হলাম।হাহাহাহা...সিদ্ধান্ত নিতে পারছিলাম না আমরা কি এখানেই আজকের মত খান্ত দিব নাকি সামনে ছুটব।দোস্তকে এত করে এই মাথা সেই মাথা ১৪মাথার কথা বললাম,তারপরো তার মাথায় ঢুকাইতে পারলাম না,এখানেই থাকি।হালায় খালি সামনে দৌড়াইতে চায়।যাহ শালা,মেজাজই খারাপ হয়ে গেল।চল দেখি কতদূর যাইতে পারছ।
রাতের তখন ১১টা ১৫মিনিট আবার বাইক চলছে।বগুড়া থেকে বের হলাম আর রাস্তা দিয়া বাইক ৩০ এ চালাচ্ছি,কারণ রাস্তা দেখছি না তেমন কিছুই আর রাস্তা এতই ভাঙ্গা যে বলার মত না,কি হইল এখানে দিয়া কিছুই বুঝলাম না।দেখে মনে হল ইচ্ছা করেই সব কোদাল দিয়া কোপায়ে কোপায়ে গর্ত করে রাখছে।কিছু দূর গিয়ে দেখি রাস্তার কাজ চলছে আর এত অন্ধকার রাস্তা আগে কোথাও দেখি নাই।যেন আসেপাশে কিছুই নাই যদিও দাঁড়িয়ে দেখার মত ইচ্ছা ছিল না।একেতো মেজাজ খারাপ,তার উপর রাস্তা এতই খারাপ যে মেজাজ আরো চড়ে যাচ্ছে।আর পেছনে বসে আমার দোস্ত সমানে তসবিহ জপতেছে, “এই আস্তে...বেশি জোরে চালইস না”।তাও চান্স পাইলেই আমি তো দে দৌড়,সেদিনই প্রচুর বাসের চাপা খাইছি।এত রাতেও বাস পারে তো আমাদের রাস্তা থেকা নামাইয়া দেয়।দোস্ত পিছনে বইসা হালাদের গাইল্লায় আবার আমারে বলে, “তুই কিন্তু আস্তে চালা।হালাগোর বউয়েরা ফোন দিতাছে,দেখস না”।
হাসুম না কান্দুম...কিসের ভিতর কি।বউ আইলো কোথা থিকা।গাছের দিকে তাকাইয়া দেখলাম কোন পেঁচি দেখা যায় কিনা...হাহাহাহাহা...কালকে দেখতে পারুম কিনা কে জানে,রাস্তার যেই অবস্থা!!!
ঘড়িতে তখন ১টা বা শোয়া ১টা।এক সালাদিয়াঢাকা হোটেলের সামনে দাড়ালাম।চা দিতে বলে চূলার পাশে গিয়া দাড়ালাম।আমাদের দশা দেখে দোকানী আগুন একটু বাড়িয়ে দিলেন,নিজে সরে জায়গা করে দিলেন দাড়ানোর।আমি আগুন পোহাচ্ছি,দেখি আমার দোস্ত নাই।আরে হালা গেল কই,খুজতে খুজতে দেখি অন্ধকার থেকে বের হচ্ছে, “কিরে”? প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিলেন তিনি,আমিও সুযোগে দাঁড়িয়ে গেলাম। কোথায় দাড়ালাম জানি না,তবে প্যান্ট খুলতে খুলতে হয়রান হয়ে গেলাম,তারপর আবার আন্ডি...তবে পরে গাড়ির লাইটের আলোতে দেখলাম সামনেই একটা দোকান।না দেখার ভান করে কাজ সেরে এলাম।চা খেতে খেতে দোকানী ভদ্রলোকের সাথে কথা হল বললেন যে সামনের রাস্তায় তেমন কোন সমস্যা নাই।আমরা বিপদজনক রাস্তা পার হয়ে এসেছি।শুনে স্বস্তি পেলাম,তবে অস্বস্তিও লাগল এই ভেবে যে,আগে জানলে তো আসতামই না এত রাতে অই রাস্তা দিয়া...হাহাহাহা...দোস্তর দিকে একবার তাকাইলাম কেবল, সাথে সাথে বলে উঠল, “ভুল হইয়া গেছে রে,ভুল হইতেই পারে”।হাহাহাহা...এবার চল।
রাতের আড়াইটা, গোবিন্দগঞ্জ। চায়ের দোকান।
সবাই এরপর যেতে মানা করছেন।রাস্তায় ডাকাতি হবার চান্স হাই।সবাই এখানে থেকে ভোরে যাত্রা করতে বলছেন ফুলবাড়ির উদ্দেশ্যে।কি আর করা,খুঁজে ফিরে কোন হোটেলই পেলাম না থাকার মত,পরে গিয়ে এক মোটেলে উঠলাম।কোন স্টার দেবার উপায় নাই।কেবল রাত্রি যাপন করতে হবে বলেই আপনি উঠতে পারেন এমন মোটেলে।কাপড় চোপড় পরেই বিছানায় পিঠ লাগালাম আর সেভাবেই ঘুমিয়ে গেলাম... zzzZZZZ...স্বপ্নেও পেঁচিরে পেলাম না...হাহাহাহা...


মাথাগোঁজার ঠাই,২৪শে ডিসেম্বর,২০১৪:
এতই খারাপ অবস্থায় ছিলাম রাতে যে মনে হয় ভোরের অপেক্ষায় ছিলাম,তাই কাক ওঠার আগেই উঠে পড়লাম।যথারীতি দুই বন্ধু একসাথে থাকলেও একসাথে ঘুম থেকে কোনদিন মনে হয় উঠি নাই এর আগে,থুক্কু না উঠছি,তবে সবসময়ই তা কোন না কোন ট্যুরে...হাহাহা...ফলে ঘটনা একই।বাথরুম নিয়া ঠেলাঠেলি,গালাগালি...ওই জলদি বাহির হ,না হইলে কিন্তু তোর তোয়ালের উপর কাজ সারুম...হাহাহাহা...
যাই হোক, কোন অঘটন ছাড়াই রেডি হয়ে বের হলাম।প্রচন্ড ঠান্ডা,কুয়াশায় ঢাকা গোবিন্দগঞ্জ।হোটেলে ঢুকে পড়লাম,নাস্তা করলাম ভরপেট,চা-বিড়ি খেলাম।গিয়া কোল্ড ইঞ্জিন লইয়া মুছিবতে পড়লাম।কিছুতেই বাইক স্টার্ট দিতে পারতাছি না।দোস্ত হালা চান্স পাইয়া,সমানে পার্ট লইলো, “তোরে দিয়া কিছুই হইব না,টাইমলি একটা কাজ করতে পারছ না।শুরু থিকা দেরী করতাছস,এখনো দেরী”।হাহাহা...যাক গালি-গালাজ সহ্য করে বাইক স্টার্ট হল,গন্তব্য ফুলবাড়ি, দেন দিনাজপুর।
রাস্তায় খুবই কুয়াশা তবে যথারীতি রাস্তা ভাল।কিন্তু বেশি জোরে চালাইলেই দোস্তের হাটু কাপে...হাহাহাহা...কি আর করা,এবার আমার গালি দেয়ার চান্স।হাহাহা...তবে এর মাঝেই হালা সীদ্ধান্ত পরিবর্তণ করল যে ফুলবাড়ি না গিয়া আগে হিলি চলে যাই।যে রাস্তা ধরে যাচ্ছি তার থেকে যাবার কোন কানেক্টিং রোড থাকার কথা।তবে রাস্তাটা খুবই সুন্দর,দু’পাশে শালবন টাইপ,মনে হয় জঙ্গলের মাঝ দিয়ে রাস্তা করা।আর্মির পাহারারত গাড়ি দেখতে পাবেন,খব ধীর গতিতে চলছে।হাহাহাহা...
সামনের এক চায়ের দোকানে চা খেতে দাড়ালাম,জিজ্ঞেস করে নিলাম কানেক্টিং রোডের কথা তবে তা ২০ কিঃমিঃ পেছনে।যাই হোক,চা শেষ করে উলটা ঘুরে দিলাম ছুট।
আমরা কানেক্টিং রোড ধরে ছুটছি,রাস্তা তেমন খারাপ না তবে হালকা পটহোল আছে,তবে কুয়াশা তখন ঢেকে রেখেছে পুরো অঞ্চল।রোদের পেছনে ধাওয়া করতে করতে ছুটলাম হিলির দিকে,যখন হিলি পৌছালাম তখন বাজে সকাল ৯টা...সোজা চায়ের দোকানের সামনে দাড়ালাম আগে।চা খেতে খেতে পরিচিত হলাম ওখানে যারা বসে আছেন।তারা আমাদের কাহিনী শুনেই গাইড হয়ে গেলেন,কি আছে না আছে,কোথায় যেতে হবে সব শেয়ার করে ফেললেন।আমরাও ওনাদের সাথে কথা শেষ করে বর্ডারের দিকে এগিয়ে গেলাম।
বর্ডারের সামনে ল্যান্ড পোর্টের সামনেই বাইকটা রাখলাম।আমাদের দেখে মানুষের অনুসন্ধিৎসা জাগাটাই স্বাভাবিক।আজিব চিড়িয়া...দু’জন ব্যক্তির সাথে পরিচয় হল।নামটা কেন এখন মনে নেই বুঝতে পারতেছি না।তবে চেহারা তো সবই মনে আছে।
একজন মাঝবয়সী,চান্দি ছিলা।পান খান,প্রচুর কথা বলেন। আরেকজন মাঝবয়সের শেষের দিকে,কাচাপাকা চুল,ভালই গড়ন,লম্বা ৫’১০” বা ৯” হবে,বেশ হাস্যোজ্জ্বল মানুষ।এখানকার স্থানীয়,বিয়ে করেছেন এখানেই,বড়ভাই পুলিশে আছেন,উনি ব্যবসা করেন।এককালে ফুটবল খেলতেন যখন বাংলাদেশে ফুটবল লীগ প্রচলিত ছিল খুব।মোটের উপর ওনারা কেউই আংকেল গোছের না ফলে মেশা খুবই সহজ হল।
আমরা রেললাইন ক্রস করে ইন্ডিয়ার বর্ডারের কাছে গেলাম,ছবি তুললাম।যদিও ইন্ডিয়ান সেনারা মানা করলো ওনাদের ছবি না নিতে...হাহাহা...কি জানে,কেন?ওখানে আমাদের বর্ডার গার্ডের পদস্থ কোন ব্যক্তির সাথে কথা হল।আমাদের উদ্দেশ্য জেনে হাসলেন,বললেন পত্রিকার কেউ না হলেই ভালো।হাহাহাহা...যাই হোক,ছবি তুলে শেষ করলাম।ওনারা আমাদের বাইকটা ডাকবাংলার সামনে রাখতে বললেন।এবার নিশ্চিন্তে ঘুরতে বললেন আর ওনাদের ফোন নাম্বার দিলেন যদি কোন সমস্যা হয় যেন জানাই।আর আমাদের চা অফার করলেন,কিন্তু ভুলে দোস্ত বিল দিয়ে দেয়ার খুবই রাগ করলেন।মোটামুটি বিদায় না নিয়েই চলে গেলেন।হাহাহাহা...
আমরা হিলি মার্কেটে ঘুরে বেড়াচ্ছি,বাইক পার্টস দেখছি।টায়ার খুজছি জেপারের...হাহাহা...ড্রাই সেল ব্যাটারী এইসব হাবিজাবি...হঠাৎ দোস্ত বললা চল ইন্ডিয়ান কিছু জিনিস কিনি,লাইক যেগুলা মা’দের কাজে দিবে।যেই বলা সেই কাজ,এক দোকানে গেলাম পরবর্তীতে যিনি আরেক ফারুক হিসাবে আবিষ্কৃত হলেন।ফারুক ভাইয়ের সাথে সমানে আড্ডা দিলাম আর পাশের দোকান থেকে বাচ্চাদের জন্য বিস্কিট,ক্যান্ডি নিলাম...বয়স্কদের জন্য দুনিয়ার ব্যাথার ক্রিম,ঝান্ডু বাম,মাথা ব্যাথার মলম,গা ব্যাথার মলম নিলাম।আর ক্যাশমেমো নিয়ে নিলাম,না হলে চেক পোস্টে আটকাবে।হাহাহা...আর ফারুক ভাইয়ের কাছ থেকে ইন্ডিয়া থেকে আনিয়ে নিলাম আমচুর,হিং,সাদা বা কালো এলাচি ইত্যাদি।তারপর ফারুক ভাই আতিথিয়তা করলেন হিলির পানীয় দিয়ে,আমরা দুই দোস্ত অবাক হয়ে গেলাম...হাহাহাহা...সমানে কথা বলতে থাকেন ফারুক ভাই,এবার তার কারণ খুঁজে পেলাম।হাহাহাহা...যাই হোক,আমার কপালে কিছুই জুটল না,আমাকে বাইক চালাইতে হবে।আসলে পেঁচির ভয়ে কিছু করতে পারছিলাম না,বারবার মনে হচ্ছিল যদি দেখে ফেলে।কোন চিপাতে বসে আছে কে জানে...হাহাহাহা...তবে কিছুক্ষণ চেষ্টা করলাম যদি এড়িয়ে কিছু করা যায়,পরে রণেক্ষান্ত দিলাম।আর বাইকে উঠে বসে থাকলাম,গাল ফুলিয়ে।ফারুখ ভাই আর দোস্ত মজা নিল।হাহাহাহা...
দুপুর ১২টা,হিলি থেকে রওনা দিলাম,যাব দিনাজপুর।ছুটে চলছে জাম্পিং বাইক সোজা রাস্তা ধরে।পথে চেক পোস্টে দাড়ালাম।জিনিসপত্র দেখে বলল এত কেন?পরে আমাদের কথাবার্তা সব শুনে কিছু বললো না আর,কেবল বলে দিলেন,প্রোপার ক্যাশমেমো যেন এরপর নিয়ে নেই।এভাবে খাতার কাগজে লিখে দিলেতো হবে না।হাহাহাহাহা...
দুপুরে এক হোটেলে ভাত খেলাম আমি একা,সাথে স্থানীয় মিষ্টান্নতো আছেই...হাহাহা...খেলাম মাছের ডিম,ছোট মাছের দোপেয়াজি টাইপ কিছু একটা,মাছের ও সবুজ কিছু একটার ভর্তা আর কালোভুনা যদিও গরুর মাংসের তরকারী ছাড়া কিছুই না ওটা...হাহাহাহা...আমারতো ক্ষুধা আছে,হাহাহা...খেয়ে-দেয়ে আবার ছুটলাম তবে তার আগে বাইকের চাকায় হাওয়া দিলাম।এরপরের রাস্তাটুকু খুবই সুন্দর ছিমছাম,একটু সরু তবে বাইকের জন্য নো প্রব।এক মাইক্রোবাসের সাথে রেইস দিলাম,কারণ তাতে কিছু সুন্দরী বসে ছিল...হাহাহাহা...১১৪তেও যখন ধরতে পারা যাচ্ছে না তখন একটু দুশ্চিন্তা হলো,মাইক্রো কেমনে এই গতিতে চালাচ্ছে হালা,দেখতেই হইব মেয়েগুলারে।হাহাহা...দোস্তরে কইলাম পা দিয়া বাইক চাইপা ধইরা বয়।হাহাহা...খুলে দিলাম পুরা থ্রটল।
১২০...২১...২২...২৩...২৪...২৫...২৬...২৭...২৮...এইবার গিয়া মাইক্রোর পাশে পৌছাইলাম...
ওমা...এইডা কিতা!কিসের মেয়ে,কিসের কি...দুইজন খালাম্মার সাথে ৫/৬টা পিচ্চী মেয়ে...মেজাজই খারাপ হইয়া গেল...ঝাটা মারি ড্রাইভারের কপালে...হাহাহাহা...
পথে আর কোন প্রকার প্রতিদ্বন্দিতা ছাড়াই আমরা চলতে থাকলাম।হঠাৎ করেই ভয়ংকর একটা সুন্দর কিছুর টানে যেখানে ঘটাং করে ব্রেক করে দাঁড়িয়ে গেলাম সেটা আর কিছুই না একটা আখের মত লম্বা কোন কিছুর বাগান,প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিতে হবে,অবস্থা বেগতিক।হাহাহা...
তবে একটু পরেই আবার দাড়াতেই হলো,ঘড়িতে তখন ৩টা ৪৫মিনিট।বলা যায় একই রকম ভাবে বাধ্য হলাম,আর এই জায়গার নাম ‘মোহনপুর’...অসম্ভব সুন্দর করে দিয়েছে ব্রিজটাকে যেটা তা হচ্ছে একটা ড্যাম টাইপ কিছু।যা খুব সম্ভবত ব্রিজের নিরাপত্তার অংশ হিসাবা করা হয়েছে।আর এখানে তার ছবিটাই সংযোজন করার ইচ্ছা আছে,জানি না শেষ পর্যন্ত কি হয়।হাহাহা...ওখানে কিছুক্ষণ দাড়ালাম,তখনো জানতাম না যে এখানেই আবার ঘুরে আসতে হবে আমাদের।তবে তা অন্যসময়ের কথা,অন্যদিনের কথা।
আবার বাইক ছুটিয়ে চললাম দিনাজপুরের দিকে।অল্প কিছুক্ষণের মধ্যেই পৌছে গেলাম দিনাজপুর।প্রথমে অবাক হলাম দিনাজপুর দেখে,এই বুঝি দিনাজপুর,বাংলাদেশের ডান্ডি...তবে ভুল ভাঙ্গলো একটু পরে।দিনাজপুর মেডিকেল যে শহরের দ্বারপ্রান্তে সেটা কি আর আমরা জানি নাকি।পরে শহরে ঢুকে বেশ অবাক হলাম,উত্তরবঙ্গে বগুড়ার পর এখানেই মনে হল শহর-শহর একটা আমেজ আছে।তবে তখন তা দেখার সময় নাই,মাথা গোঁজার টাহি খুজতে হবে।কিন্তু কোথায় কি?যাকেই জিজ্ঞেস করি বলে এদিক দিয়ে ওদিকে যান,ওদিক থেকে ডানে যাবেন পেয়ে যাবেন,গিয়ে দেখি কই রে ভাই,এটা কি?পরে মুরুব্বি বাদ দিয়া ইয়াং কাউকে,কাঁধে ব্যাগ দাড় করিয়ে জিজ্ঞেস করলাম।এক নিমিষেই পেয়ে গেলাম আমাদের মাথা গোঁজার ঠাই...আবারো মুগ্ধ হলাম,আমি সারাজীবন ছোট থাকার এক অদ্ভুত তাড়না অনুভব করলাম।হাহাহাহা...তাড়াতাড়ি রুমে সব ফেলে,ফ্রেশ হয়ে,বাইক নিয়ে বের হলাম।পথের ধারেই একতা স্ট্রিট ফুডের দোকানে দাড়ালাম।অদ্ভূত কিছু আইটেম এখানে তৈরী হতে দেখলাম...
-খাসিত মাংসের টিকিয়া টাইপ কিছু।
-ডিম চপ।
-ছোট মাছের বড়া।
-ফুলকপির বড়া।
আর সব ইউজুয়াল পিয়াজু,ছোলা...তবে এর কিছুই কি স্ট্রিট ফুড হিসাবে কোথাও তৈরী হতে দেখেছি।কোথাও না,তবে টি,এস,সি বা ভার্সিটি এরিয়া ছাড়া...
সমানে দুই দোস্ত খাইলাম।মন ভরল তবে পেট তো ভরে না,আমি কইলাম তুই খা আমি খুইজা দেখি হোটেল আছে কোনদিকে।আসল কথা দিনাজপুরের রাস্তা একটু টেস্ট করে দেখা।কোন কিছুর অপেক্ষা না করে বাইকে উঠেই...ভো...
মনে হয় দিনাজপুরের মানুষ এভাবে সাধারণত বাইক চালায় না বা যারা চালায় তাদের ভাল চোখে দেখে না,জানি না।দেখলাম জ্যাম রাস্তার মাঝেও খালি জায়গার অভাব নাই...হাহাহাহা...তবে হোটেল খুঁজে পেলাম না একটাও,এমনকি একটা ফার্মেসিও না।কারণ মাথা ব্যাথা করতেছিল খুব।হাহাহাহা...অবশ্য পরে গিয়ে খুঁজে পেলাম কারণ সাথে দোস্ত আছিল এবং যথারীতি আমাকে গালি দিচ্ছে, “তোরে দিয়া কিছুই হয় না।এইডা কি”?...হাহাহাহা...কে জানে কি হইছে...হাহাহাহা...তবে যেই জীবন হোটেল খুঁজে পাইলাম,এটা কিভাবে পাইলাম চিন্তা করলেও অবাক লাগতেছে।
জীবন হোটেলঃ
সাইনবোর্ড দেখে আশেপাশে খুঁজে আপনি কোন হোটেল পাবেন না।তবে প্রদর্শিত পথে যদি এগিয়ে যেতে পারেন সিঁড়ির নিচ দিয়ে তারপর একটা গেইটের ভেতর দিয়ে এবং গিয়ে হঠাৎই দেখে মনে করবেন কার ঘরের অন্দরমহলে ঢুকে পড়লাম কিন্তু সেটাই হোটেলের কিচেন আর তারপরে গিয়ে হোটেল যেখানে আমরা খেলাম বাংলাদেশের শ্রেষ্ঠ ক্ষীর।আসলে অ-সা-ম...খেলাম ভয়ংকর ঝাল যুক্ত ছোলা ভাজা,সাথে ভয়ংকর ঝালযুক্ত পাকোরা আর পিয়াজু।আর আমাদের অবস্থা দেখেই বেয়ারা সাহেব আমাদের নিজে থেকেই ক্ষীর খাবার পরামর্শ দিলেন।তবে সবচেয়ে ইন্সাল্টিং ব্যাপার হল,আমাদের পাশে বসেই ৯/১০বছরের এক শিশু মায়ের কোলে বসে সমানে এসব খাচ্ছে...যদিও ছোট মানুষ হিসাবে জল জল বলে চেঁচানোটাও স্বাভাবিক...যথারীতি আবারও ছোট থাকলে কি সুবিধা ভেবে মোহিত হলাম।আমরা চোখের নাকের পানিই কেবল মুছতে পারি,জল-জল বলে চেচাইতেও পারি না যদি বেয়ারা সাহেব সদয় হয়ে ক্ষিরের কথা না বলে তাহলে ওভাবেই মুখ বুঝে সইতে হত...তবে ত্রাণ পেয়ে দুটা করে ক্ষীর খেয়ে ফেললাম।কারণ দেখতে অনেক মনে হলেও চামচ লাগানো মাত্রই বুঝতে পারবেন পুরাটাই মাটির বাটি হাফ কোয়াটার অফ এন ইঞ্চ বা হাফ মিঃমিঃ ক্ষীরের পুরুত্ব...বাটির ডায়ামিটার বেশি হলে ২ ইঞ্চি।হাহাহাহা...যাই হোক,ঝাল,ক্ষীর,ভাজা পোড়া খেয়ে বের হলাম,ভাবলাম যাই একটু রুমে,গা কেমন যেন করছে।বাইক হোটেলের গ্যারেজে রাখলাম।
মান সম্মত হোটেল,নিট,ক্লিন...নাম ***...তবে হোটেল দোতলায়,নিচে ট্রান্সকমের শোরুম ছিল মনে হয়।রুমে গিয়ে বিছানায় গা এলাতেই যেন দুনিয়ার ঘুম চাপল,দেখা যাক কখন ঘুম ভাংগে.. zzzZZZZ ...এখানে তো আর পেঁচিকে দেখতে পাবার কোনই আশা নাই...দেখা যাক স্বপ্নে আসে কিনা...হাহাহাহা...

চাচা আপন প্রাণ বাঁচা, ২৫শে ডিসেম্বর,২০১৪:
ঘুম থেকে যখন উঠলাম দুই বন্ধু তখন প্রায় বিকেল। এত আরামে, এত দ্রুত একটা দিন কাটাবো তা আগে যদি একবার ভাবতাম...হাহাহাহা...কিছুই করলাম না আর, উঠলাম, ফ্রেশ হলাম, খেতে বের হলাম। খাওয়া শেষ করে, রুমে ফিরলাম। বাইক নিয়ে হাওয়া খেতে মোহনপুর চলে গেলাম, কিছুক্ষণ ঠান্ডা খেয়েই ফুট দিলাম, রুমে এসে আমি দিলাম ঘুম। রাতে কি হলো আমি কিছুই জানি না, ডিনারো করিনি। একেবারে পরদিন ভোরে উঠলাম। আমার দোস্ত একা একাই ডিনার করে নিয়েছিল এবং সকালে যথারীতি বাথরুম নিয়া ঠেলাঠেলি...হাহাহাহা...

দে দৌড়, ২৬শে ডিসেম্বর,২০১৪:
খুব সকাল সকাল দিন শুরু হয়ে গেল আজ। নাস্তা করতে গিয়া ভেজালে পড়লাম কারণ সবে পরটা বানাচ্ছে কিন্তু ইতিমধ্যে বিশাল এক ফ্যামিলি কক্সবাজার বেড়াতে যাবেন, তারাও নাস্তা করতে বসে আছেন। সো, সাপ্লাই ডিমান্ড নিয়ে একটু ঝামেলা হলো। আমাদের দেরী হলেও ততটা হলো না। ফাইনালী, নাস্তা করে বাইক স্টার্ট দিয়ে রওনা করলাম, গন্তব্য তেতুলিয়া।
সাড়ে দশটার দিকে আমরা পঞ্চগড় দাড়ালাম চা খেতে, সেখানে আরেকদল ট্রেভেলারের সাথে কথা হলো। ওনারা ঢাকা থেকে মাইক্রো নিয়ে এসেছেন।
দুপুর সাড়ে এগারোটা, আমরা তেতুলিয়ার চা বাগানের ছবি তুলছি। ছবি তোলা শেষ করে বর্ডারের উদ্দেশ্যে এগোচ্ছি। প্রথমে ভুল পথে চলে গেলাম বা পাঠিয়ে দেয়া হলো, হাহাহাহা… কিন্তু ওখানে পৌছে মন ভরে গেল। বর্ডার না হলেও খুবই সুন্দর একটা জায়গা। বেশ কিছুক্ষণ চললো, তারপর সেখান থেকে তেতুলিয়া বর্ডারে এলাম।
বাংলাবান্ধাঃ রাস্তাটা এতই চমৎকার ছিল যে বর্ডারে এসে খুবই আশাহত হলাম। কিছুই পেলাম না হিলি বর্ডারের মত। কেবল ট্রাকের লাইন আর সামান্য কিছু মানুষ ওখানের একটা মনুমেন্টের সামনে দাঁড়িয়ে ছবির পোজ দিচ্ছে। তবে কিছু নারী দেখে অন্তত ভাল লাগল। হাহাহাহা...প্যাঁচী না থাকলে যা হয় আর কি। হাহাহাহা... খুব বেশিক্ষণ সেখানে সময় নষ্ট করলাম না, ঘুরে দৌড় দিলাম কারণ রাস্তা টানছে। ১২১ কিঃমিঃ কিন্তু মনে হচ্ছে ৮০/৮৫ তে আছি। স্মুত এজ বাটার যাকে বলে আর কি, এত ভাল রোড সারা দেশে থাকলে ৬০০সিসি পারমিট হয়তো দিয়ে দিত...হাহাহাহা...স্বপ্ন হোক সত্যি ইটের পরে আধলা...হাহাহাহা... ছুটছি আর মনে মনে ভাবছিলাম, তেল কই পাই? পেট্রোল পাম্পে দাড়ালাম অকটেন নাই, তাই পেট্রোল নিয়েই আবার দৌড়ালাম। বিকাল ৪টার দিকে দিনাজপুরে ব্যাক করলাম। ফ্রেশ হলাম, খেলাম...আর ঠিক করে ফেললাম যদি আগামী বছর আবার আসি, খুব তো মন্দ হবে না তবে এখন বাসায় ফেরার পালা। প্যাঁচীকে দেখি না অনেকদিন। হাহাহাহা... এইমাত্র গোসল করলাম।এই প্রচন্ড শীতে কাঁপুনি আসতে পারে ভেবে ইতিমধ্যেই পুলোভার,জ্যাকেট,মাফলার গায়ে চড়িয়ে এক কাপ গরম চা নিয়ে বসেছি।কিছু একটা লিখতে ইচ্ছে হচ্ছে,কি লিখব বুঝতে পারছিনা,তবে মনে হচ্ছে উত্তরবংগের শীতের অনুভূতি...হাহাহাহা...শীত কিভাবে আসলেই কাঁপুনি তোলে এবার ওখানে যাওয়ার পথে টের পেয়েছি।তাহলে এভাবেই শুরু করি...হাহহাহা...
বিসমিল্লায় গলদ, ২২শে ডিসেম্বর,২০১৪:
যথারীতি আমার পেঁচীর কাছ থেকে ছুটতে দেরী হয়ে গেল,খেয়ালই করিনি দেরী হয়ে যাচ্ছে।পরে তাড়াহুড়ো করে,ব্যাগ গুছিয়ে,রেডি হয়ে বের হতে হতে এক ঘন্টা দেরী করে ফেললাম।ভোর ৫টায় রওনা দেবার কথা সেখানে বেজে গেল ৬টা।আমার দোস্ত কাউয়া ক্ষেপে তারস্বরে পিছনে বসে বসে চিৎকার করছে।“আমার কান্ডজ্ঞান নাই।আজকে কিভাবে আমি দেরী করি।তার উপর তারে এক ঘন্টা আমি ঠান্ডা দিয়া বাহিরে দাড় করাইয়া রাখছি।আমি পুরাই ****...”।আসল কথা তো আর বলতে পারি না,তাই চুপ থাকাই শ্রেয় ভেবে নিলাম।
যাই হোক,বকা খেয়ে হোটেলে ঢুকে পড়লাম নাস্তা খেতে।নাস্তা খেয়ে বের হয়ে রওনা দিতে না দিতেই পুলিশ আমাদের দাড় করাল।মামুরা পুরাই ত্যাঁদড়,কিছুতেই আমাদের ছাড়বে না।শেষ-মেষ মামুদের উপরি দিয়া রওনা যখন দিলাম আবার তখন ৮টা বেজে গেছে।হাহাহা...আমরা দুই বন্ধু কতক্ষণ হাসি,কতক্ষণ মামুদের গাইল্লাই।এই করে করেই দুপুর ১টা ৩০মিনিটের দিকে পৌছে গেলাম হরিণাঘাটা।পথে দু’বার চা খাবার বিরতি নিলাম।একবার মিররসরাইয়ের কাছে,আরেকবার ফেনির কাছে কোথাও।ছবি তুলতে দাড়িয়েছিলাম লক্ষীপুর শহীদমিনারের সামনে,নারকেলের বাজারে,রায়পুর মেইন রোডে।
ভাগ্য ফাইনালী ভালর দিকে গেল,আমরা ঠিক ফেরী ছাড়ার আগ মুহুর্তে পৌছে ছিলাম ফেরিঘাটে।আমরাও উঠলাম ফেরীও ছেড়ে দিল।ফেরিতে বাইক,ব্যাগ,আমাদের অবস্থা দেখে সাতক্ষীরার একজন ট্রাক ড্রাইভার আমাদের ডেকে ট্রাকের ভেতর বসে বিশ্রাম নিতে বললেন।কারণ ফেরী পার হতে লাগবে দেড় ঘন্টা।দেরী না করে লাফ দিয়ে উঠে পড়লাম ট্রাকে।শুরু হয়ে গেল গল্প আর বিড়ি...যদিও আমার দোস্তই দু’জনের পক্ষ হয়ে একাই কথা চালিয়ে গেল,আমি কেবলই হু,হ্যাঁ-তেই সীমাবদ্ধ।কারণ আমার ধান্দা হচ্ছে ঘুমানো।যাই হোক,হালাদের বকবকানি ঘুম কেন,ঘুমের ছায়ারও দেখা পেলাম না।হঠাৎই দেখলাম আমরা পৌছে গেছি।ফারুক ভাই ও বেশ অবাক হয়ে গেলেন,এত দ্রূত এসে পড়লাম কিভাবে।ফারুক ভাই হচ্ছেন সাতক্ষীরার সেই ট্রাক ড্রাইভার।কি আর করা,নেমে পড়লাম ট্রাক থেকে। *ক্লিকক্লিক-প্যাঁচা* শুরু করে দিলাম,সময় নাই।
ফেরী থেকে নেমে ঘাটেই লাঞ্চ করে নিলাম। পোয়া মাছ আর ভাত...এমন পোয়া মাছ চট্টগ্রামেও খাই নাই,হাহাহা...ক্ষুধা হচ্ছে বেস্ট সস,তাই না?যাই হোক,খেয়ে রওনা দিতে বাইক স্টার্ট দিব,এমন সময় দুই পিচ্চি এসে জিজ্ঞেস করল, “ভাইয়া এটা কি জাম্পিং বাইক”?হাহাহাহাহা...ভালই মজা পাইলাম,লেটস গো,জাম্পিং বাইক...হাহাহা...
যে রাস্তা ধরে আমরা জাম্পিং করছি রাস্তাটা এতই সরু যে একটা ট্রাককে পাস করার মত জায়গা নাই একটা বাইকের।একটা মোড় নেয়ার সময় ট্রাককে টু পয়েন্টার টার্ণ নিতে হয়,আজিব এক রোড।তবে বাইকের জন্য অসাম একটা রোড।বিপরীত দিক থেকে বড় কোন গাড়িই আসতে দেখিনি,মনে হয় কোন বাইপাস টাইপ রোড ছিল।যা কেবল স্পেশাল ফেরিতে করে আসা মাছের ট্রাক ব্যবহার করে বলে একদিক থেকেই বড়গাড়ি চলে কেবল।যাই হোক,একবার ট্রাক দাঁড়িয়ে সাইড দিয়ে দিলে বাকি রাস্তাটা যে কোণ বাইকারের জন্য অসাম।কুইক শার্প টার্ন,ভাল ইনার এ্যাংগেল।মোটের উপর,দ্রুতই পার করে ফেলা সম্ভব।
ফাইনালী,আমাদের জাম্পিং বাইক যেখানে ল্যান্ড করল সেটা আরেকটা ছোট ফেরিঘাট।বিশাল গাড়ির লাইন ছিল,বাট নো ওরিস,আফটার অল,জাম্পিং বাইক।চিপাচাপা দিয়া গিয়া একদম লাইনের মাথায় গিয়া দাড়ালাম।ফেরি থেকে গাড়ি নামলেই উঠে যাব।সাথে আরো স্থানীয়া দুই/তিনটা বাইক দাঁড়ানো।আমাকে একজন ডেকে বললেন যে বাইকটা একটু সরিয়ে দাড়ানোর জন্য,ফেরি থেকে না হলে গাড়ি নামতে ঝামেলা হবে।এখন সরে যেখানে দাড়ালাম,তার কারণে আর ওনাদের কারো বের হবার কোন জায়গা থাকল না।বের হতে হলে আমাকে আগে যেতেই দিতে হবে।হাহাহাহা...তবে বেশ কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকলাম গাড়ি সব নেমে গেল কিন্তু ফেরীতে আমাদের উঠতে দিচ্ছে না।এমন সময় একজন বাইক স্টার্ট দিলেন এসে,বললেন ফেরীরে ট্রলার লাগছে,ইশারাতে ওদিকে যেতে বললেন।আমি তো বেকুব হয়ে তাকিয়ে রইলাম।পাশের একজন বাইকার বুঝিয়ে বললেন,আমিও খুশি মনে ফেরীতে উঠে পড়লাম আর সোজা গিয়া ঝাপ দিয়ে নেমে পড়লাম নদীতে...তবে নদীর উপরে একটা ট্রলাম ভাসছিল।হাহাহাহা...আসল কথা হল,গিয়া তো পুরাই অবাক হয়ে গেলাম।আরে মর জ্বালা,এটাতে উঠামু কেমনে বাইক।ফেরীর সাইড গার্ডেইতো বাইক আটকে আছে,জোরে আইসা ফাল দিলে তো ট্রলার দৌড় দিব,আর আমি তখন রিয়েলি নদীতে যামু।এদিক ওদিক চাইতাছি,সবাই তামশা দেখতাছে ফ্রিতে।এমন সময় ট্রলারের মাঝি হাত তুলে দাঁড়াতে বলল।সামনে এসে দাঁড়াতে ইশারা করলেন।দাড়াবার পরে,হাত দিয়ে টেনে বাইকের সামনের চাকা গার্ড বার পার করে ট্রলারে উঠিয়ে দিলেন,বাকিটা তামশা ছাড়াই উঠে গেলাম।ব্যাস,শেষ পর্যন্ত ট্রলারে করেই পার হলাম কোন খাল বা কোন নদী।ঘড়িতে তখন ৪টা ৩০মিনিট আর আমরা মাদারীপুরের পথে।
এই রাস্তাটার খুবই খারাপ অবস্থা।কাজ চলছে, পুরাই গ্রেভেল রোড যাকে বলে আরকি।এতই লুজ সারফেস যে ৩০ এর উপরে চালাতে রিতীমত কষ্ট হচ্ছিল,বাইক প্রতিবাদ করে ওঠে জাম্প দিতে...হাহাহাহা...ওখানে এক বয়স্ক মানুষকে জিজ্ঞেস করলাম এখানে থেকে কুষ্টিয়া যেতে কিরকম সময় লাগবে।কিছুক্ষণ চিন্তা করে বললেন কাল সকাল হয়ে যাবে।আমরা কি কমু বুঝতে পারলাম না,কেবল আমি দোস্তর দিকে তাকাই,দোস্ত আমার দিকে তাকায়।যাই হোক,মুখ চাওয়া-চাওয়ি শেষ করে,প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিতে দাঁড়িয়ে পড়লাম,আর দু’জনে হিসাব নিকাশ করে সীদ্ধান্ত নিলাম,বুইড়া হালা বেকুব।উল্টা-পাল্টা কইতাছে,বয়সে সম্মানিত মুরুব্বী হালার মাথা পুরাই গেছে।হয়ত মনে করছে আমরা ইন্ডিয়ার কথা কইছি...হাহাহাহা...
যাই হোক,তবে একটা কথা ঠিক বলেছিলেন যে এই রকম রাস্তা আর বেশি দূর নাই।সামনের বাজার থেকেই রাস্তা ঠিক হয়ে গেল আর আমরাও বাতাস কেটে দ্রুত ছুটলাম গন্তব্য কুষ্টিয়া।
সন্ধ্যা ৭টা ১৫মিনিট।
প্ল্যান ছিল এই সময়ের মধ্যে কুষ্টিয়া পৌছে যাবার কিন্তু এখন পেট্রোল পাম্প এ।আগের রাতে ১১০০টাকার তেল নিয়েছিলাম,এখান থেকে নিলাম ১০০০টাকার।বের হয়ে দাড়ালাম এক চায়ের দোকানে।চা খেলাম আর পথের হদিস নিয়ে নিলাম।জেনে নিলাম পথে কোন ডাকাতি বা এই ধরনের কোন সমস্যা আছে কিনা।ওনারা জানালেন আমাদের ভয় নাই,আমরা অনেক আগেই পার হয়ে যাব অই রাস্তাটুকু।খুব রাত হলে গিয়ে যত ভয়,এখন কোন সমস্যা না।যাই হোক চা খেয়ে আর দেরী করলাম না,দিলাম দৌড়।তবে যে জায়গা দাড়িয়েছিলাম সেটার নাম মনে নেই এখন আর,আজিব।হাহাহা...
তখন বাজে রাতের ৯টা বা সাড়ে ৯টা...
ভ্রমণের আসল মজা শুরু।রাস্তা হঠাৎই প্রচন্ড কুয়াশায় ঢেকে গেল।যদিও আমি জ্যাকেট,মাফলার গ্লাভস পরে আছি আমার হাত প্রায় অবশ হবার অবস্থা।তার উপর সমানে বাইক কাপতেছে কারণ আমার দোস্ত পেছনে বসে ঠান্ডায় তার পা কাপতেছে এবং এতই কাপতেছে যে পুরা বাইক ভাইব্রেট করতেছে।আমার ভয় লাগল,হালার আবার হাইপোথারমিয়া হয়ে যায় কিনা।তার কথা মত এক বাজারে বন্ধ দোকানের সামনে দাড়ালাম,যদিও কোন দোকানপাটই খোলা ছিল না আর সেখানে।দোকানের সামনেই ব্যাগ থেকে এক্সট্রা ট্র্যাক বের করে জিন্সের প্যান্টের উপর দিয়ে পরে নিলাম।আমি পুলওভার,হুডি দেন জ্যাকেট,গ্লাভসের ভেতর একটা ইনার গ্লাভস পরে নিলাম।হুডি তুলে,নাক-মুখে মাফলার পেচালাম,তার উপর উইন্টার বাইক মাস্ক পরলাম,দেন হেলমেট পরে আবার রওনা দেবার জন্য রেডি হলাম।এমন সময় যদি এখন প্রকৃতি ডাকে তাহলে কি করব ভেবে দু’জনে খুব হাসাহাসি করে নিয়ে যাত্রা করলাম আবারো।
কুয়াশা ঠেলে এগোচ্ছি।খুবই ভাল রাস্তা।আমাদের চোখে সমগ্র বাংলাদেশের ভেতর বেস্ট রাস্টা হচ্ছে উত্তরবঙ্গে।এত কুয়াশা,দূরের গাড়ির লাইট দেখেই কেবল বোঝা যায় গাড়ি আসছে,রাস্তা দেখার সময় নাই অথচ বাইক নিশ্চিন্তে ৮০-৮৫তে চালাতে পারবেন।একটু ঝাঁকিও লাগবে না।তবে এর চেয়ে দ্রুত গতিতে যেতে পারবেন যদি বাতাসকে ভয় পেতে না হয় আপনার,ভয় পেতে না হয় শীতকে।হাহাহাহা...
ফাইনালী রাতের ১২টা বা শোয়া ১২টার দিকে আমরা পৌছে গেলাম কুষ্টিয়া।
পৌছেই হোটেল খোজা শুরু করলাম।খুব বেশি বেগ পেতে হয়নি হোটেল খুঁজে পেতে।হোটেলের নাম ছিল হলিডে ইন্টারন্যাশনাল।এত রাতে খোলা পেয়েই আমরা খুশি হলাম।ভাল হোটেলের সাথে মিলিয়ে লাভ নাই,তবে পরিচ্ছন্ন হোটেল।আমরা এটাকে পয়েন্ট জিরো ফাইভ স্টার হোটেল বলে নির্ধারণ করলাম।দেরী না করে রুম থেকে বের হয়ে খেতে নেমে গেলাম।দুটা হোটেল বিসমিল্লাহ আর ???রেস্টুরেন্ট...কিছু একটা...নাম মনে নাই...হাহাহা...মনে হয় যেটার নাম মনে নাই ওটাতেই ঢুকলাম।খেলাম নান,বিফ...দেন রসমালাই...
রসমালাই খেয়ে মনে হল,কুমিল্লারটাকে হার মানায়।
আর নান রুটি তৈরী করার অভিনব এক পদ্ধতি দেখে শিখলাম।যেখানে তন্দুর ব্যবহার করা হয় না,সাধারণ গ্যাসের চুলাতে তৈরী হচ্ছে নানরুটি...তাওয়ার মত একটা কিছুতে শেকা হচ্ছে,পরে উল্টো করে সরাসরি আগুনের ওপর ধরে নানকে পারফেক্ট সফটনেস দেয়া হচ্ছে...আসছে সেই একই রকম ফ্লেভার...তবে হয়ত তা পুরোপুরি নানরুটির কাইয়ের উপর নির্ভর করছে...হাহাহাহা...অ-সা-ম...
খাওয়া দাওয়া শেষ করে আরেক নতুন চমক দেখলাম চা খেতে গিয়া।এটা না কাল সকালেই ভাল করে দেখে বলব...এখন এতই ক্লান্ত যে শরীর কেবলই ঝিমাচ্ছে।তাই চা খেয়েই আর দেরী না করে সোজা রুমে, পয়েন্ট জিরো ফাইভ স্টার হোটেলের বিছানাতেও দু’চোখ ভেঙ্গে ঘুম চলে আসলো,রাজ্যের ঘুম...zzzZZZZ

নিদ্রা দেবীর প্রেম, ২৩শে ডিসেম্বর ২০১৪:
দেরীতে হলেও উঠলাম,ঘড়িতে তখন ১২টার মত বাজে।কোনদিক দিয়ে সময় গেছে জানি না...হাহাহাহা...ঘুমে আর মরণে সমান ভেবে নিয়ে,দুই দোস্ত তড়িঘড়ি করে ফ্রেশ হয়ে নিচে নামলাম খেতে।গিয়ে দেখি হোটেলে নাস্তা বলতে যে সকল জিনিস যেমন-রুটি বা পরটা কিছুই নাই।যা আছে তা হচ্ছে পুরি,মোগলাই,সিংগারা ইত্যাদি।
কি আর করা,ক্ষুধায় তো পেট জ্বলছে,তাই পুরি দিতে বললাম। পুরি আসলো আর অবাক হবার শুরু হলো।পুরির উপর গুড়া গুড়া যেই জিনিসটা ছড়িয়ে দেয়া আছে, তার বর্ণ লাল আর তার নাম হচ্ছে মরিচ।আমরা পুরাই থ,এটা কেমন?সাথে আবার সস টাইপ একটা জিনিস দিছে আলাদা বাটিতে।তবে যেই পুরির একটা টুকরা সসে ভিজিয়ে মুখে দেবেন আরও অবাক হবেন।এত স্বাদ কোথা থেকে আসল?হাহাহা... সসটা আসলেই পুরাই অন্যরকম,অ-সা-ম...একটু মিষ্টি তবে পুরিতে মরিচের গুড়া থাকাতে তেমন মিষ্টি লাগে না,হালকা ঝাল যুক্ত স্বাদ লাগে।মোটের উপর অসাধারণ...পুরা ৬টা পুরি (যেটাকে ৪টুকরা করে কেটে দেয়া হয়) সাবড়ে দিলাম আর পরে একটা মোগলাই দিতে বললাম...অবশ্য হাফ খেয়ে রণে ক্ষান্ত দিলাম।দোস্তও খাবে না,সে রসমালাই খাবে।হাহাহাহা...কি আর করা একবাটি রসমালাই ও খেয়ে নিলাম...খেয়ে চা খেতে বের হলাম। দুধ চা...বলবেন এটা আবার আলাদা করে বলার কি আছে?
এখানে দুধ চা বেশ অদ্ভূতভাবে তৈরী হয়।চুলায় কেবল পানি গরম হচ্ছে,কোন লীকার না...এখন একটা ছোট ছাকনি টাইপ কৌটা আছে,যেখানে কাচা পাতা দেয়া হয় প্রতিটি কাপ চা বানাবার জন্য।চায়ের পাতাগুলো মিহি করে গুড়া করা।ফলে চা কড়া পাতলা ক্রেতাদের ইচ্ছানুযায়ী করা সম্ভব হচ্ছে কোন ঝামেলা ছাড়াই আর চা-ও খেতে বেশ সুস্বাদু...দুই কাপ খেয়ে ফেললাম কোন কথা ছাড়াই...হাহাহাহা...
সব খানাদানা শেষ করে রুমে ফিরলাম তখন একটা বা দেড়টা বাজে।গোসল সেরে,রেডি হয়ে বের হলাম।উদ্দেশ্য লালনের আখড়া,কুঠিবাড়ি...
লালনের আখড়াঃ একে ওকে জিজ্ঞেস করে পৌছে গেলাম লালনের আখড়ায়।গিয়েই মনটা ভালো হয়ে গেল।অনেক দিন যাবার ইচ্ছা ছিল কিন্তু হচ্ছিল না।যাই হোক,ঘুরে ঘুরে দোকান কি আছে দেখলাম,ছবি তুললাম,মডেলিং করলাম...হাহাহাহা...হাজারটা জিনিস পরে ছবি তুললাম...হাহাহাহা...
পাগলামী শেষ করে মাজারের দিকে গেলাম।ভেতরে দেখলাম লালনের সময়কার চর্চা এখনো ধরে রাখা হয়েছে।গোল হয়ে বসে কে কিভাবে কি অনুধাবণ করছেন তার আলাপ চলছে,তবে সেখানে দাড়ালাম না।ছবি তুলতে ব্যস্ত।এদিকে দোস্ত জিজ্ঞেস করল গান শুনবো কিনা,আবার জিগস বলে রাজি হয়ে গেলাম।সো,গান শুনলাম কিছুক্ষণ লাইভ...ভিডিও করলাম,ছবি তুললাম।এরপর কিছুক্ষণ সাইজি ও তার দর্শন নিয়ে নানা কথা হলো,এপার বাংলা ওপার বাংলার লালনগীতি নিয়ে কথা হল।কথা হল ওনাদের জীবিকা নিয়ে,কিভাবে চলছে সব।লালন সংগীত একাডেমি থেকে তখন গানের সুর ভেসে আসছিল। “আপনারে আপনি চিনি নে...”...হাহাহাহাহা...
সব শেষ করে বের হলাম,যাব কুঠিবাড়ি...

কুঠিবাড়ি নিয়ে তেমন কিছু বলার নেই,কুষ্টিয়া থেকে ১৫ কিঃমিঃ দুরত্বে,মেইন রোড় থেকে বামের দিকে রাস্তা ঢুকেছে একটু গিয়েই ডান দিকে বেঁকে সোজা চলে গেছে কুঠিবাড়ির দিকে।ওখানে দিয়ে খেলাম কুষ্টিয়ার বিখ্যাত মালাইয়েইর আইসক্রীম...হাহাহাহা...যারা চট্টগ্রামে চেরাগীপাহাড়ের মোড় থেকে ঘরে তৈরী পেস্তা বাদামের পেস্ট দিয়ে তৈরী একধরনের কুলফি আইসক্রীম খেয়েছেন তাদের কাছে স্বাদটা পরিচিত লাগবে।তবে চট্টগ্রামে খেতেন বোতলে আর এখানে পরিবেশন করা হয় কলাপাতার উপর,তালপাতার চামচ দিয়ে।মাথায় শয়তানী আসল,বললাম,এত তালপাতা আর কলাপাতার জন্য কতগাছ মেরে ফেলতেছেন,তার চেয়ে গ্লাসে দেন।হাহাহাহা...খাওয়া শেষ করে আবার পাতা আর চামচ ফেরত দিলাম,ধুয়ে আবার ব্যবহার করেন।তবে এভাবে স্বাস্থ্যকর হবে কিনা জানি না,অন্তত গাছের জান বাচবে...হাহাহাহাহা...এইসব করে ঢুকে পড়লাম রবিঠাকুরের বেডরুমে...হাহাহাহা...মোটেই জানালা দিয়ে পূর্ণিমার চাঁদ দেখা যাবার কথা না,তবে দোতলার বারান্দার মত স্থানে দাড়ালে উনি কি দেখতেন জানি না,আমি দেখলাম সামনের চারটা বড় পাম্প ট্রি আর তার পরে খোলা মাঠ...কবিতা কি লেখা যায় কেবল প্রকৃতি দেখে,কি জানি...হাহাহাহা...দেখলাম বজরার ছবি,যা নিয়ে পদ্মায় ঘুরে বেড়াতেন আর লিখতেন খুব সম্ভবত...কি জানি বজরাটা পদ্মায় ভাসানো অবস্থায় দেখলে বুঝতে পারতাম...হাহাহাহা...এসব ভাবতে ভাবতে মনে হল,আমি কি রবি ঠাকুরকে বিচারের চেষ্টা করছি?নিজের সাহস দেখে ভয় পেয়ে গেলাম,তাড়াতাড়ি বের হয়ে গেলাম সেখান থেকে,তবে বের হবার আগে একটি পরিবারের ছবি তুললাম।
একদমই ধর্মভীরু পরিবার,একজন বয়স্ক ব্যাক্তি,সাথে দু’জন মহিলা যেহেতু চোখ ছাড়া কিছুই দেখা যাচ্ছে না, বুঝতে পারলাম না দু’জন কি ওনার স্ত্রী নাকি মা-মেয়ে...আর সাথের দু’জন নাতি কিনা তাও নিশ্চিত হতে পারলাম না।কারণ তারা কেবল ছোটাছুটি করছে।যাই হোক,হুজুরসাহেব দুই নারীর ছবি তুললেন...কেন তুললেন বুঝলাম না?কিছুই তো দেখা যাচ্ছে না চোখ ছাড়া...তবুও ভাল লাগল,অন্তত এখানে তো এসেছেন,ঘুরিয়ে দেখাচ্ছেন সব।হাহাহা...যাই হোক ওনাদের ছবি অনুমতি ছাড়াই নিয়েছিলাম বলে এখানে দিলাম না,থাক আমার কাছে,আমিই দেখি...হাহাহাহা...
বের হয়ে এলাম।আর বের হয়ে প্রচন্ড ঝাল দিয়ে খেলাম আমড়া ভর্তা...ঝালে পাগল হয়ে আরেকটা বিখ্যাত আইসক্রিম খেয়ে,বাইকে উঠে পড়লাম।ফিরে এলাম কুষ্টিয়া সন্ধ্যার একটু পরেই।এসেই রুমে গিয়ে শীতবস্ত্র পরে নিলাম,ব্যাকপ্যাক গুছিয়ে নিলাম রুম ছেড়ে দিলাম।বের হয়ে খেয়ে নিলাম,এবার সেই বিখ্যাত নান আর বিফ...দোস্ত খিচুড়ী খেল...তারপর আবার রসমালাই...হাহাহাহা...
চা খেয়ে শেষ করে যখন বাইক ছাড়লাম তখন কয়টা বাজে ঠিক স্মরণ নেই,তবে অন্ধকার হয়ে গেছে চারদিক।যদিও আমাদের প্ল্যান ছিল না রাতে বাইক চালানোর তবে শীতে যখন প্রথমদিনই রাতে চালাতেই হয়েছে তাই আর ভয় না পেয়েই সময় বাচালাম,ইতিমধ্যে অর্ধদিন পিছিয়ে গেছি আমরা পরিকল্পণা থেকে।হাহাহা...ঠিক মনে পড়ছে না কোথায় ভুল করেছি তবে নাটোরে যাবো ইচ্ছা ছিল কাচা গোল্লা খাবার জন্য আর ২০ কিঃমিঃ উলটা দিকে চলে গিয়েছিলাম,পরে আবার এক চায়ের দোকানে জিজ্ঞেস করে ফিরে আসলাম সঠিক পথে।তবে যখন নাটোর পৌছলাম তখন বাজে ৮টা ১৫মিনিট...হাহাহাহা...
পথের অবস্থা খুবই ভাল,তেমন কোন ভাঙ্গা চোরা নেই বললেই চলে।এবার খুজছি “জয়কালী মিষ্টান্নভান্ডার”।কোথাও ওয়াজ হচ্ছিল,ফলে মানুষ কমছিল রাস্তায়।আমরা একে ওকে এবং পুলিশকে জিজ্ঞেস করে পৌছে গেলাম জয়কালী মিষ্টান্ন ভান্ডার।আশাহত হলাম বিখ্যাত কাচাগোল্লা দেখে।অবিকল সুজির মত করে একটা বড় গামলাতে রাখা কাচাগোল্লা,কোন শেইপে না...মনে হল যেন সুজি...হাহাহাহা...খেলাম,তেমন স্বাদের মনে হল না।এর চেয়ে আমাদের কাচাগোল্লা ফার বেটার মনে হল।তবে ওটা হয়ত খাটি বলেই এমন মনে হল,কি জানি।হাজার হোক বাঙ্গালী তো,হাহাহা...সাথে গরম চমচম খেলাম।এসব খেয়ে বাইকে উঠে পড়লাম,ইচ্ছা আছে যতদূর যাওয়া যায় চলে যাব।
ঠিক কখন আমরা বগুড়া পৌছেছিলাম মনে নেই,তবে খুব সম্ভবত ১০টা বা সাড়ে ১০টার দিকে...প্রথম কথা,খেতে হবে।ক্ষুধা লাগছে...কোনকথা ছাড়াই একটা হোটেলের সামনে দাড়ালাম,আর নেমে হাতমুখ ধুয়ে খেতে বসে গেলাম।সহজ হিসাব,ভাত আর কালাভুনা...দুই বন্ধু ধুমায়ে খাইলাম,সাথে কি এক মাছের ভর্তা খাইলাম...যাই হোক,মাছের ভর্তা পয়েন্টলেস।খাওয়া শেষ করলাম,চা-বিরি খাইলাম।খেয়ে বের হয়ে মেজাজ খারাপ হয়ে গেল।বাইক বের করার জায়গা নাই।সব ট্রাক এসে ভরে গেছে।যাই হোক,এক ড্রাইভার ভাইকে ভদ্র ভাষায় দুটা কথা বলতেই উনি ইঞ্জিন স্টার্ট দিয়ে জায়গা করে দিলেন,আর আমরাও বের হলাম।হাহাহাহা...সিদ্ধান্ত নিতে পারছিলাম না আমরা কি এখানেই আজকের মত খান্ত দিব নাকি সামনে ছুটব।দোস্তকে এত করে এই মাথা সেই মাথা ১৪মাথার কথা বললাম,তারপরো তার মাথায় ঢুকাইতে পারলাম না,এখানেই থাকি।হালায় খালি সামনে দৌড়াইতে চায়।যাহ শালা,মেজাজই খারাপ হয়ে গেল।চল দেখি কতদূর যাইতে পারছ।
রাতের তখন ১১টা ১৫মিনিট আবার বাইক চলছে।বগুড়া থেকে বের হলাম আর রাস্তা দিয়া বাইক ৩০ এ চালাচ্ছি,কারণ রাস্তা দেখছি না তেমন কিছুই আর রাস্তা এতই ভাঙ্গা যে বলার মত না,কি হইল এখানে দিয়া কিছুই বুঝলাম না।দেখে মনে হল ইচ্ছা করেই সব কোদাল দিয়া কোপায়ে কোপায়ে গর্ত করে রাখছে।কিছু দূর গিয়ে দেখি রাস্তার কাজ চলছে আর এত অন্ধকার রাস্তা আগে কোথাও দেখি নাই।যেন আসেপাশে কিছুই নাই যদিও দাঁড়িয়ে দেখার মত ইচ্ছা ছিল না।একেতো মেজাজ খারাপ,তার উপর রাস্তা এতই খারাপ যে মেজাজ আরো চড়ে যাচ্ছে।আর পেছনে বসে আমার দোস্ত সমানে তসবিহ জপতেছে, “এই আস্তে...বেশি জোরে চালইস না”।তাও চান্স পাইলেই আমি তো দে দৌড়,সেদিনই প্রচুর বাসের চাপা খাইছি।এত রাতেও বাস পারে তো আমাদের রাস্তা থেকা নামাইয়া দেয়।দোস্ত পিছনে বইসা হালাদের গাইল্লায় আবার আমারে বলে, “তুই কিন্তু আস্তে চালা।হালাগোর বউয়েরা ফোন দিতাছে,দেখস না”।
হাসুম না কান্দুম...কিসের ভিতর কি।বউ আইলো কোথা থিকা।গাছের দিকে তাকাইয়া দেখলাম কোন পেঁচি দেখা যায় কিনা...হাহাহাহাহা...কালকে দেখতে পারুম কিনা কে জানে,রাস্তার যেই অবস্থা!!!
ঘড়িতে তখন ১টা বা শোয়া ১টা।এক সালাদিয়াঢাকা হোটেলের সামনে দাড়ালাম।চা দিতে বলে চূলার পাশে গিয়া দাড়ালাম।আমাদের দশা দেখে দোকানী আগুন একটু বাড়িয়ে দিলেন,নিজে সরে জায়গা করে দিলেন দাড়ানোর।আমি আগুন পোহাচ্ছি,দেখি আমার দোস্ত নাই।আরে হালা গেল কই,খুজতে খুজতে দেখি অন্ধকার থেকে বের হচ্ছে, “কিরে”? প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিলেন তিনি,আমিও সুযোগে দাঁড়িয়ে গেলাম। কোথায় দাড়ালাম জানি না,তবে প্যান্ট খুলতে খুলতে হয়রান হয়ে গেলাম,তারপর আবার আন্ডি...তবে পরে গাড়ির লাইটের আলোতে দেখলাম সামনেই একটা দোকান।না দেখার ভান করে কাজ সেরে এলাম।চা খেতে খেতে দোকানী ভদ্রলোকের সাথে কথা হল বললেন যে সামনের রাস্তায় তেমন কোন সমস্যা নাই।আমরা বিপদজনক রাস্তা পার হয়ে এসেছি।শুনে স্বস্তি পেলাম,তবে অস্বস্তিও লাগল এই ভেবে যে,আগে জানলে তো আসতামই না এত রাতে অই রাস্তা দিয়া...হাহাহাহা...দোস্তর দিকে একবার তাকাইলাম কেবল, সাথে সাথে বলে উঠল, “ভুল হইয়া গেছে রে,ভুল হইতেই পারে”।হাহাহাহা...এবার চল।
রাতের আড়াইটা, গোবিন্দগঞ্জ। চায়ের দোকান।
সবাই এরপর যেতে মানা করছেন।রাস্তায় ডাকাতি হবার চান্স হাই।সবাই এখানে থেকে ভোরে যাত্রা করতে বলছেন ফুলবাড়ির উদ্দেশ্যে।কি আর করা,খুঁজে ফিরে কোন হোটেলই পেলাম না থাকার মত,পরে গিয়ে এক মোটেলে উঠলাম।কোন স্টার দেবার উপায় নাই।কেবল রাত্রি যাপন করতে হবে বলেই আপনি উঠতে পারেন এমন মোটেলে।কাপড় চোপড় পরেই বিছানায় পিঠ লাগালাম আর সেভাবেই ঘুমিয়ে গেলাম... zzzZZZZ...স্বপ্নেও পেঁচিরে পেলাম না...হাহাহাহা...


মাথাগোঁজার ঠাই,২৪শে ডিসেম্বর,২০১৪:
এতই খারাপ অবস্থায় ছিলাম রাতে যে মনে হয় ভোরের অপেক্ষায় ছিলাম,তাই কাক ওঠার আগেই উঠে পড়লাম।যথারীতি দুই বন্ধু একসাথে থাকলেও একসাথে ঘুম থেকে কোনদিন মনে হয় উঠি নাই এর আগে,থুক্কু না উঠছি,তবে সবসময়ই তা কোন না কোন ট্যুরে...হাহাহা...ফলে ঘটনা একই।বাথরুম নিয়া ঠেলাঠেলি,গালাগালি...ওই জলদি বাহির হ,না হইলে কিন্তু তোর তোয়ালের উপর কাজ সারুম...হাহাহাহা...
যাই হোক, কোন অঘটন ছাড়াই রেডি হয়ে বের হলাম।প্রচন্ড ঠান্ডা,কুয়াশায় ঢাকা গোবিন্দগঞ্জ।হোটেলে ঢুকে পড়লাম,নাস্তা করলাম ভরপেট,চা-বিড়ি খেলাম।গিয়া কোল্ড ইঞ্জিন লইয়া মুছিবতে পড়লাম।কিছুতেই বাইক স্টার্ট দিতে পারতাছি না।দোস্ত হালা চান্স পাইয়া,সমানে পার্ট লইলো, “তোরে দিয়া কিছুই হইব না,টাইমলি একটা কাজ করতে পারছ না।শুরু থিকা দেরী করতাছস,এখনো দেরী”।হাহাহা...যাক গালি-গালাজ সহ্য করে বাইক স্টার্ট হল,গন্তব্য ফুলবাড়ি, দেন দিনাজপুর।
রাস্তায় খুবই কুয়াশা তবে যথারীতি রাস্তা ভাল।কিন্তু বেশি জোরে চালাইলেই দোস্তের হাটু কাপে...হাহাহাহা...কি আর করা,এবার আমার গালি দেয়ার চান্স।হাহাহা...তবে এর মাঝেই হালা সীদ্ধান্ত পরিবর্তণ করল যে ফুলবাড়ি না গিয়া আগে হিলি চলে যাই।যে রাস্তা ধরে যাচ্ছি তার থেকে যাবার কোন কানেক্টিং রোড থাকার কথা।তবে রাস্তাটা খুবই সুন্দর,দু’পাশে শালবন টাইপ,মনে হয় জঙ্গলের মাঝ দিয়ে রাস্তা করা।আর্মির পাহারারত গাড়ি দেখতে পাবেন,খব ধীর গতিতে চলছে।হাহাহাহা...
সামনের এক চায়ের দোকানে চা খেতে দাড়ালাম,জিজ্ঞেস করে নিলাম কানেক্টিং রোডের কথা তবে তা ২০ কিঃমিঃ পেছনে।যাই হোক,চা শেষ করে উলটা ঘুরে দিলাম ছুট।
আমরা কানেক্টিং রোড ধরে ছুটছি,রাস্তা তেমন খারাপ না তবে হালকা পটহোল আছে,তবে কুয়াশা তখন ঢেকে রেখেছে পুরো অঞ্চল।রোদের পেছনে ধাওয়া করতে করতে ছুটলাম হিলির দিকে,যখন হিলি পৌছালাম তখন বাজে সকাল ৯টা...সোজা চায়ের দোকানের সামনে দাড়ালাম আগে।চা খেতে খেতে পরিচিত হলাম ওখানে যারা বসে আছেন।তারা আমাদের কাহিনী শুনেই গাইড হয়ে গেলেন,কি আছে না আছে,কোথায় যেতে হবে সব শেয়ার করে ফেললেন।আমরাও ওনাদের সাথে কথা শেষ করে বর্ডারের দিকে এগিয়ে গেলাম।
বর্ডারের সামনে ল্যান্ড পোর্টের সামনেই বাইকটা রাখলাম।আমাদের দেখে মানুষের অনুসন্ধিৎসা জাগাটাই স্বাভাবিক।আজিব চিড়িয়া...দু’জন ব্যক্তির সাথে পরিচয় হল।নামটা কেন এখন মনে নেই বুঝতে পারতেছি না।তবে চেহারা তো সবই মনে আছে।
একজন মাঝবয়সী,চান্দি ছিলা।পান খান,প্রচুর কথা বলেন। আরেকজন মাঝবয়সের শেষের দিকে,কাচাপাকা চুল,ভালই গড়ন,লম্বা ৫’১০” বা ৯” হবে,বেশ হাস্যোজ্জ্বল মানুষ।এখানকার স্থানীয়,বিয়ে করেছেন এখানেই,বড়ভাই পুলিশে আছেন,উনি ব্যবসা করেন।এককালে ফুটবল খেলতেন যখন বাংলাদেশে ফুটবল লীগ প্রচলিত ছিল খুব।মোটের উপর ওনারা কেউই আংকেল গোছের না ফলে মেশা খুবই সহজ হল।
আমরা রেললাইন ক্রস করে ইন্ডিয়ার বর্ডারের কাছে গেলাম,ছবি তুললাম।যদিও ইন্ডিয়ান সেনারা মানা করলো ওনাদের ছবি না নিতে...হাহাহা...কি জানে,কেন?ওখানে আমাদের বর্ডার গার্ডের পদস্থ কোন ব্যক্তির সাথে কথা হল।আমাদের উদ্দেশ্য জেনে হাসলেন,বললেন পত্রিকার কেউ না হলেই ভালো।হাহাহাহা...যাই হোক,ছবি তুলে শেষ করলাম।ওনারা আমাদের বাইকটা ডাকবাংলার সামনে রাখতে বললেন।এবার নিশ্চিন্তে ঘুরতে বললেন আর ওনাদের ফোন নাম্বার দিলেন যদি কোন সমস্যা হয় যেন জানাই।আর আমাদের চা অফার করলেন,কিন্তু ভুলে দোস্ত বিল দিয়ে দেয়ার খুবই রাগ করলেন।মোটামুটি বিদায় না নিয়েই চলে গেলেন।হাহাহাহা...
আমরা হিলি মার্কেটে ঘুরে বেড়াচ্ছি,বাইক পার্টস দেখছি।টায়ার খুজছি জেপারের...হাহাহা...ড্রাই সেল ব্যাটারী এইসব হাবিজাবি...হঠাৎ দোস্ত বললা চল ইন্ডিয়ান কিছু জিনিস কিনি,লাইক যেগুলা মা’দের কাজে দিবে।যেই বলা সেই কাজ,এক দোকানে গেলাম পরবর্তীতে যিনি আরেক ফারুক হিসাবে আবিষ্কৃত হলেন।ফারুক ভাইয়ের সাথে সমানে আড্ডা দিলাম আর পাশের দোকান থেকে বাচ্চাদের জন্য বিস্কিট,ক্যান্ডি নিলাম...বয়স্কদের জন্য দুনিয়ার ব্যাথার ক্রিম,ঝান্ডু বাম,মাথা ব্যাথার মলম,গা ব্যাথার মলম নিলাম।আর ক্যাশমেমো নিয়ে নিলাম,না হলে চেক পোস্টে আটকাবে।হাহাহা...আর ফারুক ভাইয়ের কাছ থেকে ইন্ডিয়া থেকে আনিয়ে নিলাম আমচুর,হিং,সাদা বা কালো এলাচি ইত্যাদি।তারপর ফারুক ভাই আতিথিয়তা করলেন হিলির পানীয় দিয়ে,আমরা দুই দোস্ত অবাক হয়ে গেলাম...হাহাহাহা...সমানে কথা বলতে থাকেন ফারুক ভাই,এবার তার কারণ খুঁজে পেলাম।হাহাহাহা...যাই হোক,আমার কপালে কিছুই জুটল না,আমাকে বাইক চালাইতে হবে।আসলে পেঁচির ভয়ে কিছু করতে পারছিলাম না,বারবার মনে হচ্ছিল যদি দেখে ফেলে।কোন চিপাতে বসে আছে কে জানে...হাহাহাহা...তবে কিছুক্ষণ চেষ্টা করলাম যদি এড়িয়ে কিছু করা যায়,পরে রণেক্ষান্ত দিলাম।আর বাইকে উঠে বসে থাকলাম,গাল ফুলিয়ে।ফারুখ ভাই আর দোস্ত মজা নিল।হাহাহাহা...
দুপুর ১২টা,হিলি থেকে রওনা দিলাম,যাব দিনাজপুর।ছুটে চলছে জাম্পিং বাইক সোজা রাস্তা ধরে।পথে চেক পোস্টে দাড়ালাম।জিনিসপত্র দেখে বলল এত কেন?পরে আমাদের কথাবার্তা সব শুনে কিছু বললো না আর,কেবল বলে দিলেন,প্রোপার ক্যাশমেমো যেন এরপর নিয়ে নেই।এভাবে খাতার কাগজে লিখে দিলেতো হবে না।হাহাহাহাহা...
দুপুরে এক হোটেলে ভাত খেলাম আমি একা,সাথে স্থানীয় মিষ্টান্নতো আছেই...হাহাহা...খেলাম মাছের ডিম,ছোট মাছের দোপেয়াজি টাইপ কিছু একটা,মাছের ও সবুজ কিছু একটার ভর্তা আর কালোভুনা যদিও গরুর মাংসের তরকারী ছাড়া কিছুই না ওটা...হাহাহাহা...আমারতো ক্ষুধা আছে,হাহাহা...খেয়ে-দেয়ে আবার ছুটলাম তবে তার আগে বাইকের চাকায় হাওয়া দিলাম।এরপরের রাস্তাটুকু খুবই সুন্দর ছিমছাম,একটু সরু তবে বাইকের জন্য নো প্রব।এক মাইক্রোবাসের সাথে রেইস দিলাম,কারণ তাতে কিছু সুন্দরী বসে ছিল...হাহাহাহা...১১৪তেও যখন ধরতে পারা যাচ্ছে না তখন একটু দুশ্চিন্তা হলো,মাইক্রো কেমনে এই গতিতে চালাচ্ছে হালা,দেখতেই হইব মেয়েগুলারে।হাহাহা...দোস্তরে কইলাম পা দিয়া বাইক চাইপা ধইরা বয়।হাহাহা...খুলে দিলাম পুরা থ্রটল।
১২০...২১...২২...২৩...২৪...২৫...২৬...২৭...২৮...এইবার গিয়া মাইক্রোর পাশে পৌছাইলাম...
ওমা...এইডা কিতা!কিসের মেয়ে,কিসের কি...দুইজন খালাম্মার সাথে ৫/৬টা পিচ্চী মেয়ে...মেজাজই খারাপ হইয়া গেল...ঝাটা মারি ড্রাইভারের কপালে...হাহাহাহা...
পথে আর কোন প্রকার প্রতিদ্বন্দিতা ছাড়াই আমরা চলতে থাকলাম।হঠাৎ করেই ভয়ংকর একটা সুন্দর কিছুর টানে যেখানে ঘটাং করে ব্রেক করে দাঁড়িয়ে গেলাম সেটা আর কিছুই না একটা আখের মত লম্বা কোন কিছুর বাগান,প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিতে হবে,অবস্থা বেগতিক।হাহাহা...
তবে একটু পরেই আবার দাড়াতেই হলো,ঘড়িতে তখন ৩টা ৪৫মিনিট।বলা যায় একই রকম ভাবে বাধ্য হলাম,আর এই জায়গার নাম ‘মোহনপুর’...অসম্ভব সুন্দর করে দিয়েছে ব্রিজটাকে যেটা তা হচ্ছে একটা ড্যাম টাইপ কিছু।যা খুব সম্ভবত ব্রিজের নিরাপত্তার অংশ হিসাবা করা হয়েছে।আর এখানে তার ছবিটাই সংযোজন করার ইচ্ছা আছে,জানি না শেষ পর্যন্ত কি হয়।হাহাহা...ওখানে কিছুক্ষণ দাড়ালাম,তখনো জানতাম না যে এখানেই আবার ঘুরে আসতে হবে আমাদের।তবে তা অন্যসময়ের কথা,অন্যদিনের কথা।
আবার বাইক ছুটিয়ে চললাম দিনাজপুরের দিকে।অল্প কিছুক্ষণের মধ্যেই পৌছে গেলাম দিনাজপুর।প্রথমে অবাক হলাম দিনাজপুর দেখে,এই বুঝি দিনাজপুর,বাংলাদেশের ডান্ডি...তবে ভুল ভাঙ্গলো একটু পরে।দিনাজপুর মেডিকেল যে শহরের দ্বারপ্রান্তে সেটা কি আর আমরা জানি নাকি।পরে শহরে ঢুকে বেশ অবাক হলাম,উত্তরবঙ্গে বগুড়ার পর এখানেই মনে হল শহর-শহর একটা আমেজ আছে।তবে তখন তা দেখার সময় নাই,মাথা গোঁজার টাহি খুজতে হবে।কিন্তু কোথায় কি?যাকেই জিজ্ঞেস করি বলে এদিক দিয়ে ওদিকে যান,ওদিক থেকে ডানে যাবেন পেয়ে যাবেন,গিয়ে দেখি কই রে ভাই,এটা কি?পরে মুরুব্বি বাদ দিয়া ইয়াং কাউকে,কাঁধে ব্যাগ দাড় করিয়ে জিজ্ঞেস করলাম।এক নিমিষেই পেয়ে গেলাম আমাদের মাথা গোঁজার ঠাই...আবারো মুগ্ধ হলাম,আমি সারাজীবন ছোট থাকার এক অদ্ভুত তাড়না অনুভব করলাম।হাহাহাহা...তাড়াতাড়ি রুমে সব ফেলে,ফ্রেশ হয়ে,বাইক নিয়ে বের হলাম।পথের ধারেই একতা স্ট্রিট ফুডের দোকানে দাড়ালাম।অদ্ভূত কিছু আইটেম এখানে তৈরী হতে দেখলাম...
-খাসিত মাংসের টিকিয়া টাইপ কিছু।
-ডিম চপ।
-ছোট মাছের বড়া।
-ফুলকপির বড়া।
আর সব ইউজুয়াল পিয়াজু,ছোলা...তবে এর কিছুই কি স্ট্রিট ফুড হিসাবে কোথাও তৈরী হতে দেখেছি।কোথাও না,তবে টি,এস,সি বা ভার্সিটি এরিয়া ছাড়া...
সমানে দুই দোস্ত খাইলাম।মন ভরল তবে পেট তো ভরে না,আমি কইলাম তুই খা আমি খুইজা দেখি হোটেল আছে কোনদিকে।আসল কথা দিনাজপুরের রাস্তা একটু টেস্ট করে দেখা।কোন কিছুর অপেক্ষা না করে বাইকে উঠেই...ভো...
মনে হয় দিনাজপুরের মানুষ এভাবে সাধারণত বাইক চালায় না বা যারা চালায় তাদের ভাল চোখে দেখে না,জানি না।দেখলাম জ্যাম রাস্তার মাঝেও খালি জায়গার অভাব নাই...হাহাহাহা...তবে হোটেল খুঁজে পেলাম না একটাও,এমনকি একটা ফার্মেসিও না।কারণ মাথা ব্যাথা করতেছিল খুব।হাহাহাহা...অবশ্য পরে গিয়ে খুঁজে পেলাম কারণ সাথে দোস্ত আছিল এবং যথারীতি আমাকে গালি দিচ্ছে, “তোরে দিয়া কিছুই হয় না।এইডা কি”?...হাহাহাহা...কে জানে কি হইছে...হাহাহাহা...তবে যেই জীবন হোটেল খুঁজে পাইলাম,এটা কিভাবে পাইলাম চিন্তা করলেও অবাক লাগতেছে।
জীবন হোটেলঃ
সাইনবোর্ড দেখে আশেপাশে খুঁজে আপনি কোন হোটেল পাবেন না।তবে প্রদর্শিত পথে যদি এগিয়ে যেতে পারেন সিঁড়ির নিচ দিয়ে তারপর একটা গেইটের ভেতর দিয়ে এবং গিয়ে হঠাৎই দেখে মনে করবেন কার ঘরের অন্দরমহলে ঢুকে পড়লাম কিন্তু সেটাই হোটেলের কিচেন আর তারপরে গিয়ে হোটেল যেখানে আমরা খেলাম বাংলাদেশের শ্রেষ্ঠ ক্ষীর।আসলে অ-সা-ম...খেলাম ভয়ংকর ঝাল যুক্ত ছোলা ভাজা,সাথে ভয়ংকর ঝালযুক্ত পাকোরা আর পিয়াজু।আর আমাদের অবস্থা দেখেই বেয়ারা সাহেব আমাদের নিজে থেকেই ক্ষীর খাবার পরামর্শ দিলেন।তবে সবচেয়ে ইন্সাল্টিং ব্যাপার হল,আমাদের পাশে বসেই ৯/১০বছরের এক শিশু মায়ের কোলে বসে সমানে এসব খাচ্ছে...যদিও ছোট মানুষ হিসাবে জল জল বলে চেঁচানোটাও স্বাভাবিক...যথারীতি আবারও ছোট থাকলে কি সুবিধা ভেবে মোহিত হলাম।আমরা চোখের নাকের পানিই কেবল মুছতে পারি,জল-জল বলে চেচাইতেও পারি না যদি বেয়ারা সাহেব সদয় হয়ে ক্ষিরের কথা না বলে তাহলে ওভাবেই মুখ বুঝে সইতে হত...তবে ত্রাণ পেয়ে দুটা করে ক্ষীর খেয়ে ফেললাম।কারণ দেখতে অনেক মনে হলেও চামচ লাগানো মাত্রই বুঝতে পারবেন পুরাটাই মাটির বাটি হাফ কোয়াটার অফ এন ইঞ্চ বা হাফ মিঃমিঃ ক্ষীরের পুরুত্ব...বাটির ডায়ামিটার বেশি হলে ২ ইঞ্চি।হাহাহাহা...যাই হোক,ঝাল,ক্ষীর,ভাজা পোড়া খেয়ে বের হলাম,ভাবলাম যাই একটু রুমে,গা কেমন যেন করছে।বাইক হোটেলের গ্যারেজে রাখলাম।
মান সম্মত হোটেল,নিট,ক্লিন...নাম ***...তবে হোটেল দোতলায়,নিচে ট্রান্সকমের শোরুম ছিল মনে হয়।রুমে গিয়ে বিছানায় গা এলাতেই যেন দুনিয়ার ঘুম চাপল,দেখা যাক কখন ঘুম ভাংগে.. zzzZZZZ ...এখানে তো আর পেঁচিকে দেখতে পাবার কোনই আশা নাই...দেখা যাক স্বপ্নে আসে কিনা...হাহাহাহা...

চাচা আপন প্রাণ বাঁচা, ২৫শে ডিসেম্বর,২০১৪:
ঘুম থেকে যখন উঠলাম দুই বন্ধু তখন প্রায় বিকেল। এত আরামে, এত দ্রুত একটা দিন কাটাবো তা আগে যদি একবার ভাবতাম...হাহাহাহা...কিছুই করলাম না আর, উঠলাম, ফ্রেশ হলাম, খেতে বের হলাম। খাওয়া শেষ করে, রুমে ফিরলাম। বাইক নিয়ে হাওয়া খেতে মোহনপুর চলে গেলাম, কিছুক্ষণ ঠান্ডা খেয়েই ফুট দিলাম, রুমে এসে আমি দিলাম ঘুম। রাতে কি হলো আমি কিছুই জানি না, ডিনারো করিনি। একেবারে পরদিন ভোরে উঠলাম। আমার দোস্ত একা একাই ডিনার করে নিয়েছিল এবং সকালে যথারীতি বাথরুম নিয়া ঠেলাঠেলি...হাহাহাহা...

দে দৌড়, ২৬শে ডিসেম্বর,২০১৪:
খুব সকাল সকাল দিন শুরু হয়ে গেল আজ। নাস্তা করতে গিয়া ভেজালে পড়লাম কারণ সবে পরটা বানাচ্ছে কিন্তু ইতিমধ্যে বিশাল এক ফ্যামিলি কক্সবাজার বেড়াতে যাবেন, তারাও নাস্তা করতে বসে আছেন। সো, সাপ্লাই ডিমান্ড নিয়ে একটু ঝামেলা হলো। আমাদের দেরী হলেও ততটা হলো না। ফাইনালী, নাস্তা করে বাইক স্টার্ট দিয়ে রওনা করলাম, গন্তব্য তেতুলিয়া।
সাড়ে দশটার দিকে আমরা পঞ্চগড় দাড়ালাম চা খেতে, সেখানে আরেকদল ট্রেভেলারের সাথে কথা হলো। ওনারা ঢাকা থেকে মাইক্রো নিয়ে এসেছেন।
দুপুর সাড়ে এগারোটা, আমরা তেতুলিয়ার চা বাগানের ছবি তুলছি। ছবি তোলা শেষ করে বর্ডারের উদ্দেশ্যে এগোচ্ছি। প্রথমে ভুল পথে চলে গেলাম বা পাঠিয়ে দেয়া হলো, হাহাহাহা… কিন্তু ওখানে পৌছে মন ভরে গেল। বর্ডার না হলেও খুবই সুন্দর একটা জায়গা। বেশ কিছুক্ষণ চললো, তারপর সেখান থেকে তেতুলিয়া বর্ডারে এলাম।
বাংলাবান্ধাঃ রাস্তাটা এতই চমৎকার ছিল যে বর্ডারে এসে খুবই আশাহত হলাম। কিছুই পেলাম না হিলি বর্ডারের মত। কেবল ট্রাকের লাইন আর সামান্য কিছু মানুষ ওখানের একটা মনুমেন্টের সামনে দাঁড়িয়ে ছবির পোজ দিচ্ছে। তবে কিছু নারী দেখে অন্তত ভাল লাগল। হাহাহাহা...প্যাঁচী না থাকলে যা হয় আর কি। হাহাহাহা... খুব বেশিক্ষণ সেখানে সময় নষ্ট করলাম না, ঘুরে দৌড় দিলাম কারণ রাস্তা টানছে। ১২১ কিঃমিঃ কিন্তু মনে হচ্ছে ৮০/৮৫ তে আছি। স্মুত এজ বাটার যাকে বলে আর কি, এত ভাল রোড সারা দেশে থাকলে ৬০০সিসি পারমিট হয়তো দিয়ে দিত...হাহাহাহা...স্বপ্ন হোক সত্যি ইটের পরে আধলা...হাহাহাহা... ছুটছি আর মনে মনে ভাবছিলাম, তেল কই পাই? পেট্রোল পাম্পে দাড়ালাম অকটেন নাই, তাই পেট্রোল নিয়েই আবার দৌড়ালাম। বিকাল ৪টার দিকে দিনাজপুরে ব্যাক করলাম। ফ্রেশ হলাম, খেলাম...আর ঠিক করে ফেললাম যদি আগামী বছর আবার আসি, খুব তো মন্দ হবে না তবে এখন বাসায় ফেরার পালা। প্যাঁচীকে দেখি না অনেকদিন। হাহাহাহা...

মন্তব্য ২ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ০৪ ঠা মার্চ, ২০১৬ রাত ২:৪১

চাঁদগাজী বলেছেন:



পুরো শীতের সময় পোস্ট লিখলে, ১৭ কোটীকে ডাক্তারের কাছে যেতে হতো।

০৯ ই মার্চ, ২০১৬ সকাল ৮:০০

ব্যাঙাচী বলেছেন: কে ভাবে এত???

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.