নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

এই শহরে অনেক হাজার হাজার ছেলে আছে যারা চুপচাপ থাকে, কথা কম বলে। পৃথিবীতে তারা বোকা, লাজুক, হাঁদারাম নামে পরিচিত। আমাকে এর সাথে তুলনা করলে তেমন একটা ভুল হবে না। নিজের ব্যাপারে বলাটা অনেক কঠিন। তবে নিজেকে মাঝে মাঝে অনিকেত প্রান্তর ভাবি।

জাহিদুল হক শোভন

এই শহরের বোকা ছেলেটি।

জাহিদুল হক শোভন › বিস্তারিত পোস্টঃ

গল্প: সমর্পন

১০ ই আগস্ট, ২০১৮ রাত ১০:০৫

“বাচ্চা ছেলেমেয়েগুলা রাষ্ট্র সংস্কারের যে হাল ধরেছে ওখানে আমাকে একটু কাল নিয়ে যাবে?” সন্ধ্যাটা পার হতেই রাতের আকাশের চাঁদের আলোটুকু যখন জিনাতের চেহারায় এসে পড়লো আমি তখন তার দিকে চুপ করে তাকিয়ে থাকি। একটা স্নিগ্ধতা এসে আমাকে আচ্ছন্ন করে ফেলে। জিনাতের কথায় আমি একটু অবাক হয়েছি বটে। ওর এই কথার প্রত্যুত্তর কি দেওয়া যায় আমি ভাবছিলাম। সে একটা নীল শাড়ি পড়া শুভ্র নীল নীল চোখে আমার দিকে তাকিয়ে ফের ইতস্থত হয়ে বললো “আমি কি কঠিন কিছু বলে ফেললাম? তোমার যদি কাজ থাকে তাহলে থাক।” আমি কিছু বলি না। আমার সমস্থ দেহে তখন বিধাতার উপর প্রচন্ড অভিমান। আমি প্রায় অনুধাবন করি বিধাতাকে জিজ্ঞেস করবো পৃথিবীতে তুমি যে ফুল সৃষ্টি করেছো অথচ তার গন্ধ ছড়িয়ে দেবার ক্ষমতা দিলে না কেন? জবা ফুল তার একটি উদাহরণ। আর জিনাতকে আমি জবা ফুল মনে করলেও মাঝে মাঝে কদম ফুল ভাবতে একটুও কার্পণ্য করি না। কদম ফুল এই প্রকৃতির মাঝে তার আবির্ভাব ছড়িয়ে প্রকৃতিকে যেমন আরও শোভাময় করে জিনাতকে আমার কাছে ঠিক তেমন মনে হয়। কিন্তু এই চমৎকার মেয়েটার সব কিছু থেকেও যেন নেই। আমি তাকে বললাম “কাল সকালে নিয়ে যাবো কেমন?” সে একটা মৃদু হাসি দেয় যার অর্থ ধন্যবাদ জনাব। আমি তার ধন্যবাদ মনে মনে গ্রহণ করে বললাম “এখন চুপ করে ছবি আঁকো মেয়ে।” সে আমার কথায় গভীর আচ্ছন্ন হয়ে ছবি আঁকায় মনোযোগ দেয়। সে আঁকার মাঝে আমি চুপ করে তাকিয়ে থেকে ভালো লাগার অনুভূতি খুঁজতে থাকি। কি চমৎকার করে মেয়েটা ছবি আঁকে। প্রতিটা ছবি যেন জীবন্ত হয়ে ফুটে ওঠে। এই ছবি আঁকার পাশাপাশি মেয়েটা ছবি তুলতেও বেশ পারদর্শী। কিন্তু আফসোস ওর দুটো পা নেই। এই শুভ্র মাখানো মেয়েটাকে আল্লাহ সব কিছু দিয়েও তার মধ্য থেকে একটা জিনিস কেন কেড়ে নিল তা আমি ভেবে পাই না।
.
সালটা তখন ২০১১, একটা ভয়ানক দিন তার জন্য। একটা যন্ত্রনা তাকে গ্রহণ করার জন্য তাড়া করে বেড়াচ্ছিল। কলেজ থেকে ফেরার সময় জেব্রাক্রসিং এ রাস্তা পার হওয়ার সময় একটা বাস এসে তাকে ধাক্কা দিয়ে চলে যায়। জিনাতের দু পায়ের হাটু থেকে বাকি অংশ কেটে ফেলে দেওয়া হয়। অবশ্য মাঝে মাঝে প্লাষ্টিকের নকল পা লাগিয়ে মিথ্যে হাটার চেষ্টা করে। জিনাতের সাথে আমার পরিচয় হয় কবিতার মাধ্যমে। মাঝে মাঝে “ইচ্ছে” পত্রিকার মধ্যে আমার কবিতা প্রকাশ পেতো। আমার এই সহজ সরল কবিতা কারো মনে অনুভূতি তৈরি করবে আমি কখনো ভাবিনি। আমার কবিতায় বিষাদের ছড়াছড়ি ছিল। কিন্তু এই পত্রিকায় আমি লিখা দিতাম না। এই পত্রিকার অবস্থা তেমন একটা ভালো ছিল না। সবে নতুন যাত্রা শুরু করেছিল। আরিফ ভাই আমার লেখা কবিতা গুলো নিয়ে ওখানে দিয়ে দিত। এই মানুষটা প্রায় আমাকে বলতো “এইভাবে নিজেরে লুকায় রাখস ক্যান? তোর যে একটা অদ্ভুত শক্তি আছে তুই জানিস? এই শক্তি আল্লাহ সবার মাঝে দেয় না।” আমি কিছু বলতাম না। উনার কথা গুলা কেন যেন অবজ্ঞা করে ফেলে দিতাম। একদিন হুট করে এই মানুষটা আমার কাছ থেকে হারিয়ে গেলো। একটা রিপোর্ট নিয়ে এক মন্ত্রীর বিরুদ্ধে লিখেছিল। এর কয়েকদিন পরই আরিফ ভাইকে আর কোথাও পাওয়া যায়নি। কোথায় আছে, এখনো বেঁচে আছে কিনা আমি জানি না।এই দেশটাতে কত মারামারি, হিংসা, দূর্নীতি, বহু বছর ধরে ক্ষমতা দখল করার নোংরা রাজনীতি। মাঝে মাঝে ভাবি এটাই কি রবি ঠাকুরের সেই সোনার দেশ? আরিফ ভাই হারিয়ে যাবার পর আমার লেখা যখন পত্রিকায় আর ছাপা হতো না তার এক মাস পর আমার কাছে একটা চিঠি আসে। আমি অনেকটা পুলকিত হয়েছিলাম। চিঠিটা যখন খুললাম আমি চুপ করে তাকিয়ে পড়ছিলাম।
.
প্রিয় জাহেদ
আমি একজন আপনার কবিতার পাঠক মনে করতে পারেন। আমি কে সেটার পরিচয় না হয় না জানলেন। আপনাকে চিঠি লিখার কারণ সংক্ষেপে জানাই। সমগ্র মানব যখন তাদের আলোড়ন ছড়িয়ে দেয়ায় মেতে উঠেছিল ঠিক তখন আমি একটা অন্ধকার ঘরে আশ্রয় নিলাম। আমার অনুভুতি প্রকাশ করার সঙ্গী হিসেবে বেছে নিলাম আমার চারপাশের দেয়ালকে। কিন্তু ওরা আমার অনুভূতির কোন প্রত্যুত্তর দিতে পারতো না। আমি সারাদিন বিষন্ন মন নিয়ে শূন্য ঘরে চুপ করে বসে থাকতাম। আমার বিষন্নতা দূর করার জন্য বাবা আমাকে অনেক বই এনে দিতেন। আমি তা চুপ করে বসে বসে পড়ি। তারপর ইচ্ছে পত্রিকায় আপনার কবিতাটা পড়লাম। কি মায়া মায়া লেখা। আপনার কবিতা যখন পড়লাম মনে হলো কবিতাটা আমার জন্যই লেখা। আমি খুব যত্ন করে পেপারটা কেটে রেখে দিয়েছিলাম। এরপর আরও একদিন আপনার কবিতা চোখে পড়লো। কবিতার শব্দ গুলোর মাঝে কি যত্ন ভাবেই না কষ্ট গুলোকে চোখের সামনে এনেছেন। এরপর আমি প্রতিবার আগ্রহ নিয়ে পেপারে আপনার কবিতা খুঁজতাম। পড়তাম। কিন্তু মাস খানিক হলো পত্রিকায় আপনার কবিতা পাইনি। আমার কেন যেন মনে হলো আপনাকে একটা চিঠি লিখি। জানেন আমার মাঝে মাঝে মনে হয়, যে এমন ভাবে লিখে তার ভিতরটাও কি বিষাদে আচ্ছন্ন? খুব শিঘ্রই আপনার কবিতা আবার পড়তে পারবো আশা রাখি। খুব ভালো থাকবেন।
.
এই চিঠির কোন উত্তর দেয়ার প্রয়োজোনবোধ করিনি। তারপর আরও অনেকটা দিন কেটে গেছে। কেটে যাওয়া তার কয়েকদিন পর আবার আমার কাছে চিঠি আসে। কেন আমি কবিতা লিখছি না। আমার প্রতি তার রাগের ক্ষোভ প্রকাশ করে। আর সেই রাগের নাম দিয়েছিল “কবিতার রাগ”। এই রাগের নাম শুনে অনেকক্ষন হেসেছিলাম। তারপর তাকে চিঠি লিখলাম। আমি তাকে জানাই এই পত্রিকায় আমি লেখা দিতাম না। শুধু এই পত্রিকায় না, কোন পত্রিকায় লেখা দেই না। একজন আমার কবিতা গুলো নিজে থেকে এই পত্রিকায় দিয়ে দিত। যে মানুষটা দিয়ে দিত সেই মানুষটা হারিয়ে গেছে একদম হারিয়ে গেছে। কিন্তু আমি অবাক হয়েছি আপনি আমার ঠিকানা পেয়েছেন কোথায়? আর আপনার কেন মনে হলো আমার কবিতা গুলো আপনাকে নিয়ে লেখা। আমার কবিতার মত আপনার মনও কি বিষাদময়?” এরপর জিনাত আমার চিঠির প্রত্যুত্তর দেয়। আমাকে তার দূর্ঘটনার কথা জানায়। এটাও চিঠির মাধ্যমে জানায় যে এই পত্রিকায় তার বাবা কাজ করে। তার বাবার পরিচয় দিলে আমি চিনতে পেরেছিলাম। কারণ জিনাতের বাবা আরিফ ভাই এর খোঁজ নেওয়ার জন্য কয়েকবার আমার কাছে এসেছিল। ইচ্ছে পত্রিকায় কবিতা না দিলেও যেন জিনাতের কাছে কবিতা পাঠাই এটা তার একটা অনুরোধ ছিল। এই অনুরোধটা আমি কেন যেন ফেলতে পারিনি। সপ্তাহ পর পর তার কাছে শুধু কবিতা লিখেছি। আমার বিষাদময় কবিতা। প্রায় দু বছর যাবত শুধু ওর কাছে কবিতা লিখে পাঠাতাম। আমাদের সমস্থ চিঠির শুরুটা হতো কবিতা দিয়ে। দু বছর পর তাকে দেখার কেন যেন ইচ্ছে হলো। যার কাছে এতো এতো কবিতা লিখলাম তাকে দেখার ইচ্ছেটা হুট করে কেন যেন মস্থিস্খে ভর করলো। তার সাথে যখন আমার দেখা হয় আমার ভিতরটা ধক করে উঠেছিল। আমি শুধু নিস্তব্ধ হয়ে সোফায় বসে তার মায়া মায়া চেহারাটার দিকে তাকিয়েছিলাম। আমার মনের সমস্থ কিছু্তে যেন মেঘে ঢেকে দিয়েছিল। তার সাথে দেখা হওয়ার পর ওকে আর কবিতা লিখে দিতাম না। দেখা করে তাকে কবিতা আবৃত্তি করে শোনাতাম আর বলতাম “চুপ করে শুনবে ঠিকাছে মেয়ে। দেখো আমার বিষাদময় কবিতা গুলো কিভাবে তোমাকে তলিয়ে দেয়” সে চুপ করে শুধু শুনতো।
.
আমার মাথার উপর সাদা আকাশটার দিকে তাকেতেই রোদ্দুর আলোটা আমার চোখে এসে পড়ে। তাৎক্ষণিক ভাবে আমি চোখ নামিয়ে জিনাতের দিকে তাকালাম। আমি এই সকাল বেলা ওকে কোমলমতি ছেলেমেয়েদের নিরাপদ সড়ক চাই আন্দলনে নিয়ে এসেছি। রোদ্দুর আলোর সংমিশ্রনে ওর মায়া মায়া চেহারাটা কেমন ঝলঝল করছে। নকল পা লাগিয়ে হাটতে কষ্ট হয় বলে আমি ওকে হুইল চেয়ারে নিয়ে এসেছি। আমার চারপাশের এতো এতো ছেলেমেয়ের দিকে যখন তাকাই আমার ভিতরটা কেন যেন চিৎকার দিয়ে ওদের সাথে বলতে চায় We want justice. আমি যখন কোন মিছিল, মারামারি দেখি আমার মনের ভিতর বিশাল ভয় এসে জমা হয় কিন্তু এই মুহুর্তে আমার মনের ভিতর যে ভয়টা এতোদিন বাসা বেধে ছিল সেটা কেন যেন আমাকে তার করে নিত পারলো না। আমি চিৎকার করে ওদের সাথে বললাম We want justice. এতো এতো বাচ্চা ছেলে মেয়েদের সাহস দেখে আমার নিজেকে খুব লজ্জিত মনে হয়। আমি অনুধাবন করি রোদ্দুর আলো কিংবা মেঘের কালো ছায়া তাদের সাহসকে স্পর্শ করতে পারবে? আমার মনে হয় না। আজ পুরো আকাশটা ওদের। তাদের এই আন্দলনে আমি এই পৃথিবীর অদ্ভুত রুপ দেখি। জিনাত আমার দিকে কেমন একটা চাহনিতে তাকালো। আমি ইতস্তত হয়ে বললাম "এতো এতো ভালোবাসার চিৎকারের শব্দ গুলা ক্যামেরা বন্ধি করবে না মেয়ে?” তারপরেই সে একের পর এক ছবি তুলতে থাকে। কোমলমতি ছেলেমেয়েদের হুঙ্কারের ছবি। একটু পর জিনাত আমাকে বললো “আমাকে একটু ওদিকটায় নিয়ে যাবা? ঐযে লোকটার কাছে।” আমি একবার তাকালাম লোকটার দিকে। রোদে চেহারাটা কেমন লালচে হয়ে আছে। এই লালচে চেহারার চোখে কেমন যেন অদ্ভুত জল বেয়ে বেয়ে পড়ছে। লোকটার কাছে নিয়ে যেতেই জিনাত উনাকে বললো “চাচা কাঁদেন কেন? কি হয়েছে?” লোকটা একবার আমাদের দিকে তাকালো। তারপর জোরে একটা চিৎকার দিয়ে বললো “আনন্দে কাঁদি। আমার বুকটা ফেটে যায় এই বাচ্চা ছেলেমেয়েদের সাহস দেখে। দেখো ওরা কিভাবে প্রত্যেকটা গাড়ির লাইসেন্স চেক করছে। সেটা যে কেউ হোক। চার বছর আগের কথা। আমার মেয়েটা ইন্টার পাশ করেছিল। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য নিজেকে তৈরি করছিল। আমরা গ্রামে থাকি। মেয়েটাকে নিয়ে আমি ঢাকায় আসি ওর পরীক্ষার জন্য। আমরা বাবা মেয়ে রিকশায় ছিলাম। তারপর কি যেন হয়ে গেল। পিছন থেকে একটা চলন্ত ট্রাক এসে ধাক্কা দিল। এরপর কি হয়েছিল আমি জানি না। যখন আমার জ্ঞান ফিরলো তখন দেখলাম আমার মেয়েটা একেবারে হারিয়ে গেলো একেবারেই। আমি এর বিচার আজও পাইনি। আমার বাম পায়ের মাঝে ভর দিয়ে তেমন হাটতে পারিনা। মেয়েটার মা প্রতিদিন রাতে কাঁদে। আমি ওরে শান্তনা দিতে পারিনা। আজ এতো বছর পর এই ছেলেমেয়েদের ডাক যখন শুনলাম রাফিয়ার মা আমাকে ঘরে থাকতে দেয় নাই। বললো ঢাকায় যাও। ওই ছেলেমেয়েদের পাশে দাঁড়াও। আমি কিভাবে দাঁড়াবো বুঝতে পারিনি। রাফিয়ার মা তার জমানো কিছু টাকা ধরিয়ে দিয়ে বললো “এতে দশ হাজার টাকা আছে। এই টাকাটা ওদের পিছনে খরচ করিও। আমি জানি এই সামান্য টাকায় কিছু হবে না। এই দেখো অনেক কলা আর বোন কিনে নিয়ে আসছি। ওদেরকে দিচ্ছি। যে কয়দিন পারি ওদের সাহায্য করে যাবো। আমি ওদের সাথে আছি।” এই টুকু বলে লোকটা থামে। আমরা দুজন নিস্তব্ধ হয়ে শুনছি। লোকটা আবার বললো “ওরা আমার কাছে কি জানো? ওরা আমার কাছে এক একটা বাংলাদেশ। ওদের অনুপ্রেরণা দিতে হয়না। বরং ওদের থেকেই মানুষ অনুপ্রেরণা নিবে দেখে নিও। এই যে ওরা যে কাজটা করছে, তা যদি প্রত্যেক কাজে হুঙ্কার দেয় এই দেশটায় বদলে যাবে।কিন্তু আমি জানি এটা কখনো সম্ভব না।” এই কথা গুলা শুনে কেন যেন আমার ভিতরটা জেগে ওঠে। জিনাত একটু ইতস্তত করে বললো “চাচা আপনাকে কেন যেন আমার সালাম করতে ইচ্ছে করছে। করতে দিবেন? লোকটা আবার কান্না করতে থাকলো। আমি চুপ করে এই পৃথিবীর অদ্ভুত মায়া মায়া দৃশ্যগুলো আমার চোখে এঁকে নিচ্ছি। আর একটু সামনে জিনাতকে নিয়ে যেতেই দেখলাম ছেলেমেয়েরা এ্যাম্বুলেন্স এর ইমার্জেন্সি লাইন তৈরি করে দিচ্ছে। জিনাত আমাকে বললো “দেখেছো এই কোমলমতিরা চাইলে কিনা করতে পারে। ভাবা যায়?” আমি চুপ করে থাকি। ওদের নিয়ে কি প্রত্যুত্তর দিব ভেবে পাইনা। এই সব ছেলেমেয়েদের কার্য্যক্রমের দৃশ্য গুলো নিজের অনুভূতির মাঝে ঠায় দিতে দিতে দুপুর ছুয়ে যায়। দুপুরের কড়া এই রোদ্দুর আলোকচ্ছটার ক্লান্তি আমাকে একটুও কেন যেন স্পর্শ করতে পারে না। আমি জিনাতকে বললাম “চলো এবার বাসায় যাওয়া যাক।” সে আমার দিকে তাকিয়ে বললো “আর একটু থাকি।?” আমি ওর মায়া মাখানো আবদার ফেলতে পারি না। ঘন্টাখানেক পরে বাসার দিকে যখন যাচ্ছিলাম তখন দেখি অনেক মায়েরা বাসা থেকে খাবার এনে ওদের নিজ হাতে খাওয়াচ্ছে। আমার ভিতরটা ধক করে ওঠে। আমার মায়ের কথা মনে পড়ে। গত দুমাস ধরে আমার মায়ের সাথে দেখা করিনা। মূলত আমি আমার বাবার মায়ের সাথে থাকিনা। খালার বাসায় থাকি। আমার বাবা একজন পুলিশ। ভাসিটির প্রথম বর্ষে থাকতে বাবার সাথে রাগ দেখিয়ে বাসা থেকে বের হয়ে গেছি। ছোট বেলা থেকে বাবার কড়া শাসন গুলো আমাকে কেমন একটা অন্যজগতে নিয়ে গিয়েছিল। যেদিন বাসা থেকে বের হয়ে গিয়েছিলাম তার পর থেকেই মনে হলো আমি নিজেই একটা স্বাধীনতা। সে তার পুলিশগিরিও বাসায় এসে প্রয়োগ করবে। মায়ের সাথে প্রায় ঝগড়া করতো। উঠতে বসতে ধমকের স্বরে কথা বলে। ক্লাস এইটে থাকতে আমি একদিন ওনাকে বলেছিলাম “আপনি এইভাবে কথা বলেন কেন?” ওনি আমার দিকে বেশ কিছুক্ষন তাকিয়ে থেকে গালে একটা থাপ্পড় মেরে বলেলো “অনেক সাহস হয়েছে হারামজাদা। আমাকে জিজ্ঞেস করিস আমি এই ভাবে কথা বলি কেন।” সেদিন সারাটা রাত আমি একটুও ঘুমাতে পারিনি। ছোট বোন বিন্তি আমার কাছে বলেছিল “ভাইয়া খাবি না?” আমি শুধু ওরে বলছিলাম আমার সামনে থেকে যা।
.
আজকের বিকেল বেলার আকাশটা হঠাৎ করেই রং পরিবর্তন করেছে। চারপাশে ঘুমোট অন্ধকার। আকাশ ভেঙ্গে হয়তো বৃষ্টি নামবে। ইদানিং কেন যেন আমার অদ্ভুত ইচ্ছে জাগে। জিনাতের সাথে নিজেকে বৃষ্টির মাঝে মেলে ধরতে। এই মেয়েটাকে কখন ভালো লেগে গেলো আমি অনুধাবন করে বুঝি না। কিন্তু এই ভালো লাগার কথাটা প্রকাশ করতে কেন যেন আমার মন সায় দেয় না। গতকাল ওকে বাসায় দিয়ে আসার পর সন্ধ্যার নাগাত বৃষ্টি শুরু হয়েছিল। একবার তাকে ফোন দিয়ে জিজ্ঞেস করতে ইচ্ছে করছিল “কি করো মেয়ে? এই বর্ষন মুখর সন্ধ্যায় বৃষ্টিতে ভিজতে ইচ্ছা করে না?” এই সামান্য কথাটা বলার সাহসটুকুও আমার নেই। আমি যখন ওকে নিয়ে ভাবছি ঠিক তার কিছুক্ষন পর ও আমাকে ফোন দিয়ে বললো “কি করো তুমি?’ আমি একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললাম “সময় কিভাবে কেটে যাচ্ছে তা নিয়ে ভাবি। আচ্ছা সময়কে বেধে রাখার কোন সিস্টেম নেই?” সে একটু হেসে বলে “এতো ভাবতে নেই জনাব। আমাকে আজকেও একটু নিয়ে যাবে?” আমি তাকে বললাম “না যাওয়া যাবে না। বাহিরের অবস্থা ভালো না। কোমলমতিদের এই আন্দোলন ভঙ্গ করার জন্য কিছু পশু নেমে পড়েছে রাস্তায়। শহরের রাস্তার মোড়ে মোড়ে এই পশুরা রাজত্ব করবে এখন।” জিনাত চুপ করে রইলো আমার কথা শুনে। ওর এই চুপ থাকার কারণ আমি বুঝতে পেরেছি। তারপর একটু গম্ভীর হয়ে বললো “জানো এই ছেলেমেয়েগুলোর জন্য আমার মায়া হয়। আমার ভাবতে কষ্ট হচ্ছে, না জানি কতজন এই পশুদের হাতে আহত হবে।” আমি তাকে বললাম ”এই পরিস্থিতিটা এখন টম এন্ড জেরির মত হয়ে গেছে। ইদুর গুলা হুঙ্কার দিয়ে যখন একত্রে রাস্তায় নামলো তখন সাদা কালো বিড়াল গুলা তাদের হিংস্র চেহারাটা নিয়ে তাড়া করে পুনরায় ঘর বন্ধি করার জন্য উপছে পড়ে লেগে আছে। সমালোচনা প্রতিটা কাজের ক্ষেত্রে একটা ভালো দিক। ধরো তুমি দেশ পরিচালনা করছো। এই পরিচালনার ক্ষেত্রে অনেক কিছুতে তোমাকে মোকাবেলা করতে হবে। এই কাজের ক্ষেত্রে তোমার কাজটা ভালো হতেও পারে আবার খারাপ হতেও পারে। যখন খারাপ হবে পাবলিক তোমাকে নানান কথা বলবে। যখন বলবে তুমি তোমার ভুলটা দেখতে পারবে। সমালোচকদের কাজই হচ্ছে এই গুলা। তুমি তাদেরকে তুমি শত্রু ভাববে? মোটেও এমনটা ভাবা বোকামী। বরং সে তোমার একজন বন্ধূ। সে যদি সমালোচনা না করে তুমি তোমার ভুলটা বুঝতে পারবে না। আর এই ভুলটা শুধরে নেওয়ার সুযোগ থাকবে। দেশটা এভাবে আগাবে। কিন্তু তুমি কি করছো? তোমার বল প্রয়োগ করছো। যারা সমালোচনা করছে তাদের মুখে টেপ লাগিয়ে দিচ্ছো। সমালোচনা হজম করার শক্তিই যদি তোমার না থাকে তাহলে কেন দেশ পরিচালনা করছো? ঘন্টা খানেক আগে একজন কি বলেছে জানো? ঐ যে টম জেরির কথা বললাম তোমাকে। জেরি নাকি টমের কার্য্যলয়ের সামনে হামলা করেছে। তাই টম জেরির উপর বল প্রয়োগ করেছে। বল প্রয়োগ না করে কি চুমু খাবে? আমরা কোন পাগলের দেশে বসবাস করছি ভাবো তো? আর এখন টেলিভিশনে দেখলাম এই কথাটা নাকি মুখ ফুসকে বের হয়ে গেছে। আমার খুব খারাপ একটা গালি দিতে ইচ্ছে করছে। খুব খারাপ খুব। গালি দিয়ে বলবো মুখ ফুসকে বের হয়ে গেছে। কিন্তু আমি এমন করবো না। দিয়েই বা লাভ কি?” জিনাত শুধু চুপ করে আমার কথা গুলো শুনছিল। একটা শ্বাস নিয়ে বললো “আমার কেন জানি কান্না আসছে।” আমি তাকে বললাম রাতে দেখা হবে মেয়ে। এখন রাখি কেমন।
.
সন্ধ্যার আলোকচ্ছটা যখন এই শহরের বুকে ছড়িয়ে পড়লো তখন চারপাশটায় নিশ্চুপতা ছড়িয়ে যায়। এই নিশ্চুপতার মাঝে আমার কেমন যেন অদ্ভুত অনুভূতি জাগে। আমার মায়ের কাছে যেতে ইচ্ছে করে। আমার বাবা এমন ছিলেন না প্রায় আমার মা বলে। বিয়ের আগে আমার বাবা নাকি আমার মাকে অনেক পছন্দ করতো কিন্তু কখনো সাহস করে বলতে পারতো না। পুলিশে জয়েন হওয়ার আগে আমার বাবা আট দশটা সাধারণ মানুষের মত ছিল। এই চাকরিটাই নাকি মানুষটাকে বদলে দিয়েছে। এসব ভাবতে ভাবতেই আমি আমার মায়ের কাছে যাই। মা আমাকে দেখে ছলোছলো চোখ নিয়ে বলে “কেন আসছিস? আমাদের ছাড়া তো ভালোই আছিস। আমার কথা বাদই দে, তোর যে একটা বোন আছে সেটা কি তুই ভুলে গেছিস?” আমি চুপ করে থাকি। আমার চোখ দিয়ে জল আসে। এই জল কিসের আমি জানি না। এরএকটু পরই বাবা আসে বাসায়। আমাকে দেখে কিছু বললো না। মা আমাকে আস্তে করে বললো “ভিতরে যা।”আমি ভিতরে যাওয়ার পরই আব্বা আম্মার থেকে চা খুঁজে। আমি বিন্তিকে বললাম "কেমন আছিস তুই? তোর পড়ালেখার কি খবর?" ও আমার দিকে অদ্ভুত ভাবে তাকিয়ে থেকে বললো "ভাইয়া তুই আলগা পিরিত দেখাইস না তো। তুই কি আমার খবর রাখিস?" আমি চুপ করে একটা মৃদু হাসি দিয়ে বললাম "দুঃখিত জনাবা ভুল হয়ে গেছে এবার থেকে এতো এতো খবর নিয়ে জ্বালাইয়া ফেলবো।" আমি বিন্তিকে যেই আরও কিছু বলতে যাব তখন সামনের রুম থেকে কিছু একটা ভাঙ্গার শব্দ পেলাম। আমি দ্রুত গিয়ে দেখলাম "আব্বা আম্মাকে বলছে "তুমি সকালের চা আমাকে এখন গরম করে খাওয়াচ্ছো? তোমার আক্কেল জ্ঞান বলতে কিছু নেই?" আমি চুপ করে শুনতে থাকলাম। আম্মাকে যখন বললো "ওরে বাসায় জায়গা দিছো কেন? ঠিক তখন আমি বললাম "দেখা করতে আসছি। কিছুক্ষন পর চলেই যাবো। এখানে পরে থাকবো না আমি।" উনি আমার দিকে তাকিয়ে থেকে আম্মাকে বললো "বেয়াদবটার কথা শুনছো? অবশ্য তুমি যেমন তোমার ছেলেও তেমন। মাঝে মাঝে আমি ভাবি এইটা কি আমার ছেলে?"কথাটা শুনেই আমার মাথাটা গরম হয়ে গেলো। আম্মা কিছুই বললো না। কিন্তু আমি বললাম "আপনি কথায় কথায় এই রকম আচরণ করেন কেন? কি সমস্যা আপনার? আমি আপনার ছেলে এটা নিয়ে আপনার সন্দেহ হয় নাকি?" উনি গলার স্বর উচু করে বললো "দেখছো মুখে মুখে তর্ক করে। সে কি জানে না আমি কি?" আমি বললাম "মুখে মুখে তর্ক করতে আপনি নিজেই বাধ্য করেছেন। আর আমি ভালো করেই জানি আপনি একজন কি। আপনার এই পুলিশগিরি থানায় দেখাবেন। বাসায় না। আর পুলিশ হয়েছেন তো কি হয়েছে? পুলিশ কোন চ্যাটের বাল?" এই কথা বলার সাথে সাথেই আম্মা আমার গালে একটা কষে থাপ্পড় মেরে বললো "তোর সাহস অনেক বেড়ে গিয়েছে। বের হ আমার বাসা থেকে তুই। আসছিস কেন? মরতে পারিস নাহ?" আমি গাল ধরে চুপ করে থাকি। আব্বা আমার দিকে একবার তাকায় আর একবার আম্মার দিকে তাকায়। তারপর মেঝেতে পড়া ভাঙ্গা কাপটাতে তার সু দিয়ে একটা লাথি দিয়ে বের হয়ে যায়। আম্মা মেঝেতে বসে পড়ে মুখে শাড়ির আচল দিয়ে কান্না করতে থাকে। বিন্তি আম্মার পাশে গিয়ে বসে। আমি বললাম "এইসব অশান্তি আর কতদিন?" আম্মা কান্নার গোংড়ানি দিয়ে বললো "জাহেদ তোর বাবা তো এমন ছিল না। এই একটা মানুষের উপর কয়টা মানুষ নির্ভর করে তুই জানিস? তোর ফুফা মারা যাওয়ার পর থেকে তোর ফুফুর ছেলেমেয়েদের পড়ালেখার খরচ, সংসারের খরচ, এদিকে তোর দাদা প্যারালাইসেস তার চিকিৎসার খরচ, তোদের পড়ালেখার খরচ, সব কিছু তার উপর নির্ভর। রাতে ঘুমানোর সময় নিজে নিজেই বক বক করবে, তাদের প্রতি ঘৃনা ছড়ায় যারা, ঘুষ, সত্যকে মিথা, আর মিথ্যাকে সত্য বানায়। তোর বাবা কিছু বলতে পারে না। প্রথম প্রথম তোর বাবা প্রতিবাদ করেছে তখন তোরা অনেক ছোট, নিজের চাকরি নিয়ে টানাটানি শুরু হয়ে গিয়েছিল। তারপর তোর বাবা আমাদের কথা ভেবে একেবারেই বোবা হয়ে গেছে। বাহিরের রাগ বাসায় এসে দেখায়। চাকরি মানেই গোলাম। উপর থেকে যা অর্ডার আসে সে অনুযায়ী করতে হয়। আমি তো সব বুঝি। মানুষটা রাগলেও আমি চুপ করে থাকি। মাঝে মাঝে প্রায় আমাকে বলে "জাহেদের মা মাঝে মাঝে না নিজেকে নিয়ে অনেক ঘৃনা হয়।” মানুষটার মাথা নষ্ট হয়ে গিয়েছে।" এইটুকু বলে আম্মা থামে। আমার ভিতরটা কেমন যেন শিতল হয়ে গেলো। বিন্তি বললো "জানিস ভাইয়া, আম্মা যেন বুঝতে না পারে বাবা প্রতিদিন চুপি চুপি আমাকে জিজ্ঞেস করে "তোর ভাইয়া ফোন দিয়েছিল আজকে? পড়ালেখা ঠিকমত করে? ঠিক মত খাওয়া দাওয়া করে? তুই মা একটু ফোন দিয়ে নিজে থেকেই খবর নিস কেমন। তোর ভাই তো। আমার প্রতি ছেলেটার কত অভিমান। " আমি প্রতিবার আচ্ছা ঠিকাছে বাবা এই শব্দটা বলে দেই। আমি আমার বাবাকে চিনি তো।" আমার কি বলা উচিৎ আমি বুঝতে পারি না। আমার চোখ দিয়ে জল গড়িয়ে পড়ে। আমি সেই জল না মুছেই ঘর থেকে বের হয়ে যাই। আমি অনুধাবন করি এই শহরের এই পেশার সাথে জড়িত সব মানুষই খারাপ না, এই খারাপের মাঝে ভালোরা তলিয়ে থাকে। তাদের মুখে তালা মেরে রাখা হয়। এই পেশার পোশাক মানুষের সব কিছুই পরিবর্তন করে দেয়। সেই ছোট্টবেলার দৃশ্য গুলো আমার মনে পড়ে। আমি বাবার কাধে টগবগ টগবগ করে চড়ে বেড়াই। যে পেশাটা বাবা ছেলের মাঝে দুরুত সৃষ্টি করেছে সেই পেশাটাকে কেন যেন আমার সম্মান করতে ইচ্ছে করে না। এই পেশার মানুষেরা চাইলে অনেক কিছু করতে পারে। পুরো দেশটা ওদের কাছে নিরাপত্তা চায়। এই যে এতো এতো আন্দোলন এই সবের কিছুই প্রয়োজন হয় না, যদি এই পেশার মানুষেরা ঠিক থাকে। কিন্তু আফসোস বড় বড় দানবের নিকট ওরা পা চাটা গোলাম হয়ে যায়। ফলে এই পেশাটা অসম্মানের কাতারে চলে আসে। এই পুরো শহরটায় চাঁদাবাজ, দূর্নীতি, ঘোষ, পোশাকের ক্ষমতা এই পেশার লোকেরাই বেশির ভাগ করে। আইন নাকি সবার কাছে সমান। আসলে এই কথাটা বাস্তবতার দিক থেকে একদম মিথ্যা। মনে মনে বললাম দুঃখিত বাবা। এসব অনুধাবন করতে করতে আমি তাচ্চিল্যের আভা নিয়ে হাটতে থাকি।
আমি জানি এসব কিছুই মানুষ ভুলে থাকার চেষ্টা করবে। নতুন ইস্যু আসবে, একের পর এক ইস্যু। তাতে এই শহরে সমগ্র মানুষ হুমড়ি খেয়ে পড়বে।
.
রাত সাড়ে নয়টার নাগাত আমার এই তাচ্ছিল্যের আভা মিশ্রিত চেহারা নিয়ে জিনাতের বাসার দরজায় সামনে পৌছে কলিং বেল চাপতেই জিনাতের বাবা দরজাটা খুলে দেয়। আমাকে দেখেই বললো “কেমন আছো বাবা?” আমার মনের ভিতরের নিস্তব্ধতা কাটিয়ে বললাম “জ্বি আংকেল ভালো। আপনার শরীর কেমন?” শরীর ভালো বলে তিনি জানায় ইদানিং মেয়েটার মন কেমন যেন হয়ে গেছে। আমি চুপ করে ওর রুমে কাশি দিয়ে ঢুকেই দেখি জানালার পাশে হুইল চেয়ারে বসে মাথা হেলান দিয়ে ঘুমিয়ে আছে। আমি একটু কাছে গিয়ে ওকে ডাক দিতে চাইলেও কেন যেন ডাক দিলাম না। রাত্রির এই শূন্য জানালার পাশে তার মায়া মায়া চেহারাটার দিকে তাকিয়ে থাকি। জানালায় দিয়ে আসা বাতাসের শব্দে আমার সময়টা কেন যেন হঠাৎ করেই থেমে যেতে চায়। জিনাতের এই দূর্ঘটনার আগে একটা ছায়া এসে তার চোখের ভাষাগুলো সেই ছায়ার মাঝে বন্ধি করতে চেয়েছিল। ছায়াটার নাম অর্ক। একদিন আমাকে বলেছিল "জানো জাহেদ একটা আলোর স্বপ্ন আমার হাতের মুঠোয় এসে ধরা দিতে চেয়েছিল। কিন্তু সময়ের বৃত্তটা ঘুরে স্বপ্নটা আমার হয়েও হলো না। এরপর কয়েকটা দিন শুধু মেঘের ভেলায় আমার চোখ ভিজিয়েছি। এই নোনা স্বপ্নটা হঠাৎ করেই যখন আমার মনের মাঝে ভেসে বেড়ায় তখন আমার আকাশটা ভিজে চুপসে যায়। ক্লাসে নানা অযুহাতে অর্ক আমার সাথে কথা বলতে চাইতো। কারনে অকারনে লুকিয়ে লুকিয়ে দেখতো। আমি বুঝতে পেরেছিলাম তার এই লক্ষন। একদিন তার মনের অব্যক্ত কথা গুলো আমাকে জানালো। জানালো আমাকে তার ভালো লাগার কথা। ছেলেটাকে আমারও ভালো লাগতো, আমি সময় নিচ্ছিলাম আমার কথা গুলা তাকেও বলতে। কিন্তু জানো এই সময়টা আমার কখনো আসেনি। যেদিন আমার এই দূর্ঘটনাটা হলো হাসপাতালে ও শুধু আমাকে একবারই দেখতে এসেছিল। তারপর থেকেই ও আমাকে কেমন যেন অবজ্ঞা করে চলতো। ভালো লাগা এমন কেন বলোতো?" সেদিন আমি কিচ্ছু বলিনি ওকে। আমার ভিতরটা তিমিরাচ্ছনের মত হয়ে গিয়েছিল। আমি এখনো জিনাতের ঘুমন্ত মুখমন্ডলের দিকে তাকিয়ে আছি। বাহিরের বাতাসটা একটু জোড়ে এসেই যখন তার মায়া মায়া মুখে স্পর্শ করলো তখন সে চোখ মেললো। আমাকে দেখেই বললো "এমা তুমি কখন আসছো? চোখটা কখন যে লেগে গেলো বুঝতে পারিনি।" আমি তার কথার প্রত্যুত্তর দেই না। সে আমার চুপ থাকা দেখে আবার বললো "দাঁড়িয়ে আছো কেন? বসো। তোমার কি মন খারাপ?" আমি এই নিশাচর রাতে জানালার দিকে একবার তাকিয়ে তারপর বললাম "হ্যাঁ একেবারেই বিষন্ন হয়ে আছে মন। আমি অনেকটা হাপিয়ে গিয়েছি। অনেক আগে ভেবেছি তোমাকে একটা কথা বলবো। এই বিষন্ন মন নিয়ে কথাটা বলতেও কেন যেন মন সায় দেয় না। কিন্তু এই চমৎকার নিশাচর রাত্রির আলোতে কথাটা না বললেই নয়। গভীর আচ্ছন্ন হয়ে এতোক্ষন তোমার মায়া মায়া চেহারার দিকে উদ্ভেগপূর্ণের সহিত তাকিয়ে ছিলাম। এমন গভীর আচ্ছন্ন হয়ে আমার মাঝে মাঝে খুব ইচ্ছে করে কোন এক ময়ূরাক্ষীর দিকে তাকিয়ে থাকতে। কিন্তু কেন যেন এই ইচ্ছাটুকু আমার হয়ে উঠে না। জীবনের শ্বাস যতদিন কাজ করবে ততদিন এমন আচ্ছন্ন হয়ে তোমার মায়া মায়া চোখ জোড়াতে নিজেকে সমর্পন করতে চাই। অনুমতি দিবে?" আমার এই কথা শুনে সে চুপ করে অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে। আমার কাছ থেকে এমন কিছু একটা শুনতে পাবে হয়তো এটা নিয়ে ভাবছে। আমি তার প্রত্যুত্তরের জন্য অপেক্ষায় চেয়ে থাকি। এই প্রত্যুত্তরের অপেক্ষার প্রহরটা জন্য কেন যেন অদ্ভুত ভালো লাগা কাজ করছে...

মন্তব্য ৩ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৩) মন্তব্য লিখুন

১| ১১ ই আগস্ট, ২০১৮ রাত ১২:৩৪

নির্বাক শাওন বলেছেন: ভাল লেগেছে। বেশী কিছু বললাম না। শুভকামনা।

২| ১১ ই আগস্ট, ২০১৮ রাত ২:০৮

কাওসার চৌধুরী বলেছেন:



মাঝে স্পেস দিয়ে লেখলে পড়তে সুবিধা হবে; মোটামুটি লেগেছে পড়ে ৷

৩| ১১ ই আগস্ট, ২০১৮ সকাল ১০:১৩

রাজীব নুর বলেছেন: পরাণ আমার জন্মের রঙে রাংগা...

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.