নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

এই শহরে অনেক হাজার হাজার ছেলে আছে যারা চুপচাপ থাকে, কথা কম বলে। পৃথিবীতে তারা বোকা, লাজুক, হাঁদারাম নামে পরিচিত। আমাকে এর সাথে তুলনা করলে তেমন একটা ভুল হবে না। নিজের ব্যাপারে বলাটা অনেক কঠিন। তবে নিজেকে মাঝে মাঝে অনিকেত প্রান্তর ভাবি।

জাহিদুল হক শোভন

এই শহরের বোকা ছেলেটি।

জাহিদুল হক শোভন › বিস্তারিত পোস্টঃ

গল্প: নীল মেঘ

১৪ ই এপ্রিল, ২০১৯ রাত ১০:১৫


ছবি গুগল


প্রতিবছর এই সময়টাতে আমার এরকম দিন কাটে না। মনে হচ্ছে মৃত্তিকা বেদ করে সদ্য চারা গাছটা যেমন আকাশটা দেখে ঠিক যেন আজকের সকালটা আমার কাছে এমন। যদিও আমার পাশে জাহেদ হাটছে কিন্তু মধ্যেখানে চার ফুটের মত একটা জায়গা রয়েছে। চাইলে আমাদের এই মধ্যে আরো দুজন এসে হাটতে পারবে। আমার কাছে বিষয়টা যেন কেমন লাগছে। লাজ লজ্জার মাথা খেয়ে আমি আস্তে আস্তে ওর পাশে যেতেই ও ঠিক আরো দুরে সরে যাচ্ছে। আমি চেহারায় একটা বিরক্তির ছাপ আনার চেষ্টা করলাম। একবার বলতে চেয়েছিলাম এই ছেলে কষে দুইটা থাপ্পড় লাগাবো আরেকবার সরে গেলে। আর এইভাবে দুরুত্ব রেখে হাটছো কেন? কিন্তু কথাটা বলিনি। আমি স্বাভাবিক হয়ে নিজেকে নিজে শান্তনা দিয়ে বললাম “শান্ত থাক জেনিয়া শান্ত থাক। মনে মনে এটা বলেই হাটতে লাগলাম। যদিও আমি এই ছেলেটার সাথে কোন রাগ দেখাতে পারি না। আমি মোটেও শান্ত টাইপের মেয়ে না। হাটতে হাটতেই রাস্তাটা পার হবো ঠিক তখন ও আমার দিকে তাকিয়ে কিভাবে যেন আস্তে করে আমার হাতটা ধরলো। আমি বেশ অবাক হয়ে ওর দিকে তাকিয়ে থাকলাম। ও হাতটা ধরেই এদিক ওদিক তাকিয়ে রাস্তাটা পার হতে লাগলো। আমি শুধু এইটুকু ভাবছি রাস্তটা যেন শেষ না হয়। যদিও রাস্তাটা অনেক বড় ছিল কিন্তু আমার কাছে মনে হচ্ছিল অনেক ছোট। রাস্তা পার হওয়ার পরই আমার হাতটা ছেড়ে দিয়ে আবার হাটতে লাগলো। আমি একটু স্বাভাবিক হয়ে বললাম...

"এই দাঁড়াও তো।
"কি হয়েছে। হাটতে অসুবিধা হচ্ছে?

আমি একটু চুপ করে রইলাম। বলতে চেয়েছিলাম না আমার কোন অসুবিধা হচ্ছে না। আমার তো মনে হচ্ছে তোমার অসুবিধা হচ্ছে তাই দুরত্ব রেখে হাটছো। শোনো ছেলে এত বোকা সেজে দেখাতে হবে না। আজকাল বোকারাও দুইটা তিনটা গার্লফ্রেন্ড নিয়ে ঘুরে। আর একবার দুরত্ব রেখে হাটবা তো ঠেং ভেঙ্গে বসিয়ে রাখবো। কিন্তু আমি বললাম...

"তোমাকে পাঞ্জাবীটায় খুব মানিয়েছে।

ও একটু হাসলো। কে জানে কি মনে করেছে। ইশ এই ছেলেটার সাথে আমি রেগে কিছু বলতে পারি না। আমার রাগের কারনে বাবা তো আমায় রাগ কুমারী বলে ডাকে। আর ভার্সিটিতে আমার একেকজন বন্ধু আমাকে একেক নামে ডাকে।কেউ জল্লাদী, বাঘিনী, আবার কেউ ঘূর্নিঝড়, ভূমিকম্প বলে। কিন্তু এই ছেলের সাথে ঘূর্নিঝড় হয়ে সব কিছু উড়িয়ে দিব দুরে থাক আমি নিজেই শান্ত শিষ্ট একটা লক্ষি মেয়ে হয়ে যাই। আমার কাছে একটু অস্বস্হি লাগছে। আর এই অস্বস্হিটা কাটানোর জন্যই একটু ইতস্তত হয়ে বললাম...

"আমার হাটতে একটু অসুবিধা হচ্ছে। শাড়ি পরে হাটার অভ্যাস নেই তো তাই।

ও আমার দিকে কেমন করে যেন তাকালো। ওর তাকানো দেখে মনে হচ্ছে ও যেন বলছে তোমাকে দিয়ে কিছু হবে না। বিয়ের পর তোমার কপালে খুব খারাপ কিছু আছে। কিন্তু আমি যে মিথ্যে বলেছি এই ছেলে কি করে বুঝবে? এর একটু পরই ও আমার পাশে এসে হাতটা বাড়িঁয়ে বললো...

"সমস্যা নেই আমি আছি তো।

আমি একটু ওর দিকে তাকিয়ে চুলগুলা কানে গুজে আমার বাম হাতটা দিয়ে আলতো করে ওর হাতটা ধরলাম। কেমন যেন একটা অদ্ভুত ভালো লাগার অনুভূতি তৈরি হলো। ”সমস্যা নেই আমি আছি তো” এই কথাটার মাঝে কি যেন একটা ছিল। মনে হচ্ছে আমার দায় দায়িত্ব জাহেদ নিয়েছে যে কিনা আমার কিছুই হতে দিবে না। আমি ওর হাত ধরে হাটছি। একটু অস্বস্হি লাগলেও কেন যেন অন্যরকম একটা শান্তির ছায়া গায়ে বয়ে গেল। ঠিক যেন সদ্য চারা গাছটা একটু একটু করে বড় হয়ে আকাশ ছোয়ার স্বপ্ন দেখছে। তারপর ও একটা রিকশা নিল। আমার কাছে ওকে কেমন একটা অদ্ভুত অদ্ভুত লাগছে। বলা যেতে পারে। পাগলদের মাথায় ভুত চাপলে যা ইচ্ছা তাই করে আর এই পাগলের ইচ্ছে জেগেছে আজকে আমার সাথে হাটবে আর রিকশায় চড়ে ঘুরবে। আমি ওর কথায় হেসে বলেছিলাম আচ্ছা দেখা যাক। তেমন একটা আশা করি নি। কিন্তু ও যে এটা সিরিয়াসলি করবে আমি ভাবতেও পারি নি। ওর বাড়ি চট্টগ্রাম আর আমার বাড়ি কুমিল্লা। চট্টগ্রাম থেকে এখানে এসে এই অনুভূতিটা আমার মাঝে ছড়িয়ে দিবে এটার আশা করি নি। ওর সাথে আমার পরিচয় হয় একটু রকম ভাবে। সেদিন অনেক রাত ছিল। চট্টগ্রামে ফুফির বাসায় বেড়াতে গিয়েছিলাম। স্টেশন থেকে নেমে রিকশায় উঠতে যাবো ঠিক তখনি একটা ছিনতাই কারী আমার ব্যাগটা টান দিয়ে দৌড় দেয়। আমি কি করবো বুঝতে পারছিলাম না। আমি কয়েকটা জোরে জোরে চিত্‍কার দিলাম। কিন্তু কোন কাজ হয় নি। ততক্ষনে ছিনতাইকারী দৌড়ে অনেক দুর চলে যায়।সেদিন ফুফির বাসায় এসে রিকশাওয়ালাকে নিচে দাঁড় করিয়ে ফুপি থেকে টাকা নিয়ে তারপর রিকশাওয়ালাকে ভাড়া দি। ফুপি সুরা পড়ে আমাকে ফু দিতে লাগলো আর বলতে লাগলো...

"তোর উপর কু নজর পড়েছে। ভাগ্য ভাল ছুরি বা চাকু দিয়ে আঘাত করেনি।

তখন আমার অবস্সা রেগে ভস্মিত হয়ে ফুলে যাওয়ায় মত ছিল। মেজাজটা খুব খারাপ হয়ে গিয়েছিল। যদি ঐ বেটাকে আমি হাতের কাছে পেতাম হাত দুটো কেটে গলায় ঝুলিয়ে দিতাম।

তিন দিন থাকার পর আবার কুমিল্লায় চলে আসি। চলে আসার পাঁচ দিন পর আমাদের বাসায় সাজ সকালে একটা ছেলে হাজির হয়। আর সেই ছেলেটা জাহেদ। আম্মা আমায় ঘুম থেকে উঠিয়ে বললো...

"ঐ তোর ব্যাগ পাওয়া গেছে। উঠ

আমি চোখ একটু করে খুলে বললাম...

"কিসের ব্যাগ?
"ঐ যে তোর ফুপির বাড়িতে তোর ব্যাগ ছিনতাই হয়েছিল না ওটা। তোর ব্যাগ ছেলে একটা নিয়ে আসছে।
"তুমি আমার সাথে মশকরা করো? ছিনতাই হয়েছে চট্টগ্রামে আর কেউ একজন কুমিল্লায় পেয়ে নিয়ে এসেছে। যাও তো। ভাল্লাগে না। সকাল সকাল আইসা আজগুবি কথাবার্তা বলা শুরু করে দিছে।
"ওই উঠ। থাপড়াইয়া দাঁত ফেলে দিব। তোর সাথে কি আমি মিথ্যে বলতেছি?

আমি ওঠে চুল গুলা ঠিক করে বললাম...

"চলো তো দেখি কে এই মহান ব্যাক্তি।

রাগ রাগ ভাব নিয়ে ড্রয়িং রুমে গিয়ে দেখি সোপায় একটা ছেলে বসে আছে পাশে আমার ব্যাগটা। আমি বেশ অবাক হয়েছিলাম। আমি কাছে যেতেই ও দাঁড়িয়ে বললো...

"আপনি জেনিয়া?

আমি মাথা নেড়ে হ্যা সূচক ইশারা দিলাম। তারপর ও আমার নিকট ব্যাগটা বাড়িয়ে বললো...

"ধরুন এটা।

আমি আম্মার দিকে তাকিয়ে ব্যাগটা নিয়ে বললাম...

"আপনি এটা কোথায় পেয়েছেন?
"জ্বি আট দিন আগে রাতে রিকশা করে বাসায় যাচ্ছিলাম দেখলাম একটা লোক ব্যাগ থেকে কি যেন নিয়ে ব্যাগটা ফেলে দেয়। আমি রিকশাওয়ালাকে বলে রিকশা থামিয়ে ব্যাগটা নিলাম। পরে বাসায় এনে ভেবে চিন্তে বুঝলাম এটা নেশাগ্রস্থ লোকের কাজ। নেশা খাওয়ার জন্য এই কাজটা করেছে।ব্যাগে টাকা বা মোবাইল নিশ্চয় ছিল ও গুলা নিয়ে ফেলে দিয়েছে। যদি পেশাদার ছিনতাই কারি হতো সেটাও ফেলতো না, ব্যাগটাও অন্য কোথায় বিক্রি করে দিত।

এইটুকু বলেই থামে। আমি বললাম...

"তা আপনি আমাদের বাসা চিনলেন কিভাবে?
"ব্যাগে তেমন কিছু আর ছিল না। ভালো করে চেক করে দেখি ভোটার আইডি কার্ডের একটা ফটো কপি ছিল ঐটার সূত্র ধরেই। আজ শুক্রবার। আজ অফিস বন্ধ। না হয় আপনার ব্যাগ আরো আগে পেয়ে যেতেন। গতকাল রাতেই ট্রেনে করে রওনা দিয়েছি। আর এসেই সোজা ঠিকানা অনুযায়ী আপনাদের বাসায়।

আমি বেশ অবাক হয়েছি। তারপর একটা হাসি দিয়ে বললাম...

"আপনি এই সামান্য ব্যাগ দিতে চট্টগ্রাম থেকে কুমিল্লা এসেছেন? আপনি কি পাগল?

ও একটু চুপ করে থেকে মাথার চুল চুলকিয়ে বললো...

"জানি না আমি কেমন।
"জানতে হবে না। নিশ্চয় নাস্তা করেন নি এখনো। আম্মা এইভাবে তাকায় আছো ক্যান কিছু একটা ব্যবস্হা করো।

যদিও আম্মাকে আমি ব্যবস্হা করতে বলি তবে আমিই সব কিছু করলাম। সেদিন থেকেই ওর সাথে আমার পরিচয়। যাওয়ার সময় ওকে বলেছিলাম যদি কখনো আবার চট্টগ্রামে যাই আপনার সাথে দেখা করবো। ওর নাম্বারটা রেখে দিয়েছিলাম। ওর আসা আর যাওয়ার ভাড়াটা দিতে চেয়েছিলাম কিন্তু নেয় নি। আমার কাছে ওকে খুব অদ্ভুত একটা ছেলে মনে হয়েছিল এই রকম বোকার মত কাজটা কিভাবে করতে পারলো? কিচ্ছা কাহিনী ওখানেই বাদ দিতে পারতাম। ব্যাগ পেয়েছি কিচ্ছা কাহিনী শেষ কিন্তু কি মনে করে ঠিক এক সপ্তাহ পর আমি নিজেই ওকে ফোন দেই। আমার মাথায় এক সপ্তাহ ধরে শুধু জাহেদকে নিয়ে ঘোরপাক খেত এই যে এই শহরে আজো কি এই রকম সহজ টাইপের ছেলে আছে? কি পাগলের মত কাজটা করেছে শুধু মাত্র ব্যাগ দেওয়ার চট্টগ্রাম থেকে কুমিল্লা এসেছে। ওকে ফোন দিয়ে ওর সাথে কথা বলতে লাগলাম। তারপর কিভাবে যেন চারমাস কেটে যায়। কথা বলতে বলতে আমরা যে কত কাছাকাছি চলে এসেছিলাম বুঝতেই পারি নি। কিভাবে যেন কি থেকে কি হয়ে গেল। আর গতকাল রাতে আমাকে বলেছে আজকে আমার সাথে পাশাপাশি হয়ে হাটবে রিকশা চড়বে। আমি কথাটা তেমন গায়ে লাগাই নি। সকালে এসে ফোন দিয়ে বললো.. আমি তোমার বাসার নিচে দাঁড়িয়ে আছি। আমি বেশ অবাক হয়েছি। রাতেই নাকি ট্রেনে করে রওনা দিয়েছে। সব কিছু আগে থেকে ভেবে রেখেছিল।

"দেখেছো তোমাকে বলেছিলাম না তোমার সাথে আজকে সারাদিন রিকশায় চড়বো আর হাটবো।

ওর কথায় বাস্তবে ফিরলাম আমি। আমার এখনো বিশ্বাস হচ্ছে না এই পাগল ছেলেটা এই রকম পাগলামো করবে। রিকশায় চড়ছি। আকাশটা আজকে পরিষ্কার। বাতাস বইছে। ও একটু ইতস্তত করে বললো...

"আচ্ছা বলো তো কেন তোমার সাথে এই দিনে হাটতে আর রিকশায় চড়ার প্ল্যান করেছি?
"কেন করেছো?
"আজকে বছরের প্রথম দিন। বছরের প্রথম দিনে তুমি আমার পাশে থাকলে সারাজীবনই আমি তোমাকে পাশে পাবো।

আমি হাসতে লাগলাম। কি বলা উচিত্‍ কোন কথা খুঁজে পেলাম না। এই ছেলেটার পাগলামি গুলা আসলেই অদ্ভুত। রিকশা চলছে চলুক। চুপ করে থাকি। ওর সাথে সারাজীবন যেন পাশাপাশি থাকি এই কথাটায় পাগলটা কি ইঙ্গিত দিয়েছে? না ভাবতে হবে বাসায় গিয়ে ভাববো। আপাতত ওর সাথে রিকশায় চড়ি...

মন্তব্য ২ টি রেটিং +৩/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ১৪ ই এপ্রিল, ২০১৯ রাত ১০:৫৯

রাজীব নুর বলেছেন: মানূষের জীবনের সেরা সময় হলো প্রেমের সময়টা।

২| ১৫ ই এপ্রিল, ২০১৯ রাত ১২:৩৮

মাহমুদুর রহমান বলেছেন: ভালো থাকুন,সুখী হন।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.