নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

এই শহরে অনেক হাজার হাজার ছেলে আছে যারা চুপচাপ থাকে, কথা কম বলে। পৃথিবীতে তারা বোকা, লাজুক, হাঁদারাম নামে পরিচিত। আমাকে এর সাথে তুলনা করলে তেমন একটা ভুল হবে না। নিজের ব্যাপারে বলাটা অনেক কঠিন। তবে নিজেকে মাঝে মাঝে অনিকেত প্রান্তর ভাবি।

জাহিদুল হক শোভন

এই শহরের বোকা ছেলেটি।

জাহিদুল হক শোভন › বিস্তারিত পোস্টঃ

গল্প: বিদ্যাঙ্গ

১১ ই মার্চ, ২০২৩ সকাল ৯:৫৮

”শুনেন ন্যাকামো করাটাই হচ্ছে মেয়েদের জন্মগত অধিকার। ন্যাকামো করবেই মেয়েরা। তাইলে এটা নিয়ে কথা শুনতে হবে কেন? কেন বার বার বলবে এসব ন্যাকামো ছাড়ো। আপনিই বলেন তো ন্যাকামো মেয়েরা ছাড়তে পারে? এইটা মেয়েদের শিড়ায় শিড়ায় মিশে গেছে না? আরে মেয়েরা যদি ন্যাকামো না করে তাইলে তো মনে হয় এই মেয়ের প্রবলেম আছে। আমার কথা ঠিক না?

আমরা থাকতাম ব্রাহ্মণবাড়িয়ায়। খুব ছোট বেলায় বাবার চাকরির সুবাধে আমাদের ঢাকায় নিয়ে আসে। তারপর থেকেই এখানে বেড়ে উঠা। কিন্তু আমি যখন অনার্সে তৃতীয় বর্ষে ঠিক তখন আমাদের জীবনে একটা বড় ধাক্কা আসে। বাবা হার্ট অ্যাটাক করে মারা গেলেন। আমদের দুই ভাই বোনকে নিয়ে মা খুব ভেঙ্গে পড়েছিলো। আমি মায়ের মুখটার দিকে তাকাতে পারতাম না। মা আমাদের বুঝতে দিত না যন্ত্রনা গুলো। আমাদের এই দুই ভাই বোনদের জন্য আমার এই ভালো বাবা মা গুলো তাদের অনেক ইচ্ছা, আশা ত্যাগ করেছে সেটা আমি জানি। অনেক মাস ঠিক মত বাসা ভাড়া দিতে পারি নাই ।

একদিন আম্মা বললো “আমরা গ্রামে গেলে ভালো হয় না? তুই কি বলিস? এইভাবে আর কতদিন?” আমিও তেমন কিছু বলতে পারি নাই। মায়ের হাতের বালা দুইটা বিক্রি করে সবার টাকা পরিশোধ করে গ্রামে চলে গিয়েছিলো। শুধু আমি থেকে গিয়েছিলাম। টিউশনি করা শুরু করেছিলাম। মাঝে মাঝে একটা কাপড়ের দোকানে পার্ট টাইম অনলাইন ভিত্তিক কাজ করতাম। জীবনে যখন দায়িত্বটা চলে আসে তখন নিজে থেকেই সব কিছু করে নিতে হয়। আমি এখন খুব ভালো করেই বুঝি সবার জীবনে একজন বাবার মর্মটা কতখানি। আমার অনার্স শেষ করে এখানে একটা জব নেই। তারপর নিজেই অনলাইনে ব্যবসা শুরু করলাম কাপড়ের। নিজেই একটা বাসা ভাড়া নেই। প্রথমে আমাকে বাসা ভাড়া দিতে চায়নি। এতো বড় একটা বাসা। বাসাতে আমি একলাই ছিলাম প্রথম কয়েকে মাস। পরে আবার আম্মা আর বোনকে নিয়ে আসি। একটা রুমে আমার ব্যবসার কাপড় গুলা থাকে। এইরকম করতে করতে আমি একটা দোকানও নেই। দোকান আমি নিতে চাইছিলাম না। হাফিজ আংকেলের উৎসাহে নিয়েছিলাম।

আর এই হাফিজ আংকেলই আমার বাড়িওয়ালা। আর উনার মেয়ে ওয়াজিয়া। আমি গেইট দিয়ে ঢুকার সাথে সাথেই আমাকে এসব ন্যাকামো নিয়ে কথা বলা শুরু করেছে। কিন্তু কেন বললো তার কারণও আমি জানি না। আমি বললাম “তোমার মাথা আবার কে খারাপ করলো? আন্টি নিশ্চয় কিছু বলেছে?” সে বললো “ইমোশনাল অত্যাচার একদম সহ্য হয় না বুঝলেন। মেয়েরা ছেলেদেরকে ইমোশনাল করে আঘাত করবে। কিন্তু একজন মেয়ে হয়ে কেন আরেকজন মেয়েকে ইমোশনাল করে আঘাত করবে? নিজেদের অস্ত্রে কি নিজেরা আঘাত পেতে ভালো লাগে?” আমি মাথা চুলকানো শুরু করলাম। আমার কি বলা উচিৎ আমি কিছুই বুঝতে পারছি না। তবে এটা সত্য মেয়েদের মনে প্রচুর খুচরো ব্যাথা থাকে। কোন মেয়ে যদি তাদের নিজেদের প্রবেলেমের কথা শেয়ার করতে আসে সেটা চুপচাপ শোনা উচিৎ। শুনে এর রিয়েক্ট করা যাবে না। করলেই তাদের মনে আউরাতে থাকবে, তুমি একটা ফাউল মিয়া। আমি সুন্দর ভাবেই বললাম “দেখো তোমারে কে কি বললো সেটা আমি জানি না। তবে আমি তো এই বাসায় দেড় বছর হলো আসছি। এই দেড় বছরে আমি তোমাকে যতটুকু বুঝেছি তুমি বন্ধুসুলভ এবং সহৃদয় মানুষ। তোমার মনটা সরল। তুমি ঠিকই বলছো মেয়েরাই তো একটু ন্যাকামি করবে। ন্যাকামি করলেই ওদের চোখে মুখে চেহাড়ায় সমৃদ্ধিতা বা শোভাবর্ধকতা ভেসে উঠে। তুমি্ এসবে কান দিও না। ঠিকাছে?” সে আমার কথা শুনে কিছুক্ষন তাকিয়ে থেকে বললো “আপনি কি আমায় খুশি করার জন্য একটু বাড়িয়ে বলছেন? বাড়িয়ে বলেন আর যাই বলেন আপনি ছাড়া আমার কথা আর কেউ বুঝতে চায় না। এই জন্যই আপনাকে এতো কিছু বলি। ” আমি মনে মনে একটু স্বস্থি নিলাম। এটা সত্য কথা কোন মেয়েকে নিয়ে আপনি ইচ্ছা করে হোক আর সত্যই হোক তার গুন একটু গাইলেই সে ভিতরে একটু প্রফুল্লতা ফিল পায়। আমি বললাম “তাহলে আমি কি এখন উপরে যেতে পারি?” সে আমাকে সুন্দরভাবেই হাত দিয়ে ইশারা করে বললো “জ্বি জনাব জ্বি জনাব” আমি আর কিছু না বলে একটু হাসতে হাসতে চলে আসি।

ওয়াজিয়ার সাথে আমার আগে কোন কথাই হতো না। আমার ছাদে যাওয়া নিশেধ ছিলো। প্রথম কয়েক মাস ও আমাকে দেখলে অন্য দিকে আর আমিও চুপচাপ মাথা নিচু করে চলে যেতাম। ছোট বোন আর মাকে যখন এই বাসায় নিয়ে আসি তারপর থেকেই মাঝে মাঝে ওকে আমাদের বাসায় দেখতাম। মূলত আমার বোনের সাথে আর আম্মার সাথে দেখা করতে আসতো। ও কোথায় গেলে আমার বোনকে নিয়ে যেত। ওদের সম্পর্কের কারণেই মাঝে মাঝে আমার সাথেও কথা বলতো। হুট করে একদিন কথা নেই বার্তা নেই বাসায় এসে আমার মা আর বোনকে বলতেছে “সব ছাইড়া চলে আসছি। আন্টি আমাকে আপনার মেয়ে মনে করে আশ্রয় দিতে পারবেন না? যাব না আর বাসায়। কথায় কথায় খোঁচা দেয়। দুনিয়ায় মেয়েদের একমাত্র প্রধান শত্রু হচ্ছে মা। কিছু হলেই বলবে “স্বামীর বাড়ি গিয়ে কি করবা, এখনি এই অবস্থা। কোন কাজের না।” আমি আমার রুম থেকে সব শুনছিলাম। ভাবলাম কি না কি হলো। পরে যখন বিষয়টা বুঝতে পারছি ভাতের প্লেট হাত থেকে পরে ভেঙ্গে ফেলাতে ওর মা ওকে “কোন কাজের না” এই কথাটা বলেছে। আর ও এটা নিয়ে রাগ করছে।

আমি রুম থেকে মনে মনে হাসছিলাম। আর ভাবছিলাম মেয়েরা আসলে আহত হয় বা একটু বেশি রাগ করে যখন শুনে সে কোন কাজের না। এই ব্যাপারটা নিয়ে তাদের মাথায় দু একদিন ঘুরপাক খেতে থাকে। এই ব্যাপারটা নিয়ে রাগারাগি করে। ভালো কথা শুনলেও তাদের কাছে তখন বিষাদ লাগে। তখন যে কোন কিছু সেটা ছোট বিষয় হোক সেটা নিয়ে হৈচৈ করে বা তান্ডপনা করে। একজন মেয়ে মুহুর্তেই বিশাল তান্ডব সৃষ্টি করার ক্ষমতা রাখে। আরেকটা ব্যাপার হলো মেয়েরা তাদের রুপ নিয়ে মিনিমাম প্রতিদিন দশ বার ভাববে। এটাও তাদের একটা অভ্যাস। যাক সেসব কথা ও প্রায় এমন করে। মাঝে মাঝে আমি অবাক হই অনার্স দ্বিতীয় বর্ষে পড়া মেয়েটা হঠাৎ করেই এমন আচরণ করে। তবে যথেষ্ট বুদ্ধিমতি। মাঝে মাঝে আমার মনে হয় বাবা মায়ের একমাত্র মেয়ে, আদরে বড় হয়েছে তাই একটু এমন করে। আবার মাঝে মাঝে মনে হয়, ওর তো কোন ভাই বোন নেই তাই বাসায় যতক্ষন থাকে তখন ভাই বোনের অনুভূতিটা বা কারো সাথে একটু মজা করা, ঝগড়া করা এসব করতে পারে না। তাই আশেপাশে যারা থাকে তাদের আপন মনে হয়, বন্ধু মনে হয়। তাদেরকে একটা পরিবারের সদস্য মনে হয়। তাই যা ইচ্ছা বলে ফেলতে পারে। তবে এটা খেয়াল করেছি ও একটু গম্ভীর এবং রাগী। মাঝে মাঝে এই রাগ আমাদের ভিতরের অনুভূতিটাকে নাড়া দেয় বা ব্যাক্ত করে। তখন এই রাগই এই সেই করতে মনে টোকা দিতে থাকে। আবার এই রাগের কারণেই অনেকে অনেক নতুন কিছু করার প্রেরণা জোগায়। যেমন, সে এই কাজটা এতো ভালোভাবে করতে পারলে আমি কেন করতে পারবো না। তবে অনিয়ন্ত্রিত রাগ মানুষের জন্য ক্ষতি। এটা সম্পর্ক নষ্ট করে। যেটা ওর মাঝে আমি দেখিনি। কোন কিছু করলে পরে আবার অনুতপ্ত হয়। ঐদিন যখন বললো দুনিয়ায় একমাত্র মাই শত্রু মেয়েদের জন্য। তার একদিন পরই তার ফেসুবক আইডিতে মায়ের জন্মদিনে একটা পোস্ট করে লিখেছে “তোমাকে কত কথা বলি, রাগ করি, আমি তো জানি আমার ভালোর জন্যই তুমি আমাকে বকো। তুমি না থাকলে তো এই পৃথিবীর আলোটা দেখতে পেতাম না। তবে জেনে রাখো তুমি যতই বকো, তোমার সাথে যতই খোচাখোচা করি বা রাগারাগি করি তোমাকে ভালোবাসি মা। তুমিই আমার দেখা শ্রেষ্ট মানুষ যে আমার সব কিছু সহ্য করো। এই ভাবে সারাজীবন সহ্য করিও।”

আমার ইদানিং খুব চাপ যাচ্ছিলো। অফিস এবং নিজের ব্যবসা একসঙ্গে চালানো সম্ভব হচ্ছিলো না। এখন বাসায় আর কোন পোশাক রাখি না ব্যবসার। দোকানের জন্য লোক নিলেও আমাকে দেখতে হয়। তাই ভাবছিলাম নিজের ব্যবসাতে মনোযোগ দিয়ে ব্যবসাটা আরো আগাবো। আমি তাই করেছি। এখন নিজের ব্যবসাটাই ঠিক মত দেখছি। এসব ভাবতেই ভাবতেই ফয়সাল আমার দোকানে আসে। আমি ওকে দেখে বেশ ঘাবড়ে গিয়েছিলাম। কতদিন পর ওর সাথে আমার দেখা। ও খুব সাধারণ একটা ছেলে। পড়ালেখায় ভালো এবং ভালো ছবি আঁকতো। এই ভালোর মাঝেই ও নেশার সাথে কিভাব জড়িয়ে গিয়েছিলো কেউ বুঝতে পারিনি। ও গ্রামের ছেলে। সহজ সরল। একদিন এসবের কারণে ওকে আমি দুইটা চড় মেরেছিলাম। চড় খেয়েও কিছু বলেনি। শুধু বলেছিলো “তুই আমারে মারতে পারলি? সবাই ঘৃনা করতে শুরু করেছে। তুইও শোভন?” চলে গিয়েছিলো আমার সামনে থেকে। কিন্তু এরপরদিনই আমার সাথে দেখা হলে বললো “এবার কিছুই পড়ি নাই। আমারে একটু হেল্প করিস।” আমি খুব অবাক হয়েছিলাম। মনে হয়েছিলো ওর সাথে আমার কিছু হয়নি। আমি বলেছিলাম “স্যরিরে। আমাকে মাফ করে দে। দেখ তুই আমাদের বন্ধু। তুই ভুল পথে যাস আমরা কেউ চাই না। ভুল করে ফেলছিস। তাই বলে ভুল থেকে সঠিক পথে আসা যাবে না এটা তো হতে পারে না। তোকে আমরা আবার আগের মতোই দেখতে চাই।”

ওর একটা রিলেশন ছিলো। আমাদের জুনিয়র ব্যাচ এর নাদিরা নামের একজন। ওর এই অবস্থা দেখে ওরে সাথে সম্পর্ক শেষ করেছিলো। আমরা বন্ধুরা মিলে নাদিরার কাছে গিয়েছিলাম। বুঝিয়ে ছিলাম। এখন তুমিও ওর সাথে এমন কিছু একটা করলে ও আরো নষ্ট হয়ে যাবে। “ নাদিরা আমাদের বলেছিলো “ ভালো মন্দ সবার বুঝার ক্ষমতা আছে। সে খারাপে গেছে সেটা তার ব্যাপার আমি তো জোর করতে পারি না। তার বিবেক নেই? বুদ্ধি নেই? এমন করলে কি হতে পারে? তাহলে কেন এমন করলো। ওর সাথে থেকে তো আমি আমার জীবনটা নষ্ট করতে পারি না। আমারও পরিবার আছে। তাদের কাছে তার ব্যাপারে কি বলবো? আমার পরিবার তার এসব জেনে এই সম্পর্ক মেনে নিবে?” আমার বন্ধুরা সবাই আর কোন কথার বলার সাহস পাচ্ছিলো না। আমিও পাচ্ছিলাম না। কিন্তু আমি বললাম “দেখো ভালো মন্দ সবাই বুঝে। সবারি বিবেক আছে। সবার বিবেক আছে এবং বিবেক থাকার পরও মানুষ খারাপ কাজ করে, ঘুষ খায়, অনেক মেয়েদের জোর করে ধর্ষণ করে। পরকীয়া করে। চুরি করে, ছিনতাই করে। মদ খায়, হিরোইন খায়। ধরো একজন শিক্ষকের কাজ কি? শিক্ষা দেওয়া, ভালো মানুষ হিসেবে গড়ে তোলা। তখন একজন শিক্ষকের সামনে কোন ছাত্র যদি খারাপের পথে চলা শুরু করে তখন সেই শিক্ষক তাকে বুঝিয়ে ভালো পথে আনতেও পারে। তখন সে শিক্ষক তো বলবে না খারাপের পথে যাচ্ছে সেটা তার ব্যাপার। ভলো মন্দ বুঝা এবং তার বিবেক আছে সে খারাপের দিকে গেলে সেটা তার ব্যাপার। বা ধরো একজন বাবার সামনে তার ছেলে মেয়ে খারাপ কাজ করলো তখন তার বাবা কি তার ছেলেকে বুঝাবে না এটা খারাপ কাজ। এটা করিও না। নাকি বলবে, জন্ম দিয়েছি , এখন বুঝ হয়েছে এখন তুমি খারাপ করলে সেটা তোমার ব্যাপার? তোমাকে আমি এই জন্যই কথাটা বলছি. আমরা ফয়সালকে বুঝানোর চেয়েও তোমার কথা সে বেশি শুনবে। এই ভাবে সব শেষ করিও না। ও আরো ভেঙ্গে পড়বে।

নাদিরা আমাদের কথা শুনেনি। ও সব শেষ করেছিলো। ফয়সাল আরো খারাপের দিকে চলে গিয়েছিলো। তবে এর তিনমাস পরেই নাদিরা হঠাৎ করে একটা সিদ্ধান্ত নিলো সেই ফয়সালকেই বিয়ে করলো। অনেক ঝামেলা হয়েছিলো। আমরা সবাই অবাক হয়েছিলাম নাদিরার এমন কাজ দেখে। ওর পরিবারকে মানাতে কষ্ট হয়েছিলো। সেই ফয়সালকেই নাদীরা ঠিক করে ছিলো। যেদিন বিয়ে করলো সেদিন ও কাঁদতে কাঁদতে বলেছিলো “ভাইয়া, আমি ওরে ভালোবাসছি, মুখে সব শেষ করলেও অন্তর থেকে ওকে আমি বাদ দিতে পারছিনা। এতে আমার কষ্ট হচ্ছে আরো বেশি। তাই সিদ্ধান্ত নিলাম যা করার আমাকে করতে হবে। কিন্তু আমি তো একা পারবো না। আপনাদেরকেও হেল্প করতে হবে। আমি ওকে আবার আগের মত ফিরে পেতে চাই।

যাক সেব কথা। আমি ফয়সালকে দেখে জড়িয়ে নিলাম। জিজ্ঞেস করলাম, সব কিছু কেমন চলছে। ও বললো “আলহামদুলিল্লাহ ভালো। আমাদের একটা ছেলে আছেরে। চাকরি করছি, নাদিরাও চাকরি করছে। ভালোই চলছে। তোর কি অবস্থা? আংকেল মারা যাবার পর তুই অনেক কষ্ট করছিস। তোর বিপদে আগাতে পারি নাই তেমন। “ আমি বললাম “যে আগানোর সে তো আগাইছে। উপরে একজন আছে না সে তো সব সময় আমাদের সবার সাথে আছে। তোকে দেখে আমার সত্যি ভালো লাগছে। তোরা সত্যি সুখে আছিস তো?” ফয়সাল হাসে। তারপর বললো “সত্যিরে ভালোই আছি। যে ভালোবাসায় নাদিরা আমায় আবদ্ধ করছে এই ভালোবাসা পাওয়ার আমি যোগ্য না। তবে আমি ভাগ্যবান তোদের মত বন্ধু আর এমন একজন জীবন সঙ্গি পেয়ে।” আমি ভাবি পৃথিবীটাই এমন, কেউ না কেউ কারো জন্য আল্লাহ কাউকে উছিলা করে পাঠায় জীবনে। এরুপ ভালোবাসার জীবনে নাদীরার মত মেয়ের সাপোর্ট থাকতে হয়, সাহস থাকতে হয়। আমাদের সমাজে নাদীরার মত অনেক মেয়ের এমন সাপোর্টে একটা জীবনে গড়ে উঠে, একটা গাছের জন্ম হয়, একটা রং তৈরি হয়। যা সব নাদীরারা পারে না।

মাঝে মাঝে আমার বিষন্ন লাগে। চোখ গুলো ঝাপসা হয়ে আসে। তখন একটু একা থাকি। গান শুনি। বা কোথায় চলে যাই। কিন্তু একটু আগে ওয়াজিয়া আমাকে ফোন দিয়ে বললো “একটু ছাদে আসবেন?” আমি তেমন কিছু না বলে বললাম “আচ্ছা।” আমি গিয়ে দেখলাম ও শাড়ি পরে দাঁড়িয়ে আছে। সুন্দর লাগছিলো। কিন্তু মুখ গম্ভীর। বললাম “এমন সাজার মাঝে তো মুখের কোন মিল পাচ্ছি না। তা কেন ডাকলে?” ও আমার কথার ঠিকঠাক উত্তর না দিয়ে বললো “জানেন আমাদের চারপাশটা হঠাৎ করে বদলে যায়। আসলে চারপাশটা বদলায় না। আমরা মানুষেরা বদলে যাই। মানুষেরাই কাউকে নিয়ে ভাবতে শুরু করি। এই ভাবনার মাঝে হাজার হাজার শব্দ লুকিয়ে থাকে। তখন মনের ভিতরটা একটা অস্তিত্ব তৈরি হয়। সেটাকে আমরা মনের ভিতরই লালন পালন করি। আস্তে আস্তে সেই অস্তিত্বটার উপর আমাদের মায়া বাড়ে তখন সেই মায়াভরা অস্তিত্বটা যখন কোন কিছু একটা করে ফেলে তার জন্য দুঃখ হয়। দুঃখটা আমাদের সবার মাঝেই আছে। সব দুঃখ খুব বেশি হৃদয়কে আঘাত করতে পারে না। সেগুলো একসময় মুছে যায়। কিন্তু প্রিয় কোন কিছু নিয়ে যখন প্রত্যাশা রাখি সেটা যদি এর বিপরীত হয় তখন আঘাতটা বেশি লাগে। আমরা মানুষেরা সবা আঘাত সহ্য করতে পারলেও মনের আঘাতটা সহ্য করতে পারি না। এটা অনেক ভয়ংকর একটা ব্যাপার। এই ভয়ংকর থেকে কেউ কেউ বাঁচতে চায়। কিন্তু আমরা চাইলেও তো পারি না। সেই ভয়ংকর গুলো আরো কঠিন হয়ে মনের ভিতরেই বাসা বাধে। তাই আমাদের প্রথমেই এতো ভাবনা না করা উচিৎ। ভাবনা করলেই তো একটা অস্তিত্ব জন্ম হয়। জন্ম হয় একটা সাত রঙ্গা রঙধনু। তাই ভাবনা করাই উচিৎ না। ঠিক না?” আমি শুধু ওর দিকে তাকিয়ে থাকলাম। এতো কঠিন করে এই প্রথম ওর কাছ থেকে আমি কিছু শুনলাম। মাঝে মাঝে মেয়েদের সব কথার মাঝে কিছু একটা লুকিয়ে থাকে। এই যেমন আই হেইট ইউ, এর মানে এই না যে সে তাকে ঘৃনা করে। কিন্তু ভাবতেছি এই কথাগুলোর মানে কি? আমার এখন কি বলা উচিৎ? আমার চুপ থাকা দেখে সে বললো “অনেক কঠিন করে বলে ফেললাম তাই না? এই দেখুন না আমি নিজেই বললাম ভাবনা করা এতো ঠিক না কিন্তু আপনাকে এমন করে বলে আপনাকেই ভাবনায় ফেলে দিলাম। বাদ দিন। বলুন আমাকে কেমন লাগছে। “ ওয়াজিয়া থেকে এমন টাইপের কথা শুনে তাকে যে বেশি সুন্দর লাগছে সে কথাটাও আমি বলতে পারছি না। আমি বললাম “ আমরা মানুষরা ভাবুক টাইপের। আমাদের সামনে যখন কিছু ঘটে বা কোন কিছু করে ফেলি তখন সেটা নিয়ে অটোমেটিক্যালি মস্থিস্কে একটা প্রগাঢ়তা তৈরি হয়। সেটা বার বার তোমাকে সিগন্যাল দিতে থাকবে। কেন এমন ঘটলো? কি করনীয় ছিলো? কি করাই বা যেত। হ্যাঁ তোমাকে অনেক বেশি সুন্দর লাগছে। তোমাকে প্রথম শাড়ি পড়ায় দেখেছি। সত্যি সুন্দর লাগছে। কিন্তু আমার বিশ্বাস হচ্ছে না তোমার কাছ থেকে এমন কঠিণ করে কিছু শুনবো। তুমি কি আসলেই ওয়াজিয়া?” সে আমার কথা শুনে নিচে তাকায়। কিছুক্ষণ ঝিম মেরে থেকে বললো “আমাকেই এখন বেশি সুন্দর লাগছে তাই না? তাহলে ফেসবুকে অন্য মেয়েদের শাড়ি পরা ছবিতে কেন সুন্দর লিখেন? কেন লিখতে হবে?

আমি বেশ অবাক হলাম। এই কথার মানে কি? আমি একটু চুপ করে ভাবলাম। এই জন্যই ও আমার কমেন্টে রাগের রিয়েক্ট দিয়েছে। ব্যাপারটা হলো কিছু কাপড়ের জন্য আমি অন্য পাইকারি ব্যবসায়ীদের পেইজের ছবিতে সুন্দর লিখেছিলাম। আমি মনে মনে হাসলাম। মেয়েদের সামনে এমন কিছু নিয়ে হাসা ঠিক না। হাসলে ওরা নিজেদেরকে তখন অনেক ছোট মনে করে। আমি বললাম “এই জন্যই তুমি এমন কঠিন করে কথা বলেছো। কিন্তু এই ব্যাপারটার সাথে তোমার এমন কঠিন কথার ভাবার্থ কি?” সে একটু ভ্রু কুচকে বললো “সব কথাই তো বুঝেন। এটাও নিজে থেকে বুঝে নেন। সব কিছু বলতে হবে কেন? আর অন্যদের প্রতি সুশোভনতা দেখাবেন না।” এটা বলেই ও চলে যায়। ” আর আমি ওর কথা গুলো ভাবতে লাগলাম “চারপাশটা হঠাৎ করে বদলে যায়। আসলে চারপাশটা বদলায় না। আমরা মানুষেরা বদলে যাই। মানুষেরাই কাউকে নিয়ে ভাবতে শুরু করি। এই ভাবনার মাঝে হাজার হাজার শব্দ লুকিয়ে থাকে। তখন মনের ভিতরটা একটা অস্তিত্ব তৈরি হয়। সেটাকে আমরা মনের ভিতরই লালন পালন করি।”

আমাদের জীবনটাই এমন। ভাবনা গুলোই এমন। এসব কিছুর মাঝে আমাদের জীবনটা হাজার বার নানা কারনে নানান বিষয়ে ভাবায়। আর এই জীবনে যখন উপলব্দি করা যায় তার সাথে একটা জীবন বিদ্যাঙ্গের মত শেষ নিশ্বাস পর্যন্ত থাকা যায় তখন আর এসবের ভাবার কি দরকার…

মন্তব্য ১ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (১) মন্তব্য লিখুন

১| ১৩ ই মার্চ, ২০২৩ রাত ১:৫৩

রাজীব নুর বলেছেন: বাস্তব গল্প।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.