নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ইকনোমিকস আমার প্রফেশন আর সাহিত্য আমার প্যাশন।

জহিরুল ইসলাম কক্স

:)

জহিরুল ইসলাম কক্স › বিস্তারিত পোস্টঃ

ছোট গল্প:বৈষম্য।।। লেখক:আসিফ শুভ্র

১৩ ই জুলাই, ২০১৫ সকাল ১১:০২


২০১৩ সাল , জুলাই মাস
রাত বারোটা ,
( আমি একটা প্রাইভেট মেডিকেল কলেজের
আইসিইউ র ইনচার্জ হিসাবে কর্মরত )
" দেখেছেন ডক্টর ! জানোয়ারটার জন্যই
আমার বোনের আজকে এই অবস্থা ! পঞ্চাশটা
ঘুমের ওষুধ খেয়েছে আমার বোনটা !
তাড়াতাড়ি ওকে আইসিইউ তে ভর্তি
করান , যতো টাকাই লাগুক , আপনি ভর্তি
করান আগে , বাকীটা আমি দেখছি ।এই
শুয়োরের বাচ্চার চৌদ্দ গুষ্টিকে যদি
জেলের ভাত না খাওয়াতে পারি তবে আমার
নাম ফারিবা ( ছদ্মনাম ) না ! "
আমি সাধারণত ওভার স্মার্ট মেয়েদের
এভোয়েড করি
এই ফারিবা মেয়েটা তার বোনকে নিয়ে
হাসপাতালে এসেছে , তার কথাবার্তা
এটিচিউড জঘন্য ।
গলার মধ্যে আবার আইডি কার্ড ও
ঝুলাচ্ছে - ........ মানবাধিকার কর্মী ।
সেডিল ( ঘুমের ওষুধ ) এর পাতা এনেছে
অনেকগুলা । একটাতেও কোন ওষুধ নেই , এর
অর্থ দাঁড়াচ্ছে -
সবগুলা ওষুধই তার বোন খেয়েছে স্বামীর
অত্যাচারে অতিষ্ট হয়ে ।
রোগীর নাম আদিবা । ঝিমাচ্ছে ।
আমি ইমারজেন্সিতে প্রায় বিশ মিনিট
রোগীকে ক্লিনিক্যালি পরীক্ষা করে
এই সিদ্ধান্তে উপনীত হলাম , রোগী
বড়জোড় পাঁচটা সেডিল খেয়েছে । কারণ
রোগী বিড়বিড়িয়ে সব প্রশ্নেরই উত্তর
দিচ্ছে । আর যদি পঞ্চাশটা সেডিল খাবার
পরও এভাবে বিড়বিড়িয়ে কথা বলতে পারে -
তাহলে অবশ্যই মেয়েটা সিডাটিভ ড্রাগ
এডিক্ট ।
আফতাব ( ছদ্মনাম ) খুবই চিন্তিত । আফতাব
আদিবার স্বামী । বেচারা তার স্ত্রীর
এহেন কার্যকলাপে বিব্রত । রোগীর পক্ষ,
বিশেষ করে তার শ্যালিকা মানবাধিকার
কর্মী ফারিবার অকথ্য গালাগালিতে
আফতাব প্রায় কেঁদেই দিচ্ছে ।
ফারিবার সাথে আবার বডি বিল্ডার টাইপের
কয়েকটা ছেলে এসেছে । সংখ্যায় সাতজন ।
গুন্ডা প্রকৃতির । রোগীর লোকের
চাপাচাপিতে এবং ঐ বেয়াদপ মানবাধিকার
কর্মী ফারিবার চিৎকার চেঁচামেচিতে
একরকম বাধ্য হয়েই রোগীটাকে আইসিইউ তে
রাখতে হলো ।
আমি বল্লাম -
" আপনারা সবাই বাইরে থাকেন , আমি রোগীর
হাসবেন্ডের সাথে একটু কথা বলবো । "
" এই জানোয়ারের সাথে কি কথা বলবেন ? যা
বলার আমাকে বলুন ! "
ফারিবা মেয়েটা শুধু বেয়াদপই না
অতিরিক্ত মাত্রার ফাজিল । সে বিভিন্ন
জায়গায় ফোন দিচ্ছে । সাংবাদিক , থানা
কোন জায়গাই বাদ রাখছে না ।
অনেক চিৎকার চেঁচামেচি করে অবশেষে
আফতাব এর সাথে একটু কথা বলার সুযোগ
পেলাম ।
ছেলেটা ভদ্র । ( পাঠক আবার ভাববেন না যে
আমি পক্ষপাতিত্ব করছি ! আমি , আমার কলম যা
সত্যি তা বলতে কুন্ঠাবোধ করেনা )
আফতাব ফুঁপিয়ে কাঁদছে । আমি আর আফতাব
একা রুমে । বাইরে ফারিবা আর বডি বিল্ডার
রা দাঁড়িয়ে আছে । একজন এস আই আর দুইজন
সাংবাদিক ও এসেছেন । এস আই সাহেব বারবার
উঁকি মারছে দরজা খুলে । মেয়েপক্ষ
মামলা করবে আফতাবের বিরুদ্ধে। নারী
নির্যাতনের মামলা ।
ছেলেটা কাঁদতে কাঁদতে আমার হাত চেপে
বললো -
" বিশ্বাস করুণ ভাই ! অনেক বুঝিয়েছি।
আমার স্ত্রী আদিবাকে ফেরাতে পারিনি
। আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রাজুয়েট
। বায়িং হাউজে চাকরী করি । বেতন যা পাই
তাতে আমাদের দুজনের খুব ভালো চলে
যাবার কথা । কিন্তু হয়না । আজ রাত আটটায়
অফিস থেকে ফিরে বরাবরের মতো দেখি
আদিবা তার বোন আর বোনের ছেলে
বন্ধুদের সাথে আড্ডা মারছে । পুরা ঘরে
মৌ মৌ গন্ধ । আমি ভাই জীবনে ইয়াবা
খাইনি কিন্তু আদিবার ব্যাগে একদিন লাল
লাল কিছু ট্যাবলেট পেয়েছিলাম।
জিজ্ঞেস করতেই বলেছিলো - মাথা
ব্যাথার ওষুধ । এভাবে বেশ কিছুদিন পাবার
পর একদিন সন্দেহ লাগলো । এক বন্ধুকে
দেখানোর পর বললো - এগুলো ইয়াবা । অনেক
বুঝিয়েছি ওকে । আমি ওকে বিয়ে করেছি
বছর দুয়েক আগে ।এই দুইটা বছর আমাকে ওরা
প্রায় শেষ করে দিয়েছে । প্রতি মাসে ষাট
হাজার টাকা বেতন পাই। তাও চলেনা
আমাদের !
বাসায় খুব অশান্তি হয় । আদিবার ব্যাগে গত
তিনদিন আগে কনডমও পেয়েছি ।
আজ আর নিজেকে ঠিক রাখতে পারিনি ।
বলেছি - তোমাকে ডিভোর্স দেবো ।
এভাবে সম্ভব না । একথা বলা মাত্রই ওর বোন
আর ফ্রেন্ডরা মিলে প্রথমে হাতাহাতি
করলো আমার সাথে , সাথে চিৎকার ,
চেঁচামেচি । আমি মানসম্মানের ভয়ে বাসা
থেকে বেরিয়ে গেলাম ।মিনিট বিশেক পরে
ওর বোন ফারিবা ফোন দিয়ে বললো -
" তুই আমার বোনকে মেরেছিস । তোর
অত্যাচার সহ্য করতে না পেরে ও ঘুমের
ওষুধ খেয়েছে পঞ্চাশটা । আমার বোনকে
রুমে আটকে রেখে তুই মারধর করিস
প্রতিদিন । আজকে আমি বোনের ফোন
পেয়ে তাড়াতাড়ি না আসলে তো ওকে
মেরেই ফেলতি। অথচ আজ ওরা কিন্তু সবাই
একসাথেই ছিলো। আর ডক্টর ! আল্লাহর কসম
.......
আমি আদিবাকে মারিনি । ওর বোন অনেক
জায়গায় ফোন দিচ্ছে । নারী নির্যাতনের
মামলা করবে বলছে । আপনি এমন কোন
সার্টিফিকেট দেবেন না যাতে আমার
প্রতি অবিচার হয় । প্লিজ .....! "
-------
এস আই আমার সামনে বসে আছে। সাংবাদিক ও
এসেছে দুইজন । বাহ !
চমৎকার । একটা নিরপরাধ ছেলেকে ফাঁসানোর
জন্য ষোলকলা পূর্ণ হতে চলেছে ।
আমি এসআইকে বললাম -
" মামলা হয়েছে কোনো ? "
ফারিবা মেয়েটা আবারও বললো -" হবেনা
মানে ! মামলা অবশ্যই হবে। এজন্যই তো
ওনাকে ( এস আই সাহেব কে ) এনেছি। "
সাংবাদিকদের একজন আবার টেপ রেকর্ডার ও
অন করে দিলো । বাহ ! দারুণ তো !
আমি হেসে বল্লাম - " এটা তো হাসপাতাল ,
তাই না ? থানা নাকি ? এখানে মামলা কেন
হবে বা মামলা সংক্রান্ত আলোচনাই বা
কেন হবে ? আর আমি চিকিৎসক । রোগীর সেবা
করতে দিন আগে । আর যা করার থানায় গিয়ে
করুন । আর এস আই সাহেব -
আদালতের অনুমতি ব্যতীত আমি আপনার
সাথে বা সাংবিদিকদের সাথে কথা বলতে
বাধ্য নই । আদালতের অনুমতি আনুন , কথা
তারপর বলবো ।
আগে রোগীকে সুস্থ্য করি । আগামীকাল
আপনাদের কে রোগীর উন্নতি বা অবনতি
জানাবো । "
এস আই গজগজ করতে করতে আফতাবকে হাতকড়া
পড়িয়ে নিয়ে গেলো। যাবার সময় ছেলেটা
পিছন ফিরে করুণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে
ছিলো।
( আমি আসিফ শুভ্র জন্ম থেকেই একটু
ত্যাড়া প্রকৃতির ) জিনিসটাকে আমিও বেশ
সিরিয়াসলি ই নিলাম ।
রাতেই রোগীর প্রশ্রাব পরীক্ষা করতে
পাঠালাম -
তিনটা স্বনামধন্য চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানে ।
urine for opoites ( মরফিন বা প্যাথেডিন
সনাক্তকারী পরীক্ষা )
urine for cannabinoides ( গাঁজা সনাক্তকারী
পরীক্ষা )
urine for amphitamine ( শরীরে ইয়াবার
উপস্থিতি সনাক্তকারী পরীক্ষা )
পরদিন বিকালে তিন জায়গার রিপোর্টই
প্রমান করলো - আদিবা নামক মেয়েটি
ইয়াবায় উচ্চমাত্রায় আসক্ত ।
নারীপক্ষ যথারীতি মামলা করে দিয়েছে
নারী নির্যাতনের ।
পরদিন সন্ধ্যায় আবারো এক সাংবাদিক আর ঐ
এস আইকে নিয়ে ফারিবা হাজির ।
" ডক্টর ! আমার বোনকে একটা
সার্টিফিকেটে দিতে হবে । "
" কিসের সার্টিফিকেট ? "
" কি বলেন আপনি ! ওর শরীর ভর্তি
নির্যাতনের চিহ্ন , সিগারেেটর ছ্যাঁকার
দাগ , ঐ জানোয়ারের বাচ্চাটা প্রতিদিন
আমার বোনটাকে সিগারেট দিয়ে ছ্যাঁকা
দিতো । "
সাংবাদিক সাহেব অলরেডি রেকর্ডার অন
করে দিয়েছেন ।
আমি হেসে বললাম -" আমি লেডি ডক্টর
দিয়ে ওনার বডি এক্সামিনেশন করিয়ে কোন
আঘাতের চিহ্ন পাইনি , আর আপনার বোন
মাদকাসক্ত । "
--" মুখ সামলে কথা বলবেন ডাক্তার । আপনি
বিক্রী হয়ে গেছেন । "
আমি অনেক কষ্টে নিজেকে সামলে বললাম
- " আমার হাসপাতালের পক্ষ থেকে কাফরুল
থানাকে লিখিত জানানো হয়েছে , এই
রোগী অামরা রাখবো না । ওঁনাকে ঢাকা
মেডিকেলে নিয়ে যান । গতকাল রাতে
ইমারজেন্সী বেসিসে ওনাকে রাখা
হয়েছিলো । আর ওঁনার প্রশ্রাবের
পরীক্ষা সরকারী এবং বেসরকারী মোট তিন
জায়গা থেকে করিয়েছি । প্রতিটিতেই
বলছে - আপনার বোন ইয়াবায় আসক্ত। ঐ
কাগজগুলো অলরেডি আফতাবের ভাইকে
দিয়ে দেয়া হয়েছে । কারণ আফতাব আদিবার
স্বামী এখনো । লিগ্যাল গার্ডিয়ান ।
ছেলেপক্ষ আপনাদের বিরুদ্ধে উল্টা
মানহানি আর প্রতারণার মামলা করবে । সাথে
অতি আগ্রহী এই এসআই সাহেব আর সাংবাদিক
সাহেবও থাকবেন । ঢাকা মেডিকেলে
রোগীটাকে নিয়ে যান , সব রিপোর্ট দেখার
পর দেখেন সার্টাফিকেট পান কিনা ! "
এসআই বুঝতে পেরেছেন - ঘটনা সুবিধাজনক
পর্যায়ে নেই । সাংবাদিক সাহেবও আস্তে
করে দাঁড়িয়ে গেছেন । মানবাধিকার কর্মী
ফারিবা হা করে আমার মুখের দিকে
তাকিয়ে আছেন ।
----------
আফতাব তার দু:সহ জীবন থেকে মুক্তি
পেয়েছে । ভালো আছে এখন। মাঝে মধ্যে
কথা হয় ছেলেটার সাথে ।
( আমি নারী মুক্তিতে বিশ্বাসী । তবে
নারী মুক্তির নামে নির্লজ্জ
বেহায়াপনাকে ঘৃণা করি । পুরুষ শাসিত
সমাজে নারীমুক্তির নামে গলাবাজি করে
ধোঁকাবাজি করাটা ক্রেডিট না ।
অাফতাবের মতো অনেক নিরাপরাধ ছেলে
নারী নির্যাতনের নামে প্রতিদিন ফেঁসে
যাচ্ছে ।
বি: দ্র- নারী আন্দোলনের পথ প্রদর্শকরা,
মানবাধিকার কর্মীরা.... দুশ্চরিত্র
রুমানা মঞ্জুরদের জন্য মানববন্ধন করতে
পারেন , চিৎকার করতে পারেন -
" চোখ নষ্ট হয়ে গেলো রে ! আন্ধা করে
দিলো রে ........!!!! "
কিন্তু একবারও ভেবে দেখতে চাইলেন না
তার স্বামী হাসান সাঈদ কোন
পরিপ্রেক্ষিতে রুমানার নাকে বা
চোখে অাঘাত করেছিলো । হ্যাঁ অবশ্যই
আমি বলছি .........
রুমানার চোখে আঘাত করাটা তার উচিত হয়নি
। কিন্তু একটা পুরুষ কেনো তার স্ত্রীর
পরকিয়া কে নীরবে চোখ বুজে সহ্য
করবে !!!!! একবার ও ভাবলেন না !?!
রেজাল্ট কি দাঁড়ালো !!!!!
রুমানা মঞ্জুর দিব্যি সুস্থ দুই চোখ
নিয়ে কানাডায় দীর্ঘদিনের পুরোনো
প্রেমিকের সাথে সংসার করছে , আর হাসান
সাঈদকে প্রিজন সেলে শ্বাসরুদ্ধ
অবস্থায় মৃত পাওয়া গেলো ।
হা হা হা !!!!!
সত্যিই সেলুকাস ! কি বিচিত্র আপনাদের
নারী মুক্তি আন্দোলনের ধরণ !!!!!!!!!!!! )

মন্তব্য ১ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (১) মন্তব্য লিখুন

১| ০১ লা আগস্ট, ২০১৫ বিকাল ৫:০৯

ইমরান আশফাক বলেছেন: আমি মানবাধিকার সংস্হার কার্যক্রম সন্মন্ধে ভালো মত অবহিত, ওরা চাদাবাজী করে খায়। আর সাংবাদিকদের কথা কি আর বলবো, ওদের আয়-ব্যয়ের বিশাল অসামন্জস্য কি কারো চোখে পড়ে না?

যাই হোক, আপনাকে আমি মোবারকবাদ জানাই এভাবে রুখে দাড়ানোর জন্য। এইভাবে সমাজের সর্বস্তর থেকে আমাদের রুখে দাড়াতে হবে এদের বিরুদ্ধে। মাদকদ্রব্য আমাদের সমাজের সর্বস্তরে মারাত্কভাবে ছড়িয়ে পড়েছে।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.