নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ইকনোমিকস আমার প্রফেশন আর সাহিত্য আমার প্যাশন।

জহিরুল ইসলাম কক্স

:)

জহিরুল ইসলাম কক্স › বিস্তারিত পোস্টঃ

কুকুর

০১ লা সেপ্টেম্বর, ২০২০ রাত ৩:১০

প্রথমে বলে রাখি, কুকুর মূলত তিন প্রকার। একটা হলো ঘরের কুকুর বা পোষা। দ্বিতীয় প্রকার হলো বাড়ির কুকুর। গ্রামে এরকম প্রতি বাড়িতে বাড়িতে একটা বা দুইটা কুকুর থাকে। এরা মূলত ওই বাড়ির উচ্ছিষ্ট খায়, উঠানের পাশে একদিকে ঘুমায়, অপরিচিত কাউকে দেখলে ডেকে বাড়ির লোকদের সতর্ক করে দেয়। আরেক প্রকার কুকুর আছে যাকে আমরা স্ট্রে বা নেড়ি কুকুর বলি। ভদ্র ভাষায় একে বলা যায় কমিউনিটি ডগ। এরা একটা নির্দিষ্ট এলাকায় থাকে। সেখানের ডাস্টবিন হতে মানব খাবারের উচ্ছিষ্ট খেয়ে বেঁচে থাকে আর এলাকার কোণায় কোণায় রাতের বেলা ঘুমায়। এর বাইরে আরেক প্রকার কুকুর আছে যাকে বলা হয় বন্য কুকুর। এরকম কুকুর সাধারণত উপমহাদেশে তেমন একটা পাওয়া যায়না। তাই এই প্রকারকে আলোচনার বাইরে রাখলাম। তো সিটি কর্পোরেশন এর মাথাব্যথা ও প্রাণিকল্যাণকাম
ীদের হৃদয়ে রক্তক্ষরণের কেন্দ্রবিন্দু এই তৃতীয় প্রকার মানে স্ট্রে কুকুর বা রাস্তার কুকুর গুলোকে নিয়েই। এখন প্রশ্ন জাগতে পারে এই রাস্তার কুকুর গুলো নির্দিষ্ট এলাকায় কীভাবে এসে জড়ো হয়।
এই প্রশ্নের উত্তর খুজতে হলে আমাদেরকে নিজেদের ইতিহাসের দিকে ফিরতে হবে। মানব সভ্যতার শুরুর দিকে মানুষ নিশ্চয়ই এভাবে বিস্তৃত এলাকা জুড়ে ছিলোনা। যখন কোনো নির্দিষ্ট স্থানে খাবারের পরিমাণ হতে মানুষের সংখ্যা বেড়ে যেতো তখন সে সমাজের কোনো কোনো দল অন্য জায়গায় ‘মাইগ্রেশন’ করতো। এখনো আমরা সুন্দর স্বপ্নের সন্ধানে এলাকা ত্যাগ করি, গ্রাম ত্যাগ করি এমনকি দেশও ত্যাগ করি। কুকুরের ক্ষেত্রেও প্রায় একই কথা খাটে। যখন কোনো নির্দিষ্ট স্থানে কুকুরের সংখ্যা বেড়ে যায় তখন তাঁরা ঝগড়াঝাটি করে, মারামারি করে, কামড়াকামড়ি করে এবং একসময় অন্য কোনো স্থানে মাইগ্রেট করে। কখন একটা এলাকা হতে কুকুর মাইগ্রেট করবে সেটা নির্ভর করে সম্পূর্ণ খাবারের সন্ধানের উপর। আর খাবারের সন্ধান ও পরিমাণ এর একটা বড় আদর্শ হলো সেই একটা নির্দিষ্ট এলাকার মধ্যে মোট রান্নাঘরের সংখ্যা। একটা এলাকায় যত বেশি রান্নাঘর থাকবে, তত বেশি উচ্ছিস্ট জমা হবে এবং কুকুরের জন্য তত বেশি খাবার থাকবে। এইজন্য কর্পোরেশন এর ময়লা ফালার ভাগাড় ও আবাসিক এলাকাতে যত কুকুর পাওয়া যায় একই পরিমাণ বা তাঁর চেয়ে বেশি জায়গা নিয়ে বিস্তৃত ইন্ডাস্ট্রিয়াল এরিয়াতে এত বেশি কুকুর পাওয়া যায়না।
মোদ্দাকথায় কোনো স্থানে যত বেশি উচ্ছিস্ট থাকবে সেখানে তত বেশি কুকুর থাকবে। এখন কর্পোরেশন হয়তোবা সিদ্ধান্ত নিতে পারে আমরা কোন ময়লাই রাস্তায় ফেলতে দেবোনা বরং সব ময়লাই ঘর হতে সংগ্রহ করা হবে তবে সে সিদ্ধান্ত তাঁরা চাইলে নিতে পারে। কিন্তু, যে দেশে টং দোকানের নামে রাস্তার পাড়ে চা-বিস্কিট-কেক এর আসর চলে, যে শহরে রাস্তার পাশের খোলা হোটেলে ভাত খায় হাজার হাজার মানুষ সে শহরে বর্জ্য ব্যবস্থাপনাকে উন্নত দেশের পর্যায়ে নেয়া এক অসম্ভব স্বপ্ন।
ধরে নিলাম বর্জ্য ব্যবস্থাপনা একই রকম পর্যায়ে থাকবে। শুধুই কুকুর গুলোকে স্থানান্তর করা হবে। এরপর ও কথা রয়ে যায়। আমরা কেউই হ্যামেলিনের বাঁশিওয়ালা নই যে বাঁশি বাজানো শুরু হবে আর কুকুর গুলো সব সুড়সুড় করে আমাদের পেছনে চলা শুরু করবে। এই ৩০ হাজার কুকুরকে স্থানান্তর করতে গেলে যে পরিমাণ অর্থ, সময় ও মানবশ্রমের প্রয়োজন হবে তা শুধুই আন্দাজ করা যায়; পরিমাপ করা আমার জন্য দুঃসাধ্য। আবার এই প্রক্রিয়ার মাঝে কুকুরগুলোর উপর যে মাত্রায় অমানবিকতা দেখানো হবে এবং এর ফলশ্রুতিতে প্রক্রিয়ায় যুক্ত থাকা মানবদের উপর কুকুর কর্তৃক হামলার যে সম্ভাবনা তা আন্দাজ করাও সম্ভব নয়।
তারপরেও ধরে নিলাম সিটি কর্পোরেশন কুকুর গুলোকে স্থানান্তর করবেন। কিন্তু কোথায় করবেন বা সেখানে তাঁদের জন্য পর্যাপ্ত খাবার ও থাকার জায়গা আছে বা সেই স্থান ও তাঁর আশেপাশের স্থানের কুকুর ও মানুষের উপর যে প্রভাব পড়বে তা কী ভেবে দেখা হয়েছে কিনা সেটা প্রশ্ন রইলো। এই ৩০০০০ কুকুরের মধ্যে যদি ১০ টি কুকুর ও থেকে যায় তবে তারা নিজেদের মধ্যে এমন ভাবে ব্রিডিং করবে যে কয়েক বছরের মাথায় কুকুরের সংখ্যা ৫০ হাজারে উন্নীত হবে। সাথে একটি বিষয় ও মনে রাখা দরকার যে ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণের মাঝে কোনো কাঁটাতারের বেড়া নেই। যখন দক্ষিণের কুকুর সব সরে যাবে উত্তর হতে এবং ঢাকার বাইরে হতে কুকুর এসে জড়ো হবে। এই নতুন কুকুর যেগুলো আসবে তারা এলাকা সম্পর্কে ওয়াকিবহাল নয়, সেই এলাকার মানুষের সাথে সোশালাইজড (সামাজিক মেলবন্ধনে আবদ্ধ) না এবং অতি অবশ্যই এমন সব রোগের বাহক যা এলাকায় আগে ছিলোনা। ফলশ্রুতিতে মানুষের জীবন ও এলাকার অন্য প্রাণিদের জীবন ঝুকিতে পড়বে।
দূরতম কল্পনাতেও ধরে নেয়া যাক সিটি কর্পোরেশনের অধীন এলাকা সম্পূর্ণ কুকুরমুক্ত হবে। কুকুর একটি সর্বভুক প্রাণী। যখন একটি সর্বভুক প্রানী একটি নির্দিষ্ট এলাকা হতে বিতাড়িত হয় তখন অন্য প্রানির সংখ্যা বাড়বে। এবং এক্ষেত্রে সবচেয়ে হুমকি হলো ইঁদুর ও কাক। নিউইয়র্ক শহরে শহরায়ন ও বর্জ্য ব্যবস্থাপনার উন্নতির ফলে এবং স্ট্রে কুকুরকে শেল্টারে স্থানান্তরকরণের কারণে শহর একদম কুকুরহীন হয়ে পড়ে। সেই খানে এখন সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো ইঁদুর। ইঁদুরের সংখ্যাবৃদ্ধি হার কুকুরের চেয়ে বেশি, অল্প স্থানে বেশি ইঁদুর থাকায় জায়গা নিয়েও সমস্যা হয়না। সবচেয়ে বড় কথা, রাস্তার কুকুর কখনো আপনার বাসায় না ঢুকলেও ইঁদুরের সেই বালাই নেই। এবং ঢাকা প্রকৃত অর্থেই হ্যামেলিন শহরে রূপ নেবে। সেই সাথে কাকের কা কা রবের ফাঁকে ঢাকা পড়ে যাবে নাগরিক কার্যকলাপ। তখন কী মাননীয় সিটি করপোরশেন জংগি ড্রোন মোতায়েন করবেন কিনা সেটা প্রশ্ন রইলো। কুকুরকে বলা হয় ‘এন্টি-ওয়াইল্ড লাইফ এনিমেল’। যেখানে কুকুর থাকে সাধারণত সেখানে কোনো বন্যপ্রাণী স্থান করে নিতে পারেনা। হঠাৎ করে কোনো একটি বিশাল স্থান হতে কুকুর সরিয়ে দিলে সে স্থানে বন্যপ্রাণিদের আগমন সময়ের ব্যাপার মাত্র। অনেকের কাছে মনে হতে পারে কীভাবে বন্যপ্রাণী আসবে। লকডাউনের কল্যাণে বিশ্বের বড় বড় শহর গুলোতে বন্যপ্রাণিদের চড়ে বেড়ানোর ছবি গুগলে এখনো ছড়িয়ে আছে। শেয়াল, বন্য শুয়োর, বনবিড়াল, সাপের মতো বণ্যপ্রাণিদের আগমনে মানবস্বাস্থ্য আরো হুমকিতে পড়বে।
২০১৫ সালে আমেরিকার শহর গুলোতে স্ট্রে কুকুরদের সংখ্যা কমাতে এরকম প্ল্যান করা হয়েছিলো। সেখানে কুকুর নিধন, কুকুর সরিয়ে ফেলা সহ বিভিন্ন প্রস্তাব আসে। তখন আলোচনা ও বিভিন্ন সম্ভাব্যতা যাচাই এর প্রেক্ষিতে যেই পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছিলো তা হলো কুকুর নিধন ও কুকুর স্থানান্তরকরণ একটি অবাস্তব পরিকল্পনা। তার বদলে কুকুর গুলোকে টিকা প্রদানের মাধ্যমে 'জলাতংক নির্মূলকরণ ও খোজাকরণ' প্রক্রিয়ার মাধ্যমে তাঁদের জনসংখ্যা বৃদ্ধি রোধকরণের জন্য একটি পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা হাতে নেয়া হয়। খোঁজাকৃত কুকুর শান্ত হয় এবং তাঁদের দ্বারা রোগ ছড়ায় কম। উপরন্তু, মানুষ ও কুকুরের মধ্যে একটি সুন্দর মিথস্ক্রিয়া তৈরি হয়। এই কুকুর গুলো হবে এলাকার জন্য সম্পদ; বিরক্তির উৎস নয়। ঢাকা শহরে বর্তমানে অনেক গুলো সরকারি ও বেসরকারি ভেটেরিনারি হাসপাতাল আছে। সেই সাথে প্রাণিকল্যাণ গ্রুপ গুলোর নিজের ও অনেক হাসপাতাল আছে। ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরশেন যদি এই হাসপাতাল গুলোর সক্ষমতা ব্যবহার করে এবং নিজেরাও প্রকল্পের মাধ্যমে ‘স্পে এন্ড নিউটার ক্লিনিক’ (খোজাকরণ) প্রতিষ্ঠা করে তাহলে কুকুরের জনসংখ্যাবৃদ্ধি রোধকরণ সময়ের ব্যাপার মাত্র বৈ অসম্ভব নয়। তাই মাননীয় নগরপিতাকে অনুরোধ করছি অবৈজ্ঞানিক ও বাস্তবতাবিবর্জিত পদ্ধতি বাদ দিয়ে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে কুকুরের জনসংখ্যা হ্রাস প্রক্রিয়ার দিকে নজর দিন। কারণ, এটাই হবে প্রকৃত ও দীর্ঘ সময়ের সমাধান।
এ নগর শুধু মানুষের না হোক। এ নগর হোক সকল প্রাণির
কৃতজ্ঞতা- ডঃ রিদুয়ান পাশা

মন্তব্য ৩ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৩) মন্তব্য লিখুন

১| ০১ লা সেপ্টেম্বর, ২০২০ দুপুর ২:৩৪

মোহামমদ কামরুজজামান বলেছেন: ভাই ভাল পোস্ট ।

কিন্তু আপনি-আমি এমন এক দেশে বাস করি যেখানে মানুষদেরকে নিয়েও এত রকম পরিকল্পনা করা হয়না আর কুকুর!!!!!
যথাযথ কর্তৃপক্ষের শুভবোধ উদয় হউক এই প্রত্যাশা।

২| ০১ লা সেপ্টেম্বর, ২০২০ বিকাল ৩:২২

রাজীব নুর বলেছেন: ঢাকা শরের এমন কোনো এলাকা নেই যেখানে কুকুর নেই। আমি কুকুর খুব ভয় পাই।

০১ লা সেপ্টেম্বর, ২০২০ বিকাল ৪:২৮

জহিরুল ইসলাম কক্স বলেছেন: কুকুর কে ভয় পাওয়ার কিছু নেই।কুকুর না থাকলে ভারসাম্য থাকবেনা।ছুচো আর ইদূরে ভরে যাবে চারপাশ

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.