নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

যাযাবর রাজা রিটার্নস

যাযাবর রাজা রিটার্নস › বিস্তারিত পোস্টঃ

বিশুদ্ধ ভালবাসা

১৪ ই মে, ২০১৭ সকাল ১১:০৩

তিন মাস হলো বাড়ি এসেছি পঙ্গুত্বের দায় নিয়ে।এসে যার ঘাড়ে চেপেছি সেও খুব রোগা মানুষ,রুগী মানুষ।জন্মের পর থেকে তাকে দেখছি বিভিন্ন রোগে ভুগতে।সময়মতো প্রয়োজনীয় চিকিৎসার অভাবে রোগগুলো আজীবনের তরে বাসা বেধেছে তার শরীরে।এরই মধ্যে মরার ওপর খাড়ার ঘা'র মতো মাঝখানে মারাত্মক এক রোগ চেপে বসেছিলো তার শরীরে।যার জন্য এক বড় ধরনের অস্ত্রপাচারের প্রয়োজনে অপারেশন টেবিলও ঘুরে আসতে হয়েছে তাকে।সব মিলিয়ে এখন সে যে বেচে আছে এটাই আমাদের প্রতি সৃষ্টি কর্তার করুণা।তারপরও তাকে এই অবস্থাতেই বাড়ীর সমস্ত কাজ সামাল দিতে হয় সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত।রান্না বান্না,উঠোন ঝার,কাপড় ধোয়া,কাটাকাটি,বাটাবাটি সব।তাকে সাহায্য করার মতো কেউই নেই।এর সাথে গত কয়েক বছর ধরে যোগ হয়েছে তার আরেকটি কাজ।সেটি হলো তার প্যারালাইসিসে আক্রান্ত শাশুড়ি, যে নড়তে চড়তে বা কথা বলতে কোনোটাই পারে না।তাকে ঘরেই পায়খানা পস্রাব করাতে ও মুখে তুলে খাওয়াতে হয়।রাত তিনটায়ও তার কান সজাগ থাকে শাশুড়ি পস্রাব কিংবা পায়খানা করবে কি না এই ভাবনায়।তারপরেও মাঝে মাঝে অসুস্থ শাশুড়ি বিছানায়ই পস্রাব পায়খানা করে দিলে সেগুলো তাকেই পরিষ্কার করতে হয় অসুস্থ শরীর নিয়ে কোকাতে কোকাতে।এর মধ্যে আবার আমি উদয় হলাম আর একটি উটকো ঝামেলা হয়ে।কিন্তু কখনো সে আমাকে ঝামেলা মনে করে না।আমারও পায়খানা পস্রাব এখন ঘরেই সারতে হয়।তাতে তার কোন বিরক্তি নেই।আমি পায়খানা করতে চাইলে প্লাস্টিকের কমোড চেয়ারটি, যেটা তার ভাল করে বহন করার শক্তি পর্যন্ত নেই সেটা সে টানতে টানতে নিয়ে আসে।এসব দেখে কখনো কখনো আমার নিজের কাছে খুব খারাপ লাগলে আমার জন্য তার এত কষ্ট বলে দূঃখ প্রকাশ করলে উল্টো আমাকেই বকা খেতে হয়। আমি নাকি ফালতু কথা বলছি এজন্য।পায়ের প্লাস্টার কেটে আসার পর আমার পায়ে পানি এসে পা ফুলে গেলো।এ থেকে রেহাই পেতে আমার প্রয়োজন দু বেলা রুটি।অমনি সে দু বেলা রুটি বানানো শুরু করলো।আর এই রুটি বানানোটা অপারেশনের রোগী হিসেবে তার জন্য সবচেয়ে ঝুকিপূর্ন কাজ।সেদিকে খেয়াল নেই তার।সে ব্যাস্ত আমাকে নিরাপদ রাখতে।জানেন এই মানুষটি কে?কে আবার?সে আমার মা। মা ছাড়া আর কেইবা এমন করবে?গত কয়েক দিন ভীষনভাবে অসুস্থ হয়ে বিছানায় পড়ে থাকতে হয়েছে তাকে।এই কয়েকদিন আমার ঠিক মতো ওষুধ খাওয়া হয়নি,রাতে আমার ঘরে কয়েল জ্বালানো হয় নি।বিছানা থেকে উঠার শক্তি না থাকলেও সে খেয়াল করেছে এগুলো।আর গতকাল বারান্দার খুটি ধরে ধরে আমার ঘরে এসে আমাকে ওষুধ খেতে বলে কয়েল ধরাতে ধরাতে বলছে 'আহারে এই কয়দিন আমি নাই আর আমার ব্যাটার কি হাল হইছে!'এই হলো আমার মা।যে একবারও বলছেনা এই কয়েকটা দিন সে নিজে কি যন্ত্রনায় ছিলো।উল্টো আমার জন্য হায় হুতাশ করছে।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.