নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

যাযাবর রাজা রিটার্নস

যাযাবর রাজা রিটার্নস › বিস্তারিত পোস্টঃ

সবুজ বাতিতো একদিন জ্বলবে

১৫ ই মে, ২০১৭ সকাল ৯:৪৪

কারওয়ান বাজার সিগন্যাল রাজধানীর একটি ব্যাস্ততম সিগন্যাল।আজকাল এই সিগন্যালে ক্র্যাচ হাতে একটি ছেলেকে মাঝে মাঝেই দাড়িয়ে থাকতে যায়।চলন্ত গাড়ীর মিছিল উপেক্ষা করে ট্রাফিকের ভরসা না করে ব্যস্ত নগরীর ব্যাস্ত মানুষগুলো রাস্তা পার হয়।কিন্তু ছেলেটি দাড়িয়ে থাকে।তাকে দাড়িয়ে থাকতে হয়।তাকে কখন ট্রাফিক সিগন্যাল দেবে সে আশায় ট্রাফিকের দিকে তাকিয়ে থাকতে হয়।কেননা তার পায়ের ভাঙা গোড়ালিতে এখন রাজত্ব করছে স্ক্রু।যার ফলে সে গাড়ী এড়িয়ে যেতে দৌড়ানোতো দূরের কথা একটু জোর হাটতেই ভীষনভাবে অক্ষম।এভাবে কখনো কখনো বেশ সময় চলে যায় বেরসিক ট্রাফিকের সিগন্যালের অপেক্ষায়।এই সময়টুকুতে শত শত মানুষ সিগন্যালকে পর করে রাস্তা পার হয়ে চলা শুরু করে আপন গন্তব্যে।কিন্তু ছেলেটিকে দাড়িয়ে থাকতে হয় লালবাতি জ্বলে ওঠার অপেক্ষায়।ট্রাফিকের একটি সিগন্যালকে ঐ সময় তার ঈশ্বরের শ্রেষ্টতম করুনা বলে মনে হয়।ইচ্ছে করে কারো হাত ধরে পার হয়ে যেতে। কিন্তু এতটা অসহায় হতে ভিতর থেকে কে যেন তাকে ভীষনভাবে চোখ রাঙিয়ে বারন করে।ছেলেটি তার বারন মেনে অপেক্ষায় থাকে।শত শত মানুষের শত শত চোখ হাতে ক্র্যাচ দেখে ছেলেটির দিকে কৌতুহলী দৃষ্টি নিয়ে তাকিয়ে থাকে।ছেলেটির তখন প্রচন্ড জোরে চিৎকার করে তাকিয়ে থাকা লোকগুলোর উদ্দেশ্য বলতে ইচ্ছে করে 'আমি পংগু নই।এটা আমার কিছুদিনের অসহায়ত্ব।আমি ভালো হয়ে যাবো কদিন পর।তোমাদের স্বাভাবিক হয়ে যাবো।তোমরা আমার দিকে কেনো এমন করে তাকিয়ে থাকো?'
না ফেরার দেশে চলে যাওয়া পিতার অবর্তমানে ছেলেটির একটি কাধ ছিলো।যে কাধে ভর করে সে কিছুসময়ের জন্য হলেও একটু নিশ্চিন্ত হতে পারতো।সেই কাধটিও আজ সরে গেছে কিছুদিন হলো।বাবার অনুপস্থিতিতে ছেলেটি যাকে বাবার মতো মাথার ছায়া ভাবতো সেই ছায়াটিও এই দুঃসময়ে ছেলেটি মাথার ওপর নিজেকে গুটিয়ে নিয়েছে কয়েকদিন ধরে।বাবার মতো ছেলেটির একটি দেয়াল ছিলো।ভীষন ক্লান্তির সময়ে সেই দেয়ালে একটু হেলান দিয়ে দাড়াতো ছেলেটি।আজ কিছুদিন হলো সেই দেয়ালটি আর তার হেলান সইতে রাজী না।
এরকম নাজুক সময়ের হাতছানি পেয়ে ভীষনভাবে ভড়কে গিয়েছিলো ছেলেটি।একেতো শরীরে সাময়িক পংগুত্বের বাস,তার ওপরে এমন একা হয়ে যাওয়া।এ যেন একবারে শূন্য থেকে দুম করে মাটিতে পড়ে যাওয়ার মতো। ছেলেটি তখন ভীষনভাবে অকাল প্রয়াত বাবাকে মিস করছিলো।কেননা ছেলেটির বাবা বেচে থাকলে পারুক আর না পারুক অন্তত এটা বলতো যে, 'বাজান, এতো চিন্তা করোস ক্যা তুই?আমি আছি না?' এই এক কথাতেই ছেলেটির সকল ভয় ভীতি কর্পুরের মতো উবে যেতো। কিন্তু তাকে এই কথা বলার মতো মানুষ আর আজ এই পৃথিবীতে নেই।কিন্তু ছেলেটিকে ভয় পেলে কি চলবে?তাকেতো দৌড়াতে হবে।এখনো সম্পূর্ন পথটাই বাকী।হোক না সাময়িক শারীরিক অক্ষমতা,দিক না মানুষ মাঝপথে ছেড়ে,স্বার্থের টানে যাকনা পর হয়ে অতি আপনজন।ছেলেটি এখন সম্পূর্ণরুপে মানসিকভাবে প্রস্তুত একাই এ পথ পাড়ি দিতে।কারো হাত ধরে নয়, কারো করুনা পেয়ে নয়।আজ সিগন্যালের লাল বাতির অপেক্ষায় দাড়িয়ে থাকা তাকে হয়তো কিছুদিন বাস্তব জীবনের সিগন্যালেও সবুজ বাতির অপেক্ষায় দৌড়াতে হবে।কিন্তু তাতে কি?সবুজ বাতিতো একদিন জ্বলবে।সেদিন কারওয়ান বাজার সিগন্যালের মতো তার রাস্তাও ফাকা হয়ে শুধুই তার চলাচলের উপযোগী হয়ে যাবে।ভাগ্য সুপ্রসন্ন হলে সিগন্যালের পাশাপাশি একটি প্রজাপতির গুহারও দেখা মিলতে পারে।ততোদিন নাহয় ছেলেটি ভাঙা পা নিয়েই দৌড়াবে।

মন্তব্য ৬ টি রেটিং +৩/-০

মন্তব্য (৬) মন্তব্য লিখুন

১| ১৫ ই মে, ২০১৭ সকাল ৯:৫৬

আহমেদ জী এস বলেছেন: যাযাবর রাজা রিটার্নস ,





চমৎকার লিখেছেন ।

একটি রূপকের মতো জীবনের সত্যটাই যেন বলে গেলেন ---- লালবাতির চোখ রাঙানো উপেক্ষা করে একটি সবুজ বাতি জ্বলে ওঠার অপেক্ষা ।


১৫ ই মে, ২০১৭ সকাল ১০:১৪

যাযাবর রাজা রিটার্নস বলেছেন: ধন্যবাদ অাহমেদ জী।এটি আমার জীবনের গল্প।

২| ১৫ ই মে, ২০১৭ সকাল ১০:১২

নাঈম জাহাঙ্গীর নয়ন বলেছেন: পোষ্টটি পড়ে মনের জোড় বাড়িয়ে নিয়ে গেলাম। কৃতজ্ঞতা পোষ্টে।


এ যেন একবারে শূন্য থেকে দুম করে মাটিতে পড়ে যাওয়ার মতো। ছেলেটি তখন ভীষনভাবে অকাল প্রয়াত বাবাকে মিস করছিলো।কেননা ছেলেটির বাবা বেচে থাকলে পারুক আর না পারুক অন্তত এটা বলতো যে, 'বাজান, এতো চিন্তা করোস ক্যা তুই?আমি আছি না?' এই এক কথাতেই ছেলেটির সকল ভয় ভীতি কর্পুরের মতো উবে যেতো। কিন্তু তাকে এই কথা বলার মতো মানুষ আর আজ এই পৃথিবীতে নেই।কিন্তু ছেলেটিকে ভয় পেলে কি চলবে?তাকেতো দৌড়াতে হবে।এখনো সম্পূর্ন পথটাই বাকী।হোক না সাময়িক শারীরিক অক্ষমতা,দিক না মানুষ মাঝপথে ছেড়ে,স্বার্থের টানে যাকনা পর হয়ে অতি আপনজন।ছেলেটি এখন সম্পূর্ণরুপে মানসিকভাবে প্রস্তুত একাই এ পথ পাড়ি দিতে।কারো হাত ধরে নয়, কারো করুনা পেয়ে নয়।আজ সিগন্যালের লাল বাতির অপেক্ষায় দাড়িয়ে থাকা তাকে হয়তো কিছুদিন বাস্তব জীবনের সিগন্যালেও সবুজ বাতির অপেক্ষায় দৌড়াতে হবে।কিন্তু তাতে কি?সবুজ বাতিতো একদিন জ্বলবে। "-অসাধারণ নির্ভরতার ছোঁয়া।

১৫ ই মে, ২০১৭ সকাল ১০:১৫

যাযাবর রাজা রিটার্নস বলেছেন: ধন্যবাদ

৩| ১৫ ই মে, ২০১৭ বিকাল ৫:২৭

মোস্তফা সোহেল বলেছেন: সব বিপদ কাটিয়ে তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে উঠুন সেই কামনায় করি।

১৬ ই মে, ২০১৭ সকাল ৯:৫৭

যাযাবর রাজা রিটার্নস বলেছেন: ধন্যবাদ

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.