নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

যাযাবর রাজা রিটার্নস

যাযাবর রাজা রিটার্নস › বিস্তারিত পোস্টঃ

শওকত মিয়ার শেষ দিন

১০ ই নভেম্বর, ২০১৭ সকাল ১১:০৪

শওকত মিয়া অফিস থেকে বেরিয়ে টং দোকান থেকে একটা হলিউড সিগারেট ধরিয়ে টানতে টানতে বাসার দিকে হাটা শুরু করলো।শওকত মিয়া রিকশার দিকে তাকায়,কিন্তু রিকশা নেয়না।তিরিশ টাকা ভাড়া দিতে হবে।তার চেয়ে বিশ মিনিট হেটে যাওয়াটাই ভালো।ত্রিশ টাকা বাচবে।ত্রিশ টাকা শওকত মিয়ার কাছে অনেক।
আজ মেয়েটার কথ খুব মনে পড়ছে তার।কদিন আগে মেয়েটার বিয়ে হয়ে গেলো।মেয়েকে কখনো রুমা নামে ডাকেনি শওকত মিয়া। মা ডাকতো।তার মায়ের চেহারার সাথে ভীষন মিল ছিলো মেয়েটার।মেয়েটাও মায়ের মতোই যত্ন শাসন করতো শওকত মিয়াকে।রাগী ররাগী চোখে সিগারেট খেতে বারন করতো,গরমের দিনে অফিস থেকে বাসায় যাওয়ার পর লেবুর শরবত করে দিতো।
এত তাড়াতাড়ি মেয়েকে বিয়ে দিতে মনও চাচ্ছিলো না তার।কিন্তু এমন সম্মন্ধ আর যদি পাওয়া না যায়!ধনী ঘর,পাত্র দশ বছর ধরে সিংগাপুর থাকে।মেয়েটার তুলনায় বয়সটা ভালোই বেশী,তবে টাকা পয়সার কমতি নেই।টানাটানির সংসারে কোনোদিন মেয়েটাকে ভালো কিছু খাওয়াতে,ভালো কিছু পড়াতে পারেনি সে।এখন স্বামীর ঘরে গিয়ে সে একটু ভালো খাক,ভালো পড়ুক।
এই সংসারে এখন শওকত মিয়ার আদরতো দূরের কথা খোজ নেয়ার মতোও আপন আর কেউ নেই।যে দুজন আছে তাদের মুখ দেখতে ইচ্ছে করেনা তার।একজন হচ্ছে তার বৌ।বোয়াল মাছের মতো হা করে থাকে শওকত মিয়া কবে বেতন পাবে সেই আশায়।আর সারাদিন পান মুখে দিয়ে গরুর মতো জাবর কাটতে থাকে।ছোটখাটো হাতির মতো শরীর বানিয়েছে খেয়ে খেয়ে।শওকত মিয়ার সাথে বিয়ে হয়ে জীবনে সুখ কি জিনিস জানলোনা বলে এখনও আফসোস করে।
বিশ্রী লাগে শওকত মিয়ার।পান থেকে চুন খসলেই তার মুখের সামনে এসে চিৎকার করতে থাকে।সেই চিৎকারে মুখ থেকে পানের গন্ধ সব ভুরভুর করে শওকত মিয়ার পেটে ঢুকে যায়।তীব্র বমি পায় তখন তার।
পান শওকত মিয়ার খুব প্রিয় ছিলো।সে খুব আয়েশ করে পান খেতো।কিন্তু এই মহিলার কারনে পানের ওপর থেকে মন উঠে গেছে তার।পান দেখেলই মেজাজ খারাপ হয়ে যায়। মাঝে মাঝে সে দোকান থেকে পান কিনে ছিড়ে কুটি কুটি করে।তার তখন মনে হয় তার বৌকে কুটি কুটি করছে সে।মন ভালো হয়ে যায়। অফিসে লাঞ্চের পরে মিল্লাত সাহেব প্রতিদিন শওকত মিয়াকে বলে, 'শওকত সাহেব,চলেন একটা পান খেয়ে আসি।'
এজন্য মিল্লাত সাহেবকেও দেখতে পারেনা সে।
দ্বিতীয় অপদার্থটা হলো তার ছেলে।নেশা পানি খায়।বাজি ধরে,জুয়া খেলে।ক্রিকেটে বাজি ধরলে নাকি প্রচুর টাকা কামানো যায় বলে তার মাকে ফুসলিয়ে টাকা নিয়ে নিয়ে শওকত মিয়ার টাকাগুলো শেষ করছে সে।এ নিয়ে কাউকে কিছু বলার নেই তার।তার বৌ একটা হারামজাদী লোভী।সেও প্রতিবার টাকার লোভে ভিজে ছেলেকে শেষবারের মতো টাকা দেয়।কিন্তু কখনোই তা আর শেষবার হয়না।
ছেলেটাকে নিয়ে কত স্বপ্ন ছিলো তার।এস,এস,সিতে এ প্লাস পেয়েছিলো ছেলেটা।ভেবেছিলো ছেলেটাকে বড় অফিসার বানিয়ে বড় ঘরে বিয়ে দিয়ে শেষ বয়সটা নাতি পুতির সাথে একটু আরামে কাটাবে।কিন্তু তা আর হলো কই? ছেলেটা কলেজে ভর্তি হয়েই ধরলো নেশা,হলো টাউট।সেই সাথে শওকত মিয়ার স্বপ্নেরও অপমৃত্যু ঘটলো।কত চাকরী জোগাড় করলে ছেলেটার জন্য সে।কিন্তু লাটসাহেবের ছেলে ছোট চাকরী করবেনা।ভাল্লাগেনা তার।সে বিজনেস করবে।লোন কর্য করে জানের ওপর দিয়ে সে টাকাও জোগাড় করে দিলো সে।কিন্তু নেশাখোর কি আর ব্যাবসা করে খেতে পারবে?সব টাকা শেষ করে ফেললো।নির্লজ্জের মতো এখন আবার টাকা চায়।শওকত মিয়া সাফ জানিয়ে দিয়েছে জীবন থাকতে তাকে আর টাকা দিবেনা সে।তার চেয়ে টুকটাক নেশার টাকা নিক,তার ঘাড়ে বসে খাক,সেও ভালো।ঘার্মাক্ত শরীরে বাসায় ঢুকেই দেখলো মা ছেলে বসে হাসাহাসি করছে।শওকত মিয়াকে দেখেই চুপ হয়ে গেলো।কত সুখ তাদের!ইচ্ছে করলো দুটোকে কাচা কন্চি দিয়ে পেটাতে।ওদের দিকে না তাকিয়ে সে রাগে কাপতে কাপতে নিজের রুমে চলে গেলো।বৌ'র সাথে এখন আর এক বিছানায় ঘুমায়না সে।
সন্ধ্যায় বাইরে থেকে এসে নিজের মতো ভাত বেড়ে খেয়ে শওকত মিয়া শুয়ে পড়লো।রাতে শোয়ার পর নানান চিন্তা,নানান সুখের দুখের স্মৃতি এসে হাজির হয় মানুষের মাথায়।শওকত মিয়ার আজ দুঃখের স্মৃতি ভাবতে ভালো লাগছেনা।সে তার পাশের ডেস্কে বসা সুন্দর মেয়েটার মুখটা মনে করার চেষ্টা করলো।রুমার বয়সী হবে।মেয়েটা তাকে চাচা বলে ডাকে।গায়ে সুগন্ধী মেখে অফিসে আসে,একটু পর পর ফোনে কথা বলে আর কথায় কথায় খালি হাসে।তার হাসিতে অফিসের বসও তার দেরী করে আাসাতে তাকে বকতে পারেনা।আর শওকত মিয়া একটু দেরী করে আসলেই চাকরী চলে যাবে বলে হুমকী ধামকী দেয়।
ঐ মেয়েটার মুখ চোখের সামনে আনতে পেরেছে সে।তার ইচ্ছে করছে মেয়েটার সাথে কল্পনায় সংসদ ভবনের সামনে বসে থাকতে।ঐখানে প্রেমিক প্রেমিকারা বসে থাকে।চুমু টুমু খায়,শরীরে হাত দেয়।শওকত মিয়া কল্পনায় মেয়েটাকে নিয়ে সংসদ ভবনের সামনে বসলো।মেয়েটা এখনো হাসছে।মেয়েটার হাসিতে শওকত মিয়া তার জীবনের সমস্ত দুঃখ ভুলে যাচ্ছে।মেয়েটার শরীর থেকে ভেসে আসা সুগন্ধীতে সমস্ত কষ্ট ভুলে যাচ্ছে,কোথায় যেন হারিয়ে যাচ্ছে সে।
পরদিন অফিসে যেতে সকালে ঘুম থেকে উঠলো না শওকত মিয়া।বেলা এগারোটার দিকে ঘরের দরজা ভেঙে শওকত মিয়াকে বের করলো সবাই।শওকত মিয়া ইহজগত ত্যাগ করেছে।

মন্তব্য ৩ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৩) মন্তব্য লিখুন

১| ১০ ই নভেম্বর, ২০১৭ দুপুর ১২:২০

কানিজ রিনা বলেছেন: ভীমরতি ধরা সওকত সাহেবরা স্ত্রীর যত
দোশ খুজে বাহির করে। সন্তানরা উচ্ছন্যে
গেলে তাও স্ত্রীর দোশ দিয়ে নিজের গা
বাঁচায়। অথচ ছেলেটা যদি ডাক্তার ইঞ্জিয়ার
হত স্ত্রীর কষ্ট সাধনায় তবে বাপের নামটাই
আগে প্রচার হয়। সওকতও বলত ছেলেটা
আবার কার দেখা লাগবে না।
কা পুরুষরা সকল দোশ স্ত্রীর দিয়ে বাঁচে।
ধন্যবাদ।

১০ ই নভেম্বর, ২০১৭ দুপুর ১২:৪৪

যাযাবর রাজা রিটার্নস বলেছেন: ধন্যবাদ।

২| ১০ ই নভেম্বর, ২০১৭ রাত ১০:৩৪

বিচার মানি তালগাছ আমার বলেছেন: শওকত মিয়াদের মত মানুষ অনেক বেশী বাংলাদেশে...

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.