নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

হেয়ালি

জসীম উদ্দিন রাসেল

জসীম উদ্দিন রাসেল › বিস্তারিত পোস্টঃ

দি রিডার (The Reader) : যুদ্ধ ইতিহাস ও ভালোবাসা

২৬ শে নভেম্বর, ২০১৪ রাত ৮:৫৭

দি রিডার মুভি রিলিজের পর সমালোচনা শুরু হয় কেট উন্সলেটের। তারা বলেন, কেট কাপড় খুলতে পছন্দ করেন। টাইটানিকের পর দি রিডার মুভিতে তাকে একটি কিশোর ছেলের সাথে কয়েকবার সেক্স করতে দেখা যায়। তবে যারা কেট-কে পছন্দ করেন তারা অনেকেই কেটের কাপড় খোলা নিয়ে রসিয়ে রসিয়ে ফ্রেন্ড সার্কলে আলাপ করে থাকেন। কিন্তু মুভিটিতে চমৎকার অভিনয়ের জন্য তিনি যে অস্কার প্রাইজ পান তা তাদের সমালোচনার নিচে চাপা পড়ে যায়।

যারা নিয়মিত মুভি দেখেন তারা বলছেন ২০০৮ সালে অন্যান্য বছরের তুলনায় অনেক ভালো মুভি নির্মিত হয়েছে। এর মধ্যে যেমন তৈরি হয়েছে থ্রিলার, ড্রামা, রোমান্টিক মুভি তেমনি তৈরি হয়েছে ইতিহাসনির্ভর মুভি। অস্কারের জন্য মনোনীত পাঁচ সেরা মুভির একটি হলো ইতিহাসনির্ভর মুভি দি রিডার। মুভিটি ইতিমধ্যে সাড়া জাগিয়েছে। মুভিটিতে দুর্দান্ত অভিনয়ের জন্য প্রথমে বাফটা এবং গোল্ডেন গ্লোব অ্যাওয়ার্ড পেয়েছেন কেট উইনস্লেট। বছরের সবচেয়ে কাংিক্ষত অস্কারের পুরস্কার পেয়ে কেট উইনস্লেট তার অভিনয়ের বিশ্ব জুড়ে স্বীকৃতি পান।

দি রিডার মুভিটির কাহিনী নেয়া হয়েছে জনপ্রিয় উপন্যাস দি রিডার থেকে। এ উপন্যাসটির লেখক জার্মান আইন বিষয়ক অধ্যাপক এবং বিচারক বেনহার্ড শলিঙ্ক। বইটি প্রকাশিত হয় ১৯৯৫ সালে। জার্মানিতে বইটির পাঁচ লাখ কপি বিক্রি হয়। ১৯৯৭ সালে বইটির বিপুল জনপ্রিয়তার কারণে ইংরেজিতে তা অনুবাদ করা হয়। জনপ্রিয় টিভি উপস্থাপক অপরা উইনফ্রে তার বুক ক্লাবে বইটি নিয়ে আসেন। এতে করে বইটি আরো জনপ্রিয়তা পায়। বইটির বিক্রির পরিমাণ দাঁড়ায় সাড়ে সাত লাখে। বৃটেনেই দুই লাখ কপি বিক্রি হয়। এটি একমাত্র জার্মান উপন্যাস যেটি নিউ ইয়র্ক টাইমসের বেস্ট সেলার লিস্টের টপ পজিশনে ছিল। এ পর্যন্ত বইটি ৩৭টি ভাষায় অনূদিত হয়েছে। এবং পেয়েছে বিভিন্ন পুরস্কার। অতএব বোঝা যায়, খুব জনপ্রিয় একটি উপন্যাসকে চলচ্চিত্রে রূপদান করা হয়েছে।

মুভিটির কাহিনী দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ ও এর পরবর্তী সময়কে ঘিরে। ১৯৫৮ সালে পনের বছরের এক স্কুল বালক মাইকেল বার্গ। ঘটনাক্রমে মাইকেল প্রেমে পড়ে যায় ৩৬ বছর বয়সী এক ট্রাম কন্ডাক্টর হান্নার। মাইকেল প্রায় প্রতিদিনই হান্নার কাছে যায় । অক্ষরজ্ঞানহীন হান্নাকে বিভিন্ন উপন্যাস পড়ে শোনায় সে। এর মধ্যে আছে দি ওডেসি, দি লেডি উইথ দি লিটল ডগ, দি হাকলবেরি ফিন ইত্যাদি। কিন্তু হঠাৎ একদিন হারিয়ে যায় হান্না।

আট বছর পর ১৯৬৬ সালে মাইকেল হান্নাকে দেখতে পায় কোর্ট রুমে। সে জানতে পারে এমন এক ঘটনা যা হান্না তাকে কখনো বলে নি। তখন মাইকেল নাৎসিদের ওয়ার ক্রাইম নিয়ে ট্রায়ালে উপস্থিত ছিল। মাইকেল তখন আইনের ছাত্র। মাইকেল জানতে পারে হান্না দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় জার্মান 'এসএস' বাহিনীর সঙ্গে যুক্ত ছিল। এবং তখন ৩০০ ইহুদি নারী হত্যার সঙ্গে হান্নার জড়িত থাকার অভিযোগের কথা জানতে পারে। কোর্ট হান্নাকে লিখতে বললে সে অস্বীকার করে। শেষ পর্যন্ত হান্নাকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয়া হয়। মাইকেল বুঝতে পারে হান্নার অক্ষরজ্ঞান নেই। তাই মাইকেল ভালো উপন্যাসগুলো ছোট টেপ রেকর্ডারে রেকর্ড করে জেলখানায় পাঠাতে থাকে হান্নার কাছে। হান্না এগুলো মনোযোগ দিয়ে শুনতো।

একদিন হান্নার ইচ্ছে হলো সে লেখাপড়া শিখবে। তারপর শুরু হয় তার চেষ্টা। একদিন সফল হয়। এই লেখা শেখার মধ্য দিয়ে মুভিটির একটি গুরুত্বপূর্ণ দৃশ্য চিত্রিত হয়েছে।

মুভিটি বিভিন্ন শ্রেণীর দর্শকের মনোযোগ আকর্ষণ করেছে। তারপরও সমালোচনার হাত থেকে রক্ষা পায়নি। কারণ ইতিহাসনির্ভর মুভি বানাতে গেলে নানা ধরনের বিতর্ক এসে হাজির হয়। সবদিকে ভারসাম্য রেখে একটি মুভি তৈরি বা বই লেখা পরিচালক বা লেখকের পক্ষে অনেক সময় কঠিন হয়ে ওঠে।

দি রিডার-এর ক্ষেত্রে সমালোচকরা বলছেন, মুভিটিতে ইতিহাসকে অতি সরলীকরণ করা হয়েছে। ইংরেজ সমালোচকরা বলছেন, সাধারণ শিক্ষিত মানুষের কাছে ঘটনাটিকে নির্দোষভাবে তুলে ধরার চেষ্টা করা হয়েছে। তারা বলছেন, জার্মানরা কল্পনাতেও যদি মনে করে হান্না নিরক্ষর ছিল বলে তার শাস্তি কিছুটা কম হয়, তবে তাদের হিটলারের ১৯৩৯ সালের ভাষণটি শোনা প্রয়োজন। এটি জার্মান ও বিশ্বের উদ্দেশ্যে রেডিওতে প্রচার করা হয়। ভাষণে হিটলার সব ইহুদিকে হত্যার হুমকি দিয়েছিলেন। একমাত্র যারা বাকশক্তিহীন, অন্ধ বা নিরক্ষর কেবল তারাই এই কাহিনী বিশ্বাস করবে।

এ সমালোচনার জবাবে বইটির লেখক বলেন, ইসরেল এবং নিউ ইয়র্কে যারা প্রবীণ আছেন তারা এর সমালোচনা করছেন না। এবং তখন যারা জীবিত ছিলেন তারাও এর সমালোচনা করেন নি।
এতো সমালোচনা সত্ত্বেও হান্না চরিত্রে কেট উইনস্লেট অনবদ্য অভিনয় করেছেন। তবে শেষ মুহূর্তে হান্নার আত্মহত্যা অনেককেই চমকে দেবে। এই ড্রামা এবং রোমান্টিক মুভিটির পরিচালক স্টিফেন ডালড্রে । মুভিটি বেস্ট অ্যাকট্রেস অস্কার নমিনেশনসহ মোট পাঁচটি ক্যাটেগরিতে নমিনেশন পায়। মুভিটিতে আরো অভিনয় করেছেন রালফ ফিয়েন্স, জেনেট হেইন, ডেভিড ক্রস। মুভিটি অস্কার ছাড়াও সাতটি পুরস্কার এবং অন্য আরো বিশটি নমিনেশন পায়।

মন্তব্য ১০ টি রেটিং +৩/-০

মন্তব্য (১০) মন্তব্য লিখুন

১| ২৬ শে নভেম্বর, ২০১৪ রাত ৯:৪৯

রাবেয়া রব্বানি বলেছেন: দেখছি কয়েকবার

২৬ শে নভেম্বর, ২০১৪ রাত ৯:৫৯

জসীম উদ্দিন রাসেল বলেছেন: কেমন লেগেছে তা কিন্তু বললেন না।

যাই হোক, আপনাকে ধন্যবাদ।

২| ২৬ শে নভেম্বর, ২০১৪ রাত ৯:৫০

কাল্পনিক_ভালোবাসা বলেছেন: খুবই ভালো একটা মুভি। যারা শুধু মাত্রা যৌনতার বিষয়টিকে প্রাধান্য দেয়, তারা এই ছবির মর্ম বুঝতে পারবে না।

আপনার রিভিউ ভালো লেগেছে!

২৬ শে নভেম্বর, ২০১৪ রাত ১০:০২

জসীম উদ্দিন রাসেল বলেছেন: আপনার কমেন্টের সাথে একমত।

আর রিভিউ ভালো লাগার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।

৩| ২৬ শে নভেম্বর, ২০১৪ রাত ১১:১৫

রুমি৯৯ বলেছেন: আমি আঁধারে তামাশায় ঘেরা জীবন দেখেছি,
আমার বুকের ভেতর
শূন্যতা থেকে শূন্যরা এসে বাসা বেঁধেছে,
আমি খুঁজেছি তোমাকে সেই আঁধারে আমার
মনের যত রঙ্গলীলা; আজ সাঙ্গ হতেছে এই
ভবের বাজারে।

৪| ২৬ শে নভেম্বর, ২০১৪ রাত ১১:৫০

সুমন কর বলেছেন: রিভিউ ভাল হয়েছে। কেট উইনস্লেট ভাল অভিনয় করে। তাঁর শুধু শরীর না, দক্ষতা এবং যোগ্যতাও অাছে।

ভাল মুভি এবং দেখেছি।

৫| ২৭ শে নভেম্বর, ২০১৪ রাত ১২:০৬

স্নিগ্ধ শোভন বলেছেন:


খুব সুন্দর একটি মুভি!!!!!!!!!!

৬| ২৭ শে নভেম্বর, ২০১৪ রাত ১২:৪২

তাশমিন নূর বলেছেন: কে যেন বলেছিলেন, ইতিহাস নির্ভর সাহিত্য হতে প্রকৃত ইতিহাস খুঁজতে যেয়ো না।
কথাটা হয়তো ঠিক। কারন- সাহিত্য রচনা করতে গিয়ে ঘটনার ঘনঘটা এবং অলংকরণে অনেক সময়ই সঠিক ইতিহাস উঠে আসে না। এজন্য অনেক বিখ্যাত ইতিহাস নির্ভর উপন্যাস বা চলচ্চিত্রই সমালোচনার মুখে পড়েছে। তবে ইতিহাস খুঁজতে যাই বা না যাই, মুভি হিসেবে কিন্তু 'দি রিডার' অসাধারণ একটি মুভি। আপনার রিভিউ এর মতই সুন্দর।

৭| ২৭ শে নভেম্বর, ২০১৪ ভোর ৫:৫৯

অপু তানভীর বলেছেন: মুভিটা দেখেছি । বলতে গেলে তখনকার দিনে মুভি বলতে বুঝতাম মারামারি আর চাইনিজ একশানধর্মী মুভি । আমার যতদুর মনে এই দ্যা রিডার মুভিই আমার দেখা প্রথম ড্রামা মুভি !
এক কথায় বলতে হেলে চমৎকার লেগেছিল । তারপর থেকে মারামারির মুভির দিক থেকে আকর্ষন কমে আসে । ড্রামা আর কাহিনী নির্ভব মুভি দেখা শুরু করি !

৮| ২৭ শে নভেম্বর, ২০১৪ সকাল ১০:১০

অপূর্ণ রায়হান বলেছেন: বেশ আগের মুভি ! দেখেছিও অনেক আগে মনে আছে । রিভিউও ভালো হয়েছে ।

শুভকামনা :)

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.