নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি জাতির বোঝা। তবে আমাকে আপনি জাতির ভাতিজাও বলতে পারেন। জাতির কোন উপকার করছি কিনা জানি না। জাতির থেকে কোন উপকার পাইনি এটা বলতে পারি।

জাতির বোঝা

বাংলাদেশের ১৬ কোটি মানুষের সিরিয়াল নম্বর দিলে আমার নম্বরটা পড়বে সবার শেষে । আমি এক জন কামলা। দেশে কোন কাজ পাইনি। পেটের দায়ে বিদেশে কামলা দেই। আমি জাতির বোঝা। জাতি আমাকে কিছু দেয়নি। তবে আমি জাতিকে রেমিট্যান্স দিই।

জাতির বোঝা › বিস্তারিত পোস্টঃ

অস্ট্রেলিয়ায় বাংলাদেশ হাইকমিশনের জায়গাটি যে কোন সময় হাতছাড়া

২৬ শে নভেম্বর, ২০১৩ রাত ৯:৩৯

অস্ট্রেলিয়ায় বাংলাদেশ হাইকমিশনের জায়গাটি যে কোন সময় হাতছাড়া হয়ে যাবে



অস্ট্রেলিয়ায় বাংলাদেশ হাইকমিশনের জায়গাটি হাতছাড়া হয়ে যেতে পারে যে কোনো সময়। টাকার অভাবে কাজ শুরু করা যাচ্ছে না। প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত এটাচমেন্ট থাকা সত্ত্বেও বাংলাদেশ থেকে টাকা মিলছে না জায়গার মূল্য পরিশোধ করতে, এটা দুঃখজনক। কেবল আশ্বাসই পেয়ে আসছি। টাকা পাচ্ছি না। ১ দশমিক ৭ মিলিয়ন ডলারের জন্য আটকে আছে এটা। হাইকমিশনার হিসাবে সবাইকে প্রাপ্য সার্ভিস দেওয়া আমাদের প্রিন্সিপাল। এটা মেনে চলছি।



অস্ট্রেলিয়ায় বাংলাদেশের জন্য রয়েছে অনেক বড় বাজার। রপ্তানিকারকরা ওই বাজার ধরতে পারলে অনেক আয় বাড়বে বাংলাদেশের। এখানে স্টুডেন্টদের লেখা-পড়ার খরচ অনেক বেশি। এ কারণে তাদের ভেবেচিন্তে সিদ্ধান্ত নিয়ে আসতে হবে। ইংরেজিতে দক্ষতা থাকতেই হবে। ড্রাইভিং জানা থাকলে ভালো। আইটিতে প্রশিক্ষণ নিয়ে আসতে পারে। কাজের সুবিধা রয়েছে। ইংরেজি ভালো জানলে সে ভালো করতে পারবে। সেই সঙ্গে পরিশ্রম, সততা ও নিষ্ঠা তাকে সাফল্যে পৌঁছে দিতে পারে। এসব কথা বলেছেন অস্ট্রেলিয়ায় নিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশনার লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মাসুদ উদ্দিন চৌধুরী।



লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মাসুদ উদ্দিন চৌধুরী আলোচিত ও সমালোচিত একটি নাম। বাংলাদেশে তাকে ওয়ান ইলেভেনের নায়ক হিসাবেই বেশিরভাগ মানুষ জানে। অস্ট্রেলিয়ায় তিনি গড়ে তুলেছেন নতুন ইমেজ। সেখানে তিনি সবার কাছেই সফল হাইকমিশনার। তার প্রশংসা সর্বত্র। আওয়ামী লীগের একাংশের সভাপতি ব্যারিস্টার সিরাজ বলেছেন, তার পেছনে লোক লাগানো হয়েছিল যাতে তাকে একটা অপবাদ দেওয়া যায়। এমনকী হাইকমিশনের ভেতরের কর্মকর্তাদের দিয়েও চেষ্টা করা হয়েছে, তবে তা সম্ভব হয়নি। আমরা তাকে সরানোর অনেক চেষ্টা করেছি। প্রধানমন্ত্রীর কাছেও নালিশ করার চেষ্টা করেছি। কোনো লাভ হয়নি। তারা বলছেন, তাকে দেশের একজন জেনারেল হিসাবে যেভাবে জানতেন সেখানে একেবারেই উল্টো। একজন জেনারেল এতটা মানুষের আপন ও কাছের হতে পারেন, এটা তাদের ধারণার বাইরে। বিশেষ করে কেউ বিপদে পরলে বন্ধের দিনেও হাইকমিশন খুলে তাদের সেবা দেওয়ার ঘটনায় তারা বেশ অভিভূত। তার টেলিফোন খোলা থাকে ২৪ ঘণ্টা। সবার ফোনই রিসিভ করেন। অস্ট্রেলিয়ায় বসবাসরত ৮০ হাজার বাংলাদেশি মানুষের কাছে তার জনপ্রিয়তা রয়েছে। তবে বিএনপির একটি অংশের নেতারা তাকে একেবারেই সহ্য করতে পারেন না। তারপরও হাইকমিশনার হিসাবে সেবা নিতে পারেননিÑ এমন কথা কেউ বলেননি। সেবা পাননি এমন অভিযোগও কেউ করেনি। কেউ কেউ বলেছেন, আমরা তার কাছে যাই না। কেন যাব, তিনি তো সরকারি লোক। সরকারের হয়ে কাজ করছেন। বিএনপি চেয়ারপারসনের আত্মীয় হয়েও তিনি কিছুই করেননি। তারা বলেছেন, আমরা তার ওয়ান ইলেভেনের কথা কোনো দিন ভুলবো না, যতদিন না তারেক রহমান সুস্থ হয়ে দেশে ফিরতে না পারছেন। তাদের কাছে তিনি এখনও বিতর্কিত। তবে বিএনপির কিছু নেতা হাইকমিশনার হিসাবে তার কর্মকাণ্ডে সন্তুষ্ট। অস্ট্রেলিয়ায় অবস্থানরত আপামর জনসাধারণের প্রতিনিধি ও নেতারা প্রায় সবাই বলেছেন, হাইকমিশনে গিয়ে ও হাইকমিশনারের কাছে গিয়ে সেবা পাইনি, এমন ঘটনা নেই। তিনি সবার সেবা নিশ্চিত করার চেষ্টা করছেন। এ কারণে আমরা হ্যাপি। পুরনো ইতিহাস ঘেঁটে লাভ নেই। সেখানে বিএনপির যেসব নেতা রয়েছেন তারা তার সমালোচনা করেন। সফলতা স্বীকার করতে চাননি। বলেছেন, যতই সফল হোন তাকে আমরা সফল বলতে পারবো না। কারণ তিনি আওয়ামী লীগের হয়েই কাজ করছেন।



এই যখন অবস্থা, গত ৫ বছরে তিনি কী করেছেন, এটা জানার চেষ্টা করা হয়। অগ্রগতি আদৌ কিছুু হয়েছে কিনাÑ সে চেষ্টাও করা হয়।



অস্ট্রেলিয়ায় নিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশনার লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মাসুদ উদ্দিন চৌধুরী হাইকশিনের কর্মকাণ্ডের ব্যাপারে বলেন, বাংলাদেশের হাইকমিশন এখানে আছে ১৯৭২ সাল থেকে। ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর বিজয়ের পর ১৯৭২ সালের জানুয়ারিতে অস্ট্রেলিয়া আমাদের স্বীকৃতি দেয়। উন্নত বিশ্বের মধ্যে তারাই স্বীকৃতিদাতা প্রথম দেশ। দুদেশের মধ্যে সম্পর্ক স্থাপনের জন্য এখানে আমাদের ও ঢাকায় তাদের হাইকমিশন স্থাপিত হয়। মুক্তিযুদ্ধের সময় সাহায্য করেছে। পারস্পরিক রাজনৈতিক সম্পর্ক অনেক ভালো। তখন থেকে শুরু করে আজ পর্যন্ত এমন কোনো ঘটনা ঘটেনি, যাতে আমাদের সম্পর্কের অবনতি হতে পারে। বরং সম্পর্কটা উত্তরোত্তর গভীরতর হচ্ছে। হাইকশিনার হিসেবে প্রথম দায়িত্ব হচ্ছে অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে বিরাজমান সম্পর্ক বজায় রাখা ও আরো বৃদ্ধি করা এবং নিজ দেশের স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়গুলো দেখা। সঙ্গে সঙ্গে আমাদের আরো কিছু কাজ করতে হয়। কনস্যুলার সার্ভিস গুরুত্বপূর্ণ। পাসপোর্ট ইস্যু, নবায়ন, ভিসা ইস্যু, নো ভিসা রিকয়ারমেন্ট স্ট্যাম্প লাগানো, কাগজ সত্যায়িত করা। আরো অনেক কিছু। মোটামুটি তারা দিনরাত কাজ করছেন। প্রয়োজনে ছুটির দিনেও তারা সেবাদান করেন। সিডনিতে প্রতি মাসেই ছুটির দিনে ক্যাম্প করি। আমার অফিসাররা ছুটি বাদ দিয়েই কাজ করেন। নিউজিল্যাণ্ডেও কাজ করেন। পলিটিক্যাল ডিভিশন রিপোর্ট প্রদান করা ছাড়াও রিলেশনশিপের বিষয়টি দেখাশোনা করে। কমার্শিয়াল উইং ট্রেড ডেভলপমেন্টের জন্য কাজ করছে। আমাদের অ্যাডুকেশন ও ডিফেন্স রিলেটেড কাজ আছে। অনেক মিশনেই এসব উইং আছে, এখানে নেই। তারপরও কাজগুলো করতে হয়। অন্য জায়গায় কালচারাল উইং আছে, আমাদের সেটাও নেই। লেবার উইং বহু দেশের মিশনেই আছে, এখানে নেই। তবে এই উইংয়ের তেমন কোনো কাজ নেই। এখানে যারা এসেছেন তারা সবাই শিক্ষিত।



এখানে স্টুডেন্টের সংখ্যা বেশি। এ জন্য একটি এডুকেশন উইং থাকা দরকার। তিনি বলেন, স্টুডেন্ট ওয়েলফেয়ার একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় বটে। আপাতত আলাদা উইং দরকার নেই। এখানের অফিসাররাই সে বিষয়টা দেখাশোনা করছেন।



পাঁচ বছরের দায়িত্ব পালনকালের সাফল্য আছে কিনাÑ জানতে চাইলে বলেন, সাফল্য বলবো কিনা জানি না, তবে কাজ করছি আমরা এবং আমার টিমের প্রধান উদ্দেশ্য হচ্ছে বাংলাদেশের মানুষের সঙ্গে ভালো ব্যবহার, উন্নত সেবা প্রদান করা। তাদের যাতে উপকার করতে পারি সে চেষ্টাই করি। দেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করতে, সেই সঙ্গে বাংলাদেশের স্বার্থ সংরক্ষণ করতে হবে। বাংলাদেশের মানুষের কীভাবে উন্নতি হয়, কীভাবে তাদের ভালো করা যায় সে চেষ্টাই করছি।



পাঁচ বছরে উল্লেখযোগ্য অনেক কাজ হয়েছে। এরমধ্যে প্রথম হচ্ছে সন্ত্রাসবিরোধী কার্যক্রম যা বর্তমানে বিশ্বের একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। আমরা কেউ সন্ত্রাস চাই না, লালনও করি না। অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে আমরা সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করেছি কাউন্টার টেরোরিজম বিষয়ে। বাংলাদেশের এটাই প্রথম এ সংক্রান্ত এমওইউ। এর আগে বাংলাদেশ কোনো দেশের সঙ্গে এ ধরনের চুক্তি করেনি। এতে দুদেশের সন্ত্রাস দূরীকরনে সব ধরনের বিষয় অন্তর্ভুক্ত হয়েছে।



এর পরই রয়েছে একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ। এটা হচ্ছে ওয়ার্ক অ্যান্ড হলিডে ভিসা। এ সংক্রান্ত একটি চুক্তি আগেই হয়েছিল। তবে বাস্তবায়ন ছিল না। আমি আসার পর তা বাস্তবায়ন করেছি। এতে প্রতিবছর ১০০ জন বাংলাদেশি এক বছরের জন্য এ ভিসার আওতায় এখানে আসতে পারবে। অস্ট্রেলিয়ারও ১০০ জন যেতে পারবে বাংলাদেশে। বাংলাদেশের দুটি ব্যাচ ইতোমধ্যে এসেছে। তারা পড়ালেখা করতে পারবে, অভিজ্ঞতা অর্জন করতে পারবে, ৯ মাস কাজ করতে পারবে। আমি মনে করি এটা অত্যন্ত ইতিবিচক একটি দিক। এই এক বছরে তারা যে অভিজ্ঞতা অর্জন করবে তা ভবিষ্যতে কাজে লাগবে।



বাংলাদেশ থেকে কি কেবল ১০০ জনই এলো নাকি অস্ট্রেলিয়া থেকেও বাংলাদেশে গেছেÑ এ বিষয়ে জানান, এটা ওপেণ। ১০০ জন লিমিট। ১০০ জন যেতে পারে। তবে এখনও তা সম্ভব হয়নি। ১০০ জনের বেশি হবে না। এটা জোর করার বিষয় নয়। অস্ট্রেলিয়ার মানুষ না গেলেও বাংলাদেশের মানুষের জন্য এটা উপকারী হবে। কারণ বাংলাদেশ থেকে অনেকেই আসতে চান। সে কারণে একটা নিয়ম করা হয়েছে। এ জন্য দরখাস্ত করতে হয়। দরখাস্ত করার পর তা যাচাই-বাছাই করে রিকমাণ্ডেশন পাঠায়। এরপর হাইকমিশন ভিসা দেয়। তিনি জানান, কেউ আসতে চাইলে তাকে বাংলাদেশের হোম মিনিস্ট্রির ওয়েব সাইট দেখতে হবে। সেখানে সব তথ্য দেওয়া আছে। বয়স ১৮-৩০ বছর। গ্রাজুয়েট হতে হবে। আইইএলটিএস-এ ৫ দশমিক ৫ পেতে হবে। তাকে অবশ্যই ইংরেজি জানতে হবে, দক্ষ হতে হবে। নাহলে এক বছরেও কিছুই করতে পারবে না।



২০০৬-এর দিকে এই চুক্তি স্বাক্ষর হয়। আমি এসে হোম মিনিস্ট্রিকে পারসু করেছি। এটা বাস্তবায়ন করেছি।



আমরা আরেকটা এমওইউ সাইন করেছি বাংলাদেশি জনগণকে অস্ট্রেলিয়ান টেকনিক্যাল ট্রেনিং স্ট্যান্ডার্ডে শিক্ষিত করতে। অস্ট্রেলিয়ায় টেকনিক্যাল অ্যান্ড ফার্দার এডুকেশন (ট্যাফ) অত্যন্ত জনপ্রিয় ও উপকারী একটি প্রতিষ্ঠান। প্রত্যেকটি রাজ্যেই আছে। অনেক ট্রেডের লোককে তারা এভাবেই প্রশিক্ষিত করে। এ প্রশিক্ষণ শেষে ওই বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনার সুযোগ আছে। ইচ্ছা করলে ওই পেশায়ও কাজ করতে পারে। অস্ট্রেলিয়ায় নিয়ম হচ্ছেÑ স্ব স্ব বিষয়ে সার্টিফিকেটধারী না হলে তিনি সে কাজ করতে পারবেন না। উদাহরণ স্বরূপ- ইলেকট্রিশিয়ানের কাজ করতে হলেও সার্টিফিকেট মাস্ট। সার্টিফিকেট না থাকলে ইন্সুরেন্স তাকে একটি পয়সাও দেবে না। নিয়ম হচ্ছে কাজ করার জন্য যথাযথ যোগ্যতা অর্জন করতে হবে। আমরা চেষ্টা করছি এদের হুবুহু সিলেবাসটা বাংলাদেশের ইন্সটিউটগুলোয় বাস্তবায়ন করার এবং বাংলাদেশে এরা ট্রেন্ড হবে। বাংলাদেশেই এখানকার বিশেষজ্ঞরা প্রশিক্ষণ দেবে, পরীক্ষা নেবে এবং সার্টিফিকেটও দেবে।



এ প্রক্রিয়াটা কবে নাগাদ শুরু হবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা ৪ বছর ধরে চেষ্টা করে যাচ্ছি। গত বছর এমওইউ সাইন হয়েছে। এখানে সব তৈরি। কিন্তু বাংলাদেশের পার্টটি দেখছেন বিএমইটি। তারা সময় নিচ্ছে।



একটা কাজে কেন ৪ বছর সময় লাগবেÑ জবাবে তিনি বলেন, আমাদের তরফ থেকে ২০০৯ সালের শুরুতে প্রপোজাল পাঠিয়েছি। এটা নিয়ে অনেক পারসু করেছি। প্রধানমন্ত্রীকেও বলতে হয়েছে। তিনি কনভিন্সড যে, এটা খুব ভালো কাজ। বর্তমান প্রবাসী কল্যাণমন্ত্রীও গতবছর নভেম্বরে এখানে আসেন। তিনি দেখে খুশি ও সন্তুষ্টি প্রকাশ করে প্রতি বছর এক লাখ বাংলাদেশিকে এই প্রশিক্ষণ দিতে চান। তার উপস্থিতিতেই ডিজি বিএমইটি ও ট্যাফের মধ্যে এমওইউ সাইন হয়। এরপর বিএমইটির তরফ থেকে ডেলিগেশন এসে দেখে গেছে। যতটা দ্রুত করার চেষ্টা করছি পারছি না।



আপনি কি মনে করেন বিএমইটি দ্রুত উদ্যোগ নিলে তা সম্ভব হতো? তিনি বলেন, সেটা অবশ্যই। কারণ এটা মনে রাখা দরকার আমি একটা কাজ কত দ্রুত করতে পারবো। এতে কত মানুষ উপকৃত হবে। সেভাবেই কাজটা করা দরকার। দেশের স্বার্থটাকেই বড় করে দেখতে হবে। আমরা যতটা দ্রুত করার চেষ্টা করছি। ততোটা দ্রুত বিএমইটি করছে না। ত্বরিত পদক্ষেপ যে কোনো কাজের জন্য ভালো। কিন্তু সেটা হচ্ছে না।



আপনি একজন জেনারেল, কাজ করেছেন ভিন্ন পরিবেশে ব্যুরোক্রেটদের সঙ্গে, কাজ করতে গিয়ে আপনার কি মনে হয় আমলাতান্ত্রিক জটিলতা সব জায়গায়ই আছে, তিনি এ ব্যাপারে বলেন, এটা সব দেশেই কম-বেশি আছে। কোনো দেশকে সিঙ্গেল আউট করা ঠিক হবে না। একটা দেশে একেক রকম সিস্টেম। তবে আমি এটাকে জটিলতা বলবো না। একজন আমলা বা ব্যুরোক্রেট যখন কাজ করেন আইন কানুন প্যারামিটার দেখে কাজ করেন। সব বিষয় বিবেচনা করে তারা কাজ করে। এটা তারা করতে পারে কারণ এটা তাদের সিস্টেম। আমরা চিন্তা করি দেশ ও দেশের মানুষের স্বার্থ। এই জন্য ওভাবেই কাজ করার চেষ্টা করি। এর সঙ্গে আমি সিনসিয়ারিটির বিষয়টি যোগ করতে চাই। আমি মনে করি কাজটা যদি দেশের জন্য ভালো হয় তাহলে সেটার উপায় বের করতে হবে কত দ্রুত তা করা সম্ভব।



এগ্রিকারচারাল কোঅপারেশন বিষয়ে আমরা আরো একটা এমওইউ সাইন করতে যাচ্ছি ফিজির সঙ্গে। এটা হলে ফিজি সরকার আমাদের জায়গা দেবে। সেখানে আমাদের বিশেষজ্ঞরা ও জনশক্তি এসে দেশের ইন্টিগ্রেটেড রুরাল ডেভলপমেন্ট মডেল যেটা আমরা অনেক দিন ধরেই ফলো করছি, ওই ধরনের বা উন্নত ধরনের কিছু করবো। এটা সফল হলে কাজ শেষ করে নতুন করে কাজ করতে পারবো। আর তারাও করতে পারবে। এটা তিন বছর ধরে চেষ্টা করে যাচ্ছি। চিঠি চালাচালির পর এখন চূড়ান্ত হওয়ার পথে। একটা প্রকল্প বাস্তবায়ন করার জন্য বিভিন্ন প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে এগিয়ে নিয়ে যেতে হয়। ফিজির পররাষ্ট্র কিংবা কৃষিমন্ত্রী বাংলাদেশ সফর করবেন। এটা হয়ে গেলে আমাদের বিশেষজ্ঞরা ফিজি ভিজিট করবেন এরপর তারা সেখানে দেখে পরিকল্পনা দিবেন এবং তা যত দ্রুত সম্ভব বাস্তবায়ন করা হবে।



আমাদের বিশেষজ্ঞ আছে। আর ফিজির ল্যান্ড আছে। প্রকল্পটা করা সম্ভব হলে আমাদের বিশেষজ্ঞদের সম্পর্কে পৃথিবী জানবে। এটা ক্রপ শেয়ারিং কিংবা প্রফিট শেয়ারিং হতে পারে। এমওইউ গত কয়েক বছরে এই কয়টা হয়েছে।



গত ৫ বছরে বাংলাদেশের বাণিজ্য ও ব্যবসায়িক ক্ষেত্রে সাফল্যের কথা বলতে গিয়ে তিনি বলেন, ২০০৭ -২০০৮ সালে আমাদের ৪৬ দশমিক ৪ মিলিয়ন ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়েছে অস্ট্রেলিয়ায়। ২০১২-১৩ এসে তা হয়েছে ৫০৮ মিলিয়ন ডলার। প্রায় ১০০০ গুণ বেড়েছে। ডেটাটা এ জন্য বললাম যে, আমলাতান্ত্রিক জটিলতার কথা যেহেতু এসেছিল তাই বলবোÑ যদি এতই জটিল হতো তাহলে এটা সম্ভব হতো না। আমলাতান্ত্রিক জটিলতার বিষয়টি আমি অস্বীকার করছি না। তারপরও এরমধ্যে ১০০০ গুণ ব্যবসা বেড়েছে। তাদের সহযোগিতা না হলে সেটা বাড়তো না।



ব্যবসার বৃদ্ধির কারণ সম্পর্কে তিনি বলেন, ব্যবসা বাড়ার পেছনে আমরা অনেক কাজ করেছি। অস্ট্রেলিয়ার প্রায় সব বড় ব্যবসায়ী ও আমদানিকারক যারা আছেন তাদের সঙ্গে কথা বলেছি। বৈঠক করে বোঝানোর চেষ্টা করেছি। এজেন্ট, রিটেইলার, ব্যবসায়িক অ্যাসোসিয়েশন ও বিভিন্ন চেম্বারের নেতাদের সঙ্গে কথা বলেছি। তাদের বোঝানোর জন্য চেষ্টা করছি এবং বলেছি, এটা করলে তার লাভ কোথায়। সঙ্গে সঙ্গে বাংলাদেশি ব্যবসায়ীদেরও বোঝানো ও উদ্বুদ্ধ করার চেষ্টা করছি।



৫ বছর আগে যখন আমি এটা শুরু করি তখন অনেকেই জানতো না এখানে বাংলাদেশের পণ্য আমদানি করলে অনেক সুবিধা আছে। এটা শুল্কমুক্ত। আমাদের কর দেওয়া লাগে না। ডিউটি ফ্রি হলে জিনিসের মূল্য অনেকটা কমে যায়। চীনকে ১০ ভাগ কর দিতে হয়। আমাদের কোয়ালিটি খুব ভালো, তাদের এ ধারণা ছিল না। এখানে মানুষকে বোঝাতে হয়েছে পাশাপাশি বাংলাদেশের ব্যবসায়ীদেরও বোঝাতে হয়েছে। আর গত চার বছর ধরে অংশগ্রহণ করছি অস্ট্রেলিয়ান সোর্সিং ফেয়ারে। চার বছর ধরে বাংলাদেশ অংশ নিচ্ছে। মেলায় বাংলাদেশের বিভিন্ন স্টল থাকে। সুবিধা হলো এ সময় নিউজিল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়ান আমদানিকারকরা ও তাদের প্রতিনিধিরা এখানে আসেন। তারা এসে দেখতে পারেন কোন দেশের পণ্যের মান কেমন। তুলনা করতে পারেন মূল্য কেমন। এই দুই ক্ষেত্রে বাংলাদেশ এক নম্বরে থাকে। এটা একটা কারণ ব্যবসা বাড়ার। এছাড়াও বিভিন্নভাবে রপ্তানি বাড়ানোর চেষ্টা করছি। আরো পারতাম। যদি আমরা রপ্তানি বাড়ানোর জন্য বিভিন্ন ব্যবস্থা নিতে পারতাম। এ জন্য অস্ট্রেলিয়ার বিভিন্ন রাজ্যসহ অকল্যান্ড, নিউজিল্যান্ড ও ফিজিতে বাংলাদেশের পণ্যের প্রসার ঘটানোর জন্য প্রচারণা চালানো যেত। এটা আমরা করতে পারলে ভালো হতো। এই জন্য ফান্ড প্রয়োজন। ফান্ড না থাকায় আমরা এখন সেটা করতে পারছি না। ফান্ড পাওয়ার চেষ্টা করেছি। এখনও সাড়া মিলেনি। এটা বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ও করতে পারে। আমাদের ফান্ড দিলে ভালো হবে।



এর জন্য ফান্ডের বিষয়ে জানতে চাইলে বলেন, খুব বেশি হবে না, কারণ একদিনের জন্য একটি হল ভাড়া করতে হবে। পণ্যের জন্য ডিসপ্লের ব্যবস্থা করতে হবে। আমদানিকারকদের আমন্ত্রণ জানাতে পারবো। অন্যদিকে বাংলাদেশ থেকেও রপ্তানিকারকরা এলে দুই পক্ষের মধ্যে আলোচনা হলো। বিভিন্ন চেম্বারের লোকজনকে আমন্ত্রণ জানাবো। আমরা উপস্থাপন করতে পারবো কী কী সুবিধা আছে আমাদের পণ্য আনলে। এটা করা হলে সচেতনতা বাড়বে। প্রতি বছর যদি তিনটা শহরেও করতে পারি তাতে অনেক কাজ হবে। এটা করতে সর্বোচ্চ বছরে ১৫-২০ হাজার ডলার খরচ হবে। আপাতত তা হলেই হয়। এটা ভালো উদ্যোগ। এই টাকার জন্য আমরা অনুরোধ করেছি।



অস্ট্রেলিয়ার বাজার সম্পর্কে ব্যবসায়ীদের বদ্ধমূল ধারণা হচ্ছে বাজার ছোট। ভৌগোলিক অবস্থানের কারণেও অনেকেই আসতে আগ্রহী হয় না। এ সমস্যা কীভাবে কাটানো সম্ভব জানতে চাইলে বলেন, আমরা ভৌগোলিক অবস্থানের পরিবর্তন করতে পারবো না, আবার মানুষও বাড়াতে পারবো না। বাজারটি ছোট হলেও ভালো বাজার, এটা মাথায় রেখেই কাজ করতে হবে। আমি নিয়মিত রপ্তানিকারকদের বলি। আমি যখন এখানে আসার জন্য নির্বাচিত হই তখন তাদেরকে বোঝানোর চেষ্টা করেছি। আমাকেও সবাই একই কথা বলতেন। তবে এখন ওই ধারণাটা অনেক বদলেছে। এ বদলানোটার কারণ হচ্ছে এ বিষয়ে প্রমোশন হয়েছে। অস্ট্রেলিয়ার যে কোনো পোশাকের দোকানে গেলে বাংলাদেশের পোশাক পাওয়া যায়। এ কারণে ধন্যবাদ পেতে পারে আমাদের রপ্তানিকারকরা। আমি বললেও কাজ হবে না যদি না তারা লাভজনক মনে না করেন। তাদের আগ্রহ থাকতে হবে। আমরা মধ্যখানে কাজ করি। সেখানে আমাদের অবদান কমই। ১-২ ভাগ হতে পারে। আমরা চেষ্টা করছি রপ্তানির ভলিউম বাড়াতে। তা যদি ভবিষ্যতে বাড়ে তখন দেখা যাবে চট্টগ্রাম থেকে একটা শিপ লোড হয়ে সিডনি এসে আনলোড হবে। এখন তা হচ্ছে না। এখন সিঙ্গাপুর হয়ে আসছে। সেখান থেকে মেলবোর্ন কিংবা সিডনি আসছে। রপ্তানি বাড়লে সুবিধাও অনেক বাড়বে।



এখন মার্কেটে গার্মেন্ট পণ্য বেশি আসে। এছাড়াও আছে পাটজাত দ্রব্য, ফার্টিলাইজার, ফুড আইটেমসহ বিভিন্ন পণ্য। গ্রোসারিও ভালোই আসে। তবে আরো বেশকটির সম্ভাবনা আছে। এরমধ্যে একটি হচ্ছে ওষুধ। এখানে ওষুধ রপ্তানি করা অত্যন্ত কঠিন কাজ। স্কয়ার ও বেক্সিমকো ফার্মা এটা নিয়ে কাজ করছে। আমার জানা মতে, দুটি কোম্পানিই এখন প্রায় চূড়ান্তপর্যায়ে রয়েছে। আশা করছি তারা সহসাই পণ্য বাজারে পাঠাতে পারবে। ওষুধের বাজার অনেক বড় ও লাভজনক।



আর একটা বড় মার্কেট আছে সিরামিকের। এটার অনেক বাজার আছে। বিশেষ করে বোন চায়না। আমার মনে হয় এই পণ্য তৈরিকারকরা পণ্য পাঠাতে পারেন। চাহিদাও ভালো। তারা যদি উদ্যোগ নেন তাহলে মার্কেট ধরতে পারি। আমাদের পণ্য অনেক ভালো। বিশেষ কয়েকটি কোম্পানি রয়েছে তারা ভালো পণ্য উৎপাদন করছে। এর মধ্যে শাইনপুকুর, মুন্নু সিরামিক, ফার সিরামিক খুব ভালো করছে। আরো নতুন কোনো কোম্পানি আছে কিনা তা আমার জানা নেই।



বাংলাদেশের পণ্যের বাজার টাকার অংকে কেমনÑ জানতে চাইলে তিনি বলেন, এখন হচ্ছে ৫০৯ মিলিয়ন ডলারের পণ্য রপ্তানি হচ্ছে। তা কমই। এই বাজার অনেক বড়। খোলা আকাশের মতো। এখন কতটা ধরা যাবে সেটা হচ্ছে বিষয়। এখানে ছোট্ট একটা উদাহরণ দেই। এখানে শপিং ব্যাগের প্রচুর চাহিদা রয়েছে। এনভায়রমেন্ট ফ্রেন্ডলি মানুষ বেশি। চটের ব্যাগ রপ্তানি করা গেলে লাভ করা যাবে। কারণ এখানে চার বিলিয়ন ডলারের ব্যাগের বাজার রয়েছে। এর ২৫ ভাগও ধরতে পারলে দেশে দশটা জুট মিল চলতে পারে। এখানে পাটমন্ত্রী, বিজেএমসির চেয়ারম্যানও এসেছেন। এই বাজার ধরার জন্য জুটের পণ্য রপ্তানিকারকদের আগ্রহ থাকা দরকার। বিজেএমসিও কাজ করতে পারে। আমরা সব ধরনের সহায়তা করবো।



কোয়ালিটি অনেক সময় ধরে রাখা সম্ভব হয় না বলে অভিযোগ রয়েছে এটাকে কি বলবেন, এই বিষয়ে বলেন, কিছু সমস্যা থাকতে পারে। তবে সেটা কাটিয়ে উঠতে হবে। সময় লাগবে না।



‘ট্রেড ইন ব্যালেন্স’ বলে একটা কথা বলা হয় যা অস্ট্রেলিয়ার বেলায় অন্য। ২০০৭-২০০৮-এ আমরা ১৪ ভাগ রপ্তানি করেছি ৮৬ ভাগ আমদানি করেছি। এবার হয়েছে উল্টো আমরা ৫১ ভাগ রপ্তানি করেছি আর আমদানি করেছি ৪৯ ভাগ। এটা খুব বড় সাফল্য।



স্টুডেন্টের প্রসঙ্গে তিনি বলেন, অস্ট্রেলিয়ায় স্টুডেন্ট আসতো ১৯৯০ এর দিকে বেশি। কয়েকটা কারণে বাংলাদেশিরা এটাকে প্রাধান্য দিতো এক হচ্ছে ডিসটেন্স। ইউরোপ ও ইউএসএ-এর তুলনায় বাংলাদেশ থেকে এর দূরত্ব কম। দ্বিতীয় হচ্ছে আবহাওয়া ভালো। অনেক জায়গা আছে বাংলাদেশের মতো আবহাওয়া। তৃতীয় ছিল অস্ট্রেলিয়ার কারেন্সি তখন তুলনামূলক সস্তা ছিল এই জন্য খরচ কম পড়তো। তবে গত কয়েক বছর ধরে অস্ট্রেলিয়ার ডলার এ্যাপ্রিশিয়েট করতে করতে ইউএস ডলারের চেয়ে বেশি স্ট্রংগার হয়ে গেছে। এখন খরচের ব্যাপারটি বেড়ে গেছে। কিছু দিন আমাদের স্টুডেন্ট কম আসার কারণ ছিল আমাদের স্টুডেন্টদের অ্যাসেসমেন্ট লেভেল ফোর-এ নিয়ে গিয়েছিল। ভিসা অ্যাসেসমেন্ট লেভেল ফোরে নিয়ে যাওয়ার পর এটা আমরা অনেক চেষ্টা করে, লবিয়িং করে সেটাকে থ্রিতে এনেছি। ফোরে থাকলে সমস্যা হয়। কারণ ফোরে থাকলে ফিনান্সিয়াল যে ব্যাপারগুলো থাকে তা বাংলাদেশের অনেক পরিবারের পক্ষে ফুলফিল করা সম্ভব হয় না। সেটা একটা বড় কারণ স্টুডেন্ট কমার। গত দুই বছর কম এসেছে। ২০১২ সালে এপ্রিলে অ্যাসেসমেন্ট লেভেল ক্যাটাগরিতে থ্রিতে আনা হয়েছে। এখন আবার স্টুডেন্ট বাড়ছে।



তবে অস্ট্রেলিয়ায় ডলারের বিষয়টি ইউএস ডলারের সঙ্গে প্রায় সমান সমান। এখানে খরচও অনেক বেশি। আমেরিকার তুলনায় বেশি। এখানে বাসাভাড়া থেকে শুরু করে গ্রোসারির মূল্য বেশি। বসবাসের খরচও বেশি। টিউশন ফির পাশাপাশি এসব খরচও অনেক বেশি। এখানে একজন স্টুডেন্টকে আসার পর সপ্তাহে বিশ ঘণ্টা কাজ করতে দেওয়া হয়। কিন্তু এটা আমি স্পষ্ট করেই বলবোÑ কোনোভাবেই একজন স্টুডেন্টের পক্ষে মাত্র ২০ ঘণ্টা কাজ করে টিউশন ফি, থাকা, খাওয়ার সংকুলান করা সম্ভব নয়। একটা স্টুন্ডেন্টের সাপোর্ট লাগে পরিবারের। বছরে একজন স্টুডেন্টের ২২ হাজার থেকে ৩০ হাজার ডলার প্লাস টিউশন ফি, প্রতি সপ্তাহে বাসাভাড়া খরচ ২০০-২৫০ ডলার। খাওয়া ১৫০-২০০ ডলার। বাইরে থাকলে তো আরো খরচ। সরকারের তরফ থেকে কি এখানে উচ্চ শিক্ষিতদের বৃত্তি দেওয়ার কোনো সুযোগ তৈরি হতে পারে, জানতে চাইলে বলেন, এটা সম্ভব নয়। সরকারের পক্ষে এদেশে বৃত্তি দিয়ে পাঠানো সম্ভব হবে না। বরং এদেশ থেকে যে সব বৃত্তি দেওয়া হয় তাতে তো স্টুডেন্টরা আসছে। আর সরকার চাইলে বৃত্তি লিমিট একটা নম্বরে দিতে পারে। খুব ব্রিলিয়ান্ট হলে তা সম্ভব। তবে এখানে এখন ৮ হাজার স্টুডেন্ট আছে। এর ১ ভাগকেও সরকারের পক্ষে বৃত্তি দেওয়া সম্ভব হবে না। আন্ডারগ্রেডে সম্ভব হবে না। পোস্ট গ্রেডে সরকার বৃত্তি দিচ্ছে। তবে তা করবে কিনা সরকার জানে।



বেশিসংখ্যক স্টুডেন্ট আসার পথ সুগম করার জন্য কাজ করেছে হাইকমিশন। আমরা লেভেল কমিয়ে উদ্যোগ নেওয়ার পরই এখন বেশি আসা সম্ভব হচ্ছে। আমি প্রয়োজনীয় সব জায়গায়ই স্টুডেন্টের বিষয়টি নিয়ে কথা বলি। এখানে স্টুডেন্টের আসার ক্ষেত্রে আরো একটি সমস্যা হচ্ছে আইএলটিএস রিকয়ারমেন্ট। এটা ইউনিভার্সিটি ও সাবজেক্ট ওয়ায়েজ ভেরি করে। এখন ৬-৭ পর্যন্ত লাগে। আমাদের এখানে স্টুডেন্টের মধ্যে ইংরেজিতে দুর্বলতা একটি বড় কারণ। এখানে আসার আগে ইংরেজিটা ভালো করে রপ্ত করে আসতে হবে।



যারা আসছেন তারা উচ্চশিক্ষা নিয়ে বেশিরভাগই দেশে না ফিরে অস্ট্রেলিয়ায় থেকে যাচ্ছেন। এতে অনেকেই মনে করেন ব্রেইন ড্রেন হচ্ছে। হাইকমিশনার অবশ্য তা মনে করেন না। তিনি বলেন, এটা পৃথিবীর জš§লগ্ন থেকে হয়ে আসছে। আগেও ছিল এখনও আছে। আমি বলি এভাবে যে, তাদের জন্য সুযোগ তৈরি করতে হবে। এখন সুযোগ সীমিত বলে অনেকেই ফিরে যাওয়ার কথা ভাবছেন না। মনে করে দেশে গিয়ে তো ভালো বেতনে ভালো চাকরি পাবে না। এখানে অনেক বেশি আরামের জীবন। বেতন বেশি। সুযোগ-সুবিধাও বেশি। তবে সুযোগ হলে হয়তো ফিরে যাবেন। আমি এটাও মনে করি একজন মেধাবী সে যেখানেই থাক না কেন তার অবশ্যই দেশের জন্য কিছু না কিছু করা দরকার। এটা তার দায়িত্বও।



বাংলাদেশ সরকার দেশে এখন বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়ের শাখা করার সুযোগ দিতে যাচ্ছে। এ জন্য নীতিমালা, বিধিমালাও চূড়ান্ত করা হয়েছে। তাহলে অস্ট্রেলিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের শাখা হতে পারে কিনাÑ এই প্রসঙ্গে বলেন, আমি তো তাদের সঙ্গে কথা না বলে বলতে পারবো না। বাংলাদেশের মার্কেটটা যে কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য আকর্ষণীয়। ১৬০ মিলিয়ন লোক আছে। ওই মার্কেটে যাওয়ার জন্য যে কেউ চেষ্টা করবে এবং ওটা লাভজনক মার্কেট হবে। এখানে অনেকগুলো বিশ্ববিদ্যালয় আছে। তারা বাংলাদেশে তাদের মার্কেটিং করার জন্য অফিস করে ও লোকজন যায়। তবে কেউ ক্যাম্পাস করবে এ ব্যাপারে এখনও আলোচনা করেনি। কেউ করলে আলোচনা হতে পারে। কেবল অস্ট্রেলিয়া নয়, বিশ্বের অনেক দেশের বিশ্ববিদ্যালয়ই বাংলাদেশে শাখা খোলার ব্যাপারে উদ্যোগী হবে বলে আমি মনে করি। এটা হলে খারাপ হবে না। কারণ এখন তো কেউ বিদেশে পড়তে গেলে পুরো টাকা বাইরে চলে যাচ্ছে। দেশে বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস হলে স্থাপনা হলে টাকাটা দেশে থাকবে। এটা একটা ভালো দিক।



বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো তাদের ব্যবসা নষ্ট হয়ে যাবে এই আশঙ্কায় বিরোধিতা করছে বলে আটকে আছে। তিনি বলেন, আমরা আসলে এটা জানি না। আমি মনে করি কোয়ালিটি দিয়ে বেঁচে থাকতে হবে। আমি যদি নর্থ-সাউথ ইউনিভার্সিটিতে বেশি সুযোগ পাই বা বেশি ভালো মানের লেখা-পড়া পাই সেটাতেই যাবো। কিন্তু যখন দেখবো তারা তা দিতে পারছে না। তখন আমি বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়ে যাবো। এখানে মানের সঙ্গে কোনো সমঝোতা করার সুযোগ নেই। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে পারলে ভালো করবে। না হলে পারবে না।



হাইকমিশনের ব্যাপারে অনেকেই অভিযোগ করেছেনÑ গত ৫ বছর আগে এমন ছিল যে, এখানে এসে হাইকমিশনারের সঙ্গে দেখা করতে পারতো না। এমন নাকি হয়েছে সিডনি থেকে এসে সকাল ৯টা থেকে বেলা ৩টা পর্যন্ত থেকেও দেখা করতে পারেনি, এখন কি অবস্থা। তিনি বলেন, আমি এ ব্যাপারে কোনো মন্তব্য করতে পারবো না। তবে আমি মনে করি কেউ যাতে হয়রানি না হয়। ক্লায়েন্ট স্যাটিসফেকশন আমাদের এক নম্বর কাজ। আমার অফিসাররা ছুটির দিনে অন্য শহরে গিয়েও সার্ভিস দেয়। এখানেও আমরা ছুটির দিনে অফিস খুলে কাজ করে দেই। আমাদের প্রিন্সিপালটা হচ্ছে জনগণের সন্তুষ্টি। তারা আমাদের কাছে যতখানি প্রত্যাশা করে তার চেয়ে আরো একটু বেশি সার্ভিস দিতে চেষ্টা করি। এটাই আমাদের অ্যাচিভমেন্ট।



আপনার ভবিষ্যৎ প্ল্যান কী?



আমি এর আগে দু-একটি কথা বলি। আমি মানুষকে মোটিভেট করার চেষ্টা করি। তাদের বলি আপনারা এখানে বাড়ি করেছেন, আপনাদের সন্তানরাও স্বাভাবিক কারণেই দেশে ফিরে যাবে না। তবে মায়ের প্রতি আপনার দায়িত্ব আছে। সেই দায়িত্বটা পালন করবেন। এটা আমি বলে বলে তাদের কান ঝালাপাল করে ফেলি। এতে কিছু উপকারও হয়েছে। এখানে অনেকেই কাজ করার চেষ্টা করছে। এখানে ডাক্তারদের একাধিক টিম আছে। তারা ঠোঁটকাটা বাচ্চাদের অপারেশন করে দেশে গিয়ে। এটা তারা ছুটি নিয়ে গিয়ে করছে। মেলবোর্ন থেকে যাচ্ছে। কার্ডিয়াক টিম গিয়ে কাজ করছে। এছাড়াও আরো একটি গ্র“প আছে যারা পা বাঁকা হয়ে যেসব শিশু জš§ নেয় তাদের জন্য কাজ করছে। অপারেশনের মাধ্যমে পা সোজা করে দেয়। আর একটি সংস্থা আহছানিয়া মিশনের ক্যান্সার হাসপাতালের জন্য কাজ করছে। তারা ফান্ড রেইজিংও করছে। ভোলোর চরফ্যাশনে একটি স্কুলে চালায় ক্যানবেরার বাংলাদেশিরা। এছাড়া অনেকে আলাদা আলাদা করে স্টুডেন্টদের জন্য পড়ালেখার ব্যবস্থা করছে। কিছুদিন আগে নলেজ রেমিটেন্স নামে একটি উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। যাদের যে এক্সপার্টিজ আছে তারা যেখানেই থাকুক না কেন, তারা তাদের নলেজটাকে রেমিট করবেন। বাংলাদেশে কাজে লাগাবেন। এটা নতুন ধরনের আইডিয়া। এটাকে ফর্মাল শেইপ দেওয়া হয়েছে। ঢাকায়ও সাপোর্টিং সেন্টার রয়েছে। আমরা মনে করতাম টাকা পাঠানোটাই বড়। আসলে সেটা নয় অস্ট্রেলিয়া থেকে রেমিটেন্স কমই যায়। তবে আমি মানুষকে বিভিন্নভাবে উদ্বুদ্ধ করার চেষ্টা করছি। তা হচ্ছে তারা যে জ্ঞান অর্জন করেছেন সেটাকে কাজে লাগাবেন। এ ব্যাপারে সচেতনতা তৈরি করার চেষ্টা করছি। এখানে যারা আছেন তারা অনেক শিক্ষিত ও দক্ষ। তাদের অভিজ্ঞতাও অনেক। তাই চেষ্টা করছি তাদের সেই জ্ঞান, দক্ষতা ও অভিজ্ঞতাকে যদি বাংলাদেশের জন্য বিভিন্নভাবে কাজে লাগানো যায়। এটা টাকার চেয়েও অনেক বড় কাজ করবে।



আপনার ধারণা আছে কি পরিমাণ রেমিটেন্স বাংলাদেশে যায় জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটা খুব কম। তিনি বলেন, এখানে যারা থাকছে তারা এখানেই আয় করছে, এখানেই তারা বিনিয়োগ করছে। এটা কি খুব স্বাভাবিক না। তারা এখানে আছে এখানে আয় করছে। এখান থেকে তাদের আর ফিরে যাওয়ার সম্ভাবনা নেই। যদি পরিস্থিতি এমন হয় তাহলে তো তারা এখানেই বিনিয়োগ করবে। এভাবেই ওইসব পরিবারগুলো এখানে বিনিয়োগ করছে। তারা মনে করে আমার ইনভেস্টগুলো এখানেই করবো। সেভাবেই তারা কাজ করছে।



আপনাকে জিজ্ঞেস করেছিলাম আপনার ফিউচার প্ল্যান কী?



আমার ব্যক্তিগত?



দুটোই বলতে পারেন। হাইকশনার হিসাবে প্লাস আপনার ব্যক্তিগত।



হাইকমিশনার হিসাবে আমি যতদিন আছি যে কাজটা করছি এটা করবো। আমি যদি একটা সামান্যতম সুযোগ দেখি যে দেশের জন্য ভালো হবে, ইমেজ বৃদ্ধি হবে, সেটা আমি করি।



ট্যুরিজম প্রমোট করতে চাই। এখানে সুযোগ রয়েছে। এই মার্কেটটা খুব ভালো। এই মার্কেট ছোট হলেও এখানে টাকা অনেক বেশি। তাদের বাংলাদেশে যাওয়ার জন্য আগ্রহী করা গেলে সুবিধা হবে। কেবল টুরিস্ট গেলেই সুবিধা হয়, টাকা আসে তা নয়, তাদের মাধ্যমেই অনেক সময় বাণিজ্য প্রসার হয়। ভোলার চরফ্যাশনে গিয়ে একজন টুরিস্ট সেখানে একটি স্কুল করেছিলেন। এখন সেখানে প্রায় ২শ স্কুল পরিচালিত হচ্ছে। একটা লোক মানুষের মধ্যে শিক্ষার আলো ছড়াচ্ছে। তাহলে এ ধরনের একটি ঘটনা ঘটবে তা হয়তো ভাবা যায়নি। কিন্তু হয়েছে। এভাবে টুরিস্টরা যখন যাবে তখন অনেক দিক থেকেই বাংলাদেশ উপকৃত হতে পারে। ট্যুরিজম প্রমোশনের জন্য কাজ করা দরকার। পর্যটন করপোরেশনের সঙ্গে এই জন্য কাজ করেছেন কি নাÑ জানতে চাইলে বলেন, আমরা তাদের সঙ্গে সেভাবে বসিনি। তবে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে কাজ করি। এ কারণে তাদের আমরা জানাই। বারবারই বলা হয়েছে।



ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার কথা জানতে চেয়েছিলাম সেটা আপনি হাইকশনার হিসাবে বলেছেন, ব্যক্তিগতটা কিন্তু বলেননি বলবেন কি? তিনি বলেন, আগে দেশে ফিরে যাই। তারপর ঠিক করবো কি করবো। আমার মেয়াদ শেষপর্যায়ে। ২৯ ডিসেম্বর ২০১৩-তে আমার হাইকমিশানার হিসাবে চুক্তির মেয়াদ শেষ হবে। দেশে যাবো। দেশে যাওয়ার পর একটু রেস্ট করবো। রেস্টটেস্ট করে এরপর ভাববো কি করা যায়।



জেনারেল আর ডিপ্লোম্যাটের মধ্যে পার্থক্য কেমনÑ এ ব্যাপারে তিনি বলেন, দুইটা দুই রকম। মিলিটারি এনভায়রনমেন্ট ভিন্ন। ডিপ্লোম্যাটের পরিবেশটাও ভিন্ন। দুটাতে চ্যালেঞ্জ আছে। আসল কথা হচ্ছে দেশের ভালো করা। দেশ রক্ষা ও দেশকে সব ধরনের বিপদ থেকে রক্ষা করা। দেশের স্বাধীনতা রক্ষা করা। আর ডিপ্লোম্যাট হিসাবেও দেশের স্বার্থ রক্ষা ও ইমেজ বাড়ানোর জন্য কাজ করতে হয়। সে হিসেবে দুটিই গুরুত্বপূর্ণ। এ কারণে আমি মিলিটারি হিসেবে এনজয় করেছি। এখানে চ্যালেঞ্জ আছে। সেটাও এনজয় করি।



আমি মনে করি বাংলাদেশকে রিপ্রেজেন্ট করি আমি পেইড অ্যাম্বাসেডার। অন্যদের বলি আপনারা আন পেইড অ্যাম্বাসেডর। আপনারা দেশের জন্য কাজ করুন। সেই হিসাবে আমরা কাজ করি। এই জন্য মনে করি সবাইকে কাজ করতে হবে। হাইকমিশনার হিসাবে জনগণের সঙ্গে দূরত্ব রাখতে চাই না। তাদের সব অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়ার চেষ্টা করছি। তাদের অনুপ্রাণিত করার চেষ্টা করি। তারা যাতে আরো বেশি কাজ করতে পারে সে জন্য মনে করি তাদের ইন্সপ্যায়ার করতে হবে। আমি চেষ্টা করি তবে কতটা করতে পারবো জানি না। আমি যেটা চিন্তা করি সেটা বলি।



আপনার পরবর্তী হাইকমিশনার কবে আসছেন ও কে আসছেন, জানেন কি, তার প্রতি আপনার সাজেশন কি থাকবেÑ এ ব্যাপারে বলেন, এখনও জানি না কে বা কবে আসবেন। আমার মেয়াদ শেষে আবারও এক্সটেনশন দেওয়া হবে নাকি, এবারই শেষ। এখনও কিছুই জানানো হয়নি। তবে যেই আসুক যখনই আসুক আমি মনে করি আমার চেয়ে তিনি ভালোই হবেন। আমি যতটা সফল হয়েছি তিনি এরচেয়ে বেশি সফল হবেন। আমি যেখানে শেষ করে যাবো তিনি সেখান থেকে শুরু করে আরো এগিয়ে নিয়ে যাবেন।



আপনি তো ওয়ান ইলেভেনের নায়কদের একজন, আপনাকে ঘিরে অনেক বিতর্ক রয়েছে। দেশে সমালোচিতও বটে। এখানে হাইকমিশনার হিসাবে সফল, যদিও একটি অংশ আপনাকে পছন্দ করে না। তারপরও জানতে চাইছি আপনি কি ভবিষ্যতে দেশে ফিরে গিয়ে রাজনীতিতে জড়াতে চান? তিনি বলেন, এ ব্যাপারে কোনো রকম ইচ্ছে নেই।



আরেকটু ভেবে বলবেনÑ নো নো।



দেশের সেবা কেমন করে করতে চান, এই ব্যাপারে বলেন, কতভাবে করা যায়। আসলে রাজনীতি করার আমার কোনো ইচ্ছে নেই। আমি ওখানে স্যুট করতে পারবো বলে মনে করি না।



এছাড়া আমি ওয়ান ইলেভেন নিয়ে কথা বলতে চাই না। কারণ ওটি একটি পুরনো ইতিহাস। তাই পুরনো ইতিহাস নিয়ে কথা বলতে চাই না।



আগে দেশে যাবো। কিছু করার চেষ্টা করবো। তবে কি করবো এখনও বলতে পারি না। সঙ্গে সঙ্গে দেশের সেবা করতে চাই। এমন কিছু করতে পারি যাতে করে ব্যবসাও হলো দেশের উপকার হলো। দেশের জন্য ভালো নাগরিক গড়ে তোলার চেষ্টা করবো।



তার পরিবারের ব্যাপারে জানতে চাইলে বলেন, বড় মেয়ে পরিবার নিয়ে কানাডায় আছে। এক ছেলে ও ছোট মেয়ে আর আমার স্ত্রী এখানে থাকেন। ছেলে অস্ট্রেলিয়ার ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি থেকে ভালো রেজাল্ট নিয়ে গ্রাজুয়েশন করছে। পাশাপাশি সে খেলাধুলা করছে। এখানের স্টেট টিমে ক্রিকেট খেলে। এখন চাকরিও করছে একটি ব্যাংকে। সব মিলিয়ে সে ভালো আছে। এর বাকিটা সেই বলতে পারবে। মেয়ে আর্কিটেকচারে পড়ছে।



বাংলাদেশের সরকারের তরফ থেকে হাইকমিশনের আর কোনো সহযোগিতা জরুরিভিত্তিতে প্রয়োজন আছে কিনা বলবেন কি, এই ব্যাপারে বলেন, সরকার সব ধরনের সহযোগিতা করছে। না হলে তো হাইকমিশন কাজ করতে পারতো না। তবে আমরা এটা সব সময় মনে করি আমাদের দেশ ধনী দেশ নয়। সীমিত আয়ের দেশ। এই সীমিত আয়ের মধ্যেই আমাদের কাজ করতে হবে। দেশকে উন্নত দেশে পরিণত করার জন্য কাজ চালিয়ে নিতে হবে। আমাদের যে বাজেট আছে তাও ঠিক আছে। এটা বাড়ানো সম্ভব হবে না সরকারের পক্ষে। তবে পণ্যের বাজার বাড়ানোর জন্য কিছু বাজেট বরাদ্দ পেলে তা বাড়ানো সম্ভব হতো। আরো পেলে ভালো লাগবেÑ এমন হলেও সরকারের পক্ষে সম্ভব হয় না।



বাংলাদেশ হাইকমিশনের প্লটের ব্যাপারে তিনি বলেন, বাংলাদেশ হাইকমিশনের জন্য অস্ট্রেলিয়া সরকারের কাছ থেকে ১৯৮৪-এ একটি প্লট পাই। ওই জায়গাটি ১৯৮৪ পেয়েছিল ডিপ্লোমেটিক প্লট হিসাবে। এটার জন্য বার্শিক কিছু টাকা দেওয়া লাগতো। ১৯৯৪ সালে চ্যান্সেরি ভবন করার জন্য প্ল্যান অনুমোদন করা হয়। ১৯৯৯ সালে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী অস্ট্রেলিয়ায় এর ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করেন। ২০০৪ সালে ওই জমির লিজের বয়স ২০ বছর হয়ে গেল। বিশ বছরে স্থাপনা না করার কারণে রেভিনিউ অনেক বেড়ে গেল। রি প্রাইসিং হলো। টাকার অংকটা অনেক বড় ছিল। ওই সময়ে সরকার ঠিক করলো ওটা নেবে না। ফেরত দিয়ে দেবে। এরপর ফেরত দিয়ে দেয়। ওই প্লটটা খালি ছিল। আমি ২০০৮ সালে আসার পর ওই প্লটটি নেওয়ার জন্য আবার চেষ্টা করতে শুরু করি। আমি মনে করেছি যে, ওটা ফেরত দেওয়া ঠিক হয়নি। এই জন্য যোগাযোগ শুরু করি। চেষ্টা শুরু করি। তখন অনেক হাইকমিশন ও দূতাবাস জমিটি নিতে চায়। চেষ্টাও করে। আমি অনেক লবিয়িং করার পর ২০১১ সালে লিখিতভাবে আমাদের দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় এদেশের সরকার। প্রধানমন্ত্রী ২০১১ সালে আবার অস্ট্রেলিয়ায় প্লট পাওয়ার খরবটি জানার পর খুশি হন এবং দ্রুত কাজ করার নির্দেশ দিলেন আমাকে। পররাষ্ট্রমন্ত্রীও বললেন। ১.৭ মিলিয়ন ডলার ওই জায়গার জন্য এখন পরিশোধ করতে হবে। সেই টাকাটা আজ পর্যন্ত পাইনি। মার্চের মধ্যে টাকা দেওয়ার সিডিউল ছিল। কিন্তু চেষ্টা করেও দিতে পারিনি। এখন আমার আশঙ্কা যে কোনো সময় জায়গাটি আমাদের হাতছাড়া হয়ে যেতে পারে। বরাদ্দ বাতিল হয়ে যেতে পারে। এর কারণ হচ্ছে অনেক হাইকমিশনই এটা নিতে চাইছে। অন্যটি হলো টাকা দেওয়ার ডেড লাইনটা পার হয়ে এসেছি। প্ল্যান পাস করা আছে আমরা টাকা দিলে জায়গায় কাজ শুরু করতে পারি। এখন আমরা ভাড়া দিচ্ছি হাইকমিশন ভবনটি। কিন্তু তখন তা দিতে হবে না। এছাড়াও আমরা নিজেদের ভবনটাও করতে পারবোÑ এমন করেই সব করা হয়েছিল। এখন টাকার অভাবে তা সম্ভব হচ্ছে না। এছাড়াও জায়গার টাকা পরিশোধ করে ভবনটি করা গেলে এক দিকে যেমন বাংলাদেশের ইমেজ বাড়বে তেমনি ভাড়ার টাকাও বাঁচবে।



এখন কত টাকা হলে হয় জানতে চাইলে বলেন, এখন ১ দশমিক ৭ মিলিয়ন ডলার হলে আমরা জায়গার টাকাটা পরিশোধ করে কাজটা শুরু করতে পারি।



টাকা কি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কাছে চেয়েছেন, জানতে চাইলে বলেন, হ্যাঁ বারবারই চাওয়া হয়েছে। তারা পজিটিভলি জানাচ্ছেন। এটার সঙ্গে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নিজস্ব এ্যাটাচমেন্ট আছে। আমি জায়গাটি পাওয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রীর এ্যাটাচমেন্টর বিষয়টি হাইলাইট করেছি। সেই হিসাবে পেয়েছি। এরপরও তা হচ্ছে না।



সরকারের শেষ সময়ে এখন কি টাকাটা পাওয়া সম্ভব, তিনি বলেন, এখন টাকাটা পেলে ভালো হতো। আমাকে মৌখিকভাবে ধারণা দেওয়া হয়েছিল গত অর্থ বছরেই পাবো। কিন্তু অপেক্ষা করেও তা পাইনি। গত অর্থ বছরেও দিলো না এই অর্থ বছরেও দিল না।



এখন এটা বর্তমান বাজার দর অনেক বেড়ে গেছে। এটার আয়তন ৫ হাজার স্কয়ার মিটার। এবার হাতছাড়া হয়ে গেলে আর পাওয়া যাবে না।



তিনি বলেন, আমরা প্লটটি নিয়ে ভবন তৈরির কাজ শুরু করতে পারি তাহলে অনেক সুবিধা। দিন যত যাচ্ছে এর মূল্যও বেড়ে যাচ্ছে। আবার নির্মাণ ব্যয় বাড়ছে। জায়গার টাকা পরিশোধ করতে পারলে এরপর ভবনের প্ল্যান বিল্ডারের কাছে দিলে তারা বলতে পারবে এখন ওই ভবন নির্মাণ করতে কত খরচ হবে। আমরা ধারণা আগের চেয়ে তা অনেক বেড়ে যাবে।







মন্তব্য ১ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (১) মন্তব্য লিখুন

১| ২৭ শে নভেম্বর, ২০১৩ সন্ধ্যা ৭:৫৩

মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন বলেছেন:

++

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.