নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

গল্প ছাড়া আর কিছু না

বলতে চাই না। লিখতে চাই।

রাগিব নিযাম

আমি সাদাসিধে, সাধারণ টাইপের মানুষের দলে। তবে রাজনৈতিক অপরিপক্ক্বতা আমার অপছন্দ।

রাগিব নিযাম › বিস্তারিত পোস্টঃ

আতাতায়ী সংঘ vs আতংক সমিতি(গল্প)

২০ শে জুলাই, ২০১৫ রাত ৯:৩১

এক.

প্রায় উড়ে একটা টয়োটা সেলিকা ঢুকলো ডি টাওয়ারের পার্কিং লটে। গাড়িটা এজেন্ট জাহেদের। ট্রাংকে সব ধরণের স্পাই ইকুইপমেন্ট। 0.50 ক্যালিবারের barret m107 স্নাইপার রাইফেল থেকে শুরু করে বেরেটা px4 storm হ্যান্ডগান, পারমানবিক ইলেক্ট্রোম্যাগনেটিক গ্রাউন্ড ক্র‍্যাকার সব সব আছে। তবে সবচেয়ে ভয়ংকর যে অস্ত্রটা আছে তার নাম অক্সিজেন বার্নার।

এসবই কাজের জিনিস যখন একটা গুরুতর মিশনে নামা হয়। বলা যায় না দফায় দফায় যেভাবে আতাতায়ী সংঘের সাথে আতংক সমিতির মারামারি শুরু হয়েছে, এই দুই এক্সট্রিমিস্ট গ্রুপের কারণে এজেন্টস অব ডিকে মাঠে নামতেই হবে। উপর থেকে রণিনকে উড়ে আসতে দেখা গেলো। বড়সড় ধরণের বডি আরমর পরেছে। জায়গায় জায়গায় খোপে খোপে কম্পাউন্ড। দুই বাহুতে বিডি আর্মির উইপন ফ্যাক্টরিতে বানানো হ্যান্ড রকেট লাঞ্চার। প্রাইমারের শক ক্যাপাসিটি ২০৯ স্কোয়ার ফিট। যা মুহুর্তেই দশজন মানুষকে পরপারে পাঠিয়ে দিতে পারে।

আরমিনের হাতে ক্রসবো যাতে তীরের বদলে বুলেট আছে চেম্বারে। সেকেন্ডে পাঁচটা করে 9mm কার্টিজ বেরিয়ে যায়। লম্বা গড়নের মেয়েটাকে ভাইপার বলে আদর করে ডাকে রিশাদ। ওর বিবাহিতা স্ত্রীর পাশেই দাঁড়িয়ে। কোমরের দুপাশে সবসময় দুটো রেমিংটন ঝুলতে দেখা যায়।

এসব বলতে বলতে ক্যারাভানের দরজা খুলে নেমে এসেছে সাদিয়া, যাকে ভিজুয়ালাইজার বলা হয়। যে কোন কিছু আগে থেকে টের পায় বলে তাকে এমন করে ডাকা হয়। আরেকটা নাম আছে। টেক জিনিয়াস। শুধু ওকে না, ওর বাগদত্তা আসিফকেও বলা হয় একই নামে। আসিফের স্পেশালটি হচ্ছে সে হাজার মাইল দুরের যে কোনো পিন পতনের শব্দ টের পায়। এ কারণে তাকে কর্ণ আসিফ ডাকে ইউনিটের লোকেরা।

বরাবরের মতো দলের গোদা শরীফ ওরফে ব্যঘ্রমানব আর সেকেন্ড ইন কমান্ড শামীম দাঁড়িয়ে আছেন ক্যারাভানের পাশেই।

"ওয়েলকাম গাইজ"।

সবাই মিলিত হলো।

ক্যারাভানের ভেতর ঢুকেই সিপ্যানেল চালু করে দিলো আরমিন। সিপ্যানেলটা মূলত তাদের ক্যারাভানের সেন্ট্রাল কম্পিউটারের। এই সুপার কম্পিউটারটা আবার ওয়্যারলেস সিস্টেমে গোটা ডি টাওয়ারের কম্পিউটারগুলোর কর্তৃত্ব রাখে। আর কম্পিউটার গুলি গোটা শহরের মোড়ে মোড়ে লাগানো সিসিটিভি ক্যামেরার সাথে যুক্ত। বুঝতেই পারছেন বাকিটা।

উত্তরা গণভবনে পৌছাতে হবে। প্রধানমন্ত্রীর ঈদ উদযাপন উপলক্ষ্যে গণভবনে দশদিন আগে থেকেই সেন্সর, মেটাল ডিটেক্টর, সিসিটিভি সব বসানো হয়েছে। এখন সেগুলো ঠিক আছে কিনা দেখার জন্য এজেন্টস অব ডিকে তদারকি করতে পাঠানো হয়েছে।

ওদিকে ম্যাকাপ হেডকোয়ারটারে বসে যন্ত্রমানব আর কপিমাস্টার আফনান দেখছেন শহরের কার্যকলাপ। ম্যাকাপ চিফ তানভীর স্যার, যিনি সিগনেচার ল্যাবের প্রতিষ্ঠাতা তিনি আজ নেই অফিসে। প্রহরী ইউনিটের সাথে সমঝোতা করতে গিয়েছেন তাদের দলে ভেড়ানোর জন্য। অবশ্য প্রহরী ইউনিট ম্যাকাপে যোগ দেবে কিনা সন্দেহ। আতাতায়ী সংঘ প্রধান রিফাত শেখের সাথে লড়তে গিয়ে তারা আতংক সমিতির সাথে নাকি মিউচুয়াল আন্ডারস্ট্যান্ডিং এ জড়িয়ে পড়েছে। তাই সমঝোতার প্রটোকল অন্যভাবে ঘুরিয়ে উত্থাপন করছেন।

-আমাদের তো ভারি বিপদে ফেলে দিলেন। তানভীর চিন্তিত মুখে বললেন দ্য গ্লোভ ওরফে হাসমান ফরাজিকে। পাশে মিশু ওরফে রাতের প্রহরী, চাবুকি আর বাজ।
-সম্ভব না ইকবালের সাথে লড়ার। ওর অনেক সাহায্য পেয়েছি আমরা। তবে ইকবাল ছাড়া অন্য ইস্যুতে সাহায্য করবো।
-তবে তাই হোক।

রিফাত শেখ খুব গম্ভীর হয়ে বসে আছে। কার্বন লেজার গানটার ডুপ্লিকেট সম্পন্ন হলেও তার ড্রাইভারকে তার বাসায় মেরে রেখে গেছে ইকবাল। তাই সেও একটা লাশ ফেলে দিলো। ইকবালের প্রাইভেট আর্মির। ডেডবডির উপর একটা কাগজ দেখা গেলো "খেলা শুরু"।

দুই.

-অফিসারস! আপনার জানেন গত দু তিন সপ্তাহ ধরে আতাতায়ী সংঘ ও সায়েন্স এক্সট্রিমিস্ট "আতংক সমিতি" দের মধ্যে খুব রেষারেষি চলছে। তাদের এই ব্যাপারটি যে কোন সময় আশংকাজনক অবস্থায় রুপ নিতে পারে। তাই সে জন্য আমাদের খুব সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। ইতিমধ্যে আমরা আরো দুই তিন প্লাটুন মিলিশিয়ারর জন্য আবেদন করেছি। দেখা যাক কি হয়।

ঘটনা ভেংগে বললেই বোধ করি পাঠককূলের জন্য অনেকটা সহজ হয়ে যাবে। আদতে আতাতায়ী সংঘ স্মাগলিং কভারে একটা "নিজের হাতে আইন তুলে নেয়া" গ্রুপ। এদের প্রধান রিফাত শেখ। প্রচুর প্রভাব প্রতিপত্তি কামাতে হয়েছে তাকে এই অবস্থানে আসতে। আসলে সে এসেছে অন্য কারণে এই লাইনে। তার বাবাকে হত্যা করার কারণে সে সমাজের এই মূলোৎপাটনের সিদ্ধান্তে এসেছে। খুনিকে খুন করে সমাজে ন্যায় প্রতিষ্ঠা তার লক্ষ্য। তাই সে যা করে এইসব স্মাগলিং বা গ্যাং ওয়্যার সবই পরিচ্ছন্ন কর্মসূচি।

অন্যদিকে ফ্রিক ড ইকবাল ও তার সাঙ্গপাঙ্গরা মিলে করেছে আতংক সমিতি। নিজের আবিষ্কার গুলোয় হস্তক্ষেপ হওয়াতে পেটেন্ট হাতছাড়া, তাই রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে উঠেপড়ে লাগা ছাড়া তার এই আতংক সমিতির আর কোন কাজ নাই।
তাই বছরের পর বছর দানব, ভয়ংকর সব অস্ত্র তৈরি করে এসেছে সে। সাথে আরো যারা তার মতো পরিস্থিতির শিকার তাদের নিয়ে শুরু করেছে "আতংক সমিতি"।

কিন্তু কেনো আতাতায়ী সংঘের সাথে আতংক সমিতির সংঘর্ষ? কারণ আতাতায়ী সংঘ চায়না কোনো অপরাধী গোটা দেশে মাথা চাড়া দিয়ে উঠুক। তারা চায় না কেউ জনমনে আতংক সৃষ্টি করুক। বস্তুত এই জায়গায় আতংক সমিতির অনেকেই ডাকাতি, ব্যাংক লুটের সাথে জড়িত। তাই এই দুই সংগঠনের মধ্যে চরম বৈষম্য বিদ্যমান।

তখন বর্ষাকাল পুরোপুরি এসে গিয়েছে। মল, ভবন গুলির নিচে মানুষের জটলা। যারা ভুল করে ছাতা আনেনি বাসা থেকে, বৃষ্টিতে না ভেজার জন্য সবাই গাড়ি থেকে নেমে দৌড়। স্বভাবতই এই সময়টায় মানুষ শপিং মলেই আশ্রয় নেয়। আর তাই দোকান মালিকদের হাক ডাক বেড়ে যায়। বসুন্ধরার সিনেপ্লেক্সের কাউন্টারের ভেতর টাকা গুনে যাচ্ছে এক কর্মী। কখন যে পিস্তলের নল কাউন্টারের ভেতর দিয়ে তার চোখ বরাবর স্থির হয়েছে খেয়ালই করলো না। দেখেই হাউ করে উঠলো।
-আতংক সমিতি বুঝতেই পারছো?!
-খোদার গজব পড়ুক তোদের উপর। মানুষের কষ্টের টাকা ভাগে মেরে দিয়ে চলে যাবি, ভাবতে লজ্জা লাগে না?
-ঝটপট টাকা ব্যাগে ভরাও। কোনো ভাবের কথা না।

টাকাগুলো ব্যাগে ভরিয়ে দিতেই অবিশ্বাস্য গতিতে কাচ ভেংগে লাফ দিলো হাইজ্যাকার। পায়ের তলায় কি যেনো যান্ত্রিক শব্দ করে চালু হলো। ফ্লাইং কিট। দু শো মিটার পার হয়েছে অমনি জালের মতো কি যেনো এসে প্যাক করে ফেললো। সোজা নিচের দিকে এসে পড়ার আগেই ঝুলে রইলো।

টিভিতে ধরা পড়ার দৃশ্য দেখে ইকবালের মাথা গরম হয়ে আছে। এসব যে রিফাত শেখের কাজ বোঝাই যায়। চার মাস আগে কারবন ডাই অক্সাইড লেজার গান চুরি করার কারণে রিফাত শেখের ড্রাইভারকে খুন করে ইকবালেরই ডান হাত নিশা।

তবে এখন যে পাড়া মহল্লায় রিফাতের লোকজনের সাথে টক্কর লাগতে হবে সেই কথা কারো অজানা নয়। তার উপর উটকো ঝামেলা "এজেন্টস অব ডি" আছেই। সরকারী এই এলিট গোয়েন্দাগ্রুপ তো তার জনম শত্রু। চাইলেই তো আর সিধে হওয়া যায় না। আবার শোনা যাচ্ছে ম্যাকাপ(মেটাহিউম্যান আ্যন্ড কমান্ডো আ্যলায়েন্স প্রজেক্ট) এর "রেড ব্যাটেলিয়ন" নাকি তৎপর হয়ে মাঠে নামছে।

সেফ হাউজে হাইড হয়ে থেকে আর কতদিন? তাই একটা আতুরঘর বানাতেই হচ্ছে। সব উদ্ভট ধরণের দানব বের হবে আর একদিকে নিজের রাষ্ট্র তৈরিতে ব্যস্ত থাকবে ইকবাল।

-নিশা!
-স্যার! দেখতে ষোড়শী লম্বাটে ধারালো শরীরের মেয়ে নিশা। আকর্ষণীয় কোমর আর ভরাট বুক দেখার পর যে কোন পুরুষ তার চোখ দ্বিগুন বড় করে মোহাবিষ্ট হয়ে থাকতে পারবে।

"যা বোঝার বুঝে ফেলেছি ডক্টর"।
একটা ক্রুর হাসি দিয়ে বুঝিয়ে দিলো সে, কিছু একটা ঘটতে যাচ্ছে।

তিন.

-স্ট্যান্ডবাই। এই বাস কিডন্যাপড করা হলো।
-আফনে কেডা?! আফনেরে তো চিনলাম না বাই! পান চিবানো বন্ধ করে তাকিয়ে আছে আগন্তুকের দিকে। মিরপুরে এমন ঘটনা বেশ দেখা যায় না।
-আমি নূর চৌধুরী। নতুন আতংক। গট ইট?! গাড়ি এখন যেখানে নিতে বলবো সেখানে নাও।

খবর চাউর হতে দেরি হলো না। এজেন্টস অব ডি হুট করে ডিসিশন নিয়ে ফেললো রেস্কিউ করবে। রিশাদ আরমিন তৈরি হয়ে নিলো। ততোক্ষণে রণিন আকাশে উড়াল দিয়েছে। আসিফ সাদিয়া টেক সাপোর্ট শুরু করে দিলো।
-গাড়িতে রিফাত শেখের মেয়ে আছে। শামীম চুইংগাম চিবুতে চিবুতে জায়ান্ট স্ক্রীণের দিকে তাকালেন। বাঘা শরীফ ভ্রু কুচকে আছেন।
-আপনি কেমনে জানলেন?
-ওটা স্কুল বাস আর ক্লাস টেন পড়ুয়া সায়ফা শেখ প্রতিদিনই ওটা দিয়ে আসা যাওয়া করে। নির্বিকার শামীম।
-ড্যাম ইট! নেটওয়ার্ক হ্যাকড! আসিফ ধাম করে ডেস্কে বাড়ি দিলো।
-মোবাইল চলে তো। তথ্যমানব? সাদিয়া ঘুরে বসলো।
-গ্রেট আইডিয়া! কল দাও ওকে রিকভারের জন্য। আসিফ আদেশের সুরে বললো মনে হলো।
-সুন্দর করে বলো। উই আর আ্যসোসিয়েটস। সাদিয়া নাক সিটকে দিলো।
-দয়া করে তথ্যমানবকে কল দিন।

ড. ইকবাল মনিটরিং করছেন গোটা শহর। নূর চৌধুরীকে লাগিয়ে দিয়েছেন কিডন্যাপিং এর কাজে। ওদিকে নিশা ফ্রিক প্লান্টে আছে। ভয়াবহ কান্ড কারখানা চলছে সেখানে। একটার পর একটা ভয়ংকর চেহারা আর বিপুল ভয়াবহ শক্তির অধিকারী মানুষ বানানোর কাজ চলছে। লিকলিকে চেহারা ছোকড়া মেশিন দিয়ে বের হলো ষন্ডা মার্কা শরীর নিয়ে। দেখলেই যেনো গা হাত পা কেপে উঠে।
-জাকুয়া, নিশা মিট মি ইন চেম্বার। ড. ইকবাল ইন্টারকমে বলে উঠলো।
-স্যার। দ্রুতপদে নিশা এসে দাঁড়িয়েছে। পেছন পেছন জাকুয়া।
-নূর দখল নিয়েছে। এজেন্টস অব ডি পিছু নিয়েছে।
-এখন প্ল্যান চোপাট হওয়ার ভয়?
- না সেটা না। আমি ওদের টেক নেটওয়ার্ক ডিসেন্ট্রালাইজ করে দিয়েছি। কিছু করতে পারবেনা ওরা।
-কি করে বিশ্বাস করবো? আমি তো দেখছি ওরা প্রক্সি চালু করে দিয়েছে। আপনার সেফটি নিশ্চিত করুন। নিশা নির্বিকার হয়ে স্ক্রীনের দিকে তাকিয়ে রয়েছে।
-এটা কি করে সম্ভব?! আমি নিজের চোখে দেখেছি আইটির কমল ওদের হ্যাক করেছে। তাহলে...
-ওদের জিনিয়াস কেউ আছে। নিশা আবারও সহজসিদ্ধ উত্তর দিলো।

-ভাগ্যিস তথ্যমানব কাজট করতে পেরেছে। সাদিয়া দাত বের করে হাসলো।
-কেমনে পারে? সব নাকি বাইনারী টেলিপ্যাথি। যদি আঙ্গুলই না চালালে তাহলে সব যোগাড়যন্ত্র মগজের ইশারায়। ওকি হোম ডেলিভারি অর্ডার করে মগজ দিয়ে?! বার্গারের বাক অর্ডার করাতে হবে।
-আসিফ ভাই ধুররু খালি মশকরা করেন। লাউডস্পিকারে তথ্যমানব বলে উঠলো।
-ওকে গাইজ। লেট'স বি সিরিয়াস। নূর চৌধুরী জাতিসংঘ মিশনে ছিলো। দুর্নীতি ও নারী কেলেংকারির কারণে তাকে সেনাবাহিনী থেকেই বহিষ্কার করা হয়। তবে তার কমব্যাট ব্যাকগ্রাউন্ড এতো শক্ত যে ইকবাল তার সুযোগের সদ্ব্যবহার করে দলে ভিড়িয়ে নেয়।
-এখন তো অসম্ভব একটা ব্যাপার এই উদ্ধার করা।
-দেখা যাক।

রিফাত শেখ গম্ভীর মুখে বসে আছেন। বাংলাদেশের সর্বকনিষ্ঠ আন্ডারওয়ার্ল্ড লর্ড। হাতের আ্যাশট্রে জোরে ছুড়ে মারলেন কাচের গ্লাসডোর বরাবর। ঝনঝন শব্দে ভেঙ্গে পড়লো।
-আমি ইকবালের ঘাটি গুঁড়ে দেবো। আই প্রমিজ ইকবালকে মুছে দেবো দুনিয়া থেকে।

চার.

-শরীফ চেজ বিগিন্স। রান লাইক রকেটহেড। বাস ৮০ স্পীডে চলছে। সো বি কেয়ারফুল।
-ওকে স্যার। দেখতেছি।

দুই পায়ে রোলার স্কেট পড়েছে রিশাদ আর আরমিন। ওদিকে আকাশে উড়ছে রণিন। রেগুলার সাপোর্ট থেকে ডিরেকশন পাচ্ছে সে। চোখে ফাইবার গ্লাস ২.০। এই গ্লাসের ভার্সনে বেশ পরিবর্তন এসেছে। খুব বেশি না টার্গেট ফাইন্ড করতে এটার সাথে গুগল ম্যাপকে আ্যড করা হয়েছে। তবে এখানে শ্যুট করতে রণিনের কোনো ভুমিকা নেই। সে এই মুহুর্তে স্কাউট এজেন্ট।
-শরীফ ভাই নামলাম।

সাইইইইই করে দুই জোড়া পা রকেট স্কেটারে করে কিডন্যাপড বাসটার কাছে চলে গেলো। দুই এজেন্ট দুই পাশে। রিশাদ ও আরমিন দুইজনই মাথা নিচু করে করে পৌঁছে গেছে। আরমিন ডোরব্রেকার একটা এক্সপ্লোসিভ লাগিয়ে দিলো। ভেতর থেকে দরজাটা বন্ধ।

এক, দুই, তিন।

ভুস করে দরজাটার কব্জা উড়ে গেলো। নূর চৌধুরী ভুত দেখার মতো চমকে উঠলো। আরমিন এক পাশে সরে এলো কারণ রিশাদ কাউন্টার দিবে। ঢুকে তাইকোয়ান্দো স্টাইলে উড়ে গেলো নূরের দিকে। নূর যে মার্শাল আর্ট জানে এটা জানতো না রিশাদ। কাঁধের উপর কোপ পড়তেই মনে হলো কয়েক হাজার টন বোল্ডারের নিচে চাপা পড়েছে। অন্ধকার হয়ে আসলো চোখ মুখ।

জ্ঞান ফিরে আসতে দেখলো তাকে পিছমোড়া করে বেধে ফেলা হয়েছে।
-ওয়েলকাম গেআকহটর। রেস্কিউ মিশন হাহ?!

কানের নিচের দিকে মনে হলো কেউ চামড়া ছিলে মরিচ লাগিয়ে দিয়েছে। দাতে দাত চেপে কষে একটা বিশ্রি গালি দিলো নূর।
-বস দুইটা গাড়ি পাঠান। ওয়ারলেস হেডফোনে ইকবালকে বললো।

আরমিন ওত ছিলো এতোক্ষণ। বাসের পেছন থেকে উঠে ছাদে পজিশন নিয়েছে ততোক্ষণে। রণিন ডিরেকশন দিচ্ছে। এরই মধ্যে ইকবাল বাহিনী পৌছে গেছে দুটো গাড়ি। কিন্তু পেছনে আরো দুটো গাড়ি আসছে। ওরা কারা?
-আরমিন আপু। মিড পজিশনে আছে সে। দুই পাশের জানালা খোলা। ঢুকে যান।
-ওকে।

"বাচ্চারা। আজকে একটা মজার গেম খেলবো আমরা। গানের কলি। সিরিয়াল বাই গাইতে থাকো। ওয়ান, টু, থ্রি।"

নূর এটা বলে মিটমিট করে হাসছে। এমন সময় আরমিন ভেতরে ঢুকে পাঁজর বরাবর লাথি কষে দিলো। ছিটকে দরোজার সামনে চলে এলো নূর।
"বিচ" বলে খেঁকিয়ে উঠতেই নিজেকে আরেক প্রস্থ লাথি খেয়ে আবিষ্কার করলো মাটিতে। আরমিন জানালা দিয়ে বললো "শুয়োর"।

ওদিকে গাড়ি চারটার ভেতরে দুটো রিফাত শেখের আর দুটো ইকবালের। বাসের দুই পাশে অবস্থান নিয়েছে। বাসের ভেতর রিশাদ নিজেকে বাঁধনছাড়া করে ড্রাইভারের কাছে গিয়ে বললো "ন্যাশনাল সিকিউরিটি। স্পীড বাড়ান। গাড়িগুলো যেনো ছুতে না পারে। বাচ্চারা হ্যান্ডেল শক্ত করে ধরো।"

বলতে না বলতে বাস এতো জোরে চলতে শুরু করলো যে পেছনের গাড়িগুলো বাসটাকে ফলো করার দুমিনিটের মাথায় হারিয়ে ফেললো।

"কাম ব্যাক।" ইকবাল নির্দেশ দিয়েছে।

"ইকবালের গাড়িগুলারে ফলো কর।"

মুখে চিকন একটা চিকন ব্যঙ্গের হাসি ফুটিয়ে তুললো রিফাত শেখ। আতাতায়ী সংঘ আর আতংক সমিতির ভেতর এবার তাহলে ভালো যুদ্ধ হবে.....

পাঁচ.

-লেফট!
-আতাতায়ী সংঘের গাড়ি দুটি আতংক সমিতির গাড়িগুলোকে ফলো করে ছুটে যাচ্ছে আতংক সমিতির ডেরায়। ওখানে কি করবে বোঝা যাচ্ছে না। যদ্দুর সম্ভব কোন ধরণের হন্তারক ধরণের কাজ হতে পারে।
-স্যার ফলো করেছি। আতাতায়ী সংঘের একজন বলছে ফোনে।
-গুড। জাস্ট দেখে আয় কই ঢুকে এরা। রিফাত শেখের প্রতিউত্তর।

আশুলিয়ার পর একটু শহর ছেড়ে দুরে কোনো একটা জায়গায় এসে থামলো গাড়ি দুটো। একজন গাড়ি থেকে নেমে হুট করে চাকতির মতো কি যেনো ফেললো। হালকা বেগনি রশ্মি বের হলো তা থেকে। পুরো জায়গাটা হুট করে ২০০ মিটার দেবে গেলো। অনেকটা আন্ডারগ্রাউন্ড পার্কিং এর মতো।
-স্যার এ তো বিশাল কারবার। ফোনে আতাতায়ী চোখে বিস্ময় নিয়ে বলছে।
-জায়গা চিনে রেখেছিস?!
-জ্বি স্যার।
-চলে আয়।


ডি টাওয়ার। আর্মি উচ্চপদস্থ, অতিমানব আর ডিজিএফআই কর্মকর্তা সবাই গোল্টেবিল বৈঠকে বসেছেন। শ্বাসরুদ্ধকর অবস্থা।
-রিফাত শেখ খুব ভয়ংকর মানুষ।
-ইকবাল মনে হয় দুধের সর?!

তর্ক চলছে ডিজিএফআই আর আর্মির ভেতর। সবাই টক্কর দিতে চায়। ইকবালকে নিয়ে প্রথমে ইন্টারেস্ট থাকলেও এখন রিফাতের প্রতি আর্মির কড়া নজর। আর ডিজিএফআই, বরাবরের মতোই ইকবালকে দমিয়ে রাখার আপ্রাণ চেষ্টা করছে। কৃত্রিম মানুষ, দানব দিয়ে নিজের সাম্রাজ্য তৈরি করতে চাইছে যা বাংলাদেশের জন্য থ্রেট। আর রিফাত সীমান্তে তার চোরাচালান নেটওয়ার্ক যেভাবে বিস্তার করেছে তাকে দমিয়ে রাখাটা জরুরি মনে হচ্ছে।
-থামুন আপনারা। জিওসি তানভীর হাতের ইশারা করলেন।
"দেখেন দুজনই হুমকি দেশের জন্য। তবে এই মুহুর্তে আতংক সমিতি আই মিন ইকবাল আমাদের জন্য বড় শত্রু। এদিকে আতাতায়ী সংঘ নাকি আতংক সমিতির হেডকোয়ার্টার আ্যসল্ট করার চিন্তা করছে।
-ভালোই। তাহলে এক ঢিলে দুই পাখি মারা হলো। বললেন একজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা। তা কি করছে শুনি?
-রিফাত শেখ নাকি ইম্প্রোভাইজড ডিভাইস দিয়ে উড়িয়ে দিচ্ছে।
-পাগল?! মিলিটারি গ্রেড জিনিসপাতি কই পাবে?
-এইগুলা ম্যাগনেটিক এক্সপ্লোসিভ। ওরা ভূমিধ্বস ঘটানোর চেষ্টা চালাচ্ছে। ওটা কয়েক বর্গকিলোমিটার এলাকা বিলীন করে দেবে।
-ইজ হি ম্যাড?! রিফাতকে এক্ষণি গ্রেফতার করা হোক!
-ইমপ্সিবল। যদি এটা করি তাহলে কয়েক লক্ষ লোক রাস্তায় নামবে রিফাতের জন্য। এরা ওর হাতে বানানো থাগস, স্মাগলার, গ্যাংস্টার আর আ্যসেসিন। ডজন খানেক নেতা, এমপির প্রাণ যাবে। মন্ত্রীদের কিছু হবে না।
-ওকে দেন কিছু হবে না?!
-আপাতত কাঁটা দিয়ে কাঁটা তোলা দেখেন।


চার মাস পর। বর্ষাস্নাত এক বিকালে দুটো জায়ান্ট ট্রাক একটা বিশাল পরিখায় নামলো। ভুগর্ভস্থ দুটো রাস্তা ধরলো সেখানে নেমে। বুঝা গেলো দুটোর দুরত্ব অনেক হবে।
-স্যার লাইভ ফুটেজ দেখেন।
-হুম্ম...

ইকবালের মাথায় স্ট্রাইক করলো দুটো কোন বড়সড় কাজে পাতালে ঢুকছে।
-নিশা তুমি জাকুয়াকে বলো এক্ষণি সমস্ত ইউনিট সরিয়ে নিতে। আমাদের ইমারজেন্সি ল্যান্ড ভেহিকেলগুলো বের করো। পাতাল ছাড়তেই হবে।

হুড়মুড় করে মাটি কাপা শুরু হলো। জাকুয়া আর তার আর্মি চলে এসেছে।
-স্যার আমাদের প্লান্ট, মেশিনারিজ এগুলোর কি হবে?
- আরে রাখ তোর.... আপনি বাঁচলে বাপের নাম।

দ্রুত মাটি সরে গেলো। আকাশ থেকে রোদ পড়েছে ইকবালের বিশাল আন্ডারগ্রাউন্ড ল্যাবে। সাই সাই করে যান গুলো উড়ে চলেছে। ইকবাল মাদারশীপে উঠে পড়েছে। যান সবগুলো উড়ে সেটার সাথে যুক্ত হলো। ন্যানো সেকেন্ডে হাওয়া হয়ে গেলো।
-স্যার ইকবাল গন! রিশাদ বললো।
-জানতাম। ও গভীর জলের মাছ। মেজর তালহা বললেন।

বঙ্গোপসাগর। চারশো মিটার পানির নিচে ইকবালের মোবাইল ল্যাব। মাদারশীপটাই।
-স্যার, রিখটার স্কেলে সাত মাত্রার ভুমিকম্প।
-হুম। গাড়িগুলো কোন কোম্পানির ধরতে পেরেছো?
-ডিএন্ডজি কর্পোরেশন।
-রিফাত? জানতাম। এখন না। ধরবো। সবাইকেই ধরবো। আজ হোক কাল হোক আমি নতুন একটা ভূবন বানাবো নিজের। পথের কাঁটা সরিয়ে।(সমাপ্ত)

মন্তব্য ২ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ২১ শে জুলাই, ২০১৫ রাত ১২:৩৮

আরণ্যক রাখাল বলেছেন: এতো বড়!

২| ২১ শে জুলাই, ২০১৫ বিকাল ৫:৩১

নীলপরি বলেছেন: ভালো

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.