নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

গল্প ছাড়া আর কিছু না

বলতে চাই না। লিখতে চাই।

রাগিব নিযাম

আমি সাদাসিধে, সাধারণ টাইপের মানুষের দলে। তবে রাজনৈতিক অপরিপক্ক্বতা আমার অপছন্দ।

রাগিব নিযাম › বিস্তারিত পোস্টঃ

সিরিজ: গোপন সংঘ সূচনা গল্প: দ্য রাইভাল নাইটস(ব্যাটম্যান+রবিন+নাইটউইং+অ্যারো+ফ্ল্যাশ+অ্যাটম ও বাংলাদেশী ফাইটারস)

০৬ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৫ সকাল ১১:৪৭

এক.

"প্রফেসর"

পেছনে ফিরে তাকালেন প্রবীন মানুষটি। তার নাম সিরাজুল ইসলাম। বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় ব্যাক্তিগত ল্যাবের মালিক তিনি। পেছনে যার দিকে ফিরে মুখ করলেন সে একজন দুর্ধর্ষ যোদ্ধা। অন্যায়ের বিরুদ্ধে লড়া তার নেশা। তার নাম মিশু। তার আরেক পরিচয় সে হ্যাক্টিভিস্ট।
-কি?
-খারাপ খবর আছে। গথাম থেকে জোকার কার্গো শিপমেন্টে করে নাকি বাংলাদেশে এসেছে।
-মতলবটা কি হারামজাদার?
-ইকবালের লা পাত্তা নাকি তার এখানে আসার কারণ।
-চোরে চোরে মাসতুতো ভাই। দুজনের কাজ হচ্ছে নাকি আতংক সৃষ্টি করা। কিন্তু হাসমান তো ইকবালের সাথে কখনোই সংঘাতে জড়াবেনা।

"আপনি ভুল বলেছেন!!!"

দুজনেই দরজার দিকে ঘুরে দাড়ালো। উত্তর ঢাকার কিংবদন্তি দস্তানা ওরফে হাসমান ফরাজি, চাবুকি ওরফে জাইমা, বাজ ওরফে আইমান এসে দাঁড়িয়েছে।

-ও একটা বাটপার। যা দিয়েছে তার চারগুণ নিয়ে গেছে। আমার আ্যাপ্লায়েড সায়েন্স ডিভিশনের দশজন গত ছ মাসে বিভিন্ন কারণ দেখিয়ে রিজাইন দিয়েছে। পরে শুনি ওরা ইকবালের ল্যাবেই জয়েন করেছে। হাসমান যেনো পরিষ্কার ছবি দেখছেন।
-ইকবাল যে কালপ্রিট সেটা জানতাম। কিন্তু জোকার কেনো ওর সাথে হাত মেলালো?
-ইকবালের রাশিয়া থেকে কেনা কার্বন ডাই অক্সাইড লেজার গানের ডুপ্লিকেট কেনা চাই তার। ইন্টারপোলের কড়া নজরদারি ফাঁকি দিয়ে পানিপথ দিয়ে এসে রিফাতের কাছ থেকে অস্ত্রটা তার ছিনিয়ে নেয়া চাই।
-রিফাতকে ছোবল আর বনের রাজা বাঘের গায়ে থাবড় দেয়া এক কথা না। মিশু নাকে আঙ্গুল ঘষতে ঘষতে বললো।
-আর এটাও জোকার। ও কই মাছের প্রাণ নিয়ে জন্মেছে। ইকবালের শোচনীয় অবস্থা দেখেই এখানে ঘাটি গেড়েছে।
-এখন কি করবো? ম্যাকাপে ফোন করবো? জাইমা বললো।
-না।
-না মানে? মিশুর ভুরুজোড়া কুঁচকে এলো।
-ব্যাটম্যানকে কল দিবো।

গথাম সিটি। বেশ উদ্বিগ্ন ব্রুস ওয়েন। স্টারলিং, সেন্ট্রাল, মেট্রোপলিস সব শহরের জাস্টিস লীগ অপারেটরদের সাথে কথা হয়েছে। শাজাম, গ্রিন আ্যারো, ফ্ল্যাশ সবার এক কথা। কোথাও দেখা যায়নি জোকারকে।
"ড্যাম ইট!!!"

রবিন ওরফে ডেমিয়েন ঘরে ঢুকেই বিরক্তমাখা কন্ঠে বললো "দ্য সিটি ইজ ক্লিন আউট অভ ক্রিমিনাল শিট!"
"কুল ডাউন"

পেছনে ফিরে দেখতেই নাইটউইং কে দেখা গেলো।
-জোকার আত্নগোপন করেছে। ব্যাটম্যান বললেন।
-তো? ডেমিয়েন বলছে। ওর পেছন ফিরে মনিটরে চোখ রেখেছেন ব্রুস।
-এর মানে ও গভীর ষড়যন্ত্রে লিপ্ত। নাইটউইং তার আ্যকশন কিট হ্যাংগারে ঝোলাতে ঝোলাতে বললো।
-বাংলাদেশে কল দেই একটা।

ঠিক সেই সময় বীপ করে সাউন্ড হলো হাসমানের হেডসেটে। "হ্যালো" বলতেই ব্রুস বলে উঠলেন "আমি ব্যাটম্যান"। হাতে চুটকি মেরে মিশুকে ডাকলেন। কম্পিউটারের মাউসে হাত রাখার আগেই বললেন ব্রুস,
"লাভ হবে না। আমাকে কেউ কোনদিন ট্রেস করতে পারে নি। আপনাদের সম্বন্ধে আগেই জেনে রেখেছি। আমার জোকার সম্বন্ধে জানতে চাই..."
-ধরেন রাতের প্রহরীর সাথে কথা বলুন।
-জ্বি...
-ইয়েস রাতের প্রহরী বলছি। হ্যা, সে আসছে দুঘণ্টা আগে। একটা কার্গোতে করে...হুম...হুম...ওকে...ওকে।

খুট করে টাচ করে লাইন কেটে দিলেন ব্রুস ওয়েন। নাইটউইং আর রবিনকে বলতে লাগলেন, "আমরা বাংলাদেশ যাচ্ছি। নাইটউইং তুমি গ্রিনহুড আর তুমি বেরি এলেনকে কল দাও। আমি শাজামকে কল দিচ্ছি।"
-কিন্তু কেনো?
-কারণ আমরা বাংলাদেশে যাচ্ছি। জোকারকে ওখানে দেখা গেছে।


দুই.

আমরা মানব প্রজাতি একটা সময় অসভ্য ছিলাম। এখন সভ্যতার অতি উচ্চ শিখরে উঠতে গিয়ে এমন সব বিষয় জলাঞ্জলি দিয়ে ফেলেছি যে অন্যায় রুখতে গিয়ে আরেকটা অন্যায় করে ফেলি। চিন্তা করে দেখুন ১৬শ শতকের দিকে যখন মেডিভাল এবং ইমপেরিয়াল এজের একটা কনভার্জেন্স চলছে তখন অন্যায় ঠেকানোর জন্য ইউরোপের রাজতন্ত্রগুলি কড়াকড়ি আইন প্রয়োগ করে। জলদস্যুদের জন্য পাইরেট রেইডার এবং বুনো পশ্চিমে আউট ল'দের ঠেকাতে ছিলো শেরিফ, ডেপুটি শেরিফ আর মার্শালেরা। এখন যুগ পাল্টে গেছে। অনেক ধরণেরই অপরাধ সংঘটিত হচ্ছে। একটা সময় বিদ্রোহ হতো। এদের রাষ্ট্রযন্ত্রের চোখে রাষ্ট্রদ্রোহী বলা হতো। এখন বিষয়গুলোর ধারণা পাল্টে গেছে। আধুনিক যুগে সংঘ তৈরি করে হুমকি বা আতংক সৃষ্টি করে অপহরণ, লুট বা বিদ্রোহ সৃষ্টি করা হয়। এদের অভিধানে আতংকবাদী, টেরোরিস্ট বলা হয়ে থাকে।

জোকার। ব্যাটম্যানের চিরশত্রু। হঠাৎ করে লাপাত্তা হয়ে গেছে গথাম সিটি থেকে। নাই তো নাই গোটা দুই ধারের আমেরিকা মহাদেশ চষে ইন্টারপোল তার খোজ পেলো না। হঠাৎ করে বাংলাদেশের একটা ক্রাইম ফাইটিং গ্রুপ খবর পায় যে শিপিং কার্গোতে করে জোকার চট্টগ্রামে ঢুকে গেছে। অনুমান করা হচ্ছে যে ইকবালের অ্যানোনিমাস বেসে সে ঘাটি গাড়তে পারে।

ক্রাইম ফাইটিং গ্রুপটা অনেকটা নিজেদের পরিচয় দেয় "প্রহরী" হিসেবে। গ্রুপটার প্রধান হাসমান ফরাজি। আদতে যিনি একজন শিল্পপতি। তার মেয়ে জাইমা একটা হাইটেক চাবুক ব্যবহার করে বলে তাকে 'চাবুকি' বলা হয়। আর হাসমানের একমাত্র ছেলে আইমান, নার্ভ কন্ট্রোল করার মাধ্যমে ধাতব পাখার সাহায্যে আকাশে উড়ে বলে তাকে বলা হয় 'বাজ'। এই গ্রুপের একমাত্র সায়েন্স এক্সপার্ট, সিরাজুল ইসলাম যাকে দেশের অন্যতম বিজ্ঞানী বলা হয় তার সাহায্যেই এই গ্রুপের গোড়াপত্তন হয়। শবশেষে যার কথা বলবো তাকে গ্রুপের সেরা প্রহরী বলা হয়। আন আর্মড কমব্যাটে পারদর্শী এই যুবকের নাম মিশু। শখের হ্যাকার এই ছেলেটার জীবন পাল্টে যায় এক ড্রাগ লর্ড এর বিরুদ্ধে লড়তে গিয়ে।

এই গ্রুপের সাথে বারেবারে একটা সংঘের সাথে সংঘর্ষ সৃষ্টি হয়। এরা অন্যায় রুখতে গিয়ে অন্যায় করে ফেলে। নামে আতাতায়ী সংঘ হলেও এদের হেন কুকর্ম নেই যা সবার জানা। আতাতায়ী সংঘের প্রধান শত্রু এই প্রহরী গ্রুপ হলেও আতংক সমিতির সাথে এরা ঝামেলায় জড়িয়ে যায়(আগের "আতাতায়ী সংঘ vs আতংক সমিতি" গল্পে উল্লেখ করা হয়েছে) যার প্রধান হচ্ছে ইকবাল ওরফে ব্ল্যাক সায়েন্টিস্ট। এই ইকবালের কার্বন ডাই অক্সাইড লেজার গান চুরি হয়ে চলে যায় আতাতায়ী সংঘের ডেরায়। অথচ এই লেজার গান জোকারের হাতে তুলে দেয়ার কথা ছিলো ইকবালের। যা দিয়ে গথাম শেষ করার কথা ছিলো।

বাংলাদেশে পা পড়লো যেই মুহুর্তে ব্রুস ওয়েনের, ঢি ঢি পড়ে গেলো দেশে বিনিয়োগ আসছে। সাথে ধনকুবের অলিভার কুইন আর টেক বিলিওনিয়ার রে পালমার এর উপস্থিতি জানান দিচ্ছে যে উন্নয়নের হিড়িক আসছে।

"আমরা এই মুহুর্তে কোন কথা বলতে রাজি না।" মুখে হাসি ফুটিয়ে বললেন ব্রুস ওরফে ব্যাটম্যান।

আসলেই কি কোন উদ্দেশ্য নিয়ে এসেছেন তারা? কি উদ্দেশ্য এই জাস্টিস লীগের বাংলাদেশের পা রাখার?

তিন.

শাজাম।
ওরফে বিলি ব্যাটসন। ১২বছরের পত্রিকার হকার একদিন পেপার বিক্রি করে সাবওয়ে টানেলে ঢুকে এক অদ্ভুতদর্শন আগন্তুকের কথায় কেবল কারে ঢুকে পড়ে। সেই আগন্তুক এবং বিলি আন্ডারগ্রাউন্ড এরিয়াতে ঢুকে দেখে সাতটি স্তম্ভ- ঘৃণা, দ্বেষ, দম্ভ,লোভ, অলসতা, স্বার্থপরতা ও অন্যায় যেগুলো একত্রে মিলে দাড়ায় "জাদুকর" শাজাম হিসেবে। জাদুকর তাকে বললেন যে বিলিকে তিনি এমন এক শক্তি দেবেন যেটা একজন প্রাপ্তবয়স্ক অতিমানব বানিয়ে দেবে শাজামকে। কিন্তু এই শক্তি অর্জন করার আগেই শক্তির ধারক পাথরটি তাকে বাধা দেয় এই বলে যে এই সাত শব্দের বিপরীতে ইতিহাসের এমন সব বিদ্বানের নাম বলতে হবে যাদের নাম মিলে দাড়ায় shazam। বিলি উচ্চারণ করলো- Solomon, Hercules, atlas, Zeus, Achilles ও mercury. এরপর পরই সে পাথর থেকে অতিমানবীয় শক্তি লাভ করে এবং শাজাম নামে তার উত্থান হয়।

অলিভার কুইন।
আধুনিক যুগের সেরা তীরন্দাজ। তার হাতের টিপ এতোই ভয়ংকর যে সে একটা তীর দিয়েই নিশানা করে ভেঙ্গে দিতে পারে যে কোন লক সিস্টেম। মাঝে মাঝে তীরগুলো সাক্ষ্য প্রমাণের হাতিয়ার হয়। আবার কখনো ছোটোখাটো বোমা। পাঁচ বছর এক দ্বীপে আটকা পড়ে শিখে নেয় কিভাবে প্রতিকূল পরিবেশে টিকে থাকতে হয় লড়াই করে। নিজের শহরে ফিরবার পর বুঝতে পারে অন্যায় ও অপরাধ না রুখে দিলে তার শহরে মহামারীর মতো ছড়িয়ে পড়বে এসব। সবুজ রংয়ের হুড পরে একের পর এক অপরাধ আর রুখে দিতে থাকে সে। এর পর থেকে তার নাম হয় গ্রীণ অ্যারো বা সবুজ তীরন্দাজ।

বেরি অ্যালেন।
সেন্ট্রাল সিটির ও পৃথিবীর দ্রুততম মানব। সেকেন্ডে ৩৮০ মাইল বেগে দৌড়াতে পারে। এক নিউক্লিয়ার পার্টিকেল এক্সেলারেটর বার্স্ট করে এক রাত্রে, যার তেজস্ক্রিয়তা আকাশের বিদ্যুৎের সাথে মিশে তাকে বজ্রাহত করে। নয় মাস কোমায় থাকার পর হঠাৎ সে নিজেকে একদিন আবিষ্কার করে স্টার ল্যাবে। আবিষ্কার করে তার আশ্চর্য দ্রুততম বেগের ব্যপারটা। নাম হয়ে যায় ফ্ল্যাশ।

রে পালমার।
হাইটেক বিলিওনিয়ার। কুইন কন্সোলিডেটেড এর সিইও এর দ্বায়িত্ব পালন করার সময় সে একটা ইন্টেলিজেন্ট আর্মার আবিষ্কার। তরুণ এই গবেষক অ্যাটম শ্রিংক এর উপর গবেষনা করতে গিয়ে হুট করে আবিষ্কার করে ফেলে যে সে অতি ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র একটি ন্যানো চিপের সমান আকৃতি ধারণ করতে পারে। ব্যাস, এর পর থেকে তার নাম হয়ে গেলো অ্যাটম।

ব্ল্যাক ক্যানেরি।
ওরফে দিনা লরেল ল্যান্স। ডিস্ট্রিক্ট অ্যাটর্ণি, স্টারলিং সিটি। বোন সারা ল্যান্সের মৃত্যুর পর আবিষ্কার করে যে সে রাতের আধারে অপরাধ দমনে সক্রিয় হয়ে উঠেছে। পরে সে তার বোনের নাম পদবী "ব্ল্যাক ক্যানেরি" ব্যবহার করে।

উপরের প্রত্যেকেই এই মুহুর্তে জোকার ধরতে বাংলাদেশে। প্রত্যেকেই রুখে দেবে অন্যায়। সাথে আছে ব্যাটম্যান, নাইটউইং, রবিন এবং প্রহরী গ্রুপ।

"ইয়েস?!" ক্লিক করে টিপে ব্লুটুথে কল রিসিভ করলেন হাসমান ফরাজি ওরফে দস্তানা।

"জাস্টিস লীগ সদস্যরা রওনা হয়ে গেছে" বলেই ঘুরে তাকালেন অন্যদের দিকে।

চার.

রাজধানী ঢাকা।
হরতালের আগের রাত।
রিকশা ছাড়া রাস্তায় আর কিছু চলছে না। শুনশান মৃত্যুপুরী। মানুষজন তেমন নেই বললেই চলে। এমনই সময়ে মিরপুরের এক বাড়িতে সবকটা বাতি জ্বলছে। বাড়ির ভেতরে সর্বসাকুল্যে পাঁচজন অবস্থান করছে। বেল বাজার আওয়াজ হলো।
সিকিউরিটি ক্যামেরায় চোখ রেখে গেটের লাউড স্পিকার অন করে মাউথপিসে একটা গম্ভীর মুখ বলে উঠলো, "কে?"

গেটের মাউথপিসে মুখ রেখে একটা সুললিত কন্ঠ বলে উঠলো, "মেট্রোপলিস থেকে আসা হয়েছে। জনসম্মুখে রে পালমার ডাকা হয়, স্যুট পরলে..."

বলা হলো না কথাটা, খুট করে গেট খুলে গেলো। অটোমেটেড সিস্টেম।

গ্রাউন্ডে পাচজনের সবাই এসে দাঁড়িয়েছে।
"ওয়েলকাম ডক্টর পালমার একেএ ক্যাপ্টেন অ্যাটম" বললেন বিজ্ঞানী সিরাজুল ইসলাম। ততোক্ষণে পেছনে এসে দাঁড়িয়েছে একে একে অ্যারো, ফ্ল্যাশ, রেড হুড, ব্ল্যাক ক্যানেরি।

"আরো চারজন আসার কথা।" হাতে নিউক্লিয়ার গ্লোভ একজনের। তাকে দস্তানা ডাকা হলেও পাবলিকলি তাকে সবাই তাকে হাসমান ফরাজি ডাকে।
"উই আর হিয়ার!" উপর থেকে ফ্লাক্স রোপ বেয়ে নিচে নেমে এলেন ব্রুস ওয়েন ওরফে ব্যাটম্যান। পেছন পেছন রবিন আর নাইটউইং ও আসছে।
"শাজাম কই?" মিশু আকাশে খুঁজছে শাজামকে।

"আমাকে কেউ এখনো চিনলো না!" বলে একটা ছোট্ট ছেলে বিরস বদনে মাথা নিচু করে থাকলো।
"বিলি আসল আকৃতিতে আসো" ব্রুস বললেন।

সাথে সাথে এক বিশালদেহী উড়ন্ত মানবে পরিণত হলো বিলি। বোঝা গেলো ওই শাজাম। "আর কিছু প্রমাণ করতে হবে?"

"নাহ" ফিক করে হেসে দিলো আইমান ওরফে বাজ।

"জাস্টিস লীগকে স্বাগতম বাংলাদেশ" বলে সবাইকে ভেতরে প্রবেশ করতে অনুরোধ জানালেন বিজ্ঞানী সিরাজুল। বাড়িটা চওড়া। লম্বা করিডর ধরে সবাই অন্দরমহলে প্রবেশ করলো।
"একটা ব্যাপার, সুপারম্যান আর ওয়ান্ডার ওম্যান আসলেন না কেনো? মারশিয়ান ম্যান, গ্রিণ ল্যান্টার্ণও আসেন নাই। কেনো?" জাইমা ওরফে চাবুকি বলে উঠলো।
"ওয়ান্ডার ওম্যান আর সুপারম্যান এটাকে আমাদের হাতে ছেড়ে দিয়েছে। লেক্স লুথর এর উপর কড়া নজর রাখছে। হাল জর্ডান ওরফে গ্রিণ ল্যান্টার্ণ মহাকাশের একটা সমস্যা সমাধান করছে মারশিয়ান ম্যানকে নিয়ে।

"কাজের কথায় আসা যাক। জোকার এদেশে কেনো?" বিজ্ঞানী উৎসুক চোখে তাকিয়ে বললেন সবার দিকে।
"আমি শুনেছি জোকারের কার্বন ডাই অক্সাইড লেজার গান কেনার কথা ছিলো যেটা রাশিয়ার কাছ থেকে, সেটার নাকি রেপ্লিকা করতে পেরেছে ডক্টর ইকবাল।" বলে চলেছেন ব্যাটম্যান, "কিন্তু সেটা কিভাবে যেনো আতাতায়ী সংঘ প্রধান রিফাত শেখের হাতে পৌঁছে গেছে।"
"তার মানে জোকারের সাথে এখন রিফাতের সংঘর্ষ হবে।" ভ্রু কুঁচকে আছেন দস্তানা।
"তা তো অবশ্যই।" গ্রিণ অ্যারো বলেছেন, "ইকবালের বেইস ধ্বংস করাতে জোকার খেপে গেছে। কারণ জোকারের মদদপুষ্ট এই ইকবাল।"

"কাল হরতাল। দিনের আলোয় যে কোন কিছু ঘটতে পারে। জোকারের মতিগতি ভালো লাগছে না। ফ্ল্যাশ, বাজ, অ্যাটম,চাবুকি এবং তুমি" আঙ্গুলের ইশারায় উড়ন্ত মানুষকে বললেন, "শাজাম, ঢাকার রাস্তা পাহারায় দিবে। যাতে উত্তপ্ততা না ছড়াতে পারে।"

"অবশ্যই। জোকারের পরিকল্পনা বানচাল হবেই।" বিদ্রুপের হাসি হাসলো শাজাম।

পাচ.

কাওরান বাজার।
হরতালের দিন। চুপচাপ মানুষ চলাফেরা করছে মানে যে কোন সময় অঘটন ঘটবে। জায়গায় জায়গায় বিশেষ টহল পুলিশ র‍্যাবের। প্রতিটা মোড়ে চেকপয়েন্ট। কেউ পেট্রোল বোমা বহন করছে কিনা কেউ বলতে পারছে না। তাই হয়তো সতর্ক নজর রাখছে আইন শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনী।

হুট করে খবর এলো যাত্রাবাড়ী মোড়ে নরক গুলজার। দুজন মানুষ খুন হয়েছে। এরা সাধারণ কেউ নয়। পিকেটার ও পেট্রোল বোমাবাজ হিসেবেই এদের আইডেন্টিফাই করেছে। প্রত্যক্ষকারীরা জানিয়েছে এরা যাদের হাতে খুন হয়েছে তারা অত্যাধুনিক অস্ত্রধারী। উচ্চতায় সাত আট ফিট লম্বা। রাস্তার ওপাশ থেকে একটা বাস আসছিলো। হুট করে কেউ একজন সলতের মুখ জ্বালিয়ে বাসে ছুড়ে দিতে চেয়েছিলো এরপর হঠাৎ কে যেনো সাথে সাথে তার হাত খপ করে ধরে কব্জি গুড়ো করে দেয়।

এরপর থেকেই হরতালের চিত্র পাল্টে গেলো। রাজধানীরর প্রতিটা মোড়ে এমন বিশালদেহী দেখা দিলো। হুটহাট পেট্রোল বোমা বহনকারী ধরে ধরে তাদের খুন করা হলো। সংসদে বিশেষ অধিবেশন ডাকা হলো। সরকার পড়লো চাপে। বিরোধী দল সংবাদ সম্মেলন ডাকলো। বলা হলো, পেট্রোল বোমার সাথে দলের কারো সংশ্লিষ্টতা নেই। কিন্তু রাজপথে এইভাবে নির্বিচারে মানুষ হত্যার জবাব সরকারকে দিতে হবে। সরকারের পক্ষ থেকে বলা হলো কারা করেছে এসব জানা নেই তবে যেটাই হোক যাদের খুন করা হয়েছে তারা পেট্রোল বোমা বহন করছিলো।

এদিকে পেট্রোল বোমার এক ডিস্ট্রিবিউশন নেটওয়ার্ক এর এক নেতা(সরকারী না বেসরকারি তা বোঝা গেলো না) গেলো খেপে। তাকে টাকা দিয়ে বোঝানো হয়েছিলো যে একটু রাজনৈতিক মাঠ গরম করতে হবে। কিন্তু তার লোকজনকে যেভাবে ধরে ধরে মারা হচ্ছে তাতে সে দ্বিগুণ লোকবল নামিয়ে দিলো। ফলাফল হলো অত্যন্ত মর্মান্তিক। দু তিনটা বাস জ্বালিয়ে দিতে গিয়ে নিজেদের অবস্থা বেগতিক হয়ে পড়লো।

পরের দিন দুপুরে....
শহরের জায়ান্ট স্ক্রিন সবগুলি বিচ্ছিরি আওয়াজ করে মেসেজ দিলো,

"প্রিয় বাংলাদেশিরা, আমি ইকবাল। সায়েন্স টেরর ইকবাল। তোমাদের উপর ক্ষোভ নেই। কিন্তু সরকারের উপর আছে। আমার আবিষ্কারের পেটেন্ট আমাকে না দিয়ে আরেক আমেরিকান বিজ্ঞানীকে নিতে সহায়তা করেছে। তাই, এখন এই যুদ্ধাপরাধ বিচারের প্রাক্কালে আমার সবটুকু প্রতিশোধ নিচ্ছি। ৪৫বছর তো গেছে দেশ স্বাধীনতার আনন্দ উদযাপন করতে, আগামী ৫৫ বছর যাবে আমার প্রতিশোধের আগুনে জ্বলে। পারলে ঠেকাও আমাকে। আমার আর্মি তৈরি হচ্ছে।"

সরকার এটা দেখেই ভাবলো বাংলাদেশে মিউট্যান্ট বিদ্রোহ শুরু হয়েছে। ইদানীং যে সব অতিমানবীয় ঘটনা ঘটছে, কেউ আকাশে উড়ে বেড়ায়, কেউ পাহাড়ের উচ্চতায় বড়ো হয়; হয়তো তাদেরই কেউ, যারা সরকারের রেজিষ্টারড অতিমানব নয় তাদের ধরে ধরে ইকবাল দলে ভিড়িয়েছে। সাথে সাথে ডিজিএফআইকে অ্যাসাইন্ড করা হলো ইমিডিয়েট মিটিং। ম্যাকাপ-মেটাহিউম্যান অ্যান্ড কমান্ডো অ্যালায়েন্স প্রজেক্ট প্রধান যন্ত্রমানব দীর্ঘ দুই ঘন্টা রুদ্ধদ্বার বৈঠক শেষে আশ্বস্ত করলেন শেষে এই যে, অতিমানবদের কেউ এসবে জড়িত নয়।

"ম্যাকাপ দেশবাসীকে এই মর্মে জানাচ্ছে আমাদের অতিমানব ইউনিটের কেউ জড়িত নয়"।

সেদিন রাতে, যন্ত্রমানব একটা কল পেলেন। কলটা বিজ্ঞানী সিরাজুল ইসলামের।

"স্যার, আপনি?" বিস্ময়ে বললেন যন্ত্র।!"আমিই কল দিতাম"
"সে লাগবে না আমিই দিলাম" বলে চলেছেন বিজ্ঞানী, "আমার বাসায় এসো। কথা আছে!"
"এখনই রওনা হচ্ছি"।

মিরপুরের বাড়িতে ঢুকেই চোয়াল ঝুলে পড়লো। স্বপ্নের সব হিরো এইখানে। ব্যাটম্যন, অ্যারো, অ্যাটম, ফ্ল্যাশ, শাজাম।

"জোকার এখন বাংলাদেশে।"

ছয়.

গুড় গুড়ুম!
মেঘ ডেকে উঠলো কোথাও।
-ডক্টর আসহাফ।
-ইয়েস।
-একট পরিসংখ্যান থেকে জানা গেছে যে আমাদের শতকরা ২০% জনসংখ্যা রাজধানীতেই পানিবাহিত রোগেই আক্রান্ত হচ্ছে। বিশেষ করে বন্যাপ্রবণ এলাকায়।
-হুম এটা জানি।
-আমরা এমন একটা প্রোগ্রামড কিউর সিস্টেম করতে চাই যেটা পানিগুলোকে জীবাণুমুক্ত করবে এবং বায়ুর মাধ্যমে গোটা শহরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দ্বিগুণ করে দেবে।
-আমি এইরকম একটা ডোজ জেনারেটর বানিয়েছি। খুব তাড়াতাড়ি আপনাদের সেটা দেখাতে পারবো।

দুদিন পর। রাজধানীরর নিম্নাঞ্চলগগুলো প্লাবিত হয়ে গেছে। ধীরে ধীরে পানি বাড়ছে।
-ডক্টর?
-তৈরি।

জেনারেটরটা সশব্দে হয়ে গেলো। ভেতরে আলাদা কিছু কম্পাউন্ড আছে যেখানে সব ধরণের জীবাণুনাশক কেমিক্যাল আছে। জেনারেটর চালু হওয়ার পর তা থেকে সমপরিমাণে সব বন্যার পানিতে মিশে যেতে লাগলো।

গ্রুরর। গ্রুরর। বাজ পড়লো কোথাও।
-ডক্টর!
-কি?
-মেশিন খোলা অবস্থায় আপনি কেমিক্যাল স্প্রেড করছেন।
-আমি গ্যারান্টি দিতে পারবো না মেশিন এক্সপ্লোড করলে শহরের ক্ষতি হবে কিনা। এইটা মোবাইল নিউক্লিয়ার এনার্জি দ্বারা চালিত। সুতরাং রেডিয়াস ব্লাস্ট হবে কিনা তা আমার জানা নেই।

আবার গ্রুরর করে বাজ পড়লো। এবার মেশিনের উপর। চাইইই করে পরক্ষণে একটা আওয়াজ হলো। বিশাল প্রোটেক্টেড অবজারভেটরি থেকে দেখা গেলো রেডিয়াস ব্লাস্টটা।

শপিং করে সবেমাত্র বাসায় ফিরেছে লিটা। বাসার ফ্রিজে টুকটাক সেরিয়ালস থাকে। খুলতে গিয়ে কয়েক হাজার ভোল্টের শক খেলো যেনো। জ্ঞান হারিয়ে ধপাস করে পড়ে গেলো। দুদিন পর হসপিটালে। জ্ঞান ফেরার পর, তাকিয়ে রয়েছে বৃষ্টিভেজা জানালা দিয়ে। বাইরেটা স্নিগ্ধ কোমল হয়ে আছে। ডক্টর রিলিজ দিয়েছে।

বাসায় ফেরার সময় দেখলো রাস্তায় বখাটে কিছু ছেলে তাকে মন্তব্য করছে। সহ্য করতে না পেরে তাদের একজনকে পরনের একটা স্যান্ডেল যেই না ছুড়ে মেরেছে অমনি সেটা বাড়ি মেরে ফিরে এলো। একজন এটা দেখে দৌড় দিলো। পেছন পেছন বাকি সবাইও দৌড় দিলো।

নিজের এই নতুন ক্ষমতা নিয়ে যখন লিটা চিন্তিত তখন শহরের আরেক প্রান্তে জাস্টিস লীগ ও প্রহরী গ্রুপ জোকারকে থামানোর প্রয়াসে ব্যস্ত।
-নতুন জিনিস।
-কি? ফেলিসিটির দিকে তাকিয়ে গ্রিণ অ্যারো একটু ভড়কে গেলেন। ফেলিসিটি গ্রিণ অ্যারোর প্রনয়ী এবং টেক সাপোর্ট।
-ঢাকার একজন মেটাহিউম্যান পাওয়া গেছে। মিশু আর জাইমা দৌড়ে আসলো।
-মেটাহিউম্যান?
-এই যে দেখো।

লিটার দিকে আঙ্গুল তাক করে বললো। ভিডিও ফুটেজ দেখছে সবাই।
-ওয়েল। ইলেক্ট্রো ম্যাগনেটিক পাওয়ার। যাই ছুড়ে মারে তাই বুমেরাং হয়ে ফেরত আসে। অ্যাটম ওরফে রে পালমার বললো।
-মেয়েটাকে আমাদের দরকার। গেট হার এট অ্যানি কস্ট।

সাত.

ফ্লাক্স রোপ বেয়ে নীচে নামছে একদল মুখোশ পড়া মানুষ। ভবনটার বেইজ প্ল্যান একশ এক তলা হলেও সাতাত্তর তলার ছাদ পর্যন্ত তৈরি হয়েছে। বলা হচ্ছে এখন পর্যন্ত এটি ঢাকার সুদীর্ঘ ভবন যার পাশে দাঁড়ানোরর গর্ব কারো হয়নি।
-ডক্টর জারিফ!
-ইয়েস কমান্ডার?
-আমরা পৌছে গেছি।
-জাগুয়ার গুলা রাখা আছে। ওগুলোতে চড়ে শহরে রাউন্ড আপ দিতে শুরু করো। সবাই এক সীটারের পাচ ফিটের লম্বা 'জাগুয়ারে' চড়ে বসলো।

দুদিন হলো জারিফ জোকারের নির্দেশে একটা ইমিডিয়েট মিশনে নেমেছে। তার কালপ্রিট পার্টনার ডক্টর ইকবালের সমুদ্র তলদেশে আবিষ্কার করা যেটানিয়ামের স্যাম্পল দিয়ে মানুষের কিছু করা যায় কিনা ভাবছিলো। একটা ইদুরের উপর প্রয়োগ করতেই ইঁদুরটার মাংসপেশি অস্বাভাবিক রকমের বড় হয়ে যায়। অসম্ভব দ্রুতগতি পেয়ে ইঁদুরটি গ্লাস প্রোটেকশন ভেঙ্গে পালিয়ে যায়।
-হাহাহা! দ্যাটস কল অ্যান আর্মি। জোকার তার খনখনে হাসি দিয়ে তাকালো স্ক্রীণের দিকে। জাগুয়ার গুলাতে উড়ে ইকবালের আর্মি ঢাকার আকাশে উড়ে বেড়াচ্ছে। যেটানিয়ামের সদ্ব্যবহার হয়ে গেছে দ্রুত। ইকবালের আর কোন বাধা নেই। এবার সাগরেই একটা দ্বীপরাষ্ট্র করতে পারবে।
-জারিফ। জোকার ঘুরে তাকালো তার বিদঘুটে চেহারা নিয়ে।
-জ্বি। তোমার কোনো আইডিয়া আছে যে তোমরা কি আবিষ্কার করেছো?
-না।
-একজনকে বলো নিচে নামতে।

তখন সবেমাত্র ভোর হয়ে এসেছে। যারা রাস্তায় ছিলো আকাশে ভুত দেখার মতো উড়ন্ত কিছু দেখে চমকে উঠলো। অনেকগুলো। সংখ্যায় অনেক। চারপাশে ছড়িয়ে পড়েছে। একটা নেমে এলো। ওটার দরজা খুলে একজন বেরিয়ে এলো।

হাতের অস্ত্রটার পাওয়ার বাটন অন করে দিলো। চিইইইই করে মাজলের চারপাশে লাইট জ্বলে উঠলো।
-পালাও!

এসব যে প্রহরী গ্রুপের চোখ এড়িয়ে যাচ্ছে তা নয়। হেডকোয়ারটারে অতিথিদের ব্যস্ত সমস্ত হতে দেখা গেলো। ব্যাটম্যান, অ্যারো, ফেলিসিটি, ব্ল্যাক ক্যানারি, সিসকো ও বিজ্ঞানীকে কানে হেডফোন লাগিয়ে সাপোর্ট দিতে দেখা গেলো। শাজাম, রবিন, নাইটউইং, আ্যাটম, ফ্ল্যাশ, রেড হুড, বাজ, চাবুকি, দস্তানা ও মিশু নেমে পড়লো সবাই কাজে।

প্রায় সব নেমে এসেছে জাগুয়ার থেকে।
-এগুলোর হাতে তো অস্ত্র দেখছি লেজার গান। ধরতে তো দশ মিনিটের বেশি লাগবেনা। ফ্ল্যাশ হেসে বললো।
-তুমি সবসময় প্রতিপক্ষকে ছোট করে দেখো। তারপর ধরা খাও। সব অস্ত্র কেড়ে নাও দেখি। শাজাম বিরক্ত চোখে তাকালো।

এক দৌড়ে লেজার গান সবার হাত থেকে কেড়ে নিয়ে এলো ফ্ল্যাশ। সময় লাগলো আধা মিনিট। অ্যাটম তাকিয়ে আছে এগুলো দিকে। রেপ্লিকা অনেকটা রাশিয়ান লেজার গানের হুবুহু।
-মানে যুদ্ধ শেষ?! রবিন হেসে দিলো।
- না। দেখো। সবে শুরু।

একজন মুখোশধারী একটা ভবনের কোণা ধরে নাড়া দিলো। কি অসুর শক্তি গায়ে।

"যুদ্ধ শুরু হলো"।


আট.

-অসম্ভব!!! এ একেবারেই অসম্ভব ব্রুস, অলি।
-আমাদের পক্ষে এদের সাথে যুদ্ধ করা আর বাঘের সামনে পথ ভুল করে দাঁড়িয়ে থাকা হরিনের মতো, আক্রমণ করা অসম্ভব।

ওয়্যারলেসে ফ্ল্যাশ, অ্যাটম একনাগাড়ে রিপোর্ট দিয়ে যাচ্ছে অনবরত। এই বিল্ডিংটার ধ্বজভঙ্গ করে দিচ্ছে তো ওই জায়গার স্থাপনা উড়িয়ে দিচ্ছে ইকবালের আর্মি। ক্রমাগত ধ্বংসললীলায় মেতে উঠেছে যেনো তারা। শরীরে যেটানিয়াম পুশ করে তাদের বানিয়ে দেয়া হয়েছে প্রচন্ড শক্তিধর।

-ভেঙ্গে পড়ছে আরেকটা হাইরাইজ, ব্রুস সবাইকে ডাকুন। এক মিনিট... কি ওটা?
যুইপ.... যুইপ... হুটহাট করে গায়েব হতে শুরু করলো ইকবালের সেনারা। কিভাবে হচ্ছে?
-ইকবালের সেনাদের কে জানি টেলিপোর্ট করছে।
-ওয়েট।

স্যাটেলাইট ভিউ দিয়ে দেখছে প্রহরী হেডকোয়ারটারে সবাই। একটা একহারা লম্বা গড়নের ছেলে পেছন থেকে একটা আই-কে স্যুট পড়া মাস্কড ম্যানকে বাতাসে মিলিয়ে দিলো। (আই-কে স্যুট হচ্ছে ইকবালের আর্মির জন্য বানানো স্যুট)
-হ্যাংলু। একে খুব ভাল্লাগছে।
-ডোন্ট কল দ্যাট। ওর আইডেন্টিটি হচ্ছে জাফর। জাফর দ্য টেলিপোরটার।

-আরে ওটা কি? আঙ্গুল তাক করে আরেক কোনার দিকে ইঙ্গিত করলো ফেলিসিটি। এক মেয়ে একটা আই-কে এজেন্টের বুকে হাত দিয়ে ১৫ ফিট পেছনে দৌড়ে গেলো। বুউউম করে শরীরটা ফেটে পড়লো।

-এই মেয়ের শরীরের কোষে এক ধরনের রেডিয়েশন প্রভাব বিস্তার করছে যার জন্য সে কারো গায়ে হাত দেয়া মাত্রই স্পর্শ করা শরীর বিস্ফোরণ হয়। আইরিন। ধ্বংসা ও বলা যেতে পারে। প্রফেসর সিরাজুল বললেন। আরে ঐতো লিটা। আমাদের বুমেরাং বালিকা!

বড় বড় দুটো পাথর খন্ড তুলে শূন্যে ছুড়ে মারলো লিটা। চার পাঁচজনের গায়ে লেগে বুমেরাং হয়ে মাটিতে পড়লো।

-আরে ওটা কে? ফ্ল্যাশ, অ্যাটম তাকিয়ে রইলো দুশো গজ সামনের একজনকে। স্বাস্থ্যবান। মাথা নিচু করে মাটিতে একটা হাত দিয়ে রেখেছে। হঠাৎ আরো একটা হাত দিয়ে এতো জোরে চাপ দিলো যে দুই হাতের চাপে বিস্তর ফাটল দেখা দিলো। মাটি টপাটপ কয়টা আই-কে আর্মি গিলে নিলো।
-ও ছেলের নাম দেবো কি ভাবি শুধু তাই আমি...
-রাহান, শখের বডিবিল্ডার। ক্র‍্যাকার ডাকতেও পারেন। আরে ও দুটো কে? ডিগল হাত দিয়ে দেখালো স্ক্রীনে।

দেখে মনে হলো দু ভাই বোন। একজনের হাতে আগুনে গোলক, আরেকজনের হাতে নীলচে গোলক। ছুড়ে ছুড়ে মারছে আই-কে আর্মিকে লক্ষ্য করে।
-বলারস। রবিন আর নাইটউইং বললো একসাথে।
-এরা সবাই ওইদিনের রেডিয়েশন ব্লাস্টের শিকার হয়েছে।


ধাম! স্টিলের টেবিলটা উল্টে দিয়ে থরথর করে কাঁপছে ইকবালের হাত দুটো। জোকারের মুখে তাচ্ছিল্যের হাসি।
-আমি জানতাম। হাহাহা। এবার তোমার পালা। আমি গথাম ফিরে যাচ্ছি ইকবাল। লেজার গানটা দাও। প্ল্যান বিতে নামো।
- হুম প্ল্যান বি। এবার কাউকে ছাড়বোনা!!!! কাউকে না।

নয়.

তখন সন্ধ্যা নেমে এসেছে শহরে। আলোর ডালপালা মেলেছে বৈদ্যুতিক বাতি। ধ্বংসের চিত্র এখানে সেখানে বিদ্যমান। ঢাকার একটা ছোট খাটো অংশ জুড়ে আই-কে আর্মি তান্ডবলীলা চালিয়েছে। কিছু ভবন আকস্মিকভাবে ভেঙ্গে পড়েছে, দুমড়ে মুচড়ে যাওয়া কিছু বাস আর শ খানেক মৃত সাধারণ মানুষ। প্রশাসন থেকে শুরু করে আর্মি কেউই যায়নি আই-কে'র সাথে লড়তে। যদিও জেএলএ, প্রহরী গ্রুপ আর নতুন দল সুপার সিক্স অনেকাংশে কন্ট্রোল আনতে সক্ষম হয়। কিন্তু তারপরো ম্যাকাপের অনুপস্থিতি সেখানে বেমানান। ম্যাকাপ বা মেটাহিউম্যান অ্যান্ড কমান্ডো অ্যালায়েন্স প্রজেক্ট এর অন্তত এখানে নাক গলানো উচিত ছিলো।
-আমরা তাহলে আসি। জোকার গথামে ফিরে গেছে। তবে ইকবালকে নিয়ে সতর্ক থেকো। সে এমন কিছু আবিষ্কার করেছে যা অনেক শক্তি জোগায়। এই ব্লাড স্যাম্পলটা একজন আই-কে আর্মির। সবাই বিদায় দিলো জাস্টিস লীগকে।

সন্ধ্যা নামতেই এজেন্টস অব ডি হাজির। চারপাশ ডু নট ক্রস দ্য লাইন ইয়েলো টেপে আটকানো। খানিক দুরে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে প্রহরী গ্রুপ, সুপার সিক্স। বাঘা শরীফ, এজেন্টস অব ডি এর চীফ বলা হয় একে দাঁড়িয়ে আছেন যন্ত্রমানবের সাথে। দস্তানা দ্য গ্লোভ ওরফে হাসমান ফরাজিকে দেখে এগিয়ে এলেন।
-সালাম।
-হুম।
-নতুন ছয়জন ভালোই দেখিয়েছে। এরা না থাকলে তো বোধহয় আজ গোটা এলাকাই ধ্বংস হয়ে যেতো। ওদেরকে রেজিষ্টারড হতে হবে।
-তো আপনারা কি করেছেন, শুনি? বলি গথাম থেকে ব্যাটম্যান আর তাঁর দল উড়ে এসেছেন আর আপনারা বসে বসে ডিমে তা দিয়েছেন?
-প্লিজ মুখে লাগাম দিন। আমরা সুপার সিক্স আসার দু মিনিট আগেও তৈরি ছিলাম।
-এনাফ ইজ এনাফ। আপনাদের সাথে কথা বলার ইচ্ছে নেই। কাজ করার ইচ্ছে নেই। গভর্ণমেন্ট অ্যাক্রেডিটেশন থেকে নাম তুলে নিলাম আজ। প্রহরী গ্রুপ, সুপার সিক্স কেউই আপনাদের সাথে....

বুউউউম!

বিশাল একটা বিস্ফোরণের আওয়াজ শোনা গেলো। উজ্জ্বল লালচে শিখায় আলোকিত হয়ে উঠলো চারপাশ। দেখা গেলো বিশালদেহী ইকবালকে, সাথে দ্বিগুন পরিমাণ আই-কে আর্মি।

-এভ্রিবডি গেট রেডি!

ধ্বংসা, জাফর দ্যা টেলিপোর্টার, আইরিন ডেস্ট্রয়ার, রাহান ক্র‍্যাকার, বলার্স ও প্রহরী সবাই তৈরি হয়ে নিলো। অসম্ভব ক্ষিপ্রতার সাথে আই-কে ব্যুহ ভেঙ্গে দিচ্ছে নতুনরা। কিন্তু পরক্ষণেই আবার আক্রমণ করে বসছে।

-এ অসম্ভব! ঠেকানোই যাচ্ছেনা!
-কোনাকোণি শুরু করুন! পেছন থেকে নতুন কন্ঠ শোনা গেলো।

দশ.

শান্ত, সৌম্য, দীর্ঘদেহী মানুষ এগিয়ে এলেন যুদ্ধের রাজপথে। হেটে নয়। প্রায় উড়ে উড়ে এসে যেনো বিজ্ঞানের অভিকর্ষ, মাধ্যাকর্ষণ সূত্রগুলোকে বুড়ো আংগুল দেখিয়ে আই-কে আর্মির উপর ঝাঁপিয়ে পড়লেন। তার এই অমিত তেজের এগিয়ে যাওয়াতে যেনো সবার ভেতর নতুন উদ্দীপনার সঞ্চার হলো।

ওদিকে ডঃ ইকবালের নতুন শক্তি অদ্ভুত রকমের ভয়ংকর বাধা হয়ে দাঁড়ালো। সম্ভবত যেটানিয়াম শরীরে পুশ করে এই অফুরন্ত শক্তির উদগীরন হচ্ছে। কোথাও একটু টোকা দিলেই যেনো হুড়মুড় করে ভেঙ্গে পড়ে যাচ্ছে। এতো সেই ইকবাল, যে ছিলো সাধারণ সায়েন্টিস্ট!

দুজন মুখোমুখি হলো তারা। সেই উড়ন্ত ভদ্রলোক। পাচ সেকেন্ড নীরব থেকে। আক্রোশে মুঠো ভরে ঘুষি এগিয়ে দিলো ইকবাল। একহাতে থামিয়ে দিলেন। এক পায়ে লাথি চালালেন। লাথি খেয়ে বিশ হাত দুরে ছিটকে পড়লো ইকবাল। চেহারা লালচে হয়ে গেছে। দৌড়ে বললে ভূল হবে। প্রায় লাফিয়ে আবার লোকটার কাছাকাছি চলে এলো। এবার এলোপাথাড়ি মার শুরু করলো।
-কে তুই?
-আমি ইব্রাহীম।
-আমার উপর আক্রমণ করছিস কেনো?
-যেমনটা আমার শহরের উপর করেছো।

ইকবাল ঘুষি বাগিয়ে দিলো। ইব্রাহীম একটা ঘুর্ণি বলয় সৃষ্টি করে তার মাঝখানে থাকলো। ঘুষিটা যেনো বাম্প করে ইকবালকে ছিটকে দিলো। আবারও হুংকার দিয়ে পেল্লায় এক দশাসই ঘুষি বাগালো। ইব্রাহিম এবারো এড়িয়ে গেলো।

একটা লাথি দিলো। লাথিটা খেয়ে এমনভাবে একটা ভাঙ্গা রডের ভেতর সেঁধিয়ে গেলো ইকবালের বুক যে ওখানেই মারা গেলো ইকবাল। ওদিকে সুপার সিক্স আর প্রহরীও প্রায় কোনঠাসা করে ফেলেছে আই-কে আর্মিকে। এক কথায় বলতে গেলে প্রায় সবাইকে। যুদ্ধ যেনো শেষ। বীরের মতো মাথা উচু করে এজেন্টস অব ডি, ম্যাকাপের সামনে দিয়েই বেরিয়ে গেলো।

বিজ্ঞানীর বাড়িতে সবাই এসে পড়েছে। টেলিপোর্টার, বুমেরাং, বলারস, ক্র‍্যাকার, ডেস্ট্রয়ার, ইব্রাহীম ও প্রহরী গ্রুপের সবাই পৌছে গেছে। ক্লান্ত, শ্রান্ত হয়ে পড়েছে যেনো সবাই।
-আচ্ছা আপনাদের সাতজনই কি আছেন না ঐ বৃষ্টির রাতে আরো অনেকেই ঐ দিন বাইরে ছিলো?
-হিসেবটা জানা যাচ্ছে না। ইব্রাহীম জানালা দিয়ে বাইরে ধ্বংসযজ্ঞ দেখছেন দুরের।
-তবে এমন করে দলে না ভিড়তেও পারে।
-তাহলে কি হবে?
-হয়তো অপরাধে জড়িয়ে পড়বে। শহরে খুন খারাবি বাড়বে। আমাদের লাগবে তাদের ঠেকানোর জন্য।
-আমরা... একটা দলের মতো আছি।
-হুম এসব করতে হবে গোপনে।
-নামটা গোপন থাকবে কেনো তাহলে?
-গোপন সংঘ রাখা যাক।
-হ্যা, গোপন সংঘ। সবাই সমস্বরে বলে উঠলো।


দু ঘন্টা পর। ম্যাকাপ হেডকোয়ারটারে। প্রফেসর তানভীর বড় বড় গলায় চেঁচিয়ে সার।
-এইটা ইকবাল না!
-আমরা কি মাঠে ছিলাম না?
-দেখো এইটা নকল মানুষ। ইকবালের চেহারা প্লাষ্টার করে বসানো হয়েছে।

বাঘা শরীফ বোকার মতো তাকিয়ে আছেন লাশটার দিকে। ইকবাল মরেনি। বেচে আছে। তাহলে কে এইটা।

আবারো বোকা বানিয়ে পালিয়েছে। (সমাপ্ত)

মন্তব্য ০ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.