নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সাধারণ কোন মানুষ না, একজন পাগল-মানব।

জে এন হৃদয়০১

পাগল-মানবের ব্লগে স্বাগতম।

জে এন হৃদয়০১ › বিস্তারিত পোস্টঃ

হুমায়ূন আহমেদ ও পাগল-মানব

১৩ ই নভেম্বর, ২০১৮ দুপুর ১:১৪



ডিসেম্বর মাস।খুব সম্ভবত আমার বয়স তখন ৭ বছর। আমার ছোটমামা আমাদের সাথেই থাকত। মামা স্থানীয় লাইব্রেরী থেকে বই এনে পড়ত। একদিন মামার ঘরে গিয়ে দেখি একটা বই। সাদা ও গেরুয়া রংয়ের বইটার কভারে লিখা- মীরার গ্রামের বাড়ি,নিচে লেখকের নাম হূমায়ুন আহমেদ। তখন তেমন একটা বই পড়তাম না। স্কুল ছুটি থাকায় সারাদিন ডিভিডিতে গেমস খেলতাম। তবুও কি কারণে ঠিক মনে নেই বিকেলের দিকে মামাকে জিজ্ঞেস করলাম;

-মামা এই হুমায়ূন আহমেদ আবার কোন লেখক?
(তখন কাজী নজরুল, রবীন্দ্রনাথ,সুকুমার রায় ছাড়া তেমন কাউকে চিনতাম না)

-খুব ভাল একজন লেখক।দাড়াও বিকেলে তোমার জন্য বই আনব।

কথামত বিকেলে মামা আমাকে একটা বই এনে দিল- তোমাদের জন্য রূপকথা। বইটির দুটি গল্প খুব ভাল লাগল- কানী ডাইনী, বোকা দৈত্য।


তার কিছুদিন পর- বোতল ভূত পড়লাম। এটিও বেশ ভাল লাগল।


এরপর ২০০৬ এ রংপুর জিলা স্কুলের এডমিশন টেস্টের জন্য কোচিং করতে লাগলাম।তখন শুধু পড়া, গেমসও বন্ধ। ডিসেম্বরে পরীক্ষা হল,ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলাম। ২০০৭ সাল,স্কুলে ক্লাস থ্রিতে পড়ি। স্কুলে ছুটির পরে ক্রিকেট খেলতাম, বাসায় গেমস খেলতাম। আর আম্মু স্কুল কোন কিছুর বন্ধ দিলে ছোটদের গল্পের বই এনে দিত পড়তাম,আর মাঝে মাঝে স্কুলের ঝালমুড়িওয়ালা দাদুর কাছ থেকে ৫ টাকা দামের ধারাপাতের সাইজের এক গুলো ভূতের গল্প, গোঁপাল ভাড়ের গল্প, হাসির গল্পের বই পাওয়া যেত এগুলো কিনে পড়তাম। ক্লাস সিক্স পর্যন্ত মোটামুটি আমার গল্পের বই পড়া বলতে এগুলোই। উল্লেখযোগ্য কোন বই বলতে এই সময়ে পড়া - হ য ব র ল, ঠাকুমার ঝুলি, অলৌকিক নয় লৌকিক এই কয়টি বই।



তারপর ক্লাস সেভেনে উঠে আমি পুরাপুরি বইপোকা হয়ে গেলাম- তিন গোয়েন্দা, ফেলুদা, কিশোর-আলো, আর সামনে যার যার গল্প পেলাম পড়তে লাগলাম। একদিন আম্মু হুমায়ূন আহমেদের দুটা বই এনে দিল; ছেলেটা, আমার ছেলেবেলা। এবার, আবার মনে পড়ল আরে এইত! সেই বোকা দৈত্যের হূমায়ুন আহমেদ। তখন এনটিভিতে হুমায়ূন আহমেদের একটা ধারাবাহিক চলত, কালা কইতর কিংবা উড়ে যায় বক পক্ষী, ঠিক মনে মনে নেই। সেই নাটকের অভিনেতা চ্যালেঞ্জারকে আমি এতদিন ভাবতাম, ইনিই বোধহয় হূমায়ুন আহমেদ, কারণ এ চারটা বইয়ের একটার পিছনেও হুমায়ূন আহমেদের ছবি ছিল না।শেষে আমার ছোটমামা, আমাকে হিমুর একটা বই দেয়, বইয়ের নামও "হিমু" সেখানেই প্রথম হুমায়ূন আহমেদের ছবি দেখি। এতদিন যাকে হূমায়ুন আহমেদ ভেবে এসেছি, সেই চ্যালেঞ্জার যে হুমায়ূন আহমেদ না, এটা ভেবে সেদিন মন খারাপও হয়েছিল,কারণ চ্যালেঞ্জারকে ভাল লাগত অনেক। তবে মন খারাপটা কেটে যায়, "হিমু" বইটা শেষ করে, আর এই সময় থেকেই হুমায়ূন আহমেদের প্রতি আসল ভালবাসা ও ভাল লাগাটা শুরু হয়। তারপর সবার কাছ থেকেই হুমায়ূন আহমেদের বই নিয়ে পড়তে লাগলাম,পিডিএফ ডাউনলোড করেও পড়তাম। ক্লাস টেনেই হিমু,মিসির আলি আর শুভ্র সিরিজের প্রকাশিত সব বই পড়ে শেষ করলাম।পাশাপাশি আরও অনেক গুলো বই পড়লাম,তাঁর নাটক দেখলাম, মুভি দেখলাম। ইন্টার ফার্স্ট ইয়ারে আসতে আসতে হূমায়ুন ভান্ডার যেন শেষ হয়ে আসছিল। কেননা, ক্লাস এইটে যখন পড়ি তখনই উনি চলে গিয়েছেন না ফেরার দেশে!


ওনার খুব কম বইই হয়ত এখন পড়া বাকী আছে কিংবা রেখেছি,বলতে গেলে সবই পড়া শেষ। তাই এখন হিমু সিরিজ, মিসির আলি সিরিজ, শুভ্র সিরিজ, মধ্যাহ্ন, জোছনা ও জননীর গল্প, লীলাবতী, রূপা, আয়নাঘর,সাঝঘর,মৃন্ময়ীর মন ভাল নেই, জীবনকৃষ্ণ মেমোরিয়াল হাইস্কুল কিংবা নন্দীত নরকের মত প্রিয় বই গুলো আবার পড়ে শেষ করে রিভিশনের মত।


দুই দুয়ারী, শ্যামল ছায়া, শ্রাবণ মেঘের দিনে,আমার আছে জল, নয় নম্বর বিপদ সংকেত,আগুনের পরশমনি,চন্দ্রকথা এই মুভিগুলোও সব দেখা শেষ।তাও দেখি সময় পেলেই। ভাল লাগে।


নাটক কিংবা টেলিফিল্মের কথা বললে, আজ রবিবার,উড়ে যায় বকপক্ষী,কালা কইতর,তারা তিনজন (যতগুলো আছে),এই বর্ষায়,বাদল দিনের প্রথম কদম ফুল,মন্ত্রী মহোদয়ের আগমন,পিশাচ মকবুল,চার দু গুণে চার, রহস্য,ব্যাংকড্রাফট,ছেলে দেখা,চন্দ্রগ্রহণ নাটকগুলো যে কতবার দেখেছি হিসাব নেই। চ্যালেঞ্জার, ফারুক আহমেদ,ডাঃ এজাজ,স্বাধীন খসরু- এই চারজনকে ভাল লাগে হুমায়ূন আহমেদের নাটকের কারণেই।

বাকী থাকল হুমায়ূন আহমেদের লিখা ও সিনেমায় ব্যবহার করা গাণ গুলো, উকিল মুনশী আর রশীদ উদ্দীন সম্পর্কে জানতে পেরেছি হুমায়ূন আহমেদের মুভির গানগুলো থেকেই। এছাড়াও তাঁর নিজের লিখা গানগুলো তো আছেই।একটা ছিল সোনার কন্যা,বরষার প্রথম দিনে,মাথায় পরেছি সাদা ক্যাপ,যদি মন কাঁদে তুমি চলে এসো চলে এসো এক বরষায় তার লিখা এ গানগুলো কিংবা তাঁর মুভিতে ব্যবহৃত, আমার গায়ে যত দুঃখ সয়,সুয়া চান পাখি,পূবালী বাতাসের মত গানগুলো সবসময় আমার প্লেলিস্টে থাকেই।


২০১৭ তে গিয়েছিলাম নুহাশপল্লীতেও। পুরো নুহাশপল্লীতে ঘুরে অন্যরকম এক অনুভূতি পেয়েছিলাম। মনে হয়েছিল এখানেই একসময় প্রিয় লেখক আসতেন, থাকতেন,শুটিং করতেন,কিংবা একান্তে সময় কাটাতেন। জায়গাটা পরিচিত লাগছিল অনেক,কারণ উনার এত নাটক আর মুভি দেখেছি তার অধিকাংশই তো এখানে করা। সেই পুকুর,সেই রাস্তা,সেই ভ্যান,সবকিছুই আমার চেনা। অন্যরকম এক ভাল লাগা নিয়ে বাড়ি ফিরেছিলাম।


হুমায়ূন আহমেদকে সরাসরি না দেখলেও,তিনি আমার জীবনের অনেকাংশে জুড়ে আছেন। লিখালিখি কিংবা বই পড়ার প্রতি ভালবাসা তৈরি হয়,হুমায়ূন আহমেদের বইগুলোর মাধ্যমে। সেই প্রিয় মানুষটার আজ জন্মদিন। শুভ জন্মদিন গল্পের যাদুকর। ওপারে ভাল থাকবেন।

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +৩/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ১৩ ই নভেম্বর, ২০১৮ রাত ৯:৩৪

রাজীব নুর বলেছেন: বাংলাদেশ গর্ব করতে পারে এমন একজন লেখক হচ্ছেন হুমায়ূন আহমেদ। হুমায়ূন আহমেদ এর এমন কোনো বই নেই, যা আমি পড়ি নাই। বরং প্রতিটা বই ৫০/৬০ বার করে পড়েছি। এখনও পড়ে যাচ্ছি। তৃপ্তিটা যেন বেড়েই চলেছে। আমার ধারনা, যারা স্যারের সব বই পড়েছে তারা কখনও স্যারকে নিয়ে কটূক্তি করতে পারবে না। বরং যারা কটূক্তি করে তারা স্যারের সব বই পড়েনি।
আজ এই মহান সাহিত্যিকের জন্মদিন। আমি জানি- একমাত্র পাঠক হৃদয়েই তিনি বেঁচে থাকবেন সারা জীবন। ১৩ নভেম্বর ও ১৯ জুলাই আসলেই মন ব্যাকুল হয়ে ওঠে কি যেন এক হারানোর বেদনায়। মনের মাঝের এক জমাট বাধা কষ্ট এই দুইটি দিনে, অশ্রু হয়ে চোখের কোন দিয়ে বেয়ে পড়তে চায়।

১৩ ই নভেম্বর, ২০১৮ রাত ১০:১৫

জে এন হৃদয়০১ বলেছেন: সহমত প্রকাশ করছি

আপনার সুন্দর ও মূল্যবান মতামতের জন্য আন্তরিক কৃতজ্ঞতা ও ধন্যবাদ জ্ঞাপন করছি।

২| ১৪ ই নভেম্বর, ২০১৮ সকাল ৯:৩০

অলিউর রহমান খান বলেছেন: আপনার বইপোকা হওয়ার গল্পটি বেশ ভালোই লেগেছে। লিখেছেন আরও ধারুন। যে যত বেশী বই পড়বে, সে ততই ভালো লিখবে। যেমন আপনিও লিখেছেন।
আমাদের জন্য কিছু রহস্যময় গল্প কিম্বা গোয়েন্দার গল্প লিখবেন। আমি গল্প পড়তে খুব ভালোবাসি।

১৪ ই নভেম্বর, ২০১৮ দুপুর ১:৪৫

জে এন হৃদয়০১ বলেছেন: ধন্যবাদ ভাইয়া আপনার সুন্দর মন্তব্যের জন্য

অবশ্যই লিখব গল্প।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.