নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সত্যর পথে অবিচল আমি থাকব

অন্ধকারে আলোর পথ

অন্ধকারে আলোর পথ › বিস্তারিত পোস্টঃ

এক দরিদ্র শাসকের গল্প

২৯ শে নভেম্বর, ২০১৫ সন্ধ্যা ৬:৩৯

শোন সাঈদ ! আমি তোমাকে হিমসের গভর্নর বানিয়ে পাঠাচ্চি ,কত খুশির এক সংবাদ,
যে ক্ষমতার লোভে পুত্র পিতাকে হত্যা করে,সন্তান তাঁর মা কে হত্যা করে ,
সারা দুনিয়াতে এতক্ষানি ক্ষমতার জন্য জনগনের তেল মারার শেষ হয় না ।
কিন্তু ক্ষমতায় যাওয়ার পর হিসাব –নিকাশ পাল্টে যায় ।কিন্তু যাদের ভিতর আল্লাহর ভয় আছে তাঁরা ত আর তা করতে পারে না ।
এত বড় দায়িত্বের কথা শুনে সাঈদ ইবনে আমের হযরত উমর রাযিঃ বললেন ,ভাই উমর তুমি আমাকে পরীক্ষায় ফেলো না ।তখন সেই উমর ক্রুদ্ধ হয়ে বললেন ,ছিঃ ছিঃ এটা কেমন কথা আমার মাথায় দায়িত্বের বোঝা চাপিয়ে তোমরা দূরে স্বরে থাকবে? তোমাকেই এই দায়িত্ব নিতে হবে , তারপর তিনি সাঈদকে হিমস নগরীর গভর্নর বানিয়ে দিলেন, এবং তাকে বললেন বাইতুল মাল থেকে কি তোমার ভাতার প্রয়োজন আছে, সাঈদ বললেন ভাতার কোন দরকার নাই, যদি নেই তা আমার প্রয়োজন থেকে বেশি হবে ।
তাঁর কিছুদিন পরের কথা , হিমস নগরী থেকে হযরত উমর (রাযিঃ) এর পরিচিত ও বিশ্বস্থ একটি প্রতিনিধি দল আসল, হযরত উমর তাদের বললেন আমাকে হিমসের দারিদ্র লোকদের একটি তালিকা তৈরী করে দেও ।আমি তাদের অভাব মোচণের চেষ্টা করব , প্রতিনিধি দল একটি তালিকা তৈরী করে খলিফাকে দিলেন , তিনি তালিকাটি নিয়ে চোখ বুলাতে লাগলেন ,হঠৎ একটি ণাম দেখে তিনি থমকে গেলেন,সেই নামটি হল সাঈদ ইবনে আমর ,তিনি বিস্মিত হয়ে তাদের জিগাস করলেন কে এই সাঈদ ইবনে আমর ?
তখন প্রতিনিধিদল বলল,ইনি আমাদের গভর্নর । আমাদের আমীর ।
হযরত উমর রাযিঃ বিস্মিত হয়ে বললেন তোমাদের আমির ও কি দারিদ্র ? প্রতিনিধি দল বলল,আল্লাহর কসম কলে বলছি, কথনও এমন হয় যে দিনের পর দিন তাঁর ঘরে আগুন পর্য়ন্ত জ্বলে না ।
এই কথা শুনে মজলিসের সবাই কাদতে লাগলেন , হযরত ওমর (রাঃ) তাঁর জন্য এক হাজার
স্বর্ণমুদ্রার একটি থলে দিয়ে বললেন, এটা
সাঈদ ইবনে আমেরের ব্যক্তিগত খরচের।
হযরত সাঈদ ইবনে আমের (রাঃ) থলেটি হাতে পেয়ে বললেন, "ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন।"
তার স্ত্রী জিজ্ঞাসা করলেন, কী হল, খলিফা মৃত্যুবরণ করেছেন নাকি? তিনি প্রতি উত্তরে বললেন, আখিরাত ধ্বংস করার জন্য দুনিয়াআমার কাছে এগিয়ে
এসেছে। তুমি এগুলো দরিদ্রদের মাঝে
বিলিয়ে দাও।
কিছুদিন পর হযরত ওমর (রাঃ) হিমসবাসীদের খবরাখবর নেওয়ার জন্য এলেন। সবাইকে একত্রিত করে জানতে চাইলেন,গভর্ণরকে নিয়ে তোমাদের কোন অভিযোগ আছে কি?
উত্তরে তারা বললেন, আমাদের চাঁরটি অভিযোগ আছে।

১. দৈনিক সকালে আমাদের কাছে উপস্থিত হন দেরি করে।
২. রাতে কখনো আমাদের আরজি শোনেন না।
৩. সপ্তাহে এক দিন আমাদের মাঝে আসেন না।
৪. মাঝে মাঝে আমাদের গভর্নর এমন ভাবে অজ্ঞান ও বেহুশ হয়ে পরেন যেন তার পার্শে উপবিষ্ট লোকদেরও চিনতে পারেন না ।
হযরত ওমর (রাঃ) হযরত সাঈদ ইবনে আমের (রাঃ) এর কাছে এসব অভিযোগের জবাব চাইলে তিনি বললেন,
১. ‘‘আমার বাসায় কোন কাজের লোক নেই। বাসার সকল সদস্যের খাবার তৈরিতে স্ত্রীকে আমার সহযোগিতা করতে হয়।তাই সকাল বেলা আটা পিষা,
খামির তৈরি করা, রুটি বেলা এবং রুটি
সেঁকার প্রতিটি কাজে আমাকে অংশ গ্রহণ করতে হয়। ফলে বের হতে দেরি হয়ে যায়।’’
২. ‘‘আমি আমার দিবসকে নির্ধারণ করেছি মানবসেবার নিমিত্তে। আর রাত্রকে নির্ধারণ করেছি আল্লাহর ইবাদতে।’’
৩.‘‘গায়ের পোশাক ছাড়া আমার আর কোন পোশাক নেই। সপ্তাহে একদিন এটি ধুয়ে শুকাতে হয়। অতঃপর গায়ে দিই
আর এতেই আমার একটা দিন ব্যয় হয়ে যায়। ফলে সেদিন আর জনসম্মুখে
আসা সম্ভব হয় না।"
৪. গভর্নর সাঈদ ইবনে আমের আল জুমাহী রাদীয়াল্লাহু তাআলা আনহু বললোঃ "হে আমীরুল মু'মিনীন ! মুশরিক থাকা অবস্থায় আমি মক্কার এক জনসমুদ্রের মাঝে খুবাইব ইবনে আদি রাদীআল্লাহু তাআল আনহুর শাহাদাতের নির্মম দৃশ্য স্বচক্ষে দেখেছি । কুরাইশরা জীবিত অবস্থায় তার অঙ্গ প্রত্যঙ্গ তরবারির আঘাতে টুকরো টুকরো করছিলো আর বলছিলোঃ তুমি কি রাজি আছো / যদি তোমাকে ছেড়ে দিয়ে তোমারই উপস্থিতিতে তোমার পরিবর্তে মুহাম্মদকে হত্যা করি ? উত্তরে খুবাইব রাদীয়াল্লাহু তাআলা আনহু বলছিলেনঃ "আল্লাহর শপথ ! মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে হত্যার বিনিময়ে আমি মুক্তি পেয়ে আমার পরিবার-পরিজনের নিকট নিরাপদে ফিরে যাওয়া তো দুরের কথা, পথে হেটে যেতে তার পায়ে একটি কাঁটার আচড় লাগুক তাও আমি সহ্য করতে পারবো না । মুনাফিক জীবন থেকে শহীদি মৃত্যু আমার কাছে অনেক উত্তম" ।
সাঈদ পুনরায় বললোঃ এ করুন দৃশ্যের কথা স্বরন হলেই আমার মনে প্রশ্ন জাগে, কেন আমি সেদিন খুবাইব রাদীয়াল্লাহু তাআলা আনহুকে সাহায্য করিনি ? আল্লাহ ও রাসুলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমার এই অপরাধকে ক্ষমা করবেন না । এই ভয়ে আমি মাঝে মাঝে আতংকগ্রস্থ হয়ে পড়ি এবং জ্ঞান হারিয়ে ফেলি ।
গভর্নর সাঈদের এই উত্তর শুনে আমরা অত্যন্ত মুগ্ধ হলাম । সমস্ত প্রশংসা সেই মহান আল্লাহর জন্য যিনি সাঈদের প্রতি আমার সুধারনাকে আরো একবার সত্য পরিনত করেছেন ।
আমীরুল মু'মিনীন উমর ফারুক রাদীয়াল্লাহু তাআলা আনহু মদীনা প্রত্যাবর্তনের কিছুদিন পর সাঈদ ইবনে আমের আল জুমাহী রাদীআল্লাহু তাআলা আনহুর কাছে আর্থিক সাহায্য স্বরূপ পুনরায় একহাজার স্বর্ণমুদ্রা পাঠালেন । হিমসে পৌঁছুনর পর সাঈদের স্ত্রী অত্যন্ত আনন্দিত হলেন । তিনি উৎফুল্ল হয়ে স্বামীকে বললেনঃ আপনার এই খেদমতের জন্য আল্লাহ আমাদের যে অর্থনৈতিক প্রাচুর্য দান করেছেন সে জন্য তার প্রতি অশেস শুকরিয়া জানাই । অনেক বিলম্ব হলেও এখন অন্তত আমাদের জন্য কিছু প্রয়োজনীয় খাদ্য দ্রব্যাদি ও পানাহারের সামগ্রি মজুদ করুন এবং পরিবারের কাজের জন্য একজন কর্মচারী নিয়োগ করুন ।
সাঈদ রাদীয়াল্লাহু তাআলা আনহু তার স্ত্রীকে বললেনঃ এর চেয়েও উত্তম কোনো জিনিস তুমি কি পেতে চাও ?
স্ত্রী জানতে চাইলেনঃ তা কি ?
গভর্নর সাঈদ বললেনঃ এগুলো অভাবগ্রস্থদের মাঝে বিলিয়ে দাও । খাদ্য দ্রব্যাদি ও কর্মচারীর চেয়েও অধিক গুরুত্বপূর্ণ
একটি জিনিস আমাদের দরকার ।
স্ত্রী বললেনঃ তা কী ?
তিনি বললেনঃ আমরা আল্লাহকে কর্যে হাসান দান করতে চাই ।
স্ত্রী বললেনঃ হা তাই করুন । এতে নিঃসন্দেহে আমরা উত্তম পুরস্কারে ভূষিত হবো ।
সাঈদ ইবনে আমের আল জুমাহী রাদীয়াল্লাহু তাআলা আনহু তার কার্যালয় ত্যাগ করার পূর্বেই এই স্বর্ণমুদ্রাগুলো ভিন্ন ভিন্ন থলিতে ভাগ করে পরিবারের একজনকে দায়িত্ব দিয়ে বললেনঃ এগুলো অমুক গোত্রের বিধবাদের, অমুক গোত্রের ইয়াতীম সন্তানদের, অমুক বংশের দুস্থ ব্যক্তিদের এবং অমুক বংশের ফকীর মিসকিনের মাঝে বিতরন করে দাও ।

এরাই ছিলেন সত্যকারের দেশ শাসক, যারা নিজেদের জীবনের জন্য বিন্দু মাত্র মায়া করেন নি, চরম অভাবের মূহর্তে তারা স্বরন করেছেন দরিদ্র মানুষের কাথে, তার প্রজাদের কথা , জাতির কাছে প্রশ্ন এমন শাসক কি আর পাওয়া যাবে ?

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.