নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

জয় পাঠক

সহজ আলোয় দেখা...

জয় পাঠক

যন্ত্রের জন্যে পদ্য, মানুষের জন্যে গদ্য - এই নিয়ে ভাবাভাবির সারাবেলা

জয় পাঠক › বিস্তারিত পোস্টঃ

বিশ্ব জয়ের স্বপ্নঃ সবাই মিলে!

১১ ই আগস্ট, ২০১৪ বিকাল ৩:৫৬





উচ্চমাধ্যমিক পর্যন্ত লেখালেখির এক আশ্চর্য জগতের মধ্যে ডুবে ছিলাম, কাঁধে চটের ব্যাগ ঝুলিয়ে পত্রিকা অফিসে যাই, বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্রের ছাদে গুরু-গম্ভীর আড্ডা দেই, চারু কলায় গিয়ে গলা ছেড়ে গান গাই বন্ধু নিয়ে। সাহিত্য-সাংবাদিকতা করে সৃষ্টিশীল জীবন পার করে দেবো এই রকম একটা লক্ষ্য নিজের অজান্তেই তৈরি হয়ে গিয়েছিল। কিন্ত সেই সুখ বেশীদিন সইলো না। বাবা বিজ্ঞানের লোক বলে মোটামুটি ধরে বেঁধে ভর্তি করে দিলেন বেসরকারী বিশ্ববদ্যালয়ের কম্পিউটার বিজ্ঞানে।



প্রোগ্রামিং তো দূরে থাক, সারা জীবনে কম্পিউটারও অন করে দেখিনি। সুতরাং আমি পড়লাম অথৈ সাগরে। কম্পিউটার ল্যাবে গিয়ে পাশের সহপাঠিটিকে অনুরোধ করি টার্বো প্যাসকেলের নীল স্ক্রীণটা এনে দিতে। টীচার এসে ক্লাসওয়ার্ক দেন। সবাই খটাখট প্রোগ্রাম লেখা শুরু করে। আমি ঘামতে থাকি, ঢোঁক গিলতে থাকি, তাতে কোন বিশেষ সুবিধা হয় না। প্রোগ্রামিং-এর সাথে ঘামানো বা ঢোঁক গেলার কোন সম্পর্ক নেই। শুকনো মুখে প্রায় খালি স্ক্রীণ রেখে ক্লাস শেষ করি।



প্রথম কয়েকটা ক্লাস এভাবেই গেল। আমার একটা সমস্যা হলো যেকোন জিনিস চট করে ধরতে পারি না। একটু সময় লাগে (এখনো কেউ নতুন কিছু বুঝিয়ে বললে প্রথম কতোক্ষণ বোকার মতো তাকিয়ে থাকি)। তবে খানিকটা লেগে থাকলে যে কোন বিষয় ধরা দিতে থাকে আমার কাছে। প্রোগ্রামিং-এর ক্ষেত্রেও তাই হলো। আস্তে আস্তে এখানে স্বচ্ছন্দ বোধ করতে থাকলাম। মনুষ্য সাহিত্যের চাইতেও কম্পিউটারের জন্যে গল্প-গাঁথা তৈরি কম ইন্টারেস্টিং মনে হলো না।



আমার প্রোগ্রামিং-এর প্রতি এই গভীর ভালোবাসা তৈরির পেছনে যেক'জনের অবদান আছে তাদের একজন মশিউর ভাই। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে সিনিয়র ভাই। এসিএম প্রোগ্রামিং টিমের দলপতি ছিলেন, দেশে বিদেশের বড় বড় প্রতিযোগিতায় ভালো অবস্থান দখল করেছেন। তখন সবেমাত্র পাশ করে লেকচারার হিসেবে জয়েন করেছেন। তার প্রথম ছাত্রদের মধ্যে আমিও একজন। প্রোগ্রামিং-এ আগ্রহ দেখে নানা উৎসাহ দিতেন। একদিন মশিউর ভাই বড় ধরণের একটা চমক দিলেন। সিঙ্গাপুর থেকে একটা প্রোগ্রামিং প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে ফেরার পথে আমার জন্যে একটা সুন্দর নোটবুক আর দামী কলম নিয়ে এলেন। নোট বুকে লিখে দিলেন - "To My First & Best Student"। উপহার পেয়ে আমি ঘাবড়ে গেলাম। সাধারণত ছাত্ররা বেশী গ্রেডের আশায় টিচারকে উপহার দেয়, এখানেতো দেখি ঘটনা উলটো! কী তার করা, বেশী করে প্রোগ্রামিং করতে থাকি, কোনভাবেই সাধারণ রেজাল্ট করা যাবেনা।



সে সেমিস্টারে মশিউর ভাই'র সি প্রোগ্রামিং-এর কোর্সে ১০০ তে ১২৮ পেয়েছিলাম (সি প্রোগ্রামিং-এ ছাত্র-ছাত্রীদের ব্যপক ফেল রোধে ভালো-খারাপ সবাইকে ১০ করে তিনবার গ্রেস দেয়া হয়েছিল!)।



প্রোগ্রামিং ভালো লাগার করণে পুরো কম্পিউটার বিজ্ঞান স্নাতক শেষ করতে আর বেগ পেতে হয়নি।



এরপরে দেশে প্রায় ন'বছর কাটিয়ে দিলাম। এই নাতিদীর্ঘ সময়টিতে অনেকের মধ্যেই এই নেশাটি সঞ্চারিত করেছি। তবে একটা সময়ে একঘেঁইয়েমিও পেয়ে বসতে থাকলো। কারণ এখানকার প্রোজেক্টের চ্যালেঞ্জ সীমিত। ঠিক করলাম বাইরে যাবো।



আমার দেশান্তরী হবার কথা শুনে পেশা জগতের অনেক বন্ধু-শুভাকাঙ্খী দুঃখিত গলায় বলেছিলেন, না গেলেই কি নয়? তাদের হয়ত ধারণা হয়েছিল, আমি চলে গেলে দেশের সফটওয়্যার শিল্পের বিশাল ক্ষতি হয়ে যাবে। তবে আমার ধারণা, দেশের সফটওয়্যার শিল্পের চাইতেও ব্যক্তিগতভাবে তারা আমাকে পছন্দ করেন বলে এমনটা বলছেন।



তবু মনের ভেতর একটা খচখচ করছিল, গেলাম মশিউর ভাই'র কাছে। মশিউর ভাই হালকা ধমকের গলায় বললেন, বিদেশে বড় আকারের কাজ করলে তোমার যে অভিজ্ঞতা হবে, সেটা দিয়ে দেশকে অনেক কিছু দিতে পারবে, এবং সেটা তুমি ফিরে এসে কিংবা বিদেশে বসেই করতে পারবে। আর কোন দ্বিধা থাকলো না। পা দিলাম প্রথম বিশ্বের দেশগুলোর একটিতে।



এতোক্ষণ ভূমিকা করলাম। এবার আসল কথায় আসি। আমার অনেকগুলো স্বপ্নের একটি হলো দেশে আন্তর্জাতিক মানের একটি সফটওয়্যার প্রতিষ্ঠান তৈরি করা। আমাদের দেশে অনেক সফটওয়্যার প্রতিষ্ঠান থাকলেও "ট্রু" সফটওয়্যার প্রতিষ্ঠান একটিও নেই, যেটি মাইক্রোসফট, গুগলের মতো প্রতিষ্ঠানগুলোর মানের সাথে পাল্লা দিতে পারে।



আমি জানি দেশের প্রেক্ষিতে এরকম একটি প্রতিষ্ঠান তৈরি খুবই কঠিন কাজ। কিন্তু অসম্ভব নয়। এজন্যে আন্তর্জাতিক অভিজ্ঞতার পাশাপাশি দেশের প্রেক্ষিতে কিছু কাজও শুরু করেছি। এর মধ্যে একটি হলো, বিভিন্ন পলিসি মেকারদের সাথে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে কাজ করা, যেন দেশে বিশ্বমানের ডেভেলপারদের একটা নিয়মিত যোগান তৈরি হয়। পত্রিকায় কিছু লেখা লেখিও শুরু করেছি। সামনে কিছু ভার্চুয়াল (এবং দেশে থাকার সময়টিতে কিছু একচুয়াল) ইভেন্ট করার ইচ্ছা আছে।



এরকম একটি প্রতিষ্ঠান তৈরির পুরো প্রক্রিয়াটিতে অনেককেই দরকার হবে আমার পাশে। এক্ষেত্রে কারো মতামত বা পরামর্শ থাকলে ইনবক্সে বা কমেন্টে জানাতে পারেন। দেশে এধরণের প্রতিষ্ঠান কেউ করতে চাইলেও যোগাযোগ করতে পারেন আমার সাথে। সামনেই দেশে আসছি। চাইলে কথা হতে পারে সামনা সামনি!



যারা সবে মাত্র কম্পিউটার বিজ্ঞানে পড়ছেন কিংবা মাত্র পেশা জীবনে ঢুকেছেন, যোগাযোগ রাখতে পারেন তারাও। আমি আমার সাধ্য অনুযায়ী কিছু দিক-নির্দেশনা দেয়ার চেষ্টা করবো। তবে শর্ত একটাই সফটওয়্যার প্রকৌশলে লং টার্ম কমিটমেন্ট থাকতে হবে।



শুরুটাতো আগে করি। দেখা যাক, কতোদূর যাওয়া যায়!



সবার জন্যে শুভ কামনা। শুভ চিন্তার জয় হোক!

মন্তব্য ৮ টি রেটিং +৪/-০

মন্তব্য (৮) মন্তব্য লিখুন

১| ১১ ই আগস্ট, ২০১৪ বিকাল ৫:০৬

আজমান আন্দালিব বলেছেন: শুভ কামনা। শুভ চিন্তার জয় হোক!

২| ১১ ই আগস্ট, ২০১৪ বিকাল ৫:১৩

মুনতাসির নাসিফ (দ্যা অ্যানোনিমাস) বলেছেন: সি প্রোগ্রামিং কোর্স টায় ফেলের হার সর্বাধিক হওয়াটা আমার কাছে খুব একটা অদ্ভুত মনে হয় না কখনো! অভিজ্ঞতা থেকেও দেখি, এ জিনিসটা যখন প্রথম পড়তে শুরু করে কেউ, প্রথমটায় নতুন নতুন প্রিলিমিনারি কোডিং যেমন print f scan f, if else, looping, function, array, file ইত্যাদি ইত্যাদি ব্যাপার গুলো ধরতে পারা যায় খুব সহজেই, কিন্তু পরবর্তীতে প্র্যাকটিস এবং লেগে থাকার অভাবে লজিক ডেভেলপ করা সম্ভব হয় না কঠিন কিংবা কমপ্লেক্স প্রবলেম গুলোর ক্ষেত্রে ...

আমি নিজেও সি তে ভালো করতে পারিনি ... :(

কিন্তু, ১০০ তে ১২৮ !!

৩| ১১ ই আগস্ট, ২০১৪ বিকাল ৫:২৭

ডি মুন বলেছেন: আপনার আন্তর্জাতিক মানের সফটওয়্যার প্রতিষ্ঠান তৈরির স্বপ্ন সফল হোক।

শুভকামনা রইলো

৪| ১১ ই আগস্ট, ২০১৪ বিকাল ৫:৪৪

ক্যপ্রিসিয়াস বলেছেন: অনেক অনেক শুভ কামনা রইল ।

৫| ১১ ই আগস্ট, ২০১৪ বিকাল ৫:৪৫

লেখোয়াড় বলেছেন:
অভিনন্দন।

৬| ১১ ই আগস্ট, ২০১৪ সন্ধ্যা ৭:২৭

আবুহেনা মোঃ আশরাফুল ইসলাম বলেছেন: ভালো চিন্তা। দেশের ও দশের জন্য কিছু করার ইচ্ছা অবশ্যই আপনাকে ইতিবাচক ফলাফল এনে দেবে। সাফল্য কামনা করছি।
ধন্যবাদ, জয় পাঠক।

৭| ১২ ই আগস্ট, ২০১৪ রাত ১২:০৭

সুমন কর বলেছেন: অনেক সুন্দর কথা বলেছেন।

গণিত পড়ার কারণে বিশ্ববিদ্যালয়ে বাধ্য হয়েই সি পড়তে হয়েছিল। তখন পারতাম, এখন ভুলে গেছি। প‌্যাকটিস নাই বলে।

ভালো থাকবেন।

৮| ১২ ই আগস্ট, ২০১৪ সকাল ৭:১৯

জিরো ডাইমেনশন বলেছেন: আমি মওলানা ভাসানী প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে আইসিটি তে পরি। প্রগ্রামিং আমার কাছে নেশার মত। নেশা যেমন প্রতিদিন না করলে ভাল লাগে না আমার কাছে প্রগ্রামিং ও তেমনি। লেখাটা পড়ে অনেক ভাল লাগল।ভাল থাকবেন।আপনার সফটওয়ার ফার্ম এর জন্য শুভকামনা রইল।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.