নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ছাইয়ের নেই আগুনের ভয়

জুলিয়ান সিদ্দিকী

জগতের সব কাজই আমি পারি না। অনেক কাজে অলস হলেও লিখতে কখনও ক্লান্তি বোধ করি না। এতে করে আমার সময়গুলো ভালো কাটে।

জুলিয়ান সিদ্দিকী › বিস্তারিত পোস্টঃ

কয়লাপোড়া দীর্ঘশ্বাসের রঙ-৮

১৫ ই জুলাই, ২০১৪ রাত ১১:০৭





কয়লাপোড়া দীর্ঘশ্বাসের রঙ-১ কয়লাপোড়া দীর্ঘশ্বাসের রঙ-২ কয়লাপোড়া দীর্ঘশ্বাসের রঙ-৩ কয়লাপোড়া দীর্ঘশ্বাসের রঙ-৪ কয়লাপোড়া দীর্ঘশ্বাসের রঙ-৫ কয়লাপড়া দীর্ঘশ্বাসের রঙ-৬

কয়লাপড়া দীর্ঘশ্বাসের রঙ-৭





সেদিন কুটিলা স্টেশনে রেলগাড়িটা এসে থামবার পর কেমন যেন সম্মোহিতের মতো এগিয়ে গিয়েছিল মতিন। মনে হচ্ছিল ‘ঝকঝকে দানো’ আর কেউ নয়, তারই যাবতীয় স্বপ্নের বিভিন্ন অংশ নিয়ে হাজির হয়েছে তার নানা বগী অভ্যন্তরে। এই লোহার গাড়ি যেন তারই স্বপ্নের বাহন। সে একেবারে সামনে থাকা কালো কুচকুচে রঙের রহস্যময় ইঞ্জিনটার কিম্ভুত মুখ দর্শন করে অবচেতনে যেন শুনতে পাচ্ছিল তার হাসি। যেন সে তারই অপেক্ষায় আছে। আর কী আশ্চর্য মাঝে মাঝে রেল রাস্তা দেখতে আসার পর হঠাৎ হঠাৎ দেখা হয়ে যাওয়া লালচে সাহেবটি ইঞ্জিনের জানালা দিয়ে মুখ বাড়িয়ে বলে উঠেছিল, ইয়াং ম্যান হাউ আর ইউ? কাম এন্ড জয়েন আস!



মতিনের হৃৎপিণ্ড যেন থেমে গিয়েছিল কিছুক্ষণের জন্য। বিলাতি লোকটির প্রস্তাবটাকে কেন যেন উপহাস জাতীয় কিছু বলে মনে হলো না। তাই যেন সে অকপটে বলতে পেরেছিল যে, কীভাবে ইঞ্জিন চলে তা সে দেখতে চায়। কয়লা পুড়ে পুড়ে কীভাবে ইঞ্জিনের জন্য শক্তি তৈরি হয় তা দেখতে চায় সে।



-ওয়েল! কাম!



বলে হাত ছানি দিয়ে ডেকেছিল লোকটি। তারপর দরজা দিয়ে লাফিয়ে নেমে খানিকটা পেছনের দিকে একটি দরজা খুলে দিয়ে উঠে পড়েছিল। মতিন তার পেছন পেছন গিয়ে আরো বেশি অবাক হয়ে গিয়েছিল, একটি বৃহৎ আকৃতির চুলায় গণগণে আগুন যেন সব কিছু পুড়িয়ে দিতে অনবরত জ্বলছে। সাহেবটি একটি লম্বা হাতার মতো কিছু দিয়ে কয়েকবার কয়লা তুলে ছুঁড়ে দিলো আগুনের ভেতর। আর নতুন কয়লা পেয়ে যেন হিস হিস শব্দে আরো বিক্রমে জ্বলছিল আগুনের মুখ। বেশ কিছুটা দূরে থাকলেও সে টের পাচ্ছিল আগুনের আঁচ। আর সেই আঁচই যেন তার জন্যে একটি বড় বিস্ময় তৈরি করে দিয়েছিল।



আগুনে কয়লা ছুঁড়ে দিতে দিতে সাহেব লোকটি বলেছিল, তার সহযোগী হিসেবে সে কাজ করতে চায় কি না। তাহলে বাড়ি থেকে মা-বাবার অনুমতি নিয়ে যেন সে আরো দশদিন পর এখানে এসে স্টেশন মাস্টারের সঙ্গে দেখা করে।



ঝকঝকে দানো তাকে নতুন একটি স্বপ্ন ধরিয়ে দিয়ে যেন হুস হুস করে চলে গিয়েছিল কোনো অজানার উদ্দেশ্যে। তারপর থেকে সে কেমন যেন ঝিম মেরে গিয়েছিল। কুট্টির লজ্জাবনত মুখের দিকে তাকিয়ে মনে হচ্ছিল, যেন ইঞ্জিনের পেটের ভেতরকার সেই গণগণে চুলা, কেউ নিভিয়ে দেবার অপেক্ষায় আছে কেবল। একদিকে কুট্টি অন্যদিকে নতুন আরেকটি জীবনের হাতছানি, মাঝখানে পড়ে গিয়ে যেন কেবল খাবি খাচ্ছিল মতিন। কয়েকদিন গ্রামের এখানে ওখানে ঘুরে বেড়িয়ে সময় কাটালো সে। তার অন্তর্গত অস্থিরতা কারো চোখে পড়েনি। জানা হয়নি কুট্টির বাঁধনকে অস্বীকার করবার দুর্নিবার শক্তির সন্ধানে সে পাগল পাগল হয়ে আছে। কী আছে কুট্টিতে? কী বা তাকে দিতে পারবে সে? একটি অশিক্ষিত মেয়ের কাছ থেকে পাবার মতো কিছু নেই। স্বামী-স্ত্রীর কাজ তো কেবল শুয়ে থাকা। নয়তো একে অন্যকে জড়িয়ে ধরে, কখনো বা একে অন্যের গায়ে হাত-পা তুলে দিয়ে নিঃসাড় ঘুমিয়ে থাকা। খুব বেশি হলে মাঝে মধ্যে তর্ক-বিতর্ক, যার পরিণতি দু একটা চড়-চাপড়, কিছুক্ষণ বা কয়েক প্রহর মুখ ভার করে থাকা। আজগর আর মমতাজের মতো এমন পানসে জীবনের চাইতে ইঞ্জিনের কয়লাবরদার হওয়া, প্রতিদিন নানা স্টেশনে থামা, নিত্য নতুন মানুষ আর জায়গা দেখবার উত্তেজনা ঢের প্রত্যাশিত। কিন্তু মায়ের মুখের দিকে তাকালে সে আর কোনো সিদ্ধান্তে পৌঁছুতে পারে না। তবে সাহেবের আরেকটি প্রস্তাব তার বেশি ভালো লেগেছে। আস্তে ধীরে সে সব কিছু বুঝে উঠতে পারলে এমন একটি রেলগাড়ি তার জিম্মায় ছেড়ে দিতে কোনো সমস্যা হবে না। তখন সে নিজেই বিভিন্ন স্টেশনে থামাবে ট্রেন।

স্টেশনে ঢুকবার আগে নিজেই বাজাবে সেই বাঁশি- কু-উ-উ। তারপর ঝিক ঝিক ধ্বনিতে আশপাশ কাঁপিয়ে ছুটতে থাকবে পরের স্টেশনের উদ্দেশ্যে। এমন একটি রোমাঞ্চকর জীবনের হাতছানি উপেক্ষা করা খুব কঠিন। বলা যায় অসাধ্য একটি কাজ মতিনের পক্ষে।



যদিও মায়ের বা ভাইয়ের সঙ্গে এ বিষয়ে কথা বলেনি মতিন। তবু প্যাট্রিক জনসন আর ইয়াসিনের সঙ্গে অনেকবার আলাপ হয়েছে। ইয়াসিনের মতে কুট্টির চেয়ে মেম অনেক অনেক ভালো হবে। মেমের পেটে জন্ম নেয়া বাচ্চাগুলোর গায়ের রঙ গাঙের তলার মাটির মতো না হয়ে বিলাতি সাহেবদের মতো হলে কেউ আর তাদের ছোটলোক বা ছোটজাতের মানুষ বলে তুচ্ছ করতে পারবে না। ইয়াসিনের ইচ্ছে সে আরো বড় কিছু হবে। শিবুর মতো ইংলন্ডে গিয়ে পুরোপুরি সাহেব হয়ে যাবে। দেশে ফিরে আসবে না কখনোই।



কথা ছিল বৈশাখী মেলার পর আজগর আর জালালুদ্দিন সরকার বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে যাবে। কিন্তু হঠাৎ করেই যেন সব পরিকল্পনা একদিনেই বদলে দিলেন মা শরবতের নেসা। বললেন, মেলার দুইদিন আগে ভালা দিন আছে। বৈশাখে আর দিন ভালা নাই!



তারপর সিদ্ধান্ত হয় মতিন নতুন ধুতি আর পাঞ্জাবি পরে যাবে। গয়নাগুলো সেই সঙ্গে করে নিয়ে যাক। ফলে মায়ের কথা রাখতে গিয়ে মতিনের চিন্তা চেতনা বলতে গেলে বিক্ষিপ্ত হয়ে যায়। অথচ মেলা শুরুর দিনই তাকে যেতে হবে কুটিলা স্টেশন মাস্টারের সঙ্গে দেখা করতে। কুট্টি যেন তার পা দুটোকে নতুন কোনো অদৃশ্য শেকলে জড়িয়ে ফেলল।



সন্ধ্যার কিছুটা আগে দিয়েই কুট্টি তাকে হাতছানি দিয়ে ডাকে ঘরের পেছনে। এদিক ওদিক তাকিয়ে সতর্ক পদক্ষেপে এগিয়ে যায় মতিন। বলে, এমনে লুহাছাপা কইরা ডাক দিলি কী বুইজ্যা?



-একটা কতা আছে। না করন যাইতো না।



বলতে বলতে কুট্টি হাতের নখ খোঁটে দৃষ্টি আনত রেখে।



মতিন খানিকটা অস্থির হয়ে বলল, না করন যাইতো না এমন কী কতা। কাইল যেমনেই হউক আমারে বেইন্যালা বেইন্যালা পথ লওয়াইয়া দিস।



-কাইল কই যাইবো? অহন কোনো হানো যাওনের কাম নাই!



-আরে মাইয়া অনেক বড় একটা কাম। আমি যহন রেলগাড়ি চালাইয়াম তহন তুইও ঘুরতারবি আমার লগে দেশ-বিদেশ।



-কী কইলো কতাডা? রেলগাড়ি চালাইবো এইডা কি মুহের কথা?

কুট্টির মুখে একই সঙ্গে খুশি আর ভয় যেন মিশে থাকে পাশাপাশি।



-অহনই এই কথা কইচ্চা কেউরে!



-কইলে কী অইবো?



জিজ্ঞাসার সঙ্গে সঙ্গে শীতের শিশিরের মতো খানিকটা অভিমানও যেন জমে থাকে কুট্টির কণ্ঠস্বরে।



-চাকরিডা আগে পাইয়া লই।



-চাকরি করবো কোন দুঃখে? জমি-জিরাত-গাই-গরু কোনডার অভাব?



-অভাবে চাকরি করে কয়জনে? মিশনের সাবেগো কাছে এই কয় বছর কী হিকলাম তাইলে?



-থাউক, আর কইতাম না কিছু।



বলবার সঙ্গে সঙ্গেই যেন কুট্টির মুখ সন্ধ্যার নেমে আসা অন্ধকারের সঙ্গে সঙ্গে কালো হয়ে ওঠে আরো। তারপর কেমন শীতল কণ্ঠে সে জানায়, রাইত অইতাছে। বাইর-ঘর ঝাড়ু দিয়া চেরাগ দেই!



-কোন কতার লাইগ্যা ডাইক্যা আনলি কইলি না?



-থাউক। কওন লাগতো না!



বলে, পেছনের দরজা দিয়ে ঘরের ভেতর ঢুকে যায় কুট্টি।



রাতটা যেন কেমন গুমোট হয়ে থাকে কুট্টির শীতলতায়। মতিন অনেকবার চেষ্টা করেছে তার এমন আচরণের পেছনে হেতু জানতে। কিন্তু কুট্টির বারংবারই বলেছে, কিছু না।



মতিনের ইচ্ছে হয় কুট্টির পাশ থেকে উঠে গিয়ে বাইরে গিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে। সম্ভব হলে বাড়িই চলে যেতে পারতো। কিন্তু এভাবে হুট করে কাউকে কিছু না বলে গেলে সেটাকে পালিয়ে যাওয়া হিসেবেই দেখবে সবাই। আর তা নিয়ে মুখে মুখে নানা রকম গল্প ছড়াতেও দেরি হবে না। কুট্টি যতটা বোঝে তার বেশি তো তাকে বোঝানো যাবে না। আর তখনই মেয়েদের নিয়ে করা প্যাট্রিক সাহেবের মন্তব্যটা মনে পড়ে তার। একটি দীর্ঘশ্বাস ফেলে মনেমনে হাল ছেড়ে দিয়ে সে অন্ধকারের কালোর দিকে দৃষ্টি মেলে তাকিয়ে থাকে বেশ কিছুক্ষণ। বাইরের ঝিঁঝিঁর ডাক গাঢ় থেকে গাঢ়তর হচ্ছে। ঘরের অন্ধকারও তেমন ঘন হতে থাকে ধীরে ধীরে।



পরদিন সকাল সকালই সে বের হতে পারে মামা অথবা শ্বশুর বাড়ি থেকে। কুট্টির মুখে কোনো অনুযোগও শোনা যায় না। এমন কি গত রাতের উদ্ভট আচরণের কিছুই প্রকাশ পায় না দিনের আলোয়। অন্যান্য দিনের মতো যেন স্বাভাবিক, তেমনই হাসিখুশি। তবু মতিনের মনের ভেতর কোথাও যেন খানিকটা খচখচ করে উঠেই মিলিয়ে যায় বোধটা। প্রসন্ন মনেই সে কুটিলা স্টেশন মাস্টারের ঘরে এসে উপস্থিতি জানান দিতেই দেখতে পায় কালো মতো একজন বিজাতীয় ভাষায় বলে উঠল কিছু।



বুঝতে না পেরে সে ভাঙা ভাঙা ইংরেজিতেই জানালো তার আসবার হেতু।

লোকটির মুখে হাসি ফুটে উঠতে দেখা গেল। কিছুটা অপরিছন্ন বাংলায় জানাল যে, সে ম্যালকম থুরা। এখানকার স্টেশন মাস্টার। মতিন কাজ করতে চাইলে তাকে একটি কাগজে দস্তখত করতে হবে। যেদিন রাতের শিফটে গাড়িতে উঠবে, তার আগে সন্ধ্যার দিকে তার বাড়িতে চলে এলেই হবে। বাংলা ঘরে ঘুমিয়ে মধ্যরাতে কেউ একজন ডেকে নিয়ে আসবে তাকে। একদিন পরপর কাজ। এখান থেকেই উঠবে আবার ফিরতি গাড়িতে এসে এখানেই নেমে যাবে। মাস ফুরালে বেতন পাবে পাঁচ টাকা।

কথা শুনে মনেমনে বিষম খায় মতিন। পাঁচ টাকা যে অনেক টাকা। কো করবে সে অত টাকা দিয়ে? তবু সে খুশিটা চাপা দিয়ে রাখে। কুট্টি শুনলে নিশ্চয় আরো বেশি খুশি হবে। কিন্তু কোন কথাটা সে বলতে চেয়েছিল তা আর জানা হলো না তার।



একটি কাগজে তার নাম, গ্রাম, বাবার নাম লিখে নিয়ে লোকটি কাগজটার নিচের দিকে একটি জায়গা দেখিয়ে দিয়ে বলল, তার নাম লিখতে। মতিন কথা মতো নিজের নাম লিখে দিতেই লোকটি একটি কালি লাগানো পাথর এগিয়ে দিয়ে বলল, বুড়ো আঙুলের একটি ছাপ দিতে। একবার সে বলেছিল কাগজের বিষয়বস্তু সে ইচ্ছে করলে পড়ে নিতে পারে। সে জানালো যে, তার দরকার নেই। আগেই সে দেখে নিয়েছে তার নাম ধাম লেখার সময়।



কথা শুনে লোকটির মুখে আবার হাসি ফুটে উঠল। তারপরই সে জানালো যে, কিছুক্ষণ পর কুমিল্লার দিকে যাওয়া ট্রেনটা আসছে। তখনই যেন সে তাতে চড়ে বসে বিলি জনসনের পাশে। ইচ্ছে করলে সে কিছু টাকা অগ্রিম হিসেবে নিতে পারে।



মতিনের সঙ্গে দুটাকা ছিল বলে সে জানালো যে, টাকার দরকার নেই তার।

বেশ কিছুক্ষণ অপেক্ষা করবার পর কুউ-উ শব্দে কেঁপে ওঠে তার অন্তরাত্মা। তারপর ঝিকঝিক আর হুসহুস শব্দে রেলগাড়ি এসে থামে স্টেশনে। যার নাম কুমিল্লা মেইল। স্টেশনে রেলগাড়ি এসে থামতেই ঘামতে আরম্ভ করেছিল মতিন। তেমন একটা যাত্রী চোখে পড়ে না তার। তবে মাঝামাঝি একটি বগিতে মাথায় হ্যাট আর কালো পোশাক পরা একটি মুখের দিকে চোখ পড়তেই তার ভেতরটা কেমন কেমন করে ওঠে। সে সঙ্গে কিছুটা ভয়ও যেন কাজ করছিল।



ম্যালকম থুরা মতিনের দিকে একটি কাগজ বাড়িয়ে ধরে বলল, যাও। বিলি জনসনের হাতে দিও।



মতিন কাগজ হাতে ইঞ্জিনের দিকে এগিয়ে যেতেই সেই লালচে বিলাতি

সাহেব ইঞ্জিনের পেছন দিককার দরজায় দাঁড়িয়ে হাসি মুখে বলে উঠল, হাই ইয়াং ম্যান। অ্যাটলাস্ট ইউ জয়েনিং আস!



হাতের কাগজটা বাড়িয়ে দিতেই সেটা হাতে নিয়ে বিলি জনসন বলে উঠল,

আর ইউ মাটিন?



মাথা নেড়ে মতিন জানায়, মতিন। আবদুল মতিন।



লোকটি বার কয়েক চেষ্টা করেও মতিন উচ্চারণ করতে না পেরে বলল, স্যরি মিস্টার মাটিন!



তারপরই লোকটা ভেতরে আরেকজন কালো লোককে দেখিয়ে জানাল যে, তার সঙ্গে থেকে যেন সে আজ কাজটা শিখে নেয়। পরদিন থেকে শুরু হবে তার কাজ। বলেই সে নেমে গিয়ে মতিনকে উঠতে বলে।



মতিন ইঞ্জিনের ভেতর ঢুকে গেলে বাইরে থেকে দরজা বন্ধ করে দেয় বিলি জনসন। আর সঙ্গে সঙ্গে ভেতরটা কেমন গুমোট অন্ধকারে ছেয়ে যায়। শুধু আগুনের লকলকে জিহবা আর কালো লোকটির ঘামে ভেজা চকচকে বুক আর মুখই দৃষ্টিগোচর হয় তার।



মতিন কিছুক্ষণ চুপ থেকে প্রচণ্ড গরমে কুলকুল করে ঘামতে ঘামতে লোকটির দিকে হাত বাড়িয়ে দিয়ে বলে উঠল, হাই, আমি মতিন।

লোকটি কেমন তাচ্ছিল্যের সঙ্গে মতিনের হাতটি কোনো রকমে ছুঁয়ে বলল, পার্কার ম্যাথিউজ। আর ঠিক তখনই রেল গাড়ির বাঁশিটা বেজে উঠে হুসহুস শব্দে সামনের দিকে আগাতে থাকে। আর পার্কার ম্যাথিউজ উঠে পড়ে বড় হাতা দিয়ে কয়লা তুলে আগুনের দিকে ছুঁড়ে দিতে থাকে।



(শেষ হয় নাই)

মন্তব্য ১৬ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (১৬) মন্তব্য লিখুন

১| ১৫ ই জুলাই, ২০১৪ রাত ১১:৩৫

মামুন রশিদ বলেছেন: প্রথম রেলগাড়ি দেখার বর্ণনা পড়েছিলাম অপু-দুর্গার দুর থেকে কয়লার ধোয়া উড়ানো রেল গাড়ি দেখে । দ্বিতীয়বার পড়লাম আপনার গল্পে । অসাধারণ !

১৬ ই জুলাই, ২০১৪ রাত ১২:৩৯

জুলিয়ান সিদ্দিকী বলেছেন: ধন্যবাদ মামুন রশিদ।

সত্যিকথা কইলে কি এই বর্ণনাটার বেইজ কিন্তু পথের পাঁচালি আর আমার অভিজ্ঞতার মিশ্রণ।

ভালো থাইকেন সব সময়।

২| ১৬ ই জুলাই, ২০১৪ সকাল ১১:৫০

জাহাঙ্গীর.আলম বলেছেন:
নামকরণের আভাস পাওয়া গেল ৷ তারপর....

১৬ ই জুলাই, ২০১৪ বিকাল ৩:৫৮

জুলিয়ান সিদ্দিকী বলেছেন: ধন্যবাদ জাহাঙ্গীর আলম৫২

তারপর আসছে শীঘ্রই।
ততদিন ভালো থাকুন।

৩| ১৬ ই জুলাই, ২০১৪ দুপুর ১:৪৭

মোঃ ইসহাক খান বলেছেন: চলতে থাকুক।

শুভেচ্ছা।

১৬ ই জুলাই, ২০১৪ বিকাল ৪:০০

জুলিয়ান সিদ্দিকী বলেছেন: ধন্যবাদ মোঃ ইসহাক খান।

শুভেচ্ছা আপনার জন্যেও।

৪| ১৬ ই জুলাই, ২০১৪ বিকাল ৩:২৪

জুন বলেছেন: অপু দুর্গাকে নিয়ে আর বলতে চাইনা জুলিয়ান ভাই । সবশেষে মতিনের ভাগ্য যে বয়লার রুমে গিয়ে থমকে গেল সেটাই ভয়ংকর। বিভিন্ন সিনেমায় দেখেছি যেন এক জীবন্ত নরক । আর সেখানে কর্মরত মানুষগুলোকে মনে হয় যেন নরকের বাসিন্দা বিনা পাপেই শাস্তি ভোগ করছে দুনিয়ায়।
রেলগাড়ি আমার অনেক প্রিয় এর সাথে সংশ্লিষ্ট সবকিছু শুধু সেই যুগের বয়লারে কয়লা ঠেলা মানুষগুলোর জীবন প্রনালী ছাড়া ।
অনেক ভালোলাগছে তবে কষ্টও লাগছে মতিনের জন্য ।
+

১৬ ই জুলাই, ২০১৪ বিকাল ৫:৩০

জুলিয়ান সিদ্দিকী বলেছেন: ধন্যবাদ আপু। সে দিকটা ভেবেছি বলেই পরের পর্বে মতিনের উন্নতির ব্যবস্থা রেখেছি। কিন্তু গ্রিক ট্র্যাজেডির মতো কিছু আছে তার অদৃষ্টে। যেটাকে নিয়তির বিধানের মতো খন্ডাতে পারবে না সে।

ততক্ষণ সার্বিক ভালো থাকুন।

৫| ১৬ ই জুলাই, ২০১৪ সন্ধ্যা ৭:৫৮

ঢাকাবাসী বলেছেন: বেশ ভাল লাগল।

১৬ ই জুলাই, ২০১৪ রাত ১১:১১

জুলিয়ান সিদ্দিকী বলেছেন: ধন্যবাদ ঢাকাবাসী।
ভালো থাকুন সব সময়।

৬| ১৭ ই জুলাই, ২০১৪ রাত ১২:০৫

পরিবেশ বন্ধু বলেছেন: চমৎকার লেখা , ভাললাগা +

১৭ ই জুলাই, ২০১৪ দুপুর ১:১৯

জুলিয়ান সিদ্দিকী বলেছেন: ধন্যবাদ পরিবেশ বন্ধু। ভালো থাকুন সব সময়।

৭| ১৭ ই জুলাই, ২০১৪ রাত ১২:৫৭

সেলিম আনোয়ার বলেছেন: সুন্দর+

১৭ ই জুলাই, ২০১৪ দুপুর ১:১৯

জুলিয়ান সিদ্দিকী বলেছেন: ধন্যবাদ সেলিম আনোয়ার। ভালো থাকুন সবসময়।

৮| ১৯ শে জুলাই, ২০১৪ রাত ১:২০

সচেতনহ্যাপী বলেছেন: শুধু পরেই যাচ্ছি। বর্ননা যেমন সাবলীল গল্পটাও চলছে ঠিক তেমনই।। ভাল লাগছে।।
আজ একই সাথে পরের পর্বটাও পড়ে নিলাম।। ধন্যবাদ।।

১৯ শে জুলাই, ২০১৪ রাত ২:২২

জুলিয়ান সিদ্দিকী বলেছেন: ধন্যবাদ সচেতন হ্যাপী।

সাবলীলতা হচ্ছে লেখার আরেক শর্ত।

ভালো থাকেন সব সময়।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.