নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমার কি দোষ,আমি তো মানুষ !!

যুলকারনাইন

পাঠ্যবই ভাল লাগেনা,তবে প্রচুর বই পড়ি নিজের পছন্দমত

যুলকারনাইন › বিস্তারিত পোস্টঃ

চলচ্চিত্রের "মন্তাজ"-একটি সাধারণ ধারণা

২১ শে নভেম্বর, ২০১৪ রাত ১০:৩০

১৯১৮ সালে উনিশ বছরের যুবক লেভ ভ্লাদিমিরোভিচ কুলেশভ শিক্ষক হিসেবে মস্কোর স্টেট স্কুল অফ সিনেমাটোগ্রাফি-তে যোগ দিয়েই চলচ্চিত্র সম্পাদনার পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে একটি ওয়ার্কশপ খুলে ছিলেন। কুলেশভের সেই ওয়ার্কশপ ছিল পুদভকিন,এডওয়ার্ড টিসে,ঝিগা ভের্তভ এর মত চলচ্চিত্র নির্মাণের স্বপ্নদেখা যুবকদের আড্ডাখানা। এক সন্ধ্যায় সেই ওয়ার্কশপে আসলেন এক মঞ্চ নির্দেশক,এর ঠিক তিনমাস পরে তিনি কুলেশভের সাথে দ্বিমত পোষণ করলেন সেই বিষয়ে যেটাকে কুলেশভঁ নিজের জীবনের শ্রেষ্ঠ আবিষ্কার বলে মনে করতেন। কুলেশভ যখন মন্তাজ বলতে বুঝাতেন খন্ডাংশের সংযোগ বা Linkage, সেখানে সেই মঞ্চ নির্দেশক বলতে লাগলেন মন্তাজ এর হওয়া উচিৎ একটি Conflict বা সংঘর্ষ । কুলেশভ শ্রদ্ধাভরে তাঁর এই শিষ্যের প্রতিভার জয়গান গেয়েছেন এবং বারবার বলেছেন,সমস্ত চলচ্চিত্রকারদের মধ্যে আইজেনস্টাইনই শ্রেষ্ঠ।


কি এই মন্তাজ?
মন্তাজ ফরাসি শব্দ,যার অর্থ হচ্ছে Editing বা সম্পাদনা। সাধারণ অর্থে একটি শটের পর আরেকটি শর্ট স্থাপন করা। বিভিন্ন ফ্রেম,ইমেজ ও শটকে একত্র করা মানেই মন্তাজ নাহ। কোন ঘটনার দৃশ্যায়ণে নাটকীয়তা নির্মাণের জন্য শুধু কিছু ফ্রেম,ইমেজ ও শটকে পর পর জুড়ে দেয়া সম্পাদনারীতির প্রথম পর্যায়। কিন্তু সম্পাদনারীতিকে মনস্তাত্ত্বিক ভাবে উচ্চ পর্যায়ে এবং নান্দনিকতার স্তরে নিতে হয় মন্তাজ এর মাধ্যমে।

সত্যজিৎ রায়ের বলেছেন,"চলচ্চিত্রে যে অন্য শিল্প সাহিত্যের লক্ষণ আছে,তাতে কোন সন্দেহ নেই। নাটকের দ্বন্দ্ব,উপন্যাসের কাহিনী ও পরিবেশ বর্ণনা,সংগীতের গতি ও ছন্দ,পেইন্টিংসুলভ আলোছায়ার ব্যঞ্জনা,এ সবই চলচ্চিত্রে স্থান পেয়েছে।কিন্তু ইমেজ ও ধ্বনির যে ভাষা,দেখানো-শোনানোর বাইরে যার প্রকাশ নেই, সে একেবারে স্বতন্ত্র ভাষা"
চলচ্চিত্রের এই ভাষা তার নিজস্বরুপে প্রকাশ পায় মন্তাজ এর মাধ্যমে।
Malraux তার Psychology du cinema গ্রন্থে বলেন-"It was Montage that gave birth to film as an art,setting it apart from mere animated photography,in short,creating a language"

মন্তাজ এমন একটি সম্পাদনারীতি যেখানে দুটি শট পরপর সংস্থাপন করে সংঘর্ষ ঘটিয়ে দুটি শটের যে "মানে" তার বাইরে তৃতীয় "মানে" দাঁড়া করানো। তৃতীয় এই "মানে" তৈরী হবে দৃশ্য ও শব্দমাত্রাগত ইমেজের বাইরে,দর্শকদের মননের দ্বারা।
আইজেনস্টাইন এর মতে চলচ্চিত্রের সময় ও পরিসরের মধ্যে শটগুলোর সংঘাতে নির্মাতা তার ভাবনার প্রকাশ ঘটাবেন যাতে শটগুলো নতুন "মানে" সহ দর্শকের চেতনায় আঘাত করে। আইজেনস্টাইন মন্তাজ বলতে বুঝাতেন চলচ্চিত্রে ঘটনার ধারাবাহিকতা রক্ষার পাশাপাশি শটগুলোর নিয়ত বাহাসে বা Argument এ যাওয়া। তিনি সম্পাদনার যে রীতির উদ্ভব করেছিলেন তাকে তিনি বলতেন "মন্তাজ অফ এটট্রাকশনস"। তাঁর মতে চলচ্চিত্রের প্রতিটি শট এমন হবে যে তা এককভাবে অর্থ প্রকাশ করবে আবার সংযুক্তভাবেও আলাদা অর্থ করবে,আর তা দর্শকদের মনকে ক্রমাগত আক্ররষ্ট চমকিত ও উদ্বেলিত করবে। দর্শককে চলচ্চিত্র সম্পর্কে নিজের মত করে চিন্তা করার একটা ক্ষেত্র তৈরী করবে।
মৃণাল সেন বলেন,"সিনেমার আঙ্গিকের মূল ব্যাপারটাই হচ্ছে এই মন্তাজ। শুধু সিনেমা কেন,সভ্যতার শুরু থেকে আজ পর্যন্ত পৃথিবীর সমস্ত আর্টফর্মের মধ্যেই আঙ্গিকের ক্ষেত্রে এই মন্তাজ-এরই প্রকাশ ঘটেছে নানাভাবে,নানা কায়দায়,নানা ঢং এ"।


"মন্তাজ" এর প্রকারভেদ
সের্গেই আইজেনস্টাইন তাঁর Methods of Montage প্রবন্ধে পাঁচ ধরনের মন্তাজ এর কথা বলেছেন। সেগুলো হল-
মেট্রিক মন্তাজঃ বিভিন্ন শটের নির্দিষ্ট গাণিতিক সময় ধরে পর পর শট সাজানোর পদ্ধতির নাম মেট্রিক মন্তাজ।
রিদ্মিক মন্তাজঃ ছন্দ নির্ভর মন্তাজ,এই ছন্দ বস্তু বা অভিনয়ের গতির মধ্য থেকে সৃষ্টি হয়।
টোনাল মন্তাজঃ কাহিনীর ভাবকে রিদম বা ছন্দের সঙ্গে সংঘাতেরর মাধ্যমে নিজেকে প্রকাশ করতে চাওয়াই টোনাল মন্তাজ।
ওভার-টোনাল মন্তাজঃ টোনাল মন্তাজের সঙ্গে সংঘাতের ফলে সৃষ্টি হয়;আলো,রেখা প্রভৃতির মাধ্যমে প্রকাশিত হয়।
ইন্টেলেকচ্যুয়াল মন্তাজঃ উপরোল্লিখিত চার ধরনের মন্তাজের মিশ্রণ ও সংঘাতের ফলে দর্শকের মননের মধ্যে এক ধরনের স্নায়ুবিক ও বৌদ্ধিক আবেগ সঞ্চারিত হয়,যার ফলে দর্শক ঘটনা বা বিষয়কে বুদ্ধি দিয়ে বুঝার চেষ্টা করেন-একেই ইন্টেলেকচ্যুয়াল মন্তাজ বলে।


"মন্তাজ" এর উৎস
আইজেনস্টাইনের মন্তাজতত্ত্ব জাপানি কাবুকী নাট্যযজ্ঞ থেকে উৎসারিত। অনেকটা হাইকু কবিতার আদলেও নির্মিত। যেমন-
A lonely crow
On leafless bough
One autumn eve.
এই কবিতার প্রতিটি চরণ একটি আকর্ষণ এবং এই তিনটি চরণের সমন্বয়ে সৃষ্টি হয়েছে একটি মন্তাজ।
মন্তাজ পদ্ধতির সম্পাদনারীতির জন্ম গত শতাব্দীর বিশ দশকে সোভিয়েত ইউনিয়নে লেভ কুলেশভ এর মাধ্যমে। কুলেশভই প্রথম মন্তাজ নিয়ে কাজ করেন যদিও মন্তাজের নাম আসলেই সের্গেই আইজেনস্টাইন এর নাম চলে আসে।

মন্তাজ এর উদাহরণ বুঝতে দেখতে এই ভিডিও দেখতে পারেন-
View this link

মন্তব্য ১২ টি রেটিং +৩/-০

মন্তব্য (১২) মন্তব্য লিখুন

১| ২১ শে নভেম্বর, ২০১৪ রাত ১১:৩০

কাল্পনিক_ভালোবাসা বলেছেন: দারুন একটা টপিক নিয়ে লিখেছেন! এই ব্যাপারে কোথায় যেন একবার পড়েছিলাম। এত বিস্তারিত ভাবে জানার সুযোগ ছিল না।

পোষ্টে প্লাস!

২২ শে নভেম্বর, ২০১৪ রাত ১২:১৬

যুলকারনাইন বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ এই বিষয়ের উপর আপনার ব্যক্তিগত আগ্রহ থাকার জন্য।

প্লাসের জন্য প্লাস পাওনা থাকল :-)

২| ২১ শে নভেম্বর, ২০১৪ রাত ১১:৫৩

নাজমুল হাসান মজুমদার বলেছেন: পোষ্টে প্লাস

২২ শে নভেম্বর, ২০১৪ রাত ১২:১৭

যুলকারনাইন বলেছেন: ধন্যবাদ।

৩| ২২ শে নভেম্বর, ২০১৪ রাত ১:৫০

 বলেছেন: +

২২ শে নভেম্বর, ২০১৪ রাত ২:৪৬

যুলকারনাইন বলেছেন: ধন্যবাদ

৪| ২২ শে নভেম্বর, ২০১৪ সকাল ৯:৪৯

আলম দীপ্র বলেছেন: +++++ বাহ !

২২ শে নভেম্বর, ২০১৪ দুপুর ১২:১৭

যুলকারনাইন বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ।

৫| ২২ শে নভেম্বর, ২০১৪ দুপুর ১:৩৮

অপূর্ণ রায়হান বলেছেন: চমৎকার পোস্ট ।

শুভকামনা :)

২২ শে নভেম্বর, ২০১৪ দুপুর ২:৫১

যুলকারনাইন বলেছেন: আপনার জন্যও শুভকামনা রইল।

৬| ২৪ শে নভেম্বর, ২০১৪ বিকাল ৩:৩৬

কলমের কালি শেষ বলেছেন: কাজের পোষ্ট । ডিরেক্টরদের কাজে দিবে ।

২৫ শে নভেম্বর, ২০১৪ সন্ধ্যা ৭:৩৩

যুলকারনাইন বলেছেন: আপনারাই তো আগামীর ডিরেক্টর ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.