নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

পাঠক।

জুনায়েদ বি রাহমান

মৌসুমি রোদ্দুর মেঘ হলে, আমি বৃষ্টির জলে খুঁজবো তোমাকে; নীল খামে কাব্য করে বর্ষার ঠিকানায় লিখবো প্রেমপত্র।

জুনায়েদ বি রাহমান › বিস্তারিত পোস্টঃ

কৃষক পাড়া (সিলেটের আঞ্চলিক গল্প)

০৭ ই জানুয়ারি, ২০১৬ রাত ১০:১৮

#এক :-
অগ্রাহনের শেষ,পোষের শুরু। গ্রামের গৃহস্তেরা ব্যস্ত। কেউ ধান কাটছে,কেউ মাড়াই করছে,কেউ জমি চাষ করছে,কেউ চারা রোপণ করছে। ফলু গৃহস্তদের একজন। বয়স ২৬-২৭ হবে। সংসারে মা ছাড়া কেউ নেই। রোজ ফজরের নামাজ আদায় করে লাল চায়ের সাথে ঠান্ডা ভাতের গুটি গিলে বের হয়। ফিরে দুপুরে।

আজ শুক্রবার। বাড়ির দক্ষিণের বটতলায় চাষ দিচ্ছে ফলু। বলদগুলোর পায়ের গতি যখন কমে যায় তখন লেজ উপরের দিকে তুলে ধরে তাড়া করে, চাপাস্বরে ধমকায়। -"হাই দ্যাত তি-তি-তি, হারু রু-উ-উ"! বলদগুলো গতি বাড়িয়ে দেয়। সময় এগিয়ে যায়। কুয়াশার আবরণ ভেদ করে রোদ্রের তেজক্রিয় রশ্মি চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে। জমি চাষও ফুরিয়ে আসে।
ওপাশ থেকে হারু জিঙেস করে,- "অ বেঠা ভাইগ্না, ইবার ইকানো কিতা খেত করতে?
-আলু দিলাইতাম কইয়ার বা মামু।
-আলুত দাম নাই রে...!
সারা বছর খাওয়া যাইবতবা- অপ্রান্ত থেকে প্রতিউত্তর দেয় ফলু। তারপর, ক্ষেতের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কিছুক্ষণ কথা বলে দুজন।
এবার মই দিলেই জমি রোপনের উপযোগী। মাঠের পাশে বসে রোদ্রের সোনালি রশ্মি থেকে শীত নিবারন করছে কাবির। ফলুর চোখ ও দিকে পড়া মাত্র উচ্চস্বরে ডাক দিল- 'কালাই নি রে, তোড়া অবায় আয় রেবা।প্রতিবেশি কুদ্দুসের ছেলে কাবীর। গায়ের রঙ কালো বলে অনেকেই তাকে এই নামে ডাকে। সে ও কিছু মনে করে না। অভ্যস্ত হয়ে গেছে। বিরক্তিকর কিছু শুনতে শুনতে/করতে করতে মানুষ যখন অভ্যস্ত হয়ে পড়ে তখন আর খারাপ লাগেনা। বরং স্বাভাবিক লাগে।
কাবীর এগিয়ে আসে। মই চড়ে বসতে ভালো লাগে তার। বেলা বাড়ার সাথে সাথে ক্লান্ততাও বেড়ে যায়। ক্ষীধায় জ্বালা পেটে হানা দেয়। ফলু বলদগুলোকে মাঠে ছেড়ে বাড়ির পথে পা বাড়ায়।

দুইঃ
বেশ বড় বাড়ি। আশে পাশে কয়েকটা কাঁচা-পাকা ঘর। দক্ষিনের দু'চালা কাঁচা ঘরটা ফলুর। উত্তরের আধাপাকা ঘরটা বসু মিয়ার। বসু মিয়া এ বাড়ির মুরব্বী। বিয়ের কয়েক বছর পর একমাত্র মেয়ে মনিকে রেখে স্ত্রী দক্ষিণ পাড়ার আলাই ব্যাপারীর সাথে পালিয়ে গেছে। আবুল মেস্তরির ছেলে আলাই ব্যাপারি। ডিমের ব্যবসায়ী।পুরু সপ্তাহ পাড়ায় ঘুরে ঘুরে বউ-ঝি'দের থেকে ডিম ক্রয় করে সাপ্তাহবারে হাজীগঞ্জ বাজারে বিক্রি করতো। সেই সুবাদে বসুর স্ত্রী বাতাসীর সাথে ঘনিষ্ট হয়ে উঠে আলাই।
তারপর.....!
মেয়ের কথা ভেবে দোসরা বিয়ে করেনি বসু। বছর দুয়েক আগে, মোল্লা পাড়ায় বুনিয়াদি ঘর দেখে মনির বিয়ে দিয়েছে। জামাই রফিক উল্লা।গাও গঞ্জে রফি মোল্লা নামে পরিচিত। শান্তিবাজার মাসজিদের ইমাম। শশুর শাশুড়ী নিয়ে মেয়ের সুখের সংসার।
এখন ফলুদের ঘরে খেয়ে বসে কাটায় বসু। একমাত্র বোন রহিমা স্বামী মারা যাওয়ার পর থেকে এ বাড়িতেই থাকে। পশ্চিমের টিনশেডের ঘরগুলো ছকিনা বুড়ির। ছকিনা বুড়ি বসুর ছোট চাচী। দুই ছেলে। বিদেশে থাকে। একসময় বাশ-ব্যাত দিয়ে নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি তৈরি করে বাড়ি বাড়ি বিক্রি করতো ছকিনা বুড়ি। এখন ওসব করেনা। সারাদিন এ বাড়ি ও ঘর ডাকপিয়নের মতো ঘুরে বেড়ায়।

#তিনঃ

ফ-লু,
ও ফলু, ফলু....
কিতা বেটা ঘুম'অ-নি-রে???
ফলু,,, ও ফলু,,,ফ-লু......
বসু অনেক্ষণ ধরে এক নাগাড়ে ডাকছে । মাঝে মাঝে দরজার কবাটে ঠুকাঠুকি করছে। ফলু শুনছে। তবুও না শুনার ভান ধরে শুয়ে আছে।বসু একগুঁয়ে স্বভাবের লোক। কোনো কিছু ধরে তো ধরে। অবশেষে ফলু দুয়ারে এসে কর্কশ কণ্ঠে জিজ্ঞেস করলো- 'কিতা বা কিতা অইছে? ওত রাইতকুর আমলো কিতার লাগি ডাখ? বসু মুখ বরাবর কনিষ্ঠ আঙুল উঁচিয়ে আস্তে কথাবলার ইঙ্গিত করল। অতঃপর, ফলুকে নিয়ে পাশের লাউয়ের মাচার দিকে এগিয়ে গেলো। গুমট আন্ধকার। গুপ্ত কথা বলার উপযুক্ত জায়গা। বসুর কথা শুনে ফলুর চোখ মুখে অজস্র স্বপন ঝলমল করে উঠলো। বিড়বিড় করে বলল- কোটি টেকার (টাকার) ম্যাগনেট! আমরা কোটিপতি।

(চলবে....)

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ১৫ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৮ ভোর ৬:১৫

স্রাঞ্জি সে বলেছেন:

আর পর্ব গুলো কই। ভাবছিলাম কিন্তু সিলেটী ভাষা বেশি থাকবে। কিন্তু খুব কমই।

যাক, গল্প ভাল লাগল।

১৫ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৮ দুপুর ১২:৪৬

জুনায়েদ বি রাহমান বলেছেন: আর লিখা হয়নি। গল্প লিখার ধৈর্য বা ক্ষমতা আমার নেই।

পুরানো পোস্টে পেয়ে ভালো লাগছে। আন্তরিক ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা।

২| ০৩ রা নভেম্বর, ২০১৮ সকাল ১১:০০

খায়রুল আহসান বলেছেন: গল্পের শেষে এসে কিছুটা রহস্য দেখা দিল।
কিন্তু এর পরে আর কি এ নিয়ে কিছু লিখেন নি?

০৭ ই নভেম্বর, ২০১৮ রাত ১০:১৭

জুনায়েদ বি রাহমান বলেছেন: না পরে আর লিখা হয়ে ওঠেনি।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.