নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

পাঠক।

জুনায়েদ বি রাহমান

মৌসুমি রোদ্দুর মেঘ হলে, আমি বৃষ্টির জলে খুঁজবো তোমাকে; নীল খামে কাব্য করে বর্ষার ঠিকানায় লিখবো প্রেমপত্র।

জুনায়েদ বি রাহমান › বিস্তারিত পোস্টঃ

মৃন্ময়ের কাব্য

২৪ শে আগস্ট, ২০১৯ সন্ধ্যা ৬:৪৭



'মন খারাপ হলে কিছু দীর্ঘ দীর্ঘ নিঃশ্বাস খামবন্ধি করে পাঠিয়ে দেবো।
তুমি লালখামে ভরে- কিছু রোদ্দুর দিও
একঝাক প্রজাপতি দিও
একটা কবিতা দিও.... '

ব্রেকেটে ''৩২১১। নূহা। নারায়ণ ছড়া''

মৃন্ময় এক নিমিষে চিরকুট'টা পড়ে নূহার দিকে তাকিয়ে মেঘচোখে মাথা ঝাঁকাল। ট্রেনটা তখন মধ্যখানের দূরত্ব অনেকটা বাড়িয়ে দিয়েছে। তবুও মনে হলো নূহা মৃন্ময়ের 'মেঘচোখ' 'মাথা ঝাঁকানো' স্পষ্ট পড়তে পেরেছে। ভেতরে ভালোবাসার থাকলে দূরে থেকেও অনেক কিছুই দেখা যায়। নৈঃশব্দ্যের ভাষা পড়া যায়।
আস্তে আস্তে অস্পষ্ট থেকে অস্পষ্টতর হতে থাকলো নূহার মুখ, ট্রেনের দরজায় ঝুলে থাকা কিংবা উপরে বসে থাকা মানুষদের মাথা.... ট্রেন।
অনেকক্ষণ চুপচাপ দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে 'ট্রেনটি অদৃশ্য হওয়ার পথে মৃন্ময়ের নির্বাক তাকিয়ে থাকা' দেখলাম আর মনে মনে অনুধাবনের চেষ্টা করলাম 'ভালোবাসার নেশা একটা মানুষকে কতটা টালমাটাল করে দিতে পারে'। কতটা টালমাটাল হলে একজন প্রেমিক 'একটা ব্যস্ত স্টেশন, শতশত মানুষ, ষ্টেশনারী দোকান.... সব ভুলে যায়। ভুলে যায় বাড়ি ফেরার কথা!
হাত ঘড়ি দেখলাম। ঘন্টার কাটা ২০ মিনিট পূর্বে'ই ২ টা'র ঘর অতিক্রম করেছে। আমাদের বাস ছাড়বার সময় ঘনিয়ে এসেছে। তাই মৃন্ময়কে ধাক্কা দিলেম- 'চল্ ব্যাটা! আর কতক্ষণ তাকাই থাকবি?!' মৃন্ময় মৃদু হেসে বললো, চল্। দুজন বাস স্ট্যান্ডের পথে পা বাড়ালাম।

বাস ছেড়েছে ঘন্টাখানেক পূর্বে। মৃন্ময় চোখেমুখে এক সমুদ্র অন্ধকার জমিয়ে চুপচাপ বসে আছে। বাড়ি থেকে হোস্টেলে ফেরার সেই দুঃখি সময়টাতেও যে ছেলেটা বেহুদা কথা বলে বলে বিরক্ত করে তার এই নীরবতা ভালো লাগছিলো না। তাই বললাম, 'নূহাকে বলে দিলেই তো পারিস। বলছিস না কেন?'
জবাবে রোম্যান্টিক নাটকের নায়কের মতো মৃন্ময় বললো- 'বলতে হবে কেন? ও ত জানে, বুঝে; আমিও জানি, বুঝি। প্রেম-প্রণয়ের জন্য এতোটুকুই এনাফ।'
তাহলে মন খারাপ করে দেবদাস স্টাইলে বসে আছিস কেনো?
মৃন্ময়ের এক বাক্যে জবাব, 'যে কারণে বাড়ি থেকে হোস্টেলে ফিরতে তোর মন খারাপ থাকে।'
আর কথা বাড়াতে চাইলাম না। বুঝতে পারলাম- হোস্টেলে ফেরার সময় ফাহমির জন্যই যে আমার মন খারাপ থাকে মৃন্ময় ব্যাপার'টা টের পায়। সবুঝ গাছপালা, গ্রাম, ছোটবড় বাজার পিছনে ফেলে বাস এগুতে থাকলো নির্ধারিত গন্তব্যে।


মৃন্ময়কে কলেজ লাইব্রেরির দিকে হাটতে দেখে ধারনা করলাম, প্রেমিক এবার একগাদা লালখাম আর চিঠি লিখার একটা চমৎকার প্যাড কিনবে। ধারনা সত্য হলো। মৃন্ময় লালখাম, কলম ও প্যাড কিনলো।
কলেজ লাইব্রেরির মুহাইমিনুল ভাই আমার দিকে উপন্যাসের মতো একটা বই এগিয়ে দিতে দিতে বললেন- সাবুল স্যার আপনাকে দিতে বলেছেন।
হাতে নিলাম। উপন্যাসটা সাবুল ভাই'র লেখা। নাম 'বসন্তের কোকিল'। সাদা কালোরঙ্গের মিশ্রণে আকা প্রচ্ছদ। রিকশায় বসে বসে প্রচ্ছদটা নিয়ে ভাবছিলাম। কোনোএক আড্ডায় সাবুল ভাই বলেছিলেন, উপন্যাসের সারমর্ম মলাটের প্রচ্ছদে এঁকে দেবেন।
তিনি প্রচ্ছদে এঁকেছেন- "একটা মেয়েলি ছবি, একটা কোকিল এবং তিনটে ঝরাপাতা"
মানে কি? ছবিগুলোর মাধ্যমে কি বুঝাতে চাইছেন? একটা মেয়ে। একটা সুসময়ের বন্ধু। তিনটে ঝরা স্বপ্ন। নাকি.....
মৃন্ময়কে জিজ্ঞাস করলাম- দোস্ত 'একটা মেয়ে, একটা কোকিল আর তিনটে ঝরাপাতার' মানে কি হতে পারে?! মৃন্ময় দুই বাক্যে বললো, "অনেক কিছুই হতে পারে। হতে পারে একটি মেয়েকে ঘিরে তিনটে ব্যর্থ প্রেমের উপাখ্যান।"
মৃন্ময়ের জবাব পছন্দ হলো। বললাম, কবিদের ভাষা কবিরা সহজে বুঝতে পারেন।
শুনে মৃণ্ময় শব্দ করে হাসলো।
আকাশে মেঘরা উড়ছে। মৃদু হাওয়া বইছে। লণ্ঠনের একপশলা আলো নিয়ে একটা রিকশা চলছে গ্রামের পথে..... প্যাডেলের খিক খক বাতাসে মিশে হারিয়ে যাচ্ছে ধানের মাঠে।


'একবিকেল' ফাহমিদের পাড়ায় ঘুরাঘুরি করে জানালাম 'ফাহমি মামার বাড়ি বিয়ে খেতে গেছে। দুই তিনদিন পর ফিরবে।'
মন খারাপ করে বাসায় এসে সাবুল ভাই উপন্যাস খুলে বসলাম। এবং দুইদিনে পুরুটা শেষ করলাম, মৃন্ময়ের ধারণা ঠিক ছিলো- ত্রিমুখী প্রেমের গল্প। দুই বন্ধু এক বান্ধবীকে ভালোবাসে। কিন্তু বান্ধবী ভালোবাসে অন্যএকটা ছেলেকে। তারপর জীবনের বিভিন্ন অধ্যায়, বিভিন্ন মোড় ভ্রমণ শেষে তিনজনই একা।
উপন্যাসের শেষটা পড়ে সাবুল ভাই'র বিয়ে না করার কারণ বুঝতে পারলাম। উপন্যাসের তিনজনের একজন স্বয়ং সাবুল ভাই।
গল্পটা মৃন্ময়ের সাথে শেয়ার করা দরকার।
ধীরে ধীরে অন্ধকার নেমে আসছে পৃথিবীতে, জোনাকিপোকারা মিছিলের প্রস্তুতি নিচ্ছে। মৃন্ময়ের আজ সেদিকে খেয়াল নেই; রিডিংটেবিলে বসে বসে সে লিখছে-
"বুকপকেটে একগাদা লালখাম নিয়ে
আমি কবিতায় রোদ্দুর আর প্রজাপতি আঁকার ভাষা শিখছি
প্রহর গুনছি ডাকপিয়নের
তিলোত্তমা,
তুমি দীর্ঘশ্বাস পাঠাওনি। আমাকে ভেবে তোমার মন খারাপ হয়নি।"



পাদটীকাঃ
* ছবিটি অন্তর্জল থেকে নেওয়া।
* স্মৃতির গোডাউন থেকে তুলে আনা পুরানো কিছু সময়কে সাজিয়েগুছিয়ে লিখবার প্রচেষ্টা ছিলো।

মন্তব্য ২২ টি রেটিং +৫/-০

মন্তব্য (২২) মন্তব্য লিখুন

১| ২৪ শে আগস্ট, ২০১৯ সন্ধ্যা ৭:০৪

চাঁদগাজী বলেছেন:


ফুলফলহীন ১ টি গাছের কাহিনী

২৪ শে আগস্ট, ২০১৯ সন্ধ্যা ৭:০৯

জুনায়েদ বি রাহমান বলেছেন: হা হা...
আরো একটু সময় দিন। 'গাছে গাছে ফুল ফল ফুটানোও শিখে নেবো'।

২| ২৪ শে আগস্ট, ২০১৯ সন্ধ্যা ৭:৫৬

বিদ্রোহী ভৃগু বলেছেন: বুঁদ হয়ে থাকা এই প্রেমানুভব আসলেই ভিন্ন জগতে নিয়ে যায়!
তন্ময়তা, ভাবালুতায়, সরলতায় ডুবে থাকা!
মজনুন উপাধি আপনাতেই এসে যায়!

ফিরে আলে আবার চোখ জ্বলা রোদ্ধুর
প্রয়োজনের তেল চাল নুনের হিসেব
অনুভূতিরা ভোতা হয়ে যায়
জীবন চাকা ঘষটে চলে -থামা যায়না বলেই :)

+++

২৪ শে আগস্ট, ২০১৯ রাত ৯:৪০

জুনায়েদ বি রাহমান বলেছেন: চমৎকার মন্তব্য ও প্লাসের জন্য ধন্যবাদ ভাই।

ভালো থাকবেন সতত।

৩| ২৪ শে আগস্ট, ২০১৯ রাত ৮:৩৫

পদাতিক চৌধুরি বলেছেন:

তিলোত্তমারা রোদ্দুর হয়ে চিরদিন রয়ে যাবে,
মৃন্ময়ের কাব্যোও চিরদিন গীতিকাব্যই থেকে যাব।

২৪ শে আগস্ট, ২০১৯ রাত ৯:৪১

জুনায়েদ বি রাহমান বলেছেন: বাহ! বেশ বলেছেন পদাতিক দা...

ধন্যবাদ জানবেন। এবং ভালো থাকবেন সতত।

৪| ২৪ শে আগস্ট, ২০১৯ রাত ৮:৫৪

রাজীব নুর বলেছেন: পড়লাম।
ভালো লাগলো।

২৪ শে আগস্ট, ২০১৯ রাত ৯:৪৩

জুনায়েদ বি রাহমান বলেছেন: পড়েছেন। এবং ভালোলাগা জানিয়েছ; এজন্য ধন্যবাদ।

ধন্যবাদ রাজীব ভাই। ভালো থাকবেন।

৫| ২৪ শে আগস্ট, ২০১৯ রাত ৯:৫২

ইসিয়াক বলেছেন: একটু ব্যস্ত । আসছি ।

২৪ শে আগস্ট, ২০১৯ রাত ১০:০২

জুনায়েদ বি রাহমান বলেছেন: ওকে ভাই, আসেন। :)

৬| ২৪ শে আগস্ট, ২০১৯ রাত ১০:৫০

নীল আকাশ বলেছেন: কেউ মনে হয় ঘাসগাছের কাহিনী মনে করে পড়েছে। যার যা পছন্দ। যে যেটা দিয়ে জাবর কাটতে ভালোবাসে...
মিতা ভাই, কবিতাগুলি অসাধারন হয়েছে। সবাই পড়েছে গল্প আর আমি পড়েছি কবিতাগুলি।
তিনটা ঝরাপাতা পাতা হবে না, তিনটা ঝরাপাতা হবে। বিয়ে না করার কারন হবে। ভুল গুলি ঠিক করে দিন।
পৃথিবীর সবচেয়ে বড় কবি হতে পাতেন প্রমিকরাই। কারন মনে প্রেম / বিরহ না থাকলে কখনই কালজয়ী সাহিত্য সৃষ্টি হবে না।
ভাল থাকুন, সব সময়।
শুভ রাত্রী।


২৪ শে আগস্ট, ২০১৯ রাত ১১:০৪

জুনায়েদ বি রাহমান বলেছেন: মিতা, উনি আসলে পুরু লেখার সারমর্ম একবাক্যে বলার চেষ্টা করেছেন। উনার মন্তব্যটা আমার পছন্দ হয়েছে।

আপনি কবিতাগুলো পড়েছে, গল্পেও পড়েছেন। আপনার সুন্দর মন্তব্যই তার প্রমাণ। ভুলগুলো শুধরে নিয়েছি।

পৃথিবীর সবচেয়ে বড় কবি হতে পাতেন প্রমিকরাই। কারন মনে প্রেম / বিরহ না থাকলে কখনই কালজয়ী সাহিত্য সৃষ্টি হবে না। -সুন্দর বলেছেন।

মন্তব্যের জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা। শুভরাত্রি।

৭| ২৪ শে আগস্ট, ২০১৯ রাত ১১:০২

ইসিয়াক বলেছেন:
খুব ভালো লেগেছে।

২৪ শে আগস্ট, ২০১৯ রাত ১১:০৭

জুনায়েদ বি রাহমান বলেছেন: আবার এসে ভালোলাগা জানানোর জন্য ধন্যবাদ ইসিয়াক ভাই।

ভালো থাকবেন সতত।

৮| ২৪ শে আগস্ট, ২০১৯ রাত ১১:০৮

মোঃ মঈনুল ইসলামঢ় তুষার বলেছেন: কি সুন্দর! মোহাচ্ছন্ন করে ফেলেছে

২৪ শে আগস্ট, ২০১৯ রাত ১১:১৬

জুনায়েদ বি রাহমান বলেছেন: স্বাগতম তুষার ভাই। আপনাকে আজ প্রথম পেলাম।
মন্তব্যে অনুপ্রাণিত হলাম।

ধন্যবাদ জানবেন। এবং ভালো থাকবেন।

৯| ২৫ শে আগস্ট, ২০১৯ রাত ১২:৫১

ঠাকুরমাহমুদ বলেছেন: ভালো লিখেছেন। আরো সুন্দর লেখা আশা করছি।

২৫ শে আগস্ট, ২০১৯ সকাল ১১:৫১

জুনায়েদ বি রাহমান বলেছেন: ধন্যবাদ ভাই। মন্তব্যে অনুপ্রেরণা পেলাম।

চেষ্টা থাকবে ভালো লিখবার।

ভালো থাকবেন।

১০| ২৫ শে আগস্ট, ২০১৯ সকাল ৭:৩৯

বলেছেন: আহ!!! কি আবেগময় কবিতার পঙক্তি!!!
তুমি দীর্ঘশ্বাস পাঠাওনি -- এখানেই দাম বন্ধ হওয়া নিশ্বাস ---




২৫ শে আগস্ট, ২০১৯ সকাল ১১:৫৩

জুনায়েদ বি রাহমান বলেছেন: ধন্যবাদ কবি। মন্তব্যে আপ্লুত হলাম।

ভালো থাকবেন সতত।

১১| ২৫ শে আগস্ট, ২০১৯ বিকাল ৪:১৬

মোঃ মাইদুল সরকার বলেছেন:
কবিতার পংক্তিগুলো দারুণ ও অনন্য।

প্রেমহীন জীবন যেন মৃত্যুময়।

২৬ শে আগস্ট, ২০১৯ রাত ১২:৪৭

জুনায়েদ বি রাহমান বলেছেন: ধন্যবাদ মাইদুল ভাই। মন্তব্যে অনুপ্রাণিত।

ভালো থাকবেন।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.