নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

বাংলা অামার তৃষ্ণার জল

কয়েস সামী

i m nothing in this huge world...

কয়েস সামী › বিস্তারিত পোস্টঃ

ইতিহাসে কিছু অহিংস আন্দোলন এবং কিছু কথা

১৩ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ সকাল ৯:১০

১. ১৮৩৮ সালের চেরোকিদের বিদ্রোহ:
মার্কিন প্রেসিডেন্ট এন্ড্রু জ্যাকসন যখন ঘোষণা করলেন, মিসিসিপি নদীর পূর্বতীরে বসবাস করা চেরোকিদের তাদের ভিটে মাটি ছেড়ে চলে যেতে হবে পশ্চিমে, তখন চেরোকিরা প্রতিবাদ শুরু করল। তাদের বাপ-দাদার ভিটে-মাটি ছেড়ে তারা কোথাও যাবে না। তারা আগের মতোই বসবাস করতে থাকল তাদের অধিকৃত এলাকা জুড়ে।
ফলাফল: চেরোকিদের উপর আক্রমণ করা হল। তাদের জমি-জমা, সোনা-দানা লুট করে নেয়া হল। তারা পথে নামতে বাধ্য হল। দশ হাজার বছরের ভিটে-মাটি ছেড়ে তাদের রওনা দিতে হল ৮০০ মাইল দূরের ওকলোহোমার পথে। ঘরছাড়া সেইসব ১৫০০০ চেরোকিদের মধ্যে পথেই মারা যায় তাদের ৪০০০ সঙ্গী। ইতিহাসে এ ঘটনা ট্রেইল অব টিয়ার্স নামে পরিচিত।

২. গান্ধীজির ডান্ডি পদযাত্রা বা লবণ সত্যাগ্রহ:
ইতিহাসে আরেকটি বিখ্যাত শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ সল্ট মার্চ। ব্রিটিশ সরকার যখন লবণের উপর ট্যাক্স বসিয়ে দিল তখন মোহনদাস করমচাঁদ গান্ধী ৭৯ জন বিপ্লবী নিয়ে গুজরাটের আহমেদাবাদ থেকে ২৪ দিন পায়ে হেটে ২৪১ কি.মি পার হয়ে ডান্ডির সমুদ্রে পৌছেন লবণ আহরণের জন্য। ইতিহাসে এই অহিংস প্রতিবাদটিই সল্ট মার্চ নামে পরিচিত।
ফলাফল: গান্ধীকে বন্দী করা হল। পরবর্তীতে অবশ্য ব্রিটিশ সরকার তাকে ছেড়ে দিতে বাধ্য হয়েছিল। তবে এই অহিংস আন্দোলনটি কিন্তু তাৎক্ষণিক কোন ফলাফল বয়ে আনতে পারে নি।

৩. সাদা গোলাপ প্রতিরোধ:
১৯৪২ সালের জুন মাসের কোন এক সন্ধ্যায় ইউনিভার্সিটি অব মিউনিকের ছয় শিক্ষার্থী গঠন করল সাদা গোলাপ নামের দলটির। এ দলের উদ্দেশ্য হল নাৎসীদের ক্রমবর্ধমান অত্যাচারের বিরূদ্ধে জনমত তৈরী করা। এ আন্দোলনের জন্য তারা একটি অভিনব অহিংস পদ্ধতির আশ্রয় নিল। গোটা জার্মানীতে তারা নাৎসীদের বিরূদ্ধে লিফলেট বিতরণ করতে থাকল এবং তাদের দলটির সদস্য সংখ্যাও ক্রমাগত বাড়তে থাকল।
ফলাফল: প্রধাণ ছয় সদস্যকে অ্যারেস্ট করা হল এবং গিলোটিনে মৃত্যুদন্ড দেয়া হল। এ নিষ্ঠুর ঘটনায় অন্যান্য সদস্যরা ভাবলো এবার বোধহয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষকরা সবাই এ ঘটনার প্রতিবাদ করবে। নাৎসীদের বিরূদ্ধে আন্দোলনে নামবে। কিন্তু না। কিছুই হল না। নাৎসীদের অত্যাচার ক্রমশ বাড়তে থাকল।

৪. মন্টগোম্যারি বাস বয়কট:
১৯৫৫ সালের কথা। যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণাঞ্চলের রাজ্য অ্যালবামার রাজধানী মন্টগোম্যরিতে পাবলিক বাসে চড়ার ক্ষেত্রে বর্ণ বৈষম্য প্রথা প্রচলিত ছিল। কোন শ্বেতাঙ্গ বাসে চড়লে কৃষ্ণাঙ্গদের সিট ছেড়ে দেয়ার নিয়ম ছিল। তাছাড়া সাদা চামড়াদের জন্য আলাদা করে সিট সংরক্ষণের ব্যবস্থা ছিল। এর বিরুদ্ধে শুরু হয় বাস বয়কট আন্দোলন। আন্দোলনের অংশ হিসেবে কৃষ্ণাঙ্গ চালকেরা বাস চালানো বন্ধ করে দিল।
ফলাফল: এ বয়কট শহরের অর্থনীতিতে বেশ বড় রকমের ধাক্কা দেয়। তাই ১৯৫৬ সালের ২০ ডিসেম্বর অ্যালবামা রাজ্য সরকার বৈষম্যমূলক এ আইন তুলে নিতে বাধ্য হয়।

৫. পিউরিওরা ফরেস্টের ট্রি সিটিং আন্দোলন:
নিউজিল্যান্ড সরকার যখন ১৯৭৮ সালের দিকে পিউরিওরা ফরেস্টের সব গাছ কেটে ফেলছিল, তখন কিছু পরিবেশবাদীরা গাছের উপর মঞ্চ/ঘর তৈরী করে তাতে বসে থাকার মাধ্যমে গাছ কাটার বিরূদ্ধে আন্দোলন শুরু করল।
ফলাফল: আন্দোলনটির গতি ক্রমশ বাড়তে থাকলে সরকার বাধ্য হয় গাছ কাটা বন্ধ করে এলাকাটিকে একটি সুন্দর পার্ক হিসেবে গড়ে তুলতে।

৬. তিয়েনআনমেন স্কয়ার:
১৯৮৯ সালের জুন মাসে কমিউনিস্ট চীন কেঁপে উঠে ছাত্র জনতার বিক্ষোভে। এর আগে ১৫ এপ্রিল নিহত হন চীনের সুশীল সমাজের অন্যতম অগ্রনায়ক ও সরকার বিরোধী বুদ্ধিজীবী হু ইয়াওবাং। তার মৃত্যুর পর থেকে ছাত্র, জনতা, বিভিন্ন পেশাজীবী প্রতিবাদ জানাতে থাকে বিভিন্নভাবে। জুন মাসে রাজধানী বেইজিং এর তিয়েনআনমেন স্কয়ারে এ বিক্ষোভের চূড়ান্ত বহিঃপ্রকাশ ঘটে। সেখানে জড়ো হয় উদার নীতির আদর্শে উদ্ভাসিত প্রায় ১০ লক্ষ ছাত্র-জনতা। তাদের দাবী, রাজনৈতিক ব্যবস্থাকে নতুন করে সাজাতে হবে এবং গণমাধ্যমের স্বাধীনতা দিতে হবে।
ফলাফল: সরকার সামরিক আইন জারি করে কঠোর দমন নীতির আশ্রয় নেয়। জুন মাসের ৪ তারিখ রাতে ট্যাংক দিয়ে গুড়িয়ে দেয়া হয় সে আন্দোলন। মৃত্যু হয় দশ হাজারেরও বেশি নিরপরাধ মানুষের।

৭. ইরাক আক্রমণ বন্ধ কর
মার্কন যুক্তরাস্ট্র যখন ইরাক আক্রমন করছিল তখন সারা বিশ্বব্যাপী যুদ্ধ বিরাধেীরা রাস্তায় নেমেছিল যুদ্ধ বন্ধ করার দাবী নিয়ে। বিভিন্ন দেশে লক্ষ লক্ষ লোকেদের সমাবেশ ঘটেছিল আন্দোলনকারীদের ডাকা র‌্যালীগুলোতে।
ফলাফল: না। বিশ্ববাসীদের শান্তিপূর্ণ চাওয়াকে অগ্রাহ্য করে যুদ্ধ চলেছিল তার নিজস্ব গতিতে।

পৃথিবীর ইতিহাসে সরকারপতন সংশ্লিষ্ট অধিকাংশ অহিংস আন্দোলনগুলো এভাবেই ব্যর্থতায় পর্যবশিত হতে দেখা যায়। কারণ আন্দোলনগুলো হয়ে থাকে মূলত দুর্ণীতিপরায়ণ সরকারের বিরূদ্ধেই। আর সকল দুর্নিতীগ্রস্তরাই পতনকে মারাত্মক ভয় পায়। একবার পতিত হলে যে আর উঠে দাঁড়ানোর কোন সুযোগ পাওয়া যাবে না এটা প্রায় নিশ্চত।
স্বাধীন বাংলাদেশে যতগুলো রাজনৈতিক আন্দোলন হয়েছে সবগুলোর মূল লক্ষ ছিল সরকার পতন। তাই আন্দোলনের একমাত্র কার্যকর হাতিয়ার হিসেবে হরতাল, অবরোধ জনপ্রিয়তা পেয়েছে সবচেয়ে বেশি। কারণ একমাত্র হরতাল-অবরোধকেই সহিংস করে তোলা যায় এবং এর দ্বারাই দেশের ক্ষতি হয় সবচেয়ে বেশি। একথা চরম সত্যি বলে ধরে নেয়া হয়েছে যে, চরম ক্ষতির সম্মুখীন না হলে এদেশে কোন সরকার পিছু হটবে না। সেজন্যেই বিরোধী দলগুলোকে হরতাল অবরোধের আশ্রয় নিয়ে সহিংসতা করতে হয়। এছাড়া তাদের আর কোন উপায় থাকে না। আবার আমাদের দেশে যে ধরনের সহিংসতা করা হয় তার সাথে কিন্তু বাইরের বিশ্বের আন্দোলনের সহিংসতার তুলনা চলে না। আমাদের দেশে সহিংসতার শিকার হয় প্রধাণত রাজনীতির বাইরের সাধারণ জনগণ। একবার ভেবে দেখুন বাসে পেট্রোল বোমায় যে ব্যক্তিটি আহত হলেন, অথবা যে ব্যক্তিটি তার চিকিৎসা বা অন্য কোন জরুরি প্রয়োজন সারতে পারলেন না হরতালের জন্য, সেই ব্যক্তিটি কিন্তু হরতাল ডাকা দলটিরই অন্ধ সমর্থক হতে পারেন। এতে হরতাল ডাকা দলটির কোন কিছু যায় আসে না। তাকে সহিংসতা বা ভীতি প্রদর্শন করতে হবেই। কারণ তারা বেশ ভালভাবেই জানে আমাদের দেশে হরতাল বা অবরোধ কখনোই জনসমর্থিত না।

হরতাল কখনোই কেন জনসমর্থিত না? আমাদের দেশে হরতাল, অবরোধ হয় মূলত ক্ষমতা দখলের ইচ্ছে থেকে, যে দখলের ঘটনায় সাধারণ মানুষের কোন কিছু যায় আসে না। ক্ষমতার পট পরিবর্তনের সাথে দেশে বিরাট কোন পরিবর্তনের আশা দেশবাসী করে না, করতে পারে না। কারণ তারা জানে, যে দুটি রাজনৈতিক দলের মধ্যে ক্ষমতা কেন্দ্রিভূত থাকে তারা বস্তুত একই মুদ্রার এপিঠ-ওপিঠ। আর জনগণ হরতালের সাথে সংশ্লিষ্ট থাকে না বলেই অন্যান্য দেশের রাজনৈতিক আন্দোলনে সংশ্লিষ্ট সহিংসতার সাথে আমাদের দেশের রাজনৈতিক আন্দোলনের সহিংসতার বিস্তর ফারাক। অন্যান্য দেশে সহিংসতা যখন সরকারী দল ও তার আইন শৃঙ্খলা রক্ষাবাহিনীর বিরূদ্ধে হয়, তখন এদেশে সহিংসতার শিকার হয় সাধারণ জনগণ। বিরোধী দল বা যে কোন দল হরতাল ডেকে যদি ককটেল, পেট্রোল বোমা না ফাটায় অথবা একটা-দুটা গাড়ি যদি না ভাঙে তবে জনগণ তার নিত্য প্রয়োজনীয় কাজ থেকে বিরত হবে না। জীবন চলবে তার স্বাভাবিক গতিতে। যদি এটাই হয়, হরতাল দিয়েও যদি গণ-মানুষকে তার স্বাভাবিক কাজকর্ম থেকে বিরত না করা যায় তাহলে আর হরতাল অবরোধের কোন কার্যকারিতা থাকে না। আবার সরকার পক্ষ থেকেও কখনো দীর্ঘমেয়াদী হরতাল-অবরোধকে যে মেনে নেয়া হবে, হরতালকারীদের বিরুদ্ধে পুলিশি অ্যাকশন হবে না- এটা ভাবাও বাতুলতা মাত্র। উপরের উদাহরণগুলোতে স্পষ্ট দেখা গেছে, যেসব আন্দোলনে সরকারের ভীত নড়ে যাবার আশংকা হয়েছে সেখানেই দমন নীতি অবলম্বন করা হয়েছে। যুক্তরাস্ট্র, যুক্তরাজ্যের মতো দেশগুলোতেই যখন এমন অবস্থা হয়েছে , সেখানে বাংলাদেশে যে আরো বেশি মাত্রায় পুলিশি অ্যাকশন হবে না এটা ভাবা উচিত না। একদিকে হরতাল ডাকা রাজনৈতিক দলগুলোর ভীতি প্রদর্শনের ইচ্ছা, অন্যদিকে সরকারের এইসব আন্দোলন দমনের প্রয়োজনীয়তা- এ দুয়ে মিলে এদেশে হরতাল অবরোধ হলে জ্বালাও পোড়াও হবেই, সহিংসতা হবেই। এটাই বাস্তবতা।

না, এ বাস্তবতা কখনোই মেনে নেয়া যায় না। এর থেকে উত্তরণ খুব দরকার। কিন্তু কথা হচ্ছে, হরতাল অবরোধ ছাড়া আর যাই হোক এদেশে সরকার পতন আন্দোলনে সাফল্যে যাওয়া যাবে না। আর, হরতাল অবরোধ থাকলে সহিংসতা অনিবার্য। তাহলে উপায়টা কী হবে? রাজনৈতিক দলগুলো যদি আসলেই এ থেকে পরিত্রাণ চায়, তবে তাদের রাজনৈতিক ভাবধারা পুরোটাই পাল্টাতে হবে। হরতাল হবে, আন্দোলন হবে। কিন্তু সহিংসতা হবে না। এ জায়গাটাতে সবার একমত হতে হবে। কিন্তু বাস্তবতার নিরিখে এ ব্যাপারটাতে সবার একমত হওয়া অসম্ভব। এটা সম্ভব তখনই যদি রাজনৈতিক দলগুলো জনগণের মুখাপেক্ষি থাকে। প্রতিটি দলকেই জনগণের কাছাকাছি যেতে হবে। রাস্ট্রের নাগরিককে বুঝাতে হবে যে তারা রাজনীতি করছে কেবল মাত্র জনগণের কল্যাণের জন্য, দেশের জন্য। মুখে মুখে রাজনৈতিক নেতারা যত বড় কথাই বলুক না কেন, এদেশের সাধারণ জনগণ ঠিকই জানে এইসব নেতারা মূলত নিজেদের পাত্তি গোটানোর জন্যই রাজনীতি করছে। ক্ষমতার মোহে তারা যা খুশি তাই করছে। রাজনীতিবিদরা যদি জনগণের এ ধারণা তাদের কাজ দিয়ে আমুল পাল্টে দিতে পারেন তবেই কেবল তারা নিজেদের মধ্যে আত্মবিশ্বাস পাবেন। নিজেরা নিশ্চিত হতে পারবেন, একটা গ্রহণযোগ্য কারণে যদি তারা হরতাল ডাকেন তবে তা জনসমর্থন পাবেই। তখন আর জনগণকে ভীতি প্রদর্শন করে রাস্তায় বের হওয়া থেকে বিরত করতে হবে না। জনগণ নিজেদের প্রয়োজনে নিজেরাই হরতাল পালন করবে।

সেই দিন অতি সত্ত্বর আসুক, এই কামনা করি।

মন্তব্য ২ টি রেটিং +৩/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ১৩ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ বিকাল ৫:৫৯

প্রোফেসর শঙ্কু বলেছেন: উদাহরণগুলি যথাযথ। ভাল বলেছেন।

২| ১৪ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ ভোর ৫:১৮

জাফরুল মবীন বলেছেন: চমৎকার তথ্যপূর্ণ পোস্ট!কয়েকটি অহিংস অান্দোলনের ব্যাপারে জানা ছিল না।

ধন্যবাদ আপনাকে।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.