নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

বাংলা অামার তৃষ্ণার জল

কয়েস সামী

i m nothing in this huge world...

কয়েস সামী › বিস্তারিত পোস্টঃ

ঘোর

০১ লা আগস্ট, ২০১৫ রাত ১০:২২

-আচ্ছা, আমার আরেকটা প্রশ্ন আছে। আপনি এই যে এতো চমৎকার চমৎকার সব গল্প লিখেন, গল্পগুলা কিভাবে লিখেন? মানে আপনি কি আগে থেকেই প্লট তৈরী করেন, তারপর লিখেন? প্লট তৈরী করা এবং লেখা শেষ করতে কতদিন সময় নেন?
-না, আসলে ব্যাপরটা তেমন না। ধর, আমি ঠিক করলাম গল্প লিখব। কম্পিউটারের বসে কিবোর্ড চাপতে লাগলাম। প্রথমে একটা লাইন লিখলাম। তারপর ঐ লাইনটা থেকেই গল্প এগিয়ে যেতে থাকে। ইনফ্যাক্ট আমি নিজেও জানি না যে গল্পটা কোথায় গিয়ে শেষ হবে।
-ইন্টারেস্টিং!
-ব্যাপারটা আরেকটু ব্যাখ্যা করি। এই যেমন ধর, তুমি। তুমি আজ এসেছ আমার একটা সাক্ষাৎকার নিতে। তোমাদের কলেজ রোড ম্যাগাজিনে ছাপাবে বলে। সাক্ষাৎকারের এক ফাঁকে আমি বলে উঠলাম... উমমমম... ভয়ে বলব, না নির্ভয়ে?
- নির্ভয়েই বলুন স্যার।
-সাক্ষাৎকার নেয়ার এক ফাঁকে তোমাকে বলে বসলাম, দেখো মেয়ে, আমি তোমাকে ভালবাসি।
-ও মাই গুডনেস! স্যার... স্যার... এটা কি সত্যি সত্যি বলছেন?
- না, সত্যি হতে যাবে কেন? আমি তোমাকে গল্প বলছি। তো.. হল কি... তুমি তো আমার লেখার একজন ভক্ত, তাই না?
-হু।
-সেই হিসেবে বলতে পারি, তুমি আমারও ভক্ত।
-জ্বি, ঠিক।
-তো, হল কী? তুমি তো জানই আমি গত বছর বিয়ে করেছি। এবং আমি লেখক হুমায়ূন আহমেদের মতোও অতো সাহসী না। আমি তোমাকে ভালবাসলেও এটা আমার জীবনে কোন পরিবর্তন আনবে না।
-ঠিক।
-কিন্তু ধর, এই যে আমার সহজ সরল স্বীকারোক্তি, আমি তোমাকে ভালবাসি- এই কথাটা তোমাকে ভাবানো শুরু করল। তুমি এখান থেকে সাক্ষাৎকার নেয়া শেষে বের হয়ে গেলে ঠিক। কিন্তু বাইরে যাওয়ার পর থেকেই তুমি ভাবতে থাকলে। তুমি ভাবতে থাকলে, যে আমাকে তোমার এতোটাই পছন্দ, যে আমার লেখা পড়ার জন্য তুমি সারাক্ষণ পাগল হয়ে থাক, সেই আমি তোমাকে ভালবাসি। অথচ এতোদিন তুমি ব্যাপারটা মোটেও জানতে না। আমার সাথে অনেক আগে থেকে তোমার পরিচয় অথচ আমার মনের এই ব্যাপারটা তুমি কখনো টের পাওনি। ভাল লাগায় ভরে যাবার পাশাপাশি একটা কষ্ট কষ্ট বোধ হতে থাকবে তোমার মনের গহীনে। আমার সাথে তোমার পরিচয় আমার বিয়ের অনেক আগে থেকেই। তাই হঠাৎ তোমার মনে ভাবনা আসবে, তুমি যদি তোমার এই ভাল লাগাটা আগেই প্রকাশ করতে পারতে, তবে আমাকে তুমি পেয়ে যেতে পারতে। এভাবে তোমার মনে উথাল পাথাল বইতে থাকবে সারাক্ষণ।
-তারপর? নীলা বুঁদ হয়ে শুনছে তাদের পাড়ার সুদর্শন বড় ভাই এখনকার তুমুল জনপ্রিয় লেখক কামরুল ইসলামের কথা।
- তোমার বাসায় আমার অনেক বই আছে, তাই না?
-জ্বি ভাইয়া।
-তো... বইগুলো দেখে আমার কথা মনে পড়ে যাবে তোমার। তোমার বুকে একটা চিনচিনে ব্যাথা শুরু হবে। আমাকে চাইলেই তুমি পেতে- এই চিন্তা তোমাকে রীতিমতো গ্রাস করে ফেলবে। গভীর রাতে একসময় তুমি অস্থির হয়ে উঠবে। আমার সেল নাম্বারটা তোমার কাছে আছে, তাই না?
-হ্যা, আছে।
-তুমি আমাকে তখনই কল দিবে। তখন বাজে রাত একটা।
-তারপর?
-তারপরই ঘটবে অঘটনটা। তুমি হয়তো জানো না, আমি খুব ঘুম কাতুরে। একবার ঘুমিয়ে গেলে আর কিছু টের পাই না। তাই মোবাইলের রিংএর শব্দে আমার ঘুম না ভেঙে, ঘুম ভাঙবে তোমার ভাবীর। এতো গভীর রাতে কল দেখে তিনি হন্তদন্ত হয়ে কলটা রিসিভ করবেন। হ্যালো...
মেয়ে কণ্ঠ শুনে তোমার বিবেচনা বোধ জাগ্রত হবে । তুমি বুঝে নেবে, এতো গভীর রাতে তোমার কল দেয়াটা ঠিক হয় নি। তুমি তাই কথা না বলে কলটা কেটে দেবে। আর তাতেই বাঁধবে ঝামেলা! না, তোমার জীবনে না, আমার জীবনে। তোমার ভাবী আমাকে সন্দেহ করা শুরু কওে, যাচ্ছেতাই কান্ড করা শুরু করবেন।...তুমি তো আমার সব গল্পই পড়েছ?
-হু, পড়েছি।
-আমার একটা উপন্যাসের নায়ক রাতের বেলা স্ত্রী ঘুমিয়ে গেলে তার পুরনো প্রেমিকার সাথে মোবাইলে কথা বলতো, মনে আছে?
-জ্বি, মনে আছে।
-তোমার ভাবী ঐ উপন্যাসটি খুঁজে বের করে আবার পড়া শুরু করবেন আর গল্পের খুঁটিনাটি সবকিছুর সাথে উনার স্বামীর বিভিন্ন কাজের মিল পেতে থাকবেন। তাই মনে করবেন ওটা আমার লেখা একটা আত্মজৈবনিক উপন্যাস। তারপর থেকে তিনি আর রাতে ঘুমাতে পারবেন না। প্রতি রাতে তিনি ঘুমানোর ভান করে বিছানায় পড়ে থাকবেন ঠিকই; কিন্তু ঘুমাবেন না। তিনি অপেক্ষা করতে থাকবেন আমি কখনো ঘুম থেকে উঠে আমার সেই প্রাক্তন প্রেমিকার সাথে কথা বলা শুরু করি কি না এটা দেখার জন্য। এভাবে ধীরে ধীরে সন্দেহ বাতিকগ্রস্ত হয়ে উঠবেন তিনি। তার শরীর খারাপ হতে থাকবে। আর আমাদের দাম্পত্য জীবনটাও তিক্ত থেকে তিক্ততর হতে থাকবে। তুমি কিন্তু এসবের কিছুই জানতে পারবে না। কারন ঐ রাতের পর থেকে তুমি বাস্তবে ফিরে এসেছিলে এবং আর কখনো আমার সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করনি। কিন্তু আমাকেই এক সময় তোমার সাথে যোগাযোগ করতে হবে। সেটা হবে, যখন মিলি মানে তোমার ভাবী আর আমার মধ্যে ডিভোর্স হয়ে যাবে তখন। একটা চাইনিজ রেস্টুরেন্টে তোমাকে ডেকে এনে পুরো ঘটনা বলে আমি তোমাকে প্রশ্ন করবো, আমাকে কি তুমি বিয়ে করবে? ...বল মেয়ে, তুমি কি আমাকে বিয়ে করবে?
কথাগুলো বলে লেখক কামরুল সাহেব জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে স্থানীয় কলেজ রোড পত্রিকার পক্ষ থেকে সাক্ষাৎকার নিতে আসা নীলার দিকে তাকালেন।
নীলা মাথা নীচু করে আছে। সে লেখকের চোখের দিকে তাকাতে লজ্জা পাচ্ছে। পাছে লেখক তার মনের কথাটা জেনে ফেলেন। সে নিজেকে গল্পের সেই সাক্ষাৎকারে আসা মেয়েটি ছাড়া অন্য কিছু ভাবতে পারছে না। লেখকের এই ড্রয়িং রুমে বসেই সে চাইনিজ রেস্টুরেন্টের টুং টাং আওয়াজ শুনতে পারছে। কী জবাব দিবে ভাবতে পারছে না নীলা। লেখক তাকে এতো কঠিন একটা প্রশ্ন করে ফেলবেন সে স্বপ্নেও ভাবেনি। সাক্ষাৎকার নিতে এসে এমন দোটানায় পড়ে যাবে সে কল্পনাও করতে পারছে না। সে তার কোলে রাখা কলম নিয়ে কাগজে আঁকিবুঁকি করতে থাকল। লেখকের চোখের দিকে তাকানোর সাহস সে কোনভাবেই সঞ্চয় করতে পারছে না।
-বুঝতে পেরেছো নীলা, কিভাবে আমি গল্প লিখি? এখন তবে ওঠো। কাল বিকেলে আমি একটু ব্যস্ত থাকব। সাক্ষাৎকারের বাকিটা নিতে তোমাকে আগামী পরশু ঠিক পাঁচটায় আসতে হবে। অপু! নীলা চলে গেলে দরজাটা লাগিয়ে দিস।
কামরুল সাহেব ভেতর রুমে চলে গেলেন। কাজের ছেলে অপু এসে সোফায় বসে থাকা নীলাকে ডেকে বলল, আফা যাবেন না?

মন্তব্য ৮ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৮) মন্তব্য লিখুন

১| ০৩ রা আগস্ট, ২০১৫ রাত ৯:৫৪

আজমান আন্দালিব বলেছেন: হা! জীবনের গল্প তো এভাবেই এগোয়।

১৫ ই আগস্ট, ২০১৫ সকাল ৮:৪৭

কয়েস সামী বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ আজমান!

২| ১৪ ই আগস্ট, ২০১৫ সন্ধ্যা ৭:৪৭

শায়মা বলেছেন: বাপরে ! গল্প লিখতে এত কিছু ভাইয়া???

লেখাটা অনেক সুন্দর হয়েছে।:)

১৫ ই আগস্ট, ২০১৫ সকাল ৮:৪৮

কয়েস সামী বলেছেন: এই আপুটার কমেন্ট পাইলেই নিজেরে খুৃব বড় একজন লেখক মনে হয়! অনেক ভাল থাকুন।

৩| ১৪ ই আগস্ট, ২০১৫ রাত ১০:৫১

কাল্পনিক_ভালোবাসা বলেছেন: পাঠক হিসেবে আপনার গল্পে আমার আনন্দ হচ্ছে প্রাঞ্জলতার তৃপ্তি নিয়ে সহজে গভীরে প্রবেশ। দৃশ্যকল্পে সহজে প্রবেশ করলে পাঠক হিসেবে তৃপ্তি পাই। :) শুভেচ্ছা রইল।

১৭ ই আগস্ট, ২০১৫ সকাল ৭:৫০

কয়েস সামী বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ প্রিয় কা_ভা।

৪| ০৮ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৫ রাত ৩:২৬

বন্ধু তুহিন প্রাঙ্গনেমোর বলেছেন: অভিনন্দন। পড়লাম। তৃপ্ত হলাম।

০৮ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৫ সকাল ৮:১২

কয়েস সামী বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.