নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

বাংলা অামার তৃষ্ণার জল

কয়েস সামী

i m nothing in this huge world...

কয়েস সামী › বিস্তারিত পোস্টঃ

গল্পে গল্পে সুরাহ্ আল আহযাব- ৩

২০ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৫ রাত ১২:৪৫

মদীনায় হিজরতের পাঁচ বছরের মাথায় মক্কার কুরাইশরা বিভিন্ন গোত্রের সম্মিলিত দশ হাজার সৈন্যবাহিনী নিয়ে রওনা দিল মদীনার মুসলমানদের বিলীন করে দেয়ার উদ্দেশ্যে। খবর পেয়ে হযরত মুহম্মদ (সাঃ) মদীনার পূর্বদিকে পরিখা খনন করার সিদ্ধান্ত নিলেন যাতে বিশাল সৈন্যদল মদীনায় প্রবেশ করতে না পারে। পরিখা খননের এ ধারণার সাথে মুশরিক বাহিনী পরিচিত ছিল না। তাদের একটি দল মদীনার বাইরে উহুদ পাহাড়ের পাশে (মদীনার নিম্নাংশ) এবং আরেকটি দল মদীনার উঁচু অংশে অবস্থান নিয়ে অবরোধ করল। অন্যদিকে মুসলিম বাহিনী তিন হাজার সৈন্য নিয়ে পরিখার এপারে সালা পাহাড়কে পিছনে রেখে একত্রিত হল। পরিখার ওপারে মুশরিকদের দশ হাজারেরও বেশি সৈন্যদল এবং এপারে নবী করিম (সাঃ) এর তিন হাজারের মতো সৈন্য। শুরু হল অবস্থান নিয়ে টিকে থাকার দীর্ঘ লড়াই। টান টান উত্তেজনা চারদিকে। কুরাইশরা এসেছে মুসলিম বাহিনী তথা ইসলামকে একেবারে গুঁড়িয়ে দিতে। অন্যদিকে মুসলমানরা জড়ো হয়েছে নিজেদের অস্তিত্বকে টিকিয়ে রাখতে। তৎকালীন যুদ্ধের সাধারন বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী নানা রকমের খবর চারদিকে ছড়িয়ে পড়ছিল। খবর আসল, মদীনার বানু কুরাইযা গোত্র, যারা মদীনায় থেকে যাওয়ার বিনিময়ে মুসলমানদের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল কখনো মুসলমানদের বিরুদ্ধে অস্ত্র ধারন করবে না, চুক্তি ভঙ্গ করে মুসলমানদেরকে মদীনার ভেতরের দিক থেকে আক্রমণ করবে। এ খবর মুসলমানদের চিন্তিত করে তুলল। বাইরে ঘিরে আছে শত্রুপক্ষ- যাদের সাথে যুদ্ধ করে জয়লাভ করা কোনভাবেই সম্ভব না। এমন অবস্থায়, ভেতর থেকেও যদি আক্রমণ শুরু হয়! এ খবরটি অতি দ্রুত মদীনার মুসলমানদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ল এবং তাদের অনেকেই আতংকিত হয়ে পড়ল। কেউ কেউ বলতে থাকল, “আমাদের সাথে অংগীকার করা হয়েছিল পারস্য ও রোমান সাম্রাজ্য জয় করা হবে কিন্তু এখন অবস্থা এমন যে আমরা প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিতেও বের হতে পারছি না।” অনেকেই মদীনার ভেতরে পরিবারের লোকজনকে রক্ষার জন্য যুদ্ধের ময়দান থেকে ছুটি চাইতে থাকল। একে একে দল ছেড়ে চলে যাচ্ছে সবাই- এই নাজুক পরিস্থিতিতে হযরত মুহম্মদ (সাঃ) ঠিক করলেন কুরাইশদের সম্মিলিত বাহিনীর গাতফান গোত্রের সাথে সন্ধি করবেন। মদীনায় উৎপাদিত ফলের এক তৃতীয়াংশ নিয়ে তাদেরকে ফিরে যেতে বলবেন বলে স্থির করলেন। কিন্তু আনসার সর্দাররা নবী (সাঃ) কে এ সিদ্ধান্তের সাথে একমত হলেন না। ঠিক তখনই গাতফান গোত্রের নাঈম ইবনে মাসুদ নামক এক ব্যক্তি ইসলাম গ্রহণ করে হযরত মুহম্মদ (সাঃ) এর কাছে আসলে তিনি তাকে তার ইসলাম গ্রহণের কথা গোপন রাখতে বলে তাকে নির্দেশ দিলেন সে যেন বনী কুরাইযা ও বাইরে অবস্থিত কুরাইশদের মধ্যে বিভেদ তৈরী করার চেষ্টা চালায়। (এ সময় নবী (সাঃ) বলেন যে, যুদ্ধে প্রতারণা করা বৈধ)। নাঈম তার উদ্দেশ্যে সফল হন এবং বনী কুরাইযা গোত্র মুসলিম বাহিনীর উপর আক্রমণ করা থেকে বিরত থাকে। অবরোধ যখন পঁচিশ দিন ছাড়িয়ে গেছে তখন হঠাৎ করে শুরু হল প্রচন্ড ধূলিঝড়। প্রবল ঝড়ে শত্রুদের তাঁবুগুলো তছনছ হয়ে গেল। তারা কী করবে, কী করবে না কিছুই ভেবে উঠতে পারল না। প্রচন্ড ঝড়ো বাতাস ও তীব্র সেই শীতের রাতে মুহম্মদ (সাঃ) তার সেনাদের উদ্দেশ্যে বললেন, “কাফিরদের দলের খবর এনে দেয়ার মতো তোমাদের মধ্যে কেউ আছো কি?” সেনাদলের ভেতর থেকে কোন সাড়া পাওয়া গেল না। তিনি আবারো বললেন, “কাফির সৈন্যদের খবর আনতে যে যাবে আল্লাহ তাকে কেয়ামতের দিন আমার সাথী করবেন।” পরিস্থিতি তখন এতোটাই ভয়াবহ ছিল যে এবারও সবাই নিরব থাকল। অতঃপর নবী (সাঃ) সৈন্যদলের একজন, হুযাইফার কাছে গেলেন। “ওহে হুযাইফা, ওঠো। তুমিই আমাকে কাফিরদের অবস্থা সম্বন্ধে অবহিত কর।" হুযাইফার কথায়, “যখন তিনি আমাকে নাম ধরে ডাকলেন, তখন আমি গত্যন্তর না দেখে কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে উঠে দাড়ালাম। আমি তার নিকট থেকে বের হলাম যখন, তখন মনে হচ্ছিল আমি যেন গরম তাপের ভেতর চলে যাচ্ছি।“ হুযাইফা ফিরে এসে কাফিরদের পলায়নের খবর দিলেন। যখন এ খবর মুসলিম বাহিনীতে পৌছাল, তখন সেখানে কেবল তিনশত সৈন্য অবশিষ্ট ছিল। বাকিরা সবাই নানা অযুহাতে ফিরে গিয়েছিল।
আয়াত নাযিল হল:

৯) হে ঈমানদাগণ, তোমরা তোমাদের প্রতি আল্লাহর অনুগ্রহের কথা স্মরণ করো যখন শত্রুবাহিনী তোমাদের বিরূদ্ধে সমাগত হয়েছিল এবং আমি তাদের বিরূদ্ধে প্রেরণ করেছিলাম ঝঞ্ঝাবায়ু এবং এক বাহিনী (ফেরেশতাগণ), যা তোমরা দেখনি। তোমরা তখন যা কিছু করছিলে আল্লাহ তা সব দেখছিলেন।

১০) যখন তারা ওপর ও নিচে থেকে তোমাদের ওপর চড়াও হলো, যখন ভয়ে তোমাদের চোখ বিস্ফারিত হয়ে গিয়েছিল, প্রাণ হয়ে পড়েছিল ওষ্ঠাগত এবং তোমরা আল্লাহ সম্পর্কে নানা প্রকার ধারণা পোষণ করতে শুরু করেছিলে।

১১) তখন মু’মিনদেরকে নিদারুণভাবে পরীক্ষা করা হলো এবং ভীষণভাবে নাড়িয়ে দেয়া হলো৷

১২) স্মরণ কর, যখন মুনাফিকরা এবং যাদের অন্তরে ব্যধি ছিল তারা পরিস্কার বলছিল, আল্লাহ ও তাঁর রসূল আমাদের যে প্রতিশ্রুতি (ঈমানদাররা আল্লাহর সাহায্য লাভ করবে এবং তাদের চূড়ান্ত বিজয় দান করা হবে) দিয়েছিলেন তা প্রতারণা ছাড়া আর কিছুই ছিল না।

১৩) যখন তাদের মধ্য থেকে একটি দল বললো, হে ইয়াসরিববাসীরা (মদীনাবাসীরা)! তোমাদের জন্য এখানে অবস্থান করার কোন সুযোগ নেই, ফিরে চলো। যখন তাদের একপক্ষ নবীর কাছে এই বলে ছুটি চাচ্ছিল যে, আমাদের গৃহ বিপদাপন্ন, অথচ তা বিপদাপন্ন ছিল না। আসলে পলায়ন করাই ছিল তাদের উদ্দেশ্য।

১৪) যদি শহরের বিভিন্ন দিক থেকে শত্রুরা ঢুকে পড়তো এবং সে সময় তাদেরকে বিদ্রোহের জন্য প্ররোচিত করতো, তাহলে তারা তাই করতো। তারা এতে কালবিলম্ব করতো না।

১৫) তারা ইতিপূর্বে আল্লাহর সাথে অংগীকার করেছিল যে, তারা পৃষ্ঠ প্রদর্শন করবে না এবং আল্লাহর সাথে করা অংগীকার সম্পর্কে অবশ্যই জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।

১৬) হে নবী! তাদেরকে বলো, যদি তোমরা মৃত্যু বা হত্যা থেকে পলায়ন করো, তাহলে এ পলায়নে তোমাদের কোনো লাভ হবে না। এরপর জীবন উপভোগ করার সামান্য সুযোগই তোমরা পাবে।

১৭) তাদেরকে বলো, কে তোমাদের রক্ষা করতে পারে আল্লাহর হাত থেকে যদি তিনি তোমাদের ক্ষতি করতে চান ? তারা আল্লাহ ছাড়া নিজেদের কোন অভিভাবক ও সাহায্যকারী পাবে না।

১৮) আল্লাহ তোমাদের মধ্য থেকে তাদেরকে খুব ভালো করেই জানেন যারা তোমাদেরকে যুদ্ধ অংশগ্রহণে বাঁধা দেয়, যারা নিজেদের ভাইদেরকে বলে, “এসো আমাদের দিকে”। তারা কমই যুদ্ধে অংশ নেয়।

১৯) যারা তোমাদের সাথে সহযোগিতা করার ব্যাপারে বড়ই কৃপণ। বিপদের সময় এমনভাবে চোখ উল্টিয়ে তোমাদের দিকে তাকাতে থাকে যেন কোনো মৃত্যুপথযাত্রী মূর্ছিত হয়ে যাচ্ছে। কিন্তু বিপদ চলে গেলে এ লোকেরাই আবার স্বার্থলোভী হয়ে তীক্ষ ভাষায় তোমাদেরকে বিদ্ধ করতে থাকে। তারা কখনো ঈমান আনেনি, তাই আল্লাহ তাদের সমস্ত কার্যাবলী ধ্বংস করে দিয়েছেন এবং এমনটি করা আল্লাহর জন্য অত্যন্ত সহজ।

২০) তারা মনে করছে সম্মিলিত বাহিনী এখনো চলে যায়নি। আর যদি আক্রমণকারীরা আবার এসে যায়, তখন তারা কামনা করবে যে, ভাল হতো যদি তারা যাযাবর মরুবাসীদের সঙ্গে থেকে তোমাদের খবরাখবর নিতো। তারা তোমাদের সাথে অবস্থান করলেও তারা যুদ্ধ অল্পই করতো।

২১) তোমাদের মধ্যে যারা আল্লাহ ও আখিরাতের প্রতি বিশ্বাস রাখে এবং আল্লাহকে অধিক স্মরণ করে তাদের জন্যে রাসুলুল্লাহ (সাঃ) এর মধ্যে রয়েছে উত্তম আদর্শ।

২২) মুমিনরা যখন সম্মিলিত বাহিনীকে দেখল তখন তারা বলে উঠল, এটা তো তাই , আল্লাহ ও তার রাসুল (সাঃ) যার প্রতিশ্রুতি আমাদের দিয়েছেন, এবং আল্লাহ ও তার রাসুল (সাঃ) সত্যই বলেছিলেন। আর এতে তাদের ঈমান ও আনুগত্যই বৃদ্ধি পেল।
গল্পে গল্পে সুরাহ্ আল আহযাব- ২
গল্পে গল্পে সুরাহ আল আহযাব

মন্তব্য ৮ টি রেটিং +৩/-০

মন্তব্য (৮) মন্তব্য লিখুন

১| ২০ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৫ রাত ২:২১

অন্ধবিন্দু বলেছেন: খুবই ভালো একটি চেষ্টা। আসসালামু আলাইকুম।

২০ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৫ সকাল ৭:৩৪

কয়েস সামী বলেছেন: ভাল থাকুন।

২| ২০ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৫ দুপুর ১২:০৭

ময়না বঙ্গাল বলেছেন: বরকত হোক ভাই । আপনার মত একজন গুণী মানুষের সাথে পরিচয় হতে চাই ও চিন্তামত বিনিময় করতে চাই । । ০১৫৫৬৪৬৫৯৭৩ আমার নাম্বার । আপনারটা ভাই একটু লিখে দিবেন ।

২১ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৫ সকাল ৭:১৬

কয়েস সামী বলেছেন: আপনার সাথে পরিচিত হতে পারলে আমারও ভাল লাগাবে ভাই। আপনার নাম্বারটা টুকে নিলাম। কল দেব।

৩| ২০ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৫ রাত ৯:১৩

কামরুন নাহার বীথি বলেছেন: শ্রদ্ধা জানাই আপনার এই প্রচেষ্টাকে!!!

২১ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৫ সকাল ৭:২০

কয়েস সামী বলেছেন: আপনাকে অশেষ ধন্যবাদ।

৪| ২৬ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৫ দুপুর ১:৫১

আজমান আন্দালিব বলেছেন: ভালো লাগা।

২৮ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৫ রাত ১২:০৪

কয়েস সামী বলেছেন: ধন্যবাদ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.