নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

বাংলা অামার তৃষ্ণার জল

কয়েস সামী

i m nothing in this huge world...

কয়েস সামী › বিস্তারিত পোস্টঃ

গল্পে গল্পে সুরাহ্ আলাক

০৭ ই ডিসেম্বর, ২০১৫ সকাল ৭:৩০

“পড়ো।”
“আমি পড়তে পারি না।“
কেউ একজন তাকে বুকের সাথে কয়েক পলক শক্ত করে জড়িয়ে ধরে ছেড়ে দিয়ে আবার নির্দেশ দিলেন, “পড়ো”।
“আমি তো পড়তে পারি না।”
আবার তাকে বুকে জড়িয়ে ধরে এমন জোরে চাপ দেয়া হল যে তিনি থতমত খেয়ে গেলেন। “পড়ো”।
“আমি পড়তে পারি না।” পড়াশুনা না জানা মুহম্মদ আর কিইবা জবাব দেবেন!
আবারো তাকে প্রচন্ড শক্তি দিয়ে জড়িয়ে ধরা হল। অসহনীয় ব্যাথায় তিনি কষ্ট পাচ্ছিলেন। তারপর তিনি শুনতে পেলেন,
১. পাঠ কর তোমার প্রতিপালকের নামে যিনি সৃষ্টি করেছেন।
২. সৃষ্টি করেছেন মানুষকে রক্তপিন্ড হতে।
৩. পাঠ কর। আর তোমার প্রতিপালক মহিমান্বিত।
৪. যিনি কলমের সাহায্যে শিক্ষা দিয়েছেন।
৫. তিনি শিক্ষা দিয়েছেন মানুষকে যা সে জানতো না।
হেরা গুহার নির্জনতায় চল্লিশ বছর বয়স্ক মুহম্মদ ধ্যান করতে এসে এমন ভয়াবহ ঘটনার সম্মুখীন হবেন তা কখনোও কল্পনাও করেন নি। ভয়ে কাঁপতে কাঁপতে ঘরে ফিরে এসে তার স্ত্রী খাদিজাকে ডেকে বললেন, “আমাকে চাদর দিয়ে ঢেকে দাও।” খাদিজা চাদর দিয়ে মুহম্মদের সারা শরীর ঢেকে দিলেন। কিছুক্ষণ পর স্বাভাবিক হলে মুহম্মদ তার স্ত্রীকে পুরো ঘটনা খুলে বলে জানালেন, তার খুব ভয় করছে। বিবি খাদিজা তার স্বামীকে অভয় দিলেন। বললেন, “যেহেতু আপনি আত্মীয়-স্বজনের প্রতি আপনার কর্তব্য পালন করেন, সবসময় সত্য কথা বলেন, অতিথি সেবা করেন, আপনার কোন ক্ষতি হবে না।” অনুসন্ধিৎসু খাদিজা তাকে অভয় দিয়ে কিন্তু বসে থাকলেন না। তিনি মুহম্মদকে তার এক চাচাতো ভাই ওয়ারাকার কাছে নিয়ে গেলেন। ওয়ারাকা আবার তখন খ্রীষ্টান ধর্ম গ্রহণ করেছিলেন এবং আরবীতে ইনজিলের অনুবাদ করতেন। সমস্ত ঘটনা শুনার পর তার আর বুঝতে বাকি রইল না, মুহম্মদের কাছে যিনি আল্লাহর বার্তা নিয়ে এসেছিলেন তিনি ফেরেশতা জীবরাইল ছাড়া আর কেউ নন। এই ফেরেশতাই হযরত মুসা (আঃ) এর কাছে আসতেন। তিনি মুহম্মদকে বিষয়টি জানালেন আর বললেন, “আপনার স্ব-জাতিরা যখন আপনাকে দেশ ছাড়া করবে তখন যদি আমি বেঁচে থাকতাম!” মুহম্মদ (সাঃ) কথাটি শুনে বেশ চমকে উঠলেন। তাকে দেশ ছাড়া করবে কেন এটা তিনি বুঝতে পারলেন না। তখন ওয়ারাকা বললেন, “হ্যা। তবে শুধু আপনাকেই নয়, আপনার মতো যারাই নবুওয়াত লাভে ধন্য হয়েছিলেন, তাদের প্রত্যেকের সাথেই এরূপ শত্রুতা করা হয়েছিল।” নবুওয়াত প্রাপ্তির কথা শুনে নবী করিম হযরত মুহম্মদ (সাঃ) এবং তার স্ত্রী বিবি খাদিজা (রাঃ) নিজ ঘরে ফিরলেন।
কালক্রমে হযরত মুহমম্দ (সাঃ) আল্লাহর নির্দেশিত পথে কাবা শরীফে নামায পড়া শুরু করলেন। এই ইবাদত প্রথম দিকে তিনি নির্ঝঞ্জাটভাবে একা একাই করতেন। কুরাইশরা তার এই নামায পড়া দেখেই বুঝতে এবং জানতে পারল যে নবী করিম ভিন্ন কোন ধর্মের প্রবক্তা হতে যাচ্ছেন। তাই কুরাইশদের সর্দার আবু জেহেল কিছুতেই মুহম্মদ (সাঃ) এর এই প্রকাশ্য নামায পড়ার ঘটনা মেনে নিতে পারল না। সে নানাভাবে হযরত (সাঃ) কে হুমকি দিতে থাকল। এভাবে হারাম শরীফে ইবাদত করা যাবে না বলে তাকে ধমকাতে থাকল। একদিন হযরত মুহম্মদ (সাঃ)কে নামায পড়তে দেখে আবু জেহেল তাকে ডেকে ধমকাতে ধমকাতে বলে উঠল, “ হে মুহম্মদ! আমি কি তোমাকে এ থেকে নিষেধ করি নি?” মুহম্মদ (সাঃ) আবু জেহেলকে বেশ কঠোর ভাষায় উত্তর দিলেন। তার এমন উত্তর শুনে জেহেল বলল,“ কিসের জোরে তুমি আমাকে ভয় দেখাচ্ছ? আল্লাহর কসম, এই উপত্যকায় আমার সমর্থকদের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি।” আরেকদিন হযরতকে এভাবে নামায পড়তে দেখে আবু জেহেল তার ঘাড়ের উপর পা রাখার জন্য সামনের দিকে এগিয়ে গেল। কিন্তু হঠাৎ করে ভয় পেয়ে সে পিছু হটে গেল। উপস্থিত সবাই অবাক হয়ে কারন জিজ্ঞেস করলে সে বলল, “আমার এবং মুহম্মদের মাঝে আগুনের পরিখা ও ভয়াবহ কিছু জিনিস দেখতে পেলাম।”
আয়াত নাযিল হল:
৬. বস্তুত মানুষতো সীমা লংঘন করেই থাকে,
৭. কারণ সে নিজেকে অভাবমুক্ত বা অমুখাপেক্ষী মনে করে।
৮. তোমার প্রতিপালকের নিকট প্রত্যাবর্তন সুনিশ্চিত।
৯. তুমি কি তাকে দেখেছো যে বাঁধা দেয় বা বারণ করে
১০. এক বান্দাকে যখন সে নামায আদায় করে?
১১. তুমি লক্ষ্য করেছো কি যদি সে সৎপথে থাকে।
১২. অথবা তাকওয়ার নির্দেশ দেয়,
১৩. তুমি লক্ষ্য করেছো কি যদি সে মিথ্যা আরোপ করে ও মুখ ফিরিয়ে নেয়
১৪. তবে সে কি অবগত নয় যে আল্লাহ দেখছেন।
১৫. সাবধান! সে যদি নিবৃত্ত না হয় তবে আমি তাকে অবশ্যই হেঁচড়িয়ে নিয়ে যাব, মস্তকের সম্মুখভাগের কেশগুচ্ছ ধরে।
১৬. মিথ্যবাদী পাপিষ্ঠের কেশগুচ্ছ।
১৭. অতএব সে তার দলকে ডাকুক।
১৮. আমিও ডাকবো জাহান্নামের প্রহরীদেরকে।
১৯. সাবধান! তুমি তার অনুসরণ কর না। সিজদা কর ও আমার নৈকট্য অর্জন কর।

(বি.দ্র: ছোটবেলা থেকেই কোরান পড়া শুরু করেছি। পবিত্র রমযান মাস এলে অন্যদের সাথে রীতিমতো প্রতিযোগিতা করে কোরান শেষ করার চেষ্টা করেছি। কে কতবার কোরান শেষ করতে পারল এ নিয়ে আমাদের মধ্যে ছিল তুমুল প্রতিযোগীতা। কিন্তু আমাদের এই পাঠ ছিল আরবী ভাষায়। কখনো এর অর্থ জানার চেষ্টা করিনি। আমি যে কোরান শরীফটি পড়তাম তার নিচে বাংলা ভাষায় এর অনুবাদ থাকা সত্ত্বেও কখনো ইচ্ছে হয়নি তাতে কি লেখা আছে তা পড়ে দেখার। কিছু কিছু আয়াতের দিকে হয়তোবা কখনো চোখ পড়েছে। কিন্তু না বুঝার কারনে কখনো বেশি দূর এগোইনি। কী দরকার! আরবী পড়লেই তো সওয়াব হয়। বাংলা পড়ার প্রয়োজনীয়তা বা ইচ্ছা কোনটাই কখনো উপলদ্ধি করিনি। কেন পড়লাম না, কেন আগ্রহ হল না- এ নিয়ে ভাবকে ভাবতে মনে হল, সহজ ভাষায় আগ্রহ সৃষ্টিকারী কোরানের উপর এমন কোন বাংলা বই হাতের কাছে পাইনি বলেই কখনো কোরান বুঝার ইচ্ছে হয়নি আমার। তাই সিদ্ধান্ত নিলাম, যে পবিত্র গ্রন্থটি আমাদের প্রত্যেক ঘরে ঘরে অন্তত একটি করে আছে সেই গ্রন্থে আসলে কী লেখা আছে তা জানার একটুখানি চেষ্টা করি। এ সিদ্ধান্ত থেকেই সুরা আল আহযাব পড়া শুরু করলাম। আর ভাবলাম, এ সুরাটি পড়ে আমি যা জানছি তা আপনাদের সাথে শেয়ার করি। আমার এ লেখায় তাফসীর ইবনে কাসীর, তফসীরে মা‘আরেফুল কোরআন, তফসীরে জিবরীল, তাহফীমুল কোরআন, বুখারী শরীফ, সহীহ মুসলিম, কোরান শরীফ-সরল বঙ্গানুবাদ থেকে প্রাপ্ত তথ্যগুলো সন্নিবেষ্টিত হবে। লেখায় কোন ভুল ধরা পড়লে জানাবেন।)

মন্তব্য ১৪ টি রেটিং +৫/-০

মন্তব্য (১৪) মন্তব্য লিখুন

১| ০৭ ই ডিসেম্বর, ২০১৫ সকাল ৭:৪০

ইলুসন বলেছেন: চমৎকার উদ্যোগ। পড়ে ভালো লাগলো।

০৭ ই ডিসেম্বর, ২০১৫ সকাল ৭:৪৯

কয়েস সামী বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ। সাথে থাকুন।

২| ০৭ ই ডিসেম্বর, ২০১৫ সকাল ৭:৪৬

প্রামানিক বলেছেন: মহৎ উদ্যোগ। ধন্যবাদ

০৭ ই ডিসেম্বর, ২০১৫ সকাল ৭:৪৯

কয়েস সামী বলেছেন: ধন্যবাদ।

৩| ০৭ ই ডিসেম্বর, ২০১৫ সকাল ৮:১৯

রাবেয়া রাহীম বলেছেন: মনযোগ দিয়ে পুরোটা পড়লাম । খুব মন সংযোগ করে লেখা । ঘটনা গুলো অনেক বার পড়েছি তারপরেও মনে হোল নতুন কিছু পড়ছি। ভাল লাগলো খুব ।

০৮ ই ডিসেম্বর, ২০১৫ সকাল ৭:৫৭

কয়েস সামী বলেছেন: চমৎকার মন্তব্যে অনুপ্রেরণা পেলাম। আশা করি পরের পর্বগুলোতেও পাশে থাকবেন।

৪| ০৭ ই ডিসেম্বর, ২০১৫ সকাল ৮:৩৩

মরণের আগে বলেছেন: খুব ভাল লাগল ,শেষের আয়াতটি সিজদার, মানে যারা পরবে বা শুনবে তাদের জন্য সিজদা করতে হবে ।

০৮ ই ডিসেম্বর, ২০১৫ সকাল ৭:৫৮

কয়েস সামী বলেছেন: হু। ঠিক।

৫| ০৭ ই ডিসেম্বর, ২০১৫ সকাল ৮:৩৮

গোধুলী রঙ বলেছেন: চমৎকার উদ্যোগ। জাজাকাল্লাহ

০৮ ই ডিসেম্বর, ২০১৫ সকাল ৭:৫৮

কয়েস সামী বলেছেন: ধন্যবাদ।

৬| ০৭ ই ডিসেম্বর, ২০১৫ সকাল ৯:২৪

যান্ত্রিক বলেছেন: চমৎকার উদ্যোগ। জাজাকাল্লাহ
চালিয়ে যান, ভাই। সাথে আছি।
+++++++++++++++++++++

০৮ ই ডিসেম্বর, ২০১৫ সকাল ৭:৫৮

কয়েস সামী বলেছেন: চালিয়ে যাবার ইচ্ছা রাখি। দোয়া করবেন।

৭| ০৭ ই ডিসেম্বর, ২০১৫ সকাল ৯:৩৭

মাকড়সাঁ বলেছেন: বাহ চমৎকার লিখেছেন।

০৮ ই ডিসেম্বর, ২০১৫ সকাল ৭:৫৯

কয়েস সামী বলেছেন: ধন্যবাদ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.