নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

বাংলা অামার তৃষ্ণার জল

কয়েস সামী

i m nothing in this huge world...

কয়েস সামী › বিস্তারিত পোস্টঃ

রোবট

২৫ শে মার্চ, ২০১৬ দুপুর ১:৫৮

শেষ পর্যন্ত কিনা এক রোবটের সাথে আমার বিয়ে হল।

সে আমার সাথে কথা বলতে চায় না। আমার দিকে তাকিয়ে সে হাসে না। রাতে আমাকে কখনো জড়িয়ে ধরে না। প্রায় মধ্য রাতে আমি যখন আমাদের ছোট্ট রুমটাতে প্রবেশ করি, তখন সে বের হয়ে যায়। আমার ঘুমিয়ে পড়ার পর সে রুমে আসে। আমি যখন তাকে ছুঁয়ে দেই হঠাৎ করে, তার শরীরের উষ্ণতা স্বাভাবিকের চেয়ে অনেক কমে যায়। সাপের শরীরও বুঝি এত শীতল হয় না। সে প্রতিদিন সকালে কাজে বেরিয়ে যায়, আর গভীর রাতে ফিরে আসে। শুক্রবার সাপ্তাহিক ছুটির দিনেও তার কাজ থাকে। মাঝে মাঝে আমার মনে হয় সত্যিকারের রোবটও বোধ হয়, এতোটা নিস্পৃহ থাকতে পারে না।

একসময় আমার মনে হয়, হয়তো বা আবীরের কোন প্রেমিকা ছিল। বিয়ের পরেও সে প্রেম অটুট আছে। তাই আমি তাকে কয়েকদিন খুব পর্যবেক্ষণ করি। তার মোবাইলের মেসেজ স্টোরেজ, তার কল লিস্ট, ইমেল, ফেসবুক পেজের ইনবক্স- সব কিছু তন্ন তন্ন করে খুঁজতে থাকি। কিন্তু না। উল্টাপাল্টা কোন কিছুর কোন অস্তিত্ব খুঁজে পাই না। কোন প্রেমিকার কোন উপস্থিতির প্রমাণ মিলে না।
তবে কি এটা তার কোন মানসিক সমস্যা? আমি সেদিকেও নজর দেই। তাকে বলি, তুমি কি ঠিক আছ? সে বলে, সে আলবৎ ঠিক আছে। আমি বলি- চলো না, আমরা ডাক্তার দেখাই। আমাদের মধ্যে কিছু একটা সমস্যা অবশ্যই আছে। ভেবেছিলাম সে আপত্তি জানাবে। না। একেবারে রোবটের মতো করে সে বলে ওঠে- চল, ডাক্তার দেখাই। ডাক্তারও রোবটের মতো করেই বলেন, নাহ! কোন সমস্যা নাই। আজব!

সে আমার দিকে তাকায় না। কথা বলে মাটির দিকে তাকিয়ে। তার সামনে যে তার ভয়াবহ রকমের সুন্দরী একটা বউ দাঁড়িয়ে আছে, সেটা হয়তো সে জানেই না। সে হয়তো কখনোই আমার দিকে তাকায় নি। সে বোধ হয় কখনো কোন নারীর দিকেই তাকায় নি। বিয়ের আগে আমি যখন কলেজে পড়ি, কত কত ছেলে যে আমার সাথে প্রেম করতে চেয়েছে। আমার রূপের বর্ণনা সমেত কত কত প্রেমপত্র যে আমার কাছে এসে পৌছেছিল। আমি জানি, ছেলেরা প্রেমে পড়লে একটু বাড়িয়ে বাড়িয়েই বলে। সেই চিঠিতে প্রকাশিত বর্ণনার কিয়দংশও যদি সত্যি হয়, তাহলেও তো কোন পুরুষ আমাকে বিয়ে করার পর দীর্ঘ এক বছর এতোটা নির্লিপ্ত থাকতে পারবে না বলে আমি দৃঢ় বিশ্বাস করি। কিন্তু আবীর আমার সে বিশ্বাসে ধীরে ধীরে চিড় ধরাতে সমর্থ হয়েছে।

এমন নির্লিপ্ত বিবাহিত জীবন কয়টা মেয়ের কাছে সহনীয়, আমি জানি না। আমার কাছে এটা এখন রীতিমতো অসহ্য লাগছে। আর পারছি না। দীর্ঘদিন চেষ্টা করেছি মানিয়ে চলতে। চেষ্টা করেছি নিজের সাধ-আহ্লাদ দমিয়ে রাখতে। কিন্তু আর পারছি না। এখন প্রায়ই তাকে কথা শুনাই। এতোই যখন একা একা থাকতে পার, বিয়ে করেছিলে কেন শুনি? সে কোন কথা বলে না। একবার ঝগড়া করলেও শান্তি পেতাম মনে। সেদিন সে যখন এসে বলল, অফিসে কী একটা সমস্যা। আমি সাথে সাথে কল দিয়ে দিলাম, তার এক কলিগকে। ওর সামনেই। ভাই, আপনাদের অফিসে নাকি সমস্যা। আমার তো ভয় করছে। একদিন তার অজান্তেই তার মোবাইল থেকে সেই কলিগের নাম্বারটা নিয়ে নিয়েছিলাম। আমার কলে কিন্তু কোন কাজ হল না। সে কোন রকমের প্রতিক্রিয়া দেখাল না। যেন স্ত্রীরা নিজের স্বামীর কথা বিশ্বাস করবে না, এটাই স্বাভাবিক।

একদিন সে এসে বলল, আমি একটা ট্রেইনিং প্রোগ্রামে সিংগাপুর যাচ্ছি। আমিও যেতে চাইলাম তার সাথে। সে জানাল, সাথে তার দুজন কলিগ থাকবে। কলিগ না ছাই! নিশ্চয়ই প্রেমিকা থাকবে। আমি খুব করে তাকে অনুরোধ করলাম আমাকে সাথে নিতে। সে নিল না। একা একাই বের হয়ে গেল। ফিরে এল এক সপ্তাহ পর। তাকে বিশ্রামে রেখে আমি এক ফাঁকে তার লাগেজটা খুললাম। দেখি, তাতে কোন কিছু খুঁজে পাওয়া যায় কি না। এই যেমন কারো ব্যবহৃত লিপস্টিক, বা ব্যবহৃত নেইল পলিশ বা অন্য কোন মেয়েলি পোষাক। তন্ন তন্ন করে লাগেজের পুরোটাই খুঁজলাম। নাহ! কিছু পাওয়া গেল না। লাগেজটা লাগিয়ে ফেলব, এমন সময় কার যেন একটা ভিজিটিং কার্ড চোখে পড়ল। এক কোণায় পড়ে আছে। কার্ডটি হাতে নিলাম। তাতে ইংরেজীতে লেখা- জন মাইকেল, লাইফ প্ল্যানার, ডিজাইন ইউর লাইফ লি., হল্যান্ড রোড, অলসওয়ার্থ পার্ক, সিংগাপুর। ওহ! তাহলে এই ব্যাপার! আবীর কোন এক লাইফ প্ল্যানারের কাছে গিয়েছিল! সেখান থেকে সেই প্ল্যানার আবীরের ভেতর নিশ্চয়ই কোন নতুন প্রোগ্রাম ঢুকিয়ে দিয়েছে। হায় আবীর! তুমি আসলেই একটা রোবট।

এবার কিন্তু আমি এক পরিবর্তিত আবীরকে খুঁজে পেলাম। সে আমার চোখের দিকে তাকায়। আমাকে নিজে থেকেই প্রশ্ন করে। বাইরে থেকে আমার প্রিয় জিনিসগুলো কিনে আনে। আমাকে নিয়ে বাইরে বেড়াতে যেতে চায়। রাতে ঘুমুতে গেলে আমাকে জড়িয়ে ধরে। স্পষ্ট বুঝতে পারলাম, সিংগাপুরের সেই লাইফ প্ল্যানার রোবটটার ভেতর নতুন করে কিছু প্রোগ্রামিং ঢুকেিয় দিয়েছে। আবীর সেই প্রোগ্রাম অনুযায়ী চলছে।

কিন্তু এখন আর আমার ওসব ভাল্লাগে না। একদম না। আবীর আমার সাথে বেড়াতে যেতে চায়। আমি যাই না। সে আমার চোখে তাকায়, আমি অন্য কোন দিকে। সে আমার সাথে গল্প করার চেষ্টা করে। আমি হু, হা বলে উত্তর দেই। সে আমার জন্য বাইরে থেকে বিভিন্ন উপহার নিয়ে আসে । আমি বলি, এসবে কী হবে।

সে সিংগাপুরে আবার যাচ্ছে। আমাকে সাথে যেতে বলল। আমি বললাম, ঘরের বাইরে যেতেই আমার ইচ্ছে করে না, আর দেশের বাইরে!

মন্তব্য ৯ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৯) মন্তব্য লিখুন

১| ২৫ শে মার্চ, ২০১৬ বিকাল ৩:২৬

মারুফ তারেক বলেছেন: কেমন কেমন!

মেয়েটিও কী রোবট ছিল?

২৫ শে মার্চ, ২০১৬ সন্ধ্যা ৬:৩৯

কয়েস সামী বলেছেন: আসলে মেয়েটা প্রথমে রোবট ছিল না। দীর্ঘ দেনের অবহেলা পেতে পেতে মেয়েটাও একসময় রোবট হয়ে যায়। তখন আবীরের কিছুই করার ছিল না, আসলে। ধন্যবাদ মন্তব্যের জন্য।

২| ২৫ শে মার্চ, ২০১৬ সন্ধ্যা ৬:৪১

বিজন রয় বলেছেন: মানুসের চেয়ে রোবট ভাল।

২৫ শে মার্চ, ২০১৬ সন্ধ্যা ৬:৪২

কয়েস সামী বলেছেন: ঠিক বলেছেন ভ্রাতা। হা হা হা।

৩| ২৬ শে মার্চ, ২০১৬ রাত ১০:১৫

শায়মা বলেছেন: দুজনই মানুষ রোবট তাইনা?

২৭ শে মার্চ, ২০১৬ সকাল ৭:৪৫

কয়েস সামী বলেছেন: দুই জনই মানুষ। কিন্তু তাদের আচরণ রোবটের মতো। একজনের টা আগে থেকেই ছিল। অন্যজন পরে হয়েছে। স্বামীর কাছ থেকে অবহেলা পেতে পেতে।

৪| ০৩ রা এপ্রিল, ২০১৬ রাত ৯:৫৪

মহামহোপাধ্যায় বলেছেন: অনেকদিন পর আপনার লেখা পড়লাম। ভালো লাগলো মানুষ রোবটের আখ্যান :)

০৪ ঠা এপ্রিল, ২০১৬ রাত ১১:০১

কয়েস সামী বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ, ডিয়ার।

৫| ১২ ই এপ্রিল, ২০১৬ বিকাল ৫:০৬

মির্জা বাড়ির বউড়া বলেছেন: আসেন দেখেন ব্লগের সবচেয়ে পুরান নাটকের পুন:প্রচার। শরণার্থী নিকে ব্যাপক ল্যাদানির পরও মনমত সাড়া না পাওয়ায় অগ্নিসারথি গতকালকে নিজেই খুলেন বেলের শরবত নামে এক ইচিং ব্লগিং ক্যারেক্টার, তারপর সারাব্লগ ভাসিয়ে দেন নিজেই নিজেকে গালি দিয়ে কমেন্ট করে যেন মানুষের সহানুভূতি আদায় করে ভোট পাওয়া যায়। নিজের গোমর নিজেই গভীর রাতে ভুলে ফাঁস করে ফেলেন পোস্ট দিয়ে যে তিনি ববস.কমে জিতে চাকরি ছেড়ে রেসিডেন্ট ব্লগার হতে চান এই ব্লগের। মারহাবা।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.