নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

বাংলা অামার তৃষ্ণার জল

কয়েস সামী

i m nothing in this huge world...

কয়েস সামী › বিস্তারিত পোস্টঃ

একটি পহেলা বৈশাখের গল্প: ইভেন্ট।

১৩ ই এপ্রিল, ২০১৬ রাত ১০:৪৮

১.
ভোর ছয়টা হলে একটা কথা ছিল। সাতটা হলেও মানা যেত। কিন্তু সকাল আটটা বাজছে প্রায়। পুরো রাস্তা ঘাট ফাঁকা- ঠিক যেন মেনে নেয়া যাচ্ছে না। পহেলা বৈশাখের এই সকালে ঢাকার রাস্তাঘাট ফাঁকা থাকবে এটা বিশ্বাস করা সত্যিই কষ্টকর।

আজ অনেক বছর পর, তা প্রায় বছর দশেক তো হবেই, আমি পৃথিবীতে বেড়াতে আসার সুযোগ পেয়েছি। ঈশ্বর যখন আমাকে সুখবরটা দিয়ে বললেন, অবশেষে তোমার সময় এসেছে, তুমি তোমার জন্মস্থান একদিনের জন্য ভ্রমণ করে আসতে পার, আমার কি যে আনন্দ হচ্ছিল! কবে যেতে পারব, হে সৃষ্টিকর্তা? আমি কবে যেতে পারব? তিনি বললেন,

বৎস তোমার যেদিন ইচ্ছে সেদিনই যেতে পারবে। কিন্তু ২৪ ঘন্টার বেশি থাকতে পারবে না। সিদ্ধান্তটা তুমিই নাও।

আমি বেছে নিলাম পহেলা বৈশাখের এই দিনটিকে। কেননা, আমার জানামতে এটা বাঙালি জাতির জন্য সবচে আনন্দের দিন। ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সবাই বর্ষ বরণ অনুষ্ঠানে যোগ দেয়। তারপর থেকে শুরু হয় মেলা। বৈশাখী মেলা। এ মেলা নিয়ে ফিডব্যাকের সেই ‘মেলায় যাইরে’ গানটা আমি আজো সময় পেলেই গুণ গুণ করি। মৃত্যুর পর থেকে কত দিন যে হয় সেই প্রাণের মেলা দেখি না! তাই বাঙালি জাতির এই বর্ষবরণের দিনটিকেই বেছে নিলাম পৃথিবী ভ্রমণের জন্য।

কিন্তু পহেলা বৈশাখের দিন আমার জন্মস্থান বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকার সকাল বেলা এমন ফাঁকা থাকবে তা মোটেও বিশ্বাস হচ্ছে না। বিশেষ করে রমনার বটমূলের এমন পরিবেশ আমাকে বেশ অবাক করল। এর চারপাশ দেখে বর্ষবরণের কোন আবহ খুঁজে পেলাম না। চারদিকে শুনশান নিরবতা। আমার কি কোন ভুল হল? আমি কি ভুল করে অন্য কোথাও চলে এসেছি? নাহ! এই তো সেই জায়গা যেখানে মঞ্চ তৈরী হয়। এই তো চারপাশের দেয়াল যেখানে আঁকা থাকে নানারকমের আল্পনা আর দেয়াল চিত্র। নাহ! জায়গা চিনতে ভুল হয় নি আমার। তাহলে ঘটনা কী? উদ্ধার করতে হবে তাড়াতাড়ি। আমার হাতে সময় খুব কম। ঐ তো, একটা লোক এদিকেই আসছে। তাকে জিজ্ঞেস করতে হবে। তাড়াতাড়ি মানুষের বেশ নিয়ে নিলাম। তারপর লোকটাকে ডেকে জিজ্ঞেস করলাম। এই যে দাদা, আজ পহেলা বৈশাখ না?
এভাবে ডাক শুনে লোকটা বেশ অবাক হয়েছে বলে মনে হল। নিজেকে একটু সামলে নেয়ার পর বলল, হ্যা, তাইতো । দেখছেন না, রাস্তাঘাটে লোকজন নাই?
-আজব ব্যাপার! পহেলা বৈশাখে তাহলে লোকজন ঘরে বসে থাকে নাকি?
-ও মা! আপনি জানেন না বুঝি? সে জন্যই তো ইভেন্ট হচ্ছে।
-ইভেন্ট?
-আরে মশাই। কোন খবর রাখেন না, নাকি? ফেসবুকের ইভেন্ট। এবার ইভেন্টের জন্য আলাদা একটা ওয়েব পোর্টাল খোলা হয়েছে। গোটা বাংলাদেশের সকল মানুষ তার ভোটার আইডি নাম্বার দিয়ে লগ ইন করে সরাসরি অংশ নেবে সেই অনুষ্ঠানে।
-অনুষ্ঠানটা দেখতে কোথায় যেতে হবে, মশাই?
-আরে গাধা নাকি! আপনার নিজের ঘরে ল্যাপটপের সামনে যেতে হবে।
লোকটা চলে গেলে আমার মনে পড়ল, ওহ! আমি বেঁচে থাকতেও তো ফেসবুকে অনেক ইভেন্ট হতো। এখন বুঝি তবে জাতীয়ভাবে ইভেন্ট হয়? দেখা যাক। একটা বাড়িতে ঢুকে দেখা যাক।

যথারীতি অদৃশ্য হয়ে প্রথম যে বাড়িতে ঢুকলাম সেখানে বাবা, মা, মেয়ে ডাইনিং রুমে বসে সকালের চা খাচ্ছে। বাবা -মেয়ের চোখ বাঁ হাতে ধরা মোবাইলের দিকে। আর মায়ের বাঁ হাতে টিভি রিমোট, চোখ টিভিতে। মেয়েটির কাছে গিয়ে মোবাইলে লেখা তার ফেসবুকীয় ভার্চুয়্যাল কনভারসেশন পড়তে থাকলাম:
-এই মিলিটার কথা আর বলিস না। একেবারে আনসোশ্যাল একটা।
-কই? আমার সাথে তো সেদিন দেখা হয়েছিল, কথাও বলল।
-কী? তোর সাথে সেদিন কথা বলেছে? আরে শুধু কথা বললেই কি সামাজিকতা হয়? একটাও লাইক দেয় না কোনো পোস্টে। একটাও কমেন্ট করে না।
-ও বুচ্ছি। তোর পোস্টে লাইক দেয় না বলে, তুই রাগ?
-আরে না, আমার পোস্টে না দিক। অন্যদের পোস্টেও তো দেয় না। কারো পোস্টেও তো কমেন্ট করে না।
-হয়তো ফেসবুকে একটিভ থাকে না সবসময়।
-কে বলল একটিভ থাকে না? কিছুক্ষণ পরপরই তো দেখি নিজের ছবি আপলোড করে। দিনে অন্তত দুইটা স্ট্যাটাস দেয়। কি হয় একবার অন্যদের পোস্ট বা ছবিতে লাইক দিলে। হাতে ফোস্কা পড়ে যায়?

মোবাইলের রিংটোনে মেয়েটির বাবার দিকে চোখ পড়ল। শুনতে পেলাম:
-কে? আবুল? কী খবর বল।
-দাবা খেলবি? আরে না। আমি অলরেডি দাবা খেলছি। তোর সাথে পরে একদিন খেলব।
-দাবা খেলতে চাইলে আমার সাথে খেলতে হবে কেন? চেস.কমে ঢুকে যা। ওখানে দেশবিদেশের খেলোয়াড় পাবি।
-রাখি। ভয়াবহ একটা চেক দিয়েছে দেখছি। রাখছি, রাখছি।

ওদিকে মা তো এখনো সিরিয়্যাল দেখায় ব্যস্ত! হাতের চা ঠান্ডা হয়ে গেল খেয়াল নাই!

সেই বাড়ি থেকে বের হয়ে আরেকটা বাড়িতে ঢুকলাম।
দেখি-
একটি ছেলে বিছানায় শুয়ে আছে। হাতে মোবাইল। স্ট্যাটাস লিখছে।
-বন্ধুরা আমার মা খুব অসুস্থ। প্র্যা ফর হার।
ওদিকে ক্ষীণ কন্ঠের এক আওয়াজ ভেসে আসল পাশের রুম থেকে- বাবুরে! আমাকে এক গ্লাস জল দিবি?
কথাটা আমি শুনলাম। কিন্তু কানে হেডফোন লাগানো থাকায় ছেলেটি মায়ের ডাক শুনল না।

এবার তৃতীয় বাড়িটিতে ঢুকলাম। বাড়িটাতে ছোট বড় মিলে ছয়জন মানুষ। সবাই কানে হেডফোন লাগিয়ে যার যার রুমে ল্যাপটপের সামনে বসে আছে। বৈশাখী ইভেন্ট অ্যাটেন্ড করছে! হায় বাংলা ও বাঙালি। হায় মানুষ! তোমাদের আনন্দ এখন হৈহুল্লোড়হীন হয়ে গেল বুঝি! মানব জাতির এহেন স্থবির উৎসব পালন দেখে মনটা বেশ খারাপ হয়ে গেল। আমি স্থির করলাম, আর এক মুহুর্তও এ পৃথিবীতে না। আমি বরং চলেই যাই। ঢাকা ছেড়ে, পৃথিবী ছেড়ে আমি উপরের দিকে উঠতে থাকলাম। বিদায় পৃথিবী। বিদায়!


২.
যেহেতু হাতে অনেক সময় আছে তাই পৃথিবীর বাইরে বের হয়ে বিশ্ব ব্রম্মান্ডে একটু ঘুরার ইচ্ছা হল। ঘুরাঘুরির সময় হঠাৎ কিছু কথা-বার্তা কানে আসল। দেখি কথাগুলো একটা গ্রহ থেকেই ভেসে আসছে। তবে গ্রহটা পৃথিবী না, অন্য কোন গ্রহ। কী ব্যাপার! কী ব্যাপার! মানুষ ছাড়াও বুঝি অন্য কোন প্রাণী আছে, অন্য কোন গ্রহে! দেখি তো! তাড়াতাড়ি গ্রহটিতে ঢুকে পড়লাম। শব্দকে অনুসরণ করে যে বাড়ি থেকে কথাগুলো আসছে সেই বাড়িতে ঢুকে গেলাম। ও মা! তারা যে পৃথিবী নিয়েই কথা বলছে। আরো ভয়ের কথা হল তারা পৃথিবী ও মানব জাতিকে ধ্বংস করে পৃথিবী দখল করে নেয়ার পরিকল্পনা করছে। এ ভয়ানক কথা শুনে আমার অন্তরাত্মা কেঁপে উঠল। আমি সেখানে আরো কিছুক্ষণ থাকলাম। এবং জানলাম, আর ঠিক ছ’মাস পরে তারা পৃথিবীকে আক্রমণ করবে। পৃথিবীকে তারা টেলিকমিউনিকেশনের সাহায্যে আক্রমণ করবে। তারা পৃথিবীর রেডিও, টিভি, মোবাইল ফোন কার্যত বন্ধ করে দেবে। তারা সাবোট্যাজ করবে সোশ্যাল মিডিয়া, ফেইসবুক, মাই ফেস, টুইটার সবকিছু। মানুষ তাহলে সরাসরি কথোপকথন ছাড়া আর কোন ভাবে যোগাযোগ করতে পারবে না। কোন শিশুরা আইপেড, কম্পিউটার, ল্যাপটপ আর মোবাইল ফোনে গেমস খেলতে পারবে না। গৃহিনীরা কোন সিরিয়্যাল দেখতে পারবে না। সব রকম গেজেটের অভাবে মানুষ বোরড্ হতে হতে একসময় মারা যাবে বলে এই গ্রহের এলিয়েনরা বিশ্বাস করে। কিছুক্ষণের পৃথিবী দর্শনে আমারও মনে হল ব্যাপারটা অদ্ভুত শোনালেও আসলেই সম্ভব। মানব জাতি মোবাইল আর ফেসবুকে এতােটাই মত্ত হয়ে গেছে যে এগুলো ছাড়া তো তারা আসলেই বাঁচবে না। কিছু একটা করতে হবে। কিছু একটা। মানব জাতিকে বাঁচাতে হবে। ভাবতে থাকলাম। ভাবতে ভাবতে একটা উপায়ও পেয়ে গেলাম। যা করার আজকেই করতে হবে। আজকেই এর উৎকৃষ্ট সময়। অন্তত বাঙালি জাতিটাকে বাঁচানো যাবে তাহলে। তড়িঘড়ি ফিরে গেলাম পৃথিবীতে। সেই তৃতীয় ঘরটিতে আবার ঢুকলাম। সেই ছয়জনের একজনের ভেতরে ঢুকে গেলাম ঝটপট। সে তখনও ইভেন্টের মধ্যেই ছিল। তার হাত দিয়ে কম্পিউটারের পর্দায় ইভেন্টের পোর্টালে বড় বড় অক্ষরে লিখতে থাকলাম:

একটি সতর্কবার্তা! একটি সতর্কবার্তা। হে মানব জাতি! তোমরা প্রযুক্তির উপর থেকে নির্ভরশীলতা কমাও। টিভি ও কম্পিউটারের সামনে সারাদিন বুঁদ হয়ে বসে থাকার অভ্যাস ত্যাগ কর। মোবাইল ফোন, ফেইসবুক-টুইটার সহ সকল সামাজিক ওয়েবসাইটকে না বল। একে অন্যের সাথে কথা বল। ভাচুর্য়াল সামাজিকতা ত্যাগ করে আগের মতো সবাই বাস্তব জীবনে সামাজিক হও। নাহলে অচিরেই নেমে আসবে ঘোর অমানিশা। ঘোর অমানিশা। ঘোর অমানিশাআআআ...

(এ যাচ্ছেতাই গল্পটির লেখকের পক্ষ থেকে সবা্ইকে নববর্ষের শুভেচ্ছা)

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +৩/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ১৪ ই এপ্রিল, ২০১৬ রাত ১:৫২

ইমরাজ কবির মুন বলেছেন:
interesting!

১৪ ই এপ্রিল, ২০১৬ সকাল ৯:৩৫

কয়েস সামী বলেছেন: পড়ার জন্য অনেক ধন্যবাদ ভাই।

২| ১৬ ই এপ্রিল, ২০১৬ রাত ৮:১৫

কালনী নদী বলেছেন: একটি সতর্কবার্তা! একটি সতর্কবার্তা। হে মানব জাতি! তোমরা প্রযুক্তির উপর থেকে নির্ভরশীলতা কমাও। টিভি ও কম্পিউটারের সামনে সারাদিন বুঁদ হয়ে বসে থাকার অভ্যাস ত্যাগ কর। মোবাইল ফোন, ফেইসবুক-টুইটার সহ সকল সামাজিক ওয়েবসাইটকে না বল। একে অন্যের সাথে কথা বল। ভাচুর্য়াল সামাজিকতা ত্যাগ করে আগের মতো সবাই বাস্তব জীবনে সামাজিক হও। নাহলে অচিরেই নেমে আসবে ঘোর অমানিশা। ঘোর অমানিশা। ঘোর অমানিশাআআআ...
আপনাকেও নববর্ষের শোভেচ্ছা!

১৬ ই এপ্রিল, ২০১৬ রাত ১০:১১

কয়েস সামী বলেছেন: ভাল থাকবেন।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.